হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩৪

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩৪
সানা শেখ

এয়ারপোর্ট থেকে মায়ার হাত ধরেই বাইরে বেরিয়ে আসে আলভী। মাঝখানে পেরিয়ে গেছে কয়েক দিন। সব শেষে আজ মায়া কে নিয়ে জার্মানিতে ফিরে এসেছে আলভী।
পার্কিং এ এসে নিজের কার টা দেখতে পায়। এদিক সেদিক নজর বুলায়, শুভ কোথায়?
কারের কাছে এগিয়ে আসে মায়ার হাত ধরে। কিছু সময় পেরিয়ে যায় কিন্তু শুভর দেখা নেই। কার রেখে গায়েব হয়ে গেছে নাকি? বির বির করে কয়েকটা গালি দেয় শুভ কে। এই ছেলে টা কাজের সময় উধাও হয়ে যায় শুধু। কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবে এভাবে?
মায়া আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,

“পা ব্যাথা করছে আমার।”
“মায়া পরী আর একটু কষ্ট করো শ*য়*তা*ন টা এখনই চলে আসবে।”
কারের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায় মায়া।
আলভী নিজের ফোন বের করে পকেট থেকে। ফ্রি ওয়াই ফাই কানেক্ট করে। তারপর হোয়াটস অ্যাপ থেকে শুভর ফোনে কল করবে ঠিক তখনই শুভ দৌঁড়ে আসে ওদের দুজনের সামনে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম স্যার, ভালো আছেন?”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ম্যাম আপনি কেমন আছেন?”
“জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”
আলভী রাগী স্বরে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আজকে বাড়ি ফিরে নেই তারপর তোকে দেখাব মজা। কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছিলি শ য় তা ন?”
“তোদের দেরি হচ্ছে দেখে কফি খেতে গিয়েছিলাম।”
“সারা দিন শুধু খাই খাই।”
“তুই বোধহয় না খেয়েই থাকিস।”
“বাড়িতে নিয়ে যাবি নাকি রাস্তায়ই থাকতে হবে?”
কারের ডোর খুলে দেয় শুভ। মায়া কে আগে বসিয়ে তারপর আলভী বসে। শুভ স্যুটকেস টা ডিকিতে তুলে রেখে ড্রাইভিং সিটে বসে।
একটা ঘণ্টা পর গন্তব্যে এসে পৌঁছায় আলভী দের কার।
কার থেকে নেমে আসে সবাই। আলভী শুভর পেছনে দাঁড়িয়ে শুভর পাছায় লাথি দিয়ে বলে,

“তোর জন্য আমার বউ কে কষ্ট করতে হয়েছে।”
শুভ আলভীর পাছায় আরেক টা লাথি দিয়ে বলে,
“তোদের জন্য আমি রোদের মধ্যে দুই ঘণ্টা বসে ছিলাম। তোরা আসছিলি না দেখে কফি খেতে গিয়েছিলাম।”
আলভী আরেক লাথি দিয়ে বলে,
“এক নাম্বারের মিথ্যুক, এসির ঠান্ডা বাতাসে বসে বলছিস রোদের মধ্যে ছিলি!”
শুভ স্যুটকেস বের করে বাড়ির ভেতরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,

“যা তোর সাথে ব্রেকআপ।”
মায়া শুধু দুজনের কাহিনী দেখছে তবে বুঝতে পারছে না কিছু। প্রথমে আপনি আপনি বলে কথা বললো দুজন, একটু পর থেকেই আবার তুই তুকারি করে কথা বলছে। এখন আবার একে অপরকে লাথি দিচ্ছে তাও আবার পাছায়।
আলভী মায়ার হাত ধরে বলে,
“ভেতরে চলো।”
বাড়ির দিকে তাকিয়ে দুজন ছেলে কে দেখতে পায় মায়া যারা ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছে ওদের দুজনের থেকে একটু দূরে, হয়তো ওকেই ওয়েলকাম করতে দাঁড়িয়ে আছে। এগিয়ে আসতেই দুজনে মায়া কে ওয়েলকাম জানিয়ে ফুলের তোড়া মায়ার হাতে তুলে দেয়। এরা দুজন বোধহয় এই বাড়ি আর আলভীর কেয়ারটেকার।
ফুল হাতে আলভীর সাথে ভেতরে প্রবেশ করে মায়া।

ওদের বাড়ির চেয়ে অনেক বড় এই বাড়িটা। আলভী একা থাকার জন্য এত বড় বাড়ি কিনেছে!
ড্রইং রুম টা অনেক বড় আর সুন্দর। সব কিছুই লাইট কালার যার ফলে সব কিছু আরো বেশি সুন্দর লাগছে।
আলভী সাথে বেড রুমে এসে দাঁড়ায়। বেড রুম টা পরিপাটি, গোছানো আর মন শান্ত করে দেওয়ার মতো সুন্দর।
“বোরকা হিজাব খুলে শাওয়ার নিয়ে ফ্রেস হয়ে নাও ভালো লাগবে তাহলে।”
“হুম।”
মায়া হাতের ফুল গুলো রেখে বোরকা হিজাব খুলে রাখে। স্যুটকেস খুলে নিজের ড্রেস বের করে। আলভী আলমারি থেকে টাওয়েল বের করে দেয়।

