অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪
লিজা মনি

ড্রয়িংরুমে বসে আছে শিখা চৌধুরি আর সাজিদ চৌধুরি। তাদের সামনে আসাদ হোসেন আর সেলিনা হোসেন।
আসাদ হোসেন — আমরা খুব সৌভাগ্যশালী মন্ত্রী সাহেব এত বড় একজন বড় মাপের মানুষ আমার মত গরিবের বাড়িতে পা রেখেছে।কিন্তু আপনারা যে প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন সেটা কিছুতেই মানতে পারছি না। আমার মেয়েকেই কেনো?
আপনার বড় ছেলে সে হিসেবে তো আপনার স্ট্যাটাস অনুযায়ী বিয়ে করানো উচিৎ।
আসাদ হোসেনের কথা শুনে শিখা চৌধুরি হাসি দিয়ে বলে,,,,

” স্ট্যাটাস তো অনেক পাব ভাই সাহেব। কিন্তু আপনার মেয়ের মত সর্বগুন সম্পন্না মেয়ে পাব কোথায়? আমি এমন একটা মেয়ে চাই যে আমার ছেলেকে আগলে রাখবে। কখনো টাকার অহংকার দেখাবে না। আপনার মেয়ের মধ্যে আশা করি সব আছে। জ্ঞানী লোকেদের বেশি দেখতে হয় না একটু দেখলেই আন্দাজ করতে পারে মেয়েটা কেমন।
আসাদ হোসেন — আপনাদের বাড়ির বউ হয়ে যাবে আমার মেয়ে সেটা তো আমাদের সৌভাগ্য বলতে পারেন। আমরা আশাবাদী মন্ত্রী মশাইয়ের ছেলে ঠিক ওনার মত জনদরদী আর ভালোই হবে। আমরা আপনাদের প্রস্তাব মঞ্জুর করলাম।
আসাদ হোসেনের কথা শুনে সাজিদ চৌধুর আর শিখা চৌধুরি চুপসে যায়। এরপর নিজেদের ঠিক রেখে আসাদ হোসেনের উদ্দেশ্যে বলে,,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” যেহেতু বিয়েতে কারোর আপত্তি নেই তাহলে মনে হয় না বিয়ে নিয়ে এত দেরী করার কোনো মানে হয়। সামনে নির্বাচন এইসব জামেলায় কেটে যাবে অনেকদিন। তাই আমরা চাই আপনার মেয়েকে দুই একদিনের ভিতর চৌধুরি বাড়ির বউ করে ঘরে তুলতে। কথা দিচ্ছে আপনার মেয়ে শুধু আপনার না আমার মেয়ে হয়ে থাকবে।
আসাদ হোসেন আর শিখা চৌধুরির কথা শুনে আসাদ হোসেন থমথমে খেয়ে যায়।
আসাদ হোসেন — এই প্রথম আমাদের বাড়িতে বিয়ে হচ্ছে অনুষ্ঠান ছাড়া কিভাবে মেয়ে বিদায় করব তাও এত তাড়াতাড়ি।

শিখা চৌধুরি *—- অনুষ্ঠানের কথা চিন্তা করবেন না নির্বাচন শেষ হলে পুরো ঢাকা শহর নিয়ে ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করব। এখন আপাযত এইসবে জড়াতে চাচ্ছি না। আমাদের শুধু আপনার মেয়েকে দিলেই হবে। আমার মেয়ে নেই আমি ও একটা মেয়ে পেয়ে যাব।
একসময় তারা বিয়ে নিয়ে চুরান্ত সীমায় যায়। আসাদ হোসেন অগ্নিকে নিউজে দেখেছে তাই ওনার আর এক্সট্রা করে ছেলেকে দেখার প্রয়োজন মনে করে নি। ছেলে দেখতে দশের মধ্যে একজন। যেমন সুন্দর তেমন মেধাবী শিক্ষিত। এই বিয়েতে না করার কোনো প্রশ্ন ওই আসে না। এখন শুধই ইয়ানা রাজি হলেই হবে।
আজ বুধবার তাদের বিয়ে ১৭ তারিখ মঙ্গলবারে ঠিক করা হয়েছে। বর্তমানে নভেম্বর মাস চলছে চারদিকে শীতের মৌসুম। বিয়ের জন্য যেনো শীতকালেই যথেষ্ট সময়। ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া সব মিলিয়া অসাধারন।
সাজিদ চৌধুরি তারা চলে যায়।

