তাজমহল পর্ব ৫
প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী
বাড়ির সবাই ছুটে এল হৈচৈ করে। শাইনা তখন পুকুরে গা ডুবিয়ে কেশে যাচ্ছে একনাগাড়ে। শাহিদা বেগম জানতে চাইল,
“ব্যাথা পেয়েছিস? পড়ে গেলি কেমনে? শ্যাওলায় পা পিছলে গেছে? দেখে হাঁটবিনা?”
কাশতে কাশতে নাকমুখ লালচে হয়ে এসেছে শাইনার। শাহিদা বেগম বললেন,”উঠে আয়।”
শাইনা উঠলো না। উড়নাটা খুঁজে পাচ্ছে না। মেঝ চাচী বলল,”ওড়না হারিয়ে ফেলেছে বোধহয়।”
শাইনার মনে হচ্ছে ছাদে ছায়াটা এখনো দাঁড়িয়ে আছে। তাই সে ভেজা গায়ে উঠছেনা। তার অস্বস্তি লাগছে।
শাহিদা বেগম বলল,”আজব! এভাবে ঠান্ডা পানিতে গা ডুবিয়ে বসে আছিস কেন? ওড়নাটা আর পাবিনা। উঠে আয়।”
কিন্তু শাইনা উঠলো না। এরা তার সুবিধা অসুবিধা বুঝবে না। সে আবারও ডুব দিল। পানি থেকে উঠার সময় মুখ মোছার বাহানায় আঙুলের ফাঁক দিয়ে ছাদে তাকালো। যেটা ভেবেছে সেটাই। এখনো দাঁড়িয়ে আছে ওই লোকটা। সে আবারও ডুব দিল। শাহিদা বেগম অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন,
“সকাল সকাল ভূতে পাইছে তোরে? গায়ে জ্বর বাঁধালে তখন কি হবে?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
চাচীরা মজা করে বলল,”তুই এখন আর এই বাড়ির মেয়ে আছিস? ওরা বলবে ওদের বউকে আমরা যত্ন করিনি।”
বলেই হাসতে লাগলো। শাইনা একনাগাড়ে ডুব মারতে লাগলো। দাদীমা এসে বললেন,”ওরে তোরা রায়হানের মাকে কেউ খবর দে। তার ফুতের বউকে জ্বীনে ধরছে পুকুরপাড়ে।”
সবাই আরেকদফা হেসে উঠলো। শাইনা সেসব কথা কানে তুললো না। বলল,”আম্মু একটা ওড়না এনে দাও।”
“আগে ওঠে আয়। ওড়নাটা ভিজে যাবে।”
“ওড়নাটা ভেজাব আমি। এভাবে উঠতে পারব না।”
“সেটা বললেই তো হলো। মা চাচীদের এত লজ্জা পাচ্ছিস কখন থেকে যে ভেজা গায়ে উঠে আসতে পারছিস না?”
শাহিদা বেগম তার দিকে একটা ওড়না ছুঁড়ে মারলো। ঠিক তখুনি ছোট চাচীর চোখ গেল ওই বাড়ির ছাদে। দাদীমাকে কি যেন ফিসফিস করে বলতেই দাদীমা চোখ কুঁচকে উপরে তাকালেন। কিন্তু চোখের সমস্যা থাকায় ঝাপসা ঝাপসা কাউকে দেখলেন। তারপর শাইনার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,”বুঝেছি এবার। জামাই দেখে পিছলা খাইছিস নাকি রে শানু?”
শাইনা চোখ বড়বড় করে তাকালো। চট করে ছাদে তাকাতেই দেখলো ছায়াটা সরে গেছে। সে এবার দ্রুত পুকুর থেকে উঠে গেল। দাদীমাকে বলল,”নিচে শ্যাওলা ছিল। একদম হাসবে না। হাসলে আমার রাগ উঠে।”
বলেই সে হনহনিয়ে হেঁটে চলে গেল।
রান্নাঘরে খাওয়াদাওয়া চলছে। তাদের আগে মাটির ঘর ছিল। তখনো রান্নাঘরটা বড়সড় ছিল। সবাই রান্নাঘরে বসে একসাথে খেত। এখনো সবাই একসাথে বসে খায়। তাদের পুরোনো ডাইনিং টেবিল বসানো হয়েছে রান্নাঘরে। সবাই সেখানে বসে খাওয়াদাওয়া করে। সবাই বসতে না পারলে বাকিরা নিচে বসে খায়।
শাইনা গিয়ে দেখলো টেবিলে আর বসার জায়গা নেই। সে দাদীর পাশে গিয়ে বসলো মাদুরের উপর। দাদীমা নিমকি ভেঙে গোশতোর ঝোল দিয়ে খাচ্ছেন। শাইনাকে বলল,”খাবি?”
