ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৫৭

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৫৭
প্রিয়স্মিতা তেহজীব রাই

সন্ধ্যা ৭ টা
শিখদার বাড়ির ড্রয়িং রুমে বিশাল মেহমানদারির তোড়জোর চলছে, গৃহিণীরা সকলে যে যার মত আয়োজনে কাজে ব্যস্ত। কারণ, একটু পরেই বাড়ির পুরুষ সদস্যরা নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে চলে আসবে, তাই তার আগেই তাড়াহুড়ো করে সকল কার্যক্রম সম্পূর্ন করার প্রাণপণ প্রচেষ্টা । তবে সকলে কোমর বেঁধে কাজে লেগে পড়লেও ইনায়া ব্যতিক্রম। ৮ মাসের উঁচু পেট নিয়ে চলতে ফিরতেই তাকে হিমশিম খেতে হয় , দুই পা হাঁটলেই নিঃশ্বাসে টান পড়ে, বুকে হাঁফ ধরে যায়। একটু নড়াচড়া করতে গেলেই পেটের ক্ষুদে ছানাটা লাথি মেরে নিজের উপস্থিতির জানান দেয়, আর সঙ্গে সঙ্গেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ওঠে ইনায়া।

তার দুই পায়ে পানি জমে ফুলে উঠেছে—
মিষ্টি চেহারাখানার জেল্লা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ—একটা অদ্ভুত মাতৃত্বের দীপ্তিময় আভা যেন ছড়িয়ে মেয়েটার রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
ফোল ফোল রসগোল্লার মত গাল দুটো দেখলেই মন চায় ঠুস ঠাস চুমুতে ভরিয়ে দিতে—
একটানা, বারবার।
আর এই অত্যাচারটাই তাকে দিনভর সহ্য করতে হয়। ইনায়া চুপচাপ গাল ফুলিয়ে মুখ ভার করে বসে আছে বিছানার উপর, চোখ দুটো পানি-তে টইটুম্বুর। বোধহয় মন খারাপ, কিন্তু কেন—সে নিজেই এই ‘কেন’-র উত্তর জানে না। সে শুধু জানে তার কান্না পাচ্ছে, কী একটা অদ্ভুত রুগ! কখন যে হাসি পায় আর কখন যে কান্না পায়, তা বেচারি নিজেই বুঝতে পারে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— “পাপা, আমাল বোনু কবে আসবে?”
পৃথম-এর কোলে চেপে আদুরে কণ্ঠে প্রশ্ন ছুড়ে দিল অভিরাজ।
পৃথম মৃদু হেসে ছেলের গালে টুপ করে একটা চুমু খেলো, অতঃপর সিরিয়াস মুখে ছেলেকে কিছু মনে করিয়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
— “উফ্‌ পাপা! তোমাকে না বলেছি সারাদিন মাম্মার পাশে পাশে থাকবে আর হামী খাবে। মাম্মাকে যত বেশি হামী খাবে, তোমার বনু ততো তারাতারি চলে আসবে।”
অভিরাজ ও বাবার কথায় মুখটা বেশ গম্ভীর করে ফেলল, বাবার দিকে তাকিয়ে ভাবুক কণ্ঠে বললো,
— “পাপা, আমি তো ছোত মানুষ, একা হামী খেলে তো অনেক দেলি হয়ে যাবে।”
পৃথম ও ছেলের কথায় বেশ মনোযোগী হওয়ার ভান ধরলো। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে চিন্তিত কন্ঠে বললো,
— “হুম্‌… এটা তো বেশ চিন্তার বিষয়।”
অভিরাজ কিছুক্ষণ গালে আঙুল দিয়ে ভেবে বললো,

— “আইদিয়া!”
পৃথম মিছে কৌতূহল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল,
— “কি আইডিয়া পাপা?”
অভিরাজ বাবার গলা জড়িয়ে ধরে খিলখিলিয়ে বললো,
— “চলো পাপা, আমলা দুজন হামী খাই! তাহলে আমাল বোনু কালই চলে আসবে।”
ছেলের কথায় হেসে ফেললো পৃথম। তবে হাসিটুকু গিলে নিয়ে মুখ পুনরায় সিরিয়াস করে বললো,
— “আহহ, এটা অনেক ভালো আইডিয়া পাপা। চলো চলো।”

বলে বাপ বেটা নিজেদের ঘরে প্রবেশ করল। ইনায়াকে একা একা বিছানার উপর গোমড়া মুখে বসে থাকতে দেখে দুজন চট করে একে অপরের মুখের দিকে তাকালো, চোখের ইশারায় কিছু একটা বোঝাপড়া করে নিলো। ঠোঁটে একটা বিশাল হাসি ঝুলিয়ে নিজেদের উক্ত কর্ম সম্পাদন করতে উদ্যত হলো। ইনায়া বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ তীব্র লাথির আঘাতে কুঁকিয়ে উঠলো। মুখ “আঃ” বের করার আগেই বুঝতে পারলো, দু’জন আবার তাকে জ্বালাতে হাজির হয়ে গেছে। ইনায়া কাঁদো কাঁদো মুখ ঘুরিয়ে নিজের দুই পাশে তাকালো। পৃথম আর অভিরাজ খুব সিরিয়াস মুখে “দায়িত্বপূর্ণ” কাজ সম্পূর্ণ করতে নেমে পড়েছে, লালা দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে ইনায়ার দুই গাল—বিশেষ করে অভিরাজ।
ইনায়া অসহায় চোখে স্বামী আর ছেলেকে দেখে ‘ভ্যা’ করে কেঁদে উঠলো।
তাতে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না বাপ-ছেলের মধ্যে। তারা সিরিয়াস মুডে নিজেদের মিশন অব্যাহত রাখলো।
ইনায়া বেশি নড়াচড়া করাতে অভিরাজ তার ছোট ছোট কোমল হস্তে ইনায়ার বাঁ হাত আঁকড়ে ধরল, অস্ফুট কণ্ঠে বললো,

— “উফ্‌ মাম্মা, এত নলাচলা কলচো কেনু! দেখচ না, আমলা হামী কাচ্ছি।”
ছেলের কণ্ঠে কান্না থেমে গেল ইনায়ার। ভ্রু কুঁচকে ছেলে আর ছেলের বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
— “আমি কি তোমাদের হামী খেতে বলেছি? বাড়িতে ভাত নাই, যাও ভাত খাও গিয়ে দুজন…!”
এবার পৃথম ইনায়ার অন্য হাত ধরে তার ফোলে ফোল গালে ঘাপুস ঘুপুস করে এক শ্বাসে খান দশেক চুমু খেয়ে বললো,
— “এভাবে নড়াচড়া করে আমাদের ডিস্টার্ব কেন করছো রসগোল্লা? আমরা তোমার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি? দেখছো না, আমরা একটা সিরিয়াস কাজ করছি!”
অভিরাজ ও বাবার তালে তাল মিলিয়ে বললো,
— “হ্যাঁ পাপা, ঠিক বলেচ! আমাল কাল চকালেই বোনু চাই। দলকাল হলে চালা লাত হামি কাবো।”
পৃথম ও সায় দিয়ে বললো,

— “একদম পাপা, কোন থামা থামি নেই। তোমার মাম্মা আমাদের ভালোবাসে না, বুঝেছো? তাই তো এমন কই, মাছের মতো লাফাচ্ছে।”
অভিরাজ আবার কিছু বলার আগেই ইনায়া ঝাঁঝিয়ে উঠলো,
— “ছি ছি ছি ছি ছি ছি ছি ছি! এই কথা বলতে আপনার লজ্জা করলো না? নির্লজ্জ, বেহায়া, বেশরম পুরুষ মানুষ! আপনাকে আমি ভালোবাসি না তাই না? যদি ভালোই না বাসতাম, তাহলে আপনার হাতেরটা আর পেটেরটা কি আকাশ থেকে টপকেছে?” আবার আসিয়েন আমার কাছে, তখন বোঝাবো মজা বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো ইনায়া মৃদু অভিমানে, তার নাকের পাঠা ফুলে উঠেছে।
বউকে রেগে যেতে দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো পৃথম। কানের লতিতে ঠোঁট ছুইয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

— “তোমাকে রেগে গেলে আরো বেশি ইয়াম্মি লাগে রসগোল্লা। নিজেকে ধরে রাখতে পারি না, তাই আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না জান। আমি যদি একবার কন্ট্রোল হারাই, তবে ভুলে যাব তুমার পেটে আমার বাবু আছে। তাই আমি আলা ভোলা মানুষ, আমাকে ধৈর্য ধরে থাকতে দাও। আর আমার হাতেরটা, তোমার পেটের টা—
— “আকাশ থেকে কেন টপকাতে যাবে? এগুলো আমার ভালোবাসার চিহ্ন—যা এখন লালিত হচ্ছে তোমার মাঝে। তবে, একদম চিন্তা করোনা রসগোল্লা। একবার পেটেরটা হাতে আসতে দাও, তারপর আরেকটা পেটে ঢুকিয়ে দেবো! কেমন? দ্য গ্রেট পৃথম শিখদার এর ভালোবাসা বলে কথা। একটু ভারী তো হবেই, মিসেস পৃথম শিখদার।”
ইনায়া পরাজিত সৈনিকের ন্যায় অসহায় চোখে তাকালো স্বামীর দিকে। পৃথম চোখ টিপ দিয়ে বললো,
— “এখন আমাদের ডিস্টার্ব কোরো না, চুপচাপ লক্ষী মেয়ের মতো বসে থাকো।”
বলে অভিরাজের উদ্দেশ্যে কমান্ড দিলো,

— “পাপা, মিশন টু স্টার্টেড!”
বলে বাপ-ছেলে এবার গাল ছেড়ে উঁচু পেটে চুমু খেতে লাগলো।
বাপ-ছেলের খুংশুটিময় পাগলামি দেখে তৃপ্ত হলো ইনায়ার অক্ষিজুগল।
সে স্বামী আর ছেলের মাথায় হাত রেখে, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বললো,
— “আপনার অনেক অনেক মেহেরবানি মাবুদ, আপনাকে শুকরিয়া জানানোর কোনো ভাষাই আমার জানা নেই।
শুধু এটুকুই প্রার্থনা—আজ আমাদের যেভাবে রেখেছেন, আজীবন আমাদের অভাবে থাকার তৌফিক দান করুন।
আমি আর কিছু চাই না মাবুদ, শুধু আমার স্বামী-সন্তানদের সুস্থ রাখবেন।”
শিখদার বাড়ির ড্রয়িং রুম চেনা অচেনা মানুষে ভিড়ে গমগম করছে চারপাশ।
সেন্টার টেবিলের উপর বিভিন্ন আইটেমের ফল, মিষ্টি, জুস, কোল্ড ড্রিংক্স, চা-নাস্তার ট্রে সাজানো।
সামনের চার সিটার সোফায় গম্ভীর মুখে বসে আছেন সাদমান শিখদার, খালিদ শিখদার, সাজিদ শিখদার ও সোহেব শিকদার।