সেলিনা হোসেন — বিয়ে যে ঠিক করে ফেললেন মেয়ের অনুমতি নিয়েছেন?
আসাদ হোসেন — অনুমতি নেওয়ার দরকার ছিলো ঠিক আছে কিন্তু এখন ও ইয়ানা অমত করবে না। আর চৌধুরি বংশের ছেলেরা খুব ভালো হয়। তাদের পূর্বপুরুষ আভিজাত্যপূর্ন। বিশেষ করে সাজিদ চৌধুরি ওনার সুনাম শহরের কানায় কানায়। আর ওনার ছেলের তো কথায় নেই। আমি সব কিছু ভেবেই রাজি হয়েছি। আশা করি আমার হ্যা তে তোমার আপত্তি নেই। আজ রাতে আমি ইয়ানার সাথে কথা বলব। আমার মনে হয় না কখনো আমাকে না বলবে।

ভার্সিটির প্রাঙ্গনে বসে আছে হল্লা পার্টি। একটু পরে ছুটি দিয়ে দিবে। এখন রাগী গম্ভির অগ্নি চৌধুরির ক্লাস চলছে। ইয়ানা ওইদিন পর থেকে আর কখনো অগ্নির ক্লাসে জয়েন হয় না। ইয়ানার সাথে সাথে হল্লা পার্টির কেউ অগ্নির ক্লাসে জয়েন হয় না। ইয়ানা অনেকবার বলেছে তাদেরকে ক্লাস করতে কিন্তু তারা এক কথার পন করে বসেছে। যেখানে বন্ধুর সম্মান নেই সেখানে যাওয়া ঠিক না। আর তাছাড়া ইয়ানা কি এই সময় একা একা বসে থাকবে। বন্ধু হিসেবে তারা তা হতে দিবে কি করে।
তাদের আড্ডার মাঝে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে সানগ্লাসের আড়ালে এক জোড়া তীক্ষ্ণ লাল চোখ। মনে হচ্ছে এই চোখ দিয়ে আজ ইয়ানাকে ভষ্ম করে দিবে। হাত মুষ্টি করে নিজের রাগ সংযত করে হঠাৎ ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি ফোটে উঠে। যার অর্থ সময় হলে এর ফল অবশ্যই ভোগ করাবে।

ইয়ানা রুমে বসে পড়ছিলো এমন সময় আসাদ হোসেন ইয়ানার পাশে বসে। আসাদ হোসেনের উপস্থিতি টের পেয়ে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে,,,,
” কিছু বলবে আব্বু? ”
আসাদ হোসেন ইয়ানার মাথায় হাত রেখে বলে,,,,
” বলার তো অনেক কিছু ছিলো কিন্ত মনে হচ্ছে তুমি ব্যস্ত । তাহলে আমি পড়ে আসি।
ইয়ানা — না না আব্বু সমস্যা নেই তুমি বলো কি বলতে চাও।
আসাদ হসেন — দেখো ইয়ানা মেয়েরা জন্ম থেকে একটা নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত বাপের বাড়িতে থাকে। একটা সময় পর তারা বাবার বাড়ি থেকে অন্যের বাড়িতে যেতে হয়। এইটা ইসলামের একটা ফরজ কাজ। যুগ যুগ ধরে সব মেয়েরাই এই নিয়ম পালন করে আসছে। আমার কথা নিশ্চয় এতক্ষনে বুঝে গেছো কি বলতে চাইছি। তোমার বিয়ে ঠিক করেছি ইয়ানা।

