তাজমহল পর্ব ১১

তাজমহল পর্ব ১১
প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী

উল্টাপাল্টা গান বাজনা শুরু হলো তারপর থেকে। একটা গানও রুচিসম্মত না। শাইনা চুপ করে বসে রইলো। কয়েকটা ছবি তোলা শেষ হলে তাকে আর পায় কে? কাল থেকে তার উপর জুলুম শুরু হবে। মেকআপ করো, ছবি তোলো। তার ভালো লাগছেনা এসব। এত ক্লাসি লোকজন এসব গান শোনে কিভাবে? এখন তাদের ক্লাস নষ্ট হয় না?
তবে কিছুক্ষণ পর একটা গান শাইনার মনমতো হলো।

“আইলারে নয়া দামান
আসমানেরও তেরা
বিছানা বিছাইয়া দিলাম
শাইল ধানের নেরা
দামান বও দামান বও।”
তিতলি, তাসনুভা বিরক্ত। তৌসিফ আর শাওন তাদের আরও খেপাচ্ছে। তাসনুভার চেঁচামেচিতে তৌসিফ গান পাল্টে দিল। এবার গান বেজে উঠলো,
“বাগিচায় বুলবুলি তুই, ফুল শাখাতে
দিসনে আজই দোল।
আজও তার ফুল কলিদের ঘুম টুটেনি
তন্দ্রাতে বিলোল।
আজও হায়,
রিক্ত শাখায়, উত্তরী বায়,
ঝুরছে নিশিদিন..

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আনিস আর আশরাফ গরু, ছাগল কিনে ফিরে এসেছে। আনিস চা খেয়ে ছাদে এল। তাজদারের সাথে কথা বলতে বলতে দুজনেই ছাদের এককোণায় গিয়ে দাঁড়ালো। শাইনা সেদিকে তাকিয়ে আছে। দাদীমা ঠিক কথা বলছিল। তাজদার সিদ্দিকী যাদের গায়ে হাত তুলতে চেয়েছিল, তুলেছে তারা সবাই সব ভুলে তাজদার সিদ্দিকীর সাথে কথা বলছে, মিশছে। রাগ, ক্ষোভ তারা রাখেনি।

তাদের মনেই নেই আগে কি হয়েছে। শুধু সে-ই ঘৃণা করছে। সে মেনে নিতে পারছেনা। নিজের মনকে সে নিজে প্রশ্ন করলো। কিন্তু বারংবার উত্তর এল, তুই ঠিক করছিস। তার জায়গায় অন্য মেয়ে থাকলে একই কাজ করতো।
তার এনগেজড স্ট্যাটাস স্ক্রিনশর্ট নিয়ে একটা মেয়ে ওই স্প্যারোস গ্রুপে পোস্ট করেছে। বলছে ওই আপুটা এনগেজড স্ট্যাটাস দিয়েছে। অথচ সবাই কত ন্যাকা কান্না কাঁদছে তার দুঃখের কথা শুনে।
নিচে কয়েকজন কমেন্ট করেছে, এরা একনম্বরের ছোটলোক। ছেলের পয়সা আছে দেখলে এরা সাতখুন মাফ করে দেয়, নেচেনেচে গলায় ঝুলিয়ে পড়ে। এদের মতো মেয়ের কারণে ছেলেরা অপমান করে পার পেয়ে যায়। এইসব মেয়েদের জন্য মেয়েরা সস্তা হয়ে যায় ছেলেদের কাছে। আরেকজন বলছে, “জুটি মন্দ হয়নি। ছোটলোকের কপালে আরেক ছোটলোক জুটেছে।”

শাইনা জানে কথাটা ভুল বলেনি তারা। টাকাপয়সা কম হলে এই লোকটার কাছে তার বিয়ে দিত না তার পরিবার। বরং তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তাদের দেখিয়ে দেখিয়ে আরও বড় পরিবারে বিয়ে দিত। কিন্তু তাজদার সিদ্দিকীর পয়সা, প্রতিপত্তির কাছে তার পরিবার বিক্রি হয়ে গেছে। তার পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। অভাব দূর হয়েছে। কিন্তু ওই বাড়ির মানুষের উপর কথা বলার সাহস তারা যোগাড় করতে পারেনি এখনো। অথচ তাজদার সিদ্দিকীকে ফিরিয়ে দিতে পারলে সেটাই হতো সবচেয়ে বড় জবাব। তার হাতে যদি সব থাকতো তাহলে সে এই মোক্ষম জবাবটা দিতই। পরে কি হবে তার কথা চিন্তা করতো না।
সে এখন ভালো মানুষ হয়ে গেছে বললেও শাইনা তাকে ক্ষমা করবেনা।

