হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ১৮
সানা শেখ
সোফায় বসে থাকা সকলের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায় আলভীর কথা শুনে। রাতে পরী এসেছিল ওকে নিতে? সিরিয়াসলি?
নাহার বেগম আলভীর হাতের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“তোমার হাতে কি হয়েছে আলভী? মনে হচ্ছে কেউ
কা মড় দিয়েছে। কাছে আসো তো।”
আলভী নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে মায়ার মুখের দিকে তাকায়। চোরের মতো চোখ মুখ করে তাঁকিয়ে আছে ওর দিকে। বজ্জাত মেয়ে কি জোড়ে যে কা মড় টা দিয়েছিল।
নাহার বেগমের কথা শুনে সবাই আলভীর হাতের দিকে তাকায়। ডান হাতে কা ম ড়ের দাগ স্পষ্ট হয়ে আছে এখনো। সোফা ছেড়ে উঠে এসে ভাইয়ের পাশে দাঁড়ায় মাহিদ। আলভীর হাত ধরে বলে,
“ভাইয়া এভাবে কা ম ড় দিল কে?”
“ওই পরী টা, এত সুন্দর হাত দেখে লোভ সামলাতে না পেরে কা মড় বসিয়ে দিয়েছিল।”
সকলের চোখ কোটর থেকে বেরিয়েই আসার উপক্রম হয়েছে এখন। মাহিদ অবাক হয়ে বলে,
“পরী হাতে কা মড় বসিয়ে দিয়েছে?”
“হ্যাঁ।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ভাইয়া ওটা তো পরী না তাহলে। যেভাবে কা/মড় দিয়েছে, ওটা তো ডাইনী রা/ক্ষ/সী।”
মাহিদ এর কথা শুনে মায়ার চেহারায় রাগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ওর ভাই ওকে ডাইনী রা/ক্ষ/সী বলছে! ওকে কোন এঙ্গেল থেকে ডাইনী রা/ক্ষ/সী মনে হয়? কিউট হুর পরীর মতন দেখতে আর বলে কিনা ডাইনী
রা/ক্ষ/সী। ইচ্ছে তো করছে গিয়ে ভাইটার মাথা ফাটিয়ে দিয়ে আসতে। কিন্তু এই কাজ করা যাবে না, নয়তো সবাই বুঝতে পেরে যাবে মায়া আলভীর এই হাল করেছে। ওতো শুধু কা মড় টা ইচ্ছে করে দিয়েছিল আর কোনো কিছু ইচ্ছে করে করেনি। বাকি সব অটোমেটিক হয়ে গেছে নিজে থেকে। তবুও বদ লোকের কাছে মাফ চেয়েছে বারো বার। তাও হাত ধরে, শুধু পা ধরা টা বাকি ছিল। বার বার ভয় দেখাচ্ছিল ওর সেবা যত্ন না করলে বাড়ির সবাই কে বলে দেবে ওকে ঝাড়ু দিয়ে মে রেছে, কা মড় দিয়েছে, ধাক্কা দিয়ে ফেলে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে, মাজায়ও ব্যাথা দিয়েছে। মাফও চাইয়েছে তাও বারো বার। মাজ রাত পর্যন্ত ওকে দিয়ে নিজের সেবা যত্ন করিয়েছে, শ য় তা ন লোক একটা।
ঐশী রহমান কিচেন থেকে বেরিয়ে আসেন। ছেলের হাল দেখে আতঙ্কিত হয়ে বলেন,
“তোমার কি হয়েছে আলভী? কপালে হাতে এমন হয়েছে কেন?”
আলভী কিছু বলার আগেই মাহিদ বলে,
“ভাইয়ার রুমে রাতে পরীর রূপ ধারণ করে ডাইনী
রা/ক্ষ/সী এসেছিল। ভাইয়া হ্যান্ডসাম দেখতে তাই নিজের সাথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু ভাইয়া যেতে চায়নি তাই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল। ফর্সা সুন্দর স্কিন দেখে লোভ সামলাতে না পেরে কা ম ড়
মে রে ছে।”
এমন উদ্ভট কথা শুনে ঐশী রহমান কিছু সময় চুপ করে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
“রাতে কি হয়েছিল সত্যি কথা বলো।”
“সত্যি কথাই তো বলছে। সত্যি সত্যিই একটা পরী এসেছিল। কি যে সুন্দর দেখতে বলে বোঝাতে পারব না তোমাদের।”
“সত্যি সত্যিই পরী এসেছিল?”