ইয়ানা ছলছল চোখে আসাদ হোসেনের দিকে তাকায়। সে তো এখন বিয়ে করতে চাই না। হ্যা মেয়েরা বিয়ে করতে হয় কিন্তু আর ও পরে করবে।
ইয়ানা –; বিয়ে ঠিক করে ফেলেছো মানে? আব্বু আমাকে না জানিয়ে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে ঠিক করে ফেলেছো।
আসাদ হোসেন — জানানোর সময় পাই নি। আর আমি কোনো বাজে ছেলের হাতে আমি আমার রাজকন্যা তুলে দিব না বিশ্বাস রাখো আমার উপর। তোমার জন্য বেস্ট ছেলেকেই ঠিক করেছি। আমি তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কখনো জোড় করি নি। এখন আমি একটা জিনিস চেয়েছি আশা করব আমাকেও নিরাশ করবে না। আমার কথাটাকে একটু একটু হলেও প্রাধান্য দিবে। আগামী মঙ্গলবার তোমাদের বিয়ে। আর ছেলের সমস্ত বায়োডাটা তোমার মার কাছ থেকে নিয়ে নিও।

ইয়ানা আসাদ হোসেনের কথা দমে যায়। হ্যা এইটা সত্যি আসাদ হোসেন কখনো ইয়ানার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোড় করে নি। ইয়ানাকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়ে আগলে রেখেছে। সে কি করে পারবে তার আব্বুর মনে কষ্ট দিতে। বিয়ে তো এক দিন না একদিন হবেই। এখন না হয় আব্বু আম্মুর খুশির জন্য হয়ে যাক তাতে ক্ষতি কি।
ইয়ানা — ঠিক আছে আব্বু তোমার ইচ্ছেকে সম্মতি জানাচ্ছি। তোমাদের খুশিই আমাদের খুশি।
আসাদ হোসেন খুব সন্তুষ্ট হন। যাক আজ নিজেকে বাবা হিসেবে সার্থক মনে হচ্ছে। মেয়ে তার কথাকে প্রাধান্য দেয়।
আসাদ হসেন — ঠিক আছে তাহলে আমি যাই।
এরপর আসাদ হোসেন হাসিমুখে রুম ত্যাগ করে। অজান্তেই ইয়ানার চোখে পানি চলে আসে। কষ্ট হচ্ছে কেনো বিয়ে হয়ে যাবে বলে? ছেলের সম্পর্কে আর কি জানব। জেনেই বা কি হবে বিয়ে কি আর পিছিয়া যাবে নাকি ভেঙ্গে যাবে। আব্বু যেহেতু পছন্দ করেছে তাহলে ভালো ছেলেই হবে।

আজ বাদে কাল বিয়ে কিন্তু এই সম্পর্কে অগ্নি এখন ও কিছু জানে না। শিখা চৌধুরি গোপনে সব করে যাচ্ছে।
সময় প্রায় দুইটার কাছাকাছি। অগ্নি ভার্সিটি থেকে এসে ল্যপটপে কিছু ভিডিও কনভার্সেশন করছে।
অরিদ — আম্মু ভাইয়াকে জানাচ্ছো না কেনো? কাল বিয়ে আর আজ ও ভাইয়া কিছু জানে না। দেখো আম্মু আমি তোমাকে এলার্ট দিচ্ছি ভাইয়া যদি রেগে ভাঙচুর শুরু করে তাহলে আমি কিন্তু চৌধুরি ভিলার ত্রিসীমানায় ও থাকব না আগেই বলে দিচ্ছি।
শিখা চৌধুরি — চুপ করতো তুই। দেখতে থাক কি হয়।
শিখা চৌধুরি একটা বড় শ্বাস নিয়ে অগ্নির রুমে ডুকে।

