হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ১৩
সানা শেখ
সোজা নিজের রুমে চলে আসে মায়া। রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে প্রবেশ করে।
আয়নার সামনে দাঁড়ায়। ছাদ থেকে নামার সময় ঠোঁট মুছতে মুছতে নামছিল। ঠোঁট জোড়া লাল হয়ে গেছে এখন।
আয়নার দিকে তাকিয়ে রাগে ফেটে পড়ে গালাগালি করে আলভী কে।
কত বড় শ য় তা ন হলে জোর করে চুমু খায়? অসভ্য লোক একটা। ইচ্ছে তো করছে ওই ঠোঁট আর জিহ্বা টা কে টে দিতে।
পানি দিয়ে ঘষে ঘষে ঠোঁট মুখ ধুয়ে নেয়। কুলি করে। ফেসওয়াশ দিয়ে আবার ঘষে ঘষে মুখ ঠোঁট ধুয়ে নেয়।
আলভী ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে গিয়ে কুলি করে মুখ ধুয়ে তৈরি হয়ে ড্রইং রুমে আসে।
সোফায় বসে মায়ার নাম ধরে ডাকে। কিন্তু মায়া কোন সাড়া শব্দ করে না। আলভী আবার ডাকে কিন্তু তবুও মায়া কিছু বলে না।
আলভী রেগে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এই ঝাড়ু ওয়ালা মায়া কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাও না? কফি নিয়ে আসো আমার জন্য।”
ঘাড় ঘুরিয়ে আলভীর দিকে তাকায় মেড মায়া। এতক্ষণ ওকে ডাকছিল আলভী? মায়া তো ভেবেছিল আলভী ওর বউ মায়া কে ডাকছে তাইতো কিছু বলছিল না এতক্ষণ। এখন তো দেখছে ওকেই ডাকছে। সকালে আলভী যখন ওর বউ মায়া কে ডাকছিল তখন মেড মায়া কয়েক বার সাড়া দিয়েছিল। শেষ মেষ আলভী বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে বলেছিল,
“এই মেয়ে সমস্যা কোথায় তোমার? আমি আমার বউ কে ডাকছি তোমাকে না। দেখছোই কিছু বলছি না তার পরেও বার বার সাড়া দিচ্ছো কেন? যাও এখান থেকে।”
এখনো ধমক খেতে হবে বলে চুপ করে ছিল। তবুও ধমক খেতেই হলো। সবই কপাল।
কফি বানিয়ে নিয়ে আলভীর সামনে এসে দাঁড়ায় মায়া।
“স্যার আপনার কফি।”
কফির মগ হাতে তুলে নেয় আলভী। মায়া চলে যেতে নিলে আলভী পেছন থেকে ডেকে ওঠে।
“আরো কিছু লাগবে স্যার?”
“তোমার পুরো নাম কি।”
“মায়া।”
“আগে পরে কিছু নেই?”
“মোছা: মায়া আক্তার।”
“আর কোন নাম নেই?”
“না স্যার।”
“আজকে থেকে তোমাকে আমি আক্তার বলে ডাকব।”
“স্যার আক্তার নাম তো ছেলেদের।”
“তাহলে তোমার নাম মায়া আক্তার কেন?”
“মেয়েদের নামের শেষে আক্তার থাকে কিন্তু শুধু আক্তার ছেলেদের নাম।”
“কে বলেছে তোমাকে?”
“কেউ বলেনি কিন্তু ছোট থেকে তো এমনই দেখে আসছি।”
“আচ্ছা আমি তাহলে তোমাকে মায়া আক্তার ডাকব।”
“আচ্ছা।”
“যাও এখন নিজের কাজে।”
মায়া চলে যায় ঝাড়ু দেওয়ার জন্য।
কফি শেষ করে মাহিদ এর ফোনে কল করে আলভী।
মাহিদ রুমেই ছিল কল আসার সাথে সাথেই রিসিভ করে।
“হ্যাঁ ভাইয়া বলো।”
“বাইকের চাবি নিয়ে নিচে আয়।”
“কোথাও যাবে?”
“বাইক চালানো শিখব।”
“আচ্ছা আসছি।”
পাঁচ মিনিট হওয়ার আগেই মাহিদ নিচে নেমে আসে।
আলভী কে বেরিয়ে যেতে দেখে ঐশী রহমান বলেন,
“আলভী কোথায় যাচ্ছো?”
“বাইরে।”
“একটু আগেই না ফিরলে। এখন আবার বের হচ্ছো কেন? খাবার খেলে না তো দুপুরে।”
“অফিস ক্যান্টিনে খেয়ে এসেছি আমি। রাতে ফিরে খাব। মাহিদ আয়।”
দুই ভাই বেরিয়ে আসে বাড়ির ভেতর থেকে।
মাহিদ বাইক নিয়ে আসে পার্কিং থেকে।
“ওহ হো হেলমেট আনতে ভুলে গেছি। তুমি দুই মিনিট দাঁড়াও আমি হেলমেট নিয়ে আসছি।”
বলেই বাইক থেকে নেমে পা বাড়ায়।
“এই শা লা চাবি দে।”
“এভাবে বলবে না ভাইয়া। এভাবে বললে মনে হয় গালী দিচ্ছো।
“তাহলে কিভাবে বলবো শা লা?
