সুগন্ধি ফুল শেষ পর্ব
জান্নাত সুলতানা
-“আম্মু মেহরিন কোথায়? দেখেছ তুমি ওকে? আম্মু? মেইড? মেইড?”
আব্রাহাম পাগলের মতো অস্থির হয়ে রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে ডাকতে লাগলো। ইলা বেগম দ্রুত পায়ে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। এতো ভোরে কি হয়েছে ভেবে তিনি এবং মিলন খান রুম থেকে বেরিয়ে এলো। আব্রাহামের গায়ে একটা শার্ট। যার অর্ধেক ইন করা তখনও। চুল এলোমেলো আর সদ্য ঘুম থেকে ওঠে এসছে। খুব বিধস্ত দেখাচ্ছে আব্রাহাম কে। ইলা বেগম অস্থির চিন্তিত স্বরে বলে উঠলো,
-“কি হয়েছে আব্বা? মেহরিন এতো সকালে নিচে আসবে কেনো? রাতে রুমে ছিলো না?”
মিলন খান গম্ভীর হয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে। ছেলের মতিগতি বুঝে না। কিছুদিন ধরে অফিসে ঠিকঠাক কাজ করছে না। তারউপর মেয়ে টার মতামত না নিয়েই তো বিয়ে করে ছিলো। যদিও ভালোই চলছিলো সব কিছু। তাহলে হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো? আব্রাহাম দূরে বাইরে গেলো। গেইটে সিকিউরিটি নেই আজ। দারোয়ান নামাজ থেকে ফিরেছেন মাত্র। সবাই আব্রাহামের পেছনে এসছে। আব্রাহাম দারোয়ান কে কে জিজ্ঞেস করলো,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
-“আঙ্কেল গেইট খোলা ছিলো?”
-“হ্যাঁ বাবা মাফ করবেন। নামাজে যাওয়ার সময় আঁটকে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তো খুলে দিয়েছে কেউ।”
বিনয়ী আচরণ আব্রাহামের তবুও রাগ হলো। সে কিছু বলতে গিয়েও পিছিয়ে এলো। সবাই কে এড়িয়ে দৌড়ে রুমে এলো। পুরো রম জুড়ে সব ঠিকঠাক। শুধু তার কিনে দেওয়া একটা ব্যাগ নেই। আব্রাহাম আলমারি খুলে দেখলো। সব ঠিকঠাক। শুধু মেহরিনের একাডেমিক কাগজপত্রের ফাইল টা নেই। আব্রাহাম তন্নতন্ন করে সব কিছু খুঁজে দেখলো। কিন্তু সব ঠিকঠাক। টাকাপয়সা গহনাগাঁটি সব যে যার যায়গায় আছে। শুধু যার জিনিসপত্র সেই মানুষ টির এই রুমে কোনো অস্তিত্ব নেই। আব্রাহাম থমকে গেলো। বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো মিলন খান, ইলা বেগম, আবরাজ, ফিজা তারা সবাই ভেতরে প্রবেশ করলো। আবরাজ বললো,
-“আমি সাব্বির কে কল করে দিয়েছি। ইনফরমেশন পাওয়া যাবে আর্লি।”
ফিজা চিন্তিত মুখে একপাশে দাঁড়িয়ে। বোন তার চুপচাপ স্বভাবের। কথা কম বলে। ভীতু প্রকৃতির মেয়ে। মা বোন কে না বলে আগে সে কোথাও যেতো না। আর সেখানে আজ এতো ভোরে মেয়ে টা নিজের স্বামীর ঘর থেকে না বলে কোথাও চলে গেলো? ব্যাপার টা তাকে ভাবাচ্ছে। ঠিক তখনই আব্রাহাম নিচে হাঁটু ভেঙে বসে পরলো। দুই হাতে মুখ চেপে ধরে বলে উঠলো,
