হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ২৫

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ২৫
সানা শেখ

মায়া কে নিচে ফেলে দুই হাত মায়ার দুই পাশে দিয়ে ভর করে মায়ার উপর ঝুঁকে যায়। আলভীর গরম শ্বাস মায়ার চোখে মুখে আছড়ে পড়ে। মায়া শ্বাস আটকে রইলো। আলভী ধীর স্বরে বলে,
“মায়া পরী, তুমি পুরোটাই মায়া।”
মায়া কিছু না বলে তাঁকিয়ে রইলো আলভীর চোখে চোখ রেখে।
আলভী মুখ এগিয়ে নেয় মায়ার মুখের দিকে। কাছাকাছি আসতেই মায়া নিজের মুখ সরিয়ে নেয়।

“কি হলো?”
“সরো।”
“কেন?”
“সরো।”
“অন্তত একটা চুমু।”
“একটাও না।”
মায়ার কাঠ কাঠ গলার স্বর। আলভীর চোখ মুখের ভাব পরিবর্তন হয়। হঠাৎ আবার কি হলো? আগের ভূ ত ভর করলো নাকি?
আলভী মায়ার শরীরের উপর নিজের ভর ছেড়ে দেয়। তারপর নিজে নিচে শুয়ে মায়া কে বুকের উপর তুলে নেয়।
“ছাড়ো।”
“কি হয়েছে?”
“কিছু না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মায়া কে নিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে আলভী। মায়ার ওড়না দিয়েই মায়ার ভেজা চোখ গাল মুছিয়ে দেয় আবার। মায়ার এলোমেলো চুল গুলো পুনরায় ঠিক করে পেছনে ঠেলে দেয়। ফ্লোরে দুই পা ভাঁজ করে বসে সামনা সামনি।
“রাগ কমেনি?”
দুদিকে মাথা নাড়ায় মায়া, রাগ কমেনি।”
“এখনো কমেনি?”
“না।”
“কি করলে কমবে?”
“তোমাকে এত সহজে মাফ করবো না আমি।”
“এমন বলে না মায়া পরী।”
“এমন টাই বলবো আর করবো। শাস্তি পেতে হবে।”
“কেন? আবার কি করলাম?”
“অনেক কিছু।”
“বলছি তো ভুল করে ফেলেছি। সে জন্য আমি অনুতপ্ত, হাজার বার সরি, বার বার সরি। প্লিজ মাফ করো। আর দূরে থেকো না।”

“আমার কাছে আসবে না তুমি, দূরে সরো।”
আলভীর কাছ থেকে দূরে সরে যায় মায়া। আলভীর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। এ এমন করছে কেন?
মায়ার দিকে এগিয়ে যায়। মায়া বসা থেকে উঠে সরে যায় আবার।
“বলছি না আসবে না আমার কাছে।”
আলভী অবাক হয়ে বলে,
“কি হয়েছে? ছোঁয়ার আগেই ছ্যাঁত ছ্যাঁত করছো কেন এভাবে? নিশ্চই আমার মীরজাফর বাপ টা আবার কিছু শিখিয়ে দিয়েছে।”
“বাপের তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, সব সময় শিখিয়ে দেবে। আর আমি কি এখনো ছোট নাকি? যথেষ্ট বুদ্ধি আছে আমার।”
“তুমি তো আব্বুর কথা শুনেই এত দিন এমন করেছো?”

“কে বলেছে সব কিছু আব্বুর কথা শুনে করেছি? প্রথমে যা করেছি বলেছি সব নিজের রাগের মাথায়। আব্বু আমাকে কিছু বলার আগেই তো আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তোমাকে জীবনেও আমার কাছে ঘেঁষতে দেব না। থাকবোই না তোমার সাথে। আব্বু বোঝানোর পরেই তো তোমার সাথে থাকতে রাজি হয়েছিলাম। আব্বু শুধু বলেছিল আমি যেন সহজে তোমাকে মাফ না করি, তোমার মিষ্টি মিষ্টি কথায় গোলে না যাই। অন্তত পক্ষে তেরো দিন তোমাকে আমার কাছে আসতে না দেই। আব্বু হয়তো বুঝতে পেরেছিল আমি তোমার ইমোশনাল কথা শুনলে গোলে যাব, তাই প্রমিজ করিয়েছিল। ভাগ্যিস প্রমিজ করিয়েছিল নয়তো সত্যি সত্যিই তোমার ইমোশনাল কথা শুনে আরো আগেই বোধহয় গোলে যেতাম। তোমার ইমোশনাল কথা শুনলে তোমার জাত শত্রুও গোলে জল হয়ে যাবে।”