তার পরিবারকে তো নয়ই। সবার চোখে তাজদার সিদ্দিকী নায়ক হতেই পারে। কিন্তু ওই লোকটার দিকে তাকালেই তার সব অপমান অপদস্ত হওয়ার কথা মনে পড়ে। তখন চোখের সামনে সে একজন ভয়ংকর ঘৃণিত লোককে দেখতে পায়। ভাত খেতে বসে সে একবার অপমানের চোটে কেঁদে ফেলেছিল। অযু করতে বসে তার চোখের পানি টপটপ করে পড়েছিল অযুর পানির উপর। সে কি করে ভুলবে ওইদিনগুলো?
তাজদার সিদ্দিকী এত সহজ মানুষ নয়। পারিবারিক দাঙ্গায় সে মুরব্বিদের কথা বলতেও দিত না। মোটা গদা নিয়ে দৌড়ে আসতো। আঙুল তুলে শাঁসাতো বড়দেরও। মোটকথা, তাদের মুখের উপর কেউ কথা বলতে পারবেনা। তারা যা বলবে সেটাই হবে। তাদের মর্জিমতো চললে সে ভালো। আর তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দুটো কথা বললে সে খারাপ।

তার বাপ চাচা পর্যন্ত তাকে আটকে রাখতে পারতো না। এত বেয়াদব ছিল। অথচ তখন বয়স কত? ছোট থেকে বেয়াদব ছিল সে। তাদের পরিবারের কাউকে সে মানুষই মনে করতো না।
সবাই ভুলে গেলেও সে ভুলতে পারবেনা। সবাই তো বিয়ে দিয়ে বোঝা হালকা করছে। তার জায়গায় থাকলে বিয়েটা তারা করতো না। মানুষ অন্যের জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজেকে ভাবেনা। আজ তার পরিবার যদি তার জায়গায় নিজেদের বসিয়ে ভাবতো তাহলে এই বিয়ে হতো না। কেউ একবারও বোঝার চেষ্টা করেনি তার জীবনটা কার নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে।

ওই লোকটার দিকে সে তাকাতেই পারছেনা ঘৃণায়। প্রতি পদে পদে তার সব মনে পড়ছে। কারণ ওই জঘন্য মুখভঙ্গি, ব্যবহারগুলো তার মুখস্ত। কি করে ভুলবে সে? কি করে একঘরে সংসার করবে? এই গোটা পৃথিবীতে তাকে বোঝার মতো একটা মানুষও হলো না। টাকাপয়সা, ধনসম্পদ, আর প্রতিপত্তির কাছে তার সমস্ত চাওয়া পাওয়াগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। এমনকি সে কি স্ট্যাটাস দেবে সেটা পর্যন্ত ঠিক করছে তাজদার সিদ্দিকী। তার আইডি দখল করেছে। সে মেহেদী কিভাবে পরবে সেটা পর্যন্ত ঠিক করে দিচ্ছে।

এত এত হাসিখুশি মুখের আড়ালে তার দুঃখগুলো স্রেফ চাপা পড়ে আছে। হাসিঠাট্টার, আনন্দ উল্লাসের ভিড়ে নিজের কষ্ট চাপা দিয়ে সুখী হওয়ার ভান ধরা মানেই তো আরেকটা মৃত্যু।
তাসনুভা এসে তাজদারের পেছনে দাঁড়ালো। তাজদার তখন আনিসের সাথে কথা বলছিল। তাসনুভার ডাকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল। তাসনুভা আনিসকে দেখে আর এদিকে আসছেনা। আনিসও তাকায়নি। তাজদার ফিরতেই তাসনুভা বলল,”ছবি।”
“যাচ্ছি।”
কিছুক্ষণ পর তাজদার এল। শাইনা বসা থেকে ধীরেধীরে উঠে দাঁড়ালো। তৌসিফ তাজদারের দিকে হলুদের বাটিটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,”অল্প করে নাও। তারপর বধূর মুখে লাগিয়ে দাও।”
তাজদার বাটি থেকে অল্প করে হলুদ নিল। তারপর শাইনার ডান গালে লাগাতে যাবে তখুনি শাইনা পিছিয়ে গিয়ে বলল,

“আমার গাল জ্বলছে। মুখ ধুতে হবে।”
তাজদার তারপরও থামেনি। তাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সে তা পালন করলো। এগিয়ে এসে শাইনার গালে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে টিস্যু দিয়ে আঙুল মুছে নিতে নিতে তৌসিফকে বলল,
“শেষ? এবার যেতে পারব?”
“তোমার গালে হলুদ লাগিয়ে দেবে শাইনা। তারপর চলে যেতে পারবে।”
শাইনা গাল থেকে হলুদটা মুছে ফেলছে। তাসমীন আর তাসনুভা একে অপরের দিকে তাকালো।
তিতলি এসে তার দিকে হলুদের বাটি বাড়িয়ে দিল। হাসিমুখে বলল,”শাইনা ভাইয়ার গালে…
শাইনার হাত কাঁপছে। সে পারবে না। সে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তৌসিফ আর শাওন বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়লো। কিন্তু শাইনা বাটি থেকে হলুদ নিল না। তাজদার সিদ্দিকী হঠাৎ তার হাতটা খপ করে ধরলো। তারপর হাতটা তুলে নিজের গায়ে ছোঁয়াল। শাইনা নিজের গাল থেকে হলুদ সরিয়ে নিয়েছিল হাত দিয়ে। হলুদগুলো কচলাচ্ছিল। তাজদার সিদ্দিকী নিজের গালে সেগুলো লাগিয়ে নিয়ে তৌসিফের দিকে তাকিয়ে বলল,

