তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৫

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৫
তানিশা সুলতানা

পরিকে নিয়ে বিকেলটা উপভোগ করার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয় ছোঁয়া। সারাদিন রুমে বসে থাকা যায়? লাটসাহেব তো বলে গিয়েছে “বই পড়বে আর ঘুমবে। একদম বাসা থেকে বের হবা না” কি রে ভাই জেল খানায় কতক্ষণ আটকে থাকা যাবে? তাছাড়া পরিও বোর হচ্ছিলো। তাই সাদির থেকে পারমিশন না নিয়েই বেরিয়েছে। চুপিচুপি ছাদে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আবার চুপিচুপি চলে আসবে। সাদু পাদু বুঝতেও পারবে না। দরজা খুলতেই দেখতে পায় তিথিকে। পাশের ফ্ল্যাট থেকে বের হচ্ছে। অবাক হয় ছোঁয়া। ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে

“তিথি তুই এখানে?
ছোঁয়াকে দেখে তিথি লাফিয়ে উঠে বলে
” বান্ধবী তুই এখানে? কেমনে কি?
“সাদু বেবির সাথে এখানেই তো থাকি আমি।
” ওয়াও। আমিও জব্বারের মেয়ের সাথে এখানেই থাকবো।
“জব্বার কে?
” কে আবার? আমার নানা।
“বান্ধবী দারুণ মজা হবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তিথির নজর পড়ে পরির দিকে। তাকে কোলে তুলে নেয়। ঠোঁট দাবিয়ে চুমু খায় গালে। এতে বেশ বিরক্ত হয় পরি। চোখ মুখ কুঁচকে তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার মুখ পানে। তাতে তিথির কিছু এসে যায় না সে তো তাকে আদর করতে ব্যস্ত।
” আমার সোনা মনা কি তুলতুলে তুমি। মনে হয় খেয়ে ফেলি
বলে আবারও চুমু খেতে যায়। পরি চোখ পাকিয়ে বলে
“পাপা বলে দিয়েছে বেশি চুমু খাওয়া যাবে না।
” কেনো কেনে?
তোমার পাপা দাঁত ব্রাশ করে না বুঝি?
রেগে যায় পরি।
ছোট ছোট হাত ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে

“মাম্মাম পঁচা মেয়ের কোলে থাকবো না আমি।
কোলও নাও।
ছোঁয়া কোলে নিতে যায়। কিন্তু তিথি দেয় না। বলে
” তোমাকে পঁচা মেয়ের কোলেই থাকতে হবে।
“আমি কিন্তু চুল টেনে ধরবো তোমার। আর পাপাকে বলে দিবো সব। ব্যাড গার্ল
তিথি মুখ বাঁকায়। চুল টেনে ধরার কথা শুনে একটু ভয়ই পেয়েছে। তাই ছোঁয়ার কোলে দিয়ে দেয়।
” কি মেয়েরে ভাই তোর।
পুরাই এটম বোম।

“পরি আমার নাম। সাইফাতুল তাবাসসুম পরি। এটম বোম না।।
ছোঁয়া হাসে। চুমু খায় পরির গালে। তিথিকে চোখ পাকিয়ে বলে
” আমার চাঁদের সাথে দুষ্টুমি না। এটা আমার চাঁদ। আমার কলিজা।
মায়ের আহ্লাদে গদগদ হয় পরি। নিজেও ছোঁয়ার গালে চুমু এঁকে দেয়।
তারপর তিন জন ছাদে ওঠে। আজকের বিকালটা বেশ সুন্দর। আকাশে হালকা মেঘ জমেছে। ঝিরি ঝিরি বাতাস বইছে। আষাঢ় মাস চলছে তো। যখন তখন বৃষ্টি নামে। আবার রোদ ওঠে। এই যেমন আজকে সারাদিন রোদ ছিলো। প্রচন্ড গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করেছে। কিন্তু এখনই সব গরম ভ্যানিশ হয়ে গেছে। একগুচ্ছ ঠান্ডা বাতাস সকলের কলিজা ঠান্ডা করে দিচ্ছে।

পরি দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে। তাকে সঙ্গ দিচ্ছে আরো একটা বাচ্চা। তার নাম ইভা। বারো তালায় থাকে তারা। আজকেই প্রথম আলাপ হলো। পরি একা একা দোল খাচ্ছিলো তখনই ইভা আসে। পরির সাথে কথা বলে। পরিও চট করে মিশে যায় বাচ্চাটির সাথে। তারপরই দুজনের ফ্রেন্ড শিপ হয়ে যায়।
তিথি এবং ছোঁয়া ছাদের রেলিংয়ে বসে গল্প করছেন।
ছোঁয়া বলে

