চেকমেট পর্ব ৪০

চেকমেট পর্ব ৪০
সারিকা হোসাইন

গভীর রাত।চারদিক স্তব্ধ, নিঃস্ব, শূন্য।শুধুএকটানা ঝরে পড়ছে বৃষ্টি।ঠিক যেনো বুকে চাপা কষ্টের মতো টানা, নিরবধি, করুণ।
আজ মস্ত বড় আকাশে কোনো তারা নেই,চাঁদ নেই,
জানালার বাইরে শুধু ধোঁয়াটে অন্ধকার।বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ কেমন কষ্ট জর্জরিত ব্যথার্ত শোনাচ্ছে।
ঘড়ির কাঁটা কেবল টিক টিক করে এগিয়ে যাচ্ছে,কিন্তু রূপকথার কক্ষের ভেতরে সময় যেনো থেমে আছে।
একদিকে জানালার কাঁচ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে বৃষ্টির ফোঁটা
অপরদিকে সারফরাজের বুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে রূপকথার কান্না।

রূপকথা ঠাণ্ডা হয়ে আসা শরীর আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে সারফরাজ।রূপকথার কাঁধ কাঁপছে নিঃশব্দ হাহাকারে।
আর সেই কম্পনে সারফরাজের বুকও যেন কেঁপে উঠছে ধীরে ধীরে।
রূপকথার করুন বাঁধ ভাঙা কান্নায় সারফরাজ এর নিঃশ্বাস গাঢ়, ভারী হয়ে আসে।এই মেয়েটির কান্না ছোট বেলা থেকেই সে সহ্য করতে পারেনা।এই মেয়েটা কি তা জানে না?হয়তো জানে।সারফরাজ কে নিরাপদ ভরসা যোগ্য আবাসস্থল ভাবে বলেই হয়তো নিজেকে এভাবে উজাড় করে দেয়।সারফরাজ হাতের আলিঙ্গন আরেকটু শক্ত করে।মুখে কিছু বলে না।
কারণ কোনো ভাষাই আপাতত যথেষ্ট নয়।
সারফরাজ যখন নিজের সবটা দিয়ে আগলে নিলো রূপকথাকে ঠিক তখনই ভাঙা কণ্ঠে ভেসে এলো রূপকথার আর্তনাদ মিশ্রিত স্বর—

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“তোমার মা বেঁচে আছে সারফরাজ…উনি মারা যান নি!
রূপকথার মুখের কঠিন সত্য বাক্যটা যেন ছুরির ফলার ন্যয় তীক্ষ্ণ আঘাত করলো সারফরাজ এর বুকে।সারফরাজ এর পুরো দুনিয়া দোলে উঠলো।বুকের ভেতর কে যেনো ক্রমাগত সুঁচ গেঁথে দিচ্ছে।এই সূক্ষ্ণ ব্যথা সহ্য করা দায়।সারফরাজ এর চোখের কোণ সহসাই ভিজে উঠলো।কিন্তু সে কাঁদতে ভুলে গেলো।মস্তিষ্ক কেমন কার্যক্ষমতা হারালো।এই মুহূর্তে কোন ধরনের বুলি আওড়ানো উচিত খোঁজে পেলো না সারফরাজ।বৃষ্টির ঝমঝম ধারা কেমন বিষাক্ত আর ভারী হয়ে উঠলো সহসাই।
রূপকথা সারফরাজ এর শার্টের ভেজা কলার খামচে ধরে সারফরাজ এর সিক্ত চোখে চোখ রাখলো।এরপর পুনরায় বলে উঠলো

“আমি দেখেছি তাকে তোমার বার্থডের দিন।রুদ্ররাজ উনাকে আটকে রেখেছে।আমার সামনে থেকে টেনে হিচড়ে উনাকে নিয়ে গেছে রুদ্ররাজ।উনার চিৎকার আমার কানে এখনো বাড়ি খাচ্ছে।
বলেই সারফরাজ কে ছাড়িয়ে রিডিং টেবিলের ড্রয়ার হাতড়ে সেই লকেট সমেত চেইন নিয়ে এসে সারফরাজ এর হাতে দিলো।মায়ের শেষ স্মৃতি খানা কেমন অনুভূতি শূন্য মানুষের ন্যয় হাতে নিলো সারফরাজ।এরপর তাতে নজর বুলিয়ে ধপ করে হাটু গেড়ে মেঝেতে বসে গেলো।জীবনের প্রথম এমন বিধ্বস্ত লাগলো সারফরাজ কে।
সারফরাজ এর মনে হলো সে জ্ঞান হারাচ্ছে।সারফরাজ এর ভার শূন্য দেহ লুটিয়ে পড়তে চাইলো মেঝেতে।নিজেকে ধরে রাখতে রূপকথার কোমর জড়িয়ে রূপকথার উদরে মুখ গুজে ফুঁপিয়ে উঠলো সারফরাজ।এরপর অস্পষ্ট গলায় বলে উঠলো

