ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৩৫
প্রিয়স্মিতা তেহজীব রাই
টাশহহহহহহহহ!
পুরুষালী, বলবান হাতের দাবাং মার্কা চড়ে দুই হাত দূরে ছিটকে পড়ল প্রহেলিকা।
সে গাল চেপে ধরে রক্তচোখ নিয়ে তাকালো শুদ্ধের দিকে।
শুদ্ধর চোখ-মুখের অবস্থা বিভৎস, সে খিপ্ত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে প্রহেলিকার দিকে।
তার চোখের মনি দুটো ক্রোধের আগুনে দাউদাউ করে জ্বলছে।
প্রহেলিকা উঠে তেড়ে গেল শুদ্ধের দিকে, দুই একটা বিশ্রী গালি দিয়ে আঙুল উঁচিয়ে বললো,
____”তুই আমাকে মারলি? তোর সাহস হলো কিভাবে? এই প্রহেলিকা সিকদারের গায়ে হাত তোলার!”
প্রহেলিকা অতিরিক্ত রাগের চোটে হুশ-বুদ্ধি খুইয়ে ফেলল। রক্ত লাল চোখে রাগে হিশ হিশ করতে করতে বলল,
____”তুই দেখ, গিয়ে যা! ওই শালিকে এখন পুরো একপাজা লোক মিলে ভোগ করছে, আর তুই কিচ্ছু করতে পারবি না! এত দিনে আমার হাড় জোড়ালো।”
শুদ্ধর হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো, রাগে কপালের রগ টনটন করছে।
সে নিজের বাড়ন্ত রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে জোরে চেপে ধরলো প্রহেলিকার চুলের মুঠি।
হাতের রিভলভারটা প্রহেলিকার মুখের ভিতর চেপে ধরে একটা বিশ্রী গালি দিয়ে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
_____নরকের কিট! এই কাজটা করার আগে তোর একবারও কলিজা কাঁপলো না?
_____তোর একবারও মনে পড়লো না ও তোর বোন?
_____তুই আদৌ মানুষের পর্যায়ে আছিস তো? এত হিংসে তোর মনে?
_____তুই নিজের স্বার্থের জন্য দেশকে এত বড় বিপদে ফেলে দিলি?
_____এত নিরীহ, অসহায় মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই তোর কাছে?
_____মন তো চাচ্ছে তোকে এখনই ওপরে পাঠিয়ে দি…
কিন্তু শালার, সেটা ও পারছি না!”
প্রহেলিকা আরো হিংস্র হয়ে উঠলো।
পাশ থেকে ফুলদানি তুলে সোজোরে শুদ্ধের মাথায় আঘাত করলো।
দু’ কদম পিছিয়ে গেল শুদ্ধ।
প্রহেলিকা ঘর কাঁপিয়ে বিশ্রীভাবে হেসে উঠলো, মুখ বাঁকিয়ে বললো,
_____”তুই কি ভাবিস, তুই একাই পথের কাঁটা উপড়াতে জানিস?
____প্রয়োজনে আমিও পথের কাঁটা উপড়ে ফেলতে জানি।
____আর ও আমার কেমন বোন?
____তুই আমাকে স্বার্থপর বলিস, কোন মুখে শালা?
____তোরা কম স্বার্থপর?
_____তুই কম স্বার্থপর?
____তুই নিজের স্বার্থে প্রণয়ের থেকে ওর খুশি কেড়ে নিস নি!
____আর ওই শালি কি কম স্বার্থপর?
_____বড় বোনের স্বামী জানা সত্ত্বেও প্রণয়ের সাথে এতো ঘেঁষাঘেঁষি করে! কেমনে?
_____ও তো আমার থেকেও বেশি খারাপ!
_____আমি না হয় কেড়ে নিয়েছিলাম, কিন্তু এখন তো ও আমার সংসারটা খেয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে!
