তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৮
নওরিন মুনতাহা হিয়া
[ সময় – রাত ১২ঃ০০ ]
রাতের আকাশে তালুকদার বাড়ির সকলে এখন ঘুমে আচ্ছন্ন রয়েছে, রাত প্রায় বারোটা বেজে গেছে সম্পূর্ণ বাড়ি শান্ত। তালুকদার বাড়ির সকল বৃদ্ধ মহিলা ঘুমিয়ে পড়েছে, সকলে ফজরের নামাজের জন্য উঠে যার কারণে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে। বাড়ির এক রুমে ইনায়া আর অরণ্য পাশাপাশি অবস্থান করছে, যদিও তাদের মধ্যে বিশাল দুরত্ব রয়েছে। মধ্য রাতে হঠাৎ কারো কণ্ঠ শুনে ইনায়ার ঘুম ভেঙে যায়, চোখ খুলে উপলব্ধি করতে পারে অরণ্যর কণ্ঠ। ইনায়া পাশ ফিরে অরণ্যর দিকে তাকিয়ে দেখে, অরণ্য তার শরীরে থাকা কাঁথা শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে।
ইনায়া অল্প সময় পর উপলব্ধি করে, মধ্যে রাতে যে কণ্ঠ সে শুনেছে তা আর কারো না অরণ্যর। ইনায়া অরণ্যর মধ্যে দুরত্ব মাএা কমিয়ে ওর কাছে যায়, অরণ্যর মাথায় আলতো করে হাত রাখে। ইনায়ার সন্দেহ সত্যি প্রমাণিত হয় অরণ্যর শরীরে জ্বর এসেছে, অরণ্যর সারা শরীরে ইনায়া ছুঁয়ে বুঝতে পারে জ্বরের তীব্রতা অনেক। অরণ্যর শরীর রীতিমত জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে, ইনায়ার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে। বিকালে বৃষ্টির পানি কারণে অরণ্যর শরীরে এতো জ্বর হয়েছে।গ্রামের মধ্যে রাত বারোটার সময় ডক্টর বা ঔষধ পাওয়া অসম্ভব, খাবার খায়িয়ে যখন অরণ্যকে ঔষধ খেতে বলেছে। তখন অরণ্য জেদ করে ঔষধ খায় নাই, এই সামান্য বৃষ্টির পানির ফোঁটায় তার জ্বর আসবে না বলে দেয়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইনায়ার এখন অরণ্যর উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে, আবার অরণ্যর জ্বরে পুড়ে যাওয়া শরীর আর ওর অসহায় মুখ থেকে মায়া লাগছে। অরণ্যর শরীর থেকে হাত সরিয়ে নেয় ইনায়া, এরপর বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ওয়াশরুম চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে এক বালতি পানি আর টাওয়াল ভিজিয়ে নিয়ে আসে, এরপর অরণ্যর মাথার কাছে বসে ওকে মৃদু স্বরে ডাক দেয় –
“- অরণ্য উঠুন অরণ্য। আপনার শরীরে অনেক জ্বর এসেছে, একবার পানি দিয়ে গাঁ মুছে দিলে শরীর থেকে জ্বরের তীব্রতা কমে যাবে “।
ইনায়ার কথা অরণ্যর কান অবধি পৌঁছায় নাই, কারণ অরণ্যর শরীরে জ্বরের তীব্রতা বেড়ে গেছে সে এখন অজ্ঞান প্রায়। প্রায় পাঁচ মিনিট ইনায়া অরণ্যকে ডাকে, তবে অরণ্যর শরীর কোনো রেসপন্স করে না। ইনায়া বাধ্য হয়ে অরণ্যর শরীরে পানি দিয়ে আলতো করে মুছিয়ে দিতে থাকে। অরণ্য হাত পা পানি দেওয়ার পর এইবার অরণ্যর শার্টের বাটনের উপর হাত দেয় ইনায়া। ইনায়া সংকোচ বোধ করে অরণ্যর শরীরে এমন করে টার্চ করার জন্য, কিন্তু অরণ্যর অসুস্থতা আর জ্বরের তীব্রতার কাছে সে বাধ্য হয়।
ইনায়া সযত্নে অরণ্যর শার্টের প্রথম বাটান খুলে, অরণ্য তার স্বামী তাকে সামান্য স্পর্শ করার অধিকার রয়েছে ইনায়ার। তবুও তার মন থেকে সংকোচ আর ভয় কাটে নাই। ইনায়া কাঁপা কাঁপা হাতে অরণ্যর বুকের অংশ আবৃত করে। অরণ্যর বুকে অল্প অল্প পশম রয়েছে, যদিও তা ভীষণ সুন্দর। অরণ্যর বুক তাকে বড্ড আকর্ষণ করছে। ইনায়ার ইচ্ছা করছে এই বুকে তার ঠোঁট ছুয়েঁ দিতে, সারাজীবন স্বামীর বুকের মধ্যে অবস্থান করতে। তবে ইনায়া নিজের ইচ্ছা আর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে, সে বালতির পানি দিয়ে টাওয়াল ভিজিয়ে নেয়। এরপর সযত্নে অরণ্যর সারা শরীরে মুছে দেয়, অরণ্যর শরীরে ঠান্ডা অনুভব করে। জ্বরের মধ্যে শরীরে এমন ঠান্ডা অনুভূতি তার ভালো লাগছে, ইনায়া অরণ্যর দিকে তাকিয়ে দেখে।
