অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫
লিজা মনি

পৃথিবীতে দুটি জিনিসের অনুভুতি লিখে প্রকাশ করা যায় না। এক হচ্ছে পাওয়ার আনন্দ আর দুই হারানোর যন্ত্রনা।
ইয়ানা বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে আনন্দ আর যন্ত্রনা দুইটাই আবদ্ধ করে রেখেছে। সদ্য বিয়ে করা কনে সেজে বসে আছে চৌধুরি ভিলার একটা বিলাশ বহুল রুমে। যেখানে তার স্বামীর বসবাস। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো ওর স্বামীটা কে? কার সাথে বিয়ে হয়েছে? সেই সম্পর্কে কোনো ধারনা নেই। মনে হচ্ছে বাবা আর মা এক প্রকার তারাহুড়া করে বিয়েটা দিয়েছে। সুযোগ হয়ে উঠে নি স্বামী নামক পুরুষটাকে দেখার। দেখবে কিভাবে যার সাথে বিয়ে হয়েছে তার কোনো উপস্থিতি ওই ছিলো না। বিয়ের পাঁচ মিনিট আগে শুধু কবুল বলে অফিসের কাজের কথা বলে চলে এসেছে। ওহুম চলে আসার কথা বললে ভুল হবে এক প্রকার বিরক্তি আর রাগ নিয়ে এসেছে। প্রত্যেকটা মেয়ে তার স্বামীর সাথে শশুর বাড়িতে প্রবেশ করে কিন্তু আমি তো স্বামীর মুখটাই দেখতে পেলাম না। আম্মু যখন দেখার জন্য বলেছিলো কেনো যে জেদ করে দেখেনি সেটাই আফসোস হচ্ছে।

এখন রাত এগারোটা বাজে। প্রায় আধা ঘন্টা আগেই ইয়ানা এই বাড়িতে পা রেখেছে। তাকে মিসেস শিখা চৌধুরি নিজের সাথে করে নিয়ে এসেছে। ইয়ানার জানা মতে তার শশুর নাকি কোনো একটা কাজে আর্জেন্ট সিলেট গিয়েছে। তাই সে ও বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারে নি। বিয়েতে মাত্র ইয়ানার বাবা মা আর অগ্নির পক্ষ থেকে শুধু শিখা চৌধুরি ছিলেন। রাত সাতটার দিকে তাদের বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। কবুল বলার সাথে সাথে অগ্নি বিনা বাক্যে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আসাদ হোসেন আর সেলিনা হোসেন বিষয়টা তুলে ধরলে শিখা চৌধুরি নিজের চতুরতার সাথে বিষয়টা ধামাচাপা দেন কাজের সূত্র ধরে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইয়ানা নানান জিনিস ভেবে ওয়াশরুমে ডুকে পরে ফ্রেশ হওয়ার জন্য। যেহেতু তাদের বাসর ঘর সাজানো নেই সেহেতু শাড়ি পড়ে থাকার কোনো মানে হয় না। শিখা চৌধুরি কিছু কুর্তি আর শাড়ি দিয়ে গেছেন সেখান থেকে একটা কুর্তি নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ওয়াশরুমে গিয়ে টাস্কি খাওয়ার মত অবস্থা। এইটা ওয়াশরুম নাকি থাকার রুম। লোকের বসতরুম ও মনে হয় না এত সুন্দর হয়। ইয়ানা ভালোভাবে পুরোটা ওয়াশরুম চোখ বুলিয়ে দেখে।
কিছু সময়ের ব্যবধানে ফ্রেশ হয়ে পুরো রুমে পর্যবেক্ষন করে। পুরোটা রুমের আসবাবপত্র খুব দামী আর বিলাসিতাপূর্ন। অতিরিক্ত মানসকি চাপের কারনে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার সময় কিছু খেয়াল করে নি। শুধু একটা জীবন্ত লাশের মত হয়ে ছিলো যেদিন থেকে বিয়ের কথা শুরু হয়েছে।