_____আমার জীবনটা জাহান্নাম বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
_____অনেক সুযোগ দিয়েছি ওকে, কিন্তু ও আমার প্রণয় থেকে দূরে থাকতেই পারে না।
_____তাই সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেবার ব্যবস্থা করলাম।
______এতে উপরি কামাইও হলো, পথের কাঁটা চিরতরে মুছে গেল।”
শুদ্ধ ওর কথা মনোযোগ সহকারে শুনে চেয়ার টেনে বসে পড়লো।
ঠোঁটে খেলে গেল চমৎকার বাঁকা হাসি।
ঠোঁট এলিয়ে হেসে বললো,
______”আজ আবার প্রমাণ করলি, তোর মাথা ভর্তি গু আর মন ভর্তি বিষ ছাড়া কিচ্ছু নেই!”
প্রহেলিকার ভ্রু কুঁচকে গেল।
ভ্রু কুঁচকে বললো,
_____”তোর চিন্তা হচ্ছে না ওর জন্য?”
শুদ্ধো হাসি ধরে রেখেই বললো,
_____”আমাকে দেখে কি তোর তাই মনে হচ্ছে?”
প্রহেলিকার ভ্রু আরো খানিকটা কুঁচকে গেল।
শুদ্ধো ঠোঁট দিয়ে ‘চো চো’ শব্দ করে বললো,
______”আফসোস, তুই বড়ই বোকা! বোকার স্বর্গে বাস করিস।
______তোর মনে হয়, প্রণয় শিকদার থাকতে আমার সুইটহার্টের কিছু হতে দেবে?
_____I’m damn sure, my sweetheart is okay.”
প্রহেলিকা এবার চরম রেগে গেল।
রাগে গজরে উঠে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করতে শুরু করলো।
শুদ্ধ ঠোঁট বাকিয়ে বললো,
______”তুই এখন আমার সুইটহার্টের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের চিন্তা কর।
______তুই যে মন্ত্রিসাহেবের হাসপাতালে থাকার খবরটা লিক করে দিয়েছিস,
সেটা যদি জানাজানি হয়ে যায়, তাহলে ভাব,
তোর পুরো জীবন গারদের পেছনে কাটবে, না হয় ফাঁসির দড়িতে ঝুলবি—কনফার্ম!”
শান্ত হয়ে গেল প্রহেলিকা।
সে ও শুদ্ধর সামনে চেয়ার টেনে বসল, শুদ্ধর দিকে কয়েক সেকেন্ড শান্ত চোখে তাকিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
______”প্রিয়তাকে দিয়ে কিভাবে খুন করিয়েছিলাম মনে আছে?
_______ডি.কে. বসের ছেলে—যাকে প্রিয়তা নিজের হাতে খুন করেছিল—
______সে খুনটা আবার প্রণয় আর প্রিয়তা দুজনে মিলে ধামাচাপা দিয়েছিল।
______যেটা ছিল ওদের দুজনের সবথেকে বড় দুর্বলতা।
______যেটার পুরোটা আমি প্ল্যান করেছিলাম, আর ফায়দা নিয়েছিলি তুই।”
শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে বলল,
______”আমার থেকে বেশি ফায়দা তো তুই নিয়েছিস, সুযোগ বুঝে প্রণয়ের গলায় ঝুলে পড়েছিস।
তা এখন এসব বলছিস কেন?”
প্রহেলিকা শুদ্ধর হাতের গানটা ঘোরাতে ঘুরাতে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
______”যেভাবে প্রিয়তাকে তখন ফাঁসিয়েছিলাম, এক ডিলে তিন-চারটা পাখি মেরেছিলাম—
ওভাবেই কাউকে ফাঁসিয়ে দেব।
______তুই তো জানিস, এই খেলায় প্রহেলিকা সিকদারই সেরা।
______কিন্তু ওই মেয়েটার ভাগ্যে কি জোর, মাইরি…
মরতে মরতে ও মরে না!