অরণ্যর এমন মায়াবী রূপ ইনায়া আগে কখনো খেয়াল করে নাই, একজন পুরুষকে জ্বরের মধ্যে যে এতো সুন্দর লাগতে পারে তা ইনায়ার বোধহয় জানা ছিলো না। ইনায়া ঠোঁটে মৃদু হাসি বজায় রেখে অরণ্যর মাথায় পানি দেয়। এরপর আবার ওয়াশরুমে চলে বালতি আর পানি রেখে আসে, তবে টাওয়াল পাশে থাকা টেবিলে রেখে দেয়। অরণ্যর শরীর অল্প উঁচু করে তার শরীর থেকে শার্ট সরিয়ে দেয়। জ্বরের মধ্যে যদি শরীরে কোনো জামা কাপড় না থাকে, তাহলে জ্বরের তীব্রতা কমে যায়। ইনায়া অরণ্যর কপালে থাকা চুলে সরিয়ে দেয়, তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
অরণ্যর শরীর এখন ভালো লাগছে, শরীরে শীতল ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। ইনায়া অরণ্যর কপালে চুল সরিয়ে সেখানে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়, আজ প্রথম কোনেন পুরুষ মানুষকে কপাল তার ঠোঁট স্পর্শ করছে। প্রায় সারারাত অরণ্যর সেবা যত্ন করে ইনায়া, প্রায় দশ মিনিট পর পর অরণ্যর শরীর মুছিয়ে দেওয়া, তার মাথায় পানি দেওয়া। ফজরের আজানের সময় অরণ্যর শরীরে জ্বর কমে যায়, আর সারারাত নির্ঘুম থাকার কারণে ইনায়ার চোখে ঘুম এসে পড়ে।
[ সকাল নয়টা চৌধুরী বাড়ি ]
চৌধুরী বাড়ির সকলে খাওয়া দাওয়া করার জন্য টেবিলে উপস্থিত হয়, মূলত এই সকালে তাদের একে অপরের সাথে দেখা হয়। অরুণা বেগম রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে এসে টেবিলে রাখে, অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে ইভান। ইভান খাবার টেবিলে বসে অরুণা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে –
“- আম্মু তুমি প্রভাকে থাকার জন্য ইনায়ার রুম কেনো দিয়েছ? চৌধুরী বাড়িতে গেস্ট রুম বা নরমাল রুমের অভাব পড়েছে?
অরুণা বেগম যানে ইভান এমন কথা তাকে জিজ্ঞেস করবে। অরুণা বেগম বলে –
“-প্রভা এই বাড়ির অতিথি। আর প্রভার আজ সকালে আসার কথা ছিলো কিন্তু ও তাড়াতাড়া করে কালকে সকালে চলে এসেছে। যার জন্য কোনো ভালো রুমের আয়োজন করা হয়ে উঠে নাই, যার জন্য ইনায়ার রুমে অল্প দিনের জন্য থাকবে ও।
ইভান খাবার টেবিলে বসে মায়ের সাথে আর কোনো কথা বলে না, সে খাবার খাওয়া শেষ হলে অফিসের জন্য রওনা দেয়।
চৌধুরী বাড়ির সামনে ইভানের গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে, বাড়ির সদর দরজা পার হয়ে ইভান গাড়িতে উঠে বসে। ড্রাইভার যখন গাড়ি ছাড়বে অফিসের উদ্দেশ্য তখন, একজন মেয়ে এসে গাড়ির কাচেঁর জানলায় নক করে। ইভান বিরক্ত করে কাচঁ সরিয়ে দেয় সেখানে আর কেউ না প্রভা ছিলো। ইভান বলে –
“- কি হয়েছে প্রভা? গাড়ির কাচেঁ এমন শব্দ করছেন কেনো?
ইভানের কথার উত্তরে প্রভা বাচ্চাদেন ন্যায় বলে উঠে –
“- সরি ইভান আপনাকে বিরক্ত করার জন্য। কিন্তু আজকে আমি চৌধুরী কোম্পানি জয়েন করব, সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যাওয়ার কারণে রেডি হতে দেরি হয়ে গেছে। যখন আপনি অফিসে যাবেন আর আমি ও যাব। আমরা কি একসাথে যেতে পারি?
