অনুভবে তুমি পর্ব ৪৭
লিজা মনি
ড্রয়িংরুমে গম্ভির হয়ে বসে আছেন আসাদ হোসেন। তার সামনে রয়েছে ইয়ানা, হল্লা পার্টি, রায়ান, ইউভি আর ফায়াজ রহমান।
আসাদ হোসেন — তা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমার মত গরিবের বাড়িতে কেনো জানতে পারি?
ফায়াজ রহমান — ধনী – গরিব বাদ দেন সবার আগে আমরা মানুষ। আসলে ভাই একটা খুব দরকারে এসেছিলাম।
আসাদ হসেন — হ্যা বলুন আমি সামান্য ব্যবসায়ী কি করতে পারি?
ফায়াজ রহমান— না ভাই সাহেব ব্যবসা নিয়ে না। আপনার যদি অনুমতি থাকে তাহলে আপনার ছোট মেয়েকে আমার বাড়ির বউ করে নিতাম।
আসাদ হোসেন অবাক হয়ে সবার দিকে তাকায়। এখানে সবাই উপস্থিত তার মানে সবগুলো প্লান করে এসেছে। এইটুকু উনি বুঝে গেছেন।
আসাদ হোসেন — মাথা ঠিক আছে আপনার। আমার মেয়ে এখনো বাচ্চা। আর আপনি ওর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন।
ফায়াজ রহমান — মেয়ে বাচ্চা হোক হাটা তো শিখেছে তাহলেই হবে।
এরপর ফায়াজ রহমান কান্নার অভিনয় করে বলে,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“” কি করব ভাই সাহেব বলুন? ছেলেটা যখন অনেক ছোট ছিলো তখন তার মাকে হারিয়েছে। এরপর থেকে আমি একা হাতেই বড় করেছি। কখনো মুখ ফুটে কিছু চাই নি। এই প্রথমবার কিছু চেয়েছে। আপনার মেয়েকে আমার ছেলে খুব ভালোবাসে। আমার ছেলেটা হাটতে, বসতে, খেতে গেলে শুধু বলতে থাকে রুয়ানা আর রুয়ানা। ওকে না পেলে আমার ছেলে আত্নহত্যা করবে।এমন অনর্থ হতে দিয়েন না ভাই সাহেব।””
আত্নহত্যার কথা শুনে হল্লাপার্টি আর রায়ান ইউভির দিকে বড় বড় চোখ করে তাকায়। ইউভি ইনোসেন্ট ফেইস নিয়ে ইশারা দিয়ে না করে তেমন কিছুই না।
এরপর ফায়াজ রহমানকে ফিসফিস করে বলে,,,,
“” প্রথম থেকে সব ঠিক ছিলো কিন্তু শেষের দিকে একটু বেশি নাটক করে ফেলছো না?”
ফায়াজ রহমান ইয়ভির কথা শুনে হালকা কাশি দিয়ে বলে,,,,
“” বেশি হয়ে যাচ্ছে ”
ইউভি — হুম।
আসাদ হোসেন — দেখুন ইউভি বাবাকে আমার খুব পছন্দ। ছেলে হিসেবে ও খুব ভালো। কিন্তু আমার দিকটাও ভাবতে হবে। এত ছোট বয়সে আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে পারব না। ও সংসার বলতে কিছু বুঝে না।
ফায়াজ রহমান —- সংসার সম্পর্কে কিছু বঝতে হবে না শুধু আমার ছেলের বউ হয়ে গেলেই হবে। আমার ছেলেটাকে বাঁচান ভাই।
আসাদ হোসেন গম্ভির হয়ে ইউভির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” তোমাকে তো আমি খুব বুদ্ধিমান মনে করেছিলাম তাহলে এমন ছেলেমানুষী কেনো করছো?
