অনুভবে তুমি পর্ব ৪১

অনুভবে তুমি পর্ব ৪১
লিজা মনি

দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ চলে যায়। আহান ইয়ানার প্রতি আর ও বেশি ডেম্পারেট হয়ে পড়েছে। ইয়ানার এক একটা নিশ্বাস ও মনে হয় আহানের অনুমতি নিয়ে নিতে হয়। ইয়ানাকে নিজের সামনে বসিয়ে খাইয়ে দেওয়া সব কিছু আহান নিজে করে। ইয়ানার মাঝে মাঝে বিরক্তি বোধ হয় আবার আহানের এত বাচ্চামু দেখে নিজেই হেসে ফেলে। ওনি নাকি মাফিয়া ডন কিন্তু এখন ইয়ানা হাজার রাগ দেখালে ও আহান কিছু বলে না। উল্টো ইয়ানাকে শাস্থি হিসেবে নিজের ঠোঁট দ্বারা ইয়ানার ঠোঁট দখল করে নেয়। ইয়ানাতো মাঝে মাঝে ভেবে পায় না এই এক সপ্তাহ এই ছেলে যে কেয়ার দেখচ্ছে বাকি নয় মাস কি করবে। ইয়ানা তুই এই নয় মাসে খেতে খেতে একদম পাশের বাড়ির কাকিমার মতো মোটা হয়ে যাবি। ছোট বেলা কত মজা করতাম ওনার শরীর নিয়ে কিন্তু এখন এই দানব জামাইর পাল্লাই পড়ে নিজে ও একটা দানব হয়ে যাব।

ইয়ান এইসব ভেবে ফুস করে একটা শ্বাস ছাড়ে। আজ রায়ান আর সুমুর বিয়ে। রায়ানের বাবা মা এখন ও দেশে আসে নি। তাদের কে অনেক ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে রায়ান রাজি করিয়েছে। তাই ওনারাও এই বিয়ে নিয়ে কোনো আপত্তি করে নি। এখন ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা হবে পরে যখন রায়ানের বাবা মা আসবে তখন জামিল হোসেন মানে রায়ানের বাবা নিজের একমাত্র ছেলের বিয়ে ধুমধাম করে দিবেন। এখন বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব জামাল হোসেন সাজিদ চৌধুরির হাতে দিয়েছে। বিয়েটা আপাযত আহান আর ইয়ানাদের বাড়ি থেকে হচ্ছে।
বিয়ে উপলক্ষে চৌধুরি ভিলায় বিয়ের আমেজ চলছে। আহান চৌধুরি ভিলার একমাত্র ছেলে হলে ও রায়ান আর ইউভি এই চৌধুরি ভিলার ওই একজন সদস্য।
ইয়ানা আয়নার সামনে বসে বসে মাথার চুল আছরাচ্ছিলো তখন দরজা ঠেলে আহান রুমে প্রবেশ করে। আহান ইয়ানার কাছে গিয়ে ঝাপটে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলে,,,,,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“” কি করছিলে? ”
ইয়ানা আয়নার সামনে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” আমি তো সুমুর বোন হয় আবার রায়ান ভাইয়ার ও বোন হয় তাই না? “”
আহান — হুম। হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো ওরা কি তোমাকে বোন হিসেবে অস্বীকার করেছে?
ইয়ানা —— আরে নারে ভাই অন্য কথা।
আহান ইয়ানার মুখে ভাই ডাক শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। ইয়ানার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে,,,,
“” হুয়াট রাবিশ ভাই কে তোমার। আমি তোমার কোন জন্মের ভাই হয় শুনি? বিয়াদপ মেয়ে হাজবেন্ডকে ভাই বলছো “”
ইয়ানা আহানের দিকে তাকিয়ে সান্তনা সুরে বলে।,,,,,