“তাহলে তুমি এখন গোলছো না কেন?”
“গোলেছি বলেই তো ভালোবাসা স্বীকার করেছি। তোমার সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মাফ করে দিয়েছি সেটা তো বলিনি একবারও। আগামী সাত দিন মনের ভুলেও আমার কাছে ঘেষার চেষ্টা করবে না।”
“এভাবে বলছো কেন?”
“আমাকে তুমি যেই কষ্ট দিয়েছো সেই তুলনায় তুমি চুল পরিমাণ কষ্ট পাওনি। তাই তোমাকে আরো কষ্ট আর শাস্তি পেতে হবে।”
“এটা কেমন কথা? এমন বলতে নেই সোনা।”

“আগামী এক সপ্তাহ তুমি আমার ধারে কাছেও আসবে না, এটাই ফাইনাল। কি ভেবেছো তুমি, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে আমার মুখ দিয়ে ভালোবাসা স্বীকার করিয়ে ভালো থাকবে তুমি! নো নেভার।”
মায়ার মুখের দিকে অসহায় চোখে তাঁকিয়ে রইলো আলভী। কি বউ রে, ওর চেয়েও কয়েক কাঠি উপরে।
“তুমি এতক্ষণ আমার বুকে মুখ গুঁজে আমাকে শাস্তি দেওয়ার প্ল্যান সাজাচ্ছিলে?”
“হ্যাঁ।”
“আল্লাহ সহ্য করবে না এত বড় অন্যায়।”
“কে বলেছে?”
“তুমি আমার মীরজাফর বাপের বুদ্ধি শুনে আমাকে
মে রে ছিলে?”

“একদম না, তখন তো রাগের মাথায় মে রেছি, সে জন্য আবারও সরি। আমার কথা প্রথমে শুনলেই হতো, বউয়ের হাতে আর মা র খেতে হতো না।”
“কে জানতো আমার ভোলা ভালা বউটার এমন তেজ হয়ে গেছে! রাগের মাথায় যে জামাই কে ধরে মা রবে সেটা তো বুঝতে পারিনি।”
“এখন তো বুঝতে পেরেছো।”
“তুমি কি আবারও এমন কিছু করার চিন্তা ভাবনা করছো নাকি? যদি করে থাকো তাহলে এখনই এই চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। জামাই কে ধরে মা রা কিন্তু অনেক বড় গুনাহের কাজ। আল্লাহ কিন্তু পাপ দেবে তোমাকে।”
“নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”
“তোমাকে ছাড়া ঘুমাবো না।”
“তাহলে জেগে থাকো।”
“বউ।”

“বউয়ের এখন ঘুম পেয়েছে। জাও তুমিও গিয়ে ঘুমাও।”
আলভী কিছু সময় মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। জীবনে কি ভুল টাই না করেছে। এত দিন বউ কে কাছে পেল না, এখন আবার পেয়েও পাচ্ছে না। কি কপাল!
“শুধু আজকের রাত টা আমার সাথে থাকো প্লীজ।”
“নো নেভার।”
“আজকের রাত টা যদি আমার সাথে থাকো তাহলে আগামী এক সপ্তাহ আর জ্বা’লাবো না। আর যদি না থাকো তাহলে রোজ জ্বা’লাবো। এখন তুমি ভেবে দেখো কি করবে।”
মায়া কিছু সময় ভাবে। তারপর বলে,
“আজকের রাত তোমার সাথে থাকলে সত্যি সত্যিই আগামী এক সপ্তাহ জ্বা’লাবে না তো?”

“একদম না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে চলো।”
বলেই মায়ার হাত ধরে ডোরের দিকে পা বাড়ায়। মায়া শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
“এই রুমেই থাকবো।”
“ওহ শশুর বাড়িতে।”
কপাল ভ্রু কুঁচকে যায় মায়ার।
“এভাবে তাকাচ্ছো কেন?”
“ড্রেস চেঞ্জ করে আসো।”
“পাগলা কু/ত্তা কামড়েছে আমায়? ড্রেস চেঞ্জ করতে যাই আর তুমি ডোর লক করে শুয়ে পড়ো তাইনা? কোথাও যাচ্ছি না আমি।”

“এগুলো চেঞ্জ করবে না? এগুলো পড়ে কিভাবে ঘুমাবে?”
কিছু না বলে হাতের ঘড়ি, গাঁয়ের শার্ট খুলে ফেলে আলভী। তাঁকিয়ে তাঁকিয়ে চুপ চাপ দেখে যায় মায়া। বেল্ট, মোজা খুলে রেখে ওয়াশরুমে প্রবেশ করে। ফ্রেস হয়ে এসেই বেডে শুয়ে পড়ে।
“এভাবে ঘুমাবো।”
মায়া কিছু না বলে নিজেও ফ্রেস হয়ে আসে। বড় লাইট অফ করে ডিম লাইট অন করে। বেডে উঠে মাঝখানে কোলবালিশ রেখে বলে,
“মনের ভুলেও বালিশের এপাশে আসবে না।”
হা হয়ে যায় আলভী। অবাক কন্ঠে বলে,
“মানে কি? মাঝখানে এভাবে ভারত পাকিস্তানের বর্ডার দিচ্ছো কেন?”
“চীন আর ভারতের বর্ডার এটা। এই বর্ডার কোনো ভাবেই ক্রস করা যাবে না। ক্রস করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ।”
“মানি না মানবো না।”

