তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৩০
নওরিন মুনতাহা হিয়া
তালুকদার বাড়িতে আজ শফিক সাহেবের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে কয়েকজন মাদ্রাসার ছাএ, গ্রামের কিছু মানুষকে খাওয়ানো হবে। প্রতি বছর এই দিনে তালুকদার বাড়িতে গরীর দুঃখী মানুষকে খাওয়ানো হয়, যতদিন ইনায়ার নানু বেঁচে ছিলেন ওনি তার স্বামীর আত্মার মাগফিরাত কামনার জন্য তার মৃত্যু বার্ষিকীর দিন অনুষ্ঠান করতেন। এরপর থেকে বৃদ্ধ আশ্রমের মহিলারা এই দিনে গ্রামের মানুষ সহ গরীর দুঃখীদের খাওয়ার। আজ ইনায়া আর অরণ্য আছে বলে আরো সুন্দর আর বড়ো করে অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।
বৃদ্ধ আশ্রমের সকলে এখন বাড়ির সদর দরজায় বসে দুপুরের রান্নার জন্য তরকারি কাটাকুটি করছে, আর বাড়ির গিন্নির মতো রান্না ঘরে রান্না করছে ইনায়া। ছোটবেলা থেকে ইনায়া রান্না করতে পারে, কিন্তু পড়াশোনা আর বিজনেস দুইটা একসাথে সামলাতে হতো দেখে সে সারাদিন বিজি থাকত। আর অরুণা বেগম ইনায়াকে কখনো রান্না ঘরে যেতে দেয় নাই, চৌধুরী বাড়ির সকল রান্না অরুণা বেগম করেন। তবে ইনায়া সব রান্নায় করতে পারে, আর তার রান্না করা খাবার যথেষ্ট সুস্বাদু হয়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বাড়ির সকলে তাদের কাজে বিজি এখন, অরণ্য সকলের খাওয়া দাওয়া বিষয়টা দেখছে। প্রচুর গরম পড়েছে, কালকে বৃষ্টির পর আজ রোদের তীব্রতা দিগুণ হয়ে গেছে। বাহিরে রোদের মধ্যে অরণ্য সব কাজ করে টার্য়াড হয়ে গেছে, যার জন্য সে বিশ্রাম নিতে ভিতরে আসে। সদর দরজায় কাজ করা কয়েকজন বৃদ্ধ মহিলাকে ইনায়ার কথা জিজ্ঞেস করে। তারা বলে ইনায়া রান্না ঘরে রান্না করছে, অরণ্য সেখানে যায়। রান্না ঘরে গিয়ে দেখে ইনায়া কমড়ে কাপড় গুঁজে পাক্কা রাধুঁনির মতো রান্না করছে, বিয়ের পর আজ প্রথম ইনায়াকে রান্না ঘরে যেতে দেখেছে অরণ্য।
রান্না ঘরে গরমে ইনায়ার শরীর দিয়ে ঘাম ঝড়ে পড়ছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে। বাহিরে যা রোদ তারপরও গ্রামের রান্নাঘর খড়ি দিয়ে রান্না করতে হয়। যার কারণে ইনায়ার আরো বেশি গরম করছে, তবুও সে রান্না করে যাচ্ছে। তবে অরণ্য ইনায়াকে দেখে সবসময়ের মতে্ মুগ্ধ হয়ে যায়, প্রেমে পড়লে মনে হয় ভালোবাসার মানুষকে সকল পরিস্থিতিতে সুন্দর লাগে। অরণ্য ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে রান্না ঘরে ইনায়ার কাছে যায়, ইনায়ার পিছনে দাঁড়িয়ে ওর বেঁধে রাখা খোপা করা চুল ছেড়ে দেয়।
রান্না করার মধ্যে হঠাৎ করে চুল খুলে যাওয়ার কারণ ইনায়া যথেষ্ট বিরক্ত হয়, এমনি গরমের মধ্যে রান্না করছে এখন চুলের কারণে আরো বেশি গরম করছে। ইনায়া যখন রান্না করা রেখে তার চুল বাঁধতে যাবে, তখন অনুভব করে তার পিছনে একজন দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইনায়া পিছনে ঘুরে দেখে অরণ্য সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার ঠোঁটে মুচকি হাসি। ইনায়ার আর বুঝতে বাকি থাকে না তার শক্ত করে বাঁধা চুল কি করে খুলে গেছে, ইনায়া রাগী স্বরে বলে –
“- অরণ্য কি করছেন আপনি এখানে? আর গরমের মধ্যে মাথার চুল কেনো খুলে দিলেন? যানেন কতো গরম করছে আমার?