তার পাশের সোফায় বসেছে পৃথম, প্রেম, রাজ, অরণ্য, সমুদ্র।
বাড়ির মহিলারাও উপস্থিত।
সাদমান শিখদারের সামনের সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে সদাফ তার পাশে তার বাবা, মা ও একমাত্র বোন সারিকা।
সাদমান শিখদার সবার সাথে হেসে হেসে কুশল বিনিময় করছেন।
উনার কোলে, উনার একমাত্র কলিজার টুকরো নাতনি অবনী।
সকলে নিজেদের মধ্যে টুকটাক কথা বলাবলি করলেও, সদাফের কারো দিকে মনোযোগ নেই।
সে কেবল অবনীর দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
অতিরিক্ত রকমের মিষ্টি এক বাচ্চা।
সদাফ জানে বাচ্চাটা কার।

তবে এই বাচ্চার বাবা সে নয়।
অন্য এক পুরুষ। এটা ভাবতেই সদাফের মনে হচ্ছে কেউ তার অন্তরটা পুড়িয়ে দিচ্ছে।
কেন ওর বাবা অন্য কেউ হল?
সে কি হতে পারতো না?
সে কি পরিকে কম ভালোবেসেছিল?
বাচ্চা যখনই আনন্দে খিল খিলিয়ে হেসে উঠছে, তখনই আগুন লেগে যাচ্ছে সদাফের কলিজায়।
আফসোসে মরে যেতে মন চাচ্ছে।
কেন সে তখন চলে গেলো?
কেন আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করলো না?
কেন এত ভালোবাসার পরও পরি অন্য কারো হয়ে গেলো?
এত আফসোস নিয়ে কি জীবনে বাঁচতে পারবে সে?
তার ভালোবাসাটা তো মিথ্যা নয়।
আজ চার বছর পরি অন্য কারো।

কিন্তু সে কী একদিনের জন্য ভুলতে পেরেছে?
সদাফের ভাবনার মাঝেই প্রেরণাকে সাজিয়ে নিয়ে এলো ঊষা ও থিরা।
লাল রঙা জামদানিতে প্রেরণাকে ভীষণ রূপবতী লাগছে।
প্রেরণার সুন্দর্য দেখে সদাফের আম্মু, মিসেস আনিকা সাখাওয়াত মুগ্ধ হলেন।
মৃদু হেসে বললেন,
— “বাহ! মাশাআল্লাহ! আপনার মেয়ে তো অনেক সুন্দর। ভাই সাহেব, এদিকে আসো আম্মু।”
বলে প্রেরণাকে নিজের কাছে ডাকলেন তিনি।
প্রেরণা লজ্জা মিশ্রিত মুখটা নুইয়ে নিলো, ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো উনার কাছে।
একটুখানি ঝুঁকে সালাম দিতে নিলেই তাঁকে আটকে দিলেন মিসেস আনিকা সাখাওয়াত।
নিজের পাশে বসিয়ে, থুতনিতে হাত রাখলেন, প্রেরণাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বললেন,

— “মাশাআল্লাহ! খুব সুন্দর। তা, পড়াশোনা শেষ করেছো আম্মু?”
প্রেরণা মাথা নিচু রেখেই লজ্জিত কণ্ঠে প্রত্যুত্তর করলো,
— “জি।”
আনিকা সাখাওয়াত প্রেরণার সাথে আরো টুকটাক কিছু কথা বলে, চোখ ঘুরিয়ে তাকালেন উনার স্বামী মিস্টার সাদাত সাখাওয়াতের দিকে।
চোখের ইশারায় প্রশ্ন করলেন—
“মেয়েটা কেমন?”
সাদাত সাখাওয়াত স্ত্রীর মৌন প্রশ্নে প্রশস্ত হাসলেন,
সাদমান শিখদারের দিকে তাকিয়ে আন্তরিক কণ্ঠে বললেন,

— “মেয়ে আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছে ভাই সাহেব।
এখন ছেলে পছন্দ হয়েছে কিনা জানান, তাকে কোনো প্রশ্ন থাকলে করুন।
আমি যত তারাতারি সম্ভব আমার ঘরের লক্ষ্মীকে ঘরে তুলতে চাই।”
সাদমান শিখদার সদাফের দিকে তাকিয়ে সন্তুষ্ট কণ্ঠে বললেন,
— “সদাফকে আমি অনেক বছর আগেই মেয়ের জন্য পছন্দ করে রেখেছি।
আমি সব সময়ই চাইতাম, আমার কোনো এক মেয়ের জন্য যেন ওকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে পাই।
তাই ও আমার পূর্বনির্বাচিত।
তাছাড়া, ওর মতো যোগ্যতা সম্পন্ন, বুদ্ধিমান ছেলেকে অপছন্দের প্রশ্নই আসে না।
কিন্তু ছেলে-মেয়ে একে অপরকে পছন্দ করে কিনা, তাও তো জানতে হবে।”
সাদমান শিখদারের কথায় বেশ প্রফুল্ল হলেন মি. অ্যান্ড মিসেস সাখাওয়াত।
আনিকা সাখাওয়াত স্নিগ্ধ হেসে বললেন,

— “আলহামদুলিল্লাহ, তাহলে তো হলোই।”
তিনিই এবার প্রেরণার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলেন,
— “আমার ঘরের মেয়ে হয়ে যেতে তোমার কোনো আপত্তি আছে, প্রেরণা?”
প্রেরণা আরেকটু লজ্জিত হলো, তার ভীষণ নার্ভাস লাগছে।
সে ইতস্তত চোখ তুলে তাকালো বাবার দিকে।
সাদমান শিখদার মেয়ের চোখের প্রশ্নে ইশারায় সম্মতি দিলেন।
আনিকা সাখাওয়াত পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন,
— “বলো আম্মু, তোমার কি কোনো আপত্তি আছে?
তোমার কি আমার ছেলে পছন্দ নয়?

তুমি একদম নিশ্চিন্ত মনে বলো। কোনো জোর জবরদস্তি নেই।
তোমার পছন্দ না হলেও ঠিক আছে।”
প্রেরণা মাথা নিচু করে, হাত কচলাতে কচলাতে লজ্জিত ভঙ্গিতে বললো,
— “জি আন্টি, আব্বু যা বলবেন, তাই।”
প্রেরণার নম্রতা, ভদ্রতা আবারো মুগ্ধ করলো আনিকা সাখাওয়াতকে।
সাদাত সাখাওয়াত এবার প্রফুল্ল হেসে বললেন,
— “আমি তাহলে দিন-তারিখ ঠিক করে ফেলি ভাই সাহেব? কী বলেন?”
সাদমান শিখদারও হালকা হেসে জবাব দিলেন,
— “যা আপনাদের ভালো মনে হয় ভাই সাহেব।”

সাদাত সাখাওয়াত পুনরায় বললেন,
— “আমরা কিন্তু বেশি দেরি করতে চাচ্ছি না ভাই সাহেব।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের ঘরের লক্ষ্মীকে ঘরে নিয়ে যেতে চাই।
আপনি বলেন তো, ঈদের এক সপ্তাহের মধ্যেই ফরজ কাজটা সেরে ফেলি।”
সাদমান শিখদার কিছুক্ষণ গম্ভীর মুখে বসে থাকলেন।
অতঃপর নিজের ভাইদের দিকে তাকালেন—খালিদ শিখদার, সাজিদ শিখদার ও সোয়েব শিখদার।
চোখের ইশারায় সম্মতি জানালেন।
তিনি এবার বাড়ির ছেলেদের দিকে তাকালেন।
তারাও চোখের ইশারায় সম্মতি জানালো।
বাড়ির গিন্নিরাও সম্মতি জানালেন।
সকলেই মোটামুটি রাজি।
সাদমান শিখদার এবার প্রশস্ত হেসে বললেন,

— “আমাদের কোনো আপত্তি নেই ভাই সাহেব।”
সাদাত সাখাওয়াত সন্তুষ্ট হলেন।
তাদের কথার মাঝখানে আনিকা সাখাওয়াত হঠাৎ করে বলে উঠলেন,
— “তা ভাই সাহেব, সবাইকে দেখছি, কিন্তু আপনার বড় ছেলেকে তো দেখছি না।
সে কোথায়? পাত্রীর বড় ভাই হিসেবে তারও একটা মতামত আছে।
তা ছাড়া, সাদাফের বন্ধু সে।”
প্রণয়ের কথা উঠতেই হইচই মুখর পরিবেশটা যেন হুট করেই শান্ত হয়ে গেল।
সবার চোখে মুখে ভর করলো অদৃশ্য অস্বস্তি।
তবে, তার কিছুই চোখ এড়ালো না বিশিষ্ট জাজ আনিকা সাখাওয়াতের।
সবার এমন অস্বস্তিকর এক্সপ্রেশন দেখে, তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধিদীপ্ত মস্তিষ্ক কিছু একটা আভাস পেলো।
তবে, সেসব নিয়ে বেশি ঘাটালেন না তিনি।
কারণ, প্রত্যেকটা ফ্যামিলিতেই তাদের নিজেদের কিছু পার্সোনাল ম্যাটার থাকে, কিছু ফ্যামিলি হিস্ট্রি থাকে, তা কুটুমদের না জানলেও চলে।
তবে, সাদমান শিখদার কিছুক্ষণ স্থির থেকে শান্ত কন্ঠে জবাব দিলেন,

— “আমার বড় ছেলে বর্তমানে ব্যবসার কাজে বাংলাদেশের বাইরে আছে, তাই ওর কোনো আপত্তি থাকবে না আশা করি।”
আনিকা সাখাওয়াত কেবল হাসলেন, বেশি কিছু বললেন না।
সাদাত সাখাওয়াত পুনরায় বললেন,
— “তাহলে সামনের মাসের ১৫ তারিখই ঠিক হোক ভাই সাহেব, যদি আপনাদের কোনো আপত্তি না থাকে।”
সাদমান শিখদারও কিছুক্ষণ ভেবে সম্মতি জানিয়ে বললেন,
— “আমাদের কোনো আপত্তি নেই ভাই সাহেব, ওইদিনই হোক।”
সকলেই খুশি হলেন।
অনুসরী বেগম সবার হাতে হাতে মিষ্টির প্লেট তুলে দিয়ে বললেন,

— “শুভ কাজে মিষ্টি মুখ করতে হয়।”
সকলেই হাসিমুখে মিষ্টি মুখ করতে লাগলেন।
সকলকে এত আনন্দিত হতে দেখে কৌতূহলী হলো অবনি।
সাদমান শিখদারের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকালো।
সাদমান শিখদারের পাঞ্জাবি মুঠো করে ধরে অস্ফুট কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— “সবাই এত হাসছে কেনু, নানাভাই?”
সাদমান শিখদার মায়াভরা নজরে তাকালেন নাতনির দিকে।
আলতো করে অবনির তুলতুলে গাল টেনে দিয়ে বললেন,
— “তোমার বড়ো আণ্টির বিয়ে হবে, নানাভাই। তাই সবাই এত খুশি।”
‘বিয়ে’ শব্দটা শুনে ছোট্ট অবনি আরো কৌতূহলী হলো।
আগ্রহী কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,