_____আমার জীবনে আগুন লাগানোর জন্য ঠিক বেঁচে যায়!”
ওদের কথার মাঝখানে দু’জন ঘরে প্রবেশ করলো।
ওরা দু’জনের পাশে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,
_____”কি ব্যাপার চানা’রা, এত ঝগড়া কিসের?”
শুদ্ধ মুখ দিয়ে ‘চ’ সূচক শব্দ উচ্চারণ করলো।
হাই তুলে উঠে যেতে যেতে বললো,
_____”Good night, guys. I need to sleep.”
বলে ফোন টিপতে টিপতে বেরিয়ে গেল।
তিনজোড়া চোখ অগ্নিদৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সেদিকে।
সকাল ৬টা ১৫।
প্রিয়তা এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রাতে বৃষ্টি হওয়ায় সামান্য শীত শীত পড়েছে। সে তাই আরাম করে উষ্ণ বুকে লেপ্টে ঘুমিয়ে আছে।
কিন্তু অভ্যাসবশত প্রণয়ের ঘুম ভেঙে গেল।
সে উঠে বসতে নিলেই ছোট্ট একটা দেহের সাথে বাধা প্রাপ্ত হলো। বুকে অনুভব করলো ছোট্ট একটা সত্ত।
নাকে এসে ঠেকলো চেনা পরিচিত সুগন্ধি ঘ্রাণ।
প্রণয় চোখ না খুলেই বুক ভরে দুই-একটা নিঃশ্বাস নিলো।
তারপর ধীরে ধীরে চোখ মেলে বুকের দিকে চাইল।
সকাল সকাল নিজের প্রাণটাকে এত কাছে দেখে প্রণয়ের বুকটা প্রশান্তিতে ভরে গেল।
সে সময় নিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ালো।
পিঠের নিচ থেকে বালিশটা নিয়ে সন্তর্পণে প্রিয়তার মাথার নিচে রাখলো।
উঠে বসে প্রিয়তার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিজের দিকে তাকাতেই তার কাশি উঠে গেল।
সে দ্রুত হাতে লুঙ্গি ঠিক করে উঠে পড়লো বিছানা থেকে।
ভাগ্যিস আগে সে জেগেছিল,
নাহলে আজ তার মান-সম্মান ইন্নালিল্লাহ হয়ে যেতো।
সে আড়া মোড়া ভেঙে দরজা খুলে বাইরে বের হলো।
সারা রাত তীব্র বর্ষণের পর ঝরঝরে সুন্দর সোনালী সকাল।
চারদিকে পাখিদের সুমিষ্ট কুহুতান।
ভদ্রমহিলা উঠোন ঝাড় দিচ্ছেন।
প্রণয় চারপাশে তাকিয়ে মুগ্ধ হলো।
যতদূর চোখ যায় বিস্তৃত চা-বাগান।
ভদ্রমহিলা প্রণয়কে দেখে এগিয়ে এলেন।
মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলেন,
_____”ঘুম কেমন হয়েছে, বাবা?”
প্রণয়ও আন্তরিক হেসে জবাব দিলো,
______”অনেক ভালো, চাচি।
_____আপনি আমার যে উপকার করেছেন, তার প্রতিদান হয়তো আমি কোনোদিনও দিতে পারবো না।”
ভদ্রমহিলা হাসলেন স্নেহের সুরে।
বললেন,
______”এভাবে বলছো কেন? তুমি তো আমার ছেলের মতোই। তোমার বউ কোথায়?”
_____”ঘুমাচ্ছে।”
ভদ্রমহিলা হেসে বললেন,
______”থাক, ঘুমাক। পোয়াতি মেয়ে মানুষ, এই সময় চোখে অনেক ঘুম থাকে। আরও একটু ঘুমাক।”
‘পোয়াতি’ কথাটা শুনে এবার প্রণয়ের মধ্যে কী রকম একটা ফিলিংস কাজ করলো। শব্দটা বারবার শুনতে শুনতে তার নিজের উপর কেমন সন্দেহ হতে লাগলো।
সে ঢোক গিলে মনে মনে বললো,
______’সামান্য দুটো চুমু খেয়েই বাবা হচ্ছি! বাহ, কী সৌভাগ্য আমার!’
প্রণয় বললো,
_____”চাচি, আমি আশেপাশটা একটু দেখে আসি।
______আমার বউ উঠে গেলে বলবেন, আমি আশেপাশেই আছি।”
হেসে সম্মতি জানালেন ভদ্রমহিলা।
প্রণয় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।
প্রায় আরো বিশ মিনিট পর জেগে উঠলো প্রিয়তা।
চোখ কচলে উঠে বসে আশেপাশে প্রণয়কে খুঁজলো, কিন্তু কোথাও নেই।
আরও কিছুক্ষণ ঘুমাতে চেয়েছিল প্রিয়তা, কিন্তু প্রণয় ভাইকে ফিল করতে না পারায় কাঁচা ঘুমটা ভেঙে গেছে।
সে হাই তুলতে তুলতে বাইরে গেল।
ভীষণ সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে — ঘুমো-ঘুমো চোখ দুটো অসম্ভব মায়াবী, হাঁটুর নিচ অব্দি ঢেউ খেলানো চুলগুলো শুকিয়ে গেছে, পরনের শাড়িটা হালকা হালকা কুঁচকে আছে।
প্রিয়তা বাইরে বেরিয়ে দেখলো বাড়ির এক কোণায় ভদ্রমহিলা রান্না বসিয়েছেন।
প্রিয়তা ধীর পায়ে এগিয়ে গেল সেদিকে।
নমনীয় সুরে সালাম দিয়ে ডাকলো,
_____”চাচি!”
ভদ্রমহিলা ফিরে তাকালেন প্রিয়তার দিকে।
প্রিয়তার মায়াভরা মুখখানায় চোখ স্থির হয়ে গেল।
প্রিয়তা একটু ইতস্তত করে বললো,
_____”চাচি, আমার স্বামীকে দেখেছেন?”
ভদ্রমহিলা মুচকি হেসে বললেন,
_____”ওদিকে গেছে।”
প্রিয়তা ধন্যবাদ জানিয়ে দৌড় দিতে উদ্যত হলে ভদ্রমহিলা থামিয়ে বললেন,
_____”ধীরে মেয়ে, ধীরে ধীরে যাও।
_____তুমি যে পোয়াতি, সেটা কি ভুলে যাও?”
প্রিয়তার মনে পড়লো — সে তো এখন এক মাসের পোয়াতি!
সে ওনার কথা মতো পেট ধরে ধরে ধীরে ধীরে বাড়ির বাইরে চলে গেল।
ভদ্রমহিলা আবার বললেন,
_____”মাশাআল্লাহ, আল্লাহ তোমাদের আজীবন একসাথে থাকার তৌফিক দান করুন।”
প্রিয়তা আশেপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে এগিয়ে গেল পেছনের ফুলের বাগানের দিকে।
কিছুটা দূর এগিয়ে যেতে নজরে পড়লো সুঠাম, বলিষ্ঠ দেহের পুরুষালী পৃষ্ঠদেশ।
সে চপল পায়ে এগিয়ে গেল প্রণয়ের কাছে। পেছনে দাঁড়িয়ে অভিমানী কণ্ঠে বললো,
“আমাকে একা ফেলে চলে এসেছেন, প্রণয় ভাই!”
প্রণয়ের ঠোঁটে হাসি ফুটলো।
সে সামনে তাকিয়েই ডাকলো,
____”আয়!”
পেটে হাত দিয়ে ধীরে ধীরে প্রণয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো প্রিয়তা।
প্রণয় চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই বুকে চাপ অনুভব করলো —
ফুলফুল আদুরে চোখ-মুখ, হাঁটু অবধি চুলগুলো হালকা এলোমেলো,
লাল শাড়িটাও একটু একটু কুঁচকে আছে। গাল দুটো ধরে একটু চিপে দেওয়ার তীব্র বাসনা জাগলো মনে।
প্রিয়তা আবার গাল ফুলিয়ে বললো,
______”জানেন, আপনাকে না দেখে কতো ভয় পেয়েছিলাম!”
প্রণয় কপালে ভাঁজ ফেলে বললো,
______”কেন, কী ভেবেছিলি? তোকে ফেলে চলে গেছি?”
প্রিয়তা মৃদু হাসলো, প্রণয়ের পেশীবহুল হাত জড়িয়ে ধরে বিশ্বাসী কণ্ঠে বললো,
______”আমি জানি, বিপদের সময় সবাই আমার হাত ছেড়ে দিলেও আপনি ঠিকই শক্ত করে ধরে রাখবেন।”
প্রিয়তার এমন বিশ্বাস দেখে প্রণয়ের বুকটা কেঁদে উঠলো।
হাহাকার ছড়িয়ে পড়লো বুকে।
______‘এতো বিশ্বাস করতে নেই, পাখি। আমার যে তোকে ছাড়তেই হবে।
_____সামনের লড়াইটা তোর একার হবে, সেখানে থাকবে না প্রণয় নামের কারো অস্তিত্ব।’
প্রণয় ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনায় তলিয়ে গেল।
প্রিয়তা মাথা তুলে সামনে তাকাতেই দেখলো কাঠগোলাপের গাছ। সে উচ্ছ্বাসিত নয়নে এগিয়ে গেলো সেদিকে।
গাছের নিচ থেকে একটা কাঠগোলাপ কুড়িয়ে কানে গুঁজলো। পুনরায় দৌড়ে প্রণয়ের কাছে এসে দেখিয়ে বললো,
_____”কেমন লাগছে, প্রণয় ভাই?”
প্রণয় ম্লান হেসে চুল থেকে ফুলটা তুলে দূরে ছুঁড়ে ফেললো।
গালে বৃদ্ধাঙ্গুল স্লাইড করে কোমল কণ্ঠে বললো,
_____”তোকে এসব মানায় না।”
মন খারাপ হলো প্রিয়তার।
প্রিয়সিকে মন খারাপ করতে দেখে প্রণয় হাসলো। পাশের রক্তজবা গাছ থেকে একটা টকটকে লাল রক্তজবা তুলে
কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বললো,
_____”আমার রক্তজবা!”
‘আমার রক্তজবা’ কথাটা কর্ণকুহরে পৌঁছতেই থমকে গেল প্রিয়তা। কথাটা মনের ভীষণ গভীরে লাগলো।
বিমোহিত চোখে চাইল প্রণয়ের বাদামী চোখের দিকে।
_____‘আপনার উপস্থিতি আমার জীবনে জাদু কাঠির মতো। আপনি আমার জীবনের রঙিন অধ্যায়।
_____আপনি থাকলে আমার সব কিছুই রঙিন লাগে।
_____আর আপনি যখন থাকেন না, বিষাদময় আধারে ঢেকে যায় আমার সবটা।
_____কিন্তু চিরন্তন সত্যি তো এটাই — আপনার জীবনে আমার কোনো অধিকার নেই,
______আপনি আমার নন।’
প্রণয় চেয়ে ছিলো ওর নীল চোখের গভীরে।
চোখের ভাষা পড়ে নিয়ে গুনগুন করে গাইলো,
“জানতে যদি চাও কতোটা তোমার,
একটু থেকে যাও এই মনে আমার।”
চমকে তাকালো প্রিয়তা।
প্রণয় তার বিস্ময় পাত্তা দিলো না। মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে বললো,
______”এখানেই থাকবি, নাকি বাড়ি ফিরবি?”
প্রিয়তার চোখে মুগ্ধতার ছাপ।
_____”ফিরতে চাই না।
_____ থেকে যেতে চাই এই অজানায় বাকি জীবন।
_____যেখানে আপনি হবেন শুধুই আমার, যেখানে নিঃসংকোচে আপনার বুকে মাথা রেখে প্রতিটি রাত্রে যাপন করতে পারবো,
_____যেখানে কেউ এসে আমার চরিত্রে আঙুল তুলে বলবে না তুমি পাপ করছো।
_____তবে কেন ফিরবো? আমি ফিরতে চাই না।”
প্রিয়তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে, এক চিলতে হাসলো প্রণয়। প্রিয়তার দিকে একটু ঝুঁকে গিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,
______”যা কখনো হওয়ার নয়, তা নিয়ে ভাবো না।”
প্রণয়ের উত্তরে চমকে উঠলো প্রিয়তা। চোখ বড় বড় করে ভাবলো — এই লোক কি মন পড়তে পারেন?
প্রণয় আবার জবাব দিল,
____”পারি।”
চমকিত নয়নে প্রণয়ের বাদামী চোখে তাকিয়ে আবারো ভাবলো,
____”কি সর্বনাশ! এখন কি মনে মনে ও ভাবতেও পারবো না আপনার জন্য, মনে কথা শোনার ডিভাইস ও আবিষ্কার করে ফেলেছেন!”
প্রিয়তার বাচ্চাসুলভ আচরণ দেখে হেসে ফেললো প্রণয়। তার বাম হাত টেনে নিয়ে বাড়ির দিকে যেতে যেতে দৃঢ় কণ্ঠে বললো,
_____”ওই ছোট্ট মাথায় এত চাপ দিস না। শরীরটা তোর হলেও, ও মনটা আমার।”
প্রিয়তার মনে সুখের বাতাস বয়ে গেল। ভেজা কণ্ঠে বিড়বিড় করে বললো,
_____”এত কিছু বুঝলে, তবে কেন অন্য জনকে বিয়ে করলেন?”
কিন্তু এই প্রশ্নটা আর প্রণয় শুনতে পেল না।
ওরা ফিরে এল সেই ছোট্ট মাটির বাড়িতে। এখন বাড়ি ফেরার পালা।
বাড়ির সবাই নিশ্চয়ই এতক্ষণ চিন্তা করে করে পাগল হয়ে গেছে।
হাসপাতালের ঘটনাটা নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রণয় আর প্রিয়তা ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
উপরের জঙ্গল, তার ওপারে শহর। সোজা রাস্তা। অনেক দূর — প্রায় ৪ কিমি।
পায়ে হেঁটে তাদের গাড়ি ধরতে হবে।
প্রণয় আর প্রিয়তা হাঁটছে।
ক্ষেতের মাঝ বরাবর সূর্য এখন মধ্য গগনে। প্রচণ্ড সূর্যরশ্মির উত্তাপে প্রিয়তা ও প্রণয়ের ফরসা ত্বক টকটকে লাল হয়ে গেছে।
কিন্তু আশপাশে কোনো গাছপালা নেই, শুধু ধু ধু ধানক্ষেত।
হাঁটতে হাঁটতে প্রিয়তার মাথা ঘুরছে, পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
কিন্তু এই সমতল ভূমিতে পানি পাওয়া যাবে না। তাই এগুলো বলে শুধু শুধু—
_____”প্রণয় ভাইকে ব্যস্ত করতে চাই না।”
প্রণয় নিজের বলিষ্ঠ দেহের আড়ালে যতটা সম্ভব প্রিয়তাকে আড়াল করার চেষ্টা করছে।
_____“গরম লাগছে, পাখি।”
_____“উহুহুহ।”
প্রণয় বুঝল, মেয়েটা মিথ্যে বলছে। কিন্তু কিছু বলল না। বরং আরও দ্রুত পা চালাতে লাগল।