আলিয়া — ভাইজান বেশি বেশি করে দোয়া ইউনুস পড়েন। মনে হচ্ছে একটু পর ঘুর্নিঝর হবে।
অরিদ — বেশি বেশি করে দোয়া কর আল্লাহ চৌধুরি বাড়ির জড়বস্তুগুলাকে যাতে রক্ষা করে। কারন রেগে গেলে মানুষ মরে না মরে হচ্ছে চৌধুরি ভিলার আসবাবপত্র। এরা সবার রাগের স্বীকার হয়।
আলিয়া — হ..হ্যা হ্যা।
****
শিখা চৌধুরি দরজায় নক করে বলে,,,,
” আসব নাকি ব্যস্ত আছো?
অগ্নি দরজার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” হুম আসো।
শিখা চৌধুরি অগ্নির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় কিন্তু বসে না। তিনি গলা কেশে বলে,,,,
” তোমার জন্য মেয়ে দেখেছি। ”
অগ্নি শান্ত কন্ঠে বলে,,,,
” হুম তারপর।”

অগ্নির এমন খাপছাড়া উক্তি শুনে শিখা চৌধুরি বলেন,,,
” আমি সিরিয়াস বলছি অগ্নি। আর কাল তোমার বিয়ে আমি আর তোমার বাবা ঠিক করে এসেছি। ”
অগ্নি মায়ের দিকে কপাল কুচকে তাকায়। গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,
” মজা করছো আমার সাথে। কাল আমার বিয়ে আর সেটা আমাকে বলতে এসেছো আম্মু। তোমার মনে হয় আমি বিয়ে করব লাইক সিরিয়াসলি। আমাকে রাগিয়ে দিও না আম্মু আমি কন্ট্রোল হারা হয়ে পড়ি।
শিখা চৌধুরিও অগ্নির কথায় তেঁতে উঠেন —
” মা হয় আমি তোমার। কতদিন এইভাবে জীবন পার করবে। মেয়েটাকে একবার দেখো শুধু তুমি আর না করতে পারবে না। রাগারাগি আর জেদ সাইডে রেখে আমার কথায় সম্মান দাও।
অগ্নি — আমার রুমে থেকে যাও আম্মু। তোমার এইসব যুক্তিহীন কথা নিতে পারছি না। আমি কিন্তু বাড়ি থেকে বের হয়ে যাব এন্ড আই সয়ার আর কখনো চৌধুরি ভিলার চৌকাঠেও পা রাখব না।
ছেলের যদি যেদ থাকে মা পিছিয়ে থাকবে কেনো? ছেলেটা তো ওনার ওই।
শিখা চৌধুরি — তুমি বের হবে কেনো? মা হয়ে সামান্য একটা জিনিস চেয়েছি এইটাতে ও নাখোজ। এত বছর পর দেশে ফিরলে মায়ের মমতা থাকলে আমার কথায় সম্মতি দিতে।

অগ্নি —- ইমোশনাল ব্লেকমেইল করছো আম্মু? বাট তোমার ছেলেতো অন্য ধাতু দিয়ে গড়া। এইসব ইমোশনাল ড্রামা অন্তরে প্রবেশ করে না। আর আমি এমন তোমাদের কারনেই হয়েছি। আমি আবার ও বলে দিচ্ছি এইসব বিয়ে টিয়ের কথা যাতে না উঠে। আরেকবার এমন হলে আমি বাড়ি ছাড়তে ও সময় নেব না।
শিখা চৌধুরি — ব্যাস আর কিছু করতে হবে না তোমার। চৌধুরি বাড়ির ছেলে হয়ে অন্য লাইনে জীবন যাপন করছো নিজের মর্জি মত সম্রাজ্য গড়ে তুলেছো। কেউ বাধা দেওয়ার সাহস বা ক্ষমতা নেই কারন তুমি হাতের বাহিরে চলে গেছো। মা হয়ে আমি আজ সত্যি নিরুপায়। কেমন ছেলে জন্ম দিলাম যে আমার কথা শুনে না। এমন জীবন রাখার চেয়ে তো মৃত্যু ও শ্রেয়।
অগ্নি আকস্মিক চোখ মেলে শিখা চৌধুরির দিকে তাকিয়ে বলে,,,

