রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৩

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৩
আশু

ইয়াসির ভাইয়া তাহলে তোমার কেমন মেয়ে পছন্দ?
ইয়াসির ফোন থেকে মাথা উঠিয়ে ইশার দিকে কটাক্ষ চোখে তাকিয়ে বলে,,”একটা চড় মাইরা একদম সাত আসমানের পাঠাইয়া দিমু। খাওয়ার সময় এত বকবক করোস ক্যা চুপ থাকবার বলছি না তোরে??”
ইয়াসির একটু জোরে ধমকের সুরে বলায় সবাই ওদের দিকে তাকায়। ইশা বলে,,,”এহহ্ তোমার চড়ের এত পাওয়ার আছে নাকি হুদাই ডায়লগ মাইরো না ভাই হাহ্”
ইয়াসির কটমট করে ইশার দিকে তাকাতেই ইশা একলাফে দাঁড়িয়ে ইযানকে ঠেলেঠুলে আবারও আগের জায়গায় পাঠিয়ে আয়ানের পাশে বসে পড়ে। সবাই যার যার মতো খাওয়া ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। এ ঝামেলা নতুন নয় প্রতিদিনই দুজন শিয়াল মুরগীর মতো ঝগড়া লাগতেই থাকে শেষমেশ হয়ত শিয়াল মুরগীকে গিলে ফেলবে নয়ত মুরগী পালাবে।

ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে বসে দুই বান্ধবী গল্প করছে। আজকে নাকি কীসের সমাবেশ কিছু ছাত্র নেতা মন্ত্রী আসবে। রুমি বলে,,”সেদিন তোহ্ ইয়াসির ভাই আমাকেও একধমকে পাঠিয়ে দিল সেই ছেলেটাকে কি করেছে জানিস কিছু?”
ইশা ফোনের রিলসের পেটের ভিতর সব মনোযোগ দিয়ে রেখেছে। আবার রুমি যখন ধাক্কা মেরে একই প্রশ্ন করে ইশা বলে,,”জানি না মনে হয় মিষ্টি কিনে খায়িয়ে দিয়েছে।”
রুমি ভ্রুকুচকে তাকালে ইশা বলে,,”আরে ভাই আমি কেমনে বলমো আমারে গাড়ির ভিতরে বস্তার মতো ফালাইয়া রাখছিল। বেডা দেখতে মাছুম কিন্ত ভেতরে ভেতরে বিশাল বজ্জাত। তুই বল আমার মতো এত সুন্দরী একটা মাইয়া তার আগেপিছে ঘুরে সেটা কি নজরে পড়ে না? যাইহোক বাদ দে শুনছি বেডায় নাকি সংসদে জয়ী টয়ী হইছে মন্ত্রী হওয়ার ভুত চাপছে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রুমি বলে,,”তুই ইয়াসির ভাইরে পছন্দ করোস ভালোও বাসোস তার নামে আবার এমন কুমন্তব্যও করোস বুঝলাম না এই কেসটা?”
ইশা ফোন রেখে রুমি দিকে তাকিয়ে বলে,,,”শোন বেডায় লোহা দিয়ে তৈরি এত সহজে গলবো না। সেই দিন বুড়ি বিয়ার কথা বললো সাথে সাথে রাজি হইয়া গেছে। জানোস কষ্টে মোর বুকটা ফাইটা গেছিল আর ঐদিকে বজ্জাত বেডা আমার হাতে নাস্তা খাইয়া আরেক বেডিরে বিয়ার স্বপ্ন দেখতাছিল!!”
রুমি হাসতে হাসতে বলে,,”দোস্ত তুই এক কাজ কর ইয়াসির ভাই সামনে পড়লেই প্রেমের গান গাইবি তাইলে তর প্রতি ফিলিংস টিলিংস আইসা পড়বো মানে বুঝবো!!”
ইশা সব রেখে সিরিয়াস হয়ে বলে,,”সত্যিই বলতাছোত?”
রুমি মাথায় নাড়ায়।

তারপর ইশা আর রুমি উঠে বেরিয়ে যাবে দেখতে পায় ভার্সিটির গেইটে ইয়াসির সাথে কতগুলো চেলাপেলা নিয়ে আসছে। গায়ে সাদা পাঞ্জাবি জড়ানো সুঠাম দেহে বেশ ফুটে উঠেছে৷ বরাবরের মতো চুলগুলো সেট করা চকচক করছে। ইশা একধ্যানে তাকিয়ে বলে,,”বুড়ো হলেও সামথিং সামথিং ব্যাপার তোহ্ আছেই। ”
রুমি ইশার মাথায় বারি মেরে বলে,,”এহ্ ন্যাক্যাষষ্ঠী বাড়ি চল।”
ইশা বলে,,,,”দোস্ত আমি যাই, ইয়াসির ভাইয়ের কপালে ঘাম একটু মুছে দিয়ে আসি কি বলিস পুঁটিমাছ?? ”
রুমি নাক সিটিয়ে বলে,,”ধ্যাৎ তুই গেলে তোর গালটাকে টসটসে টমেটো বানিয়ে দিবে শালী ঘষেটি বেগম।”
ইশা লজ্জার ভান ধরে বলে,,”নিশ্চয়ই চুমু দিয়ে তাই না কটকটির মা?”
রুমি বিরক্ত হয়ে বলে,,”চুমু না ছাই সাথে পাবি রামধোলাই চল বলছি।”
ইশার হাত ধরে রুমি আর ইশা চলে আসে।