মায়া ওয়াশরুমে প্রবেশ করে। আলভী গায়ের শার্ট খুলে বাস্কেটে রাখে, হাতের ঘড়ি টাও খুলে জায়গা মতো রাখে। তারপর ডিভানের উপর বসে। পকেট থেকে ফোন বের করে বাংলাদেশে কল করে বাবার ফোনে। রিসিভ হতেই কথা শুরু করে জানায় ভালো ভাবেই পৌঁছেছে দুজন, কোনো সমস্যা হয়নি। পরে আবার কল করবে বলে লাইন বিচ্ছিন্ন করে ফোন চার্জে লাগায়।
ফ্রেস হয়ে খাবার খেয়ে দুজনেই শুয়ে পড়ে। লম্বা জার্নিতে দুজনেই ভীষণ ক্লান্ত হয়ে আছে। এখন লম্বা ঘুম আর লম্বা বিশ্রামের দরকার।

সারা বিকেল আর রাত ঘুমিয়েছে দুজন।
পরের দিন ভোর পাঁচটায় ঘুম ভাঙ্গে দুজনের।
আলভীর বুকের উষ্ণ ওমে আদুরে বিড়াল ছানার মতো নিজেকে গুটিয়ে নেয় মায়া। আলভী নিজেও আগলে নেয় নিজের মায়া পরী কে।
মায়ার এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় ডাকে আলভী।
“মায়া পরী।”
“হুম।”
“সকাল হয়ে গেছে।”
“হোক।”

“আজ অফিসে যেতে হবে আমাকে।”
“আজকে না গেলে হয় না?”
“না গেলে যদি হতো তাহলে তো আসতামই না।”
মায়া আলভীর বুক থেকে মুখ তুলে আলভীর মুখের দিকে তাকায়। ডিম লাইটের আলোয় স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে আলভীর চেহারা।
“আর ত্রিশ মিনিট।”
“আচ্ছা।”
পুনরায় আলভীর বুকে মুখ গুঁজে দেয় মায়া। কাচুমাচু হয়ে আলভীর সাথে মিশে আছে, পারলে বোধহয় আলভীর বুকের ভেতরেই ডুকে যেত।

আলভী যদি মায়া কে রেখে আসতো কিভাবে থাকতো মায়া? আলভী কে ছেড়ে কেঁদে কেঁদেই তো বোধহয়
ম রে যেত। আলভী মায়ার প্রতি যতটা আসক্ত তার চেয়ে অনেক বেশি আসক্ত হয়ে গেছে মায়া আলভীর প্রতি। আলভী কে ছাড়া একটা সেকেন্ড কল্পনা করতে পারে না এখন।
আলভী চিত হয়ে শুয়ে মায়া কে নিজের বুকের উপর তুলে নেয়। মায়ার লম্বা লম্বা খোলা চুল গুলো পেছনের দিকে ঠেলে দিতে দিতে আলভী বলে,
“তুমি আমার সাথে অফিসে যাবে?”
মায়া মুখ তুলে তাকায়। তারপর উপর নিচ মাথা নাড়ায়, যাবে।
আলভী মায়া কে বুকের উপর রেখেই শোয়া থেকে উঠে বসে। মায়া আলভীর কোলে বসে দুই পা দিয়ে আলভীর কোমড় পেচিয়ে ধরে। দুই হাতে পেঁচিয়ে ধরে গলা।
আলভী মায়া কে কোলে নিয়েই বেড থেকে নেমে দাড়ায়। ওর গলা জড়িয়ে ধরে আর কোমর পেচিয়ে ধরে ঝুলে থাকে মায়া।

“ফ্রেস হয়ে নাও, চলো জগিং করে আসি।”
মায়া দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
“আমি যাব না তুমি যাও। আমি এমনিতেই চিকন আছি আর চিকন হতে চাই না।”
“তাহলে শুয়ে থাকো, আমি জগিং করে আসি।”
“আচ্ছা।”
মায়া কে আবার শুইয়ে দেয় আলভী। মায়ার ললাটে অধর ছুঁইয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করে আলভী। ফ্রেস হয়ে ড্রইং রুমে আসে। কিচেনে প্রবেশ করে একটা হাফ লিটারের পানির বোতল বের করে।
সু কেবিনেট থেকে সুজ পরে পানির বোতল টা হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় জগিং করতে।