২ কিমি তারা হেঁটে এসেছে, এখনো ২ কিমি বাকি।
কিন্তু এখন আর কিছুতেই প্রিয়তার পা চলছে না।
প্রণয় কিছুক্ষণ তাকে সূক্ষ্ম চোখে পর্যবেক্ষণ করে আচমকা এক টানে কাঁধে তুলে নিল।
ঘটনার আকস্মিকতায় লাফিয়ে উঠল প্রিয়তা।
কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করল। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া করল না।
সত্যি, আর তার পা চলছে না।
সে মাথা এলিয়ে দিল প্রণয়ের কাঁধে।
প্রণয়েরও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
সারাদিন রোদে পুড়ে কাজ করা সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টকর হলেও তারা সহ্য করে নেয়, তাদের অভ্যাস আছে।
কিন্তু শিকদাররা কখনোই গ্রীষ্মকাল বা শীতকাল তেমন একটা অনুভব করতে পারে না।
তাদের জন্য শীত-গ্রীষ্ম সবই এক লাগে।
গাড়িতে, বাড়িতে—সব জায়গায় তাপ-নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকে।
তাই হঠাৎ এমন পরিস্থিতিতে পড়ে দুজনের অবস্থা নাজেহাল।
আরো ৫০ মিনিট হাঁটার পর প্রণয় মেইন রোড দেখতে পেল।
সে দ্রুত এগিয়ে গেল সেদিকে।
রাস্তার পাশে দু-একটা দোকানও দেখা যাচ্ছে।
প্রণয় রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে প্রিয়তাকে নামিয়ে দিল।
রক্তিম মুখশ্রীতে নজর বুলিয়ে ক্লান্ত কণ্ঠে বলল,
_____“চল, এসে গেছি।”
প্রিয়তা দূরে রাস্তার দিকে তাকাল।
প্রণয় ওর হাত ধরে নিয়ে গেল একটা টং দোকানের সামনে।
সেখান থেকে বড় বড় দুই বোতল পানি কিনে একটা এগিয়ে দিল প্রিয়তার দিকে। ক্লান্ত কণ্ঠে বলল,
______“পানি খা, তেষ্টা পেয়েছে তো?”
প্রিয়তা প্রণয়ের দিকে সন্তুষ্ট নজরে তাকিয়ে পানির বোতলটা নিয়ে ঢকঢক করে অর্ধেকটা খেয়ে ফেলল।
_____মুখটা ও ধুয়ে নে।
আরাম লাগবে।
প্রিয়তা ও তাই করল—চোখে-মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিল।
এখন অনেকটাই সতেজ লাগছে।
প্রণয়ও পুরো একটা বোতল পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিল।
প্রিয়তার হাতে থাকা বোতলটা দিয়ে চোখ-মুখ ধুয়ে নিল।
প্রিয়তা ওড়নাটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
_____“মুখটা মুছে নেন।”
প্রণয় ও তাই করল। মুখ মুছা শেষে—
প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে নরম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
_____“কিছু খাবি?
প্রায় দুপুর হয়ে এসেছে, এত রাস্তা হেঁটে এসে ক্ষুধা তো লেগেইছে।”
প্রণয় ভাইয়ের কাছে আবার কিসের লজ্জা?
সে মাথা নুইয়ে সম্মতি জানাল।
প্রণয় পাউরুটি আর কলা কিনে প্রিয়তার হাতে দিয়ে বলল,
_____“অপাতত এগুলো খা।
এখানে ভাত, রুটি কিছুই পাওয়া যায় না।
সামনে ভাতের হোটেল পেলে তখন ভাত খাবি।”
প্রিয়তা প্রণয়ের হাত থেকে পাউরুটির প্যাকেটটা নিল।
সেখান থেকে এক টুকরো রুটি প্রণয়ের মুখের সামনে ধরে বলল,
____“হাঁ, করুন।”
প্রণয়ও তাকালো প্রিয়তার দিকে। কিন্তু কোনো রকম বাক্য ব্যয় না করে খেয়ে নিল।
খাওয়া-দাওয়া শেষে প্রণয় প্রিয়তাকে এক পাশে দাঁড় করিয়ে বলল,
_____“তুই দাঁড়া, আমি টাকাটা দিয়ে আসি।”
প্রিয়তাও লক্ষ্মী মেয়ের মতো দাঁড়িয়ে রইল।
টাকা দিয়ে ফিরে এসে আশেপাশে কোথাও প্রিয়তাকে দেখতে পেল না প্রণয়।
মাথা তুলে সামনের দিকে তাকাতেই কলিজা মোচড় দিয়ে উঠল।
প্রিয়তা রাস্তার মাঝখান দিয়ে দৌড়াচ্ছে।
ঠিক সেই সময় উল্টো দিক থেকে প্রবল বেগে ছুটে আসছে দ্রুতগামী ট্রাক!
