অনুভবে তুমি পর্ব ৪৮

অনুভবে তুমি পর্ব ৪৮
লিজা মনি

প্রত্যেকটা মুহুর্তকে তাল মিলিয়ে চলে গেলো একটা মাস।এই এক মাসে বদলেছে অনেক কিছু। ইয়ানা আর আহানের সম্পর্ক আর মজবুত হয়েছে। ইয়ানার মিসক্যারেজ হয়েছে আজ তিন মাস হতে চলল। সবচেয়ে খুশির খবর হচ্ছে আজ রুয়ানা আর ইউভির বিয়ে। রুয়ানার যেহেতু বয়স কম তাই বিয়েটা চুপিচুপি হচ্ছে। আসাদ হোসেন আর সেলিনা হোসেন রাজি ছিলেন না। আসাদ হোসেন নিজের মেয়েকে এত অল্প বয়সে বিয়ে দিবে না। সেলিনা হোসেন এই নিয়ে বেঁকে বসে। কিন্তু সবার জোড়াজোড়িতে এক প্রকার রাজি হয়ে যায়। কোনো মতে বিয়ের পর্ব শেষ করে ইউভি রুয়ানাকে নিয়ে নিজের রুমে যায়। রুয়ানা কান্নার ফলে এখনো হেচকি উঠছে। ইউভি জীবনে আজ অন্যতম একটা জিনিস অর্জন করেছে। রুয়ানার কান্না দেখে ইউভি নরম কন্ঠে বলে,,,,,

“” কষ্ট হচ্ছে খুব? ”
রুয়ানা — হ্যা। কখনো তাদের ছাড়া থাকি নি। ”
রুয়ানা ইউভির কপালে চুমু খেতে যাবে তখন ওই রুয়ানা লাফ মেরে সরে যায়। ইউভি হতবম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে। রুয়ানা নিজের শাড়ির কুচি শক্ত করে ধরে যাতে খুলে না যায় এরপর ইউভির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” কি.. কি করছিলেন? “”
ইউভি হতাশ হয়ে বলে,,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“” কিছু না । ভুল করে ফেলেছি মাফ করে দাও।””
রুয়ানা — হ্যা ক্ষমা করে দিলাম।
ইউভি — উদ্ধার করেছো আমাকে ক্ষমা করে। এইভাবে শাড়ির কুচি ধরে রেখেছো কেনো?
রুয়ানা — খুলে গিয়েছে তাই।
ইউভি হালকা কাশি দিয়ে বলে,,,,
“” ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে তোমার যেটা কম্ফোর্টাবল লাগবে সেটা পড়ে নাও।
রুয়ানা —আমার তো টপস বা টি-শার্ট পড়লে কম্ফর্টাবল লাগে। কিন্তু সবাই যে বলে দিয়েছে নতুন বউ তাই শাড়ি পড়তে হবে।

ইউভি — সবাই বলেছে ওইটা বাদ দাও। আমি কি বলেছি সেটা শুনো। যেহেতু এখন রাত তাই টি-শার্ট পড়ে নাও।
রুয়ানা হুম বলে ওয়শরুমের দিকে অগ্রসর হয়। এরপর আবার কোনো কিছু ভেবে ইউভির কাছে এসে দাঁড়ায়।
রুয়ানাকে দেখে ইউভি কপাল কুচকে বলে,,,,
“” কি হলো যাও। তুমি বের হলে আমি শাওয়ার নিব। “”
রুয়ানা দাত ধারা নিজের নখ কামড়ে বলে,,,,
“” আপনাদের এখানে বিড়াল নেই?”
ইউভি — কেনো বিড়াল দিয়ে তুমি কি করবে?