প্রভার কথা শুনে ইভান যথেষ্ট বিরক্ত হয়, ছোটবেলা থেকে মেয়েদের থেকে যথেষ্ট দুরত্ব অবলম্বন করে সে চলেছে। তবে ইভান প্রভার উত্তরে না করতে পারবে না, কারণ প্রভা বাড়ির অতিথি। ইভান বলে –
“- ওকে গাড়িতে উঠে বসুন “।
ইভানের সম্মতি পেয়ে প্রভা গাড়িতে উঠে বসে, ড্রাইভার গাড়ি চালানো শুরু করে। ইভান আর প্রভা দুইজনে নীরব। তবে প্রভার চোখে মুখে এখনো ঘুম রয়েছে। বিদেশে তার এতো সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস নাই, যার জন্য প্রভা গাড়িতে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুম কাটানোর চেষ্টা করে। প্রায় দশ মিনিট পর ইভান খেয়াল করে প্রভা ঘুমিয়ে পড়েছে, তবে তার মাথা গাড়ির ঝাঁকুনির কারণ পড়ে যাচ্ছে। ইভান তার হাত দিয়ে প্রভার ঘুমন্ত মুখ ধরে ফেলে, এরপর এগিয়ে গিয়ে যায় প্রভার কাছে। ঘুমন্ত প্রভা তার মাথা রাখে ইভানের কাঁধে, ইভান প্রথমে বিরক্ত হয় পরে প্রভার ঘুমন্ত মুখ দেখে শান্ত হয়ে যায়। বাচ্চা মেয়েদের মতো ঘুমিয়ে রয়েছে প্রভা, ইভান যা দেখে মৃদু হাসি দেয়।
[ তালুকদার বাড়ি ]
সকালের মিষ্টি রোদ অরণ্যর চোখে পড়ে, অরণ্য ঘুম ভেঙে যায় চোখ খুলে তার মাথা ব্যাথা করছে। অরণ্য টেবিলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল নয়টা বেজে গেছে, অরণ্য যখন বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে। তখন তার চোখ যায় তার বুকে ঘুমিয়ে থাকা ইনায়ার দিকে, অরণ্যর বুক জুড়ে ইনায়ার দখল রয়েছে। অরণ্য প্রথমে অবাক হয় কারণ তার শরীরর শার্ট না থাকায়, পরে ঘরের মধ্যে মগ আর ভিজা টাওয়াল দেখে বুঝে যায় বৃষ্টির পানি শরীরে পড়ার কারণে তার জ্বর এসেছে। প্রায় অনেক সময় অরণ্য ইনায়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে, এরপর ভাবে যদি ইনায়া ঘুম থেকে উঠে তাদের দুইজনকে এমন অবস্থায় দেখে তাহলে অনেক লজ্জায় পড়ে যাবে।
অরণ্য নিজের বুকের উপর থেকে ইনায়ার শরীর ধীরে ধীরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, যার ফলে ইনায়ার ঘুম ভেঙে যায়। তবে সারারাত জেগে থাকার কারণে সে ভীষণ টার্য়াড
যার জন্য ইনায়ার বিরক্ত হয়ে বলে –
“- ওম অরণ্য কি করছেন? আর একটু ঘুমাতে দেন? এতো তাড়াতাড়ি উঠে কি করব শুনি?
ইনায়ার জবাব শুনে অরণ্য অবাক, তাহলে কি ইনায়া সজাগ থাকা অবস্থায় ইচ্ছা করে অরণ্যকে জড়িয়ে ধরেছে। অরণ্য বলে –
“- ইনায়া আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছেন?ঘুম থেকে উঠলে কিন্তু আমাকে দোষ দিবেন না?
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া শক্ত করে অরণ্যকে জড়িয়র ধরে, ওর বুকের পশমে মাথা নেড়ে জবাব দেয় –
তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৭
“- আপনি আমার স্বামী অরণ্য। নিজের স্বামীকে জড়িয়ে ধরার অধিকার কি আমার নাই, এখন আমাকে ঘুমাতে দেন।
ইনায়ার এমন জবাব শুনে অরণ্য অবাক হয়, তবে ওর মুখে হাসি ফুটে উঠে। অরণ্য ইনায়াকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে, যেনো ছেড়ে দিলে ইনায়া পালিয়ে যাবে। ঘুমের মধ্যে ইনাযার মুখে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠে, ওর গাল দুটো লাল হয়ে যকয়। অরণ্য বলে –
“- অবশ্যই নিজের স্বামীকে জড়িয়ে ধরার অধিকার ইনায়ার রয়েছে। কারণ এই অরণ্য রাজ চৌধুরী শুধু ইনায়ার। শুধু মাএ তার বিবাহিত বউয়ের। এখন ঘুমান যতখন ইচ্ছা “।