ইয়ানার ধারনা অনুযায়ী ব্যক্তিটি খুব সৌখিন আর ব্যক্তিত্যসম্পন্ন। হঠাৎ করে ব্যক্তিটিকে দেখার জন্য ইয়ানা মরিয়া হয়ে উঠে। পুরো রুমে ব্যক্তিটির কোনো ছবি আছে কি না খুজতে থাকে। কিন্তু কোথা ও একটা ছবি নেই। ইয়ানা হতাশ হয়ে বির বির করে বলে,, এ কেমন লোক? নিজের বেডরুমে একটা ছবি নেই। হয়ত ছবি এইসব পছন্দ করেন না।
ইয়ানা ধীরে ধীরে পুরো রুমে দেখা শেষ করে। ড্রেসিং টেবিলে চোখ যেতে চোখ দুটি কপালে উঠে যাওয়ার উপক্রম। মেয়েদের ও মনে হয় রুপচর্চার এত জিনিস থাকে না যতগুলা ইয়ানা ড্রেসি্ং টেবিলে রাখা সরঞ্জামে দেখতে পাচ্ছে।
সময় যাচ্ছে নিজের আপন গতিতে। কিন্তু ইয়ানার অপেক্ষারত মানুষটি এখন ও আসছে না। না আসাতে মনে মনে একটু খুশি হয়েছে। যদি এসেই স্বামীর অধিকার প্রয়োগ করা শুরু করে। কিন্তু আমি তো বিয়েটা নিয়েই প্রস্তুত না অধিকার দিব কিভাবে?এইসব ভাবতে ভাবতে এক সময় গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।

জঙ্গলের পাশে নিজের তৈরি করা ডুপ্লেক্স বাড়িতে খোলা আকাশের নিচে বারান্দায় বসে একের পর এক ওইয়ানের গ্লাস শেষ করে যাচ্ছে অগ্নি। রাগে মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। সব কিছুর হিতাহিত ঙ্গান যেনো ক্রমে ক্রমে লোপ পাচ্ছে। প্রথমত যে মিশনে সে বাংলাদেশে ব্যাক করেছে তা হাত ছাড়া হয়ে গেছে, আর হঠাৎ করে বিয়ে। দুইটা কারনে যেনো প্রতিটা মুহূর্ত বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। কেনো বিয়ে করেছে ও? মায়ের কারনে? ওহুম মায়ের কারনে বললে ভুল হবে। সে তার মাকে যেকোনো উপায়ে শান্ত করতে পারত সে ক্ষমতা তার আছে। এমন কিছু করত তার মা নিজেই দরজা খুলে রুম থেকে বের হয়ে আসত। কিন্তু সে তা করলো না উল্টো বিয়েতে হ্যা করে দিয়েছে। কিন্ত কেনো? অগ্নি চৌধুরির জীবনে তো কাউকে জড়াতে চাই নি। তার সম্রাজ্য তো সাধারন মানুষ থেকে আলাদা।

সেই সম্রাজ্যে তো নিজের জীবনের ওই কোনো নিশ্চয়তা নেই সেখানে আরেকজনের নিশ্চয়তা সে কিভাবে দিবে। আর মেয়ে তো ইহজনমে ও জড়াব না। তারা একটা বিষাক্ত। যে কোনো সময় ছোবল দিতে ও পিছু পা হয় না নিজের স্বার্থে। এইসব ভাবনার মধ্যে চোখের সামনে ভেসে উঠে এক তিক্ত অতীত এক ভয়াভহ দৃশ্য। মেয়েদের নিজের জীবনের সাথে জড়ানো মানে জীবিনের সব চেয়ে বড় পাপ করা। কিন্তু না চাইতে ও জড়িতে ফেলেছি। কিন্তু কেনোওওওও। হাতে থাকা ওইয়ানের গ্লাসটা সজোরে মেঝেতে ফেলে দেয়। নিজেকে শান্ত করার জন্য দুই হাত দিয়ে চুল খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস টানে। কিছুটা শান্ত হতেই ফোনের রিংটন বেজে উঠে। অগ্নি ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে রায়ান নামটা ঝলঝল করছে।