ইউভি মাথা নিচু করে রাখে। ইয়ানা ইউভির দিকে একপলক তাকিয়ে এরপর আসাদ হোসেনকে বলে,,,,
“” রাজি হয়ে যাও না আব্বু। দেখো ভাইয়ার সাথে যদি রুইর বিয়ে হয় তাহলে ও সবসময় আমার সামনাসামনি থাকতে পারবে। এতে তো রুইয়ের জন্য ভালো। সুমুর সাথে রায়ান ভাইয়ার বিয়ে দিয়ে যেমন নিরাশ হও নি। রায়ান ভাইয়া সুমুকে কোনো অভিযোগ করার সুযোগ দেই নি ঠিক তেমনি ইউভি ভাইয়া কোনোদিন আমাদের রুইকে অভিযোগ করার সুযোগ দিবে না। হ্যা হয়ত রুইয়ের বয়স কম ফলে আমি ও এই প্রস্তাব নাঁখোজ করেছি। কিন্ত পরে ভাবলাম রুইয়ের জন্য ইউভি ভাইয়ার মত এমন ভালো ছেলে আর নেই। আমি তোমাকে আশ্বাস দিয়ে বলছি আব্বু তুমি কোনো দিন নিরাশ হবে না।””
আসাদ হোসেন পড়েছেন বিপাকে। এইদিকে সেলিনা হোসেন ও বাড়িতে নেই গিয়েছেন বোনের বাড়িতে।
আসাদ হোসেন — কিন্তু রুই কি রাজি হবে?
ইয়ানা — ওকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। কোনো চিন্তা করো না।
আসাদ হোসেন — দেখ রাজি হয় কি না। ওক কেন্দ্র করেই বিয়ে আগাবো।
ইয়ানার ইচ্ছে করছিলো আসাদ হোসেনকে জড়িয়ে ধরে থ্যাংক্স জানাতে। কিন্ত এখানে বড়রা আছে তাই আপাযত নিজের অধম্য ইচ্ছে কে মাটি চাপা দিলো।
ইয়ানা রুয়ানার রুমে যায় দেখে মেয়েটা এখন ও ঘুমাচ্ছে। নিচে ওর বিয়ের কথা চলছে আর এই মেয়ে বেঘুরে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু রুই কি এই বিয়েতে রাজি হবে?
ইয়ানা রুয়ানাকে ঘুম থেকে জোড় করে উঠিয়ে ওয়শরুমে পাঠায়। রুয়ানা ফ্রেশ হয়ে এসে ইয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,,,
“” কখন এসেছো তুমি? “”
ইয়ানা — অনেক আগে এসেছি কিন্তু তুই ঘুমে ছিলি। এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে আমার সাথে ওই বাড়িতে যাবি।
রুয়ানা — আহান ভাইয়াদের বাড়িতে কেনো? ওদের বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান নাকি?
ইয়ানা — না। এমনি যাবি কোনো অনুষ্ঠান হলে যেতে হবে তার কোনো মানে আছে।
রুয়ানা — না তা বলেনি। হঠাৎ করে যেতে বলছো তাই বলছিলাম আরকি।
ইয়ানা — হুম তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে।
ইয়ানা শুধু মনে মনে ভাবছে রুয়ানা যদি রাজি না হয় তাহলে এই বিয়ে নিয়ে কখনো আগাবে না। সে এই বাড়িতে থাকতে পারবে না এক রাতের জন্য হলে ও। দেখা গেলো আহান রাতে এসেই সবার সামনে দিয়ে তুলে নিয়ে গেলো। ইজ্জত বাঁচানোর জন্য এর চেয়ে ভালো রুয়ানাকে আহানদের বাড়িতে নিয়ে রাতে বুঝাবে।
ইয়ানা তারা সবার থেকে বিদায় নিয়ে রুয়ানাকে সাথে করে চৌধুরি ভিলাই নিয়ে যায়। রুয়ানা দাদুমনি আর আহিয়ার সাথে গল্প করে চুপিচুপি ছাদে চলে যায়। সে এই বাড়ির সব কিছু দেখেছে কিন্তু কখনো ছাদ দেখেনি। এত রাতে ইয়ানা ও আসতে দিবে না তাই লুকিয়ে চলে এসেছে। ইয়ানা অনেক্ষন ধরে আহানের জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু এখনো আসে নি। তাই কোনো কিছু ভেবে চলে যায় আহিয়ার রুমে। কারন আহিয়ার সাথে রুয়ানা শুইয়েছে। কিন্তু আহিয়ার রুমে গিয়ে শুধু আহিয়াকে দেখতে পাই কিন্তু রুয়ানা নেই।
ইয়ানা — আহিয়া রুয়ানা কোথায়?