শাইনা বিস্কিটের বৈয়াম থেকে নোনতা বিস্কিট নিয়ে কামড় বসিয়ে বলল,”না। ভাবি চা দাও।”
তার ভাবির নাম সাবরিনা। শাইনা চা খোর। ঠোঁট পুড়ে যাওয়ার মতো গরম চা খায় সে। সাবরিনা তার সামনে চায়ের মগটা রাখলো। শাইনা চা খায় মগে করে। তার মগটা তার জন্য তোলা থাকে সবসময়।
শাহিদা বেগম বলল,”তোর বান্ধবীদের বিয়েতে দাওয়াত করিস। বলবি তাড়াহুড়ো করে আকদের অনুষ্ঠান হয়ে গিয়েছিল।”
শাইনা বিয়ে সংক্রান্ত কোনো ব্যাপারেই কথা বলবে না ঠিক করেছে। আফসার সাহেব এসে মেয়ের পাশে বসলেন। শাইনাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে নাশতা আর চায়ের মগ নিয়ে উঠে গেল সেখান থেকে। সবাই হকচকিয়ে গেল দৃশ্যটা দেখে।
শাইনা পিছু ফিরলো না। সোজা নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিল। টেবিলের উপর মগটা রেখে পরনের ওড়না চোখে চেপে ধরে রাখলো কিছুক্ষণ।
বিকেলের দিকে কলতান নিবাস থেকে কয়েকজন এল। শাইনা তখনো ঘুম। শাহিদা বেগম তাকে ডেকে তুললেন,
“ওঠ তোর খালা শ্বাশুড়ি, ফুপু শ্বাশুড়িরা এসেছে।”
শাইনা ঘুম থেকে উঠলো। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলো। গায়ের আলসেমি ঝেড়ে চোখমুখে পানি দিয়ে তোয়ালে নিয়ে মুখ মুছতে যাবে তখুনি তারা ঘরে ঢুকে এল। শাহিদা বেগম ইশারা করলেন সালাম দিতে। শাইনা সালাম দিল। শাহিদা বেগম চোখ রাঙিয়ে বললেন,
“পা ছুঁয়ে সালাম করতে।”
শাইনা চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। রওশনআরা বললেন,”নাক খালি থাকা ভালো না তাই এটা পরো আপাতত।”
বলেই শাইনার দিকে একটা নাকফুল বাড়িয়ে দিল।
“এটা ডায়মন্ডের। স্বর্ণেরটা একেবারে বিয়ের দিন পরিয়ে দেব। বানাতে দিয়েছি। গয়নার সাথে একত্রে আসবে।”
শাহিদা বেগম বলল,”এটা বোধহয় ওর জন্য বানাননি ভাবি।”
“না,এটা তাসনুভার জন্য বানিয়েছিলাম। এত তাড়াহুড়ার মধ্যে সবকিছু হয়ে গেল। তাই আমার আর কিছু করার ছিল না।”
শাইনার নাকে এমনিতেই একটা পাথরের ছোট্ট নাকফুল ছিল। সেটা খুলে ডায়মন্ড নোজপিনটা পরিয়ে দিল রওশনআরা। শাহিদা বেগমের ইশারায় শাইনা রান্নাঘরে চলে গেল। পা ছুঁয়ে সালাম করেনি বলে তিনি খেপে গিয়ে বললেন,
“নতুন বউ পা ছুঁয়ে সালাম করেনি এটা এখন গোটা পাড়ায় হবে। বেয়াদব বউ তকমা পাবি তুই। তুই চিনিস না ওই বাড়ির মেয়েদের?”
শাইনা চুপচাপ চায়ের কাপের চা ঢালতে লাগলো। তারপর ট্রেতে নাশতা সাজিয়ে নিয়ে এল। ঠিক তখুনি তিতলি এল। শাইনার দিকে তাকিয়ে হাসলো। তারপর রওশনআরার দিকে ফোনের বক্সটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“ভাইয়া সিমসহ সেট করে দিয়েছে।”
শাইনা ট্রে টি টেবিলে রাখলো। রওশনআরা তার দিকে বক্সটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,”তোমার ফোন। কি সেট যেন?”