— “বিয়ে কী, নানাভাই?”
সাদমান শিখদার এবার বড় করে হাসলেন,
নাতনিকে বুকে জড়িয়ে বুঝানোর ভঙ্গিতে বললেন,
— “বিয়ে মানে, দুজন মানুষ একে অপরের বন্ধু হয়ে আজীবন পাশে থাকা।”
নানাভাইয়ের কথার সারমর্ম অবনির ছোট্ট মস্তিষ্কে কতটুকু পৌঁছালো, বোঝা গেল না।
তবে কিছু বুঝে ফেলার ভঙ্গিতে চট করে বলে উঠলো,
— “আমি আল, তুমি যেমন।”
ওর আধো আধো কথার যুক্তি শুনে হেসে উঠলেন উপস্থিত প্রত্যেকে।
মিসেস সাখাওয়াত অবনির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলেন।
আদুরে ভঙ্গিতে বললেন,

— “তোমার নাম কী, বাবু?”
অবনি চোখ পিটপিট করে তাকালো অচেনা ভদ্রমহিলার দিকে।
সাদমান শিখদারের বুকে আরো একটু গুটিয়ে গিয়ে অস্পষ্ট কণ্ঠে বললো,
— “তাসনুভা তাসরিন অবনীতা।”
মিসেস সাখাওয়াত ওর গাল টেনে দিয়ে বললেন,
— “খুব মিষ্টি নাম, বাবু—একদম তোমার মতো।
তা, ও কার মেয়ে ভাইজান?”
সাদমান শিখদার অবনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
— “ও আমার কলিজার টুকরো, আমার নাতনি।”
তবে, কার সন্তান—বললেন না সাদমান শিখদার।
বিষয়টা বেশ সুকৌশলে এড়িয়ে গেলেন।
মিসেস সাখাওয়াত আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না।
তাদের বাকি বুঝাপড়ার কথা-বার্তা এগোতে থাকলো আপন গতিতে।

তবে সমুদ্র অনেকক্ষণ থেকে একটা বিষয় বেশ লক্ষ্য করছে। সে কয়েক সেকেন্ড বিষয়টা আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হল, এক ভ্রু তুকে, সন্দিহান নজরে একবার সামনের দিকে তাকালো তো, আরেকবার ঘাড় ঘুরিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকালো। অরণ্যের আশেপাশের দুনিয়াতে যেন কোনো ইন্টারেস্টই নেই, সে নিজের সব ধ্যান-জ্ঞান ফোনের উপর উজাড় করে দিয়ে কার রেসিং গেম খেলছে। ব্ল্যাক ট্রাউজার আর ব্রাউন টি-শার্টে পুরো চকলেট বয় লাগছে, তার চেহারা ও পার্সোনালিটিতে চার্ম বেয়ে বেয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ফরসা গালের তিক্ন বাঁকা হাসিটা যে কোনো তরুণীর হৃদয়েই প্রেমের বাণ মারবে। আর তাই হলো—সদাফ এর বোন সারিকা তখন থেকে চোখ বড় বড় করে নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছে। অরণ্যের দিকে তাকিয়ে আছে বললে ভুল হবে, চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। তবে অরণ্য যে তার তাকানোকে দুই পয়সার ও পাত্তা দিচ্ছে না, তা তার অ্যাটিটিউড দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
সমুদ্র পুরো ব্যাপার আয়ত্ত করে অরণ্যের পাশে ঘেঁষে বসলো, ভাইয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো— — “অরে ব্যাস, এখানে ও চিপ ফেলা হয়ে গেছে।”

সমুদ্রের কথায় অরণ্যের ডার্ক ব্রাউন ঠোঁটে খেলে গেলো এক চমৎকার বাঁকা হাসি। মোবাইল স্ক্রিন থেকে চোখ না সরিয়েই বললো— — “তোর কি মনে হচ্ছে আমি চিপ ফেলেছি? অরণ্য শিকদার এত সস্তা জায়গায় চিপ ফেলে না। এই মাছটা নিজ থেকেই লাফিয়ে এসে আমার ঝুলায় ধরা দিতে চাইছে। এতে আমার কী দোষ?”
সমুদ্র অরণ্যের ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে বললো— — “দেখে মনে হচ্ছে এটা ও পটে গেছে। এটা কেও কি ব্যাকআপ হিসেবে রেখে দিবি?”
অরণ্য ফোন স্ক্রিনে হাত চালাতে চালাতে বললো— — “বেয়ান সাহেব বলে কথা, একটু রসিকতা তো করতেই হবে।”
সমুদ্র হতাশ কণ্ঠে বললো— — “তোর অলরেডি অনেকগুলো গার্লফ্রেন্ড আছে, তাহলে বোনের ননদের দিকে চোখ দেওয়ার কি দরকার?”
এবার থামলো অরণ্য। মাথা উঁচু করে তাকালো সমুদ্রের দিকে। ভ্রু নাচিয়ে ঠান্ডা কন্ঠে বললো— — “আমি নজর দিচ্ছি? সিরিয়াসলি?”

সমুদ্র পুনরায় বললো— — “হ্যাঁ, জানি ‘ওই’ নজর দিচ্ছে। কিন্তু তুই তো পাত্তা না দিলে ও পারিশ? এত গার্লফ্রেন্ড দিয়ে কী করবি তুই? দেখ, আমাদের দাদানরা কেউ এমন নয়।”
অরণ্য পুনরায় বাঁকা হেসে গেমে মনোযোগ দিতে দিতে বললো— — “এই জন্যই দেখ, প্রত্যেকে এক একটা করে বাঁশঝাড়ের মালিক। আমার ভাই বাঁশের তৈরি কিছুই পছন্দ না। আর তাছাড়া—”
— “তাছাড়া কী?”
অরণ্য রহস্যময় হেসে সারিকার চোখে চোখ রাখলো কিছুক্ষণ। অতঃপর চোখ নামিয়ে গুন গুন করে গাইলো— —
“কারো চোখ ভালো, কারো মুখ ভালো,

কারো ফিগারের ইশারা, এই জাওয়ানি চায় ফুল মস্তি, যে ভালো লাগলে তাই ইশারা।”
বলে উঠে চলে গেলো, কিন্তু কিছু না বুঝে হাবলার মতো তাকিয়ে রইলো সমুদ্র। সে এক সেকেন্ড পর সামনে তাকিয়ে দেখলো সবাই আছে, কিন্তু সারিকা হাওয়া।
সে যা বুঝার বুঝে গেল। উঠে যেতে যেতে মনে মনে বললো— — “কয়দিন পর ঠেলা বুঝবে মামনি, তখন প্লেলিস্টে শুধু একটা গানই বাজবে।”
বলে নিজের ফোনে গানটা চালালো সমুদ্র।
ফোন স্পিকারে বেজে উঠলো—
চোখের জলে ভাসিয়ে দিলাম মনের ঠিকানা
খেয়ার স্রোতে চাইলে তুমি অন্য মোহনা
তবু তোমার জন্য মনের দুয়ার খোলা যে রাখবো…
আমি তোমারি থাকবো, শুধু তোমারই থাকবো।
গানটা শুনতে শুনতেই হাসি পেয়ে গেলো সমুদ্রের।
রাত ৯টা

ঊষা প্রেমের আর্ট গ্যালারিতে ক্যানভাসের সামনে দাঁড়িয়ে একটা ক্যালিগ্রাফি আঁকছে খুব মনোযোগ দিয়ে। এখন তারা স্বামী-স্ত্রী, দুজনেই আর্টিস্ট। প্রেম ওকে নিজের হাতে আঁকা শিখিয়েছে। যদিও ওর হাত এখনো প্রেমের মতো এতো পারফেক্ট হয়নি, তবে প্রেমের স্বপ্ন—ঊষা একদিন অনেক নামকরা আর্টিস্ট হবে, আহনাব শিকদার প্রেমের স্ত্রী তার থেকেও বড় আর নামকরা আর্টিস্ট হবে।
ক্যানভাসে হাত চালাতে চালাতেই আচমকাই হাতটা কেঁপে উঠলো ঊষার। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শরীর জুড়ে শিহরণের ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগলো। তার রক্তিম ঠোঁট দুটো দিয়ে অস্ফুটে বলে উঠলো— — “প্রেম…”
ততক্ষণে অনেকখানি সীমা ছাড়িয়ে গেছে প্রেম। ঊষার সর্বাঙ্গে তার অবাধ্য হাত বিচরণ করতে শুরু করেছে। প্রেমের এলোমেলো, পুরুষালী স্পর্শে থর থর করে কেঁপে উঠলো ঊষা। হাত থেকে পেন্সিলটা পড়ে গেলো নিঃশব্দে। সে নিঃশ্বাস নেবার সুযোগটুকুও যেন পেলো না। প্রেম এক ধাক্কায় রঙের কৌটো গুলো সরিয়ে ঊষাকে রঙের টুলের উপর বসিয়ে দিলো। আবেগ-অনুভূতির তোড়ে হারাতে থাকলো গভীরে—

ঊষার মস্তিষ্ক সবটা বোঝার আগেই তার শরীরের কন্ট্রোল নিয়ে নিলো প্রেম। তীব্র মিলনের মৃদু ধ্বনিতে ভরে উঠলো চারপাশ। তাদের অর্ধ-মিলন গভীর মিলনে রূপান্তর নিতে নিলেই দুয়ারে করাঘাতের শব্দ ভেসে এলো। তবে সেসবের তোয়াক্কা করলো না প্রেম। তার মধ্যে প্রেম ও কামের এক মিশ্র আগুন জ্বলছে।
কিন্তু ওপাশের ব্যক্তি ও যেন বেশ অধৈর্য, একটানা দরজা ধাক্কিয়েই যাচ্ছিলো। এক পর্যায়ে নেশা ছুটে গেলো প্রেমের। বিরক্তিতে নাকের পাঁঠা ফুলে উঠলো, কপালে বেশ সূক্ষ্ম কয়েকটি রেখা ভাজের সৃষ্টি হল।
ঊষার অবস্থাও একই—অনেকটাই জলন্ত উনুন থেকে কাট কয়লা বের করে নেওয়ার মতো। হাঁফানোর মতো ওঠা-নামা করছে তার বুক। প্রেম, ঊষার ওড়না ঠিক করে দিয়ে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। আজ দরকার ওপাশের ব্যক্তির—একদিন না হয় তার—একদিন।

ধরাম করে দরজা খোলার শব্দে কেঁপে উঠলো অরণ্য।
প্রেমকে এমন বিদ্ধস্ত অবস্থায় দেখে তৎক্ষণাৎ ভ্রু কুঁচকে ফেলল। বড় ভাইকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত স্ক্যান করে, ঠোঁট কামড়ে হাসলো হালকা লজ্জা পাওয়ার অভিনয় করে কিছু বলতে নিলে—
তপ্ত কণ্ঠে ধমকে উঠলো প্রেম। চিবিয়ে চিবিয়ে বললো— — “আসার আর সময় পেলি না?”
অরণ্য পুনরায় ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে বললো— — “আমি কীভাবে জানবো, বলো? যাই হোক, আমি ডিস্টার্ব করতে আসিনি। বড় আম্মু ছোট ভাবিকে নিচে যেতে বলছেন, এটুকু বলতেই এসেছিলাম। বাই বাই, কন্টিনিউ গাইজ।”
বলে শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেলো অরণ্য।