আহিয়া — জানি না বউমনি এতক্ষন তো আমার সাথেই ছিলো। আমি ভাবলাম ও তোমার কাছে গিয়েছে।
ইয়ানা — আচ্ছা ঠিক আছে তুমি ঘুমাও আমি দেখে আসছি।
ইয়ানা কোনো কিছু না ভেবে ছাদে চলে যায়। কারন সে জানে রুয়ানার ছাদের উপরের খোলা আকাশে দাঁড়িয়ে থাকতে খুব পছন্দ করে। ছাদে গিয়ে কাঙ্খিত ব্যক্তিকে পেয়ে ও যায়।
ইয়ানা —- কিরে তুই এত রাতে ছাদে কি করছিস?
হঠাৎ কারোর গলা শুনে রুয়ানা ভয়ে কেঁপে উঠে। এরপর সামনে ইয়ানাকে দেখে বুকে থুথু দিয়ে বলে,,,,,
“” ওহহ আপু তুমি? আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তোমাদের ছাদ দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই এসেছিলাম। আসো চলে যায়।
এই বলে রইয়ানা চলে যেতে নিলে ইয়ানার কথা শুনে দাঁড়িয়ে পরে,,,
“” দাড়া কথা আছে তোর সাথে। “”
রুয়ানা — হ্যা কি বলবে বলো?
ইয়ানা — দেখ রুই আব্বু আমাদের জন্য যা কিছু করবে সব ভালোর জন্য করবে এইটা মানিস তো?
রুয়ানা — হ্যা। এইটা না মানার কি আছে?
ইয়ানা — দেখ বোন তোকে আমি খুব ভালোবাসি তাই তোর ভালোর জন্য একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রুয়ানা — হ্যা কি বলবে বলো না।
ইয়ানা নিজের ঠোঁট গুলোকে জিভ দিয়ে হালকা ভিজিয়ে রুয়ানার বাহু ধরে বলে,,,,,
“” আসলে তর বিয়ে ঠিক করা হয়েছে ইউভি ভাইয়ার সাথে। তুই যদি রাজি থাকিস তাহলে বিয়ে নিয়ে কথা বলব। বয়স বিবেচনা করে আব্বু ও এই বিয়েতে রাজি না শুধু আমার কারনে হ্যা বলেছে।””
ইয়ানার কথা শুনে রুয়ানা দুই কদম পিছিয়ে যায়। এরপর কাপাকাপা কন্ঠে বলে,,,,,,
“” পাগল হয়ে গিয়েছো তুমি আপু! ইউভি ভাইয়ার সাথে বিয়ে কখনো সম্ভব না। উনি আমার থেকে অনেক বড় তারচেয়ে বড় কথা উনি তো আমাকে ভালোবাসে না। উনি যদি এই কথা শুনে তাহলে ক্ষেপে যাবে। কি লজ্জাজনক ব্যাপার আপু।””
ইয়ানা — ইউভি ভাইয়া নিজে এই প্রস্তাব নিয়ে এসেছে আমাদের বাড়িতে তুই যখন ঘুমে ছিলি তখন। উনি একা আসে নি উনার বাবাকে নিয়ে এসেছে। তোকে ইউভি ভাইয়া ভালোবাসে রুই। আর আমি জানি উনার ভালোবাসা তোকে কোনোদিন হতাশ করবে না।
রুয়ানা আশ্চর্য হয়ে বলে,,,,
“” ভালোবাসে মানে? কি সব বলছো আপু? উনি কখনো তো আমাকে বলে নি। যেদিন আমাকে বলতে পারবে ওইদিন ভেবে দেখব। হঠাৎ করে কেউ এসে বলবে আমাকে ভালোবাসে আর আমি তাকে বিয়ে করতে চলে যাব। আপু আব্বুকে বলো না আমি বিয়ে করতে চাই না।”
রুইয়ের কান্না মিশ্রিত কথা শুনে ইয়ানার খারাপ লাগছে। তাহলে রুয়ানার মনে ইউভি ভাইয়ার জন্য কিছু নেই। বিয়েটা কি তাহলে হবে না।
ইয়ানা — কিন্তু রুই ইউভি ভাইয়া বলেছে তোকে খুব ভালোবাসে। বিশ্বাস কর বোন উনি তোকে সত্যি ভালোবাসে। উনার ভালোবাসা হঠাৎ করে না আমার আর আহানের বিয়ের আগে থেকে তোকে উনি ভালোবাসে।
রুয়ানা শুধু অবাক হচ্ছে। ইউভি ওকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসে।
রুই —উনি তো কখনো আমাকে বলেনি আপু। যদি আমাকে ভালোবাসতো তাহলে অবশ্যয় বলত তাই না।
ইয়ানা কিছু বলতে তার আগেই এক পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
“” সব ভালোবাসা কি মুখে বলতে হয়। অনেক অনুভুতি তো না বললে ও অনুভব করতে হয়।
ইয়ানা আর রইয়ানা সেই ব্যক্তিটির দিকে তাকায়।
ইয়ানা — আরে ইউভি ভাইয়া আপনি?
ইউভি তাদের দিকে এগিয়ে এসে বলে,,,
“” হুম আমি। তোমার বোন মনে হয় আমার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শুনার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে”
রুয়ানা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। এই লোকটা তাকে ভালোবাসে ভাবতেই জেনো কেমন অনুভুতি বয়ে যায়।
ইয়ানা — ভাইয়া আহান নিশ্চয় চলে এসেছে। আপনারা কথা বলুন আমি আপনার বন্ধুর কাছে যায়। আমার যাওয়া দেরি করলে দেখা যাবে রুমের প্রতিটি জিনিস মরে মাটিতে পড়ে আছে। এরপর আমার গালে কয়েকটা থাপ্পর আর সাথে ধমক ফ্রি।
ইয়ানার কথা শুনে ইউভি হেসে দেয়। সাথে ইয়ানা ও হেসে বলে,,,,
“” কথাগুলো এখন মজা করে বললে ও এইটাই সত্যি ভাইয়া। আমার শাশুরি আম্মা ওনাকে মধু খাওয়াতে ভুলে গিয়েছিলো। আমি যাই আপনারা কথা বলুন। এই বলে ইয়ানা ছাদ থেকে আহানের রুমের দিকে অগ্রসর হয়।
ইয়ানা চলে যেতেই রুয়ানা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। ইউভি দুরত্ব বজায় রেখে রুয়ানার পাশাপাশি দাঁড়ায়।
অনেক্ষন দুইজনে নিরবিতা পালন করে ইউভি বলে উঠে,,,
“” জানো যখন আমি ছোট ছিলাম তখন আমার মা কে হারিয়ে ফেলি। এরপর থেকে মেয়েদের সান্নিধ্যে কম থাকতাম। তবে মেয়ে ফ্রেন্ড ছিলো কিন্তু কাউকে ভালোবেসে উঠতে পারি নি। দেখতে দেখতে ২৭ বছর পার করে দিলাম কিন্তু ভালোবাসা নামক শব্দটি আমার হৃদয়ের সাথে জড়িত হয় নি। কিন্ত কথায় আছে কিছু ভালো দেরী করে আসে। বিদেশ থেকে দেশে আসলাম। রাস্তায় এক পিচ্চির সাথে ধ্বাক্কা খেয়েছিলো আমার পুরুষনালী দেহ। ওইদিন পিচ্চিটা আমকে অনেক কথা বলেছিলো।
প্রথমে প্রচুর রাগ হয়েছিলো থাপ্পর দিতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু কেনো জানি দিতে পারি নি। এরপর থেকে আমার প্রত্যেকটা রজনীতে চোখ বন্ধ করলে শুধু পিচ্চিটার চঞ্চল মুখটা ভেসে উঠত। দিন দিন অস্থির হয়ে পড়ছিলাম আমি। লড়তে থাকি এই সুপ্ত অনুভুতির সাথে। এই পিচ্চিটা যখন আমার সামনে আসত তখন আমার পুরুষনালী দেহটা থরথর করে কেঁপে উঠত। কি হাস্যকর তাই না যেখানে শত্রুদের মারতে ও শরীর কেঁপে উঠে না সেখানে এক পিচ্চির উপিস্থিতিতে আমি কেঁপে উঠতাম। অজানা ঘূর্নিঝড় বয়ে যেত আমার অস্তিত্বে। রাত থেকে দিন, দিন থেকে রাত হতে থাকে। পেরে উঠছিলাম না নিজের অনুভুতির সাথে। এক পর্যায়ে বুঝতে পারি আমি ওই পিচ্চিটার ভালোবাসায় ডুব দিয়েছি। সেই ভালোবাসা যাকে না পেলে বিনাশ নিশ্চিত। কিন্তু ভয় ছিলো একটাই আমার আর ওর মধ্যে বয়সের ফারাক। কিন্তু কথায় আছে ভালোবাসা আর বিশ্বাস দিয়ে মরুভুমিতে ও ফুল ফুটানো সম্ভব। শুধু এই কথাকে কেন্দ্র করে নিজের অনুভুতি নিয়ে অগ্রসর হয়েছি। কিন্তু আমার সেই পিচ্চি পাখিটাকি রাজি আমাকে বিয়ে করার জন্য।
ইউভি কথা শেষ করে রুয়ানার দিকে তাকায়। রুয়ানা অবাক নেত্র মেলে ইউভির দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখের কোনে পানি চিক চিক করছে। ইউভি ইয়ানার চোখে পানি দেখে অশান্ত গলায় বলে,,,,
“” এই চোখে পানি কেনো? সরি আমি কষ্ট দিয়ে থাকলে মাফ করে দিও।””
রুয়ানা ছোট করে বলে,,,, কষ্ট দেন নি তবে আমার এই ছোট মনকে ভীষনভাবে মুগ্ধ করেছেন।
এইবলে রুয়ানা এইখান থেকে চলে যায়। ইউভির কাছ থেকে যেনো এক প্রকার পালিয়ে গেলে বাঁচে।
ইউভি রুয়ানার কথা মনে মনে আওরাতে থাকে। এরপর আকশের পানে তাকিয়ে এক তৃপ্তির হাসি দেয়।
ইয়ানা রুমে গিয়ে দেখে আহান ভিডিও কনফারেন্স করছে। কিন্তু ভিডিও থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসতেই কপাল কুচকে নেই। কথাগুলো সব ইটালিয়ান ভাষায় ছিলো তাই ইয়ানা কিছুই বুঝতে পারছে না।সাথে আহান ও খুব হেসে হেসে ইটালিয়ান ভাষায় কথা বলছে। আহান ইটালিয়ান ভাষা থেকে বেশিরভাগ ইংলিশ শব্দ ব্যবহার করছে তাই ইয়ানা একটু একটু বুঝতে পারছে কাজ নিয়ে কথে বলছে। কাজ নিয়ে কথা বলছে ভালো কথা কিন্তু এত হেসে কথা বলার কি আছে? কই আমার সাথে তো এইভাবে কথা বলে না। আমার সাথে কথা বললে বিশটা কথার মাঝে দশটা কথা ধমক দিয়ে। এদিক থেকে সেদিক হলে বিখ্যাত ডাইলগ”” থাপ্পর মেয়ে অজ্ঞান করব বিয়াদপ মেয়ে””। আর এখন দেখো যেই সুন্দরী মেয়ে দেখেছে এমনি হেসে হেসে কথা বলছে আর আমি কারোর সাথে তাকাতে ও পারি না। ইয়ানা বির বির করতে করতে আহানের পাশে গিয়ে কোনো শব্দ ব্যয় না করে শুয়ে পড়ে। আহান ইয়ানার উপিস্থিতি টের পেয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় জানিয়ে ল্যাপটপ অফ করে দেয়। এরপর ইয়ানার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় ইয়ানা একদম বিছানার সাইড ঘেসে শুয়েছে।
আহান ছোট ছোট চোখে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,,, এর আবার কি হলো।
আহান — ওইদিকে শুয়েছো কেনো? এত সাইডে শুয়েছো পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাবে তো।
কিন্ত ইয়ানার কোনো হেলদুল নেই। আহানের এইবার প্রচুর রাগ হচ্ছে। এই মেয়ে এমন ত্যারামি করছে কেনো আজব। আমি তো কিছু বলি নি তাহলে।এরপর আহান হালকা ধমক দিয়ে বলে,,,,,
“” ভিমরুতি ধরেছে ত্যারামি করছো কেনো? থাপ্পর মেরে ত্যারামি শেষ করব বিয়াদপ””
এরপর ও ইয়ানার কোনো ভাবান্তর নেই। আহান এইবার রেগে হেচকা টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ইয়ানা ও আহানের বুক থেকে সরে আসতে চাইলে আহানের শক্ত হাতের থাপ্পরের শিকার হয়। ইয়ানা নিজের গাল ধরে ঠোঁট উল্টিয়ে আহানের দিকে তাকায়।
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” এই একদম এইভাবে তাকাবে না কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি।””
ইয়ানা আহানের শার্টের বোতামগুলো নিয়ে টানাটানি করছে। আহান ইয়ানার কান্ড দেখে কপাল কুচকে বলে,,,,
“” আমার শার্ট তোমাকে কি করেছে? এইভাবে টানাটানি করছো কেনো? বোতামগুলো ছিড়ে যাবে হাত সরাও।
ইয়ানা হাত না সরিয়ে মিনমিন করে বলে,,,,
