রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১৪
আশু
ইয়াসিরের বিরোধীদলের একপার্টির ভাইকে আয়ান মেরে ফেলেছিল। তাদের বস সিকদার মাহমুদ। আর তারই ছোট ভাই মাহবুবকে সেদিন রাতে মারা আয়ান মেরেছিল। যা মাহমুদ জেনে যায়। নিজের ভাইয়ের করা এতদিনেট সব কার্যেই লিপ্ত ছিল মাহমুদ তবে আয়ান তার ভাইকে এভাবে ধরে ফেলবে ভাবতেও পারনি। এতকিছুর পর যখন বুঝতে পারে নিজে এবার ধরা পড়ে গিয়েছে। সিকদার মাহমুদ ছুটে এয়ারপোর্টের দিকে আজকে দেশ ছাড়বে গা ঢাকা দিবে নয়ত দুই ভাইয়ের কাছ থেকে নিস্তার নেই।
“চলো চলো, আর হ্যাঁ বিশালের ঠিকানা ইশা তো দিলো না। যাইহোক তোমার ফিয়ন্সির ঠিকানা নিশ্চয়ই তোমার জানা আছে??”
রুমি সকালে নাস্তা করতে করতে বলে,,”কিসের ফিয়ন্সি আমার কোনো ফিয়ন্সি টিয়ন্সি নেই আয়ান ভাই, আমি তো পিওর সিঙ্গেল একটা মেয়ে। কালকে ইশু আমাকে বাঁচাতে ঐসব বলেছে।”
“কিহহহহহহ??”
“হুম। আচ্ছা আয়ান ভাইয় আপনার গার্লফেন্ড আছে??ইশার বিয়েতে মজা হয়নি আপনার বিয়েতে আমি সেই এনজয় করবো কিন্তু।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আয়ান বলে,,”এই মেয়ে চুপচাপ খাও। তোমার মতো বাচাল মেয়েকে আমার বিয়েতে ইনভাইর্ট ও করবো না”
“আপনি এতো নিষ্ঠুর কেন?আমি আপনাকে অভিশাপ দিলাম আপনার কপালে আমার থেকেও তিনগুন বাচাল মেয়ে জুটবে ফু ফু””
“স্টপ , কিসব বাচ্চাদের মতো করছো,আমি বিয়েই করবো না বোন, তোমার অভিশাপ নিয়ে তুমিই রাখো”
“সে কি আপনি সন্যাসী হবেন? ”
আয়ান বিরক্তিতে এবার দাঁড়িয়ে বলে,,”আমি যাচ্ছি যদি বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে হয় তাহলে পিছনে আসো নয়ত থাকো বাই”
“আরে দাঁড়ান আয়ান ভাইয়া আমি যাবো আমি আসছি”
জঙ্গলের সীমানা পেরিয়ে মেইন রোডে দাড়ায় আয়ান আর রুমি। রুমি তো রীতিমতো হাঁপাচ্ছে। আয়ান রুমির দিকে একপলক তাকিয়ে বলে,,,”এতটুকুতেই ক্লান্ত হয়ে গেছো? ”
“আপনার এতদূরের রাস্তা এতটুকু মনে হলো। আসলেও আয়ান ভাই আপনি মানুষ না ইদুর”
“কিহহহ্??”
“মাউস চিনেন মাউস!!”