“হ্যাঁ।”
আলভীর কথা একটু একটু বিশ্বাস হচ্ছে এখন। তার ছেলে টা তো দেখতে মন্দ না, মাশা আল্লাহ অনেক সুন্দর দেখতে। দুষ্ট পরীর নজর পড়তেই পারে এত সুন্দর একটা ছেলের উপর। এত বয়স হয়ে গেছে এখনো বউ বাচ্চা নেই, পরীর নজর তো পড়বেই।
“আল্লাহ কি বলছো তুমি এসব?”
“সব কিছু করার পর পরী টা এক ডজন মাফ চেয়েছিল।”
আলভীর এমন কথা শুনে সকলে যেন সাত আসমানের উপর থেকে নিচে পড়ল। এক ডজন মাফ চেয়েছে মানে কি?
মাহির বলে,
“পা গ লে র মতন কি বলছিস এসব? এক ডজন মাফ চেয়েছে মানে কি?”
“বারো বার মাফ চেয়েছে আমার কাছে।”
“তোর এই অবস্থা করে আবার মাফও চেয়েছে?”
উপর নিচ মাথা নাড়ায় আলভী।
নাহার বেগম বলেন,
“এই ছেলে কে আর একটা দিন ও বউ ছাড়া রাখা যাবে না। আজকে থেকে ওর বউ কে ওর রুমে রাখবে।”
আলতাফ মাহমুদ কিছু বলতে চাইলেন কিন্তু তার আগেই মায়া বলে,
“আমি থাকবো না ওনার রুমে। যেই বড় শ য় তা ন উনি ওনার রুমে পরী কেন, কোনো শ য় তা ন ও যাওয়ার আগে একশ বার ভাববে।”
মায়ার এমন কথা শুনে সবাই মায়ার দিকে তাকায়। মায়া গুটিশুটি মে রে ভাইয়ের সাথে চিপকে যায়। সবাই এভাবে তাকাচ্ছে কেন ওর দিকে? বুঝতে পারে এত গুলো মানুষের সামনে ভুলভাল কথা বলে ফেলেছে মুখ ফসকে। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে, তাতে ওর কি দোষ? সব দোষ এই বদ লোকের।
আলভীর নানি সামসুন্নাহার বেগম বলেন,
“আলভী যেভাবে বলছে তাতে তো মনে হচ্ছে দুষ্ট পরী ওর পেছনে পড়েছে। এভাবে ওকে বেশি দিন রাখা যাবে না। তাড়াতাড়ি বিয়ে করাতে হবে। মায়া ওর সাথে সংসার করতে চাইছে না, তাহলে এভাবে সম্পর্ক ঝুলিয়ে রাখার কি দরকার? ওদের তা লা ক করিয়ে আলভী কে আবার বিয়ে করাও।”
ঐশী রহমান বলেন,
“এখন চাইছে না কয়েক দিন পর চাইবে।”
“তোমার একটা মাত্র সন্তান। ছেলে টা কে দুষ্ট পরী তুলে নিয়ে যাওয়ার পর বা কোনো ক্ষতি করার পর চাইলে হবে? আর আমার মনে হয় মায়া অন্য কোনো ছেলে কে ভালোবাসে তাই জন্য আলভীর সাথে সংসার করতে চাইছে না।”
চমকিত নয়নে সবাই সামসুন্নাহার বেগমের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওনার এমন কথা শুনে নাহার বেগমের রাগ উঠে যায়।
“আপনি এসব কি বলছেন? না জেনে শুনে উল্টা পাল্টা কথা বলবেন না।”
“উল্টা পাল্টা কথা বলব কেন? সবাই এত করে বলার পরেও মায়া রাজি হচ্ছে না আলভীর সাথে সংসার করতে। এর মানে কি দাঁড়ায় তাহলে? নিশ্চই মায়া অন্য কাউকে ভালোবাসে তাই জন্য আলভীর সাথে এখন সংসার করতে চাইছে না। আলভী ফিরে আসবে ভাবেনি হয়তো। এখন সাহসের অভাবে কিছু বলতে পারছে না।”
আলতাফ মাহমুদ গম্ভীর স্বরে বলেন,
“আম্মা আপনি চুপ থাকুন।”
“কেনো চুপ থাকবো? মায়া কে জোড় দিয়ে জিজ্ঞেস করো দেখবে ও স্বীকার করবে ওর প্রেমিক আছে।”
মাহির রেগে বলে,
“মুখ সামলে কথা বলুন। আপনি কার সম্পর্কে কথা বলছেন জানেন? এই বাড়িতে বসে এই বাড়ির একমাত্র মেয়ের সম্পর্কে এমন মিথ্যা কথা বলার রাইটস আপনাকে কে দিয়েছে? বৃদ্ধ মানুষ বলে কিন্তু মাথায় তুলে রাখবো না আমি।”
আহনাফ মাহমুদ বড় ছেলের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“মাহির উনি তোমার গুরুজন।”
“গুরুজন বলে কি মাথায় তুলে নাচবো? কি বলছে উনি শুনতে পাওনি তুমি?”