” আম্মু কিসব বলছো। নিজের রুমে গিয়ে রেস্ট নাও আর প্লিজ এইসব ইমোশনাল ব্লেকমেইল বন্ধ করো দম বন্ধ লাগছে। আমি বিয়ে করব না সেটা তুমিও যানো তাহলে এইসব বলে লাভ কি?
শিখা চৌধুরি –বিয়ে করবে নাতো ঠিক আছে? তাহলে কাল সকালে আমার ও মরা লাশ পাবে। এমন জীবন রেখে কি লাভ যেখানে ছেলের জীবন নষ্ট হয়ে যাওয়া দেখছে। আমি মরে গেলে তোমাদের সবার শান্তি হবে।
শিখা চৌধুরি এক প্রকার রাগ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
অগ্নি কপাল কুচকে মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আজকে তার মা এইভাবে ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে গেলো তাও এমন জঘন্যভাবে খুব ওই বাজে ছিলো।

রাত গভীর থেকে গভীর হতে থাকে। অগ্নি বিশাল বারান্দার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। আর কিছু একটার ছক কষছে। রাত একটা তবুও চোখে ঘুম নেই।
ঠিক তখন ফোন বেজে উঠে।
অগ্নি — হ্যালো বল ।
অরিদ — ভাইয়া আম্মু তোমার রুম থেকে আসার পর থেকে দরজা খুলছে না। শুধু বলছে সকাল হলেই তরা আমার লাশ পাবি এখন আমাকে ডিস্ট্রাব করিস না।
অরিদের কথা শুনে আহান হতভম্ভ হয়ে যায়। মা হয়ে এইসব কি ছেলেমানুষী। লাশের কথা শুনেই ভিতরটা আতকে উঠে।সে নিজের মাকে চিনে প্রচন্ড জেদী।
অগ্নি রুম থেকে বের হয়ে বাবা মায়ের রুমের সামনে যায়।
বাবা ভাইদের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,,,,

” সাইড দাও আমি দেখছি।”
এরপর দরজায় টুকা দিয়ে বলে,,,,
” আম্মু কিসব ছেলেমানুষী করছো? বেরিয়ে আসো বলছি এক্ষনি।”
শিখা চৌধুরি — ভুলে যাস না আমি হাওলাদার বাড়ির মেয়ে। বিয়ে হয়েছে বলে পদবি বদলেছে কিন্তু শরীরের সেই রক্ত বদলাই নি। আমার জেদ সম্পর্কে তুই ও জানিস অগ্নি। তকে দশ মিনিট সময় দিলাম। এই যে হাতে বিষের বোতল নিলাম। আমি দশ মিনিট অপেক্ষা করব যদি তুই বিয়েতে রাজি না হস তাহলে আমাকে চিরতরে হারাবি। সময় স্ট্রাট করলাম।

অগ্নি জোড়ে জোরে শ্বাস টানছে এইসব আর নেওয়া যাচ্ছে না কেনো আসলো ও বাংলাদেশে না আসলেই ভালো হত।
অরিদ — ভাইয়া প্লিজ রাজি হয়ে যা। আম্মুর জেদ সম্পর্কে জানো তুমি যা বলেছে তাই করবে। ভাইয়া তুমি তো আম্মুর সাথে থাকোনা সেই হিসেবে আম্মু থাকা না থাকা তোমার জন্য সমান। কিন্ত আমার কথাটা একবার ভাবো ভাইয়া আমাকে দেখাশুনা করবে কে?
অগ্নি অরিদকে ধমক দিয়ে বলে,,,,
‘ বন্ধ করবি তর এই ভাঙ্গা টেপ রেকর্ড বিয়াদপ। যত্তসব লজিকবিহীন কথা শুরু করেছিস তরা।
শিখা চৌধুরি —” আর। আত্র এক মিনিট। এরপর সবাইকে মুক্তি দিয়ে আমি চলে যাব। আর আমি যা একবার বলি তা করে দেখায়।