“আমি তো কোথাও তাকে খোঁজা বাদ রাখিনি রূপকথা।আমার মা আমার পাশে ছিলো তবুও তাকে পেলাম না আমি!আমার এই পাওয়ার,মানি,দাপট এসব থেকে কি লাভ হলো?আমি তো দিন শেষে ব্যর্থ,শূন্য,রিক্ত!
রূপকথা সারফরাজ এর মাথা চেপে ধরে নীরবে কাঁদলো।বাকি ঘটনা বলার সাহসে কুলাচ্ছে না তার।তবুও বলতে হবে।সারফরাজ কে জানতে হবে সমস্ত সত্যি।এমন সুযোগ বার বার আসবে না।তাছাড়া রুদ্ররাজ রূপকথার উপর নজরদারি রেখেছে।যখন তখন যা কিছু হয়ে যেতে পারে।তাই বাম হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছলো রূপকথা।এরপর কম্পিত মোটা গলায় বলল-

“রুদ্র আমাকে ভয় দেখাচ্ছে রীতিমতো।ও তোমাকে চারপাশ থেকে ভাঙতে চাইছে।প্রথমে তোমার মা এরপর আমি।আমাকে শর্ত দিয়েছে যাতে তোমার সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করি আমি।নয়তো আন্টিকে আর আমার পরিবার কে শেষ করে দেবে সে।আজ তোমার বাড়িতে গেছিলাম বলে আম্মুর উপর এট্যাক করেছে ।অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছে আমার মা।আমার খুব ভয় করছে সারফরাজ।আমি এসব টেনশন আর নিতে পারছি না।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।রুদ্রের ধমকি তে ইচ্ছে করেই যোগাযোগ করিনি এই কয়দিন তোমার সাথে।কিন্তু বিশ্বাস করো আমার প্রাণটা বেরিয়ে যাচ্ছিলো।এই নির্মম জন্ত্রনা সইতে না পেরে আমি গিয়েছিলাম তোমার বাড়িতে।ভেবেছিলাম রুদ্র হয়তো জানবে না।কিন্তু সে সব জেনে গিয়েছে।

আরো অনেক কিছু বললো রূপকথা।কিন্তু কান্নার দমকে সেগুলো একটাও স্পষ্ট হলো না।সারফরাজ কোল কিনারা হীন হলো।কাকে সামলাবে সে এই মুহূর্তে?নিজেকে নাকি রূপকথাকে?
কান্নার চোটে রূপকথার শরীর কাঁপুনি দিচ্ছে বারবার।সারফরাজ আলগোছে রূপকথাকে টেনে নিজের হাঁটুর উপর বসালো।এরপর শীতল হাতে রূপকথার চোখ মুছে চোখের পাতায় চুমু খেয়ে বলে উঠলো-
“হুশ বোকা মেয়ে এভাবে কাঁদে না।সব ঠিক করে দেবো আমি।
রূপকথা সারফরাজ এর গলা জড়িয়ে বুকে মুখ লুকিয়ে বলে উঠলো
“তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না সারফরাজ।প্রতি নিঃশ্বাসে তোমার নাম জপতে চাই আমি।রুদ্রের ভয়ে তোমার থেকে দূরত্ব রেখে আমি বাঁচতে পারছি না।প্রতি মুহূর্তে মরন হচ্ছে আমার।
রূপকথার করুন স্বীকারোক্তিতে সারফরাজ এর চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো।রুদ্রের নোংরা খেলা ভেবে চোখ গুলো কেমন জ্বলে উঠলো।মস্তিষ্কে খেলতে লাগলো কুটিল সকল বুদ্ধি।কিন্তু রাগের মাথায় এখন কিছুই করা যাবে না।যা করার তা করতে হবে গোপনে,ধীরে সুস্থ্যে।

