তাজমহল পর্ব ১৩

তাজমহল পর্ব ১৩
প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী

রায়হান বাবা চাচাদের গাড়িতে তুলে দিয়েছে। পরিস্থিতি জটিলের দিকে যাচ্ছে। ঠান্ডা মাথায় কথা দরকার দুই পক্ষের। তাজদারের সামনে এসে থামলো সে। তাজদারকে বলল,
“শাইনার দুলাভাইদের সাথে তোর কথা বলা দরকার।”
বলেই দাদীমার দিকে তাকিয়ে বলল,”দাদু তুমি শাইনার পাশে উঠে যাও।”
আনোয়ারা বেগম গাড়িতে উঠে বসলেন। শাইনার দাদীমা মাজেদা বেগমের হাত ধরে শাওন নিয়ে এল। দাদীমা কেমন নরমতরম হয়ে গেছেন।

“আমার নাতনিকে একটু দেখব।”
শাওন দাদীমাকে গাড়ির জানালার পাশে নিয়ে এল। শাইনা মাথা নামিয়ে বসে আছে। দাদীমা জানালা দিয়ে কম্পিত হাতটা বাড়িয়ে দিলেন। শাইনার মাথায় হাত রাখলেন। শাইনা ফোঁপাচ্ছে। তার ঘোমটা সরিয়ে দিয়ে দাদীমা মুখে হাত বুলিয়ে আঙুলগুলো নিজের ঠোঁটের কাছে ছোঁয়ালেন।
“আমাকে মাফসাফ করে দিস বোন।”
শাইনা কাঁদছে এবার। আনোয়ারা বেগম বললেন,
“আফসারের মা ওর সামনে কেঁদো না। হাঁটতে বসতে নাতনিকে দেখবে। কাঁদার কি আছে?”
দাদীমা তবুও কাঁদছেন। শাইনা তার দাদীর সাথে থাকতো ছোট থেকেই। বলা যায় দাদীমার একটা সঙ্গী ছিল সে। আজ সে সেই দাদীমার দিকেও তাকালো না। যে তার বন্ধুর মতো ছিল সেও তাকে বোঝেনি।
দাদীমার পেছনে তাজদার এসে দাঁড়ালো। গলা ঝাড়লো। দাদীমা তার দিকে ফিরে চোখ মুছতে মুছতে বলল,”আমার নাতনিকে আদরে রাখবে নাতজামাই।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আর?”
“ওর মায়ের শেষের সন্তান ছিল বলে যত্ন পায়নি। আমি ওকে বুকের সাথে লাগিয়ে রেখে বড় করছি। তুমিও ওরে বুকের সাথে জড়াইয়া রাখবা।”
তাজদার বলল,”আচ্ছা বুঝলাম।”
শাওন দাদীমাকে নিয়ে চলে গেল। তাজদার গাড়ির দরজা খুলে গলা ঝাড়লো। শাইনা দাদীমার সাথে চেপে বসলো। তাজদার তার পাশে বসে গাড়ির দরজা টেনে বন্ধ করলো। রওশনআরা পেছন থেকে বললেন,”গাড়ি ছেড়ে দিতে বলো তাজদার।”
বরের গাড়ির পেছন বাকিগুলোও ছেড়ে দিয়েছে। আশরাফ শাহিদা বেগম আর আফসার সাহেবকে ধমকে বলল,”পাশের বাড়িতে মেয়ে বিয়ে দিয়েছ। কাঁদার কি আছে এখানে? সাবিনা আম্মাকে গাড়িতে তোলো।”
সাবিনা বলল,”জি। আম্মা আসুন।”
সে শাহিদা বেগমকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। আনিস বোনের জামাইদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে গাড়িতে তুললো। সবাই খেপে আছে। বাড়িতে গিয়ে কি গন্ডগোল লেগে যায় কে জানে?
সবাই গাড়িতে উঠে বসলো। রওনা দিল সিদ্দিক বাড়ির উদ্দেশ্য।

