চেকমেট পর্ব ৪১

চেকমেট পর্ব ৪১
সারিকা হোসাইন

ফ্রেস হয়ে সকালের খাবার গোগ্রাসে গিলে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো রূপকথা।যাবার আগে কুলসুম কে পই পই করে বললো
“শুন আম্মুকে টাইম টু টাইম ওষধ দিবি আর কি লাগে না লাগে দেখবি ঠিক আছে?তোর কিন্তু সবকিছু উল্টা পাল্টা করার অভ্যেস আছে কুলসুম।দুপুরের ওষধ আর বিকেলের ওষধে গন্ডগোল পাকাস না।নইলে কিন্তু মার খাবি।
রূপকথার কথাগুলো বেশ অপছন্দ হলো কুলসুমের।সে কপাল কুঁচকে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে চিটাগাং এর আঞ্চলিক ভাষায় বললো
“ইতারার খালি বাইক্কা কতা।আই আর কিছু ন জানিদ্যে।ইতারা বেককুন আর চাই বালা জানে।আই ঘাস খাই খাই ডাঙর ওয়্যি।
কুলসুমের বাড়তি কথায় রূপকথা চোখ বুজে রাগ নিয়ন্ত্রণ করলো।এই মেয়ে সব সময় দুই ধাপ বেশি বুঝে।সকাল সকাল মেজাজ বিগড়াতে ইচ্ছে করলো না রূপকথার।তাই আর কিছু না বলে বেরিয়ে এলো ঘর ছেড়ে।
বাইরে আজ রোদের প্রখর উত্তাপ।প্রচন্ড তীক্ষ্ণ আলোয় চোখ মুখ কুঁচকে এলো।রূপকথা ছোট ছোট চোখে রিক্সার জন্য আশেপাশে নজর বুলালো।অদূরে সিগারেট ফুঁকতে দেখলো এক যুবক কে।মাথায় একটা লাল ক্যাপ,গায়ে কালো পোশাক।রূপকথার বুঝতে বাকি রইলো না কে এই যুবক।রূপকথাকে দেখতে পেয়ে একটু আড়ালে সরে দাঁড়ালো ছেলেটি।রূপকথা ছেলেটার পানে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে গালি দিলো

“বাস্টার্ড।
এরপর একটা রিক্সা ধরে কলেজ গেটে নামলো।গেটে নামতেই নেলিকে দেখা গেলো আনমনে দাঁড়িয়ে আছে।রূপকথা রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে মুখের ঘাম ওড়নার আচঁলে মুছতে মুছতে বললো
“সরি রে।তোকে লম্বা সময় দাঁড় করিয়ে রাখলাম।
নেলি নিষ্প্রাণ রইলো।কোন উত্তর করলো না।রূপকথা বুঝলো অভিরূপ এর পারিবারিক দুর্যোগে নেলি ভেঙে পড়েছে।কারন অভিরূপ তার বাবার মৃত্যুতে ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে।মা আর বোনকে ফেলে কিভাবে ক্যালিফোর্নিয়া যাবে সেটা নিয়েও বেশ চিন্তিত অভি।তাছাড়া দেশেও সেরকম অঢেল প্রোপার্টি নেই যা দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কিছু করবে।সবে নতুন প্রেম হয়েছে দুজনের।এরমধ্যেই ঘটে গেলো মর্মান্তিক ঘটনা।নেলির মন ভার করা স্বাভাবিক বিষয়।
অভিরূপ এর ভাবনা ছেড়ে রূপকথা নেলিকে শুধালো
“এতো মন খারাপের কি আছে নেলি?মাস কয়েক গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।তুই এতো আপসেট হচ্ছিস কেনো?
তপ্ত শ্বাস ছুঁড়লো নেলি।এরপর কন্ঠ নিচু করে বললো
“আসলে হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল মানুষটা হুট করে কেমন মনমরা হয়ে গেলো।তাই খারাপ লাগছে।
তোদের যোগাযোগ হচ্ছে না?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হচ্ছে।খুব কম।
“ঠিক আছে ক্লাস শেষে ওদের বাড়ি যাবো।এবার ক্যাম্পাসে চল।
নেলি নিঃশব্দে চলতে লাগলো।চটপটে বকবক করতে করতে পাগল হয়ে যাওয়া নেলিকে এতটা নিশ্চুপ ভালো লাগলো না রূপকথার।তার মনে হলো পৃথিবী যেনো থমকে আছে।কোথাও কোনো প্রাণ নেই।সব কিছু গম্ভীর অনুভূতি হীন।
রূপকথা নেলির পানে তাকিয়ে বলে উঠলো
“তোকে একটা সিক্রেট বলবো।
“কি সিক্রেট?
“সারফরাজ এর মাকে খোঁজে পেয়েছি।
রূপকথা মুখে এই কথা শুনে থেমে গেল নেলি।এরপর বিস্ফারিত চোখে শুধালো।