রুয়ানা — আমাকে এক ভাবি বলেছে বাসর রাতে বিড়াল মারতে হয়। কিন্তু আমি রুমে ডুকেছি পর থেকে বিড়াল খুজে যাচ্ছি একটা বিড়াল ও পাচ্ছি না। আমাকে একটা বিড়াল এনে দিন না।
রুয়ানার কথা শুনে ইউভির রীতিমত কাশি উঠে যায়।
ইউভির কাশি দেখে রুয়ানা অশান্ত গলায় বলে,,,,
“” কি হলো এইভাবে কাশি উঠেছে কেনো? এই নিন পানিটা খান কমে যাবে।
ইউভি পানি খেয়ে রুয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” বিড়াল মারার বয়স এখন ও তোমার হয় নি। যাও গিয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো।
রুয়ানা ভাবুক হয়ে বলে,,,,

“” বিড়াল মারার জন্য আবার বয়সের প্রয়োজন হয় নাকি। আমি তো ছোট কালে একটা বিড়াল মেরেছিলাম।
ইউভি অবাক হয়ে বলে,,,
“” কিহহহ”
রুয়ানা —- হ্যা আমি যখন ছোট ছিলাম তখন এক বিড়াল আমায় খামচে দিয়েছিলো তাই ওর মাথায় আমি ইট দিয়ে ডিল মারি। তারপর বিড়ালটা মারা যায়। বিড়ালটা মরে যাওয়াতে আমি খুব কান্না করেছিলাম। শুধু শুধু একটা জীবকে মেরেছি।
ইউভি রুয়ানার কথা শুনে বলে,,,

“” ওহহ আচ্ছা এই বিড়াল মেরেছো? এইত বুঝতে পেরেছো বিড়াল মারা ঠিক না।শুধু শুধু পরে কান্না করবে। কোনো কারন ছাড়া জীব জিনিসকে মারার প্রয়োজন আছে বলো? ”
রুয়ান — না কিন্তু ভাবি তারা যে বলল?
ইউভি — — তারা যা খুশি বলোক। আমার কথা শুনবে নাকি ওদের কথা?
রুয়ানা — আপনার।
ইউভি — তাহলে এইসব মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।
রুয়ানা — আচ্ছা।

রুয়ানা চলে যাওয়ার পড়ে ইউভি একটা শ্বাস ছেড়ে বিরবির করে বলে,,,
” এই মেয়ে নাকি বিড়াল মারবে সামান্য চুমু খেতে গিয়েছিলাম বলে যেভাবে লাফিয়ে উঠেছে আবার আসছে বিড়াল মারতে। কি করার বাচ্চা বউ আমাকে তো সামলাতে হবে।
তবে আজ ইউভি জীবনের সবচেয়ে অমুল্যসম্পদ পেয়েছে। রুয়ানাকে নিজের করে পেয়েছে। আজকের পর থেকে ঘুম কেড়ে নেওয়া সেই পিচ্চিটা তার বউ ভাবতেই এক শীতল হাওয়া প্রবাহিত হয়।

বিয়ে নিয়ে সারাদিনের ক্লান্তি থাকায় ইয়ানা ফ্রেশ হয়ে নেয়। ফ্রেশ হওয়ার কারনে এখন একটু হালকা লাগছে। কিন্তু অতিরিক্ত কান্নার ফলে মাথাটা এখন ও ধরে আছে। ইয়ানা শাওয়ার শেষ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল ঝারতে থাকে। ইয়ানার বাবা মায়ের সাথে আজকে থাকতে ইচ্ছে হয়েছিলো কিন্তু আহানের চোখ দেখে আর বলার সাহস হয় নি। ইয়ানার ভাবনার মাঝে তখন আহান দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করে। ইয়ানার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ইয়ানা আহানের ছোয়া পেয়ে হালকা কেঁপে উঠে।আহান ইয়ানার ঘাড়ে গাঢ় চুম্বন দিয়ে বলে,,,,