“হয়েছে?”
তৌসিফ বলল,”ফাটিয়ে দিয়েছ। এটা ইউনিক।”
শাইনা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ছবি তোলা শেষ তাই সবাই ছাদ কাঁপানো গান ছেড়ে দিয়ে হৈহল্লা করছে। শাইনা দাঁড়িয়ে রইলো সবার মাঝখানে। নড়লো না। চড়লো না। দাদীমা এসে তার সামনে দাঁড়ালো। জানতে চাইল,
“ব্যাটার হাত থেকে হলুদ নিসনি? নিচে গিয়ে দেখলাম বসে আছে। গালেটালে হলুদ লাগিয়ে দেয়নি?”
শাইনা আচমকা কেঁদে উঠলো। সবার নাচগান থেমে গেল তার কান্নার শব্দে। তিতলি, তাসনুভা সবাই হাঁ করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আনিস এসে শাওনকে বলল,”ওকে যেতে দে এবার। আর ছবি তোলা লাগবেনা।”
দাদীমা বলল,”ওরে সোহাগি শুধু একটু গাল ধরছে বলে কাঁদছিস? জড়ায় ধরলে কি করবি?”

কাল রাতে শাইনা দাদীমার সামনে কেঁদে দিয়েছে কথাটা অনেকভাবে রটে গিয়েছে। তাসনুভা আর তাসনীম রওশনআরাকে এসে সবটা খুলে বলছে।
তাসনুভা বলল,”ভাইয়া তার গালে হলুদ লাগানো মাত্রই চেহারাটা মলিন হয়ে গেল। চোখে পানি টলমল করছিল। মনে হচ্ছিল বাইরের কেউ হলুদ লাগিয়েছে তার গালে। ভাইয়া কি পরপুরুষ যে সে ছোঁয়ামাত্রই সে চেহারাটাকে ওরকম বানিয়ে ফেলবে?”
রওশনআরা বললেন,”বিয়ের সময় মেয়েদের অনেক রকম অনুভূতি হয়। স্বাভাবিক। এত ভুল ধরলে হবেনা।”
তাসনীম বলল,”মোটেও স্বাভাবিক নয় বড় আম্মা। ভাইয়া তার গালে হলুদ লাগানো মাত্রই তার চোখমুখ থমথমে হয়ে গিয়েছিল। শাওন বলল ভাইয়ার গালে হলুদ লাগাতে। ও লাগালো না। ত্যাড়ার মতো দাঁড়িয়ে থাকলো। ভাইয়া তার হাত ধরে যখন নিজের গালে হলুদ লাগালো তখন মনে হচ্ছিল কেঁদে দেবে। আর তাই হলো। ওর দাদীমা আসার পর কেঁদে উঠেছে।”

“এসব কথা বলে এখন কি হবে??”
তাসনুভা বলল,”কি হবে মানে? ভাইয়া আর ও কথা বলেনা একে অপরের সাথে। ভাইয়া বলতে চাইলেও শাইনা এড়িয়ে যায়। মানে ও ভাইয়াকে পেয়ে হ্যাপী নয়। আশ্চর্য! তার সাত কপালের ভাগ্য ভাইয়ার মতো কাউকে পেয়েছে। কাল ভাইয়া তার হাত ধরেছে বলে চেহারাটা বারোটা বাজিয়েছে। ভাইয়া সেটা টের পেয়ে নিচে চলে গিয়েছিল। ভাইয়া এতে অপমানিত হয়নি? শাইনা ইন্ডাইরেক্টলি ভাইয়াকে অপমান করেছে। ভাইয়ার হাতে লাগানো হলুদগুলো গাল থেকে মুছে ফেলেছে ঘষে ঘষে। মেয়ে কি কম পড়েছিল? ওই বাড়ির মানুষকে এত দামে তোলার কি দরকার ছিল?”