অগ্নি — আম্মু প্লিজ ছেলেমানুষী করো না । আব্বু তুমি তোমার বউকে বুঝাও।
সাজিদ চৌধুরি –আমার কথা শুনবে মনে হয় । সব তোমার হাতে অগ্নি ভালোবাসা থাকলে অবশ্যয় মাকে বাঁচাবে।
অগ্নি — আমি তো কাউকে ভালোবাসি না আব্বু। না মাকে আর না নিজেকে।
শিখা চৌধুরি — ওকে সময় শেষ। তোমরা সবাই ভালো থেকো। আর আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমদের চিরমুক্তি দিয়ে দিচ্ছি।
হঠৎ করে অগ্নির কি হলো সে নিজে ও জানে না। হারানোর ভয় চারদিকে আকড়ে ধরেছে। বার বার শিখা চৌধুরির মৃত লাশ চোখ ভাসছে। অস্থির গয়ে উঠছে ভিতর থেকে। দিক শূন্য হয়ে অগ্নি দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলে,,,,,,
” স্টপ আম্মু খবরদার মুখে কিছু দেব না। করব! আমি বিয়ে করব। তোমাদের পছন্দ করা মেয়েকেই বিয়ে করব।
সবাই এক প্রকার অবিশ্বাস্য নজরে তাকায়। এখন ওইতো বলল কারোর প্রতি ভালো বাসা নেই তাহলে মায়ের জন্য এত বেপোরোয়া হচ্ছে কেনো?

শিখা চৌধুরি — সত্যি বলছিস আগে আমার কসম কেটে বল?
অগ্নি — আম্মু তুমি খুব ভালো করে জানো আমি মিথ্যা বলি না। যা এক বার মুখ দিয়ে বের করি তা করে দেখাই। এমনি এমনি অগ্নি চৌধুরি কোনো কথা বলে না। কাল শুধু বিয়ে করতে হবে তাইতো আর তো কিছু করতে হবে না তবে তাই হোক।
এরপর অগ্নি আর এক মুহূর্ত ও এখানে দাড়াই নি । অগ্নি চলে যেতেই অরিদ দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলে,,,,
” আম্মু ড্রামা এখন বন্ধ করো ভাইয়া চলে গেছে। আমার ঘুম পাচ্ছিলো বাট ভাইয়ার কথা শুনে ঘুম উধাও হয়ে গেছে। কি সুন্দর রাজি হয়ে গেলো।
শিখা চৌধুরি দরজা খুলে দিতেই সবাই রুমে প্রবেশ করে।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩

আলিয়া — খালাম্মা পানিত বোতলটা ফেলে দেই মেঝেতে পড়ে যেতে পারে।
শিখা চৌধুরি — আরে পানি পানি বলিস না অগ্নি শুনবে। বল বিষের বোতল। আমার ছেলে যে রাজি হয়েছে এই অনেক। নাটক করি আর যাই করি রাজীতো হয়েছে।
আলিয়া — ওহহ খালাম্মা ধারুন হয়েছে। তুমি মুভি করলে পুরো হিট হয়ে যেত
অরিদ —- আম্মু তোমার এত সুন্দর ইমোশনাল ড্রামা অফফ। এমনি এমনি তো আমি রিনা খান ডাকি না।
অরিদের কথা শুনে শিখা চৌধুরি কটমট চোখে তাকায়। অরিদ মায়ের চোখ দেখে হাসতে হাসতে চলে যায়।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