-“ও চলে গেছে ভাইয়া। আর আসবে না। ঠকিয়েছি আমি ওকে, কিন্তু ভালোবাসি আমি। প্লিজ ওকে এনে দাও। প্লিজ আর ওকে জোর করবো না কোনো কিছু নিয়ে। প্লিজ আমার শুধু ওকে চাই।”
বলতে বলতে বিলাপ করতে লাগলো আব্রাহাম। আবরাজের হাত একটু জড়িয়ে ধরে কাঁদছে সে। সবাই নির্বিকার। নারীর অভিমান ভয়ংকর হয়। যতক্ষণ তাকে সেই অভিমান থেকে দূরে রাখতে পারবে ঠিক ততক্ষণ। তারউপর শান্ত সহজসরল মানুষ গুলো হয় একরোখা। তারা হুটহাট কোনো ডিসিশন নিবে না সহজে রাগবে না, কাঁদবে না, অভিমান করবে না। যখনই এগুলো করবে তখন বুঝে নিতে হবে সে অল্পতে কিছু করে নি। তার ওপর গভীর প্রভাব পরেছে বিধায় সে এমন করেছে।
সময় কত দ্রুতই না চলে। আমরা এটার জন্য অপেক্ষা তো করি তবে এটা আমাদের জন্য অপেক্ষা করে না। তেমনই অপেক্ষা করে বসে নেই এটা। এটার কাটা চলছে। টিকটিক করতে করতে ন্যানো সেকেন্ড, ন্যানো সেকেন্ড থেকে সেকেন্ড, সেকেন্ড থেকে মিনিট, মিনিট থেকে ঘন্টা, ঘন্টা থেকে দিন, দিন থেকে সপ্তাহ, সপ্তাহ পেরিয়ে মাস, মাস পেরিয়ে বছর, চলতেই থাকে এভাবে। এরমধ্যে কত কী হয়। কত কী বদলায়। শুধু বদলায় না সময়। মানুষ বদলায় মানুষের সময় বদলায়। শুধু স্মৃতি বদলায় না। প্রিয় মানুষের স্মৃতি যা কখনোই বদলানোর নয়। তবুও আমাদের জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলতে হয়। দৈনন্দিন জীবন আসছে যাচ্ছে আবার আসছে।
-“আব্রাহাম?”
আচমকাই নিজের নাম শুনে একটু চমকে উঠলো আব্রাহাম। হাত থেকে ছিটকে কলম টা ডেস্কের ওপর পড়লো। আবরাজের কোলে একটা বাচ্চা ছেলে। বয়স কত হবে? এই তো বছর হবে না। গোল গোল বড়ো বড়ো আঁখি পল্লব দিয়ে সে ড্যাবড্যাব করে দেখছে আব্রাহাম নামক পুরুষ কে। আব্রাহামের মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো। হাত বাড়িয়ে দিতে সে ঝাঁপিয়ে কোলে পড়লো। আব্রাহাম আদর করলো। এরপর বললো,
-“আমার কাছে থাক এখন। তুমি যাও ভাইয়া।”
আবরাজ ওর হাতে একটা ঔষধের শিশি দিয়ে বললো,
-“তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। আর শোন আজ ডক্টর আঙ্কেলের সাথে দেখা কর।”
আব্রাহাম শিশি টা হাত নিয়ে পকেটে রাখলো। মাথা নাড়িয়ে বললো,
-“খেয়ে নেবো আমি। দেখাও করবো। তুমি যাও।”
আবরাজ দীর্ঘ শ্বাস ফেললো গোপনে। এরপর বেরিয়ে গেলো। ফিজা কাঁচের দেয়ালের ওপাশ থেকে দাঁড়িয়ে দেখলো সব টা। সুদর্শন পুরুষ আব্রাহাম। মুখে চাপদাড়ি। সর্বদা পরিপাটি। তবুও যেনো আগের মতো উজ্জ্বল নেই মানুষ টা। কেমন মলিন মানুষ টার চেহারা।