“বউকে এখন নিচে পাঠাতে হবে”—ভেবেই তিক্ততায় ভরে উঠলো প্রেমের মেজাজ।
ঊষা শরীরের জামা-কাপড় ঠিক করে প্রেমের পাশে এসে দাঁড়ালো। পেটে গুতো মেরে বললো— — “দিন দিন আপনার পাগলামি বাড়ছে প্রেম। বউ-এর প্রতি এত প্রেম থাকলে লোকে বউ পাগল বলবে।”
বউ-এর কথায় প্রেমের বিরক্তি উড়ে গেলো। সে ঊষার কোমর জড়িয়ে ধরে হেঁচকা টানে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো। ঠোঁটে ঠোঁট আলতো স্পর্শ করে বললো— — “আমার বউ, আমি সারাদিন আঁচল ধরে বসে থাকবো, কার বাপের কী? যারা বলে, তারা হিংসুটে। আমার বউয়ের মতো বউ তাদের নেই।”
ঊষা প্রেমের গালের দুই পাশে হাত রেখে আসক্ত চোখে তাকালো প্রেমের ডিপ ব্রাউন চোখে। প্রেম ওর কপালের পাশে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে সেখানে পরম ভালোবাসায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
স্লো ভয়েসে বললো— —

“এভাবে দৃষ্টিতে খুন করিস না বউ।”
প্রেমের কথা ফুরনোর আগেই ঝড়ের বেগে প্রেমের ডার্ক রেড ঠোঁট দুটোতে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলো ঊষা। সেকেন্ড দশেক গভীর চুম্বন করে আচমকাই প্রেমকে ধাক্কা দিয়ে ভোঁ দৌড়ে দিলো। এতে প্রেমের মধ্যে কার উত্তাপ আরো বেড়ে গেল।
তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো— — “আমার থেকে পালিয়ে কোথায় যাবি আগুন সুন্দরী? আমায় জ্বালানোর শাস্তি স্বরূপ, তোমাকে আগের থেকে ও দ্বিগুণ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে উসুল করবো।
জাস্ট রাতের জন্য অপেক্ষা করো…”
রাত ১১টা

সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করে যে যার মতো ঘুমাতে চলে গেছেন।
কেবল অনুশ্রী বেগম খাবার শেষ করে একটা পান মুখে দিয়েছেন, নিজের ঘরে চলে যাবেন।
ঠিক তখনই বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠলো।
তিনি লিভিং রুমের বড় ওয়াল ঘড়িতে দেখলেন, রাত ১১টা।
এতো রাতে কে আসতে পারে, ভেবে একটু ভ্রু কুঁচকালেন ।
তবে আর বেশি কিছু না ভেবে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।
তবে দরজার ওপাশের ব্যক্তিকে এই মুহূর্তে, এইখানে, একদমই আশা করেননি অনুশ্রী বেগম।
দরজার বাহিরে অবিদ অপ্রস্তুত মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
তার চুলগুলো এলোমেলো, পরনের টি-শার্টটাও কুচকানো।
দেখেই মনে হচ্ছে ঘুম থেকে উঠে এসেছে।
তিনি অবিদকে দেখে মিষ্টি হেসে বললেন,

— “একি বাবা! তুমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভিতরে আসো।”
অবিদ আরও একটু অপ্রস্তুত হলো। ভিতরে গিয়ে অনুশ্রী বেগমকে নম্র কণ্ঠে সালাম দিলো।
অনুশ্রী বেগম মৃদু হেসে সালামের উত্তর দিলেন।
বাড়িতে জামাই এসেছে দেখে সবাইকে ডাকতে নিলে, অবিদ বাধা দিলো।
ইতস্তত কণ্ঠে বললো,
— “আম্মা, আপনি ব্যস্ত হবেন না প্লিজ।
সবাই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি একটা দরকারে এসেছি, সেটা সেরেই চলে যাবো।”
জামাইয়ের এমন বিব্রত মুখ দেখে অনুশ্রী বেগম যা বুঝার বুঝে গেলেন।
তিনি হালকা হেসে বললেন,

— “ঘরেই আছে, যাও।”
অবিদ আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করলো না। সিঁড়ি বেয়ে উপরে ছুটলো।
পরি বিছানায় শুয়ে এপাশ থেকে ওপাশ করছে।
তার মূলত একটু-ও ঘুম ধরছে না।
ধরবে কিভাবে!
তার প্রতি দিনের অভ্যাসে যে কারো উষ্ণ বুক, সেখানে লেপটে থেকে হৃদপিণ্ডের ধুকপুক শব্দ শুনতে না পারলে পরিনীতার মন শান্ত হয় না, ঘুম আসে না।
কী জ্বালা!
পরিনীতা কিছুক্ষণ ছটফট করতে করতে আর না পেরে শুয়া থেকে উঠে বসলো।
মনে মনে কঠিন প্রতিজ্ঞা করে বললো—

— “এই বাড়িতে যদি বন্যা, ভূমিকম্প, সাইক্লোন, সুনামি একসাথে হামলা চালায়, তবুও আর এই বাড়িতে রাতে থাকবো না।
সকালে এসেই বিকেলে চলে যাবো।
এ্যাঁ মাস্টারমশাই, আপনি কোথায়? কোলে যাবো আপনার!”
এঞ্জেল—
আচমকা কারো অপ্রত্যাশিত কণ্ঠে হকচকিয়ে গেলো পরিনীতা নিজেই নিজের মাথায় টোকা মেরে বললো—
— “উফ্! পরি, শান্ত হও।
মানুষটাকে কাছে না পেয়ে তুই পাগল হয়ে যাচ্ছিস!
সে এখানে আসবে কোথা থেকে?”

তবে পরিনীতা নিজের মনকে বুঝ দেওয়ার পূর্বেই, দ্বিতীয়বারের মতো সেই পরিচিত কণ্ঠ শোনা গেলো।
এবার মনের ভুল ভাবতে পারলো না পরিনীতা। ঝড়ের বেগে ফিরে তাকালো দরজার দিকে।
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে অবিদ, এলোমেলো, বিষণ্ন দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ওর দিকে।
দেখলেই মনে হচ্ছে অনেক পরিশ্রান্ত।
তবে পরি আর বেশি ভেবে সময় নষ্ট করলো না।
যাকে এতক্ষণ দেখার জন্য মনপ্রাণ ছটফট করছিল, তাকে এখন চোখের সামনে দেখে পরিনীতার চোখ-মুখ খুশিতে ঝিলিক দিয়ে উঠলো।
সে চোখের পলকে বিছানা থেকে নেমে, এক লাফে স্বামীর কোলে উঠে পড়লো।
গলা জড়িয়ে ধরে অভিমানে অভিযোগ করলো—

— “I miss you so much, master moshai!
আপনাকে ছাড়া একটুও ভালো লাগছিল না।
বিশ্বাস করুন, আপনি ঠিক বলেছিলেন। আমার এখানে রাতে থাকা সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি।
আমি আপনাকে ছাড়া একটুও ঘুমাতে পারবো না।”
পরিকে শক্ত বন্ধনে জড়িয়ে নিলো অবিদ।
মুচকি হেসে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ালো, কণ্ঠে কাতরতা মিশিয়ে বললো—
— “I’m so tired, Pori. I need to mantal piece…”
স্বামীর এই অবস্থা দেখে পরিরও ভীষণ খারাপ লাগলো।
লাজুক কণ্ঠে বললো—
— “আমারও চাই…”
অবিদ ওর লজ্জারঙ্গা মুখ দেখে মৃদু হাসলো।
কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে স্লো ভয়েসে বললো—
— “এখনই চাই।”
পরিনীতা লজ্জায় রক্তিম হয়ে উঠলো।
অবিদ বাঁকা হেসে ওকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো।
বাঁ হাত চেপে ধরে বললো—

— “চলো।”
পরিনীতা একটু অবাক হলো। বিস্মিত কণ্ঠে বললো—
— “কোথায়?”,
— “আমাদের বাড়ি।”
পরিনীতা এবার আরও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল—
— “এখন?”
অবিদ ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু বাকালো। কৌতুক করে বললো—
— “আগে রাত ২-৩টার সময় ভয় লাগতো না, আর এখন তুমি রাত ১১টায় ভয় পাচ্ছো?”
পরিনীতা একটু গাইগুই করে বললো—
— “আজকের রাতটা থেকে যাই, প্লিজ।”
অবিদ ওর হাত ছেড়ে দিয়ে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো—
— “ঠিক আছে, থাকো তাহলে।
আমি গেলাম।”

বলে চলে যেতে নিলে, লাফিয়ে উঠলো পরিনীতা।
পেছন থেকে অবিদের পেট ঝাঁপটে ধরে বললো—
— “আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছেন কেন!
আপনাকে ছাড়া ঘুমাতে পারি না তো।”
অবিদ কোনো ভাবান্তর না দেখিয়ে পুনরায় নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো—
— “তুমি থাকতে চাচ্ছো, তাই থাকো।
কাল এসে নিয়ে যাবো।”
বলে আবার চলে যেতে নিলে এবার আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো পরিনীতা।
নিচু কণ্ঠে বললো—

— “আমি-ও যাবো…”
হাসলো অবিদ।
আবার পরির হাত চেপে ধরে বললো—
— “ঠিক আছে।
আমরা এখনই আমাদের বাড়ি ফিরবো।
কিন্তু আমার মেয়ে কোথায়?”
— “আত্তা, নানাভাই, কাল আমায় আল অভি ভাইয়াকে নিয়ে গুলতে যাবে।”
সাদমান শিখদার, অবনিকে কোলে বসিয়ে কোম্পানির অ্যাকাউন্টের হিসেব দেখছেন আর নাতনির সাথে গল্প করছেন।
তিনি ফাইলে চোখ রেখেই বললেন—

— “অবশ্যই নিয়ে যাবো, নানাভাই।”
অবনির এবার কথা বলতে বলতে নজর পড়লো সাদমান শিখদারের সাদা দাড়ির ওপর।
সে তার ছোট্ট দুই হাতে সাদমান শিখদারের গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি টেনে ধরলো।
চোখ বড়ো বড়ো করে জিজ্ঞেস করলো—
— “নানাভাই, তোমার দাড়িগুলো সাদা কেন?”
সাদমান শিখদার এতে ব্যথা পেলেন না, বরং রসিক কণ্ঠে বললেন—
— “বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, নানাভাই।”
অবনিতা আরও একটু অবাক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো—
— “বুড়ো? কী নানাভাই!”
সাদমান শিখদার আবার কথার উত্তর নিতে নিলে দরজায় করাঘাতের শব্দে থেমে গেলেন।
এই রাতে কে আসছে, ভেবে বিরক্তি প্রকাশ করলেন।
তবে আর বেশি ভাবলেন না,

