ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৩
প্রিয়স্মিতা তেহজীব রাই
প্রীতা একটু লাজুক হাসলো।
দীপ্তি বললো, “কাহিনি কী?”
সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সায়রার দিকে।
সায়রা প্রীতাকে চোখ টিপ দিয়ে বলতে শুরু করলো, “আমাদের প্রীতা রানি সবাইকে বোকা বানিয়েছে!”
সবাই অবাক হয়ে তাকালো।
সায়রা দুষ্ট হসে বললো, “বান্ধবী, বলে দিচ্ছি!”
সবাই উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
সায়রা হাসতে হাসতে বললো, “সাদিক ভাইয়া আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র ছিল। ছয় বছর আগে, যখন আমরা ভার্সিটিতে ভর্তি হই, তখন প্রীতাকে র্যাগিং দিতে এসে সাদিক ভাইয়া উল্টো থাপ্পড় খেয়েছিল! আর অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, সেই থাপ্পড় খেয়েই সে প্রেমে পড়ে গিয়েছিল!”
সবাই হেসে উঠলো।
সায়রা আবার বললো, “সাদিক ভাইয়া আমাদের তিন ব্যাচ সিনিয়র ছিল। প্রীতি কে পটানোর জন্য কত কিছুই না করেছে বেচারা তারপর আর কী! দু’জনের প্রেম জমে উঠলো। যেহেতু আঙ্কেলরা লাভ ম্যারেজ খুব একটা পছন্দ করেন না, তাই দু’জন পুরো ব্যাপারটা চেপে রেখেছিল । সাদিক ভাইয়া পড়াশোনা শেষ করে তাঁদের পারিবারিক ব্যবসায় মন দিলেন— না হলে আঙ্কেলদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া যেত না!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অনেক বছর প্রেম করার পর, দু’জন পড়াশোনা শেষ করেই বিয়ের কথা ভাবলো। সাদিক ভাইয়া নিজেকে যোগ্য করে তুললেন। তাই আঙ্কেলদের আর আপত্তি ছিল না। কিন্তু তাঁরা জানেন না যে এটা লাভ ম্যারেজ! তাঁরা জানেন, এটা পারিবারিকভাবে ঠিক করা বিয়ে।”
সবাই “হ্যাঁ হ্যাঁ” করে শুনছিল।
এতক্ষণে কয়েক জোড়া বিস্ময়ভরা দৃষ্টি গিয়ে পড়লো প্রীতার ওপর।
সবার এমন দৃষ্টি দেখে প্রীতা বিব্রত হয়ে গেল।
প্রিয়তা ভ্রু নাচিয়ে বললো, “মেজ আব্বু কে বলে দেবো নাকি, আপু?”
এটা শুনে প্রীতার লজ্জামাখা মুখটা ভয়েও জমে গেল।
পরি প্রেরণা প্রিয়তা মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলো।
পরি হাসতে হাসতে বললো, “চিল আপু! ভয় পেয়ো না, আমরা কাউকে কিছু বলবো না। দুলাভাই আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছে!”
প্রীতা আবার লজ্জা পেল।
তাদের কথার মাঝেই বাইরে থেকে অর্থী বেগম সবাই ডেকে উঠলেন।
প্রেরণা গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
অর্থী বেগম ব্যস্ত হয়ে প্রেরণাকে বললেন, “তোর রোহিনী আন্টি তোকে খুঁজছে।”
প্রেরণা খুশি হয়ে বললো, “মামণি, কোথায়?”
অর্থী বেগম বললেন, “বসার ঘরে।”
প্রেরণা সেদিকে ছুটে গেল।
অর্থী বেগম মেয়েদের বললেন, “মেকআপ আর্টিস্ট এসে গেছে। তোমরা তাড়াতাড়ি প্রীতাকে তৈরি করো, নিজেও তৈরি হয়ে নাও।”
সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এলো।
অর্থী বেগমের কথা শুনে মেয়েদের আসর ভেঙে গেল।
মেকআপ আর্টিস্ট প্রীতাকে সাজাতে শুরু করলেন।
সায়রা ছাড়া সবাই নিজের ঘরে গিয়ে তৈরি হতে লাগলো।
তন্ময় আর থোরি পা টিপে টিপে বড় আপুর ঘরে গেল।
কারণ, তন্ময়ের মতে তার ভাই-বোনগুলো বড়ই বেয়াদব !