“” শান্ত হন মি, চৌধুরি শান্ত হন। আমি তো এমনি কথার কথা বলেছি। আগে আমার চিন্তার ব্যাখ্যা দেন। আমি সুমুর ও বোন আবার রায়ান ভাইয়ার ও বোন এখন আমি কোন সম্পর্কে থাকব? সুমু কে আমি কখনো ভাবি ডাকতে পারব না আবার রায়ান ভাইয়াকে জিজু বলতে পারব না। তাহলে আমি এখন কোন সম্পর্ক পালন করব।””
ইয়ানার কথা শুনে আহান একটা নিশ্বাস ছাড়ে। এই সামান্য বিষয় নিয়ে এই মেয়ে চিন্তা করে যাচ্ছে। আহান ইয়ানার কপালে চুমু খেয়ে বলে।,,,,,
“” এখন যা ডাকছো তখন ঠিক তাই ডাকবে। যে ডাকে তুমি কম্ফোর্টাব ফিল কর সেভাবেই ডাকবে। বুঝতে পেরেছো?
ইয়ানা কিছু একটা ভেবে বলে,,,,,,,

“” আমার যেই ডাকে কম্ফোর্টাবল লাগবে তাই ডাকতে পারবো? “”
আহান —- হুম।
ইয়ানা — তাহলে একটা কথা বলি রেগে যাবেন নাতো?
আহান — কি কথা বলবে তুমি? রেগে যাওয়ার মত কথা হলে অবশ্যয় রাগ করবো।
ইয়ানা —-তাহলে বলব না।
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বলে,,,,
“” ঠিক আছে বলো রাগ করব না।
ইয়ানা এক গাল হাসি দিয়ে বলে,,,,

“” আপনাকে ভাইয়া ডাকতে আমার খুব ভালো লাগে এইটা কি আমি ডাকতে পারব? “”
ইয়ানার কথা শুনে আহান হতভম্ব হয়ে যায়। নিজের স্বমীকে ভাইয়া ডাকতে নাকি এই মেয়ের ভালো লাগে
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” মাইর চিনো মেয়ে। এক থাপ্পর খেয়ে সাত দিন অজ্ঞান থাকবে। এইসব ভুলভাল চিন্তাভাবনা তোমার মাথায় কিভাবে আসে।””
ইয়ানা —– আপনি কিন্তু বলেছিলেন রাগ করবেন না তাহলে ধমক দিচ্ছেন কেনো?
আহান — এখন ও যে থাপ্পর দেই নি শুক্রিয়া করো মেয়ে। আর আমাকে ছাড়া যাতে রুম থেকে বের না হও। বাড়িতে অনেক লোকসংখ্যা এসেছে তার উপর সবাই আমার বিজন্যাজ পার্টনার। আজ নিজের বিয়ে উপলক্ষে সে তাদের ইনভাইট করেছে।আমার পাশাপাশি ওদের সাথে রায়ানের একটা বন্ধুত্ব আছে। রুম থেকে আমার অনুমতি ছাড়া বের হবে না। রেডি হয়ে থাকো আমি নিতে আসবো। এর আগে যেনো বের হতে না দেখি মনে থাকবে?
ইয়ানা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।

আহান—– গুড গার্ল।
এরপর আহান রুম থেকে চলে যায়।
ইয়ানা জামা পড়তে নিবে এমন সময় আবার দরজায় শব্দ করে উঠে। ইয়ানা আহান মনে করে বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,,,
“” আবার কি আহান? বলেছিতো আপনি না আসা পর্যন্ত আমি নিচে যাব না।আমি এখন শাড়ি পরছি দরজা খুলতে পারব না।
—- আফা মনি আমি মারিয়া। আমি ছোট সাহেব না। আপনাদের নানির মাইয়া আমি। ছোট সাহেব আপনার জন্য দুধ পাঠিয়েছে খাওয়ার জন্য।
ইয়ানা মারিয়ার কথা শুনে দরজা খলে দিয়ে হাসি দিয়ে বলে,,,,,,