নাতনিকে কোলে নিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।
কিন্তু দরজার ওপাশের মানুষ দুজনকে দেখতেই যেন উনার বিরক্তিটা হরবর করে বেড়ে গেলো।
অবনি বাবা কে দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো—
— “পাপ্পা! পাপ্পা! তুমি এসেছো!”
মেয়ের মায়াবী মুখটা দেখতেই অবিদের কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে গেলো।
সে মেয়েকে কোলে নিতে চাইলেই, অবনিকে নিয়ে সরে গেলেন সাদমান শিখদার।
কঠোর কণ্ঠে বললেন—
— “এতো রাতে আমার বাড়িতে কি?
তোমার নিজের বাড়ি, ঘর নেই?”
উনার অপমান দুই পয়সারও গায়ে মাখলো না অবিদ।
জাস্ট ধুলো ঝাড়ার মতো গা থেকে ঝেড়ে ফেললো।
এগিয়ে এসে বললো—

— “আমি আপনার বাড়িতে থাকতে আসিনি।
আমি আমার বউ আর মেয়ে ছাড়া ঘুমাতে পারি না, তাই ওদের নিয়ে এসেছি।
এবার আপনি আমার মেয়েকে দিয়ে দিন, আপনার বাড়িতে এক সেকেন্ডও দাঁড়াবো না।”
পরিনিতা এসব শুনে ভয়ভয়ে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো।
সে জানে, এখুনি হয়তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাবে।
সাদমান শিখদার এবার আরও বিরক্ত হলেন।
তিতক্ত কণ্ঠে বললেন—
— “তোমার বউ নিয়ে যাবে যাও, আমি কী ধরে রেখেছি?
যে শুধু শুধু এই রাতের বেলা অসভ্যের মতো আমার ঘরে এসে ঝামেলা করছো?”
অবিদকে এবার ও উত্তেজিত হতে দেখা গেলো না।
সে ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাই তুললো—

— “আপনি না বললেও আমি আমার বউ ফেলে যাবো না।
বউ ছাড়া ঘুমাতে পারি না, যাই হোক।
শুধু বউ নয়, আমার মেয়েকে ও দিন।
ওকে ছাড়া-ও আমি ঘুমাতে পারি না।”
সাদমান শিখদার এবার তেড়ে উঠলেন।
নাতনিকে আরও একটু নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে বললেন—
— “শোনো ছেলে, এতো রাতে ঝামেলা করো না।
নিজের বউয়ের হাত ধরো আর আমার বাড়ি থেকে বিদেয় হও।
আমি আমার নাতনি দেবো না।”
সাদমান শিখদারের কথায় এবার সামান্য বাঁকা হাসলো অবিদ।
সাদমান শিখদারের সামনে দাঁড়িয়ে বললো—

— “আপনার মতো পাল্টিবাজ ভদ্রলোক আর একটা-ও দেখিনি।
আপনার কাছে আমি ভালো না, অথচ আমার মেয়ের সাথে একবার লেগে যেতে পারলে আর ছাড়তেই চান না!
যাই হোক, এতো রাতে আপনার সঙ্গে ঝামেলা করার আমার কোনো মুড নেই।
আমার মেয়েকে দিন, আমি নিয়ে চলে যাচ্ছি।”
সাদমান শিখদারের মস্তিষ্কে এবার রাগ ধরে গেলো।
তিনি ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন—
— “বললাম তো, দেবো না!
এরপরও বেয়াদবি করছো কেন?”
অবিদ এবার দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল, নিলিপ্ত ভঙ্গিতে বললো—
— “নাতনি কী আপনার আকাশ থেকে পড়েছে?
ওটা আমার মাথার ঘাম পায়ে ঝরানোর ফল।
আর আপনি ছো মেরে নিয়ে যাবেন?
আমার মেয়ে-কে ছেড়ে দিন, ও আমার সাথেই যাবে।
আম্মু, চলে আসো পাপার কাছে।”

অবিদের এমন ইঙ্গিতপূর্ণ কথায় চোখ বড়ো বড়ো করে ফেললো পরিনিতা।
তবে সাদমান শিখদার বিভ্রান্ত হলেন না।
তিনি নতুন উদ্যমে কিছু বলতে নিলে,
অনুশ্রী বেগম, পৃথম, প্রেম, তন্ময়, অরণ্য আর সমুদ্র চলে এলেন।
তারা ড্রয়িং রুমেই ছিল, তাই এতো কথাকাটাকাটির শব্দে সেখানে আর স্থির থাকতে পারেনি।
অরণ্য আর তন্ময় ভ্রু কুঁচকে শ্বশুর-জামাইয়ের ঝগড়া করার স্টাইল পর্যবেক্ষণ করলো।
তন্ময় ভ্রু নাচিয়ে বললো—

— “ছোড়দা! Something is fishing! হুমমম!
আবার মনে হয় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগতে চলেছে!”
অরণ্য ও একই ভঙ্গিতে বললো—
— “হুমম ম-ম ঠিক বলেছিস!
আমরা বোধহয় অনেকটা মিস করে গেলাম রে।”
অনুশ্রী বেগম জামাইয়ের দিকে তাকিয়ে নম্র কণ্ঠে বললেন—
— “কি হয়েছে বাবা?”
অবিদ কিছু বলবে, তার আগেই সাদমান শিখদার খেঁকিয়ে উঠে বললেন—
— “অস্থির, বেয়াদব ছেলে!

গুরুজনদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয় জানে না!”
কিন্তু অনুশ্রী বেগম উলটো উনাকেই ঝাড়ি দিয়ে বললেন—
— “আপনি চুপ করুন, আপনাকে ও আমার চিনা আছে।”
অরণ্য পুনরায় তন্ময়ের কানে কানে বললো—
— “কি বুঝলি?”
তন্ময়ও ফিসফিসিয়ে বললো—
— “Mew…”
মুখ চেপে ফিক করে হেসে উঠলো দু’জন।
সাদমান শিখদার এবার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন—
— “আমি আমার নাতনি দেবো!
সবাই বিদায় হও!”
এতো চিৎকার-চেঁচামেচি আর ঝগড়াঝাঁটি দেখে ভয় পেয়ে গেলো অবনিতা।
ঠোঁট উলটে, চিৎকার দিয়ে কান্না করে দিলো।
মেয়েকে কাঁদতে দেখে ছুটে গেলো পরিনিতা।
অবনিকে সাদমান শিখদারের কোলে থেকে নিয়ে আদর করতে লাগলো।
অবিদ এবার বিজয়ী হেসে তাকালো সাদমান শিখদারের দিকে।
বাঁকা হেসে বললো—

— “আসি, শ্বশুরমশাই!”
বলে নিজের বউ আর মেয়েকে নিয়ে চলে গেলো।
আবিদের কাছে আবারও হেরে যাওয়ায় মনে মনে ফুঁসে উঠলেন সাদমান শিখদার।
মনে মনে বললেন,
— “তোমাকে আমি দেখে নেবো!”
অরণ্য হতাশ হয়ে বললো,
— “চল ভাই, সিনেমা শেষ!”
তন্ময়ও হতাশ হল।
সকলের খাওয়া-দাওয়া শেষ হয়েছে অনেক আগেই। ঊষা রান্না ঘরের সব কিছু গুছিয়ে চুলায় চায়ের পানি বসিয়েছে, ভয়ে তার পেটের ভিতর থেকে থেকে পাক দিয়ে উঠছে। রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে তার হাত-পায়ের তীব্র কাঁপন ও সমান তালে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
আজ ঘরে গেলেই তার খবর করে ছেড়ে দেবে প্রেম, তাই সে গত ১ ঘণ্টা যাবত প্রেমের থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

সন্ধ্যার পর আর ৪ তলার আশেপাশে ও যায়নি ভুল ক্রমে, কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ পালিয়ে বাঁচা যাবে?
এখন তো তাকে যেতেই হবে, কারণ প্রেম থিরার কাছে চায়ের অর্ডার পাঠিয়ে দিয়েছে।
ঊষা বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো। লজ্জা-শরম, ভয়-ডর সব এক পাশে ছুঁড়ে ফেলে চায়ের পাতিলে দুধ-চিনি মিশাতে মিশাতে মনে মনে ঠিক করে রাখল— ব্যাটা যদি আজ বেশি বাড়াবাড়ি করে, তবে পরের বার চায়ের সাথে থুতু মিশিয়ে খাইয়ে দেব হিসাব বরাবর!
এসব ভেবে নিজেই নিজের বুদ্ধির তারিফ করলো ঊষা, চিল মুডে চায়ের পাতিলে চামচ নাড়াতে নাড়াতে গুনগুন করে গাইতে লাগলো—
“১ কাপ চা বানাই স্বামীর জন্য
আদা দেবো, এলাচি দেবো, চিনি দেবো সামান্য…”
গান গাইতে গাইতে ঊষার মনে পড়লো—
বেশি ভাবতে গিয়ে সে তো আদা আর এলাচ দিতেই ভুলে গেছে!
তাই আবার চায়ের পাতিল উনুনে বসিয়ে তাতে এক টুকরো আদা আর দুইটা বড় এলাচ দিতে দিতে পুনরায় গেয়ে উঠলো—

“এক কাপ চা বানাই স্বামীর জন্য।”
— “এত কিছু যখন মিশাচ্ছো, তখন ওতে হালকা করে একটু ইঁদুর মারার বিষও একটু মিশিয়ে দাও।
এভাবে মরার থেকে একেবারে খেয়ে মরে যাই!”
আচমকা কারো ভারী, পরিচিত কণ্ঠে লাফিয়ে উঠলো ঊষা। শুকনো ঢোঁক গিলে পিছন ফিরে দেখলো—
প্রেম বেশ স্টাইলিশ ভঙ্গিতে রান্নাঘরের পিলারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে এক ভুরু উঁচুিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
ঊষা তাকে দেখে মনে মনে পড়লো— ইন্নালিল্লাহ!
পুনরায় ফট করে চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো, তুতলিয়ে বললো—
— “আআপনি এখানে এসেছেন কেন? আমি তো চা নিয়ে আসছিলাম।”
প্রেম বাঁকা হেসে এগিয়ে আসতে আসতে ঠান্ডা কণ্ঠে বললো—
— “চা বানানোর রেসিপি দেখে চা খাওয়ার মুড চলে গেছে, তুশু পাখি… কাছে আসো… এখন অন্য কিছু খাওয়ার মুড হচ্ছে।”