ইয়াসির সবার সাথে কথা বলতে বলতে গেইটে একপলক চোখ যায় পেছন থেকে ইশাকে চিনতে সময় লাগে না। তবে বেশি পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজেই মনোনিবেশ করে।
মাঝরাস্তায় প্রচন্ড বৃষ্টিতে ইশা আর রুমি একটা দোকানের ছাউনিতে এসে দাঁড়ায়। রুমি বিরক্ত হয়ে বলে,,”বা*ল এই কাঠফাটা রৌদে বৃষ্টি আসলো আর সময় পেলো না মরার বৃষ্টি।”
ইশা বলে,,,”তর বাড়ি তো দেখাই যাচ্ছে একদৌড় মারলেই পৌঁছে যাবি আর আমি?”
রুমি বলে,,,,”না না তকে রেখে যাবো নাকি এর চেয়ে গল্প বেস্ট।”
একটু পর ইয়াসিরও কোথা থেকে ভিজতে ভিজতে ওদের পাশে দাঁড়ায়। ইশা হকচকিয়ে সামনে গিয়ে বলে,,”আরে হবু মন্ত্রীসাহেব!!”

ইয়াসির ভ্রুকুচকে পেছনে ঘুরতেই দেখে ইশা। ইয়াসিরও বলে,,”আরে বাড়ির পেত্নীটা যে!!”
ইশা মুখটা ভেঙিয়ে বলে,,,,”আমার মতো সুন্দরী মেয়ে দেখেছো তুমি?”
ইয়াসির দম ছেড়ে বলে,,,”এসব কথা বলিস না রাস্তাঘাটে মানুষ পাগল বলবে তোরে,যেই না চেহারা নাম তার পেয়ারা”

ইশা ইয়াসিরের কাছে গিয়ে বলে,,”একটু মিলাও এই দেখো” বলে ইশা ইয়াসিরে হাত ধরে নিজের হাতের পাশে এনে বলে,,”দেখেছো তুমি কই আর আমি কই? আগে আমার লেবেলে আসো তারপর যুদ্ধ করো মি.ধমক মন্ত্রী “।
ইয়াসিরে গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা বেশ চকচকে আর ইয়াসিরকে তাতেই মানায়। অন্যদিকে ইশা, আয়ান ইযান সবাই ফর্সা। ইয়াসির নাকি তার দাদার মতো হয়েছে। তাই তো সোহানা বেগমের আহ্লাদের নাতী সে।
এদিকে ইয়াসির একটানে হাত সরিয়ে বলে,,”ধলা তোহ্ ঐ যে দেখ দেখ ইশা।” রাস্তার দিকে ইয়াসির আঙ্গুল তাক করে একটা কুকুরের দিকে ইশা তাকায় সেদিকে৷ ইয়াসির বলে,,”ঐ দেখ ধলা কুত্তাও হয়।” এই বলে হাসতে শুরু করে ইয়াসির।

ইশা রেগে ইয়াসির থেকে সরে রুমি পাশে দাঁড়িয়ে বলে,,”দেখলি কত বজ্জাত?”
রুমি বলে,,”আমি যাই বৃষ্টি কমেছে তুই প্রেম কর বেস্ট অফ লাক বান্ধবী বাই” এই বলে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মাঝে রুমি দৌড় মারে।
ইয়াসির বলে,,”বৃষ্টি কমই আছে ইশা চল আমরাও দৌড় লাগায়!”
ইশা একলাফে ইয়াসিরের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,,”ভাইয়া ঠাডা যদি পড়ে?”
ইয়াসির নিজের কপালে হাত রেখে বলে,,”আল্লাহ্ যেন তর মাথায় ফালায়। আমি এখনো বিয়া করি নাই আমি মরবার চাই না।”
ইশা বলে,,”তোহ্ আমি করেছি নাকি?”