শাইনাকে গাড়িতে বসিয়ে রওশনআরা আনোয়ারা বেগম সবাই বাড়ির ভেতরে চলে গিয়েছে। মিষ্টি আর ফুলের প্লেট নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে তিতলি। তাসনুভা সোফায় বসে পায়ের গোড়ালিতে লাগানো মিনি ব্যান্ডেজটা খুলছে। পায়ে যাতে ফোস্কা না পড়ে তাই সে মিনি ব্যান্ডেজ লাগিয়ে রাখে জুতো পরার আগে। তৌসিফ তার মাথায় চাটি মেরে বলল,
“বউকে আগে মিষ্টি খাওয়া। নইলে সারাজীবন শাইনার সাথে তেঁতো কথা বলবি। তুই তো কূটনী ননদিনী। আয়।”
তাসনুভা দাঁতে দাঁত চেপে ডাকল,”তৌসিইপ্পে!”

তৌসিফ হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল। মিষ্টি, সন্দেশ, লাড্ডু আর নানানরকম ফুল ফল নিয়ে আসা হয়েছে। শাইনাকে বাড়ির সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে তাসমীন। রওশন আরা বলল,”আগে ঘরে এনে বসাও ওকে।”
আশেপাশে থাকা বৃদ্ধারা বলল,”রায়হানের মা আগে মিষ্টিমুখ করাও। তারপর বাড়িতে ঢুকবে। সবাইকে ডাকো। রায়হানের বউকে আগে মিষ্টি খাওয়াতে বলো। জায়ে জায়ে মিষ্টি সম্পর্ক হোক আগে।”
রওশনআরা মুখের উপর কিছু বললেন না। গোটা সিদ্দিক বাড়ির বড় বউ তিনি। সবাইকে সম্মান করেন। সবাইও তাঁকে সমীহ করে। রায়হানের বউ ঝিমলি এসে মিষ্টিমুখ করালো শাইনাকে। বলল,
“ঝগড়াঝাটি করে শাইনারই লাভ। বাপের বাড়িতে একদৌড়ে চলে যেতে পারবে। লস আমারই।”
সবাই হাসলো তার কথা শুনে। রওশনআরা তাসনুভা, তিতলি আর তাসমীনকে বলল,”তোমরা মিষ্টি খাইয়ে দাও। অল্প করে দাও। ও খেতে চাইছেনা।”

একে একে চাচী শ্বাশুড়ি, খালা শ্বাশুড়ি, ফুপু শ্বাশুড়ি সবাই মিষ্টিমুখ করালো। পাশের পাড়া থেকে কয়েকটা মহিলা এসেছে নতুন বউ দেখতে। বাড়ির অনেকেও ক্লাব থেকে আগেভাগে চলে এসেছে বিধায় বউ দেখতে পায়নি। তাই শাইনাকে আনামাত্রই সবাই এসে ঘিরে ধরলো দেখার জন্য।
কেউ কেউ বলল, বাবাগো শানুকে সত্যি সত্যি লন্ডনওয়ালার বউয়ের মতো লাগছে।
বিয়ের শেষের দিকে রওশনআরা স্টেজে বসে শাইনাকে গয়না, বালা সব পরিয়ে দিয়েছিলেন শাইনার পরিবারের সামনে।

গা ভর্তি সোনাদানা দেখে সবাই ফিসফাস করছে। আশরাফের মা একদম ছক্কা মেরে দিয়েছে। শানুকে তো পুরা টিভির নায়িকার মতো দেখতে লাগছে। একজন বলল, ওরে তো ওই আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা সিনেমার নায়িকার মতো লাগতেছে। শাইনার কানে বাজছে কথাগুলো।
অন্যজন টিপ্পনী কেটে বলল,”ও শানু একটু হাস। তুই তো চাঁদের মতো জামাই পাইছোস।”
শাইনা তড়পে উঠলো। মহিলাগুলো শাইনাকে ঘিরে ধরলো। তার মুখের সামনে এসে শ্লোক গাইতে লাগলো। শুরুতেই আস্তে আস্তে গাইছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর গলা ফাটিয়ে শ্লোক গাইছে সবাই।
শাইনা বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তিতলি বলল,”এরা কি শুরু করেছে?”
তৌসিফ মজা পাচ্ছে সেসব দেখে। সে ভিডিও করছে। তাসনুভা এসে কপাল কুঁচকে তাকালো। এরা পাগল নাকি?
তৌসিফকে বলল,”এদের থামাচ্ছ না কেন?”