মাহিদ এর চোখ মুখ কেমন যেন হয়ে যায়। কি এক মুসিবত। বড় ভাই ডাকে শা লা বলে। না করলেও বার বার শা লা বলেই ডাকে। আবার জিজ্ঞেস করছে “তাহলে কি বলে ডাকব শা লা।”
“কোন কিছু বলারই দরকার নেই।”
“মায়া কে ভাবী বলে ডাকবি আজকে থেকে।”
মাহিদ এর চোখ দুটো ছানাবড়া। অবাক স্বরে বলে,
“কেন?”
“আমি তোর বড় ভাই সেই হিসেবে মায়া তোর ভাবী। মায়া কে ভাবী বলে ডাকবি তাহলে আমি তোকে আর শা লা বলবো না।”
“এইটা কেমন কথা? মায়া আমার আপন বোন, আমি ওকে ভাবী বলে ডাকব? অসম্ভব।”
“তাহলে আমি তোকে শালা বলেই ডাকব।”
“এক মিনিট এক মিনিট তোমার হিসেবে তো ভুল আছে ভাইয়া।”
“কি ভুল?”
“মায়া আমার ছোট বোন, সেই হিসেবে সম্পর্কে আমি তোমার বড় মানে সমন্ধী। তুমি আমার ছোট বোনের হাসবেন্ড , তুমি কোন আক্কেলে আমাকে শা লা বলে ডাকো?”
“বয়সে তুই আমার হাঁটুর সমান। তোকে আমি সমন্ধী বলে ডাকব নাকি? তুই শা লা আর শা লাই থাকবি সারা জীবন। আর শা লা না থাকতে চাইলে মায়া কে ভাবী বলে ডাকবি।”
বেচারা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো বড় ভাইয়ের দিকে। এইটা কোন কথা? ছোট বোন কে ভাবী ডাকবে? কস্মিনকালেও না।
“হেলমেট নিয়ে আসছি।”
“হেলমেট লাগবে না এখন। দূরে যাব না তো, সামনের রাস্তায় চালাব। চাবি দে এখন।”
” তুমি চালাতে পারবে না তো। চলো আগে তোমাকে ভালো ভাবে দেখাই তারপর চালাবে।”
নিজের রুম থেকে বেরিয়ে বড় ভাইয়ের রুমে আসে মায়া। মানতাসা খেলছে সানজিদা বসে বসে দেখছে।
“বেবি?”
“ফুপ্পি।”
“কি করছো বেবি?”
“তোমাল কি চোক কানা?”
“কই নাতো।”
“তালে দেকছো না আমি কি কলি?”
“ভুল হয়ে গেছে বেবি, সরি।”
“কোতায় গেছিলে?”
“রুমেই তো ছিলাম বেবি।”
“না ছিলে না। আমি গেছিলাম তোমাল লুমে।”
” তাহলে তখন বোধহয় ছাদে ছিলাম।”
“হুম।”
“তোমাল তো একন পলা নেই। তাহলে আমার সাতে কেন খেলো না? সুদু লুকিয়ে লুকিয়ে তাকো।”
“ও আমার বেবি, আমি কোথায় লুকিয়ে লুকিয়ে থাকি?”
“সুদু লুমে তাকো।”
বলেই মুখ ঘুরিয়ে নেয় মানতাসা। অভিমান করেছে ফুপির সাথে কয়েক দিন ধরে খেলতে না পেরে।
মানতাসার ফোলানো গাল দেখে শব্দ করে হেসে ওঠে সানজিদা। মায়া নিজেও হেসে ওঠে। মানতাসার ফোলানো গাল দুটো টেনে বলে,
“ফুপ্পির উপর খুব অভিমান হয়েছে বেবি? চলো আজকে ফুপ্পি তোমার সাথে রাত পর্যন্ত খেলবে।”
“বাগানে হাঁটতে যাব তালে?”
“আচ্ছা চলো বেবি।”
“মায়া এদিকে ঘোরো তো।”
মায়া সানজিদার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে,
“কি হয়েছে ভাবী?”
“তোমার ঠোঁটে কি হয়েছে?”
মায়ার স্মরণ হয় ছাদের ঘটনা। আমতা আমতা করে বলে,
“কো কই কি কিছু না তো।”
“না কি যেন হয়েছে। ঠোঁট এমন লাল হয়ে আছে কেন? আবার ফুলেও গেছে কেমন। কিছু কা ম ড় টামর দিয়েছিল কি?”