“কোথায়?সারফরাজ জানে?
রূপকথা মুহুর্তেই মুখ নামিয়ে ফেললো।এরপর নেলিকে টেনে একটা ছায়া যুক্ত স্থানে নিয়ে একে একে খোলে বললো সব ঘটনা।প্রত্যেকটি কথা শুনে নেলির গায়ে কাঁটা দিলো।সে ভীত হলো।এরপর চাপা স্বরে বললো
“এবার কি হবে?
রূপকথা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর করলো
“সারফরাজ ঠিক একটা না একটা উপায় খোঁজে বের করবে।শুধু সময়ের অপেক্ষা।
এরপর দুজন মিলে আরো নানান আলাপ আলোচনা করলো।তারপর ক্লাসের টাইম হতেই উঠে ক্লাস রুমের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

কোনো মতে ইচ্ছে অনিচ্ছায় প্রত্যেকটা ক্লাস শেষ করলো দুজনে।লাস্ট পিরিয়ডের টাইম শেষ হতেই নিজেদের বই পত্র নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে এলো নেলি আর রূপকথা।ক্যাম্পাসের বিশাল মাঠ পেরিয়ে গেটে আসতেই সারফরাজ কে দেখা গেলো।
প্রথমে সারফরাজ কে দেখে রূপকথা ক্লান্ত মুখে হাসি ফুটলো এবং দৌড়ে সারফরাজ এর কাছে আসতে চাইলো।কিন্তু সারফরাজ চোখের ইশারায় নিষেধ করলো।রূপকথা নেলির হাত ধরে বলে উঠলো
“আমার সাথে চল নেলি।কেউ আমাদের দেখছে।

রূপকথা নেলিকে ধরে সারফরাজ এর বিপরীতে পথ ধরলো।হাতের সিগারেট মাটিতে ফেলে পায়ে পিষে রূপকথার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সারফরাজ।এরপর রূপকথার হাত চেপে ধরলো।রূপকথা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সারফরাজ এর মুখের পানে তাকিয়ে রইলো।সারফরাজ আড় চোখে রাস্তার ওপাড়ে তাকালো।সেই অদ্ভুত পোশাকধারী ছেলেটিকে দেখা গেলো বেশ আগ্রহ নিয়ে তাদের দেখছে।সারফরাজ মুখে কুটিল হাসি ঝুলিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।এরপর রূপকথা কে নিচু স্বরে বললো
“দেখি কেমন অভিনয় পারো।ধরো আমি অপরিচিত মানুষ তোমায় উত্যক্ত করছি।নাও আমার থেকে হাত ছাড়িয়ে আমায় চড় মারো।এন্ড অভিয়াসলি চোখ মুখের এক্সপ্রেশন কঠিন হওয়া চাই।নইলে তোমায় নম্বর দেবো না।
রূপকথা কপাল কুঁচকে বলে উঠলো
“মানুষ বাঁকা নজরে তোমায় দেখছে সারফরাজ।একটু পড়ে তারা এগিয়ে এসেই তোমায় আলুভর্তা বানাবে।
“মানুষ আলু ভর্তা বানানোর আগে তোমার নরম হাতে আমার শক্ত গালে এক চাপড় বাসাও।খেয়ে চলে যাই।দেরি করো না প্লিজ।