“” আচ্ছা তুমি তাহলে খালার মেয়ে। তোমার কথা অনেক শুনেছি আজ তাহলে দেখতে ও পারলাম। ভারী মিষ্টি একটা মেয়ে তুমি। কিন্তু তুমি আমাকে আফামনি কেনো ডাকছো হুম?
মারিয়া জিহ্বায় কামর দিয়ে বলে,,,
“” সরি সরি ভুলে বইলা ফেলছি।””
এরপর মারিয়া ইয়ানার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। মারিয়াকে এইভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইয়ানা ফের প্রশ্ন করে,,,,,
“” কি হলো এইভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? “”
মারিয়া —- মাসআল্লাহ কি সুন্দর তুমি।ও আল্লাহ তোমারে দেইখা আমি ওইতো প্রেমে পড়ে গেছি।
ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে বলে।,,,,,
“” তাই “”
মারিয়া — হ। আচ্ছা আমনে দুধ খাইয়া লন আমি এহন আসি।

এরপর মারিয়া চলে যেতেই ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে ওয়াশরুমে হাত মুখ ধোয়ার জন্য ফ্রেশ হতে যায়।
কিছুক্ষন পর ফ্রেশ হয়ে এসে দুধের দিকে নজর যায়। ইয়ানা দুধটাকে দেখে একটা বিরক্তির নিশ্বাস ছাড়ে। এই দুধ এখন না খেলে আহান অনেক কথা শুনাবে। আবার তার সাথে তো থাপ্পর ফ্রি। এই এক সপ্তাহ কত থাপ্পর যে খেয়েছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই। ইয়ানা এক নিশ্বাসে দুধটা শেষ করে ফেলে। দুধটা খাওয়ার পর ইয়ানা কপাল কুচকে নেই। দুধের মধ্যে এমন গন্ধ কেনো? আবার মনে মনে ভাবে হয়তো প্রেগনেন্সির জন্য এমন হচ্ছে। ইয়ানা আর কিছু না ভেবে শাড়ি পরায় মনযোগ দেয়। হঠাৎ দরজার দিকে তাকাতেই মনে হলো কেউ আছে। ইয়ানা ধীরে ধীরে দরজার সামনে গিয়ে বাহিরে আশেপাশে লক্ষ করে।কিন্তু কেউ নেই হয়ত মনের ভুল ছিলো। এরপর ইয়ানা ফুস করে একটা শ্বাস ছেড়ে দরজা লাগিয়ে নেয়। তারপর হুয়াইট কালারের একটা শাড়ি পরে নেই। যেটা গত রাতে আহান ইয়ানার জন্য এনেছিলো। মাথায় সুন্দর করে একটা হিজাব বেধে নেয়। ঠোঁটে লিপস্টিক দিতে যাবে এমন সময় আহানের আদেশের কথা মনে পড়ে যায় ” খবরদার ইয়ানা আর যায় হোক ঠোঁটে লিপস্টিক দিবে না আমি নিজেকে সামলাতে পারি না এই লিপস্টিকে ডাকা ঠোঁট দেখে””

ইয়ানা আহানের নির্দেশ মত ঠোঁটে লিপস্টিক না দিয়ে হালকা একটু লিপ বাম দেয়। এরপর চোখের নিচে গাঢ় কাজল। শেষ এইটুকুতেই ইয়ানার সাজ সমাপ্ত। এই হালকা সাজ ওই আহানের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করার জন্য যথেষ্ট।ইয়ানা সাজার মধ্যে নিজের তল পেটে হালকা ব্যাথা অনুভব করে। এইটা প্রেগনেন্সির লক্ষন ভেবে এড়িয়ে যায়।
কিছুক্ষনের মধ্যে আবার দরজা ধ্বাক্কানোর শব্দ আসে। ইয়ানা আহান ভেবে দরজা খুলতেই সামনে ঝর্নাকে দেখে কপাল কুচকে নেই। ঝর্নার শরীরের হাটু পর্যন্ত জামা তার সাথে নাভি দৃশ্যমান জামা দেখে নাউজুবিল্লাহ বলে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
ঝর্না নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে,,,,,,

“” কেমন আছো মিসেস চৌধুরি? “”
ইয়ানা —- হুম ভালো তুমি।
ইয়ানাকে অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বলতে দেখে ঝর্না বলে,,,,,,,
“” কি হলো অন্যদিক ফিরে কথা বলছো যে? ”
ইয়ানা —- তোমার দিকে তাকালেও আমার চোখ অপবিত্র হয়ে যাবে ঝর্না। এই অর্ধনিগ্ন দেহে মানুষের দিকে আমি তাকাতে পারব না।
ঝর্না রেগে বলে,,,,,
“” এই মেয়ে তুমি জানো আমার এই ড্রেসের দাম কত? ”
ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,