“সাদু পাদু তো আমার ভালোবাসে না রে। একটু পাত্তা দিচ্ছে না। সারাক্ষণ ধমকায়। কি করি বল তো?
“কি আর করবি। কি ইগনোর কর। মিঠাই নাটক দেখিস নি? সিদ্ধার্থ মিঠাইকে পাত্তা দিতো না তারপর মিঠাই ইগনোর করতো। তারপর ভালোবাসা হলো।
“কিভাবে ইগনোর করবো? তার মুখটা দেখলেই আমার কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। তার সাথে একটু কথা বলার জন্য মনটা ছটফট করে ওঠে। তারে দেখলেই শুধু তার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
“বুদ্ধু এত পাগল কেন তুই? ভালোবাসাটা কমা।
“এটা কোনদিনও সম্ভব না রে। আমার সাদুর প্রতি ভালোবাসা কোনদিনও কমবে না।
“আচ্ছা না কম।লো তুই শুধু তাকে একটু এড়িয়ে চলার চেষ্টা কর। তার দিকে তাকিয়ে থাকবি বুঝতে দিবি না। তার সাথে কথা বলবি না। কিছুদিন এমনটা করে দেখ তোর সাদু তোকে প্রপোজ করে দেবে।
“ইগনোর করার মত তো কারণ লাগে। মন খারাপ তো একা একাই হবে না। কারণ থাকলে মন খারাপ করে থাকতাম তাকে এড়িয়ে চলতাম।

“বাদ দে বোইন। তোকে বোঝানোর ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দেয় না।ই প্রসঙ্গ পাল্টা। অন্য প্যাচাল পার।
ছোঁয়া মুখ বাঁকায়। কিছু বলে না। সন্ধ্যা লেগে যাচ্ছে। পরিরও খুধা পেয়েছে। তাই আর বেশি সময় ছাদে থাকে না। বাসায় চলে আসে।
সাদি এখনো বাসায় ফিরেনি। তার ফিরতে আরেকটু সময় লাগবে। ছোঁয়া নুডুলস রান্না করে এবং দুজন মিলে খেয়ে নেয়। তারপর পরি সাথে একটুখানি খেলা করে তাকে পড়তে বসায়। “আতা গাছে তোতা পাখি” কবিতা খানা পুরোপুরি মুখস্থ করায় পরিকে।
ঘড়ির কাঁটায় নয়টা বেজে ৫ মিনিটে পরি ঘুমিয়ে পড়ে। এই ফাঁকে ছোঁয়া একটুখানি ফেসবুকে ঢোকে। মেসেঞ্জারে দশটা মেসেজ এসেছে। এতো মেসেজ কে দিলো?
ভাবতে ভাবতেই মেসেঞ্জারে ঢুকে পড়ে। ওই বান্ধবী এবং বন্ধুদের গ্রুপের মেসেজ সব। কি মনে করে ছোঁয়া মেসেজ রিকোয়েস্ট চেক করতে ঢোকে।

প্রথমেই নজর পড়ে “মাইশা ইসলাম” নামে একটা আইডি থেকে মেসেজ এসেছে।
কৌতুহল বসত ছোঁয়া ঢুকে পড়ে মেসেজ দেখতে। তিন খানা পিকচার দিয়েছে। সাদিকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে মাইশা। বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে ছোঁয়ার। শুকনো ঢোক গিলে ফোন খানা রেখে দেয়।