রূপকথার মুখের উপর লেপ্টে থাকা চুল কানের পিঠে গুঁজে সারফরাজ বলে উঠলো
“তোমাকে কেউ একজন অলটাইম ফলো করছে রূপকথা।
“জানি।আমি কার সাথে কথা বলছি,কি করছি,কোথায় যাচ্ছি এভরিথিং সে রুদ্রকে আপডেট দিচ্ছে।
সারফরাজ মেঝেতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে কিছু ভাবলো।এরপর রূপকথাকে বিছানায় বসিয়ে মেঝেতে আসন গেড়ে বসলো।রূপকথার ছোট ছোট রুলতুলে নরম সফেদ পা দুটো নিজের হাতে তুলে তাতে আদুরে পরশ বুলালো সারফরাজ।এরপর বললো
“শুনো এখন ভেঙে পড়লে হবে না।ট্রিক্স খাটাতে হবে বুঝলে?বুদ্ধি দিয়ে কব্জা করতে হবে রুদ্রকে।
রূপকথা সারফরাজ এর মুখের পানে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সে কি বলতে চাচ্ছে।সারফরাজ রূপকথার পায়ের আঙ্গুল টেনে টেনে বলতে লাগলো

“রুদ্রকে বোঝাতে হবে সত্যিই আমাদের ব্রেকাপ হয়ে গেছে।
“কিভাবে?
অবাক হয়ে জানতে চাইলো রূপকথা।
“তুমি তোমার ফোন থেকে যোগাযোগ করবে না আমার সাথে।
রূপকথা সারফরাজ এর বাহু চেপে ধরে ভেজা মিইয়ে আসা গলায় কাকুতির স্বরে বললো
“আমি মরে যাবো সারফরাজ।
রূপকথার পা জোড়া চেপে ধরে সারফরাজ রূপকথার চোখে চোখ রাখলো।এরপর বললো
“মরবে না।আমি নতুন ফোন দিয়ে যাবো নতুন নম্বর সহ।আর বাইরে কখনো দেখা করবে না আমার সাথে।আমিও নিজেকে সামলে রাখবো।
“তোমাকে না দেখলেও আমি মরে যাবো।
সারফরাজ শুধালো

“তোমাকে না দেখলে আমি বাঁচবো?আমি আসবো তোমার কাছে।তোমার যেতে হবে না।আর আপাতত প্রতিদিন দেখা করার দরকার নেই।
রূপকথা অভিমানী গলায় বলল
“তুমি নিষ্ঠুরের মতো কথা বলছো।
সারফরাজ ফট করে উত্তর করলো
“আর নিজে যে এই কদিন নিষ্ঠুরের মতো বিহেভ করেছো তার বেলায়?
ইচ্ছে করে করেছি নাকি?
“তো আমি ইচ্ছে করে করতে চাইছি নাকি?
“রুদ্রের মতো তুমিও আমায় চিপায় ফেলতে চাইছো?
“তুমি অলরেডি চিপায় পরে গেছো।বোকা যে ।তোমার বুদ্ধিতো হাঁটুতে।আমাকে আগেই এই কথা বললে আমি ঠিক রুদ্রের দাঁতের পাটি খুলতাম একটা একটা করে।রুদ্র এখন বাংলাদেশে নেই।
সারফরাজ এর কথায় ঠোঁট উল্টালো রূপকথা।চরম বিপাকে পড়েছে সে।প্রেম ভালোবাসায় যেখানে ফ্যামিলি ভিলেন হবার কথা সেখানে অন্য কেউ ভিলেন হয়ে ঝামেলা পাকাচ্ছে।রূপকথার চিন্তিত মুখের পানে তাকিয়ে সারফরাজ শুধালো

“আচ্ছা এতো গাঁধী কেনো তুমি?কমিশনার তোমাকে এতো মাথামোটা ছাগল কিভাবে বানালো?সত্যি করে বলো তো, মেডিকেলে তোমার আসলেই চান্স হয়েছিলো নাকি বাপের নাম ভাঙিয়ে চান্স করে নিয়েছো?
সারফরাজ এর প্রশ্নে রূপকথার মেজাজ তিরিক্ষী হলো।সে জোর পূর্বক পা ছড়িয়ে বিছানায় গুটিয়ে বসে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলে উঠলো
“আর এক মুহূর্ত দেখতে ইচ্ছে করছে না তোমাকে।শিগগির দূর হও আমার সামনে থেকে।
সারফরাজ কপাল কুঁচকালো।এরপর ভরাট গলায় বললো
“আর ইউ সিউর?
রূপকথা শক্ত চোখে শক্ত গলায় উত্তর করলো
“ইয়েস।আই অ্যাম!
সারফরাজ মেঝে থেকে উঠে ধুম করে রূপকথার কোলে মাথা রেখে বিছানায় শুয়ে গেলো।এরপর চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো

“এসেছিই যখন একবারে বাসর সেরেই যাই কি বলো?ইশ কি ওয়েদার!রোমান্স জমবে ভালো।তুমি চিৎকার করে কাঁদলেও কেউ শুনবে না।
সারফরাজ কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বাজখাই গলায় রূপকথা শুধালো
“এমন কঠিন সিচুয়েশন এ তোমার ঢং আসছে কি করে?
সারফরাজ বাঁকা হেসে উত্তর করলো
“কারন আমি পরবর্তী প্ল্যান সাজিয়ে ফেলেছি।আমি রুদ্রকে এবার মেরে ফেলবো রূপকথা।
সারফরাজ ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন করবে সেই কথা কি অবলীলায় বলে চলেছে।রূপকথার কেমন ভয় হলো সারফরাজ কে দেখে।সে একটা ভয়ঙ্কর মানুষকে ভালোবাসে।যেই মানুষ মশা মাছি মারার মতো মানুষ মরে।অথচ তার নিখাদ ভালোবাসা দেখে মনে হয় ভেতরের পুরোটাই মায়া আর দরদ দিয়ে ঠাসানো।কিন্তু রূপকথা হীন সারফরাজ এর হৃদয়ে আর কারো জন্য কোনো মায়া দরদ ভালোবাসা কিচ্ছুটি নেই।রূপকথা তা বেশ জানে।
রূপকথার ভাবনায় পানি ঢেলে সারফরাজ অনুরোধ করলো

“একটু মাথায় বিলি কেটে দিবে?ঘুম পাচ্ছে।
রূপকথা নিঃশব্দে সারফরাজ এর চুলের গোড়ায় হাত বুলালো।বিড়াল ছানার ন্যয় রূপকথার কোমর জড়িয়ে চোখ বুঝলো সারফরাজ।বাইরে স্নিগ্ধ কোমল লয়ে বর্ষণ ঝরছে।সারফরাজ কে পেয়ে রূপকথার মনের ভেতরের সমস্ত ভয় ডর কেটে গেলো।নিজেকে বেশ হালকা ফুরফুরে লাগছে।নিজের বোকামো ভেবে রূপকথা নিজেকে বেশ ধমকালোও বটে।সারফরাজ ঠিকই বলেছে।সে আসলেই গাঁধী।সারফরাজ এর থেকে এতো বড় বিষয়টা লুকানো মোটেও উচিত হয়নি তার।তখনই সারফরাজ কে বিষয়টা জানালে সারফরাজ মায়াকে ঠিক উদ্ধার করতে পারতো।নিজের বেহুদা কর্মকান্ডের জন্য নিজের উপরই বেশ রাগ হলো রূপকথার।সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো
“যতই কঠিন সিচুয়েশন আসুক না কেনো, তোমাকে আর কিচ্ছুটি গোপন করবো না সারফরাজ।

আকাশের মেঘ বৃষ্টি কেটে গিয়ে জানালার ফাক গলিয়ে নরম আলো চুয়ে চুয়ে ঝরছে রূপকথার কক্ষের ভারী পর্দা ভেদ করে।কিন্তু পুরোপুরি ঢুকতে পারছে না।কেউ সযত্নে জানালার পর্দা টেনে বেলকনির দরজা আটকে দিয়েছে।
বাইরের কর্মব্যস্ততার টুং টাং আওয়াজ ভেসে আসছে ক্ষীণ স্বরে।পুলিশের গাড়ির সাইরেন,মানুষের হাঁক ডাকে রূপকথার ঘুম পাতলা হলো।বুকের পাশ বালিশ জড়িয়ে এদিক সেদিক মোড়ামুড়ি করে চট করে চোখ মেললো রূপকথা।গত রাতের কথা মস্তিষ্কে সজাগ হতেই শোয়া থেকে উঠে বসলো।পাশে সারফরাজ নেই।রূপকথা বিছানা থেকে ধপ করে নেমে খাটের তল,রুমের প্রত্যেকটা কোনায় নজর বুলালো।কোত্থাও সারফরাজ নেই।তারমানে চলে গিয়েছে।মাথার আলুথালু চুল ঠিক করে বিছানায় এসে আবার শুয়ে গেলো রূপকথা।কাত হয়ে ওপাশ ফিরতেই হঠাৎ বালিশের কাছে একটা চিরকুট নজরে এলো।