রূপকথা চোখ মুখ গরম করলো।কিন্তু ভেতর ঠেলে হাসি পাচ্চে তার।এদিকে নেলি চিন্তা করে কিনারা খোঁজে পাচ্ছে না রূপকথা সারফরাজ এর গাল নাগাল পাবে তো?
সারফরাজ জবরদস্তি মূলক হাত চেপে বলে উঠলো
“কি হলো মারছো না কেনো?
রূপকথা হাত তুললো ঠিকই কিন্তু নাগাল পেলো না।মেয়েটা এতো খাটো হয়েছে ভেবেই বিরক্ত লাগলো সারফরাজ এর।সে চিন্তা করল কমিশনার নিশ্চিত মেয়েটাকে হাইট বৃদ্ধি হবার খাবার খাওয়াইনি।কমিশনার এর কনজুস পনা চিন্তা করে সারফরাজ সিদ্ধান্ত নিলো আজ রাতে গিয়ে আচ্ছা জব্দ করবে কমিশনার কে।তার আগে এই ল্যাটা চুকাতে হবে।
সারফরাজ আশেপাশে তাকিয়ে ঝালমুড়ি ওয়ালার একটা টুল দেখতে পেলো।এরপর রূপকথাকে তা নির্দেশ করলো।রূপকথা চোখ মুখে রাগ ফুটিয়ে ঝটকা দিয়ে হাত সরিয়ে হনহন করে ঝালমুড়ি ওয়ালার নিকট গিয়ে দাঁড়ালো।সারফরাজ আবারো রূপকথার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।ঠোঁট টিপে হাসি থামিয়ে ঝালমুড়ি ওয়ালার টুল নিয়ে তার উপর দাঁড়ালো রূপকথা।এরপর নিজের শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে সারফরাজ এর গালে এক চড় বসিয়ে দিলো।
চড়ের দাপটে সারফরাজ এর ফর্সা গালে চারটে আঙুলের ছাপ উঠে গেলো।রূপকথা ভয় পেয়ে কেঁদে দেবার জোগাড় হলো।সারফরাজ ঠোঁট কামড়ে মাথা ঝাঁকালো।এরপর আওড়ালো
“দ্যাটস মাই লেডি।

আর দাঁড়ালো না সারফরাজ।চোখ মুখে অসামান্য ক্রোধ ফুটিয়ে হনহন করে নিজের গাড়ির পানে এগিয়ে গেলো।যাবার আগে স্টকার ছেলেটির পানে তাকিয়ে বলে উঠলো
“ক্যালিফোর্নিয়া যাবার আগে তোর চোখ খুবলে তুলবো মাদার ফাঁকার।
এদিকে রূপকথা আর সারফরাজ এর তামাশা দেখতে দেখতে পেঁয়াজ কাঁচামরিচ কা ট তে গিয়ে হাতের আঙ্গুল কে টে ফেললো ঝালমুড়ি ওয়ালা।এরপর চোখ মুখ কুঁচকে ঝালমুড়ি ওয়ালা ধমকে উঠলো
“আমার দোকানের সামনে আইয়াই আপনেগো এডি নাটক করতে ঐলো?দুনিয়ায় চড় মারার জায়গার অভাব পড়ছে?দেখেন হাত কাইট্টা কি ঐলো!
রূপকথা ঝালমুড়ি ওয়ালার পানে তাকিয়ে কা টা হাত খানা দেখলো।এরপর ব্যগ থেকে ঝটপট পাঁচ শত টাকার একটা নোট এগিয়ে বলে উঠলো
“ব্যান্ডেজ করে নিয়েন।আর আপনার টুলের জন্য ধন্যবাদ।
এরপর নেলিকে ধরে হিরহির করে টেনে অভিরূপ দের বাড়ির পথে হাঁটা ধরলো।