প্রণয়ের হুঁশ উড়ে গেল।
সে ও দৌড় দিয়ে আসতে আসতে চিৎকার দিয়ে বলল,
____“সরে যা! জান!”
কিন্তু সেসব কথা প্রিয়তার কান অব্দি পৌঁছালো না।
সে ছুটে গিয়ে বিড়াল ছানাটা কে তুলে নিল। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠে চোখ খিচে বন্ধ করে নিল।
সাথে সাথেই বা হাতে তীব্র টান অনুভব করলো।
সে ছিটকে গিয়ে পড়ল কার উপর।
ভয়ে প্রিয়তার সর্বাঙ্গ কাঁপছে।
আবারও কারো কণ্ঠ কানে আসতেই পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো প্রিয়তা।
চোখ মেলে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে দেখে চরম আশ্চর্য হলো সে।
সামনের ব্যক্তির চোখ-মুখ অতি ক্রোধে লাল বর্ণ ধারণ করেছে।
প্রিয়তা আশ্চর্যান্বিত কণ্ঠে, “শুদ্ধ ভাই?”
কথাটা শেষ করার আগেই শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রিয়তার তুলতুলে, নরম গালে চড় বসিয়ে দিল শুদ্ধ।
শুদ্ধের চোখ থেকে যেন আগুন ঝরে পড়ছে।
সে তীব্র ক্রোধিত কণ্ঠে প্রিয়তার দুই বাহু চেপে ধরে ঝাঁকিয়ে বলল,
_____“এখনই তো মরে যেতিস! কোনো হুঁশ আছে তোর? তুই কি এতটাই অবুঝ?”
প্রিয়তার নীল চোখ টলমল করছে। মুহূর্তেই ফরসা গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ পড়ে গেল।
প্রণয় ছুটে এসে দ্রুত প্রিয়তাকে কাছে নিয়ে উন্মাদের মতো হাত-মুখ ধরে অস্থির কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
______“তুই ঠিক আছিস, জান? কোথাও ব্যথা পাসনি তো?”
প্রণয়ের হৃদপিণ্ড জোরে জোরে শব্দ করছে।
প্রিয়তা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালো প্রণয়ের দিকে।
প্রণয় এক টানে শক্ত করে নিজের বুকে মিশিয়ে নিয়ে কান্না করে দিল।
এসব দেখে শুদ্ধর মেজাজ আরও খারাপ হলো।
ধপ করে মাথায় আগুন ধরে গেল।
সে প্রিয়তাকে টেনে প্রণয়ের বুক থেকে সরিয়ে দিল, প্রণয়ের কলার চেপে ধরলো।
হুংকার দিয়ে বলল,
_____“একদম ওকে ছুবি না!
_____তুই তো শুরু থেকেই লুজার ছিলি!
_____তোর আসলে কোনো যোগ্যতাই নেই ভালোবাসা পাওয়ার।
এখন যদি আমি সঠিক সময়ে না আসতাম, তখন কী করতি তুই?
ও তো এখুনি মরে যেত!”
চমকে উঠল প্রণয়, “না, ও মরবে না।”
সে দ্রুত প্রিয়তার হাত চেপে ধরল।
প্রিয়তা বিস্মিত চোখে দুজনের কথা-বার্তা শুনছে।
শুদ্ধ ও প্রিয়তার ওপর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলল,
____ “ছাড় ওকে!”
প্রণয় ছাড়তে চাইল না। শুদ্ধ জোর করে প্রণয়ের হাত ছাড়িয়ে দিল।
প্রণয়ের মন আটকাতে চাইলেও মস্তিষ্ক বাধা দিল।
শুদ্ধ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
_____ “কালকে সেফ করেছিলি, সে জন্য তোর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
____এখন আমারটা আমি বুঝে নেব।
____তুই দূরে থাক—তোর ভরসায় ফেলে রাখলে তুই আমাকে খুন করে ফেলবি।”
সে প্রিয়তার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল।
প্রণয় আর বাধা দিল না—শুধু নির্নিমেষ চোখে চেয়ে রইল শুদ্ধর ধরে থাকা হাতের পানে।
প্রিয়তা শুদ্ধর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল, কিন্তু পুরুষালী শক্তির কাছে সে সফল হলো না।