“ফালতু কথা বলবে না একদম নয়ত এখানে ফেলেই চলে যাবো। ”
“আরে যান যান আমার কি লিফটের অভাব হবে মেইন রাস্তা এসে পড়েছি। এখন তোহ্ আপনাকে রেখেই চলে যাবে। দেখতে থাকুন।”
খানিকবাদে একটা গাড়ি আসতে দেখে রুমি হাত বাড়িয়ে ইশারা দেয় লিফটের জন্য। গাড়িটা থেমে গেলে। একটা ট্যাটুওয়ালা বিদেশী ছেলে মাথা বের করে বলে,,”হেই লেডিস এনিথিং রং?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ ভাইয়া আমাকে একটু লিফট দিন প্লিজ রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি।”
“ওহ সিওর কাম অন”
রুমি তোহ্ আয়ানের দিকে
দাঁত কেলিয়ে হেসে ছেলেটির গাড়িতে উঠে বসে।
আয়ান রুমির দিকে তাকিয়েই ছিলো তবে কিছু বলে না রুমিকে যেতে দেয়। একটুপর আয়ানের জন্য বরাদ্দকৃত গাড়ি আসতেই আয়ান ও বেরিয়ে যায়।
রুমি তো নিজের সাহসিকতার বাহবা জানাচ্ছিল। তখন ছেলেটি রুমির হাত ধরতে চায়। একটুপর শরীরে টার্চ করতে গেলে রুমি রেগে বলে,,”কি সমস্যা? গাড়ি থামান যাবো না আমি।”
“আরে ডার্লিং যাবে না মানে কি? নিজেই তোহ্ আসলে। এবার আমার ইচ্ছায় না হয় যেও।”
রুমি এবার ভয়ে চেঁচাতে থাকে। একপর্যায়ে ছেলেটি গাড়ি থামায়। রুমি ছুটে বেরিয়ে যেতে নেয় তবে ছেলেটির হাত ধরা পড়ে যায়। ক্লান্ত থাকায় দৌড়াতেও পারেনি। রুমি কান্না শুরু করে চেঁচাতে থাকে আর ছেলেটি টানতে টানতে রুমিকে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে থাকে।
একটুপর ওদের সামনে একটি গাড়ি থামে। আয়ান গাড়ি থেকে নামে। এরপর আয়ান ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলে,,”ছেড়ে দে ভাই প্রচন্ড বাচাল মেয়ে মাথা পুরো খেয়ে ফেলবে আমি দুদিনেই পাগল হয়ে গিয়েছি। তর ভালোর জন্য বলছি ছেড়ে দে।”
“তাই নাকি ব্রো তুমি তো বলার সুযোগ দিয়েছো আমি তাও দিবো না এখন রাস্তা ছাড়ো।”
আয়ান মাথা চুলকে বলে,,”ঠিকআছে তাহলে,,”
তখনি রুমি চিল্লিয়ে বলে,,,”আয়ান ভাইয়া আমি সত্যি প্রমিস আর কথা বলবে না প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবে না।”
আয়ান ঘুরে বলে,,,”প্রমিস তোহ্??”
রুমি কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়ায়।
আয়ান আর সময় ব্যায় না করে ছেলেটির নাক বরাবর ঘুষি মেরে বসে। ছেলেটি উঠে আয়ানকে মারতে যাবে তার আগে আয়ানের ছেলেপেলে এসে পড়ে। এবার ভয়ে ছেলেটি পালাতে যায়। আয়ান বলে,,”একে পালাতে দিস না যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মামলায় ফেল।”
এরপর আয়ান রুমির হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে পানি দিতেই রুমি আচমকা আয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,”সরি ভাইয়া আপনার কথা না শুনায় এমন হয়েছে। ”
আয়ান হকচকিয়ে রুমির থেকে দূরে সরে বলে,,,,”ইটস্ ওকে পানি খেয়ে নাও।”
মেয়েটার এমন হাল দেখে আয়ানের একটু খারাপ লাগে। তবে বরাবরের মতো আয়ান রুমিকে ইগনোর করে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
ইয়াসির নিজেদের দুভাইয়ের বানানো সিক্রেট বাড়িতে বসে আছে। সামনের চেয়ারে বাঁধা সিকদার মাহমুদ। লোকটি রক্তিম চোখে ইয়াসিরকে দেখছে। ইয়াসির উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,,,”জানিস তোর জন্য আমার বাসরটা কমপ্লিট হয়নি। তুই কি বুঝবি তুই তো তিনবাচ্চার বাপ। আর আমি?”
“হায়,, পোড়া কপাল আমার এতদিনে আমার বউও প্রেগনেন্ট থাকতো” ঐ শালা গরুর মতো তাকিয়ে আছিস কেন?””
“আর কটাদিন পরেই হামলা দিতি। আমার তো মন চাইছে তোকে জ্যান্ত আগুনে ফেলে মচমচ করে ভেজে ফেলি। কালকে রাতে বউটা ঝগড়া করে রুম থেকেও চলে গিয়েছে সবকিছু তোর জন্য।কেন রে মানুষের সুখ সহ্য হয় না? শালা চান্দি ছুলা গন্ডার। মাথায় একটা চুল নেই সেই মাথা নিয়ে আমাদের সাথে লাগতে এসেছিস কি সাহস উগান্ডার মানুষ নাকি রে তুই। তুই তো হ্যাঁ তুই একদম বেল মাথার ডিপজল ভাই। বাঙালী ভিলেন সেই মানিয়েছে রে।”
“ওর মুখ বেঁধে একা একা বকবক করছিস কেন?”