“পি পিঁপড়া কা ম ড় দিয়েছিল ছাদে যাওয়ার পর।”
বদ লোক টা যেভাবে চেপে ধরেছিল ফুলবে না আবার? তখন আয়নায় দেখেছিল খুব একটা ফোলা ফোলা লাগেনি। এখনো কেমন যেন ফোলা ফোলা ফিল হচ্ছে তবে গুরুত্ব দেয়নি মায়া, ভেবেছে প্রথম বার এমন হওয়ায় এখনো এমন ফিল হচ্ছে। শ য় তা ন অসভ্য লোক সামনে পেলে এখন মাথা ফাটিয়ে দিত।
“আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি ভাবী।”
মায়া দ্রুত মানতাসা কে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। সানজিদা মায়ার কথা বিশ্বাস করেছে বলে মনে হয় না। কেমন সন্দেহের নজরে তাকিয়ে আছে মায়ার যাওয়ার পথে। মায়া কেমন যেন পালিয়ে গেল। কুছ তো গড়বড় হে।
মায়া মানতাসা কে কোলে নিয়ে সোজা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে। বাড়ির বাইরে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচে যেন। যাক কারো সামনে পড়তে হয়নি আর।
রাতের খাবার খেয়ে মায়া নিজের রুমে চলে গেছে।
ড্রইং রুমে আছে শুধু আলভী, আলতাফ মাহমুদ, আহনাফ মাহমুদ আর মাহির। বাকি সবাই যার যার রুমে। ঘড়ির কাঁটা দশ টা পেরিয়ে গেছে।
আহনাফ মাহমুদ আলভীর দিকে তাকিয়ে বলেন,
“আর কত দিন আছো বাংলাদেশে?”
“তিন সপ্তাহ।”
“তুমি সত্যি সত্যিই মায়ার সাথে সংসার করবে?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে জার্মানি ফিরে যাওয়ার আগেই যেভাবে হোক মায়া কে মানাও তুমি। ও আমাদের কারো কোন কথা শোনে না শুনতেই চায় না। এভাবে আর কত দিন চলবে? তুমি একবার ফিরে গেলে কম করে হলেও ছয় মাস বা এক বছরের আগে আসতে পারবে না।”
“তাতো বটেই।”
“কদিন পর মায়ার রেজাল্ট বের হবে। ভার্সিটিতে যাওয়া আসা করবে আবার। ওর মনের মধ্যে জেদ তৈরি হয়েছে এখন। রাগে জেদে না আবার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। ওকে তোমার সাথে বিয়ে দিয়েছিলাম তোমার সাথে সংসার করার জন্যই। আগে যা হয়েছে, হয়েছে। এখন সব কিছু ঠিক করে মিটমাট করে নেওয়াই ভালো। তুমিই পারবে ওকে বোঝাতে। তুমি তোমার দিক থেকে তোমার মত করে বোঝাও ওকে। তোমার বলা আর আমাদের বলার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। তোমার সাথেও আমরা অন্যায় করেছিলাম তাই তুমি তোমার দিক টা যেভাবে বোঝাতে পারবে আমরা কেউ সেভাবে বোঝাতে পারব না। বুঝতে পেরেছো আমার কথা?”
“হুম।”
“যত দ্রুত সম্ভব মায়া কে তোমার আগের পরিস্থিতি বুঝিয়ে মানাও।”
“সর্বোচ্চ চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।”
আলতাফ মাহমুদ হয়তো কিছু বলতে চাইলেন কিন্তু বললেন না। মাহির বাবার সাথে একমত।
“যে যার রুমে যাও।”
সবাই সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। সবাই চলে গেলেও আলভী দাঁড়িয়ে রইলো আগের মতোই।
কিছুক্ষণ পর ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সিঁড়ির দিকে।
নিজের রুমের দিকে না এগিয়ে মায়ার রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
দরজায় নক করে কয়েক বার। ভেতর থেকে মায়ার গলার স্বর ভেসে আসে।
“কে?”
কথা বলে না আলভী।
আবার নক করে।
“কে? কথা বলতে মুখে ব্যাথা পাওয়া যায় নাকি?
পর পর আরো কয়েক বার নক করে। মায়া বিরক্ত হয়ে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ায়। নিশ্চই মাহিদ এসেছে। মাহিদ মাঝে মধ্যে রাতে এসে ওর ডোরে নক করে কথা বলে না।
হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ১২
ঘুম ঘুম চোখে ডোর খুলে দিতেই দেখে সামনে তাল গাছের মতো লম্বা আলভী সটান দাঁড়িয়ে আছে।
তাড়াহুড়ো করে ডোর লক করতে গেলেও লাভ হয় না। আলভী ডোর ঠেলে ভেতরে ঢুকে ডোর লক করে দেয় ভেতর থেকে।
মায়া তাড়াহুড়ো করে দূরে সরে যায়। আলভী ঘুরে তাকায় মায়ার দিকে।