আজ আড়াই বছর হয় মেহরিন নেই। এই আড়াই বছরে আব্রাহাম এমন দিন নেই নিজের এই পরিস্থিতির কথা ভেবে ভেবে ডিপ্রেশড হয়ে হসপিটাল ভর্তি হয় নি। মানসিক যন্ত্রণা ঠিক কতটা হয়ে থাকে এটা সবাই কমবেশি অনুভব করতে পারে। হয়তো এটা মরণব্যাধি নয়। তবে ভেতর থেকে একটা মানুষের আত্মা ঠিকই মারা যায়। ফিজার চোখের কোলে জমে থাকা জল মুছে নেয় সে সাবধানে। এখানে তার-ও কিছু করার নেই। হয়তো নিয়তিতে এমন লেখা ছিলো। যখন ওর নিজের ও একটা সময় মনে হতো আবরাজ কে ছাড়াই হয়তো এই দোটানা জীবনের সমস্যা সমাধান হবে। তখনই সে সব কিছু খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। যা তার সামনে আবরাজ নামক পুরুষ টার খবরদারিতে প্রেজেন্ট করা হতো সে তার থেকে-ও বেশি নিজে খুঁটিয়ে দেখতো। আবরাজের খারাপ হওয়ার কারণ থেকে শুরু করে তৃণা কে মারার রিজন পর্যন্ত সে জেনেছে। তবেই না ভেঙে যাওয়া মন আবারও জুড়েছে এই পুরুষের প্রতি। কিন্তু মেহরিন? মেয়ে টা যে বড্ড বোকা। ও যে আব্রাহামের স্বার্থপরতা ছাপিয়ে ভালোবাসা টা দেখতে পায় নি৷ একটু খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করে নি। এতে কি হলো? সবটাই ধূলিসাৎ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
আব্রাহাম ছেলে বেবি টাকে নিজের সর্বোচ্চ টা দিয়ে আদর করে যাচ্ছে। কেননা এই ছেলে বাচ্চা টার চেহারা ঠিক মেহরিনের মতো। নাদুস-নুদুস মুখখানা আব্রাহাম কে বারবার নিজের প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনীর স্মরণ করিয়ে দেয়। সে উপলব্ধি করে তার মেহরিন তার সাথেই আছে। আদৌও আছে তো সে? কোথাও? কিন্তু কোথায়? বেঁচে আছে? কে জানে! আব্রাহাম বাচ্চা টাকে জড়িয়ে ধরে বিড়বিড় করে বলে,
-“তুমি এই দুনিয়ায় আমার না হও, পরকালে তুমি আমার হবেই।”
-“আমি যেতে পারবো তো ভাইয়া। প্লিজ ভাবি তোমরা বাড়ি যাও।”
আবরাজ ফিজা কেউ কথা শুনে না। ফিজা ফারাজ কে নিয়ে, আবরাজ পেছনের সিটে বসে গেলো। আব্রাহাম শেষমেশ না পেরে গাড়ি স্টার্ট করলো। হসপিটালের সামনে গাড়ি রেখে ওরা ডক্টর চেম্বারে গেলো। ডক্টর চেম্বারে আছেন, বৃষ্টি চারদিকে। এরমধ্যে আবরাজের ফোন টা বাজতে লাগলো। আবরাজ ফোন রিসিভ করে কানে তুলে কিছু সময় চুপ থেকে বলে উঠলো,
-“ইডিয়েট। ননসেন্স। আমরা হসপিটাল আছি। তুমি আগে জানাও নি কেনো আমাকে? জাস্ট শাট আপ।”
ধমকে-ধমকে আবরাজ কল কেটে দিলো। এরপর আব্রাহাম কে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“ফোন কই তোর?”