“” রুয়ানার জন্য মন খারাপ””
ইয়ানা আহানের থেকে নিজিকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,,,
“” হুম। ”
আহান — মন খারাপের কি আছে ইউভি রুয়ানাকে খুব ভালোবাসে। কখনো কষ্ট দিবে না।
ইয়ানা — যেদিন আহিয়ার বিয়ে হবে তখন বুঝতে পারবেন আমার অবস্থা।
ইয়ানার কথা শুনে আহান চুপ হয়ে যায়। আহিয়ার বিয়ের কথা শুনলেই আহানের হৃদয়টা ছেত করে উঠে। ইয়ানা আহানের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে সাহস সঞ্চয় করে বলে,,,

“” বিয়ের মধ্যে যে বাবুটা কোলে নিয়েছিলাম দেখেছেন?
আহান –হুম।
ইয়ানা — বাবুটা কত সুন্দর তাই না?
আহান — হুম।
ইয়ানা — কি আদুরে আদুরে দেখলেই মায়া হয়।
আহান — হুম।
ইয়ানা — আমাদের যদি এমন একটা বাবু হলে ভালো হবে তাই না?
আহান —- না।
ইয়ানা ক্ষেপে বলে,,,,

“” কেনো? এতক্ষন হুম হুম বলতে পেরেছেন এখন না বলেন কেনো?
আহান — এই রাতে কি শুরু করেছো তুমি?
ইয়ানা — কিছু বলব না শুধু একটা বাবু দিয়ে দিন।
আহান — পারব না।
ইয়ানা — আপনাকে পারতে হবে।
আহান —- না পারলে কি করবে?
ইয়ানা — পারবেন কেনো বাচ্চা হয়ে গেলো তো আর অফিসের সুন্দরী মেয়েগুলো তাকিয়ে থাকবে না। বাচ্চা অনেক সময় বাবার কাছে যাবে তখন সবাই বলবে অগ্নি চৌধুরি বুইড়া হয়ে গেছে। সে এখন এক বাচ্চার বাপ। সব বুঝি আমি।

আহান — বয়সের তুলনায় বেশি বুঝে ফেলছো না। আউল ফাউল কথা মাথায় আসে কিভাবে তোমার।
আহান এরপর একটা ক্লান্ত শ্বাস ছেড়ে ইয়ানার বাহু ধরে নরম সুরে বলে,,,,,,
“” দেখো ইয়ানা আমি হারাতে হারাতে হাঁপিয়ে গেছি আর হারাতে চাই না। আমার দুনিয়ায় তুমি আছো আর কিছু চাই না। তোমাকে হারাতে পারব না আমি। তোমাকে হারালে আমি শেষ হয়ে যাব।””
ইয়ানা — কেনো মনে হলো আপনি যা চাইবেন তা থাকবে। সব আল্লাহর ইচ্ছে ওনি কখন, কোন সময়, কাকে, কোথায় নিয়ে যায় কেউ বলতে পারে না। সব উনার ইচ্ছে তে হয়। আপনি হাজার চেষ্টা করলে ও কিছু আটকাতে পারবেন না।
আহান — যা খুশি হোক প্রয়োজন নেই আমার বাচ্চার। তোমার জীবনে আমি আছি আর কি লাগে তোমার। যাও চুপ চাপ ঘুমিয়ে পড়।

আহানের কথা শুনে ইয়ানার চোখ দিয়ে পানি চলে আসে। সে শুনেছে স্ত্রী অসুস্থ হলে নকি স্ত্রীর প্রতি স্বামী সকল ইন্টারেস্ট উঠে যায়। আহানের ক্ষেত্রে ও কি তাই হলো। যদি না হয় তাহলে আগের মত ভালোবাসে না কেনো? কেনো আগের মত কাছে টেনে নেই না। তাহলে কি আমার ভাবনা সত্যি। আমার স্বামী ও অন্যতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। ইয়ানা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে,,,,
“” সব ইন্টারেস্ট উঠে গিয়েছে তাই না? অসুস্থতার কারনে এখন আর আগের মত উজ্জ্বল রুপবতী নেই তাই সব ভালোবাসা শেষ। আমি আগেই জানতাম এমন কিছু হবে। প্রথমে যে ভালোবাসা দেখাই পরবর্তীতে সব শেষ হয়ে যায়। আমার ক্ষেত্রে ও তাই হয়েছে। এখন আর ভালো লাগে না আমাকে তাই না? এঁটু হয়ে গেছি।
ইয়ানার কথা শেষ করার সাথে সাথে ওর গালে এক থাপ্পর বসে। ইয়ানা কিছু বুঝে উঠার আগেই আহান ইয়ানার চিবুক শক্ত করে চেপে ধরে বলে,,,,