প্রিয়তা কান্না করে দিয়ে বলল,
_____“প্লিজ, আমাকে ছাড়ুন শুদ্ধ ভাই। প্লিজ ছাড়ুন! আমি প্রণয় ভাইয়ের কাছে যাবো!”
শুদ্ধ শুধু একবার রক্তিম চোখে তাকালো। তাতেই ভয় পেয়ে গেল প্রিয়তা।
প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে করুন চোখে মিনতি করল,
_____ “আমি আপনার সঙ্গে যাবো।”
শুদ্ধ তাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল, দেখতে দেখতেই চোখের নিমেষে শুদ্ধর স্করপিও গাড়িটা চোখের আড়ালে হয়ে গেল।
হঠাৎ চলে আসা ঝড়ের মতো কেড়ে নিয়ে গেল এক পুরুষের প্রাণপাখিকে।
প্রণয় কী পারত না তার রক্তজবার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখতে? ছেড়ে দিল কেন?
প্রণয়ের বাদামি রঙা চোখের মণি উপচে পড়তে লাগল তরল স্রোত।
সে নীরব চোখে তাকাল রাস্তার দিকে।
সেখানে এখনো সাদা রঙের লোমশ ছোট বিড়ালছানাটা পড়ে আছে—যাকে বাঁচাতে একটু আগে প্রিয়তা মরতে বসেছিল।
প্রণয় হাত বাড়িয়ে তাকে তুলে নিল।
অনেক কষ্টে হাসি ফুটিয়ে বলল,
_____“তোরও কেউ নেই। আমারও কেউ নেই। আমরা দু’জনেই সর্বস্বান্ত।
_____তুই হয়তো জানতে চাচ্ছিস, আমি আমার প্রাণকে কেন নিয়ে যেতে দিলাম…
_____নিয়ে যেতে দিলাম কারণ আমি ব্যর্থ।”
বলতে বলতে শব্দ করে কেঁদে দিল প্রণয়।
_____“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, জানিস… আমি পারব না রে। আমার রক্তজবাকে ছাড়া বাঁচতে।
_____কিন্তু আমার সঙ্গে রেখে ওকেই বা আর কত কষ্ট দিই, বল…”
প্রণয় আবার ধীর পায়ে হেঁটে সেই দোকানের সামনে গেল।
বিড়ালটার জন্য বিস্কুট কিনে দিয়ে নিজের জন্য এক প্যাকেট সিগারেট কিনে নিল।
আজ প্রায় ৪ দিন পর সিগারেটে হাত লাগাচ্ছে।
এই চার দিন তার সিগারেটের কথা মনেই পড়েনি।
কিন্তু এখন এটা খুব প্রয়োজন।
সে একটা সিগারেট ঠোঁটের মাঝে চেপে ধরে টান দিতে লাগল।
শুদ্ধ সিরিয়াস মুখে ড্রাইভ করছে।
শুদ্ধর পাশে বসে থাকতে প্রিয়তার ভয়ে হাঁটু কাঁপছে, কিন্তু শুদ্ধকে কিছু বলার সাহস পেল না।
শুদ্ধও কিছু বলল না।
রাগে তার শরীরের সমস্ত রক্ত ফুটছে।
প্রিয়তা কিছু না বলেই নিঃশব্দে চোখের জল ফেলতে লাগল।
মনে মনে বলল,
_____ “আমাকে কেন উনি তার সঙ্গে ছেড়ে দিলেন?
_____আমার ভীষণ ভয় করছে, প্রণয় ভাই।
আমি আপনার কাছে যাবো…”
নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলতে লাগল।
শুদ্ধ দেখল, কিন্তু কিছু বলল না।
শিকদার বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেছে।
অনুশ্রী বেগম ও অনন্যা বেগম কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
সামনের টিভিতে সংবাদ পাঠিকা বলছেন—
“দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
হঠাৎ কাল রাতে DCMC হাসপাতালে একটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে।
সন্ত্রাসীদের হাতে বন্দি হয়েছেন দেশের আইনমন্ত্রীসহ ২০০-র বেশি যুবতী নারী, ফিমেল ডাক্তার ও নার্স।
মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৩০০।”
এইসব খবর শুনে শিকদার বাড়ির সবার অবস্থা খারাপ,
ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৩৪
শুধু স্বাভাবিক আছে ৩-৪ জন—তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই, যেন তারা আগেই থেকেই সব জানত।
পরিনীতা, প্রেরণা, তন্ময়, তিরা, তোরি কাঁদতে কাঁদতে চোখ-মুখ লাল করে ফেলেছে।
সাদাফ, রাজ, অরণ্য, সমুদ্র—গভীর চিন্তায় মগ্ন।
এর মাঝেই প্রিয়তাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকল শুদ্ধ।