“মেঝ ভাইকে এসব পাঠাই।”
“ভাইয়া কোথায়?”
“বন্ধুদের সাথে।”
মহিলাগুলো একদম শাইনার মুখের উপর ঝুঁকে ঝুঁকে শ্লোক গাইছে। রওশনআরা একটুর জন্য রান্নাঘরে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে কিছু বলার আগেই দেখলেন তাজদার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। তার এই চোখমুখ চেনা রওশনআরার। সে চেহারার রঙ পাল্টে গর্জে উঠে বলল,
“এই কি হচ্ছে এখানে?”
মহিলাগুলো মুখে ঘোমটা টানলো। কয়েকজন থেমে গেলেও অনেকেই থামলো না। রওশনআরা আনোয়ারা বেগমকে ইশারা করলেন। তিনি এগিয়ে এসে তাজদারকে বললেন,
“ওরা চলে যাবে। কিছু টাকাপয়সা দেবে….

কথা পুরোটা শেষ করার আগেই তাজদার সাফ সাফ জানিয়ে দিল,” একটা টাকাও দেব না। যেতে বলো এদের। কানের কাছে কীসব শুরু করেছে। কোথায় লেখা আছে এসব করতে হবে? এই,, এই মহিলারা।”
আঙুল তুলে তুড়ি বাজালো সে। মহিলাগুলো তাকাতেই তাজদার তাদের সরে যেতে বললো।
আনোয়ারা বেগম বলল,”আল্লাহ এভাবে বলতে নেই তাজদার। ওরা রোজ আসবে না। তুমি ভেতরে যাও। এভাবে বলো না নতুন বউয়ের সামনে। যাও। তিতলি, তাসনুভা নতুন ভাবিকে ভেতরে নিয়ে যাও।”
শাইনার পাশ কেটে তাজদার সিদ্দিকী ভেতরে চলে গেল। শাইনাকে সোফায় এনে বসানো হলো।

নিজেদের মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর পর বাপের বাড়ি থেকে কয়েকজন দেখতে যায়। আনিস আশরাফ যাওয়ার সময় শারমিলা আর শাবরিনের স্বামীকে বলল যেতে। তারা যাবেনা বলে দিয়েছে। আফসার সাহেব দুই জামাইয়ের উপর খেপেছেন। রাগত স্বরে বললেন,
“এত দোষ ধরে বসে থাকলে হয় না। ছেলেটা একটু এমন। ওর কাজকর্মে রেগে থাকলে তো সমস্যা। স্টেজ ভেঙেছে ওর পছন্দ হয়নি বলে। কে কষ্ট পাবে সেটা ও ভাবেনি।”
শাবরিন বলল,”আমাদের আগে বলে দিলে তো হতো। টাকাগুলো নষ্ট হতো না। সে নিজের পছন্দমতো স্টেজ সাজাতো।”

শারমিলা বলল,”আব্বা নতুন জামাই পেয়ে এখন আগের দুটোকে চোখে দেখছেনা। দোষ তো দেখছেই না।”
শারমিলা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল।
শাইনার বড় দুলাভাই বলল,”বাদ দাও। এসব কথা বললে ঝামেলা বাড়বে।”
আফসার সাহেব বললেন,”জামাই শানুকে দেখে আসো।”
শারমিলা বলল,”আবার অপমান হতে যাবে? আম্মা আব্বাকে কিছু বলবেনা? আব্বা কোন আক্কেলে ওই বাড়িতে যেতে যেতে বলছে তোমাদের জামাইকে?”
আশরাফ এসে বলল,”সবাই চুপ যাও এখন। ও আসছে বোধহয়।”
শাহিদা বেগম বললেন,”কে?”
শাওন ছুটে এসে বলল,”সবাই চুপ। তাজদার ভাই এসেছে।”
মুহূর্তেই সবার গলার সুর পাল্টে গেল। সবাই নড়েচড়ে দাঁড়ালো। তাজদার মাথা নামিয়ে চৌকাঠ পার করে ঘরে ঢুকে শাইনার দুলাভাইদের বলল,