প্রেমকে এমন শীতল কণ্ঠে হুমকি দিতে দেখে মনে মনে চিংড়ি মাছের মতো লাফিয়ে উঠলো ঊষা।
পিছাতে পিছাতে ক্যাবিনেটের সাথে সেঁটে গিয়ে বললো—
— “দূরে সরুন!”
প্রেম সোজা এসে ওকে এক টানে কাঁধে তুলে নিলো।
যেতে যেতে বললো—
— “প্রতি রাতে আদরে আদরে ভরিয়ে দেই তোমার ওই ছোট্ট কোমল দেহখানা।
আদরের তীব্রতায় নিঃশ্বাস আটকে মরে যাওয়ার উপক্রম হয় তোমার…
তারপরও এত লজ্জা আসে কোথা থেকে?”
প্রেমের নির্লজ্জ মার্ক কথায় আবারো লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো ঊষা। প্রেমের বুকে কিল-ঘুষি মারতে মারতে—

— “আরে আরে, এভাবে চলে যাচ্ছেন কেন নির্লজ্জ লোক? চা টা তো নিয়ে যান!”
প্রেম ওকে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে নাক সিটকে বলল—
— “এই মধ্যরাতে চা খায় কোন ছোট লোক? এখন আমার চা নয়, বউকে খাওয়ার ক্রেভিং হচ্ছে বউ, so don’t talk to unnecessary!”
লেডি কিলার রোমিও, পাকা প্লে বয় রোমিও, ফ্লার্টিং মাস্টার রোমিও।
লেডি কিলার রোমিও, পাকা প্লে বয় রোমিও, ফ্লার্টিং মাস্টার রোমিও।
সানডে দিলাম শীলাকে, মনডে দিলাম মনাকে, টুইসডে দিলাম টিনাকে,
ওয়েডনেসডে ঐন্দ্রিলাকে, থার্সডে দিলাম রিয়াকে, ফ্রাইডে দিলাম দিয়াকে,
স্যাটারডে টা প্রিয়াকে, দিল তো — দি নি করোকে।
আমি হলাম রোমিও, পাকা প্লে বয় রোমিও, ফ্লার্টিং মাস্টার রোমিও।
আমি হলাম রোমিও, পাকা প্লে বয় রোমিও, ফ্লার্টিং মাস্টার রোমিও।
কারো চোখ ভালো, কারো মুখ ভালো, কারো ফিগারের ইশারা।
এই জওয়ানি চায় ফুল মস্তি যে, ভালো লাগল তাই দেয় সাড়া।
বলে বলে পটাতে, আমার ছিপে ওঠাতে, গার্লফ্রেন্ড জোটাতে, ক্লাইম্যাক্স পারি ঘটাতে।
আমি হলাম রোমিও, পাকা প্লে বয় রোমিও, ফ্লার্টিং মাস্টার রোমিও।
এই ড্যান্স ফ্লোরে ওরা চান্স মারে, চায় আমাকেই খুব কাছে।
কাকে ইয়েস বলি, কাকে নো বলি — ঘিরে থাকে যে চারপাশে।

একটা দুটো মিটিংএ, দু-চার কথার চ্যাটিংয়ে, চালু আমি ব্যাটিংয়ে, নো বলে সিক্স হাঁকাতে।
আমি হলাম রোমিও, পাকা প্লে বয় রোমিও, ফ্লার্টিং মাস্টার রোমিও।
গানের তালে তালে লিভিং রুমের সোফায় উড়াধুরা লুঙ্গি ডান্স দিয়ে অরণ্য ও তন্ময় তাদের নাচের তালে তালে পুরো ড্রয়িং রুম কেঁপে উঠছে, কারণ এই গানটা তাদের লাইফের প্রেজেন্ট সিচুয়েশন ও কারেন্ট ফেভারিট।
এই গানটা যেন পুরো তাদের জীবন থেকেই নেওয়া— একদম খাপে খাপে মিলে যায়।
যদিও তন্ময় অনেক ছোট, তবে তার মধ্যে বয়স নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই— তার ও স্কুলে, টিউশনে, অরণ্যের মতো ডজন খানিক গার্লফ্রেন্ড আছে।

ক্লাসের সব মেয়ের ক্রাশ বয়, The Great তন্ময় শিকদার!
ঘরে বাইরে তাদের দুই ভাইয়ের ফুর্তির কোনো শেষ নেই।
ওরা দুজন ছোট একটা সাউন্ড বক্সে ফুল স্পিকারে পাগলা ডান্স দিচ্ছে।
নাচতে নাচতে তন্ময় বললো—
— “উফ্, গানটা বোর লাগছে, লেটস প্লে এনাদার তড়কা লাগানো মিউজিক।”
অরণ্যও বাঁকা হেসে ওর কথামতো নতুন গান প্লে করে দিলো।
এবার লিভিং রুম ফাটিয়ে বেজে উঠলো—
জোর লাগাকে ধাম ধারাক্কা, জোর লাগাকে ধাম ধারাক্কা,
লেগেছে প্রেমের ঝটকা, দম দমাদম পাঞ্জা চক্কা, নাগার খানা ঘটকা!
লে হালুয়া, লে হালুয়া, হালুয়া, হালুয়া —
লে হালুয়া!

লে হালুয়া গানের তালে লে হালুয়া পজিশনে উড়া ধুরা নাচ শুরু।
নাচতে নাচতেই, আচমকাই যে যেমন পজিশনে ছিল সে সেই পজিশনে স্ট্যাচু হয়ে গেল। সামনে তাকিয়ে তাদের চোখ দুটো ডিমের মতো গোল গোল হয়ে গেল।
তাদের Face expressions be like—”Ye mane Kiya Dekhiye!”
তাদের দুজনকে ব্যাঙের মতো হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে দেখেও, তাদের ৫ পয়সার পাত্তা দিলো না প্রেম। সে তার বউকে কাঁধে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল।
দেবরদের কে এভাবে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে, লজ্জায় দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেললো ঊষা।
প্রেম চলে যেতেই, অরণ্য ও তন্ময় একে অপরের দিকে তাকালো। সেকেন্ডের মধ্যেই দুজনের চেহারা গিরগিটির মতো রঙ পালটে ফেললো।
দুই ভাই দুঃখী দুঃখী মুখে একটা স্যাড সং লাগিয়ে, একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো। মিথ্যে কান্নার অভিনয় করে একসাথে গেয়ে উঠলো—
“বাবা, আমার কি বিয়ে হবে না? ওরে বাবা, আমার কি বিয়ে হবে?
জীবনেও তোদের বিয়ে হবে না!”

তাদের মতো লেজছাড়া হনুমানদের কোনো মেয়ের বাবাই মেয়ে দেবে না!
তাদের এমন স্যাড স্যাড ফিলিংস-এর বারোটা বাজানোর জন্য সমুদ্রের একটা খোঁচা যুক্ত কথা যথেষ্ট ছিল—
তারা দুই ভাই একত্রে দাঁত কিড় মিড় করে কিছু বলতে নিলে, রাজ সমুদ্রের পাশের সোফায় বসতে বসতে বললো—
“সুখে থাকতে কি তোদের ভূতে কিলায়?
বউ মানেই মহা বিপদ!
আগে যদি জানতাম ভাই, প্রয়োজনে সন্ন্যাসী হয়ে হিমালয় চলে যেতাম,
তবুও বিয়ে করতাম না!”

রাজের আহাজারি দেখে একত্রে ভ্রু কুঁচকালো তন্ময় ও অরণ্য।
নিজেদের মধ্যে চোখ চাওয়া চাওয়ি করে একসঙ্গে বলে উঠলো—
“তোমার বউ তোমাকে ৩ বেলা ধোলাই দেয় বলে কি,
আমাদের বউ ও দেবে?”
ছোট ভাইদের মুখে এমন হালকা বেজ্জতির কথা শুনে, ও অপমানিত ফিল করলো না রাজ।
গালে হাত দিয়ে ভাবুক কণ্ঠে বললো—
“বউ মানেই গিরগিটির সৎ বোন!

কখন, কীভাবে রঙ পালটে ফেলবে কিছুই বুঝতে পারবি না!
তাদের হ্যাঁ-তে না থাকে, আর না-তে হ্যাঁ থাকে!
তাদের কিসে যে কি থাকে, সেটা উদ্ধার করতে করতেই তোদের শালার জীবনটাই বেরিয়ে যাবে।
শেষ কালে কনফিউশন ক্লিয়ার করতে করতে বেঘোরে মারা পড়বি।
তাই বড় ভাই হিসেবে উপদেশ দিচ্ছি—
সময় থাকতে গৃহত্যাগী হো!”
রাজের কথায় ওর দুই পাশে বসে পড়লো অরণ্য ও তন্ময়,
দুই দিক দিয়ে দুজন বড় ভাইয়ের কাঁধ জড়িয়ে ধরলো।
অরণ্য ঠোঁট দিয়ে চুক চুক শব্দ তুলে বললো—
“চু চেড সেজদা, আসল কথা…

বউ নয়, তোমার কপালটাই গিরগিটির মতো রঙ পাল্টে ফেলেছে।
তোমাকে একটা বাঁশঝাড় নয়, গোটা বাঁশবাগানের মালিক বানিয়ে দিয়েছে।
নাহলে দেখো —মেজদা আর ছোড়দার দিকে তাকাও।
তাদের বউ দুটো কোমলবতী, লজ্জাবতী,
এক কথায় রসমালাই। তাহলে তোমারটা তিতকুটে করলা কেন?
ওদের দেখো, ওরা নিজেদের স্বামীদেরকে দেখলেই লজ্জায় বাঁশি ঝিপাপির মতো নেতিয়ে পড়ে ।
আর তোমার বউ তোমাকে দেখলেই ডান্ডার বাড়ি মারতে তেড়ে আসে!
চু চেড!”

রাজ বেশ আহত হলো।
এবার তন্ময় একটু জ্ঞান দেওয়ার স্টাইলে বললো—
“বউ টাইট দেবার জন্য আমার কাছে একটা সলিড প্ল্যান আছে!”
প্ল্যানের কথা শুনে, রাজ ও অরণ্য ভ্রু কুঁচকে তাকালো ওর দিকে।
তন্ময় বাঁকা হেঁকে হেসে বললো—
“আমি কাউকে ফ্রিতে আইডিয়া দিই না। এটা আমার বিজনেস, তাই ফেলো কড়ি, মাখো তেল!”
রাজ ফুঁশ করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। ওয়ালেট থেকে কড়কড়ে ৫০০ টাকার নোট হাতে ধরিয়ে বললো—
“এবার বল!”

তন্ময় এবার রাজের পাশ থেকে উঠে গিয়ে অরণ্যের পাশে বসলো।
বাঁকা হেসে বললো—
“ফাটা কপাল সেলাই করে এমন কোন দর্জির ব্যাপারে আমার জানা নেই।
তবে মেজদা আর ছোড়দার কপালের সাথে একবার তোমার ফাটা কপালটা ঘষে দেখে পারো।
বলা যায় না, কাজ হলেও হতে পারে!”
বলে অরণ্যের হাত ধরে দৌড় দিলো। যেতে যেতে অরণ্যকে বললো—
“২৫০ তোমার, ২৫০ আমার!”