“” দেখুন আমি তো একদম সুস্থ হয়ে পড়েছি। আমাকে আবার মা হবার সুযোগ দিবেন আহান? প্রমিস করছি এখন আপনার সব কথা শুনে চলব।”
আহান ইয়ানার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকায়। ইয়ানা আহানের তাকানো দেখে ইনোসেন্ট ফেইস নিয়ে বলে,,,,,
“” প্লিজ””
আহান দাতে দাত চেপে বলে,,,,
“” এক থাপ্পর খেয়ে পেট ভরেনি আরেক থাপ্পর খেতে ইচ্ছে করছে। ফালতু কথা রেখে চুপচাপ ঘুমাও।
ইয়ানার হঠাৎ করে রাগ উঠে যায়। আহানের বক্ষ থেকে মাথা তুলে উঠে বসে। এরপর আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” দেখুন আমি A সার্টিফিকেট প্রাপ্ত এডাল্ট মেয়ে। আমি সতেরো বছরের নিব্বা নয়। আমার সব কিছু নেওয়ার অধিকার আছে। আপনি সব কিছুতে এইভাবে বাধা দিতে পারেন না।আর আমার মা হওয়ার জন্য যথেষ্ট বয়স হয়েছে।””
আহান — আচ্ছা সব কিছুর অধিকার আছে। তাহলে তোমার অধিকারে তো আর হস্তক্ষেপ করছি না। মা হও আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমাকে এর মধ্যে টানবে না।
ইয়ানা আহানের কথা শুনে হা করে তাকিয়ে থাকে। উনাকে টানব না মানে বাচ্চা কি আসমান থেকে আসবে।
ইয়ানা দাতে দাত চেপে বলে,,,,,
“” ঠিক আছে টানব না আপনাকে? বর্তমানে প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গিয়েছে। আজকাল যাদের বাচ্চা হয় না তখন অনেক দম্পত্তি প্রযুক্তিগত উপায়ে বাচ্চা নিয়ে থাকে। আমিও টাকা দিয়ে শুক্রানু কিনে ফেলব আমার স্বামীর তো আর টাকার অভাব নেই। আশা করি এর জন্য কিছু টাকা দিলে ওনার ব্যাংক খালি হবে না””
ইয়ানা কথাগুলো মজা করে বললে ও আহানের দিকে তাকাতেই ভড়কে যায়। আহান রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ইয়ানার পানে তাকায়। মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে আগ্নেয়গিরির লাভা বের হচ্ছে। ইয়ানা ঢুক গিলে মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” আমি তো মজা করে বলেছি এইভাবে রেগে যাচ্ছেন কেনো “”
ইয়ানার কথা শেষ করার পর পর আহানের ধমক খেয়ে ইয়ানা থরথর করে কেঁপে উঠে।
“” চুপ ফাজিল। মনের মধ্যে এইসব চলে? অন্যের জিনিস নিজের গর্ভে ধারন করার খুব ইচ্ছে তাই না। মেরে ফেলে দিব ইয়ানা। একদম নিশ্বেস করে দিব। অগ্নি চৌধুরি কি জিনিস সেটা তোমার কল্পনার বাহিরে””
আহান বড় বড় শ্বাস টানছে। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। কি বলল এই মেয়ে এইসব, আমি কি মরে গেছি।
ইয়ানা আহানের রাগ দেখে ভয়ে ভয়ে বলে,,,,,
অনুভবে তুমি পর্ব ৪৬
” শান্ত হন প্লিজ আমি তেমন কিছু বলতে চাই নি””
আহান—- কেমন কথা বলতে চেয়েছিলে তুমি? 😡
ইয়ানা এইবার ভয় না পেয়ে বলে,,,,,
“” আরে বাবা এইভাবে রেগে যাওয়ার কি আছে? আমি তো এমনি….
ইয়ানা আর কিছু বলতে পারল না আহান ইয়ানার ঠোঁট আকড়ে ধরল। ইয়ানা প্রথমে অবাক হলে ও কিছু বলে না। ইধানিং আহান বেশি রেগে গিয়ে নিয়ন্ত্রন হারা হয়ে পড়লে ইয়ানার ঠোঁট আকড়ে ধরে। ইয়ানা ও বাধ্য মেয়ের মত চুপচাপ থাকে।