তিতলি বলল,”Samsung Galaxy S24 Ultra 5G।”
শাইনা ফোনটার দিকে তাকিয়ে বলল,”কিন্তু আমার তো ফোন আছে বড় আম্মু।”
“তাও রাখো। তাজদার সিমও দিয়েছে ওখানে।”
তিতলি বক্সটা খুলে ফোনটা বের করলো। বলল
“চার্জ দিতে হবে না এখন আর। তুমি এখন থেকে ইউজ করতে পারবে।”
বড় ফুপু শ্বাশুড়ি তাহেরা খাতুন বলল,”নে নে, লাখ টাকার ফোন। একটা জামাই পেয়েছিস তুই ভাগ্য করে।”
ছোট ফুপু শ্বাশুড়ি, খালা শ্বাশুড়িরা হাসিঠাট্টার ছলে একেকটা কথা শুনিয়ে দিল।
শাইনা বেজায় রেগে গেল। ফোন দিয়ে এসব কথা শোনানোর মানে কি? সে ক্লাস নাইন থেকে থেকে ফোন চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে দুটো ফোন ব্যবহার করে ফেলেছে। এমনভাবে বলছে যেন সে কোনোদিন সে ফোন দেখেনি। সে তিতলিকে বলল,
“ফোনটা পরে নেব। এখন আপাতত আমারটা চালাই।”
রওশনআরা এবার খানিকটা ধমকের সুরে বকলেন,”আমি নিতে বলছি তো?”
শাইনা আর কিছু বললো না। ফোনটা নিল। তিতলি তাকে গোটা বক্সটা দিল। সেখানে চার্জার, ইয়ারপিস সব আছে। রওশনআরা কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে চলে গেলেন সবাইকে নিয়ে।
শাইনা ফোনটা অফ করে আলমারিতে রেখে দিল। আপারা এসে বলল,”ওমা তোর জামাই ফোন দিয়েছে। আমাদের দেখাবি না?”
“কেন তোমরা ফোন দেখোনি কোনোদিন?”
শারমিলা বলল,”তোর সাথে তো দেখছি কোনো কথাই বলা যাবে না।”
শাইনা চুপচাপ চলে গেল সেখান থেকে।
মাগরিবের পর ঘরে বসে ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলো। ওই পোস্টটা বেশ রিচ পেয়েছে। নিচে এখনো কমেন্ট আসছে। সবাই তাকে বিয়ে না করার জন্য বলছে। সে কখনো ওই বাড়িতে সম্মান পাবেনা।
আবার অনেকে আপডেট জানতে চেয়েছে। সে কমেন্টগুলো পড়লো। মানসিক যন্ত্রণা শুরু হলো কমেন্টগুলো পড়ার পর। মনে হলো আম্মা আব্বা তাকে জোর করে গলায় ফাঁসির দড়ি বেঁধে দিয়েছে। সে পোস্টটা ডিলিট করে দিল। যদিও ইতোমধ্যে পোস্টটা অনেক পেজেও ভাইরাল হয়ে গেছে। নিচে শাইনা নামটাও দিয়ে দিছে। বেয়াদব ইতর সবগুলো।
হঠাৎ তিতলি এসে বলল,”শাইনা ফোন বন্ধ করে রেখেছ?”
শাইনা চমকে তাকালো। বলল,
“এখন ওটা চালাব না তাই রেখে দিয়েছি।”
“কেন চালাবে না? ওটা চালাও। এটা রেখে দাও। নইলে দুটোই চালাও। আমি তোমার ফোনে ট্রাই করছিলাম। দেখলাম কল ঢুকছেনা।”
শাইনা বলল,”আচ্ছা খুলছি।”
“ওকে।” তিতলি চলে গেল।
শাইনা ফোনটা বের করে আপাদের কাছে দিয়ে এল। বলল,”দেখো।”
মেঝ আপা ফোনটা হাতে নিল। বলল,
“আমাদের দেখিয়ে কি লাভ? তুই খুশি হলেই হলো।”
কথাবার্তার মাঝে কারেন্ট চলে গেল হঠাৎ। শাইনা মেঝ আপার হাতে ফোনটা রেখে ধীরপায়ে হেঁটে চলে এল বাইরে। মেঝ চাচার উঠোনে কয়েকজন জড়ো হয়ে মোড়া নিয়ে বসেছে। সবার হাতে হাতপাখা। দূরে একটা চার্জলাইট জ্বলছে অল্প আলো ছড়িয়ে।
শাইনাকে দেখে ছোট চাচার ছেলে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“শানা আফু।”
শাইনা তাকে কোলে তুলে নিয়ে মোড়ায় বসে বলল,”আজ ঘরে যাওনি কেন?”