এরা শুধু ওর পেছনে লাগে!
তন্ময় জানে, বড় আপু হাজার গুণ ভালো!
তন্ময় দেখলো, প্রহেলিকা ঘুমাচ্ছে।
থোরি বললো, “কি, করবো?”
তন্ময় বললো, “কি আর করবো! ডেকে তুলবো।”
বলে দু’জন একসাথে প্রহেলিকাকে ডাকতে লাগলো।
এত ডাকাডাকিতে প্রহেলিকা বিরক্ত হয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠলো।
উঠে দেখে, ওর পুঁচকে ভাই-বোন দাঁড়িয়ে আছে।
প্রহেলিকা একটু বিরক্ত না হয়ে দু’জনের গাল টিপে দিয়ে বললো, “কি ব্যাপার ছোট খোকা?”
তন্ময় গাল ফুলিয়ে বললো, “আপু, তুমি ছাড়া আমাকে আর কেউ ভালোবাসে না!”
থোরি নরম সুরে বললো, “আপু, আমাদের সাজিয়ে দাও।” প্রেরণা প্রিয়তা আপুরা সাজিয়ে দেয় নি,,
সে কথামতো প্রহেলিকা বললো, “যাও, তোমাদের জামা নিয়ে আসো।”
থোরি বললো, “আমি শাড়ি পরবো! কিন্তু কেউ আমাকে পরিয়ে দেয়নি।”
মায়া হলো প্রহেলিকার !
নিজের ওয়ার্ডরোব থেকে একটা সুন্দর লাল শাড়ি বের করে থোরিকে পরিয়ে দিলো।
এই শাড়ি পরাতে গিয়ে অনেক ধৈর্য ধরতে হলো!
তারপর দু’জনকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে দিলো।
সাজানোর পর, দু’জন দুটো চুমু খেয়ে চলে গেল।
প্রহেলিকা মৃদু হাসলো।
কিছুক্ষণ পর, প্রণয় এলো।
প্রহেলিকা ওর জন্য একটা সাদা পাঞ্জাবি বের করে দিলো।
হাতে দিয়ে বললো, “এটাই পরো।”
প্রনয় বলল ঠিক আছে বলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল।
ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে একটা ভারী দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো…
রাজ শিরি দিয়ে উপরে উঠছিল, অ্যারেঞ্জমেন্ট কেমন হয়েছে দেখতে । ঢুকার ৪ শিরি, আগে কারো সাথে ধরাম করে বাড়ি খেলো, মনে হলো মেয়ে তায় বেশি ব্যথা পেয়েছে, রাজ শুধুমাত্র এক শিরি পিছিয়ে গেছে, এ ছাড়া তেমন কিছু হয়নি।
বাড়ি খেয়ে মেয়েটির দুনিয়া দুলে উঠল মেয়েটি শিরি থেকে চিটকে পড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু রাজ মেয়েটির কোমর ধরে ফেললো, মেয়েটির মুখের উপর সব চুল এসে মুখ ঢেকে গেলো। রাজ এক হাত দিয়ে চুল সরাতে গিয়ে যেন এক ধাক্কা খেলো, হয়তো হার্টবিট মিস করলো।
মেয়েটা চোখ মুখ খিছে রয়েছে , হঠাৎ যখন মেয়েটি বুঝতে পারলো, সে পরে যায়নি, তখন তড়াত করে চোখ খুললো, ঝাড়ি দিয়ে রাজকে সরিয়ে দিলো। রাগে লাল হয়ে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো, “ওই মিয়া, আপনি কি কানা বেগুন চোখে দেখেন না? চোখ হাতে নিয়ে ঘুরেন?”