“” দাম দিয়ে শালীনতা যাচাই করা যায় না ঝর্না। তোমার ড্রেস থেকে আমার শাড়ি কিন্ত কম দাম নয়। অগ্নি চৌধুরি নিজের বউকে কিছু দিলে নিশ্চয় কম দাম দিয়ে কিছু দিবে না। আর দাম দিয়ে আমি ভালোবাসা বিচার করি না। তোমার ড্রেস থেকে কিন্তু আমার শাড়িটা অনেক দামী। কিন্তু শালীনতার প্রচুর ফারাক। আমি ও কিন্তু শাড়ি ওই পড়েছি এমন নয় যে আমি পর্দা করি কিন্তু অনেক সময় জামাকাপড়ে শালীনতা ফুটে উঠে।””
ঝর্না রাগে ফুসফুস করছে। আহানের ভয়ে কিছু করতে পারছে না নাহলে বুঝিয়ে দিত ঝর্না কি জিনিস। কিছু একটা ভেবে ঝর্নার মুখে শয়তানি হাসি ফুটে উঠে।
ইয়ানা ঝর্নাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,,,,,

“” তোমার কি আর কিছু কথা আছে থাকলে বলতে পারো। নাহলে প্লিজ লিভ।
ঝর্না ইয়ানার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে।,,,,,,
“” হুম বের হয়ে যাচ্ছি তার সাথে তোমার জীবনের সবচেয়ে মুল্যবান জিনিসটা ও ছিনিয়ে নিয়েছি।””
এই বলে ঝর্না রুম ত্যাগ করে। ঝর্নার কথা শুনে ইয়ানার বুকটা ধুক করে উঠে। জীবনের সবচেয়ে মুল্যবান জিনিসটা ছিনিয়ে নিয়েছে মানে কি বলতে চাইছে ও। ইয়ানার ভাবনার মাঝে আহান রুম ডুকে। ইয়ানার দিকে তাকাতেই চোখ আটকে যায়। মনে হচ্ছে অগ্নি চৌধুরির রুমে সাদা হুর বসে আছে। আহান নেশালো চোখে ইয়ানার দিকে এগোতে থাকে। ইয়ানা আহান কে দেখে ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে আসে। আহান ইয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,,,,,

“” কি ভাবছো আমার সেহজাদী? ”
ইয়ানা আমতা আমতা করে বলে,,,,,
“” নাহহ কিছু না। চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমাকে তড়াতাড়ি সুমুর কাছে নিয়ে চলুন। হল্লাপর্টি সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।রায়ান ভাইয়া তাদের তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে। ওই দিকে তারা সবাই বসে আছে বরের জন্য।ইয়ানা কথা বলতে বলতে খেয়াল করে আহান ও হুয়াইট ব্লেজার পড়েছে। তার মানে উনি শাড়ির সাথে মিল করে এনেছে। ইসস কি সুন্দর লাগছে ওনাকে। আহানের মুখের দিকে তাকায়েই ইয়ানা ভড়কে যায়। আহান নেশালো দৃষ্টিতে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা এই দৃষ্টির সাথে খুব ভালোভাবে পরিচিত।
হঠাৎ আহান ইয়ানাকে হেচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। ইয়ানার কোমর নিজের হাত দ্বারা চেপে ধরে। ইয়ানা আহানের ব্যবাহারে শান্ত সুরে বলে,,,,,,,

“” প্লিজ আহান ছেড়ে দিন এখন না। এখন তো আমরা বিয়েতে যাব। আমরা না গেলে রায়ান ভাইয়া ও যাবে না আর বিয়েটা ও দেরী হয়ে যাবে। ”
আহান ইয়ানার কানে ফিসফিস করে বলে।,,,,,
“” এতটা মোহনীয় লাগছে কেনো তোমাকে? ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি। শাড়িটা খুলে ফেলো ইয়ানা আমি কন্ট্রোললেস হয়ে যাচ্ছি। “”
ইয়ানা — কি,, কি বলছেন কি শাড়ি খুলে ফলব মানে? দেখুন ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দিয়ে নিজের ভিমরতি দুর করুন।