“তুমাল বিয়াহ।”
“তুইও আমাকে পর করে দিয়েছিস?”
বড় আপার ছেলে নুহান এসে গালফুলিয়ে বলল,”কালামুনি মামাকে কুলে নিচো কেন?”
শাইনা ইবরানকে রেখে তাকে কোলে তুলে নিল। তাকে কোলে তুলে নিতেই ইবরান রেগে গেল। শাইনা দুজনকেই জড়িয়ে ধরলো একসাথে। নুহান বলল,”কালামুনি লুকোচুলি লুকোচুলি।”
“কারেন্ট আসুক।”
কারেন্টের জন্য অপেক্ষা করতে পারবে না সে। তাই ইবরানকে নিয়ে লুকিয়ে পড়লো। আড়াল থেকে বলল,”কুলুক।”
শাইনা ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে বলল,”ছোটমা দেখো তোমার বিচ্ছুটা নুহানকে কোথায় গিয়ে লুকিয়েছে।”
ছোটমা বলল,”মামা ভাগ্নে সারাদিন জ্বালিয়ে খাচ্ছে। আর দৌড়াতে পারব না ওদের পিছুপিছু।”
শাইনা ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে কিছুদূর এগোলো। আর কিছুটা পথ গেলে কলতান নিবাসের সামনে গিয়ে পড়বে। তাই হরিতকী গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে ডাকল,”ইবু নুহানকে নিয়ে বেরিয়ে আসো। ভূত আসবে। তাড়াতাড়ি আসো।”
ওরা কেউ এল না। শাইনা উঁকি দিল কলতান নিবাসের বারান্দায়। কেউ একজন পিঠ করে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে। শাইনা ডেকে বলল,”তৌসিফ ভাইয়া ইবু আর নুহান ওদিকে গিয়েছে কিনা দেখুন তো।”
ঠিক তখুনি মেঝ আপার গলার আওয়াজ শোনা গেল।
“এই শানু কোথায় রে?”
শাইনা বলল,” আসছি।”
ইবরান আর নুহানকে ধরে নিয়ে এল তৌসিফ। ইবরান আর নুহান ভালো ছেলের মতো হেঁটে হেঁটে চলে আসছে। তৌসিফ ভাইকে নিশ্চয়ই ভয় পেয়েছে। শাইনার ফ্ল্যাশলাইটের আলোয় দুজনের চুপসে যাওয়া মুখ দেখে হাসলো। তখুনি তৌসিফের হাতে থাকা ফোনের স্ক্রীন জ্বলে উঠলো। চোখদুটো ফোনের দিকেই। শাইনা চমকে গেল। দু পা পিছিয়ে গেল।
তাজদার ফোনের স্ক্রীন থেকে চোখ তুলে তাকালো তার দিকে। শাইনা ছটফটিয়ে উঠলো।
পেছন থেকে মেঝ আপার গলার আওয়াজ শোনা গেল।
“তোকে কে যেন ফোন দিচ্ছে?”
শাইনা চলে যেতে উদ্যত হতেই কানে এল তাজদার সিদ্দিকীর হাতে থাকা ফোনে রিং হচ্ছে। শাইনা ঘাড় ফিরিয়ে ফোনের দিকে তাকালো। অবাক চোখে ফোনটার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর দ্রুত হেঁটে চলে গেল। মেঝ আপাকে বলল,”কেটে দাও।”
শাহিদা বেগম ফোনটা হাতে নিয়ে তার পিছু পিছু ছুটল।
“ও বোধহয় ফোন দিচ্ছে।”
শাইনা জবাব দিল,”কথা বলতে পারব না।”
“আশ্চর্য! তুই এভাবে কথাবার্তা না বললে কিভাবে হবে? তোকে ওই লোকের সংসার করতে হবে না? নে কথা বল। তোর আপা বললো মেসেজ করে কথা বলতে। ওভাবে নাকি কথা বলা যায়।”
শাইনা বলল,”ফোনে ন্যাকামি করতে পারব না। কথা বলতে ইচ্ছে করলে এখানে এসে বলতে বলো। আমি কেন ফোনে কথা বলবো? কীসের কথা বলব?”