মেয়েটার কথা সাথে সাথে নাক ফুলে উঠছে, বিকট চিত্কার শুনে রাজের ব্রোম চুড়ে গেলো, এক ব্রু উঁচিয়ে বললো, “আমাকে বলছেন, মেয়েটা যেন এই কথা শোনে, জোয়ালা মুখীর নেয় জ্বলে উঠলো !”
, ফুঁসতে ফুঁসতে বললো, “না, আপনাকে না, আমার সামনে একটা বড় বাদর দাঁড়িয়ে আছে তাকে বলেছি , এবার রাজ, ওহ, রেগে গেলো, বললো, ‘আমি, ওহ, আপনার মতো ঝগড়াটে মহিলা।’
আরেকটা ও দেখি নি , মেয়েটি বললো, “নিজে তো সুন্দরী মেয়ে দেখে গায়ে উঠে আসছো ” আবার বড় বড় কথা বল, “বাহ, রাজ! বলো, কে সুন্দরী? আশে পাশে তো আমি কোনো সুন্দরী দেখতে পাচ্ছি না, সামনে তো একটা নাগিন দাঁড়িয়ে আছে ।” এবার রাগ সামলাতে না পেরে, মেয়েটি রাজের সুন্দর সেট করা চুল গুলো টেনে ধরল । এত চিলাচিলি শব্দ শুনে, অরণ্য সমুদ্র পরিণিতা ছুটে এসে সামনের দৃশ্য দেখে বেক্কেল বনে গেলো। তারা কয়েক সেকেন্ড একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর ছুটে গেলো। পরিণিতা বললো, “এসব কি করছিস পুণর্তা?” পুণর্তা বললো, “কানা বেগুনকে আজকে আমি বর্তা বানিয়ে ফেলব!”
পরিণীতা বলো কানা বেগুন কে ? পুণর্তা বলল কেনো চোখে দেখিস না আমার সামনেই তো দাঁড়িয়ে আছে,, এবার পূর্ণতা রেগে গিয়ে বলল এটা কোন কানা বেগুন না এটা আমার ভাই। এ কথা শুনে পূর্ণতা নাকমুখ কুঁচকে বলল এই জন্যই এটা এমন আবারো নাক মুখ কুচকালো হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর মতো করে বলল ছে ছে বলতে বলতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে চলে গেল।
। পরিণিতা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে করুণ ভাবে বললো, “সরি, সেজো দাদন!” পুণর্তার পিছনে পিছনে চলতে লাগলো। রাজের চুলের বেহাল অবস্থা দেখে অরন্য ও সমুদ্র গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বললো, “ব্রাদার, কেমন লাগলো?” রাজ চোখ রাঙ্গালো , “তারা দুজন তার চোখ রাঙ্গানিকে পাত্তা না দিয়ে একে অপরের কাধে হাত রেখে বলল হয় হয় এমনি হয় বলে !'” গান গাইতে গাইতে চলে গেলো। রাজ একটু বাঁকা হেসে বলল আবার দেখা হলে তোমাকে দেখে নেব মিস সুন্দরী
পুণর্তা বললো, “আরেকবার সামনে পেলে কানা বেগুনকে , পিস পিস করে নুন হলুদ মাখাবো ” ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে।
পূর্ণতা চৌধুরী বন্যা বিশিষ্ট ফারহান চৌধুরীর দুই মাত্র সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ভিশন মেজাজি কিন্তু মনটা অনেক ভালো ও নরম,,
যার সাথে ঝামেলা হয়ে যেতো তার মুখ আর কখনো দেখতে চায় না।।
প্রিয়তা নিজের ঘরে বসে আছে। সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট। ৭টা থেকে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে, কিন্তু প্রিয়তার কোনো হেলদোল নেই। তার নীলাভ, অতি মায়াবী চোখের কর্নিশ বেয়ে অবিরাম গড়িয়ে পড়ছে নুনাজলের স্রোত। তা মুছে ফেলার কোনো প্রয়াস নেই। হাঁটু অবধি সমান লুটিয়ে থাকা চুলগুলো টাইলসের মেঝেতে অবহেলায় ছড়িয়ে আছে। মাথাটা কাঠের খাটের সঙ্গে হেলান দেওয়া।