অগ্নি — হ্যা বল।
রায়ান — কোথায় তুই?
অগ্নি — বাংলোতে।
রায়ান অবাক হয়ে বলে,,,,
” বাংলোতে কি করছিস? দেখ আরিফ সব জানিয়েছে। তুই বিয়ে করেছিস সেটা শুনা আর আমাদের সূর্যে ভ্রমন করার একি ব্যাপার। যাইহোক তুই কেনো বিয়ে করেছিস প্রশ্ন করব না। ভালোবাসিস মেয়েটাকে?
অগ্নি — যাস্ট সেট আপ ইডিয়েট। আমি মেয়েকে এখন পর্যন্ত দেখিনি। আর কোনো মেয়েকে তা ও ভালোবাসা? ভালোবাসা মাই ফুট।
রায়ানের কাছ থেকে ইউভি ফোন নিয়ে বলে,,,

” আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ এইসব কি শুনছি। অগ্নি চৌধুরি যাকে বিয়ে করেছে তাকে সে এখন ও দেখে নি। আমাদের কে একটু দেখা ভাবিটাকে।
অগ্নি — আমি চৌধুরি ভিলাই নেই।
ইউভি — আমি সিউর তুই ড্রিংক্স করছিস। একটু পর বউয়ের কাছে যাবি। তদের আজ ফুলসজ্জা আই মিন যাকে বলে বাসর রাত।এইসব ছাইপাসের গন্ধ শুনলে ভাবি নি আবার রেগে তকে ঝাড়ু পিটা করে। শুনেছি জামাই পুরো দুনিয়াতে বাঘ হলেও বউদের সামনে বিড়াল।
অগ্নি দাতে দাত চেপে বলে,,,,,

” বেশি বাড়াবাড়ি করছিস না। এখন চোখের সামনে পেলে সুট করে মারতাম বিয়াদপের দল। যেখানে বিয়েটাই মানি না সেখানে বউ কে? ইডিয়েট!
রায়ান অগ্নির রেগে যাওয়া দেখে সিরিয়াস হয়ে বলে,,,,
” আচ্ছা বাদ দে এইসব কথা। কানাডায় কবে আসছিস? বাংলাদেশে যে কারনে গিয়ে ভার্সিটির প্রফেস্যার হয়েছিস সেটা তো হাত ছাড়া হয়ে গেছে। হাত ছাড়া হলে ও সমস্যা নেই সেটা আবার নিজে নিজেই ধরা দিবে। এখন কথা হলো তর নির্বাচন নিয়ে। কি ভেবেছিস নির্বাচন লড়বি?
অগ্নি রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,
” দুই দিনের ভিতর কানাডায় ব্যাক করছি। ”

সকালের আযানের সব্দে ইয়ানা ঘুম থেকে উঠে পরে। পুরো রুমে তাকিয়ে দেখে কারোর উপস্থিতি নেই। তাহলে কি উনি আসে নি ইয়ানা একটা শ্বাস ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে চলে যায় বারান্দায়। এই বারান্দার সাইডটা খুব সুন্দর। কিন্তু একটা ফুলের গাছ নেই কেমন যেনো বেমানান লাগছে। ফুল ছাড়া বারান্দার সৌন্দর্য ফুটে উঠে নাকি?
সকালের মিষ্টি বাতাসে আলাদা এক রহমত থাকে। ইয়ানা কিছুক্ষন হাটাহাটি করে গুনগুন করে গান গাইতে থাকে। তবে সেটার শব্দ বেশি না তার নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দেখতে দেখতে ধরনীতে আলো ফুটে উঠে। নতুন বউ হিসেবে উচিত সকালে উঠে সবার জন্য নাস্তা বানানো যেই ভাবা যেই কাজ।
ইয়ানা রুমের ভিতরে ডুকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে কাউকে দেখে চিৎকার করে উঠে। ইয়ানার চিৎকারে সামনে থাকা লোকটি হতভম্ব হয়ে যায়। তবে পরক্ষনে তার দৃষ্টি গম্ভীর হয়ে উঠে। কপাল কুচকে বলে ,,,,,