ঐশী রহমান এর ভাই বলেন,
“মা এইসব কোন ধরনের কথা বলছো? উল্টা পাল্টা কথা না বলে মুখ বন্ধ রাখো।”
“উল্টা পাল্টা কথা বলবো কেন? মায়া গত রাতে কোথায় ছিল জিজ্ঞেস কর। সারা রাত তো ওর রুমে ছিল না।”
এমন কথা শুনে উপস্থিত সবাই শকড। ঐশী রহমান এর পাশে মেহবুবা মেহের এসে দাঁড়িয়েছেন চিল্লাপল্লা শুনে। কি হয়েছে বুঝতে না পেরে চুপ চাপ দাঁড়িয়ে রইলেন।
আলভীর মামাতো ভাই বলে,
“কি বলছ এসব? মায়া ওর রুমে না থাকলে কোথায় থাকবে?”
“গত রাতে মায়া তোমাদের কারো রুমে ছিল?”
আলভীর নানার বাড়ির সবাই না করে।
সামসুন্নাহার বেগম ঐশী রহমান এর দিকে তাকিয়ে বলেন,
“মায়া তোমার রুমে ছিল গত রাতে?”
ঐশী রহমান থমথমে মুখে মাথা ঝাকিয়ে না করেন। মেহবুবা মেহের এর দিকে তাকিয়ে বলেন,
“মায়া আপনাদের রুমে ছিল?”
মেহবুবা মেহের ও মাথা ঝাকিয়ে না করেন।
এবার তাকান মাহিরের দিকে,
“তোমার আদরের বোন গত রাতে তোমার রুমে ছিল?”
“আমার রুমে ছিল না মায়া। মায়ার জন্য আলাদা রুম দেওয়া হয়েছে। মায়া সেই রুমেই ছিল।”
“কে বলেছে তোমাকে মায়া রাতে ওর রুমে ছিল? গত রাতে ঘুম আসছিল না বলে আমি মায়ার রুমে গিয়েছিলাম ওর সাথে গল্প করার জন্য। যেহেতু মায়া রাত জাগে তাই। গিয়ে দেখি মায়া রুমে নেই। কতক্ষন অপেক্ষা করে শুয়ে ছিলাম। শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মায়া তখনো রুমে আসেনি। রুম থেকে বেরিয়ে গেস্ট রুমের দিকে যাওয়ার সময় দেখি বাড়ির বাইরে থেকে ভেতরে আসছে মায়া। অত ভোর বেলা বাইরে থেকে কেনো আসলো? বাইরে কোথায় গিয়েছিল? সারা রাত বাইরে কি করেছে?”
এমন কথা শুনে সবাই মায়ার দিকে তাকায়। মায়ার চোখ মুখ শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে সামসুন্নাহার বেগমের কথা শুনে।
আহনাফ মাহমুদ বলেন,
“মায়া উনি কি বলছেন? তুই রাতে কোথায় ছিলি? ভোর বেলা বাইরে থেকে কেনো এসেছিস?”