ইয়ানা সরে যেতে নিলে আহান আর ও চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। ইয়ানা ছটফট করে আহানের বুকে ঘুসি দিতে থাকে। কিছুক্ষন পর আহান ইয়ানার কপালে চুমু খেয়ে ছেড়ে দেয়। ইয়ানা আহানের দিকে কটমট চোখে তাকায়। আহান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,,,,,,
“” এক বাচ্চার মা হয়ে যাচ্ছো এখন ও এত ছটফট করো কেনো তুমি? শান্ত হয়ে থাকতে পারো না?
ইয়ানা — আপনি এসে আকাম করবেন আর আমি শান্ত হয়ে বসে থাকব।
আহান — what the.. শব্দচায়ন ঠিক কর ইয়ানা। আকাম মানে কি হুম। আমাদের বাচ্চা যদি এইসব শিখে আমি কিন্তু তোমাকে শেষ করে দিব।
আহান কথার মাঝে লক্ষ করছে ইয়ানা বার বার পেটে হাত দিয়ে চেপে ধরছে। আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,

” বার বার পেটে হাত দিচ্ছো কেনো বাবু কি তোমায় লাথি মারছে? লাথি মারবে কিভাবে ওর তো এখন ও হাত পা হয় নি।””
আহানের কথায় ইয়ানা হকচকিয়ে উঠে। ইয়ানার পেটে হঠাৎ করে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। একটু পর পর। কিন্তু এইটা আহানকে বলা যাবে না ওকে নিয়ে ডেম্পারেট হয়ে যাবে। বিয়েটা শেষে মাটি হয়ে যাবে।
“” না তেমন কিছু না এমনি হয়তো হাত চলে গিয়েছে খেয়াল করিনি””
আহান ইয়ানাকে ভালোভাবে পরখ করে বলে,,,,
“” আর ইউ ওকে ইয়ানা? ”
ইয়ানা — হুম। চলুন তাড়াতাড়ি দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আহান — হুম চলো।

গাড়ি এসে থামে ইয়ানাদের বাড়ির সামনে। রায়ান সেরোয়ানী না পরে ব্লু কালারের ব্লেজার পড়েছে। ইয়ানা বাড়ির সামনে এসেই খুশিতে গদগদ করে উঠে। নিজের বান্ধুবীর বিয়ে অথচ সে থাকতে পারল না। তাকে ছাড়া সবাই গায়ে হলুদ করে ফেলেছে। ইয়ানা খুশি হয়ে গাড়ি থেকে নামতে যাবে তখন ওই আহানের আদেশ বানী কানে আসে,,,,,
“” একদম লাফালাফি করবে না।বিয়ে বাড়িতে এসেছো ভালো কথা একদম শান্ত হয়ে থাকবে। এইটা যদি তোমার বান্ধবীর বিয়ে না হত তাহলে জীবনে ও আসতে দিতাম না।তাই এসেছো ভালো মেয়ের মত থাকবে। এখন তুমি আর একা নও তোমার সাথে আরেকজন আঁছে।তাই চাইলেই আগের মতো লাফালাফি করতে পারবে না। আমি যদি দেখি এমন কিছু করছো প্রমিস ইয়ানা ওইখানেই গালে থাপ্পর বসাব।মনে থাকবে আমার কথা?আর বাড়ির বাহিরে যাবে না ওকে।