“আরে আয়ান সাহেব যে আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি। তা আপনার রোমান্সের খাতায় কয় পৃষ্ঠা পূরণ হলো?”
“ফালতু কথা রাখ ভাই।মন হচ্ছে জেলখানা থেকে মুক্তি পেলাম হাজার বছর পর। মেয়েটার সাথে থাকলে ভালো মানুষও পাগল হবে””।
“তুই এমনি থাকবি ছিহ্ । যাইহোক ভাই এটাকে তুই যা ইচ্ছা কর। আজকে রাতে আমি হানিমুনে যাবে। বউকে শপিংয়ে নিয়ে যাবো। আমি আসি।”
আয়ান বলে,,”ধৈর্য্য তোর লিস্টে এড কর ভাই”
ইয়াসির দাঁত কেলিয়ে বলে,,,”ঐসব ধৈর্য্য ফৈর্য্য ধরলে তোর মামা চাচা হওয়া লাগবো না। অবশ্য তোর মতো ধৈর্য্যবান পুরুষের কপালে অধৈর্য্যবান নারী জুটুক এই আমার কামনা, আসি ভাই।”
আয়ান বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে বলে,,আমার বউ নিয়ে এতো পেরা নিতে হবে না সে তো আমি আমার টাইপেরই বলতে বলতে আয়ানের চোখের সামনে রুমির মুখখানা ভেসে উঠলে। আয়ান বিরক্তি শ্বাস ফেলে সামনে তাকায় আজকে আর রক্ষে নেই সিকদার দাদার ঐ বেল মাথা আয়ান ফাঁটাবেই আজ।
“ইশা বউ আমার”
“এতো নাটক করছো কেন প্রিয়??”
“দেখ বইন সোজাসাপটা বলতাছি আজকে হানিমুনে যামু তুই তো আমার ভালেবাসার ডাক বুঝোসই না”
ইশা ইয়াসিরের চুল টেনে বলে,,,,”বউকে বইন বলা কোন ভালোবাসার খাতায় লেখা আছে মি.অভদ্র জামাই?”
ইয়াসির ইশার হাত ধরে বলে,,,,”ছাড় বইন আর জীবনেও বইন বলমো না এই শেষ বইন।”
ইশা ইয়াসিরকে ছেড়ে বলে,,”তুমি শুধরোবে না।”
“এই ভরদুপুরবেলা কে শুধরাবে বল। তবে রাতে হয়ত,,”
ইশা বলে,,”রাত দিন নাই তুমি বের হও এখনি”
ইয়াসির অবাক হয়ে বলে,,”কোথায় যাবো?”
ইশা বিশাল এক লিস্ট বের করে বলে,,”এখানে যা যা আছে সব নিয়ে আসেন জামাই তারপর রাতে হানিমুনে যাচ্ছি নয়ত ক্যান্সেল। ”
“এত্তবড় লিস্ট আমার এত টাকা নাই বইন মানে বউ”
“আমি কিছু জানি না। আমার সব লাগবে তোমার টাকা আছে নিশ্চিত। নয়ত নিজে দামী দামী পারফিউম, ঘড়ি, বেল্ট, জুতো এসব কিনো কীভাবে?”
ইয়াসির বলে,, “সব তোর মাথায় হিস্টোরি আকারে সেট করা দেখি”
“একটা জামাই লক্ষ্য রাখবো না??”
ইয়াসির ভ্রুকুচকে বলে,”,তোহ্ মানুষের জামাই কয়টা থাকে বউ নয়ত,,,”
“খবরদার জামাই বিয়ে তোমার করা শেষ আরেক মাইয়ার নাম নিলে একদম পিষিয়ে ফেলবো”
ইয়াসির ঢোক গিলে বলে,,””না না এক বউই আমার যথেষ্ট তা বউ আমারে একটা চুমু দেন আমি শপিংয়ে দৌড়ায়”
“পারবো না”
“আমিও যাবো না”
“দেখো!!”
“”কি?? ”
“যাও”
“না”
“নিচু হও”
ইয়াসির নিচু হতেই ইয়াসির গালে টুপ করে ইশা চুমু দিয়ে বলে,,”যাও যাও”
রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১৩
“মাত্র একটা চুমু দিলি ইশা তুই এতো কিপটে??”
“যাবে নাকি”
“যাচ্ছি বউ, যাচ্ছি ফেয়ারী বউ আমার, আই লাভ ইউ বউ”