” তুমি এখানে কি করছো? ”
ইয়ানা ব্যক্তিটির কন্ঠস্বর পেয়ে আশ্চর্য হয়ে পড়ে। এই ভয়েস তার পরিচিত খুব বেশি পরিচিত। ইয়ানা পিটপিট করে তাকিয়ে সামনে অগ্নিকে দেখে চোখ বড় বড় করে ফেলে,,,,,,, এরপর অবাক ভড়া কন্ঠে বলে,,,
” স্যার আপনি? ”
অগ্নির দৃষ্টিতে ছিলো রহস্য কিন্তু চেহারায় ছিলো গম্ভীর। নিজের কন্ঠে ও গম্ভীরতা বজায় রেখে বলে,,,,,
” সেটা আমার ও প্রশ্ন তুমি এখানে কেনো?
ইয়ানা — আমি আমার হাজবেন্ডের বাড়িতে আছি। বিয়ের পর মেয়েরা নিশ্চয় স্বামীর বাড়িতে আসে।
অগ্নি — স্বামীর বাড়িতে এসেছো? তাহলে তোমার স্বামীটা কে শুনি?
ইয়ানা — এক দিনের ভিতরে এই বাড়ির কারোর সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়ে উঠে নি। কথা হচ্ছে আমিই জানতে চাই নি। আমি আপনাকে এইসব কেনো বলছি?
অগ্নি ইয়ানার কথা শুনে বিরক্তি নিয়ে বলে ,,,,,

” যাকে বিয়ে করেছো তার সম্পর্কে না জেনেই কবুল বলে ফেলেছো। এখন তুমি তোমার হাজবেন্ডকে খুজো গিয়ে আর আমার রুম থেকে বের হও।আমার রুমের একটা জিনিসে হাত রাখলেও আমার অনুমতি নিতে হয় সেখানে তুমি এক রাত থেকেছে সেটা তোমার সৌভাগ্য। ”
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,
” আপনার রুম মানে কি বলতে চাইছেন স্যার?
অগ্নি দাতে দাত চেপে বলে,,,,
” আমি নিশ্চয় এতটা ও আহাম্মক না কোনো নব দম্পত্তির রুমে ডুকে যাব। নিজের রুম দেখেই এসেছি। এখন তুমি আসতে পারো।

ইয়ানা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। অগ্নি চৌধুরি তো সাজিদ চৌধুরির ছেলে। তার মানে এইটা সাজিদ চৌধুরির বাড়ি। কিন্তু আমার কার সাথে বিয়ে হয়েছে? আর স্যার এখানে কেনো? আমি অর্ধ অচেতন অবস্থায় আমাকে এক মহিলা দিয়ে গেছেন যানা মতে আমার শাশুরি হন। ওনি নিজেই তো এখানে দিয়ে গেলো তাহলে স্যার কেনো বলছে এইটা ওনার রুম। ওহহ নো পাগল হয়ে যাব। সব কিছু বিরক্ত লাগছে।
ইয়ানাকে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অগ্নি বলে,,,
” আমি এখন সাওয়ার নিব। যদি দেখতে চাও তাহলে দাঁড়িয়ে থাকো।
ইয়ানা সেদিকে লক্ষ না করে অস্ফূর্ত ভাষায় বলে,,,,
” কার সাথে বিয়ে হয়েছে আমার। এক গোলক ধাধার মধ্যে পরে রয়েছি।