তারপর বেলকানিতে চলে যায়। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। সেই বৃষ্টি ভিজে দিচ্ছে ছোঁয়ার দেহ। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে সে। ভাবতে থাকে অনেক কথা। ভাবনার মাঝে হঠাৎ করে নিজের প্রতি এক রাশ আফসোস ভর করে। সাদমান চৌধুরী ছোঁয়ার ড্রিম বয়। এই একটা মানুষের জন্য সব করতে পারে সে। নিজেকে ভাঙতে পারে আবার গড়তেও পারে। তার যত পাগলামি সব একটা মানুষকে ঘিরে। কিন্তু এই মানুষটা কোনদিনও তাকে একটুও ভালোবাসলো না। মাইশা কে ভালোবাসা যায়। আপুকে বিয়ের প্রপোজাল দেওয়া যায়। শুধু ছোঁয়াকেই একটু ভালোবাসা যায় না। তার সাথে একটু ভালো করে কথা বলা যায় না। তবে কি এই পৃথিবীর সবথেকে নিকৃষ্ট ব্যক্তি ছোঁয়া? সবথেকে কুৎসিত দেখতে মানুষ সে? মস্ত বড় পাপী। যাকে ভালোবাসলে পাপ হবে।
দু’ফোঁটা অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়ে ছোঁয়ার দুগাল বেয়ে। খুব সহজে তার কান্না পায় না। তবে আজকে খুব কান্না পাচ্ছে। কেন পাচ্ছে জানে না। মাইশাকে সাদি ভালোবাসতো এটা তো ছোঁয়া জানে। তাহলে মন খারাপ কেনো হচ্ছে? মনটাও কি তার মতই পাগল হয়ে গেলো?

এরই মধ্যে সাদি চলে আসে। নিজের কাছে থাকা এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে। অফিস ব্যাগ ড্রয়িং রুমে নামিয়ে এদিক ওদিক দৃষ্টি ঘোরায়।বাড়ির পরিবেশ এতো শান্ত? কোথায় গেলো পাগল টা? ভাবতে ভাবতেই রুমে চলে আসল। দেখতে পায় বিছানায় পড়ি ঘুমিয়ে আছে পরি। বেলকনিতে ছোঁয়াকেও দেখা যাচ্ছে। সাদি জামা কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে পরিকে একটু আদর করে। তারপর বেলকনিতে যায়। ছোঁয়া ভিজছে জবুথবু হয়ে গেছে।
সাদি গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে
“এই ইডিয়েট এখানে কেনো তুমি? ঠান্ডা লেগে গেলে?
ছোঁয়া পেছন ঘুরে সাদির পানে তাকায়। ছোঁয়ার ভেজা ভেজা চোখদুটো দেখে সাদি ভ্রু কুঁচকায়। দু পা এগিয়ে গিয়ে বলে

“হোয়াট হ্যাপেন্ড? এনি প্রবলেম?
ছোঁয়া সাদির চোখে চোখ রেখে বলে ওঠে
“আমার ভালবাসেন না কেনো সাদু? আমি কি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই?
ছোঁয়ার বলা কথাটা বুকে গিয়ে বিধে সাদির। এতটা ইমোশন নিয়ে কোনদিনও মেয়েটা কথা বলেনি। সে তো সবসময় ফাজলামি করতে ব্যস্ত থাকে। আজ কি হলো তার?
নিজের ভেতরের কথাটা চেপে না দেখে সাদি নরম স্বরে বলে ওঠে
“কি হয়েছে? মন খারাপ কেনো?

“মন খারাপ না সাদু। আপনি আমার কথার উত্তর দিন। কেনো ভালোবাসেন না আমায়? মাইশাকে ভালোবাসা যায়। আপিকে বিয়ের প্রপোজাল দেওয়া যায়। আমার সাথে একটু ভালো করে কথা বলা যায় না? আমাকে একটু ভালোবাসা যায় না? আমাকে বউ বলে মেনে নেওয়া যায় না? কেনো সাদু? কি সমস্যা আমার?
আমি কি সুন্দরী নই?
সাদি ফোঁস করে শ্বাস টেনে ধমকের স্বরে বলে
“ড্রেস চেঞ্জ করবে
এসো।
“আমার জবাব চাই সাদু।

সাদি জবাব না দিয়ে চলে যেতে নেয়। ছোঁয়া বলে ওঠে
” আমি নির্লজ্জ বেহায়া শুধুমাত্র আপনার জন্য। অতিরিক্ত ভালোবেসে ফেলেছি তো। কি করবো বলুন? সেটারই সুযোগ নিয়ে আঘাত করছেন। ইটস ওকে।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৪

তবে যেদিন আমার ভালোবাসায় আঘাত লাগবে। আপনার ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবো। বিশ্বাস করুন সাদু দ্বিতীয় বার আপনার দিকে ফিরে তাকাবো না।
কথা শেষ করেই বড় বড় পা ফেলে চলে যায় ছোঁয়া। সাদি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কি বলে গেলো ও? কেনোই বা বললো? কি হয়েছে পিচ্ছিটার?

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৬