রওশনআরা ধমকে বললেন,”আস্তে বলো নুভা। তোমার বাবা চাচারা শুনতে পাবে। আর খবরদার এসব কথা নিয়ে টানাহেঁচড়া করবে না। ওকে আমি এখানে এনে শিখিয়ে পড়িয়ে দেব। ও যথেষ্ট ভালো মেয়ে। তোমার ভাইয়াকে পছন্দ না করার যথেষ্ট কারণ আছে। সব মেয়ে টাকাপয়সা দেখে খুশি হয় না। ওই বাড়ির মেয়েরা ছোটবেলায় তাজদারকে ভয় পেত। মেয়েরা কেন ওই বাড়ির ছেলেরাও ভয়ে থাকতো। তোমার ভাইয়া যে মাঠে খেলতো সেই মাঠে ওরা পাও রাখতে পারতো না। যে দোকানে বসে চা খেত ওই দোকানে ওরা ঢুকতে পারতো না।
যে ঘাটে গোসল করতো ওই ঘাটে ওরা গোসল করতে পারতো না। তোমার ভাইয়া মসজিদের যে কাতারে দাঁড়াতে ওই কাতারে ওরা দাঁড়াতে পারতো না। অপছন্দ করার যথেষ্ট কারণ ছিল। অপছন্দ হওয়াটা স্বাভাবিক। তোমার ভাইয়া সেইসব মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই। বলো আকদ ভেঙে দিতে। অন্য কাউকে বিয়ে করতে। সহজ কথা। আমাকে কিছু বলবে না। সোজা তোমার ভাইয়াকে গিয়ে বলো।”

বলেই তিনি চলে গেলেন। তাসনুভা তাসনীমের দিকে তাকিয়ে বলল,”তুমি দেখো ওই মেয়েটা ভাইয়াকে একটুও শান্তি দেবেনা। এই বাড়ি থেকে প্রস্তাব যাওয়ার পর থেকে ওদের পা মাটিতে পড়ছেনা। আমি বলেছি মেহেদী আর্টিস্ট ঠিক করেছি। কিন্তু ও বলে দিল সে মেহেদী পরবে তার আপাদের হাতে। কারণ তার আপারা ভালো মেহেদী পরাতে জানে।”

গোটা বাড়ি সাজানো শেষ। রাস্তা অব্দি লাইটিং করা হয়েছে। বাড়ির সামনের পুকুরে কৃত্রিম ঝর্ণা বসানো হয়েছে। চারিদিকে সাজ সাজ রব। সন্ধ্যা নামতে নামতেই বাড়িজুড়ে হৈচৈ, কোলাহল।বাচ্চাদের আনন্দের শেষ নেই।
মেহেদী অনুষ্ঠানে কেকের পাশাপাশি রাখার জন্য ভেজিটেবল আর ফুড কার্ভিং বানাচ্ছে সবাই।
লাউ কেটে ছোট্ট নৌকা, আপেল কেটে খুদে পাখি, মাল্টা গোল ফরমে কেটে ফুল, মিষ্টি কুমড়া কেটে ঝুড়ি তারমধ্যে আঙুর। আরও কত কী!
সবগুলো বানাচ্ছে তাজদারের মামাতো খালাতো ভাইবোনেরা। যেহেতু একটাই স্টেজ তাই দুই বাড়ির কাজিনরা যোগ দিয়েছে। কাজগুলো হচ্ছে তিতলির ঘরে।

শাইনাদের বাড়ির পাশে বাগানের মধ্যে ইটের চুলা বসানো হয়েছে। সেখানে তিনটি বিরিয়ানির ডেগচি পাকানো হচ্ছে বাবুর্চির দ্বারা। শাইনা বাবা দুটো গরু কিনেছে। একটা গরুর মাংসের অর্ধেক দিয়ে বিরিয়ানি পাকানো হচ্ছে মেহেদী অনুষ্ঠানের জন্য। তিনি মাংস দিয়েছেন, চাল মশলা আর বাবুর্চির খরচ তাজউদ্দীন সিদ্দিকী দিয়েছেন।
সাড়ে সাতটার দিকে ডেগচিতে বিরিয়ানি পাকানো শেষ। আটটা বাজতেই খাওয়াদাওয়া শুরু হলো। সাথে নলার ঝোল, আর ডিম দেয়া হয়েছে। যদিও বিরিয়ানিতে অনেক মাংস দেয়া হয়েছে। শাইনার ফুপুদের মতে এত মাংস দেয়া ঠিক হয়নি। কিছু মাংস ফ্রিজে রাখা উচিত ছিল। যদি দশ কেজির মতো রাখা হয়েছে। দুটো গরুর জবাই করে ফ্রিজে শুধু দশ কেজি মাংস এটা পরিমাণে খুবই কম।

শাইনার বান্ধবীরা এসেছে। শাইনা তাদের পেয়ে খুব খুশি। শাইনাকে জিজ্ঞেস করলে, “ভাইয়ার সাথে দেখা করা।”
শাইনা বলল,”আশেপাশে আছে। দেখতে পাবি। খাবি চল।”
সবাইকে খেতে বসিয়ে দিল সে। সেই টেবিলে তার খালাম্মা আর ফুপুরাও বসলো। সবাই সাজগোছ করতে যাবে খেয়েদেয়ে। বান্ধবীরা শাইনাকেও তাদের সাথে বসিয়ে দিল। বলল,”আমাদের সাথে খেয়ে নে। সাজগোছ করার পর আর খেতে ইচ্ছে করবেনা।”
বিরিয়ানির দুটো ডেগচি মজা হয়েছে। তিন নাম্বার ডেগচিটা ঝাল হয়েছে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে মেহেদী অনুষ্ঠানের বিরিয়ানি ঝাল হলে বিবাহিত দম্পতি সুখী হয় না। কথাটা শাইনার ফুপুরা বলাবলি করছিল। শাইনা এসব বিশ্বাস করেনা। কিন্তু আজ ইচ্ছে করে বিশ্বাস করলো। সে অসুখীই হবে। সুখী হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই তার।