ইয়ানা —- হুম। আর কিছু থাকলে বলেন। পারলে একটা লিস্ট করে দেন কাগজে লিখে।
আহান কপালকুচকে বলে,,,,,
“” ফাইজলামু করছো তুমি আমার সাথে। চিন্তায় আমি নাস্তানাবুদ আর তুমি আমার আদেশ গুলোকে মজা হিসেবে নিচ্ছো বিয়াদপ মেয়ে””
ইয়ানা — হ্যা নিচ্ছি।
বলেই ইয়ানা এক দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ডুকে পড়ে।
আহান ইয়ানার দৌড় দেখে চিৎকার দিয়ে বলে,,,,
“” ইয়ানা স্টপ।””
বলেই নিজের হাত দুটি মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। চোখ দুটি লাল বর্ণ ধারন করে ফেলে। আহানের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এই মেয়েকে বার বার বারন করে ধীরে ধীরে চলতে কিন্ত এই মেয়ে সেই ঘাড় ত্যারামি করে। বাচ্চা নিয়ে এই মেয়ের এত অবহেলা কেনো? আমি কি জোড় করেছিলাম বাচ্চা নেওয়ার জন্য?
বলেই আহান নিজের গাড়ির ঢিকির উপর সজোরে ঘুসি মারে। রাগে ওর মাথা ফেটে যাচ্ছে নাকি কোনো কিছু হারানোর ভয়?

ইয়ানা বাড়ির ভিতর ডুকে সবার সাথে কথা বলে সোজা চলে যায় হল্লাপর্টির কাছে। ইয়ানা সবাইকে দেখে চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,
“”আমি এসে গেছিরে বাদরের দল “”
সবাই ইয়ানার দিকে তাকায় এরপর সবার সাথে কুশ্ল বিনিময় করে।
আয়াত — এই তুই বাদরের দল কাদের বললি?
ইয়ানা মাথা চুলকাতে চুলকাতে মনে মনে ভাবে,,,
“” এইরে ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলছি ”
আয়াত — কি হলো বলছিস না কেনো এক বাচ্চার আম্মা।
ইয়ানা — হপ বেডি বাচ্চা হয় নাই এখন ও। আর আহান প্রায় সময় আমাদের হল্লাপর্টিকে বাদরের দল বলে তাই আমি ও মুখ ফসকে বলে ফেলেছি।

আরুরা — শেষে আহান ভাইয়া আমাদেরকে বাদরের সাথে তুলনা করলো।
ইয়ানা — আরে বাদ দে তো ওনি নিজেই তো একটা হনুমান আমাদের মর্ম ওনি কিভাবে বুঝবে। তা আমাদের সুমু মহারানী এত লজ্জা পাচ্ছে কেনো শুনি। রায়ান ভাইয়া কিন্তু চলে এসেছে। আর একটু পর বিয়ের এরপর কি হবে ওইটা বলব না। ওইটা না হয় সিক্রেট থাক।
ইয়ানার কথা সুমু লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। আজ এত লজ্জা লাগছে কেনো? ইসস কারোর দিকে তাকাতেই পারছি না।

আকাশ —- এতক্ষন আরু আর আয়াত কম ছিলো শান্তীর মহারানীকে লজ্জা দেওয়ার জন্য এখন তুই আবার আমদানি হয়েছিস। কম লজ্জা দিস বইন এখন যদি সব লজ্জা শেষ করে ফেলিস তাহলে রাতে কি করবে শুনি।
সুমুর ইচ্ছে করছিলো মাটির সাথে মিশে যেতে। আল্লহ এমন বন্ধু যাতে কারোর না হয়। বাদরের দল একেকটা।
তাদের হাসি ঠাট্টার মাঝে সুমুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাক আসে।
সুমুর হৃদয়ে এক অদ্ভুত শিহরন বয়ে যায়। একটু পর ওই রায়ান আর ওর বিয়ে ভাবতেই অবাক লাগছে। ও কোনো দিন কল্পনা ও করে নি সবাই এত সহজে এই সম্পর্ক মেনে নিবে।
ইয়ানা আর আয়াত সুমুকে ধরে সিড়ি দিয়ে নেমে আসে। রায়ান সুমুর দিকে তাকাতেই চোখ আটকে যায়। ব্লু কালারের লেহেঙ্গা মেয়েটার ফর্সা ত্বকের সাথে মানিয়ে নিয়েছে। রায়ান পলকহীন ভাবে তাকিয়ে রয়েছে নিজের মায়াবতীর দিকে। ইউভি রায়ানের কানে ফিসফিস করে বলে,,,,,