অগ্নি — খুজে বের কর।
ইয়ানা — অরিদ বাদে আপনার আর কোনো ভাই আছে? নাকি আপনার সাথেই আমার..
ইয়ানা আর কিছু বলে কথা গলায় আটকে যাচ্ছে। অগ্নি চৌধুরিকে বিয়ে করা ওর জন্য অসম্ভব। ওর কুমারী জীবনের সবচেয়ে ঘৃনার ব্যক্তি হচ্ছে এই অগ্নি চৌধুরি। ভার্সিটিতে পদে পদে অপমান করেছে ওকে সেটা সে কখনো ভুলবে না।
অগ্নি তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” যেখানে বিয়েটা মানি না সেখানে তোমাকে বউ আর আমি তোমার হাজবেন্ড এইসব ভাবাটা ও নিশ্চয় ঠিক না”
ইয়ানা — তার মানে আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে। বিয়ে মানেন না তাহলে বিয়ে কেনো করেছেন? আপনি তো আমাকে প্রচুর ঘৃনা করেন তাই না? তাহলে আমাকে বিয়ে করেছেন কেনো?
অগ্নি পেন্টে হাত গুজে ইয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বলে,,,,
” আওয়াজ নিচে সোনা। তুমি যেমন নিজের বিয়ে করা হাজবেন্ডকে চিনো নি আমিও দেখিনি কাকে বিয়ে করছি? কে সে? নাহলে তোমার মত অসভ্য আর বিয়াদপকে অগ্নি চৌধুরি কখনো বিয়ে করতে না। আর এটাকে বিয়ে বলে নাকি?

ইয়ানা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। রাগ হচ্ছে প্রচুর কেনো এক নজর দেখলো না কার সাথে বিয়ে হচ্ছে। এই কারনেই অতিরিক্ত জেদ ভালো না। ইয়ানার চোখে পানি টুইটুম্বুর।
নাক টেনে বলে,,,,,
” আপনার মত লোকের সাথে আমি থাকতে চাই না। আপনি আমাকে ঘৃনা করেন আর আমি আপনাকে। আপনি আমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেন নি তাহলে বিয়েটার তো কোনো মানে নেই। আর আপনি আমার স্যার মানে গুরুজন।
ইয়ানা থাকতে চাই না এই কথাটা যেনো অগ্নির মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। ইচ্ছে করছে গালে দুইটা থাপ্পর বসাতে। কেমন মেয়ে এইটা বিয়ে হয়েছে কাল সকালেই বলছে আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না। আবার স্বামীকে না দেখে বিয়ে করে স্বামীর বাড়িতে ও চলে এসেছে।
অগ্নির রাগের ফলে চোখ দুইটা লাল হয়ে পরে। কিন্তু রাগের কারন সে নিজে ও বুঝতে পারছে না। তবে এই মুহূর্তে ইয়ানাকে সহ্য হচ্ছে না। অগ্নি চোখ বন্ধ করে রাগী কন্ঠে বলে,,,

” বের হও রুম থেকে বিয়াদপ। আর এক মুহূর্ত ও যাতে এখন তোমায় চোখের সামনে না দেখি।
ইয়ানা কিছু বলতে গিয়ে ও বলল না। অগ্নির ধমক খেয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবে,,,
” উনি বিয়েটা নিয়ে এত শান্ত কিভাবে? বিয়ে নিয়ে উনি এত শান্ত থাকার মত তো ব্যক্তি না যেখানে আমার সাথে বিয়ে হয়েছে।
ইয়ানা মাথায় গোমটা টেনে নিচে নেমে যায়। নিচে নামতেই শিখা চৌধৃরি ইয়ানাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। শিখা চৌধুরির পাশেই দাদুমনি বসে ছিলো। বয়সের কারনে হালকা নুইয়ে গেছে কিন্তু দেখে মনে হয় এখন ও শক্তপোক্ত।ইয়ানা সবাইকে সালাম দিয়ে মাথা নিচু করে রাখে। কেমন যেনো ভয় ভয় লাগছে। ইচ্ছে করছে ছুটে পালিয়ে যায়। শিখা চৌধুরি হয়ত ইয়ানার মনের অবস্থা বুঝরে পেরেছে।
ওনি তার মাথায় হাত রেখে বলে,,,,