তাজদার তাদের আত্মীয় স্বজনকে তদারকি করছিল। তার মামা মামীর সাথে কথাবার্তা বলছিল। ঠিক তখুনি তার খালাম্মা ডাকলো।
“আব্বু শোনো।”
তাজদার এগিয়ে এল। খালাম্মা বলল,
“ওই টেবিলে তোমার খালা শ্বাশুড়ি, ফুপু শ্বাশুড়িরা বসেছে। যাও তাদের কিছু তুলেটুলে দাও।”
শাইনার ফুপুরা তাজদারের সাথে কথাবার্তা বলে। হাসিঠাট্টাও করে। তাকে দেখে বলল,
“জামাই সাব তো খুব ব্যস্ত।”
তাজদার এগিয়ে এসে বলল,”আপনারা ঘরের মেহমান হয়ে এত তাড়াতাড়ি খেয়ে নিচ্ছেন কেন? চলে যাবেন নাকি?”
“না না সাজগোছ করতে চলে যাব তাই।”
“আচ্ছা চামচ দিন। আমি কিছু তুলে দেই।”

ফুপু শাইনার বান্ধবীদের দেখিয়ে দিয়ে বলল,”ওরা তোমার বউয়ের বান্ধবী।”
বান্ধবীরা একটু অপ্রস্তুত হয়ে সালাম দিল যদিও খেতে বসে সালাম দিতে নেই। তাজদার সালামের জবাব দিয়ে বলল,
“তাহলে মেহমানদারি আমাকেই করতে হবে।”
শাইনা একদম ঘোমটা টেনে বসে খেয়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে পেট ভরেমতো কিছু খায়নি বলে তার খিদেও লেগেছে বেশ। সে মিষ্টি, নাশতা পুরোপুরি এড়িয়ে চলছে। তাজদার কপাল কুঁচকে তাকালো তার দিকে। তার হাত থেমে গেল।
সবাই তাকে ওভাবে তাকাতে দেখে হালকা হেসে উঠলো। শাইনা ঘোমটা আরও নামিয়ে খেতে লাগলো। সানজুকে তাড়া দিল।

“হাঁ করে না তাকিয়ে তাড়াতাড়ি খা।”
তাজদার কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো। ফুপু বলল,”বউয়ের খিদে পেয়েছে তাই খেয়ে নিচ্ছে আমাদের সাথে।”
তাজদার চোখ সরিয়ে নিল। হাত বাড়িয়ে ডাকল,”এই তৌসিফ!”
তৌসিফের হাতে বড় একটা গামলা। সেটাতে করে সে তাসনীমের শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের জন্য বিরিয়ানি নিয়ে যাচ্ছিল। তাজদারের ডাকে থেমে গেল।
“জি।”
তাজদার বলল,”তিতলি, নুভাসহ বাড়িতে যারা আছে তাদের পাঠিয়ে দে। এখানে টেবিল খালি আছে। এলাকার লোকজন এলে তখন খেতে পারবেনা।”
তৌসিফ বলল,”ওকে পাঠাচ্ছি।”
তাজদার সবার পাতে বিরিয়ানি তুলে দিল। শাইনার পেছনে যাওয়ামাত্র শাইনা বাসনটা নিয়ে উঠে চলে গেল ঘরে।
ছোট ফুপু হেসে বলল,”ওর খাওয়া শেষ তাই।”

শাইনার মেহেদী অনুষ্ঠানের শাড়ির রঙ হালকা সবুজ। শাড়ির পাড়, ব্লাউজ আর ঘোমটা গোলাপি রঙের। ছেলেরা সবাই পরেছে সাদা পাঞ্জাবি আর কালো মাফলার। স্টেজটা সাজানো হয়েছে বেশ বড় করে। তিতলি আর তাসনুভাকে দেখা যাচ্ছে শাড়ি পরে ঘুরঘুর করছে। সবাই একই রঙের শাড়ি পরেছে। শুধু শাইনার শাড়িটা ভিন্ন।
কিছুক্ষণ পর শাইনাকে বের করে আনা হলো। মাথার উপর ওড়না টেনে ধরেছে সবাই।
অনেক বড় একটা কেক নিয়ে তার পিছু পিছু
হাজির হলো তাসনুভা। শাইনা বসার আগে স্টেজে বসে, দাঁড়িয়ে, পা তুলে নানান কায়দায় বসে তার ছবি তোলা অনেক আগেই শেষ।
শাইনা স্টেজে উঠে এল। ক্যামেরাম্যানের কথামতো কপালের কাছে হাত রেখে সবাইকে সালাম দিয়ে ধীরেধীরে স্টেজে বসে পড়লো। শাওন এসে বলল,