আব্রাহাম প্রথম দিকে ভাইয়ের কথায় কি উত্তর দিবে বুঝতে পারে না। বললো,
-“ওই ফারাজ কে দিয়েছিলাম, হয়তো কেবিনে।”
-“গাধা।”
এরপর একজন নার্স কে ডাকলো। ফিজা কিছু বুঝতে পারছে না। আবরাজ নার্স কে একটা কেবিন নম্বর জিজ্ঞেস করে সবাই কে নিয়ে সেদিকে গেলো। একটা ওটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে মোহিতা বেগম সাব্বির। আর একটা ডক্টরের সাথে কথা বলছে একটা মেয়ে। পেছন থেকে দেখে আব্রাহামের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো৷ বুকের বাঁ পাশে তীব্র ব্যাথায় মাথায় অসহ্য যন্ত্রণায় আব্রাহাম দুই হাতে মাথা চেপে ধরে নিজে বসে পড়লো। ফিজা আবরাজ দু’জনেই হতভম্ব। সাব্বির দৌড়ে আসে। ডক্টর ডাকতে থাকে আবরাজ। স্ট্রেচার নিয়ে আসে ওয়ার্ডবয়। এরপর কেবিনে নেওয়া হয়। কেবিনে নেওয়ার আগে আব্রাহাম ঝাপসা খুব পরিচিত প্রিয় কাঙ্খিত সেই রমণী কে দেখতে পেলো। নিজের ভ্রম না-কি বাস্তব ঠিকঠাক ঠাহর করতে পারলো না।
একটা দুই বছরের বাচ্চা। মুখে অক্সিজেন মাস্ক। বেডে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে সে। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে সবাই। মিলন খান, ইলা বেগম, মোহিতা বেগম, ফিজা আবরাজ সাথে মেহরিন। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বেডে শুয়ে থাকা বাচ্চা টার দিকে। ফিজার রাগ হচ্ছে। তবে শ্বশুর শাশুড়ী আছে বিধায় সে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম কে নিয়ে এরমধ্যে সাব্বির কেবিনে এলো। ইনজেকশন দিয়ে তবে আব্রাহাম কে ঠিক করা হয়েছে। মেহরিন এবার বললো,
-“ওর নাম আরহা খান। আমি যেদিন খান বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমার ফ্রেন্ড নিতুর কাছে বগুড়া চলে যাই সেদিনই চেক-আপ করে জানতে পারি ওর কথা। সেদিন ফিরে আসার জন্য মন টা বড্ড ছটফট করছিলো।”
-“তাহলে কেনো আসো নি? জানো কত খুঁজেছি তোমায়?”
মোহিতা বেগম ধমক দিয়ে বললো। মেহরিন আজ কাঁদছে না। কথাও বলছে একদম স্পষ্ট। আব্রাহাম এক পাশে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে। মেহরিন একবার চাইলো সেদিকে। পরপরই আবার বলে উঠলো,
-“যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া যায় আম্মু? যদি এমন হতো তাহলে তুমি কেনো আমাদের ছেড়ে চলে যাও নি? শুধু দায়িত্বের জন্য? না-কি ভালোবাসা ছিলো বলে? ভালোবেসে ভালোবাসায় থেকে গিয়েছো। আমি কেনো থাকতাম? শুধু অন্যের স্বার্থ পূরণে? জানো আম্মু আমি না অনেক বোকা। তোমাদের ভালোবাসায় আমি বোকাই রয়ে গেলাম।”
পরিবেশ টা কেমন স্তব্ধ হয়ে গেলো। মেহরিন কোনো দিন এমন করে কথা বলে নি। মেয়ে টা সব সময় তো চুপচাপ আর স্বল্পভাষী। অথচ আজ? এক একটা কথা যেনো সবার হৃদয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দাগ কেটে গেলো।
পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। সুখ দুঃখ। সব মিলিয়ে। জন্মের পর এই প্রথম আরহা নিজের পরিবার কাছে পেলো। অতিরিক্ত জ্বর থেকে এই রাজধানীতে নিয়ে এসছিলো মেহরিন ওকে। চলে যাওয়ার এতো বছরে সে একটি বারও সে এই শহরে আসে নি। কিন্তু মেয়ের জন্য এবার আসতে হয়েছে। সে জানতো, এই শহরে এলে ঠিকই আব্রাহাম নামক পুরুষ টা তাকে খুঁজে নিবে। আর হলো ও তাই। কিন্তু ফিরে এসে এমন কিছু দেখবে সে কল্পনা ও হয়তো করে নি। তাকে মানুষ টা নিজের স্বার্থের জন্য বিয়ে করে ছিলো। যদি তাই হয় তবে আজ কেনো মানুষ টার এমন দশা? তবে কি আব্রাহাম নামক পুরুষ নিজের অনুভূতি বুঝতে ভুল করেছে? কে জানে। আরহার জ্বর এখন ভালো হয়েছে কিছু টা। সে ফারাজের সাথে বেশ বন্ধু পাতিয়েছ। সারাক্ষণ সেখানেই থাকে। এই-যে রাত-বিরেতে সেখানে ঘুমতে চলে গিয়েছে। মেহরিন বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছে। আব্রাহাম নেই। ওয়াশ রুমে আছে। বেরিয়ে এসে আব্রাহাম লাইট অফ করে বিছানায় এলো। মেহরিনের সাথে তার টুকটাক কথা হয়েছে এই কয়দিনে। তবে জড়তা যেনো কাটছে না। কিংবা সে এখনো ঘোরে আছে। শোয়ার বেশ অনেক্ক্ষণ পর আব্রাহাম বলে উঠলো,
-“মেহুরানী? একটু জড়িয়ে ধরি?”