“” বলদ দেখেছি কিন্তু তর মত বলদ আমি একটা ও দেখি নি। তুই অসুস্থ হয়ে যদি বিছানাও পড়ে থাকিস তাহলেও কোনোদিন ভালোবাসা কমবে না। ড, তিন মাস সময় দিয়েছিলো তুই যতক্ষন সুস্থ না হবি ততক্ষন যাতে দেখাশুনা করি। বাচ্চা নেওয়া বিপদজনক হবে। কিন্ত না বুঝে মুখে যা আসে তাই বললে হয়ে যায়। ভালোবাসার প্রমান চাই তাইতো। তাহলে চল অগ্নি চৌধুরির ভালোবাসা উপভোগ কর।

এইবলে আহান ইয়ানার ঠোঁট আকড়ে ধরে। ইয়ানার আহানের এই রুপ দেখে ভয় পেয়ে যায়। আহানের চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে। ইয়ানা বুঝতে পারে কথাগুলো বলা ঠিক হয় নি। ইয়ানা তো জানে আহান তাকে কতটা চাই এই নিয়ে আঙ্গুল তোলা উচিত হয় নি। আহান রাগের বসে ইয়ানার ঠোঁট কামড়ে ধরে। ইয়ানা ব্যথায় ছটফট করতে থাকে। এরপর আহান ইয়ানাকে বিছানায় ছুড়ে ফেলে। ইয়ানার গায়ে থাকা উড়নাটা টান মেরে নিয়ে ইয়ানার দুই হাত বেধে দেয় যাতে কোনো ছটফট করতে না পেরে। ইয়ানা আহানের এই অবস্থা দেখে কান্না করে দেয়। মাথা দিয়ে ইশারা করে অস্ফুর্ত সুরে বলতে থাকে,,,,,
“” না প্লিজ এমন করবেন না। আপনি এখন নিজের মধ্যে নেই। আর কোনোদিন আপনার ভালোবাসায় সন্দেহ করব না।””

কে শুনে কার কথা আহান ঝাঁপিয়ে পড়ে ইয়ানার উপর। ইয়ানার মনে হচ্ছিলো প্রানটা বের হয়ে যাবে। আহানকে এত উন্মাদ হতে ইয়ানা কখনো দেখেনি।
সারারাতের অত্যাচা র সহ্য করতে না পেরে ইয়ানা ঙ্গান হারিয়ে আহানের বক্ষে ঢলে পড়ে। ইয়ানার কোনো নাড়াচড়া না দেখে আহানের হুশ আসে। ইয়ানার উপর থেকে উঠে নিজের চুল খামচে ধরে।
“” ওহহহ শিট। “”
এরপর ইয়ানার গালে হালকা থাপ্পর দিয়ে বলে,,,,