অভিরূপ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে তার বোন আর মাকে নিয়েই ফিরবে ক্যালিফোর্নিয়া।যেহেতু এখানে বাড়িটা ছাড়া আর কিছুই নেই তাই তেমন কোন দায়বদ্ধতা নেই।শুধু বাড়িটা তালা দিলেই ঝামেলা চুকে যাবে।কিন্তু অভিরূপের মা অরুণা রহমান কিছুতেই স্বামীর ভিটা ছাড়বেন না।তার এক জেদ তিনি তার স্বামীর ঘরেই শেষ নিঃশ্বাস ছাড়বেন।
মাকে নিয়ে বেশ বিপাকে পড়লো অভি।সে ছোট বাচ্চাকে যেভাবে বোঝায় সেভাবে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো
“তোমাদের ফেলে ওখানে কিভাবে যাবো বলো তো?আর তোমরাও তো এখানে একা একা থাকতে পারবে না।তাছাড়া অন্তুকেও তো ভালো একটা ঘর দেখে বিয়ে দিতে হবে।দূর দেশে থেকে কিভাবে সব সামলাবো বলো?তাই বলছি ছোট বাচ্চার মতো জেদ করো না মা।প্রতি বছর একবার নাহয় বাবার কবর দেখে যেও।এবার চলো।
অরুণা ছেলে মেয়েদের দিকে তাকালেন।অভিরূপ ঠিকই বলেছে।ছেলে মেয়েদের একটা গতি করতে না পারলে তিনিতো মরেও শান্তি পাবেন না।তাই তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলে উঠলেন

“ঠিক আছে বাবা তুই যা ভালো মনে করিস।
এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।অভি অসময়ে কে এলো ভেবে উঠে গিয়ে দরজা খুললো।দরজার সামনে নেলি আর রূপকথাকে দেখে অবাক হলো সেই সাথে খুশিও হলো।
‘আরে রূপকথা।এসো ভেতরে এসো।
রূপকথা আর নেলি ভেতরে ঢুকে অভির মাকে সালাম দিলো।এরপর মুখোমুখি বসলো।নেলিকে দেখে অল্প হাসলেন অরুণা।
“তোমার সাথে তো ভালো করে কথাই বলতে পারিনি মা।দেখলেই তো কিভাবে কি হলো।
নেলি প্রত্যুত্তর করলো

“সমস্যা নেই আন্টি।তখন কথা বলবার মতো পরিস্থিতি ও ছিলো না।
ধীরে ধীরে আলাপের পরিধি বাড়লো।অরুণা শুধালো
“অভিরূপ কে কিভাবে চেনো?
অভিরূপ মাথা চুলকে আমতা আমতা করে বলে উঠলো
“আহ অব আসলে মা সারফরাজ আছে না?ও হচ্চে সারফরাজ এর ফিয়ন্সে।আর নেলি রূপকথার ফুপাতো বোন।ওরা একই সাথে মেডিকেল এ পড়ছে।
অরুণা মাথা দুলিয়ে সায় মেলালেন।কিন্তু অন্তুর কাছে ভাইয়ের চাহনি আর হাসি সুবিধার ঠেকলো না।সে ঠিক বুঝে গেলো নেলির সাথে তার ভাইয়ের কোনো চক্কর আছে।
নেলি ফাক ফোকর গলিয়ে অভিকে চোরা চোখে কয়েকবার দেখলো।অন্তুর চোখ এড়ালো না এসব।সে এবার শতভাগ নিশ্চিত হয়েই গেলো।কথায় কথায় রূপকথা বলে উঠলো

“আজ তবে উঠি আন্টি।আরেকদিন আসবো।এমনিতেই আপনাদের খোঁজ নিতে এসেছিলাম।ভাইয়াকে সাথে নিয়ে একদিন আসুন আমাদের বাড়িতে।ভালো লাগবে।
মেয়ে দুটোকে অরুনার খুব পছন্দ হলো।নেলিকে তার মনেও ধরলো।কিন্তু বড় লোকের মেয়ে বলে মনের সুপ্ত বাসনাকে চাপা দিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে বললেন
“রাতের খাবার খেয়ে একবারে যেও।
রূপকথা মাথা নেড়ে বললো
“না আন্টি আরেকদিন আসবো।আজ বাসায় ফিরতে হবে।এমনিতেই বিকেল হয়ে গেছে।
অভিরূপের মা অভিকে নির্দেশ দিলেন
“অভি যা ওদের পৌঁছে দিয়ে আয়।আজকাল রাস্তা ঘাটে মানুষের কোনো বিশ্বাস নেই।
অভিরূপ সম্মতি জানিয়ে বেরিয়ে এলো।বাড়ির বাইরে বের হতেই নেলির হাত আলতো করে ধরলো অভি।এরপর ধীর গলায় বললো