মায়া একবার আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে বাবার মুখের দিকে তাকায়। ধরা গলায় বলে,
“আমি রাতে বাড়ির ভেতরেই ছিলাম। ভোর বেলা বাইরে হাঁটতে বেড়িয়েছিলাম। এর বাইরে আর কিছুই নেই।”
“বাড়ির ভেতর কোথায় ছিলি?”
বাবার রাগী গলার স্বর শুনে কেঁদেই দেয় মায়া। এভাবে আজ পর্যন্ত ওর বাবা ওর সাথে কথা বলেনি কখনো।
সামসুন্নাহার বেগমের কথা শুনে আহনাফ মাহমুদের রাগ উঠে গেছে। নিজের মেয়ের সম্পর্কে এমন কথা শুনলে কোন বাবার মাথা ঠিক থাকবে? রাগ ওঠা টাই স্বাভাবিক।
“কি জিজ্ঞেস করছি উত্তর দিচ্ছিস না কেন? নিজের রুমে না থেকে কোথায় ছিলি রাতে?”
সামসুন্নাহার বেগম আগুনে ঘি ঢালার মত করে বলেন,
“কোথায় আর থাকবে, নিশ্চই প্রেমিকের সাথে বাড়ির বাইরে ছিল। এভাবে নিজেদের সম্মান নষ্ট না করে ছেলের পরিচয় বাড়িতে বলে দিলেই তো পারো মায়া।”
মাহির গর্জে ওঠে। এতক্ষণ আলভী চুপ থাকলেও এতক্ষণে এসে মুখ খোলে। মাহির কে থামিয়ে নানির দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বলে,
“নানু তখন থেকে তোমার কথা চুপ চাপ শুনছি বলে মুখ দিয়ে যা আসবে তাই বলবে? আমার বউয়ের সম্পর্কে এমন কথা তুমি কিভাবে বলছো? মায়া না তোমার নাতনীর বয়সী। ওর সম্পর্কে এমন কথা বলতে তোমার বুক কাপছে না? বৃদ্ধ হয়ে গেছো অথচ শ য় তা নি
কুট নামি ছাড়োনি। শিওর জানো মায়া রাতে কোথায় ছিল? একজনের সম্পর্কে না জেনে তার চরিত্রের দিকে কিভাবে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করছো তুমি? দাঁত পড়ে গেছে, চুল পেকে গেছে অথচ আক্কেল জ্ঞান হয়নি। লজ্জা হওয়া উচিত তোমার।”
আহনাফ মাহমুদ ধমক দিয়ে মায়া কে বলেন,
“কি জিজ্ঞেস করছি উত্তর দিচ্ছিস না কেন বেয়াদপ? চড়িয়ে দাঁত ফেলে দেব মুখ বন্ধ করে থাকবি তো।”
এত জোড়ে ধমক শুনে শব্দ করে কেঁদে ওঠে মায়া।
আলভী শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে বলে,
“খবরদার আমার বউ কে ধমকাবে না তুমি। মায়া গত রাতে আমার রুমে ছিল আমার সাথে। ভোরে আমার রুম থেকে বেরিয়ে বাগানে গিয়েছিল।”
সবাই অবাক হয়ে আলভীর দিকে তাকায়। আলতাফ মাহমুদ বলেন,
“মায়া তোমার সাথে ছিল গত রাতে?”
“হ্যাঁ, পাঁচটার পর আমার রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমাকে কফি বানিয়ে দিয়ে তারপর বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিল।”
হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ১৭
সামসুন্নাহার বেগমের মুখ টা ছোট হয়ে কালো হয়ে যায়। আলভী রাগে লাল হয়ে নানির দিকে তাকিয়ে থাকে। দেখে মনে হচ্ছে এক্ষনি কাঁচা চিবিয়ে খাবে।
আলভী স্পষ্ট বুঝতে পারছে এই বুড়ি মায়ার নামে কেনো এমন উল্টা পাল্টা কথা বলছে। সেদিন দাদির কাছে সব শোনার পর দাদির কথায় বহু কষ্টে নিজেকে সংবরণ করে রেখেছিল। আজকে তো এই বুড়ির পাঁকা চুল সব একটা একটা করে টেনে তুলবে।