ঝটপট হাতে সেটা খুললো।সুন্দর টানা টানা প্যাচানো হাতের লিখায় ছোট একটা চিরকুট।সারফরাজ লিখেছে।
শুভ সকাল,আমার সকাল।
যদিও আমার জন্য এখনো সকাল হয়নি।তুমি জাগলে তবেই আমার সকাল হবে।আমার মিষ্টি সকালটা আমি ঘুমের মধ্যেই রেখে যাচ্ছি।
তুমি যখন এই চিঠিটা পড়বে, তখন তোমার পাশের জায়গাটা ফাঁকা থাকবে।
আমি থাকব না, কিন্তু আমার নিঃশ্বাস থাকবে ঠিক তোমার বালিশের পাশে,
যেখানে আমি সারারাত নিরব হয়ে তোমায় বুকে জড়িয়ে আগলে রেখে ছিলাম।
তুমি ঘুমাচ্ছিলে শান্ত, শিশু সুলভ নিঃশ্বাসে।ঠিক রূপকথার ছোট প্রিন্সেস দের মতো।যদিও তুমি আমার কাছে সত্যি সত্যিই প্রিন্সেস।

ভেবে ছিলাম একটু শান্তির ঘুম ঘুমাবো।কিন্তু তুমি বড্ড হিংসুটে।আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে পুরোটা রাত আমায় জ্বালাতন করলে।তোমার ঘুমন্ত নিষ্পাপ মায়াবী কোমল মুখটা আমায় প্রাণে মেরেছে রূপকথা!আমি তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো।তোমায় কিচ্ছুটি টের পেতে দেইনি।সারা রাত হৃদ জন্ত্রনায় পুড়েছি সংগোপনে আর ভেবেছি,
একটা মানুষকে এতটা ভালোবেসে কীভাবে নিজেকে ধরে রাখা যায়?বিশ্বাস করো তোমার অজান্তে অনুমতি হীন একটা চুমু পর্যন্ত খাইনি।মন আর শরীর দুইয়ের যুদ্ধে আমি আমার পবিত্র ভালোবাসা কে জয়ী করেছি।
পুরোটা রাত তোমার শ্বাস গুনে কেটে গিয়েছে আমার।উহু মোটেও কষ্ট হয়নি।বরং লোভ জেগেছে এমন শত শত রাত তোমাকে জড়িয়ে জেগে থাকবার।

তোমাকে ফেলে যেতে ইচ্ছে করছে না।এমন হাজারটা সকাল কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে তোমার সাথে।কিন্তু নিয়মের বাইরে কিচ্ছু করার ক্ষমতা আমাদের নেই।খুব শীঘ্রই কমিশনার এর থেকে তোমায় কেড়ে নেবো।নয়তো প্রাণে বাঁচা দায় হয়ে যাবে।তোমাকে দেখলে আমার ভালোবাসা লাগাম হীন হয়।নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।এভাবে শিকল পরিয়ে কতোদিন বাঁচা যায় বলো?
আমি চলে যাচ্ছি।তুমি ঘুমাও আমার মন আকাশের চাঁদ।তোমার কপালে আমার অসংখ্য চুমু।
ভালো বাসি, অনেক অনেক ভালোবাসি।
লাভ ইউ সো মাচ মাই সুইট ম্যাডনেস।

তোমার 𝐒𝒂𝓻𝒇𝓇𝒶𝓏
রূপকথা কতবার পড়লো সেই চিঠিটা তার জানা নেই।চিঠিতে অসংখ্য চুমু আকলো সে।এরপর লজ্জায় বালিশে মুখ গুঁজে লাফিয়ে উঠলো।ইচ্ছে করলো সারফরাজ এর ঘুম জড়ানো কন্ঠ শুনতে।
বালিশের নিচ থেকে ফোন নিয়ে কল করতে চাইলো সারফরাজ কে।কিন্তু রুদ্রের ভয়ে গুটিয়ে গেলো।মন আনচান হলো।বিছানা থেকে উঠে দৌড়ে ল্যান্ড লাইনে গেলো।ডায়াল করলো সারফরাজ এর নম্বর।
ঘুম জড়ানো হাফ স্লিপি ডিপ ভয়েসে সারফরাজ বললো

চেকমেট পর্ব ৩৯

“হ্যালো…
রূপকথার মরন হলো ওই কন্ঠে।সে বুক চেপে দীর্ঘ শ্বাস টানলো।সারফরাজ বুঝলো ফোনের ওপাড়ে কে।সে ঘুম জড়ানো কন্ঠে হাসলো।রূপকথা শাষিয়ে বললো
“এই স্বরে আর কারো সাথে কথা বললে গলা কে টে নেবো।এই স্বর টা শুধুই একান্ত আমার।

চেকমেট পর্ব ৪১