“মুখে হাসি আন। হাসি নেই বলে কত কথা হচ্ছে শুনতে পাচ্ছিস না? সবকিছু শিখিয়ে দিতে হবে।”
শাইনা অনিচ্ছাসত্ত্বেও মুখে হাসি হাসি ভাব রাখার চেষ্টা করলো। তার আজকের সাজ অন্যদিনের চাইতে অনেক সুন্দর হয়েছে। সবাই বেশ প্রশংসা করেছে। তাসনুভা বলে বেড়াচ্ছে, সব তার ঠিক করা মেকআপ আর্টিস্টের কামাল।
কেক কাটা আরম্ভ করলো মেয়েরা। সবাই শাড়ি পরা, ফুলের গয়না পরা। শাওন বলল,”বাপরে বাপ এত মেয়ে কোথা থেকে এল?”

সবাই তার কথা শুনে হাসছে। শাইনা কেক কেটে ননদদের মুখে দিল। তাসনুভা আর তিতলি কেক খেয়ে তাকেও খাইয়ে দিল। মেয়েরা স্টেজ দখল করে রেখেছে।
ক্লাব থেকে কিছুক্ষণের জন্য এসেছে আনিস আর আশরাফ। তাদেরকে বলে বলে পাঞ্জাবি পরালো শারমিলা আর শাবরিন। কারণ শাইনাকে রাখি পরাতে হবে।
আনিস পাঞ্জাবি পরে এসে স্টেজে থাকা মেয়েদের উদ্দেশ্য বলল,”তোমরা এখন একটু নামো। ভাইয়ারা উঠি। ক্লাবে যেতে হবে।”

স্টেজে তিতলি আর তাসনুভাও বসা ছিল। দুই ভাইয়ের বউ নিয়ে তারা ছবি তোলা শেষে কাজিনদের নিয়ে ছবি তুলছিল।
আনিস এসে কথাটা বলায় সে বিরক্ত হলো। হনহনিয়ে নেমে গেল স্টেজ থেকে। আনিস ব্যস্ত পায়ে হেঁটে স্টেজে উঠে বসলো। শাওনকে বলল,
“বড় ভাইকে ডাক দে।”
আশরাফও এল তার পরপর। তিন ভাই একসাথে স্টেজে উঠলো। ভাইয়েরা হাতে রাখি পরানো সময় শাইনার বুকটা ভার হয়ে এসেছিল। তিন ভাই কেক কাটলো। শাইনা তাদের কেক খাওয়ালো, নিজেও খেল ভাইদের হাতে। বোনের ছেলেমেয়েদের ডেকে এনে কেক খাওয়ালো।
ভাবি সাবিনাও এল শাড়ি পরে সেজেগুজে। আশরাফ আর সে একসাথে বসে কেক কাটলো। তারপর সব ভাইবোনরা একসাথে বসে কেক কাটলো। মা বাবারাও এল। ফুপু, মামী, খালা সবাই। তাসনুভা বুকে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে তৌসিফকে বলল,

“এজন্যই বলেছিলাম আমাদের স্টেজ আলাদা করতে। এখন মনে হচ্ছে আমরা কোথাকার ভাড়াটিয়া।”
তৌসিফ বলল,”তোর মতো মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি। ওরা সবাই কেক খাইয়ে নেমে যাচ্ছে তোদের সুযোগ করে দেয়ার জন্য। ভাই এলে তখন স্টেজ আমাদের দখলে থাকবে। ফালতু।”
তাসনুভা বলল,”আমাকে ফালতু বললে?”
“না তুই খুব ভালো বোন আমার। মাফ কর।”
কিছুক্ষণ পর তাজদার এল। ছেলে কাজিনরা সবাই ঘিরে দাঁড়ালো তাকে। তাসনুভা তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। বলল,”ভাইয়া আমরা ফ্যামিলি ফটো নেব। শাইনাকে নেমে যেতে বলছি।”
তৌসিফ বলল,”নেমে যেতে বলবিনা। বলবি তুুমি নিচে এসে বসো। আমাদের ফ্যামিলি পিকচার তোলার পর তুমি আর ভাইয়া একসাথে কেক কাটবে। বুঝিয়ে বলবি। নেমে যাও বললে ঠাস ঠাস করে মারব।”

