বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৪

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৪
Arshi Ayat

অনুরুপের গা গুলিয়ে উঠলো ঘৃণায়।ছিঃ একটা মানুষ এতটা নিকৃষ্ট কি করে হতে পারে ও ভেবে পায় না।ও পাশ থেকে বিশ্রী হেসে চৈতী বলল,’কি হলো?শুতে পারবি আমার সাথে?’
অনুরুপ বড় একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলো তারপর বলল,’তোর এত কারেন্ট!প্রথমে সাইফুল তারপর মন্ত্রী!কেউই তোকে সুখী করতে পারলো না?ভ্যারি স্যাড!আমার তোর জন্য দুঃখ হচ্ছে তবে আমার রুচি এত নীচ না।তো মত বে*শ্যার সাথে শুয়ে নিজেকে অপবিত্র করব না আমি।’
চৈতি ভীষণ রেগে গেলো।চিৎকার করে বলে উঠলো,’এর ফল মোটেও ভালো হবে না এবার দেখ ওর সাথে আমি কি করি।’

এটা বলেই কল কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে দিলো চৈতি।অনুরুপ দ্রুত নিজের সাংবাদিক বন্ধু অসিমকে ফোন করে বলল,’বন্ধু একটা হেল্প লাগবে।’
‘কি হয়েছে?কি হেল্প?’
‘পরে বলব সব।এখন একটা হেল্প কর প্লিজ।’
‘আচ্ছা,বল কি করতে হবে?’
‘একঘন্টার মধ্যে রেলমন্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ের খবরটা প্রচার করতে হবে।’
‘কি বলছিস এসব?’অসিম লাফিয়ে উঠলো।
‘হ্যাঁ,ঠিকই বলছি।পুরো সলিড খবর।আমি তোকে কাবিননামার ছবি,মেয়ের ছবি,ডিটেইলস সব দিচ্ছি।তুই জাস্ট একঘন্টার মধ্যে এটা প্রচার করে দিবি।’
অসিম কৌতুহলী হয়ে বলল,’তুই এসব কোথা থেকে জেনেছিস?আর এটা করে তোর কি লাভ?’
‘সব বলব।একদিন সময় করে চেম্বারে বা বাসায় আসিস।কেন করেছি,কিভাবে জেনেছি সব বলব।শুধু এখন আর প্রশ্ন করিস না।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ঠিকাছে বন্ধু।তুই ডকুমেন্টসগুলো পাঠিয়ে দে।আমি নিউজটা কভার করে দিব।’
‘ওকে বন্ধু।’
অনুরুপ সব ডিটেইলস পাঠিয়ে দিলো অসিমের ফোনে।
অনুরুপের কথামতো মিলাত ভেবেছিলো হোটেল থেকে বের হবে না কিন্তু বান্ধবী মোনা এসে বলল ওদের এক বান্ধবীকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।ওর ফোনও বন্ধ আসছে।মিলাত শুনে ভয় পেয়ে গেলো আর বান্ধবীকে খুঁজতে বেরিয়ে গেলো তৎক্ষনাৎ।একেকজন একেকদিকে গেলো আর লাগাতার ফোনে চেষ্টা করছিলো কিন্তু কেউই পাচ্ছিলো না।মিলাত রাস্তা পার হবে এমন সময়ই একটা কালো টয়োটা এসে দাঁড়ালো মিলাতের সামনে মিনিটের ব্যবধানে গাড়ির দরজা খুলে গেলো আর দু’টো লোক ওকে টেনে ভেতরে নিয়ে গেলো।মিলাত চিৎকার করতে চাইলেও পারলো না।চেতনানাশক দিয়ে ওকে অজ্ঞান করে ফেলা হলো।আর যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে একটা স্বল্প আলোর রুমে আবিষ্কার করলো হাত,পা,মুখ বাঁধা অবস্থায়।চারপাশে চোখ বুলিয়ে বুঝলো এটা একটা স্টোর রুম।অনেক পুরোনো জিনিস এখানে ফেলে রাখা হয়েছে কিন্তু ও বুঝতে পারছে না জায়গাটা কোথায়!

অনুরুপ কক্সবাজার পৌছুতেই মিলাতদের হোটেলে চলে গেলো দ্রুত।ওর বান্ধবীদেরও ফোন করলো।ওদের মধ্যে মোনা ফোন রিসিভ করতেই অনুরুপ বলল,’তোমরা কোথায়?’
মোনা কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,’ভাইয়া,ইশিকাকে পাচ্ছিলাম না আমরা সকাল থেকে।আমি আর মিলাত ওকে খুঁজতে বের হয়েছি ঘন্টা দুয়েক আগে।খুঁজতে খুঁজতে ইশিকাকে রাস্তায়ই পেয়ে গেছি।ওর ফোনে চার্জ ছিলো না বলে ওর ফোন বন্ধ দেখাচ্ছিলো।আমার প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।ওকে পাওয়ার পর আমি ভাবলাম মিলাতকে ফোন করে জানিয়ে দিই কিন্তু মিলাতকে ফোন দেওয়ার পর ওর ফোনও বন্ধ দেখাচ্ছিলো।অনেকবার ফোন করার পরও বন্ধ আসছিলো।ইশিকা বলল হয়তো ওর ফোনও বন্ধ হয়ে গেছে আমিও ভাবলাম এটাই হতে পারে তাই আর চিন্তা না করে হোটেলে চলে এলাম।ভেবেছিলাম ইশিকাকে না পেয়ে ও নিজেও হোটেলে আসবে কিন্তু দুইঘন্ট হয়ে গেছে ওকে খুঁজে পাচ্ছি না।আমি আর ইশিকা ওকে খুঁজছি এখনো।’