“” ইয়ানা, প্লিজ চোখ খুলো। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। সরি সোনা।
ইয়ানার শরীরের অবস্থা দেখে আহানের চোখে পানি চলে আসে। আহান ইয়ানাকে পাজা কোল করে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। হঠাৎ ঠান্ডা পানির স্পর্শ পেয়ে ইয়ানা হালকা কেঁপে উঠে। আহানের প্রানটা যেনো ফিরে আসে। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো কিছুক্ষনের জন্য। ইয়ানা পিটপিট করে চোখ খুলে আহানের দিকে তাকায়। আহান কপালে চুমু খেয়ে রুমের ভিতরে নিয়ে আসে। এরপর চুল মুছে টাওয়াল ছেড়ে একটা জামা পড়িয়ে দেয়। ইয়ানা আহানের বক্ষে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে উঠে।
ইয়ানা — আমি সত্যি খুব দুঃখিত। সত্যি বুঝতে পারি নি আপনি এইভাবে রেগে যাবেন। নাহলে বলতাম না বিশ্বাস করুন।
আহান ইয়ানাকে শক্ত করে চেপে ধরে মাথায় ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলে,,,,

“” রাখো ওইসব কথা। আগে বলো বেশি কষ্ট পেয়েছো? আমি সত্তিই নিজের মধ্যে ছিলাম না হঠাৎ করে মাথায় রক্ত চেপে বসে। জানি না আমার কি হয়েছিলো। কি ভুল করে ফেললাম। বেশি ব্যাথা হচ্ছে তাই না।
ইয়ানা আহানের অবস্থা দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” ব্যাথা হচ্ছে না। যেদিন আপনাকে ভালোবেসেছিলাম তার সাথে আপনার সমস্ত চরিত্র কে ও নিজের করে নিয়েছিলাম। শুধু আপনাকে না আপনার প্রতিটি হিংস্রতা আমি মাথা পেতে নিতে পারি কারন ভালোবাসি আপনাকে। এতটা ভালোবাসি আপনার হাতে মরতে ও রাজি আছি।
ইয়ানার কথা শুনে আহান নিজের সাথে আর ও মিশিয়ে নেয়। এই মেয়ে ভয়ংকর, এই মেয়ের প্রতিটি অস্তিত্ব স্পর্শ ভয়ংকর।

ইয়ানার শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। আহান যখন বুঝতে পারে কিসের থেকে জ্বর এসেছে তখন তার এক পরিচিত মেয়ে ফ্রেন্ড কে ফোন দেয়। মেয়েটি আহানের কন্ঠ পেয়ে প্রথমে চমকে উঠলে ও আহানের কথা মত তাদের বাড়িতে আসে। ড, রুমে এসে আহানের সামনাসামনি দাঁড়ায়। এরপর মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” শুনলাম তুই নাকি অগ্নি চৌধুরি। কয় রুপ নিয়ে ঘুরিস ভাই। কলেজের পর থেকে তো ভুলে গেলি কিন্তু আজ এত বড় বড় ডাক্তার থাকতে অগ্নি চৌধুরির মত এমন একজন মাফিয়া আমার মত ছোট ডাক্তার কে ডাকার কারন কি জানতে পারি।

আহানের মনে হচ্ছে জীবনের প্রথম লজ্জায় পড়েছে। তার পরিচিত ডাক্তার আসলে বুঝে যেত ইয়ানার কেনো জ্বর এসেছে বিষয়টা লজ্জাজনক। তাদের স্বামী স্ত্রীর বিষয় অন্য কেউ কেনো জানবে। তবে ইয়ানাকে তো সুস্থ হতে হবে।
আহান — রোগী দেখাতে এনেছি এত প্রশ্ন করছিস কেনো?
ডাক্তার সামাইরা — এই স্বাভাব তর কোনোদিন যাবে না। রায়ান আর ইউভি সত্যি বলেছে বিয়ের পর ও একটু বদলাস নি।
আহান বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,
“” আগে আমার বউকে সুস্থ করে দে এরপর যা খুশি বল।”
সামাইরা ইয়ানার পাশে বসে ভালোভাবে পরখ করে আহানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকায়।
আহান সামাইরার তাকানো দেখে বলে,,,,,
“” কি হয়েছে তোকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে বলেছি। আমার বউকে ঠিক কর। “”
সামাইরা বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,