“খুব শীঘ্রই বিদেশে ফেরত যাবো।যাবার আগে তোমার বাবা মায়ের সাথে মাকে নিয়ে দেখা করতে চাই।যদি তোমার কোনো আপত্তি না থাকে।
নেলি অভির হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলো
“আমার কোনো আপত্তি নেই অভি।তুমি এসো।

ডাইন ইন রুমে রাতের খাবার খেতে বসেছেন সুফিয়ান চৌধুরী আর রূপকথা।রেখা নিজের ঘরে ঘুমুচ্ছে রাতের ওষধ খেয়ে।কুলসুম এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছেন।এমন সময় কলিং বেল বাজলো।সুফিয়ান নিজেই হাত ঝেড়ে উঠে গেলেন দরজা খুলতে।দরজা খুলতেই সারফরাজ কে দেখে চোখ রাঙিয়ে বলে উঠলেন
“মানে ভাত খেতে বসেও তোর জন্য শান্তি নেই নাকি?তুই যতবার বিরক্ত করিস রাস্তার ভিখারিও এতো বিরক্ত করে না।আহ আর পারিনা।কিযে মুসিবত জুটেছে কপালে!
সারফরাজ পাত্তা দিলো না কমিশনার কে।সে হেটে এসে রূপকথার পাশের চেয়ার টেনে বসে একটা প্লেট নিয়ে তাতে ভাত নিলো।এরপর কমিশনার এর পাতের লেগ পিস নিজের প্লেটে নিয়ে কামড় বসালো।
সুফিয়ান নিজের খালি প্লেটে নজর দিয়ে বড় বড় চোখ করে বলে উঠলো

“এখনই আমার ভাগেরটা কেড়ে নিচ্ছিস? মেয়ে দিলে তো ঘাড়ে উঠে বসবি।দে লেগ পিস ফেরত দে হারামজাদা।
ততক্ষনে লেগ পিস খাওয়া শেষ সারফরাজ এর।আঙ্গুল চাটতে চাটতে সারফরাজ বলে উঠলো
“মেয়ে দিলে আর কিছুই খেতে আসবো না।তখন আপনার মেয়েকে খাবো।
কমিশনার চোখ বন্ধ করে বুক চেপে ক্যত করে শব্দ করে উঠলেন।এরপর বললেন
“নাউযুবিল্লাহ।আমি রূপকথার বাপ লাগি।দুলাভাই না।
“তো আমি কখন বললাম আপনি আমার সমন্ধি?
কমিশনার কপাল চাপড়ে শুধালেন

“রাতের বেলা আমার প্রেসার হাই করতে এসেছিস নাহ?যাতে স্ট্রোক করে মরে যাই, আর সেই সুযোগে তুমি আমার মেয়ে নিয়ে ভেগে যাও।উহু ওটি হচ্ছে না বাছা ধন।মরে গেলেও মেয়ে দেবো না।
সারফরাজ রূপকথার মাখানো ভাত থেকে এক লোকমা ভাত নিয়ে খেলো।এরপর তৃপ্তিতে চোখ বুজে বলে উঠলো
“আহ মহব্বত!এতো মোহাব্বত কোথায় রাখি বলুন তো?আসলে হয়েছে কি ,আপনার মেয়ের মোহাব্বত এর টানে আমি রাতে নিজের ঘরে ঘুমাতে পারছি না।খালি ইচ্ছে করে আপনার মেয়ের বিছানায় ঘুমাতে।নিজে তো বউ জড়িয়ে ঘুমাচ্ছেন এজন্য আমার মতো সিঙ্গেল প্রেমিক পুরুষদের বেদনা বুঝতে পারছেন না।বউ ছাড়া এই বৃষ্টির রাত খুব কষ্টের কমিশনার স্যার।
ভাতের থাল সরিয়ে কমিশনার মেয়ের পানে চোখ গরম করলেন।এরপর বললেন
“নিজের রুমে গিয়ে ভাত খাও যাও।এই ঠোঁট কাঁটা ফাজিল ছেলের সামনে থাকলে পাপ হবে।দেখছো না কি সব দুস্টু দুস্টু কথা বলছে।যাও রুমে যাও।
রূপকথা উঠলো না।সারফরাজ ও ঘোর আপত্তি জানিয়ে বলে উঠলো