কে বলবে, এতটুকু মেয়ের মনের ভেতর কালবৈশাখী বয়ে যাচ্ছে? কেউ বুঝতে পারছে না। ওই সুন্দর মুখের পেছনের বিষণ্নতা কেউ দেখছে না। কিছু ব্যথা হয়তো একান্তই ব্যক্তিগত হয়, যা আমরা সবার সামনে দেখাতে পারি না, বলতে পারি না। না বললে হয়তো সে কোনোদিনই বুঝবে না। নিষ্পাপ মনের ভালোবাসা কেউ দেখবে না, সবাই অপরাধ দিয়ে কলঙ্ক লেপে দেবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল প্রিয়তার ঠোঁটে।
কখন থেকে দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হচ্ছে, বুঝতে পারেনি সে। ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ইনায়া দাঁড়িয়ে দরজা ধাক্কাচ্ছে।
— “প্রিয়ো! দরজা খুল! কতক্ষণ ধরে ডাকছি!”
মেয়েটার চেঁচামেচিতে বিরক্ত হয়ে প্রিয়তা চোখ-মুখ মুছে নিয়ে মেঝে থেকে উঠে দাঁড়াল। দরজা খুলতেই দেখল, ইনায়া রাগে লাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু প্রিয়তা পাত্তা দিল না।
ইনায়া কটমট করে তাকিয়ে বলল, “মরে গেছিস নাকি? কতক্ষণ ধরে ডাকছি!”
প্রিয়তা হেসে বলল, “কিছু না!”
ইনায়া বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলল, যার জন্য এত কষ্ট, সে তো দিব্যি সুখে আছে! মুখে বলল, “তুই আবার কেঁদেছিস?”
উত্তর দিল না প্রিয়তা। শুধু বলল, “তুই বস, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি!”
বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে গেল সে। ইনায়া মনে মনে ভাবল, আজ সবাই তোকে দেখবে! যেমন ভাবছি, তেমন কাজ!
সে প্রিয়তার ওয়ার্ডরোব খুলে গায়েহলুদের জন্য আনা বিশেষ লাল শাড়িটা বের করল। শাড়িটা খুব সুন্দর! কে এনেছে, জানে না ইনায়া, তবে এটা যে প্রিয়তার জন্যই, তা নিশ্চিত।
প্রিয়তা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বলল, “কি করছিস?”
ইনায়া এক চোখ টিপ দিয়ে বলল, “দেখবি ডার্লিং, অপেক্ষা কর!”
প্রিয়তা চোখ ছোট ছোট করল, আর ঠিক তখনই ইনায়া ওর হাতে প্যাকেটটা ধরিয়ে দিল।
— “শাড়িটা পরে নে!”
— “আমি শাড়ি পরতে পারব না!”
কিন্তু ইনায়া নাছোড়বান্দা! শাড়ি তো পরতেই হবে!
প্রিয়তা তর্ক পছন্দ করে না, তাই আর কথা না বাড়িয়ে শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
এদিকে ইনায়া সাজানোর জন্য মেকআপ ও জুয়েলারি বাছাই করতে লাগল।
প্রিয়তা যখন শাড়ি পরে বের হলো, ইনায়ার চোখ চওড়া হয়ে গেল।
— “হা!”
সে নিজেই তাকিয়ে থাকতে পারছে না।
প্রিয়তা বিরক্ত হয়ে বলল, “কি দেখছিস?”
ইনায়া মনে মনে উল্লাসে চিৎকার করে উঠল! যেমন ভেবেছিল, তেমনই হয়েছে!