নয়টার সময় তৈরি হয়ে নাস্তা সেরে মায়া কে নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে আলভী। শুভ কার নিয়ে অপেক্ষা করছে ওদের দুজনের জন্য।
কারের পেছনে উঠে বসে দুজন। কার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় অফিসের উদ্যেশ্যে।
শুভ আলভীর পিএ প্লাস ভার্সিটি ফ্রেন্ড। দুজনেই বাংলাদেশের হওয়ায় বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তারপর আস্তে আস্তে দুজনের সম্পর্ক আরো ভালো হয়। আলভী বিজনেস শুরু করার আগেই শুভ কে বলেছিল শুভ ওর সাথে কাজ করবে কি না! যদি করে তাহলে আলভী শুভ কে অন্য সব অফিসের তুলনায় ভালো স্যালারি দেবে। শুভও ভেবে চিন্তে রাজি হয়েছিল। অফিসে দুজন বস আর পিএ, অফিসে শুভ আলভী কে স্যার আর আপনি আপনি বলে কথা বলে। অফিসের বাইরে দুজনেই তুই তুই করে কথা তো বলেই সাথে শত্রুর মতন মারামারিও করে।
শুভ বিয়ে করেছে, দুজন ছেলে মেয়ে আছে। আলভীর বাড়ির পাশেই শুভর নিজের বাড়ি, বউ বাচ্চার সাথে সেখানেই থাকে।

আলভী বিয়েতে শুভর পুরো ফ্যামিলি কে ইনভাইট করেছিল তবে কাজের চাপে শুভর বিয়ে খেতে যাওয়া হয়নি।
অফিসের সামনে এসে দাঁড়ায় কার। একজন গার্ড কারের ডোর খুলে দেয়। মায়া কে নিয়ে বের হয় আলভী। সম্মানসূচক হাত তুলে স্যালুট করে আলভী কে। আলভী আর মায়া ভেতরের দিকে এগিয়ে যায়। শুভ কার পার্ক করে রেখে ওদের পেছন পেছন আসে।

আলভীর সাথে মেয়ে তার উপর আবার মায়ার পরনে বোরকা হিজাব,সবাই তাঁকিয়ে আছে ওদের দুজনের দিকে। আলভী সকলের দিকে নজর দিতেই সবাই নিজেদের নজর সরিয়ে কাজে মনোযোগ দেয়।
আলভী মায়া কে নিয়ে নিজের কেবিনে আসে। চেয়ার টেনে মায়া কে নিজের পাশে বসায়।
শুভ কয়েক টা ফাইলস এনে আলভী কে দেখাচ্ছিল এর মধ্যে কেবিনের ডোর নক হয়। তিন জনেই ডোরের দিকে তাকায়, আলভী অনুমতি দিতেই ভেতরে প্রবেশ করে একটি মেয়ে।
মায়া মেয়েটির দিকে তাকায়, পরনে ওয়েস্টার্ন ড্রেস, তবে মার্জিত। কাঁধের নিচ অব্দি থাকা চুল গুলো খোলা রয়েছে। দেখতে বলিউড নায়িকাদের মতো, লম্বাও সেরকমই। গা থেকে রূপ সৌন্দর্য যেন ঠিকরে পড়ছে।
এই মেয়েটার কথাই বোধহয় বলেছিল আলভী।
এই মেয়েটার কাছে মায়ার সৌন্দর্য কিছুই না।

“হাই আলভী।”
“হ্যালো।”
“কেমন আছো?”
“ভালো, আপনি কেমন আছেন?”
“ভালো। ও তোমার ওয়াইফ?”
“হ্যাঁ। মায়া উনি এই কোম্পানির একজন শেয়ার হোল্ডার মিস মেরিনা।”

মায়া মিষ্টি হেসে মেরিনা কে হাই বলে। মেরিনা মুখে জোর পূর্বক হাসি ফুটিয়ে মায়ার সাথে দুটো বাক্য বিনিময় করে।
মেরিনা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মায়ার মুখের দিকে। এই মায়ার মধ্যে কি আছে যা ওর মধ্যে নেই! রূপ সৌন্দর্যই কি সব কিছু নাকি ভাগ্য টাই বড় কথা! বেস্ট কিছু পেতে আসলেও ভাগ্য লাগে যা মেরিনার নেই, ছিল না কখনো।
একটু পর পর মায়ার চোখের পলক ফেলা টা মেরিনার ভালো লাগে। বুকে ব্যাথা করলেও এই দৃশ্য দেখে ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। মায়া মেয়ে টা অনেক বেশিই কিউট আর মায়াময়। গভীর চোখ দুটোতে শুধুই মায়া রয়েছে। তাকালেই কেমন মায়া ধরে যাচ্ছে। এই মায়াময় আঁখি যুগল বোধহয় আলভী কে মায়ায় বেঁধেছিল।

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩৩

মায়া কে দেখে এখন আবার হিংসে হচ্ছে মেরিনার, ওর চোখ দুটো কেনো মায়ার চোখের মতো মায়াময় নয়? ওর চোখ দুটো যদি মায়ার চোখের মতো মায়াময় হতো তাহলে তো আলভী ওর হতো নাকি তাও হতো না?

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩৫