তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৪
তানিশা সুলতানা
“স্পিক আপ ননসেন্স।
এন্সার মাই কোশ্চেন।
আবরার ধমকে বলে ওঠে। আদ্রিতা চমকায়। বুকের ভেতরটা অস্বাভাবিক ভাবে কেঁপে ওঠে। ইচ্ছে করে সব অভিমান ভুলে চিৎকার করে কেঁদে উঠতে। ইচ্ছে করে বলতে ” আবরার কেনো চলে গেলেন? কেনো আমায় ছেড়ে গেলেন। আমি ভালো নেই। আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারছি না আমি। প্রয়োজনে সারা জীবন আপনার পায়ের কাছে পড়ে থাকবো। তবুও আপনি আসুন। আমায় নিয়ে যান।”
“হোয়াটস রং উইথ ইউ পাখি? কথা বলছো না কেনো? স্পিক আপ জান।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আদ্রিতা। লাল রংয়ের বাটন এ প্রেস করে বিচ্ছিন্ন করে দেয় কল খানা। এবং সঙ্গে সঙ্গে এরোপ্লেন মুড দিয়ে রাখে। যাতে পূণরায় কল বেজে না ওঠে।
তারপর দুই হাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। কাঁদতে চায় না সে। নিজেকে ভীষণ স্টং এবং কঠোর দেখানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু দিন শেষে রাতের আধারে একাকিত্ব জেঁকে ধরে। কান্না গুলো দলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসে। অনেক অভিমান, অভিযোগ, আক্ষেপ, না পাওয়ার যন্ত্রণা সবই এক সাথে জড়ো হয়। শেষ কবে শান্তিতে ঘুমিয়েছিলো আদ্রিতার মনে পড়ে না। ঘুম যেনো তাকে ছেড়ে পালিয়েছে। হাঁসফাঁস করতে করতেই রাত খানা কেটে যায়।
তার জীবনডা এমন কেনো হলো? কেনো সুখ ধরা দিয়েও দিচ্ছে না? যখনই ভাবে এই বুঝি সব দুঃখের অবসান ঘটলো তখনই দ্বীগুণ অসহ্যনীয় দুঃখের হাতছানি দেখা যায়। যখন ভাবে সব ভালো হবে তখনই সব খারাপ হয়ে যায়। এ কেমন জীবন?
ইদানীং একটা গান বড্ড ভালো লাগছে আদ্রিতার। খুব বেশি মন খারাপে কানে হেডফোন গুঁজে গান খানা শুনতে থাকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” এ কেমন জীবন আমার কাঁধে আমি সইতে পারছি না
বেকার এ মন আবেগে বাঁধে আমি কইতে পারছি না।
এ কেমন ভালোবাসা সইতে পারছি না।
মায়া মায়া মহা মায়ার ভেতর
আমি কে?
আমি কে?
আমি কে তোর?
আবরার নিজের হাতে থাকা ফোন খানা শূন্যে ছুঁড়ে ফেলে। মুহুর্তেই দেয়ালে লেগে ভেঙে তিন চার খন্ড হয়ে যায়। তাতেও যেনো তার রাগ কমলো না। বরং বেড়ে গেলো। ইচ্ছে করছে সব কিছু ভেঙে গুড়িয়ে দিতে। একটু আগেই বাইক রেস এ জিতে এসেছে। আহত হয়েছে কিছুটা। হাত এবং কপালে ক্ষতর চিহ্ন। রক্ত ঝড়ছে এখনো। চিনচিনে ব্যাথা ঘায়েল করছে ক্ষণে ক্ষণে। এই মুহুর্তে হাতে প্রেশার পড়তে পূণরায় ব্রিডিং হওয়া শুরু করে।
চোয়াল শক্ত করে ফেলে আবরার। ব্যাথাকে কঠিন স্বরে গালি দেয়। যেনো বিশাল বড় শত্রু। তারপর বিছানা হতে নেমে দু পা এগিয়ে আসে। টেবিল ল্যাম্প খানা ছুঁড়ে ফেলে। সাদা রংয়ের আলো বড্ড জ্বালাচ্ছিলো চোখ লেগে। এবার নজর পড়ে ড্রেসিং টেবিলের ওপরে সাজানো পারফিউম হেয়ার প্রোডাক্ট মেল ফেইসওয়াশ সহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসের পানে। মুহুর্তেই সে সবও ফেলে দেয়। শেষ মুহুর্তে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় আঘাত হানে। শক্ত ঘুষিতল মুহুর্তেই ভেঙে গুড়িয়ে যায় আয়না খানা। কিছু সংখ্যক কাঁচ আবরারের হাতের উল্টো পিঠে বিঁধে পড়ে। গল গল করে রক্ত ঝরতে শুরু করে।
কিন্তু সেদিকে মনোযোগ নেই আবরারের। ফ্লোরে পড়ে যাওয়া ভাঙা আয়নার টুকরোর পানে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে
“এটিটিউট যখন দেখাবিই তখন দুটো কবর খুঁড়ে রাখিস।
হাসপাতালের বেডে পড়ে আছে টনি। পুরোপুরি সুস্থ নয় তবে এখন একটু হাঁটাচলা করতে পারে।
টনির পাশে বসে আছে তার ছেলে টিশান এবং দুই স্ত্রী ইমা আর শৈলি।
ইমাকে শৈলি মেনে নিতে পারে নি। তবে স্বামীর অসুস্থতার জন্য জোর গলায় বেরিয়ে যেতে বলতেও পারে নি। তিনি অপেক্ষায় আছে টনি সুস্থ হয়ে ওঠার।
টিশান বাবার হাত ধরে বলে
” পাপা তুমি বললে আবরার
বাকিটা শেষ করার আগেই টনি বলে
“ধ্বংস করে দে আবরারকে। জানে মারবি না। ওর দুর্বল পয়েন্ট গুলোতে এট্যাক কর।
টিশান মাথা নারিয়ে সায় জানায়৷ আবরারের ধ্বংস সেও দেখতে চায়। আবরার তাসনিন নামটাকে সুইজারল্যান্ড শহর থেকে চিরতরে মুছে ফেলতে চায় টিশান।
আতিয়া বেগম এর শরীর মোটামুটি ভালো। একা বাসায় থাকতে ভালো লাগে না তার। সেই জন্যই চৌধুরী হাউজ এ ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে পরিবারের সকলের সাথে থাকলে মন এবং শরীর দুটোই ভালো থাকবে।
আদ্রিতাকে নিজের সিদ্ধান্ত জানানোর পরে আদ্রিতাও রাজি হয়। এবং বলে ভার্সিটি থেকে ফিরে ওই বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরুবে।
ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় রাস্তায় আসিফের সঙ্গে দেখা হয়েছে আদ্রিতার। বড্ড তাড়াহুড়ো রাস্তা পার হচ্ছিলো। তখনই একটা দ্রুত গতির গাড়ি চলে আসে তার সামনে। ধাক্কা লাগতে লাগতে বেঁচে যায় সে। একা একা বাঁচে না বরং আসিফ হাত ধরে টেনে রাস্তার সাইডে নিয়ে যায়। বড্ড ভয়ার্তক ছিলো আসিফের মুখশ্রী। আদ্রিতাও ভয় পেয়েছিলো কিন্তু আসিফ কে দেখে ভয় কেটে যায় বলে
“আপনি এখানে?
আসিফ একটু হাসার চেষ্টা করে জবাব দেয়
“ভার্সিটি যাচ্ছি। আমার সঙ্গে চলো।
“না না আমি একেই যেতে পারবো।
“হ্যাঁ তুমি একাই যেতে পারবে। তবুও আমার সঙ্গে চলো। গাড়ি নিয়ে আসি নি। হেঁটে যাবো চলো।
আদ্রিতা মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়। এবং দুজন পাশাপাশি হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে আসিফ জিজ্ঞেস করে
“তারপর তোমার আবরারের কি খবর?
“আলহামদুলিল্লাহ ভালোই।
“কথা হয় তোমার সাথে?
“এ বা বা কেন হবেনা? প্রতিদিনই হয়।
“তোমায় রেখে গেলো কেনো?
“আমি তো আর সারা জীবন সুইজারল্যান্ড থাকবো না। এখানেই থাকবো। উনি আসবে মাঝে মাঝে। এমনটাই তো কথা হয়েছে আগে থেকেই। আর উনি আমায় রেখে যায়নি বরং আমার এখানে থাকারই কথা ছিল।
আসিফ আর কিছু বলে না। মূলত আবরার এবং আদ্রিতার সম্পর্কের সবটাই জানে সে। আবরারের চলে যাওয়া আদ্রিতার সঙ্গে কথা না হওয়া সব ব্যাপারে অবগত। তবুও আদ্রিতার মুখ থেকে কিছু শুনতে চাচ্ছিলো। ও একবার বলতে পারতো “হ্যাঁ আবরারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ঠিক নেই। আমাদের কথা হয় না অনেকদিন। আমি ভালো নেই।”
আসিফ খুশি হয়ে স্বপ্ন দেখতো। আবারও আদ্রিতাকে পাওয়ার পাঁয়তারা আটতো। সেই সুযোগটাই আদ্রিতা দিচ্ছে না।
ভার্সিটির মাঠে পৌঁছে যায় ওরা। আসিফের ডিপার্টমেন্ট পশ্চিম পাশে আর আদ্রিতার পূর্ব পাশে। এখানেই দুজনের পথ চলা শেষ। এবার দুজনকে দুদিকে যেতে হবে। মাঠের ওই প্রান্তে আদ্রিতার বন্ধুদের দেখা যাচ্ছে। আসিফের থেকে বিদায় নিয়ে তাদের দিকে পা বাড়াবে তখনই একটা লোক এসে দাঁড়ায় আদ্রিতার সামনে। হেসে বলে
“আবরার চৌধুরীর পাখি আপনি?
আসিফ ও দাড়িয়ে পড়ে। পেছন ফিরে তাকায় লোকটার মুখ পানে। আদ্রিতা ভ্রু কুঁচকায় কঠোর স্বরে জবাব দেয়
“আমার নাম আদ্রিতা। পাখি নয়।
” ম্যাম আমি বলেছি
লোকটাকে থামিয়ে আদ্রিতা বলে
“জাস্ট সাট আপ। আমার রাস্তা আটকানোর সাহস হলো কিভাবে? নেক্সট টাইম যেনো এমনটা না দেখি।
বড় বড় পা ফেলে চলে যায় আদ্রিতা। লোকটা শুকনো ঢোক গিলে। কলে থাকা আবরার তাসনিনকে বলে
” স্যার আপনার পাখি ডেঞ্জারাস।
অফিসের এসেছে আবরার। সামনে পঁচিশ জন ক্লাইন্ট। বিশাল মনিটরের স্কিনে লাল রংয়ের এক খানা গাউন দেখানো হচ্ছে। সেই গাউন তৈরি ব্যাপারে ক্লাইন্টরা জানতে চাচ্ছে। কিন্তু আবরার কলে ব্যস্ত।
ইসতিয়াক নামক একজন ক্লাইন্ট বলে ওঠে
“হোয়াট রং উইথ ইউ আবরার তাসনিন?
আবরার তাকে থামিয়ে জবাব দেয়
” সব কিছুর আগে আমার পাখির সেফটি প্রয়োজন। সে নিরাপদে ক্লাস রুমে পা না রাখা ওবদি মিটিং ওয়েটিং এ থাকবে। যাদের ডিলটা চাই তারা থাকুন। যাদের চাই না তারা চলে যেতে পারেন।
পূণরায় আর কেউ কিছু বলার সাহস করে না। চুপচাপ বসে থাকে।
আদ্রিতা ক্লাস রুমে পা রাখতেই আবরার কথা বলা শুরু করে। ড্রেস এর বিবরণ, কয়দিন লেগেছে তৈরি করতে এবং কতোজন শ্রমিক তৈরি করেছেন। সব কিছুর ডিটেইলস বলতে থাকে।
সিয়াম আমান আহাদ এবং ইভান একটা প্ল্যানিং করেছে। আবরার এবং আদ্রিতাকে পূণরায় এক করার পরিকল্পনা। জীবনে খারাপ সময় আসবে যাবে। কিন্তু খারাপ সময়ে প্রিয় মানুষ গুলোকে দূরে রাখা যাবে না। বরং তাদের পাশে রেখে খারাপ সময়ের মোকাবেলা করা উচিত।
কথা খানা আবরার বোঝে না।
তার মতে প্রিয় মানুষ গুলো শুধু ভালো সময়ে পাশে থাকবে সাথে থাকবে। খারাপ সময়ে তাদের দূরে থাকাই শ্রেয়।
সময়টা খারাপ যাচ্ছে আবরারের।
দুটো শোরুম পুরে ছাঁই হয়ে গিয়েছে। থাইল্যান্ড এ একটা শো রুম উদ্ভোদন হওয়ার কথা ছিলো সেটাও আটকে গিয়েছে।
অন্য কোম্পানি গুলো আবরার তাসনিনকে বাঁকা নজরে দেখছে। হেনস্তা করার চেষ্টায় আছে।
এভাবে চলতে থাকলে আবরারের হার নিশ্চিত। কিন্তু আবরার তাসনিন হারতে শিখে নি। সে জিতবে।
জেতার লড়াই এ অনবরত ফাইট করে যাচ্ছে।
সিয়াম আমান আহাদ এবং ইভানকেও সাথে রাখছে না।
লড়াইটা আবরারের একার। তাই সে একাই ফাইট করবে।
সিয়ামের পরিকল্পনা শুনে আমান বলে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৩
“শালা দারুণ একটা প্ল্যানিং করেছিস। এবার আবরার আব্বা কি করে আমিও দেখবো।
আহাদ বলে
” ভাই আমাদের শত্রুর অভাব নেই। আদ্রিতাকে এসবের মধ্যে না টানলেই ভালো হতো।
ইভান বলে
“তুই চুপ থাক শালা।
আমাদের প্ল্যানিং এ বা হাত ঢোকাবি না।