“” এক সময়কার ক্রাশ ছিলি তুই কিন্তু এটা না যে সারাজীবন থাকবি। এখন আমার হাজবেন্ড আছে তোর দিকে তাকানোর সময় নেই। আগে আমাকে এইটা বল কি করেছিস ওর সাথে?
আহান — কি করেছি? যাই করি এত কিছু না দেখে চিকিৎসা কর।
সামাইরা — হ মামা অনেক কিছু করেছো সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। কি করেছিস মেয়েটাকে একদম যখম হয়ে গিয়েছে।
ইয়ানা জ্বরের ঘোরে থাকলে ও এইটা বুঝতে পারছে তাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। লজ্জায় তার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।
আহান শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। অনেক্ষন পর সামাইরা ইয়ানার পাশ থেকে উঠে আহানের কাছে যায়। এরপর একটা কাগজ দিয়ে বলে,,,,

“” যা যা লিখে দিয়েছি সব মত চালানোর চেষ্টা করবি দেখবি ঠিক হয়ে গিয়েছে। আর একটা কথা মেয়েটা খুব মিষ্টি। আমি যতটুকু শুনেছি সব মিলিয়ে খুব ভালোবাসিস ওকে। নিজের ভালোবাসাকে আগলে রাখ।আঘাত করিস না কখনো। মেয়েরা ফুলের মত খুব কোমল হয়। তারা দামী জিনিসপত্র চাই না, শুধু একটু ভালোবাসা চাই। এখন আমি আসি।
এই বলে সামাইরা চলে যায়। আহান ধীরে ধীরে ইয়ানার পাশে গিয়ে বসে। এরপর ইয়ানার কপালে চুমু খেয়ে বলে,,,,
“” ভালোবাসা কি খুব কঠিন একটা জিনিস। কিন্তু তুমি আমার অনুভব। আমার হৃদস্পন্দনের সাথে মিশে আছো তুমি। অগ্নি চৌধুরির #অনুভবে_তুমি। ইয়ানা ছাড়া আহান অসম্পূর্ন।

সকালের সূর্য চোখে উপর পড়তেই রায়ান চোখ মেলে তাকায়। নিজের দৃষ্টি মেলে তাকাতেই এক রমনীকে দেখতে পায়। সুমু রায়ানের জন্য হাতে করে কফি নিয়ে আসে। রায়ানকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,,,,
“” ওহহ ঘুম থেকে উঠে পরেছেন? তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসুন।
সুমু কথা বলছে আর রুমে টুকটাক জিনিসপত্র গুছাচ্ছে।
রায়ান সুমুকে নিজের কাছে এনে বলে,,,,,

“” ঘুম থেকে তো উঠেছি কিন্ত বউয়ের দেওয়া মেডিসিন পাই না। ওইটা আগে নিয়ে নেয় তার পর শাওয়ার নিব।
সুমু মুচরামুচরি করে বলে,,,,,
“” প্লিজ রায়ান এখন সময় নেই। চুলায় রান্না বসিয়ে এসেছি পুড়ে যাবে। আপনাকে ডাকতে এসেছিলাম অফিসে যাওয়ার জন্য।””
রায়ান — এই কাজের বাহানা কতদিন দিবেন শুনি।
এরপর সুমুর গালে চুমু দিয়ে বলে,, এই নিন আমার সকালের মেডিসিন নিয়ে নিয়েছি এখন সারাদিন আপনি কাজ করেন।

অনুভবে তুমি পর্ব ৪৭

সুমু গালে হাত দিয়ে রায়ানের দিকে টাস্কি খেয়ে তাকিয়ে আছে। এই ছেলে সবসময় সুযোগের ফায়দা তুলে।সুমু কখনো ভুলবে না সেই ভয়ংকর রাতের কথা যেদিন সুমু আর রায়ান এক হয়েছিলো। মনে হলে আজ ও রায়ানের দিকে লজ্জায় তাকানো যায় না।

অনুভবে তুমি পর্ব ৪৯