মুখে কিছু না বলে প্রিয়তার হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিল, তারপর ওকে সাজাতে লাগল—
— হালকা মেকআপ, কাঁচা ফুলের গয়না, ঠোঁটে গাঢ় মেরুন রঙের লিপস্টিক, নীলাভ চোখ দুটোয় হালকা কাজল আর আইলাইনার, গালে সামান্য ব্লাশার।
১০ মিনিট পর সে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকল—
— “আমি ছেলে হলে তোকে নিয়েই পালিয়ে যেতাম, প্রিয়ো!”
প্রিয়তা হেসে ফেলল।
ইনায়া বলল, “তুই বস, আমি রেডি হয়ে আসছি!”
তারপর সে শয়তানি হাসি দিয়ে বের হয়ে গেল!
গায়েহলুদের আসর
প্রিতা কে মঞ্চে বসানো হয়েছে। মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে আজ।
অনুষ্ঠানের থিম অনুযায়ী—
— মেয়েরা লাল শাড়ি, ছেলেরা সাদা পাঞ্জাবি।
শিকদার বাড়ির সব ছেলেদের জন্য একই ডিজাইনের পাঞ্জাবি এনেছে রাজ আর প্রিথম আর মেয়েদের শাড়ির ডিজাইন আলাদা রাখা হয়েছে।
সবাই একে একে হলুদ দিতে শুরু করল। প্রথমে বড়রা—
— সাধমান শিকদার, খালিদ শিকদার, তারপর অন্যানা ভাইয়ারা।
এবার ছোটদের পালা!
কিন্তু ছোটরা একটু পরে দেবে। আগে পার্টি হবে!
প্রেরণা মাইক হাতে নিয়ে বলল,
— “Hello ladies and gentlemen! আমাদের গায়েহলুদের আসল মজা এখন শুরু হবে একটা সারপ্রাইজ দিয়ে!”
সবাই উত্তেজিত হয়ে তাকিয়ে আছে!
স্টেজে বাজতে শুরু করল—
“Mere Yaar Ki Shaadi Hai!”
এরপর, যেন চার পরী মঞ্চে নেমে এলো!
প্রিয়তা, পরিণীতা, পূর্ণতা আর ইনায়া ধীরে ধীরে নাচতে শুরু করল!
সবাই চমকে তাকিয়ে আছে!
তাদের যেন স্বর্গের অপ্সরার মতো লাগছে!
বিশেষ করে প্রিয়তার দিক থেকে কেউ চোখ ফেরাতে পারছে না!
তার চুল হাঁটু অবধি উড়ছে, নীলাভ চোখদুটো চিকচিক করছে আলোয়!
এই দৃশ্য দেখে কারও বুকে গভীরে আগুন লেগে গেল। সে এই রূপে মুগ্ধ হওয়ার থেকে জ্বলছে বেশি। হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো, চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে উঠলো, কপালের শিরাগুলো ফুলে ফেঁপে উঠলো। বুকে চেপে রাখা কষ্টের সঙ্গে রাগগুলো বেরিয়ে আসতে চাইল। জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো, হয়তো মহান রবের কাছে কিছু একটা বললো—কিছু অনুরোধ, কিছু অতীত, কিছু ষড়যন্ত্র, কিছু সত্যি।
এক হার না মানা পুরুষকে ও হারিয়ে দেয়, বাধ্য করে নিজের প্রাণের চেয়েও প্রিয় জিনিস বা মানুষগুলোকে ত্যাগ করতে—কোন একসময় যাদের ছাড়া বাঁচার কথা কল্পনাই করলেই মৃত্যু তুল্য পীড়া দিতো আর এখন তাকে ছারাই বাচতে হচ্ছে। তাচ্ছিল্য হাসলো সে, পুনরায় স্টেজের দিকে তাকিয়ে নিচে নেমে গেল।
রাজ আর প্রিথম বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাজ প্রিথমকে বলছে,
— “মেজদাদান পরী!”