শাহিদা বেগম অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন। শারমিলাকে গিয়ে বলল,”ও আমাকে বলছে ও নাকি কীসের কথা বলবে। আমাকে এখন শেখাতে হবে কীসের কথা বলবে?”
শারমিলা আর শাবরিন একে অপরের দিকে তাকিয়ে হতাশ নিঃশ্বাস ফেললো।
বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করেছে দুই পক্ষ মিলে। আফসার সাহেব একমাস চেয়েছিল কিন্তু তাজউদ্দীন এত সময় দিতে পারছেন না। তার ছোট ভাই নাজিমউদ্দীন সিদ্দিকী আমেরিকায় থাকে বউ বাচ্চা নিয়ে। তারা চলে যাবে। তাসনীমের স্বামীও বউ বাচ্চা নিয়ে সৌদিতে থাকে। তারা সবাই একত্রে চলে যাবে। বেশিরভাগ আত্মীয়ই এখন দেশে আছে। তাই তাদের উপস্থিতিতে বিয়ের অনুষ্ঠানটা হওয়া চায়। তাই এতসময় দেয়া সম্ভব না।
আফসার উদ্দীন চিন্তায় ভুগছিলেন একটু। আশরাফ আর আনিস আশ্বাস দিতেই তিনি একটু শান্ত হলেন। ফার্নিচার আর দিচ্ছেনা। বৈরাতীর লোকজন বেড়েছে। দুই হাজারের কাছাকাছি হবে বরপক্ষ আর কনেপক্ষের লোকজন মিলে।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ক্লাবে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে বাড়িতে আয়োজন করার কথা হয়েছে। বাইরের দেশে থাকলে তারা গ্রামের অনুষ্ঠানগুলো দেখতে বেশি ভালোবাসে। তাছাড়া মাঠের মতো উঠোন আছে। ক্লাবে দেওয়ার দরকার নেই। এতে বিশ হাজার টাকা বেঁচে যাবে।
শাইনা রাতে খেয়েদেয়ে ফেসবুকে স্ক্রল করছিল ঘরে বসে। তখুনি একটা আইডি এল সাজেশনে। তাজদার সিদ্দিকীর ফেসবুক আইডি। প্রোফাইল পিকচারে একটা সাদা কালো ছবি। কালো ব্যাকগ্রাউন্ড পেছনে, নিচে একটা ভায়োলিন অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে, গায়ে সাদা শার্ট। পিঠ কুঁজো করে বসে একহাত উরুতে রেখে আরেক হাতে থুতনি চেপে ধরে চোখ তুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এক দেখায় যে কেউ বলে দেবে এই লোকটার শিরায় শিরায় অহংকার, আর সস্তা দম্ভ।
শুরুর দিকের এডুকেশন সেকশন দুটো শাইনার চোখে পড়লো। মাস্টার্স ইন ইনফরমেশন টেকনোলজি লন্ডন সাউথ ব্যাংক ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য। Amazon Web Services (AWS) Certified Solutions Architect 2020
আইডি পাবলিক করা।। রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস ‘এনগেজড’ হিসেবে আপডেট করেছে আট ঘন্টা আগে। বন্ধু-বান্ধব এবং ভিনদেশী কলিগরা সবাই শুভেচ্ছা জানিয়েছে কমেন্টে। কিন্তু একটিও কমেন্টের জবাব দেয়নি, না কোনো রিয়েক্ট।
রিয়েক্ট, কমেন্ট করলে নিশ্চয়ই আত্মসম্মানে আঘাত লাগবে। শাইনা আইডিটাকে ব্লক করে দিল। তারপর রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস আপডেট করলো ‘সিঙ্গেল’ হিসেবে।
তার সাথে তিতলির একটা কাজিন এড ছিল ফেসবুকে। সে স্ট্যাটাসটা স্ক্রিনশর্ট তুলে তিতলিকে পাঠিয়ে বলল,
“তোর ভাইয়ের বৌয়ের কান্ড দেখ।”
তাজমহল পর্ব ৪
তিতলি স্ক্রিনশর্টটা তৌসিফের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে বলল,”ভাইয়াকে দেখাও।”
তার সাহস হয়নি মেঝ ভাইয়ার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানোর জন্য। তৌসিফ স্ক্রিনশর্টটা দেখামাত্রই সাথে সাথে তাজদার সিদ্দিকীর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালো। লিখল,
“আমাদের ভাবি পিউর সিঙ্গেল।”