অরণ্য বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বুক ফুলিয়ে বললো—
“I’m proud of me ভাই, এই বাড়িতে শুধু তুই আমার মতো হয়েছিস!”
রাজ দাঁত কিড়মিড় করে ভাইদেরকে অভিশাপ দিয়ে বললো—
“দেখেনিস তোরা দু’টো, তোদের বউ আমার বউয়ের আপডেট ভার্সন হবে!”
সমুদ্র এতক্ষণ পুরো সার্কাসটা উপভোগ করে উঠে যেতে যেতে বললো—
“শকুনের অভিশাপে কখনো গরু মরতে শুনেছো?”
রাজ এবার সত্যি সত্যি ঘর দোর ছেড়ে বিবাগী হয়ে যেতে মন চাচ্ছে।
সে নিজের কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে গাইল—
জানলে আগে এমন মাইয়া করতাম না বিয়া,
সর্বনাশ কইরাছি, পায়ের কুড়াল মারিয়া।
সুখে কত আদরে রাখি ভাত কাপড়ে,
আমার সাথে টেক্কা মারে আমারি ঘরে।
ঘড়ির কাঁটায় রাত বারোটা ছুই ছুই।

ব্যস্ত নগরীর কর্মজীবী মানুষরা গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন—
তাদের ধরা-বাঁধা যান্ত্রিক জীবনের ভেতরে
কিছু ব্যতিক্রমী, ধর্মী মানুষও বসবাস করে।
তারা আদৌ জীবিত না মৃত—
সেটা তাদের নিজেদের কাছেই স্পষ্ট নয়।
তাদের কাছে রাত বারোটা আর দুপুর বারোটার মাঝে কোনো ফারাক নেই—
দু’সময়ই তারা জেগে থাকে।
অন্ধকার, নির্জন, আধারী রাতের কোলাহলপূর্ণ নিস্তব্ধতায়
তারা হৃদয় উজাড় করে দুঃখ বিলাসে ডুবে যায়—
ভালো থাকার মুখোশ খুলে একটুকরো খাঁটি মানুষে পরিণত হয়—
যেখানে কাউকে আর বলতে হয় না,
“দেখো, আমি ভালো আছি।”

এই সময়টুকুই তাদের একান্ত—
সেই নিশাচর প্রজাতির প্রাণীদের খাতায় নাম লেখানোর এক নারী এখনও জেগে আছে—
এই তন্দ্রামগ্ন নগরীতে সুখের তন্দ্রা আসেনি তার, কতকাল সে শেষ কবে প্রশান্তিময় তন্দ্রায় তলিয়েছিল, তাও মনে পড়ে না।
তার অবস্থানরত ঘরটাও ঝিমঝিমে অন্ধকারে ঢাকা—
হালকা আলো-আধারীর মাঝে,
মেঝের নরম উলের উপর পা ভাঁজ করে বসে আছে সে।
তার প্রিয় পুরুষের প্রিয় কেশগুচ্ছ,
কোমল পিঠ ছুঁয়ে ছড়িয়ে আছে মেঝে জুড়ে।
আধো অন্ধকার ঘরের এক পাশে
একটুকরো উজ্জ্বল আলো নিবিড়ভাবে জ্বলছে।
টেবিলের উপর রাখা কালো রঙের একটি Blue Yeti মাইক্রোফোন—
মেয়েটার কণ্ঠ জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে।

ল্যাপটপ স্ক্রিনে Clubhouse-এর অডিও রুম চালু, তাতে যোগ দিয়েছেন লক্ষ লক্ষ শ্রোতা।
সময় যখন রাত বারোটার কাটায়, ঠিক তখন তারা তাদের পছন্দের সিক্রেট গায়িকার কন্ঠ শুনতে পায়—
ল্যাপটপ স্ক্রিনে শুধু একটাই নাম: @প্রণয়িনী_নীলাঞ্জনা
ক্যামেরা নেই, চিত্র নেই—
শুধু একটা প্রোফাইল লোগো,
আর তার নিচের স্ক্রিনে প্রতি সেকেন্ডে শত শত মানুষের বিভিন্ন মত, ধর্মীয় মন্তব্য ভেসে উঠছে—
আবার সেকেন্ডের মধ্যেই সেগুলো হারিয়ে নতুন মন্তব্যে ভরে উঠছে কমেন্ট বক্স।
তাদের এক একজনের এক রকম মতামত।
মেয়েটা মাইক্রোফোনের খুব কাছে মুখ এনে বসে থাকে।
চোখ নিচু, ঠোঁট বন্ধ, একটাও শব্দ নেই মুখে—
তবে তার আঙুলগুলো ধীরে ধীরে মোবাইল স্ক্রিনের উপর চলতে থাকে।
কমেন্ট সেকশন ভরে উঠছে…

> @lostmoon_19 :
“আজ একটা দুঃখের গান হবে না দিদি? অনেক কাঁদছি…”
> @shadowsoul.xx :
“ও চলে গেছে, আমি আর পারছি না… তোমার গলায় একটু শান্তি চাই।”
> @.tumi.bolechilam. :
“তুমি কি ‘ভালো থেকো’টা আজ গাইতে পারবে…”
> @noID.noFace :
“আমার জন্মদিন। কেও জানে না। আজ একটু হাসিমাখা গান দিও আপু?”
> @bhenge_jaoya :
“ক্ষমা করতে চাই, কিন্তু পারছি না… প্লিজ একটা গান ওর জন্য ডেডিকেট করো।”
> @lostmoon_19 :
“আপু আজকে একটা আনন্দের গান গাও।”
> @bhenge_jaowa.soul :
“আপু, আমার সে অন্যের কাউকে ভালোবেসে… তুমি প্লিজ ‘ওর স্মৃতি, তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধে ঘর’—এই গানটা করো।”
> @sleepless.chokh :
“আপু, তুমি প্রতিদিন মাঝ রাতে গান করো কেনো?”
> @ekla_rater_golpo :
“দিদি ভাই, তুমি আমাকে কোনো দিনও রিপ্লাই করো না… আজকে একটু বলো না তোমার জীবনের না বলা কথা।”
> @forever.unloved.07 :
“আপু, তোমার জীবনে কি কোনো ভালোবাসার মানুষ নেই?”
> @tobu.ami.ache :
“আপু, ‘সে ছিল আমার কল্পনা’—গানটা গাও প্লিজ। তোমার গলায় শুনতে চাই, তোমার কন্ঠ অনেক মিষ্টি।”
> @kisher_jonno_thaki :
“আপু, আমার ভালোবাসা হারিয়ে গেছে আজ অনেকদিন। কিন্তু আমি তাকে ভুলতে পারছি না অনেক চেষ্টা করেও। কেনো পারছি না একটু বলবে? সেতো আমার জীবনের কোথাও নেই, তাহলে কোথায় আছে? আমি তাকে দেখতে পাই না, ধরতে পারি, ছুঁতে পারি না—
তবুও ও মনের সবটাতে জায়গা করে নিয়েছে। এমন কেনো, আপু, বলো না? সে কোথাও নেই, তবুও যেন সেই সব কিছু।”
শেষের কমেন্টটা উপরে উঠে যেতে নিলে‌ই প্রিয়তা সেটা বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরলো।
কয়েক সেকেন্ড সেটার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো—

— “আপু না ভাইয়া জানি না, তবে আপনি যে জেলখানায় কয়েদ হয়েছেন, ওই জেলখানায় কেবল ঢোকার রাস্তা আছে, তবে সেখান থেকে মুক্তির রাস্তা নেই…”
> @kisher_jonno_thaki :
“কেনো আপু?”
প্রিয়তা পুনরায় সেই ব্যক্তির কমেন্ট দেখে মুচকি হেসে চোখের পাতা বুজলো।
কণ্ঠে নিজের অস্তিত্বের সকল অনুভূতি ঢেলে বললো—
“না থেকেও কেউ কেউ থেকে যায় অভিমানে, আক্ষেপে, অপেক্ষায়—
কখনোবা পরিচিত পারফিউমের ঘ্রাণে,
কিংবা ফেলে যাওয়া ডাকনামে,
থেকে যায় প্রিয় কবিতায়, বিষণ্ণ গানের লাইনে,
বিকেলের শূন্যতায়, কিংবা ঘোরলাগা একাকীত্বে,
আর সব শেষে—মাঝ রাতের অবাধ্য অশ্রুধারায়।”

> @sleepless.chokh :
“অনেক সুন্দর বলেছো আপু, সত্যি তাই। আপু, আজকে করবেন না?
আপনারাই বলেই কোন গানটা শুনতে চান?”
> @lostmoon_19 :
“তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর – এই গানটা, আপু।”
> @bhenge_jaowa.soul :
“তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো…”
> @sleepless.chokh :
“আপু, তোমার পছন্দ মতো একটা শুনাও।”
প্রিয়তা সবার কমেন্টস দেখে নিঃশব্দে হাসলো।
নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠছে তার।
না চাইতেও চোখের পাতায় ভেসে ওঠছে একজোড়া গভীর বাদামি বর্ণের নেশালো চোখের প্রতিচ্ছবি,
যা একসময় তাকে নিঃশব্দে অনেক কিছু বলতো,
হারিয়ে নিয়ে যেত অন্য দুনিয়ায়।
যে চোখে সে দেখতে পেতো বিশ্বাস, ভরসা আর অসীম স্নেহের সাগর।
প্রিয়তা ভাবনার অথলে হারিয়ে গিয়ে আনমনে কণ্ঠে সুর তুলল—

তুমি যাকে ভালোবাসো,
স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো,
তার জীবনে ঝড়।
তোমার কথার শব্দদূষণ,
তোমার গলার স্বর,
আমার দরজায় খিল দিয়েছি,
আমার দারুণ জ্বর।
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর,
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর।
তোমার নৌকোর মুখোমুখি,
আমার সৈন্যদল, বাঁচার লড়াই।
আমার মন্ত্রী খোয়া গেছে
একটা চালের ভুল, কোথায় দাঁড়াই?
কথার ওপর কেবল কথা,
সিলিং ছুঁতে চায়।
নিজের মুখের আয়না আদল
লাগছে অসহায়।
তুমি অন্য কারোর ছন্দে বেঁধো গান,
তুমি অন্য কারোর ছন্দে বেঁধে গান।
বুকের ভেতর ফুটছে যেন
মাছের কানকোর লাল, এত নরম।
শাড়ির সুতো বুনছে যেন
সেই লালের কঙ্কাল, বিপদ বড়।
তুমি যাকে ভালবাসো,
স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো,
তার জীবনে ঝড়।
তুমি যাকে ভালবাসো,
স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো,
তার জীবনে ঝড়।
তোমার কথার শব্দদূষণ,
তোমার গলার স্বর,
আমার দরজায় খিল দিয়েছি,
আমার দারুণ জ্বর।
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর,
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর।

গাইতে গাইতেই আচমকা ফুপিয়ে উঠলো প্রিয়তা। নিজের ভেতরের সত্তাটা আর চেপে রাখতে পারলো না।
সেই অতিক্ষাঙ্খিত ব্যক্তির শাসন, বারণ, আদর, স্নেহ আর ভালোবাসার অভাবে গলাকাটা মুরগির মতো ছটফটিয়ে উঠলো।
আর কারো কোনো মন্তব্য না দেখেই ল্যাপটপ অফ করে দিল।
দুই হাঁটুর ভাজে মুখ গুঁজে ফুপাতে ফুপাতে একসময় চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো।
বুকের ভেতরের তীব্র যন্ত্রণায় কাঁদতে কাঁদতে একসময় চিৎকার দিয়ে বললো—
আমি ব্যর্থ হয়েছি।
আমি পারিনি প্রণয় ভাই, আমি পারিনি আপনার কথাগুলো শুনতে,
আমি পারিনি আপনার কথাগুলো রাখতে,
আমি পারিনি নিজেকে শক্ত করতে,
আমি পারিনি আপনার উপর থেকে এক বিন্দুও নির্ভরশীলতা কমাতে।
আপনাকে ছাড়া আজও আমি ঠিক ততটাই নিরীহ, অসহায় —
যতটা আগে ছিলাম। ভীষণ দুর্বল আমি আপনাকে ছাড়া।
কোথায় আপনি প্রণয় ভাই?