তাসনুভা হনহনিয়ে চলে গেল। শাইনা তার বান্ধবীদের সাথে ছবি তুলে স্টেজ থেকে নেমে এল।
কিছুক্ষণ পর তাজদার স্টেজে উঠলো। তার মা বাবা ভাইবোন, বন্ধু-বান্ধব, ভাই ব্রাদার্স, আত্মীয়স্বজন নিয়ে ছবি তোলা শেষ হতেই তৌসিফ তিতলিকে ইশারায় বলল শাইনাকে স্টেজে তুলতে।
তিতলি শাইনাকে নিয়ে এল। স্টেজে বসিয়ে দিল তাজদারের পাশে। ক্যামেরাম্যান বলল,”এবার কেক খাইয়ে দিন।”
কেক কেটে দু’জন দু’জনের খাওয়ালো।রওশনআরা আর শাহিদা বেগমসহ দুই পরিবারের সবাই দেখছে দুজনকে। বরপক্ষ বলছে মেয়ে জিতছে। তাদের ছেলে মেয়ের চাইতে সরস। কনেপক্ষ বলছে বর জিতছে। তাদের মেয়ে সুন্দর। আর নানান কথাবার্তা।

কেক কাটাকাটি শেষ হওয়ার পর নাচগান শুরু হলো। অনুষ্ঠানের মাঝখানে কয়েকটা বুড়ি এল আচমকা। তারা বিয়ে বাড়িতে এসে নাচগান করে। সবাই তাদের নাচুনি বুড়ি বলে।
শাইনাকে ঘিরে ঘিরে কীসব বলে বলে নাচছে তারা। তাজদার পিঠের পেছনে হাত ভাঁজ করে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে দৃশ্যটা। শাইনা বুড়িগুলোর গান শুনে না হেসে পারলো না।
শাওন এসে বলল,
“ও দাদীগো,, আপনারা একটু সরেন গো।”
বুড়িগুলো জানতে চাইল,”জামাই ব্যাটা কই গো?”
শাওন তাজদারকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। শাইনার হাত ধরে তারা তাজদারের কাছে চলে এল। দুজনকে ঘিরে আবারও গলা টেনে টেনে কীসব গান গাইতে লাগলো। নাচতে লাগলো। তাজদারের দাদীমা আনোয়ারা ভিড় ঠেলে এগিয়ে এসে নাতির কানে ফিসফিস করে বললেন,

“দাদুভাই ওদের টাকা দিতে হবে। গান গেয়ে তোমাকে খুশি করাচ্ছে যাতে টাকা দাও।”
তাজদার মাথা একটু নামিয়ে দাদীমার কথা শুনে বলল,”আচ্ছা বুঝলাম। সব জায়গায় ব্যবসা।”
বুড়িগুলো এই বয়সে এসে এভাবে নাচছে দেখে শাইনা অবাক হচ্ছে। একজনের কোমরের ঠেলায় শাইনা তাজদারের বুকের সামনে এসে থমকে গেল। চোখ তুলে তাকালো।
তাজদার পাঞ্জাবির পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে টাকা দিল। শাওন বলল,

“তাজ ভাই দু হাজার।”
বুড়িগুলো শাওনকে ধমক দিল।
“চুপ ব্যাটা। চাইর হাজার না দিলে হইবো না।”
তাজদার চার হাজার টাকা দিয়ে দিল। তাসনুভা বলল,”সবাই শুধু টাকার মজনু। দেশে আসার পর থেকে সবাই পেয়ে বসেছে তাকে। যেন টাকার গোডাউন নিয়ে এসেছে সাথে করে। অসহ্য!”
বুড়ি গুলোকে টাকা দিয়ে তাজদার শাইনার হাতটা ধরলো। শাইনা চমকে তাকালো। তাজদার তার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো স্টেজের দিকে। শাইনা অবাক হয়ে গেছে। শাড়ির কুঁচি ধরে হাঁটতে লাগলো সে তালে তাল মিলিয়ে।
কে কে যেন বলে উঠলো,
“ওমা বউ নিয়ে কই যাচ্ছে?”
রওশনআরা শান্তভাবে বলল,”মেহেদী আর্টিস্টদের কাছে।”
মেহেদী আর্টিস্ট হচ্ছে তাসনুভার বান্ধবী। তারা প্রফেশনাল। স্টেজে টেবিল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সেখানে শাইনাকে নিয়ে এল তাজদার। তারপর তাসনুভাকে ইশারায় কিছু একটা বললো। শাইনাকে তার হাতে তুলে দিয়ে আগের জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। শারমিলা এসে শাইনাকে বলল,”উনাদের হাতে পরে নে মেহেদী। উনারা নাকি প্রফেশনাল।”