“” এইভাবে তাকিয়ে থাকিস না ভাই। তাকিয়ে থাকার জন্য পুরো রাত বাকি আছে। এখন কেনো মেয়েটাকে এইভাবে লজ্জায় ফেলছিস। ”
রায়ান ইউভির কথা শুনে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নায়। বলা যায় না কখন কোন কথা বলে লজ্জা হরন করে ফেলে।
সুমুকে রায়ানের পাশে বসানো হয়। ইয়ানা ভালো করে চারপাশে খেয়াল করে আহানকে খুজতে থাকে। হঠাৎ করে সামনের সোফায় চোখ যায় দেখে আহান মোবাইল স্ক্রল করছে। ব্লেজারের ভিতরে শার্টের দুইটা বোতাম খুলে রাখা হয়ত গরম লাগছে। ইয়ানার পাশেই চোখ গেলে দেখতে পায় কয়েকটা,মেয়ে আহানকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। কিন্তু আহানারে এইসবে কোনো খেয়াল নেই। মনে হচ্ছে ফোনে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। মুখে হালকা রাগের আবাস।

এরপর সুমু আর রায়ানের বিয়ে পড়ানো শুরু হয়।
একসময় কবুল বলার পর সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে।
ইয়ানা গিয়ে আহানের সামনে দাঁড়ায়। কিন্তু আহান এখন ও ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা বিরক্তি নিয়ে বির বির করে বলে,,,,
“” কোনো খবর আছে এই লোকের। এই দিকে বন্ধুর বিয়ের কাজ শেষ করে ফেলেছে কিন্তু ওনি এখন ও ফোন নিয়ে বসে আছে। ইয়ানা আহানের হাত থেকে ফোনটা ছু মেরে নিয়ে নেয়।
হঠাৎ আক্রমনে আহান আগত্য ব্যক্তিটির দিকে তাকায়। ইয়ানাকে সামনে দেখে মাথায় রাগটা চেপে বসে। ইয়ানার দিকে তাকিয়ে রেগে দাতে দাত চেপে বলে,,,,,
“” সমস্যা কি তোমার? থাপরিয়ে ভিমরতি ছাড়াব বিয়াদপ মেয়ে। বারন করেছিলাম না দৌড় দিতে তাহলে তখন কেনো দিয়েছিলো? যদি পড়ে যেতে তখন কি হত ভেবে দেখেছো?
ইয়ানা মনে মনে ভাবে তাহলে এই কারনে মশাই হুতুম পেচার মুখ করে রেখেছে।আবার আহানের এইভাবে রাগ করাতে ও ভীষন ভয় হচ্ছে।
ইয়ানা মাথা নিচু করে বলে,,,,,

“” সরি। এইবারের মত ক্ষমা করে দিন। প্রমিস আর এমন করব না। এখন তো অন্তত রায়ানের কাছে যান।
সুমুর বিদায় বেলা আহান গিয়ে নিজের গাড়িতে বসে।
আসাদ হোসেন সুমুর হাত রায়ানের হাতের উপর রেখে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে,,,,,
“” আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো বাবা। আমার এই মেয়েটা ছোট থেকে অনেক কষ্টের সম্মুখীন হয়েছে। তাই ওকে আর নতুন কোনো কষ্টের সাথে সাক্ষাত করিও না।”””

সুমু আকস্মিক আসাদ হোসেনকে জাড়িয়ে ধরে হু হু করে কেদে উঠে। এই লোকটার ওছিলায় ওইতো আল্লাহ তাকে নতুন একটা জীবন দান করেছে। যে শহরে সে একদম অপরিচিত ছিলো তখন এই মানুষটা বাবার স্নেহ দিয়ে আগলে রেখেছেন।মাথা গুজার ঠাই করে দিয়েছেন। সুন্দর ভবিষ্যত দিয়ে বাবার মর্যাদা পালন করেছেন।
সুমুর কান্না দেখে আসাদ হোসেনের মত শক্ত পোক্ত মানুষ ও কান্না করে দেয়। এরপর সুমু সেলিনা হোসেন থেকে রুয়ানা আর হল্লা পার্টি থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।
সুমুর কান্না কেনো জানি আহানের সত্তাকে ও নাড়া দিয়ে তুলেছে। আহিয়াকে ও একদিন এইভাবে চলে যেতে হবে। কিভাবে আলাদা করবে নিজের আদরের ছোট বোনকে নিজের কাছ থেকে। ইয়ানা আহানের পাশে গিয়ে বসতেই দেখে আহানের মুখটা ঘম্ভির হয়ে রয়েছে।ইয়ানা আহানের হাতে হাত রেখে ইশারা দিয়ে বলে।,,,,,
“” কি? ”
আহান — ওহুম কিছু না।
এরপর তারা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। আসাদ হোসেন আর সেলিনা হোসেন শুধু তাকিয়ে থাকে। নিজের কাছ থেকে দুটি মেয়েকে আলাদা করে দিয়েছে। হল্লা পার্টির আজ খুব মিন খারাপ। এক এক করে সবার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আগের মতো করে আর তারা লাফালাফি করতে পারবে না।