‘তোমরা আমাকে ফোন করলে না কেনো?’
‘ভাইয়া আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আর ভেবেছিলাম ও হয়তো চলে আসবে তাই জানাইনি।স্যরি ভাইয়া।’
‘আচ্ছা,তোমরা হোটেলে আসো।আমি তোমাদের হোটেলেই আছি।’
‘আসছি,ভাইয়া।’
চৈতি মিলাতকে একটা হোটেলের বেজমেন্টে আটকে রেখে বাইরে এসেছিলো সকালের নাস্তা করতে এরমধ্যেই মতিউর সাহেব ফোন করলো।চৈতি ফোন রিসিভ করে প্রথমেই বলল,’হাই,হানি।’
‘কুত্তি,বে*শ্যা এই খবর লিক হলো কিভাবে?’
‘কোন খবর?’
‘নাটক করিস না।’

‘আমি বুঝতে পারছি না তুমি কি বলছো।’
‘বিয়ের খবর।’
‘কিসব বলছো!আমি তো কিছুই জানি না।আমি কক্সবাজার এসেছিলাম একটু ঘুরতে।’
‘খা*কি তুই তাড়াতাড়ি আন্ডারগ্রাউন্ডে যা।এক্ষুনি!নয়তো তোর এমন অবস্থা করব যে লাশও খুঁজে পাবে না কেউ।’
‘আচ্ছা আমি যাচ্ছি।’
‘দ্রুত যা।’

ফোন রেখেই চৈতি উঠে দাঁড়ালো।ও বুঝেছে কাজটা কার তাই রাগে মিলাতকে এখনি শেষ করে দিতে চাইলো কিন্তু এরমধ্যেই রেস্টুরেন্টে ভীড় জমে গেছে।সাংবাদিকও আসা শুরু হয়ে গেছে।চৈতি বুঝলো হাতে আর সময় নেই ওকে বের হতে হবে।ও দ্রুত হোটেলের অন্য গেট দিয়ে বেরিয়ে গেলো।
মোনা আর ইশিকা হোটেলে পৌঁছানোর পর অনুরুপ বলল,’তোমরা ব্যাকপ্যাক করে এখনি ঢাকা চলে যাও।’
‘আর মিলাত?’মোনা জিজ্ঞেস করলো আতঙ্কিত স্বরে।
‘মিলাত কিডন্যাপ হয়েছে।’

মোনা আর ইশিকা দু’জনেই আঁতকে উঠলো কথা শুনে।ইশিকা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,’কিভাবে?কে করলো!’
‘জানবে পরে।এখন হাতে সময় নেই।দ্রুত বের হও তোমরা।’
‘আপনি ওর খবর পেলে আমাদের জানাবেন।’
মোনা বলল।
অনুরুপ মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেলো হোটেল থেকে।
প্রত্যেকটা নিউজ চ্যানেলে রেলমন্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ের খবর ফলাও করে প্রচার হচ্ছে।কাদের সাহেব তাৎক্ষণিক প্রেস কনফারেন্স ডাকলেন।

চোখ খুলতেই নুহা দেখলো ও রেভানকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।তৎক্ষনাৎ সরতে গিয়েও পারলো না তার আগেই রেভান ওর হাত ধরে ফেলেছে হাতেনাতে ধরা পড়ায় চোরের মত মুখ নামিয়ে ফেললো নুহা।রেভান চোখ ছোটো ছোটো করে বলল,’কে জানি বলতো আমি মিথ্যা বলি,তার নামে বানিয়ে বলি তাহলো এসব কি?’
‘ভূলে হয়েছে এমন।প্রতিদিন তো করি না।’
‘জ্বি,না।আপনি প্রতিদিনই করেন।’,

নুহা এবার নিজের ঠাট বজায় রাখতে বলল,’হ্যাঁ তো কি হয়েছে?আমর কোলবালিশ ধরে ঘুমানের অভ্যাস তো আমি কি করব।ঘুমের ঘোরে ধরে ফেলেছি তখন তো বুঝি নি।’
‘জ্বি আপনার বেলায় ষোলো আনা মাফ আর এটা যদি আমি করতাম তাহলে তো এতক্ষণে কেয়ামত সংঘটিত হয়ে যেতো।’
‘হ্যাঁ তো আপনি করবেন কেনো?’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৩

‘হ্যাঁ সেটাই আপনি তো মহারাণী।আপনি যা খুশি করতে পারবেন।’
নুহা এক ঝটকায় নিজে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,’জ্বি,আমি মহারাণীই।’
এটা বলেই উঠে চলে গেলো।রেভানও বিড়বিড় করতে করতে উঠে বসলো।
অনুরুপ পাগলপ্রায় দশা।কোথাও পাচ্ছে না মিলাতকে।পুলিশ কমপ্লেন করতে গিয়েও পারলো না চব্বিশ ঘন্টার আগে পুলিশ অভিযোগ নিবে না।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৫