“জামিল ভাই, ইমতিয়াজ ভাই আসেন চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
জামিল ইমতিয়াজের দিকে তাকালো। ইমতিয়াজ জামিলের দিকে। আফসার সাহেব হেসে উঠলেন,
“হ্যাঁ আমি ওদের পাঠাচ্ছিলাম। যাও যাও তোমাদের বোনকে দেখে এসো। আশরাফ, আনিস তোরাও যা দেখে আয় আমার মেয়েটাকে।”
তাজদার জামিল আর ইমতিয়াজকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। শাইনা তখনো সোফায় বসা ছিল। বাড়িতে দুলাভাইদের ঢুকতে দেখলো সে। তারা এল? সে হঠাৎ খুশি হয়ে গেল।
পেছন পেছন ফোনে চোখ রেখে তাজদার সিদ্দিকী বাড়িতে ঢুকছে দেখে কপাল কুঁচকে গেল। বাড়ি গিয়ে ডেকে এনেছে নাকি?
দুলাভাইরা এসে শাইনাকে মিষ্টি খাইয়ে বলল,”আমরা ওই বাড়ির জামাই। শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এলে আপনার সাথে দেখা সাক্ষাৎ হবে।”

শাইনা মুখ গোমড়া করে বলল,”তোমাদের ডেকে এনেছে নাকি?”
“হ্যাঁ, আমাদের খুশি করার জন্য বলছে ওয়ালিমার স্টেজ আমাদের পছন্দমতো বানাতে।”
শাইনা বলল,”নাটক করতে ফার্স্ট।”
শাইনাকে নিয়ে গেল তিতলি। তাজদার সবার সাথে বসে চা খেতে খেতে গল্পগুজব করছে।
শাইনা তিতলির ঘরে বসেছে চুপচাপ। তাসনুভা তিতলি তাকে কোন শাড়িটা পরাবে সেটা ভাবছে। শাইনার হোয়াটসঅ্যাপে হঠাৎ একটা মেসেজ এল। সে নিজের অজান্তেই মেসেজটা সিন করলো। তাজদার সিদ্দিকী একটা ব্রাইড আনবক্সিং ভিডিও পাঠিয়েছে। শাইনার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে পড়লো।
ভিডিওতে বর কনের গয়না খুলে দিচ্ছে। ভিডিওটাতে আপত্তিকর কিছু নেই। খুব নর্মালি, হেসে হেসে ভিডিওটা করা। তাই শাইনারও সুবিধা হলো। সে রাগে ক্ষোভে স্ক্রিনশর্ট তুলে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দিয়ে দিল। সবাই সিন করে চুপ করে আছে। তিতলি আর তাসনুভা শাড়ি চেঞ্জ করার কথা বলছেনা। ভাইবোনদের সামনে তাজদার সিদ্দিকীকে অপমান করে শাইনার শান্তি লাগছে। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল তাজদার সিদ্দিকী গ্রুপ থেকে লিভ নিয়েছে। শাইনার পৈশাচিক আনন্দ হলো।

তার দুলাভাইরা চলে যাওয়ার পর আনোয়ারা বেগম এসে তাজদারকে বললেন,
“এল কিভাবে? দেখে তো মনে হচ্ছে রাগ কমেছে ”
তাজদার চলে যাচ্ছিল। দাদীমার প্রশ্নে থেমে গেল। গম্ভীর মুখে বলল,”ডাকতে গেলে আসবেই সেটা স্বাভাবিক।”
অবশ্য সে যখন শাইনাদের ঘরে পা রেখেছে তখনই সবার চোখমুখ দেখে বুঝে গিয়েছিল তাকে নিয়ে তর্কবিতর্ক হচ্ছিল এতক্ষণ। দাদীমা তার কথা শুনে হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়লেন। নিজেই ঝামেলা। আবার নিজেই সবকিছুর সমাধান।
শাইনার একদম খিদে ছিল না। তবুও রওশনআরা তাকে দুমুঠো ভাত খাইয়ে দিয়েছেন। শাইনা গয়নাগাটি খুলে রেখে দিয়েছে। শুধু শাড়িটা পরা অবস্থায় ছিল। তিতলি বারবার বলছিল শাড়ি চেঞ্জ না করতে। তাকে বারবার এককথা বলতে দেখে আর কেউ কিছু জিজ্ঞেস করেনি। আনোয়ারা বেগম মুখ ফস্কে বলে ফেললেন,
“তাজদার বোধহয় মানা করেছে।”