কণ্ঠ টা তখন ও কাঁপছে। মেহরিনের অন্ধকারে কোনো জবাব দিলো না। আব্রাহাম ভাবলো ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু অনেক্ক্ষণ পর মেহরিন বলে উঠলো,
-“অপেক্ষা করছেন কেনো? আগে তো এভাবে অনুমতি নিতেন না।”
কথার অর্থ বুঝতে সময় লাগলো না আব্রাহামের। সে আচমকাই মেহরিন কে খুব শক্ত করে আলিঙ্গন করলো৷ এর আগে এতো দৃঢ় গভীর আলিঙ্গন আব্রাহাম করেছে কি-না মেহরিনের মনে নেই। সে মনে করতে চাইলো না। আব্রাহাম এরমধ্যে বলে উঠলো,
-“এভাবে বলো না। আমি তোমাকে আগেও ভালোবাসতাম। শুধু বুঝতে পারিনি। তুমি যাওয়ার পর-ই সেটা প্রতি সেকেন্ড সেকেন্ড উপলব্ধি করেছি আমি।”
মেহরিন চুপ। আব্রাহাম জড়িয়ে ধরে আছে তখন ও। তবে সময় গড়াতে নিজের হাত দু’টো আব্রাহামের পিঠ আঁকড়ে ধরলো। আব্রাহাম একটু কেঁপে উঠলো কী? হ্যাঁ। নিজের প্রেয়সী কে পাওয়ার আনন্দে সে কাঁদছে। মেহরিনের ঠিক সেই মূহুর্তে মনে হলো সে সত্যি ভাগ্যবতী। আব্রাহাম সেদিন মিথ্যা কথা বলে নি। শী ইজ এ রিয়েলি লাকি গার্ল।
ফারাজ আরহা দু’জনেই ঘুমিয়েছে। ওদের একপাশে ফিজা ঘুমিয়ে, আবরাজ বসে বসে দেখছে ওদের। দৃষ্টিতে তার প্রশান্তি। এই মেয়ে টাকে সে কত অবহেলায় না করে ফেলে গিয়েছিল। সে কখনোই কল্পনা করে নি তার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষ টা এই রমণী হয়ে উঠবো। এটা যেমন অকল্পনীয় তেমন চমৎকার। জীবনে সবরকম পরিস্থিতি আসা প্রয়োজন। দুঃখ না এলে যেমন সুখের মূল্য বোঝা মুশকিল তেমনই মেনে না নিলে অশান্তি মেনে নিলেই শান্তি। ফিজা না চাইলে হয়তো কখনো তাদের পথ চলা এতো দীর্ঘ হতো না। সে মনেপ্রাণে চাইলো এই পথ চলা আমৃত্যু হোক। বেড এবং রুম তার দুইটাই বেশ বড়ো। সে-ও এক পাশে শুয়ে পড়লো। বউ কে জড়িয়ে ধরে বললো,
সুগন্ধি ফুল পর্ব ৫৫
-“আবরাজ খানের সুগন্ধি ফুল, এভাবেই সুগন্ধি দিয়ে আবরাজ খানের লাইফ সুগন্ধিতে ভরিয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ, মিসেস আবরাজ।”
ফিজা পিটপিট করে চাইলো। ফারাজ ভূপৃষ্ঠ হওয়ার পর থেকে ই সে অসুস্থ। এখনো সেই অসুস্থতা দূর হয় নি। তাই ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ তবে মুখে রাজ্যের খুশির ছোঁয়া। পূর্ণতায় বুক ভরে সে নিঃশ্বাস টেনে নিলো। সেই সঙ্গে নাসারন্ধ্র পৌঁছাল কড়া পারফিউমের মিষ্টি এক গন্ধ। যেই সুগন্ধি পেয়ে সে চোখ বন্ধ রেখেও বলে দিতে পারে নিজের প্রিয় মানুষ টার উপস্থিতি।