” এত ঘাবরানোর কিছু নেই মা। মিসেস সেলিনা হোসেন যেমন তোমার আম্মু ছিলো ঠিক তেমন ভাবে আমি তোমার আরেকটা মা। নির্ধিধায় সব বলবে আর আবদার করবে। আর ওনি হচ্ছে তোমার দাদী শাশুড়ি।
ইয়ানা শিখা চৌধুরির কথায় সাহস পায়। নাহ ওনি অগ্নি চৌধুরির মত না। ইয়ানা দাদুমনির দিকে তাকিয়ে বলে,,,
” আসসালামু আলাইকুম দাদুমনি।
দাদুমনি — ওয়া আলাইকুম আসসালাম। মাইয়া খুব সুন্দর শিখা তর পছন্দ আছে বলতে হবে। আমাদের পুরো বাড়ি মনে হচ্ছে ঝলঝল করছে। শুনো মেয়ে এই বাড়িটা তোমার এইটা মনে রাখবে। যখন যেভাবে ভালো লাগে সেভাবে চলাচল করবে। এই বাড়িতে শুধু তোমার শাশুড়ি, শশুড় যে এখন সিলেটে আছে আজ রাতে ফিরবে, আহান, আমি আর অরিদ আহানের ছোট ভাই।
ইয়ানা — আহান কে দাদুমনি?
দাদুমনি — আরেহ এইটা তর জামাইর নাম ওই। আহান নামে তর জামাইর শৈশব কেটেছে কিন্তু যেদিন বিদেশ গিয়েছে এরপর থেকেই সে অগ্নি নামে পরিচিত। আমরা শুধু আহান ডাকি নাহলে সবাই অগ্নি ওই ডাকে। তবে অভ্যাস বসত আমরা ও অগ্নি ডেকে ফেলি।

ইয়ানা মনে মনে ভাবে কেউ বিদেশ গেলে নিজের নাম চেইঞ্জ করে ফেলে।
ইয়ানা — আপনারা বসুন আমি সবার জন্য চা বানিয়ে আনছি।
শিখা চৌধুরি —– খবরদার কিচেনের কাছে ও যাবি না । বাড়িতে প্রচুর স্টাফ আছে। তকে রান্নার জন্য আনিনি মেয়ে বানাব বলে এনেছে। আগে বল তদের সম্পর্ক ঠিক আছে তো।
ইয়ানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহান সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে উঠে,,,,
” এই কথাটা ব্লেকমেইল করে বিয়ে দেওয়ার আগে ভাবা উচিত ছিলো। সম্পর্ক ঠিক থাকবে কি না।
শিখা চৌধুরি — আজ এত সকালে অফিসে যাচ্ছ নাকি ভার্সিটিতে?
আহান — ভার্সিটিতে গিয়ে কি করব আম্মু? আমি তো ভার্সিটির চাকরি করছি না তাহলে নিঃস্বন্দেহে অফিসেই যাচ্ছি তাই না।

শিখা চৌধুরি —- ভার্সিটিতে যাচ্ছ না মানে?
আহান — মানে কাজ ছেড়ে দিয়েছি। নিজের মিশনের জন্য কয়েকদিনের জন্য হয়েছিলাম বাট সারাজীবনের জন্য নয়। আম্মু তুমি ভালো করেই জানো এইসব প্রফেস্যার ট্যাগ আমার সাথে যায় না।
অগ্নি চৌধুরি চাকরি ছেড়ে দিয়েছে এইটা শুনে ইয়ানার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। এত উপদস্থ চাকরি ছেড়ে দেই কোন আহাম্মকে। মিশনের জন্য চাকরি নিয়েছে মানে? এই লোকের চাহনি, কথা সব এত রহস্য জনক মনে হয় কেনো যেনো কোনো মাফিয়া হুহ? ধুর কিসব ভাবছি মাফিয়া হতে যাবে কেনো?

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪

শিখা চৌধুরি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহান ড্রয়িংরুম ত্যাগ করে। শিখা চৌধুরি হতাশ হয়ে আহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৬