“তাহলে রুমের বাইরে চলে যাও।”
“এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা?”
“বিশ্বাসঘাতকতা কখন করলাম? আজিব তো।”
“একসাথে থাকতে চেয়ে এখন মাঝখানে বর্ডার তুলে দিচ্ছো এটা বিশ্বাসঘাতকতা না?”
“আমি একবারও বলেছি আমি তোমার সাথে চিপকে ঘুমাবো?”
“তাই বলে এমন করবে?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে আর এই রুমে কি করছি, নিজের রুমেই তো ঘুমোতে পারতাম।”
“তো চলে যাও নিজের রুমে।”
“অনন্ত জড়িয়ে ধরে ঘুমোতে দাও।”
“একদম না। চুপ চাপ ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমোতে দাও। আর এই বর্ডার ক্রস করলে সোজা রুমের বাইরে বের করে দেব।”

শুয়ে পড়ে মায়া। আলভী বসে মায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। কোনো দেশের সরকারও বোধহয় এত কড়া নির্দেশ জারি করে রাখেনি নিজেদের দেশের বর্ডারে। বর্ডার ক্রস করলে সোজা রুমের বাইরে, কি হুমকি রে বাবা! ওর বউয়ের কাছে তো ও কিছুই না।
আলভী নিজেও শুয়ে পড়ে চিৎ হয়ে। কিছু সময় চুপ চাপ শুয়ে থাকে। মায়ার সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। এই টুকু সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেল?
ঘাড় ঘুরিয়ে মায়ার দিকে তাকায়। আবার সিলিং এর দিকে তাকায়, তারপর গলা ছেড়ে গান গায়,
“পাখি আমার পাষাণ রে,
বোঝে না মনের ব্যাথা রে,
মাঝখানে বর্ডার দিয়া ঘুমাইছে…….।”
গান বন্ধ করে আবার তাকায় মায়ার দিকে। মায়া চুপ চাপ শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা বুঝতে পারছে না আলভী।

আবার সিলিং এর দিকে তাকিয়ে গান গাইতে শুরু করে,
“পাখি আমার পাষাণ রে,
বোঝে না মনের ব্যাথা রে,
মাঝখানে বর্ডার দিয়া ঘুমাইছে রে, পাষাণ পাখি রে,
মাঝখানে বর্ডার দিয়া ঘুমাইছে…..”
শোয়া থেকে উঠে বসে মায়া। রাগী স্বরে বলে,
“মাঝরাতে এভাবে চেচাচ্ছো কেন? বের হও আমার রুম থেকে। ঘুমোতে দিয়েছি তো ভালো লাগছে না। বের হও তাড়াতাড়ি।”

“মায়া পরী, একটু জড়িয়ে ধরি।”
“শুরু হয়ে গেছে ইমোশনাল কথা বলা।”
“ইমোশনাল কথা কখন বললাম?”
“তোমার গলার স্বর টাই তো পুরো ইমোশনাল হয়ে গেছে এখন। চুপ করে থাকো কোনো কথা বলবে না। বেশি কথা বললে বের করে দেব।”
“এভাবে ব্ল্যাকমেইল করো কেনো বার বার?”
“ব্ল্যাকমেইল আমি করছি?”
“কথায় কথায় রুম থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছো।”
“আমাকে ঘুমোতে দেবে কি না?”

“একটু জড়িয়ে ধরতে দাও, তাহলে আর একটা কথাও বলবো না।”
মাঝখান থেকে কোলবালিশ টা সরিয়ে পাশে রেখে দেয় মায়া। আলভীর হাত টেনে লম্বা করে হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। খুশি হয়ে দুই পা দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে মায়ার দুই পা। হাত দিয়ে শক্ত করে বুকে চেপে ধরে বলে,
“আহা, শান্তি লাগছে এখন।”

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ২৪

মায়া চুপ হয়ে শুয়ে রইলো আলভীর বাহু বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে। দুজনেই হার্ট বিট বেড়ে গেছে। বুকের ভেতর কম্পন সৃষ্টি হয়েছে। দুজনের হৃদস্পন্দনের শব্দ দুজনেই শুনতে পাচ্ছে স্পষ্ট। অদ্ভুত এক অনুভূতি খেলে যাচ্ছে সারা অঙ্গে। আলভী নিজের বন্ধন আরো একটু শক্ত করে। পারলে বোধহয় বুকের ভেতর পুরে নিত এখনই।

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ২৬