ইয়াসির বলে,,”তুই বাচ্চা বিয়ার ফিলিংস হয় নাই তুই মরলে সমস্যা নাই।”
ইশা কিছু বলবে তার আগেই ইয়াসির ইশার হাত টেনে বাইরে এনে বলে “দৌড় লাগা”।ইয়াসির আর ইশা বৃষ্টিতে হালকা দৌড়ে ছুটছে। বেচারি তখনই ইটের সাথে হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে।
ইয়াসির ঘুরে ইশাকে রাস্তায় জমে থাকা পানির মধ্যে পড়তে দেখে জোরে হেসে উঠে। ইশা সেখানে বসে বসে কান্না করতে করতে বলে,,”তুমি আমাকে ফেলে দিয়েছো এটা ঠিক না!!”
ইয়াসির কোমড়ে হাত ধরে হাসতে হাসতে বলে,,,”বেশ হয়েছে আল্লাহ্ যা করে একদম ঠিক।”
ইয়াসির এরপর ইশাকে টেনে তুলে দেখে পায়ের গিড়া থেকে রক্ত বের হচ্ছে সাদার মধ্যে সেলোয়ার হওয়ায় সহজেই রক্ত দেখা যাচ্ছে। ইয়াসির বুঝতে পারে বেচারীর পা ছিলে গিয়েছে তাই কান্না করছে।
ইয়াসির বলে,,” নে আমার হাত ধরে আয়।”
ইশা তোহ্ চোখমুখ মুছে একটু বাকা হেসে ইয়াসিরের দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,”কোলে নাও হাঁটতে পারবো না!!”

ইয়াসির ভ্রুকুচকে বলে,,,,”এখানে থাক তর মতো ৫০ কেজি আলুর বস্তা আমি নিতে পারবো না মাফ কর বইন তুই এখানে ঠাডা পড়ে মর।” এই বলে ইয়াসির ইশাকে রেখে চলে যেতে নেয়।
ইশা বলে,, “বেডা বজ্জাত যা তুই আমি এখানেই মরব।”
ইয়াসির খানিকটা দূরে এসে দেখে সত্যি সত্যিই ইশা আসছে না। ইয়াসির বিরক্ত হয়ে আবারও ইশার কাছে আসতে নেয়। তখনই দেখতে পায়। ওদের ফুফাতো ভাই আরিফ আর ইশা হাসতে হাসতে আসছে। আরিফের একহাতে ছাতা আরেকহাতে ইশার হাত ধরে নিয়ে আসছে। ইয়াসির বিরক্ত হয়ে মুখের সামনে চুলগুলো পেছনের দিকে ঠেলতে ঠলতে আবারও ঘুরে চলে আসে।

রুমি বাসার গেইটে যাবে যাবে তখনই দেখতে পায় একটা বিড়াল রাস্তার মাঝে চলে গিয়েছে।বেচারী ঘুরে আবারও রাস্তার মাঝে বিড়ালটাকে কেলে নিতেই সামনে থেকে আসা বাইক দেখে ভয়ে দমে যায়। বাইকের মালিক কোনোমতে বাইক থামিয়ে নিজের কন্ট্রোলে এনে দাঁড় করায়। তারপর বাইক থেমে এসে ঠাস করে রুমি গালে এক থাপ্পড় বসিয়ে বলে,,,”রাস্তাঘাটে মরার শখ উঠেছে আর জায়গা পাও না মরার? মরবে তাও আরেকজনকে ফাঁসিয়ে মারতে মন চাইছে?”

থাপ্পড়ে চোটে বেচারী নিচে পড়ে যায় বেশ শক্তপোক্ত হাতের থাপ্পড় খেল এই প্রথম। রুমির কাছে কন্ঠটা চেনা চেনা লাগতেই রুমি মাথা উঁচু করে দেখে এতো আয়ান ইশার ভাই। আয়ানও রুমিকে চিনতে পেরে বলে,,”ওহ্ তুমি? আচ্ছা তোমার কি দুঃখ যে রাস্তায় মরতে এসেছো??আর হ্যাঁ যাকে তাকে দজ্জাল বলা কোন স্বভাব??”
রুমি আস্তেধীরে দাঁড়িয়ে নিজের জামা ঝারতে ঝারতে বলে,,,”আপনি আমার বড় নয়ত আমার গালের দাগটা হিসাব বরাবর তুলে নিতাম,ফাস্ট চোখ কান তো আপনাদের নিচে আর থাকে না আপনার জন্য ঐ যে অবুঝ বিড়ালটা এ রাস্তায় পিষেই মরতো। আর সেকেন্ড আপনি দজ্জালই একটা মেয়ের গায়ে হাত দেওয়া পুরুষ কখনো সুপুরষ না দজ্জা,,,,”

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ২

আর কিছু বলার আগেই আয়ান নিজের হাত দিয়ে রুমির গাল চেপে ধরে বলে,,,,”মুখ সামলে কথা বলো মেয়ে আয়ান চৌধুরীর কাছে ছেলে মেয়ে একসমানই। আর কি বললে ঐ বিড়াল। নিশ্চয়ই আমি দেখতাম আর পাশ কাটিয়েও যেতাম। তোমার নাটক বাদ দিয়ে বাসায় যাও স্টুপিড।”
তারপর আয়ান রুমিকে ছেড়ে নিজের এ্যাটিটিউড বজায় রেখে বাইক নিয়ে চলে আসে। আর রুমি আয়ানের দিকে তাকিয়ে শ’খানেক গালি মেরে নিজের গালে হাত বুলাতে থাকে।

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৪