রায়ান সুমুকে নিয়ে নিজের তৈরি করা বাড়িতে উঠে। যেখানে আপাযত কয়েকজন বডিগার্ড আর ভিতরে কয়েকজন স্টাফ রয়েছে। সুমুর মন খারাপ দেখে রায়ান সুমুর দুই গালে স্পর্শ করে বলে,,,,,
“” ভয় পাওয়ার কিছু নেই আছি তো আমি তোমার পাশে। জানি সবার কথা মনে পড়ছে তারা সবাই কাল ওই আসবে। শুধু আজকে রাতটা কাটিয়ে দাও”
সুমু — হুম।
এরপর তারা দুইজন রুমে প্রবেশ করে। সুমু রুমে প্রবেশ করতেই ওর চোখ চরকগাছ। পুরো রুম কাচা ফুল দিয়ে সাজানো। দামী আসবাবপত্রের সাথে ফুলগুলো ফুটে উঠেছে।।কিন্তু খাটে ফুল দিয়ে সাজানো কেনো?
সুমুকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,,,,,
“” দেখো এই সম্পর্কে আমি কিছু জানি না এইসব কিছু মনে হয় ইউভি করেছে। আহানতো জীবনে ও করবে না সবকিছু ইউভি আর আরিফ করেছে। তুমি কিছু ভেবো না ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরো””
সুমু— এইভাবে তোতলাচ্ছেন কেনো? আমি কিছু বলেছি আপনাকে এইসব নিয়ে।
রায়ান — না। তবুও তুমি যদি কিছু মনে করো তাই।
সুমু ফুস করে একটা শ্বাস নেয়। এখানে মনে করার কি আছে আজব।
সুমু —- আচ্ছা আপনি বসুন আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

ইয়ানা রুমে গিয় ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় বসে পড়ে। পেটটা আগের তুলনায় প্রচন্ড ব্যাথ করছে। আহান ওয়াশরুমে গিয়েছে ফ্রেশ হতে। কিন্তু পেট আর কোমর ব্যাথার কারনে ইয়ানা ধৈর্য হারা হয়ে যাচ্ছে। দাতে দাত চেপে সহ্য করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ব্যাথার পরিমান এতটাই তীব্র ছিলো যে সেটা সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ইয়ানা ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে। আহান ইয়ানার চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে। দেখে ইয়ানা বিছানায় ছটফট করছে। আহান ইয়ানার এসে অধৈর্য গলায় বলে,,,,,
“” কি হয়েছে সোনা এমন করছ কেনো? “”

অনুভবে তুমি পর্ব ৪০

ইয়ানা —- আহান আমার পেটে প্রচন্ড পেইন হচ্ছে সহ্য করতে পারছি না।
আহান ইয়ানার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে পাজা কোলে নেয়। কিন্তু নিজের হাতে ঠান্ডা কিছু অনুভব করতে পেরে হাতটাকে নিজের চোখের সামনে আনে। হাতের দিকে তাকাতেই আহান থমকে গিয়েছে। মনে হচ্ছে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। আবার ও হারিয়ে ফললে জীবনের একটা মহামুল্যবান অংশ। আহান হাতের দিকে তাকিয়ে অস্ফূর্ত ভাষায় বলে।,,,,,
“” র.. রক্ত।”

অনুভবে তুমি পর্ব ৪২