শাইনা কিছু বললো না আর। সে মেহেদী আর্টিস্টদের হাতে পরবে না বলায় মানসম্মানে লেগেছে। তাসনুভা বলল,”হাতে বরের নাম থাকবে।”
সে একটা ছবি দেখালো। বলল,”হবহু এটার মতো।”
শাইনাকে ঘিরে সবাই গোল হয়ে বসলো সবাই। তার দু’হাতে মেহেদী পরানো হচ্ছে। ওদিকে সবাই নাচগান করছে। হারমোনিয়াম আর মাইক্রোফোনের ব্যবস্থা আগেই করা হয়েছে। তৌসিফ আর শাওন হারমোনিয়াম বাজিয়ে মুখের সামনে মাইক্রোফোন রেখে গেয়ে উঠলো,
“আ আ রে ভাই,
একদিন গেলাম সিনেমা দেখতে।
আর রিক্সা থেকে নেমে দেখি হলে একটি
সুন্দরী মেয়ে দাড়িয়ে আছে।
হঠাৎ দেখি সেই মেয়েটির চোখে আমার চোখ পরেছে…
হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে।
আরে টিকাটুলীর মোড়ে একটা হল রয়েছে।
হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে।”
সবাই হাসছে তাদের কান্ড দেখে। শাহিদা বেগম বললেন,”মারেমা এদের এত শয়তানি বুদ্ধি।”
মেহেদী পরানোর সময় ঝিমোচ্ছে শাইনা। সবাই হাসছে তা দেখে। অনেকক্ষণ পর মেহেদী পরানো শেষ হলো। সে দেখলো তার হাতের তালুতে তাজদার সিদ্দিকীর নাম।
সকালে বিয়ের তোড়জোড় বাড়িতে। সাত পুকুরের পানি তুলতে যেতে হবে। শাইনা তখনো বিছানায়। সাজ নিয়ে দুহাত মেলে দিয়ে শাড়িটা নিয়ে সে ঘুমিয়ে পরেছে। শাহিদা বেগম তাকে যখন ডেকে দিল তখন ন’টা বেজে গিয়েছে। তিনি বললেন,

“জামাই নাকি ফোন দিচ্ছে তোকে। ও শানু ওঠ!”
শাইনা বিরক্ত হয়ে আবারও ঘুমে তলিয়ে গেল। সাবিনা এসে বলল,”শাইনা ওঠো। বিয়ের দিন এভাবে ঘুমাতে নেই। পার্লারে যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে। গোসল কখন করবে। ওঠো।”
শাইনা কিছুক্ষণ পর ঘুম থেকে উঠলো। ঘুম ঘুম আলসেমি নিয়ে পেছনে বের হলো। পুকুরঘাটে ছেলেদের গলার আওয়াজ শুনে আর ওদিকে গেল না। সাজ ধুয়ে নিল। নারিকেল গাছের নীচে মোড়া নিয়ে বসলো। চুলের ঝট ছাড়াতো লাগলো চাচাতো বোনকে দিয়ে।
হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মেসেজ এল। তাসনুভা লিখেছে,”শাইনা মেহেদীর ছবিগুলো দাও।”
শাইনা তার ফোনে থাকা ছবিগুলো পাঠালো। তাসনুভা ছবিগুলো দেখে অবাক! তাজদার নামটার উপর এমনভাবে ফুল এঁকে দেয়া হয়েছে যে নামটার অস্তিত্বই নেই।
ছবিগুলো পাঠিয়ে শাইনা চুপচাপ বসে রইলো।

ছবিগুলো সবাই সিন করেছে। হয়তো তাজদার সিদ্দিকীও। তাসনুভা বলল,”আজব! নামটা কোথায় শাইনা?”
শাইনা চুপ। তাসনুভা আরও টাইপিং করছিল।
তৌসিফ একটা হাতের ইমুজি দিয়ে থামার নির্দেশ দিল। লিখে পাঠালো,
“যদি কাগজে লেখো নাম কাগজ ছিঁড়ে যাবে,
পাথরে লেখো নাম পাথর ক্ষয়ে যাবে
হাতে লেখো নাম মেহেদী মুছে যাবে।
হৃদয়ে লেখো নাম সে নাম রয়ে যাবে।”
তিতলি বলল,”কবি যখন বলেছেন তখন সত্যিই হবে। এবার ভাবি যা ভালো মনে করেন।”
সবাই তার মেসেজটাকে হা হা রিয়েক্ট দিল।
দাদীমা এসে বলল,”ঝট ছাড়ছে?”
শাইনা বলল,”হুম।”

তাজমহল পর্ব ১০

“সাত পুকুরের পানি আসুক। তারপর গোসল নিবি। এখন মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নে। শাড়িটা পাল্টা।”
শাইনা ব্রাশ করতে করতে সিঁড়ির বেয়ে নামছিল। পা জোড়া থেমে গেল। হালকা নীল রঙের চেক লুঙ্গি পরে গোসল করছে তাজদার সিদ্দিকী। গায়ে সাবান ফেনা। দাদীমা বললেন,
“নাতজামাই সাত পুকুরের পানি দিয়া গোসল করবানা?”
পাল্টা প্রশ্ন ছুটে এল,”আজ না করে কাল করলে সমস্যা হবে?”
দাদীমাকি কি বুঝলো কে জানে আচমকা খিকখিক করে হাসতে লাগলেন। শাইনা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল,”বেয়াদব বুড়ি।”

তাজমহল পর্ব ১২