ইনায়া কথাটা রাগী স্বরে বলে কিন্তু অরণ্যর ঠোঁটর কোণে এখনো মুচকি হাসি রয়েছে, গরমের মধ্যে ইনায়ার কপালে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম আর ইনায়ার রাগী চোখ সব মিলিয়ে ইনায়াকে অনেক সুন্দর লাগছে। অরণ্য শুধু ভাবে তার বউ এতো সুন্দর কেনো? রান্না করা অবস্থায় কি কোনো মহিলাকে এতো সুন্দর লাগতে পারে? এমনি বাহিরে যে গরম তার উপর তার বউয়ের এমন রূপ কোথাও এতো রূপের আগুনে অরণ্য পুড়ে না যায়। ইনায়ার কথায় অরণ্য কোনো উত্তর দেয় না, কারণ অরণ্য এক দৃষ্টিতে ইনায়াকে দেখে যাচ্ছে আর ওর ভাবনায় বিভোর হয়ে যাচ্ছে।
ইনায়া খেয়াল করে দেখে অরণ্যর মুখ লাল হয়ে গেছে, তার শরীর সম্পূর্ণ ঘামে ভিজে গেছে। ইনায়া মূহুর্তের মধ্যে তার রাগ ভুলে যায়, বাহিরে অনেক সময় রোদে দাঁড়িয়ে কাজ করার জন্য হয়তো অরণ্যর গরম লাগছে। ইনায়া বলে –
“- অরণ্য আপনি এতো সময় বাহিরে রোদের মধ্যে কেনো কাজ করছেন? দেখেন চোখ মুখ সব লাল হয়ে গেছে? রুমে যান আপনি আমি লেবুর জল নিয়ে আসছি “।
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য রুমে যায় না বরং সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে, ইনায়া রান্না ঘর থেকে বের হয়ে যখন ফ্রি থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে আসতে যাবে তখন অরণ্য ওর হাত ধরে ফেলে। অরণ্য বলে –
“- বউ তুমি এতো সুন্দর কেনো? বিশ্বাস করো বউ তোমর এই রূপের তেজ আর সয্য করা যাচ্ছে না। দেখা যাবে তোমার রূপের গরমে এই অরণ্য রাজ চৌধুরী কোথায় পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে? তখন কিন্তু তুমি বিধবা হয়ে যাবে বউ “।
অরণ্যর মুখে বউ তার তুমি ডাকটা শুনে ইনায়ার লজ্জায় লাল দুটি লাল হয়ে যায়, আর তার হাসি ও পায় অরণ্যর কথা শুনে। লোকটা সত্যি অদ্ভুত ভিন্ন সময় ভিন্ন রূপ তার, এক সময় মজার কথা বলবে সবসময় তার মুখে হাসি থাকবে। আর অন্য সময় হলে গম্ভীর হয়ে যাবে, তবে অরণ্যর ঠোঁটে হাসি দেখতে ইনায়ার অনেক ভালো লাগছে।
। অরণ্য ইনায়ার দিকে সামান্য এগিয়ে আসে আলতো হ্তে তার গাল ছুঁয়ে দেয়, ইনায়ার হুঁশ ফিরে আসে সে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে, যদি বৃদ্ধ কোনো মহিলা এখানে হঠাৎ করে চলে আসে। তখন কি হবে? ইনায়া আবার রাগী স্বরে বলে –
“- অরণ্য কি করছেন আপনি? দূরে সরুন? বাড়িতে কদো মানুষ কেউ যদি রান্না ঘরে চলে আসে তখন কি হবে?
“- সো হোয়াট ইনায়া বউ হন আপনি আমার। বিয়ের পর জামাই বউ একটু রোমান্স করবে সেটা স্বাভাবিক বিষয় “।
অরণ্যর কথা শুনে ইনাযা বলে –
“- এইটা আপনার রুমে নয় রান্না ঘরে।
“- তাহলে রুমে চলেন সেখানে গিয়ে রোমান্স করি।
অন্যদিকে চৌধুরী কোম্পানির এমডির চেয়ারে বসে গভী মনোযোগ কাজ করছে ইভান। অফিসের সকল দায়িত্ব এখন সে পালন করে, আর প্রভা তার কেবিনে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। প্রভাকে সে তার পারসোর্নাল এসিস্ট্যান্টে হিসাবে নিয়োগ করছে, কারণ অফিসে আর কোনো পোস্ট খালি ছিলো না। প্রভা ল্যাপটপে কিছু কাজ করছে, ইভান তার মনোযোগ কাগজের উপর থেকে সরিয়ে সামনের দিকে তাকায়। ইভানের চোখ যায় প্রভার দিকে, প্রভা কাজ করে যাচ্ছে তার দিকে যে ইভান তাকিয়ে রয়েছে সেই বিষয়ে তার কোনো খেয়াল নাই।
তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৯
ইভান এক দৃষ্টিতে প্রভার দিকে দেখতে থাকে, মেয়েটা অনেক সুন্দরী তবে তার ইনায়ার চেয়ে কম। তার ইনায়া কথাটা বলতে গিয়ে ইভান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এতোদিনে হয়তো ইনায়া অরণ্যকে ভালোবেসে ফেলেছে, অবশ্য স্বামী হয় তার একদিন একদিন তো প্রেমে পড়বেই। ইভান তার ভুলের কারণে ইনায়াকে হারিয়ে ফেলেছে, ছোটবেলার থেকে জীবনে সবকিছু সে পেয়েছে। শুধু ইনায়াকে ছাড়া, এই জীবনে ইনায়া ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে টারবে কি না তা ইভান যানে না।