বলে বুকে হাত দিল রাজ। প্রিতম চোখ সরিয়ে বলে,
— “হ্যাঁ, পরী, আমাদের বোন!”
রাজ দাঁত কিড়ে খেঁক করে উঠলো। রাগী রাগী দৃষ্টিতে বললো,
— “আমি জানি, পরী আমাদের বোন! আমি ওই পরীর কথা বলছি না!”
প্রিথম বললো,
— “তাহলে অন্য পরীর কথা বলছ?”
প্রিথম সন্দেহের দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকালো। বোন দুটিকে বাদ দিয়ে অন্য দুই রমণীর ওপর দৃষ্টি রাখলো, তারপর রাজের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো,
— “বেয়াদব!”
রাজ মুখ নিচু করে বললো,
— “তুমি খুব সুপুরুষ!”
প্রিথম বললো,
— “কি বলতে চাস?”
রাজ দুষ্টু হেসে বললো,
— “প্রেম আমাকে সব বলে দিয়েছে!”
এটা শুনে প্রিথমের কপালে বাজ পড়লো। প্রেমকে এই মুহূর্তে সামনে পেলে, ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতো নিশ্চিত! রাজ আবার সেই দুষ্টু হাসি দিলো।
প্রিথম বললো,
— “এই কথা পাঁচ কানে হলে, তোর পাখি আকাশে উড়িয়ে দেব!”
রাজও ভাব নিয়ে বললো,
— “আমার পাখি না থাকলে, তোমার পাখিও থাকবে না, ব্রো!”
প্রিথম বিরক্ত হয়ে চলে যেতে বললো।
পুকুর পারে চলে আসিস।
ডান্স শেষ হতেই প্রেরণা বললো,
— “এখন হলুদ দেওয়া হবে, এরপর আবার পার্টি শুরু হবে! সবার আগে হলুদ দেবে বড়দাদান!”
কিন্তু আশেপাশে কোথাও প্রণয়কে দেখা গেল না। অন্যরা বললো,
— “সে পরে লাগাব! হলুদ দেওয়া শুরু করা হোক!”
এই কথায় সবাই চেঁচিয়ে উঠে বলল না।
— “সবার আগে বড় দাদানই হলুদ লাগাবে!”
অরন্য পরিণীতাকে বললো,
— “বোনু, যা, দাদানকে ডেকে নিয়ে আয়!”
পরিণীতা চলে গেল ডাকতে।
চাঁদ থেকে নেমে তিনতলার করিডোরে আসতেই কেউ তার মুখ চেপে ধরলো। পাশের রুমে ঢুকিয়ে দিলো! প্রায় কুড়ি মিনিট হয়ে গেছে, পরী গেছে কিন্তু এখনো আসার নাম-গন্ধ নেই!
সমুদ্র বিরক্ত হয়ে বললো,
— “তুই পারিশ ভাই, লেট লতিফকে দিয়েছিস দায়িত্ব?”
প্রিথম বললো,
— “প্রিয়তাকে , বোনু, তুই যা!”
প্রিয়তা বললো,
— “আমি?”
প্রিথম বিরক্ত হয়ে বললো,
— “হ্যাঁ, তুই দৌড়ে গিয়ে দাদানকে ডেকে নিয়ে আয়!”
ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ২
অগত্যা প্রিয়তা প্রণয়কে ডাকতে চলে গেল। এতক্ষণ ধরে সব ছেলেরা প্রিয়তাকে চোখ দিয়ে গিলছিল!
শিকদার বাড়ির সব মেয়েরাই ভীষণ সুন্দর, চোখ ফেরানো যায় না! কিন্তু এই মেয়ের মাঝে অন্যরকম এক জাদু আছে, যা মোহগ্রস্ত করে দেয়…
প্রিয়তা সারা বাড়ি খুঁজে ও পেলো না। শেষে তিন তলার মাঝারি আকারের ছাদে গিয়ে থমকে গেল।