শাইনার তখন এত লজ্জা করছিল তা বলার বাইরে।
গলার চেইন, হাতে চিকন চুড়ি আর ছোট্ট টিকলিটা পরিয়ে দেয়া হয়েছে শাইনাকে। ঝিমলি, দাদীমা, তাজদারের ফুপাতো, মামাতো ভাইয়ের বউরা সবাই শাইনাকে তার ঘরে নিয়ে এসেছে। ঘরই মনে হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল ফুলের দোকান। চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো সুন্দর। শাইনার চোখে তবুও অসুন্দর, বিশ্রী ঠেকছিল।
দাদীমা পান আর মিষ্টির প্লেট রেখে কানের কাছে কি কি যেন শিখিয়ে পরিয়ে দিল। একটাও শাইনার কানে ঢুকলো না। ভাবিরা সবাই মশকরা করছে। শাইনা চুপচাপ শুনলো। কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।
সবাই হাসিঠাট্টা করে ঘর থেকে চলে গেল। শাইনা শাড়িটা নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগছে। সে বিছানা থেকে নেমে কাঁধের কাছে পিনটা ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো। পিন ছাড়াবে তখুনি দরজার বাইরে কেউ গলার ভেতর শব্দ করলো। শাইনার আঙুলে পিন বিঁধে গেল। পিনটা ছাড়ানো গেল না। সেটি খোলা অবস্থায় কাঁধের কাছটায় থেকে গেছে। আঙুলে যন্ত্রণা হচ্ছে।

শাইনা আঁচলটা টেনে মাথায় তুললো দ্রুত। নিজেকে ঢেকেঢুকে এমনভাবে দাঁড়ালো যাতে তার মুখও দেখা না যায়। তাজদার সিদ্দিকী ঘরে পা রেখে তার দিকে তাকিয়ে দরজা বন্ধ করলো। ধুপধাপ শব্দ করে কাবার্ড খুললো, বন্ধ করলো। আচমকা ঘরের হালকা আলো কমে এল। শাইনার সামনে এসে দাঁড়ালো ছায়াটা। শাইনা ঘোমটার আড়াল থেকে চোখ তুলে তাকালো। তাজদার ভ্রু নাচালো।

তাজমহল পর্ব ১২

শাইনার নিঃশ্বাস ফেঁপে উঠেছে। সে নিঃশ্বাস ফেলেছে কি ফেলেনি নিজেও জানেনা। তাজদার সিদ্দিকী তার পাশ কেটে চলে গেল। আবারও গা ঘেঁষে। একদম বাহুতে বাহু লেগেছে। পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ায় শাইনা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে তখুনি সেই চেনা অহংকারী দাম্ভিক কণ্ঠস্বরটি তার কানের কাছে বলে উঠলো,”হ্যালো!
শাইনা সামনে পিছে কোনোদিকে তাকালো না। শুধু পালিয়ে যাচ্ছিল। ধড়াম করে দেয়ালে লেগে গেল তার কপাল। মাথাটা ঘুরে উঠলো। চোখ মুখ অন্ধকার। কানের ভেতর শোঁ শোঁ আওয়াজ করছে। সে বলে উঠার আগেই তাজদার সিদ্দিকী তাকে নিজের কাছে টেনে এনে জড়িয়ে ধরে বলল,
“উফ!”

তাজমহল পর্ব ১৪