আপনার রক্তজবা আজ বড় ক্লান্ত।
সমাজের সামনে ভালো থাকার অভিনয় করতে করতে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি, আমি আর পারছিনা।
আমাকে… আমাকে একটু আপনার বুকে আগের মতো ঠাঁই দিন না প্রণয় ভাই, প্লিজ দিন না!
আমি আপনার অভাবে মরে যাচ্ছি প্রণয় ভাই।
প্লিজ একটু বুকে নিন না, একটু বলুন না আগের মতো —
‘জান, তুই চিন্তা করিস না।
আমি তো আছি, তোর কিচ্ছু হতে দেবো না।
তোর সব সমস্যার সমাধান আমি করবো।’
প্লিজ, আগের মতো একটা বার বলুন না প্রণয় ভাই।
একটা বার… আর একটা বার আপনার গায়ের গন্ধ নিতে দিন না!

শেষ আর একটা বার আপনার শরীরের সকল ঘ্রাণ নিজের মধ্যে শুষে নিতে চাই।
আপনার গায়ের সেই মাতাল করা ঘ্রাণে আমি যে খুব বেশি আসক্ত।
আজ কতগুলো মাস, কতগুলো দিন, কতগুলো বছর পেরিয়ে গেল —
আমি একটা ফোঁটাও শান্তি পাইনি প্রণয় ভাই।
আপনার বুকে যে শান্তি, সেটা পৃথিবীর কোথাও নেই, কিছুতেই নেই।
সেটা এখন আমি হারে হারে উপলব্ধি করতে পারি।
আপনার বুকের সেই উষ্ণতাপ পৃথিবীর কোথাও নেই, কোথাও আপনি নেই।
কেউ আপনার মত না, কেউ আমাকে আপনার মত করে ভালোবাসে না, আপনার মত করে বুঝে না।
আমার আপনাকে চাই প্রণয় ভাই।
বলতে বলতে তীব্র কান্নায় মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো প্রিয়তা।
কান্নার তোড়ে ফর্সা মুখখানি মুহূর্তেই রক্তাভ হয়ে উঠেছে।
হাত ও কপালের শিরা টানটান হয়ে ভেসে উঠলো।
কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে পুনরায় বলল—
আমি ধুকে ধুকে মরে যাচ্ছি প্রণয় ভাই।
আমি কি খুব বেশি অযোগ্য ছিলাম?
ভালোবাসার লোভ দেখিয়ে আমাকে কেন এভাবে ছুঁড়ে ফেললেন? কেনো ছেড়ে গেলেন?
আপনার পায়ের কাছে রেখে দিতেন, বেশি কিছু তো চাইনি আপনার কাছে।
আপনাকে শুধু দু’চোখ ভরে দেখতাম।
আপনাকে দেখি নি আজ কতগুলো বছর।
আমি যে আপনার তৃষ্ণায় মরে যাচ্ছি প্রণয় ভাই।

I desperately need you. Please…
আমি সত্যি আপনাকে পাওয়ার লোভ আজও ছাড়তে পারিনি প্রণয় ভাই, বিশ্বাস করুন, একটুও পারিনি।
বড় আপু যদি আপনাকে একটু ভিক্ষা দিতো আমায়…
আমি আপনাকে চাই প্রণয় ভাই, খুব করে চাই।
প্রিয়তার এই তীব্র হাহাকার মেশানো গুমরে উঠা আর্তনাদ নিঃশব্দ ঘরের চার দেয়ালে বাড়ি খেয়ে বাতাসে মিলে গেল।
এ যেন তার প্রতি রাত্রির ধরা বাঁধা রুটিন, এমনি বুঝি হয়।
ডেনমার্ক…
একটা deep darkest room.
পুরো রুমের আবহাওয়া ভারি, বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে নানাবিধ মাদকের সুমিষ্টি সুঘ্রাণ।
ঘরটা পুরো অন্ধকার হলেও, পূর্বদিকের কাচের জানালা গলিয়ে আবছা চাঁদের আলো এসে ঘরের ঠিক মাঝখানে পড়ছে —

যেখানের মেঝেতে বসে বিছানায় মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে এক পুরুষ।
পুরো শরীর তার নেশায় মগ্ন।
পাওয়ারফুল ড্রাগের তীব্র নেশা ছুটে চলেছে তার শিরায় শিরায়,
তীব্র ড্রাগের নেশাকে দমিয়ে রাখতে পারছে না তার দেহের পুরুষালী হরমোনেরা,
ফলে শরীরটা যেন কোনো জড়বস্তু বলে মনে হচ্ছে তার কাছে।
তবে শরীরকে কাবু করতে পারলেও, এই ড্রাগের নেশা তার মন-মস্তিষ্কের উপর বিন্দুমাত্রও প্রভাব ফেলতে পারেনি।
সে সম্পূর্ণ সজ্ঞানেই আছে।
তাই বুকের ভেতরের লাভা নদীর প্রত্যেকটা শ্রুত হৃদপিণ্ডের কানায় কানায় অনুভব করতে পারছে,
বুকের বাম পাশটা ব্যথা করতে করতে যেন অবশ হয়ে আসার উপক্রম।
তার এক উঁরুতে একটা বড় লোমশ সাদা বিড়াল, হাত-পা ভাঁজ করে পেটে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে আছে।
অন্য উঁরুতে ল্যাপটপ।

পুরুষটা পুনরায় মাথা তুলে তার রক্তিম চোখজোড়া নিবদ্ধ করলো ল্যাপটপের স্ক্রিনে —
যেখানে এক নারী প্রেম-পিপাসায় কাতরাচ্ছে, ছটফট করতে করতে নিজের প্রিয় পুরুষের বুকে আশ্রয় খুঁজছে।
ছুঁতে চাচ্ছে, ঘ্রাণ নিতে চাচ্ছে।
প্রণয় নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে রইলো স্ক্রিনে।
মুখ দিয়ে শব্দ বের করার জন্য অবশিষ্ট শক্তিটুকুও যেন নেই তার দেহে।
তাই সেই স্ক্রিনের দিকেই তাকিয়ে অস্ফুটে বিড়বিড় করে বললো—
আমার মত এত অক্ষম পুরুষ কী তোর এতো ভালোবাসা ডিজার্ভ করে বল জান?
আমি কেন এত অক্ষম হলাম?
কেন এত কাপুরুষ হলাম?
কেন পারলাম না তোকে বুকে জড়িয়ে রাখতে?
কেন পারলাম না তোকে নিশ্বাসে মিশিয়ে রাখতে?
আমি কী করবো এই ইউজলেস বুকের, যেখানে তুই নেই?
যে বুকে তুই মাথা রাখতে পারিস না, সে বুক দুনিয়াতে রেখেছিসবা কেনো?
মিটিয়ে দে তার নাম ও নিশান।

আমি ও পুড়ে যাচ্ছি জান।
আজ কতগুলো বছর —
তুই এই বুকে আসিস না, মাথা রাখিস না।
আবদার করিস না।
আজ কত বছর —
তোর উষ্ণ নিঃশ্বাসের ছোয়া নিজের অস্তিত্বে অনুভব করি না।
তোকে ছুঁতে পারি না,
আদর করতে পারি না,
তোর কণ্ঠে নিজের নামটা শুনতে পারি না।
আমি আর থাকতে পারছি না তোকে ছাড়া।
আমারও তোকে চাই।
হয় তুই আমার কাছে আয়,
নাহয় এই বুকের গভীরে ছুরি চালিয়ে দে,
নিঃশ্বাসটা বন্ধ করে দে — চিরতরে।
যে নিঃশ্বাস আর তোর নাম জপবে না,
সেই চোখ দুটো বন্ধ করে দে — চিরতরে।
যে চোখ দুটো আর তোকে দেখার জন্য অস্থির হবে না।
যেকোনোভাবে আমাকে এই মরণ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দে, জান।
এই বিষ পান করার থেকে মরণ আমার জন্য ঢের সুখের।
কিন্তু দেখ, আমি নিজের ইচ্ছায় মরতেও পারি না —

হয়, আমাকে ভালোবাস,
আর নয়তো মেরে ফেল…
বলে প্রণয়ও ডুকরে কেঁদে উঠলো।
এই অসহ্য পীড়া আর সহ্য হয় না, জান।
প্রণয় চোখ বুজে আল্লাহর দরবারে আরজি জানিয়ে বললো—
“হে মাবুদ, এত কষ্ট আমাদের কেন দিচ্ছো?
কেন এত অক্ষমতা আর অসহায়ত্বের দড়ি আমার পায়ে পরিয়ে রেখেছো?
আমি যে ওর আর্তনাদ আর সহ্য করতে পারছি না…
আমার ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে…
এত যন্ত্রণা আমাদের না দিয়ে,
তোমার কাছে নিয়ে যাও।
তাহলে হয়তো আমরা একটু শান্তি পেতাম…”
বলে পুনরায় বিছানায় মাথা এলিয়ে দিল।
কয়েক সেকেন্ড থেমে আবার পাগলের মতো হেসে উঠে বললো—
“ছ্যাহ, আমি তো ভুলেই গেছিলাম,
আমি তো ওকে মরণের পরও পাবো না…

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৫৬

মৃত্যুর পর আমার জায়গা হবে দুর্গন্ধযুক্ত নরকের কোনো এক অন্ধকার কুঠুরিতে।
আমার মতো পাপিষ্ঠ কিভাবে জান্নাতের সুবাস পাবে?
দুনিয়াতে ও জাহান্নামের আগুনে জ্বলছি,
মরণের পরেও জাহান্নামের আগুনে জ্বলবো…”
আমি কোনোদিনও তোকে পাবো না জান,
তুই আমার পাপিষ্ঠ হৃদয়ের এক পবিত্র ফুল,
যাকে জন্ম জন্মান্তরে আমার জন্য নিষিদ্ধ করেছেন বিধাতা।

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ৫৮