“মুরুব্বী মুরুব্বী উহু উহু।ওকে ধমকাবেন না।আপনার মেয়ে ছাড়া আমার খালি খালি লাগে।সারাক্ষন কোলে বসিয়ে চুমু খেতে ইচ্ছে করে।কিন্তু বিপত্তি হচ্ছে আপনি।আপনার জন্য আমার সকল ইচ্ছে মাটি চাপা দিতে হচ্ছে।কিন্তু এভাবে কতোদিন?নিজে তো প্রেম করেছেন তাই প্রেমের জ্বালা আপনাকে বোঝানোর কিছুই নেই।সত্যি বলতে ফকির মিসকিনের চাইতেও খয়রাতি লাগে নিজেকে।তাই বলছিলাম যদি কষ্ট করে মেয়েটাকে আমাকে দিয়ে দেন তাইলে একটু খাবো আর কি !
সারফরাজ এর কথা শেষ হবার আগেই কমিশনার নিজের প্লেট থেকে আলু ছুড়ে মারলেন সারফরাজ এর দিকে।সেই আলু ক্যাচ ধরে সারফরাজ গোগ্রাসে গিলে বলে উঠলো

” চুমু, চুমু খেতাম আর কি ।কথাতো শেষ করতে দিন।আগেই রিয়াক্ট করলে কেমন লাগে?
কমিশনার মেয়ের পানে তাকিয়ে বলে উঠলেন
“এই লাফাঙ্গাকে কি দেখে মনে ধরেছিলো তোমার?দেশে কি ছেলের এতোই অভাব পড়েছিলো?ওই ব্রিজের পাড়ের কানা ফকির টাকে ভালো বাসতে।চোখ বন্ধ করে বিয়ে দিতাম বিনা বাক্যে।কিন্তু এর কাছে তোমায় দিয়ে আমি শান্তিতে তো ঘুমাতেও পারবো না।কখন কি করে বসে কে জানে?
সারফরাজ চোখ টিপে বলে উঠলো
“কিছুই করবো না ।সাজিয়ে রাখবো শোকেসে।খালি রাতে বের করবো।আমি ওতো কথা বুঝি না।আমার বউকে আমার চাই।তাড়াতাড়ি দিয়ে দিন।
সুফিয়ান ব্যাঙ্গ করে বললেন

“অ্যাহ বউ নিয়ে যাবে।মামা বাড়ির আবদার।তোর কাছে আমার মেয়ে দেবো না আমি হতচ্ছাড়া।
“এতো নিষ্ঠুর হবেন না স্যার।পাপ লাগবে।
“লাগুক।
কথা বলতে বলতে সারফরাজ এর গালের কালসিটে দাগে সুফিয়ান চৌধুরীর নজর গেলো।সে বেশ খুশি গলায় শুধালো
“তোর থোবরা এমন কালো করেছে কে?
সারফরাজ ভাত খেতে খেতে উত্তর করলো
“আপনার মেয়ে ছাড়া আমার গায়ে ফুলের টোকা দেবার সাহস পর্যন্ত এই দুনিয়ায় কারোর নেই।
রূপকথার পানে নজর দিয়ে সুফিয়ান শুধালেন
“বেশ করেছো।এই না হলে বাপকা বেটি?তা নাগাল পেলে কি করে?
রূপকথা পানি খেতে খেতে বললো

চেকমেট পর্ব ৪০

“টুলের উপর উঠে।
সারফরাজ রূপকথার মুখে কথা কেড়ে নিয়ে বলে উঠলো
“মেয়েটাকে একটু পুষ্টিকর খাবার টাবার দেন নি?এমন দেড় ফুট কেনো?
সুফিয়ান সারফরাজ আর রূপকথার আলাপ চারিতা শুনে বুক চেপে বলে উঠলেন
“মেয়ে দেবো।তাও আমাকে আর হার্ট এট্যাক করাস না।তবে একটা শর্ত আছে।
“সব শর্ত মঞ্জুর।
“ভালো হয়ে ফিরে আয়।
“এটা না মঞ্জুর।

চেকমেট পর্ব ৪২