হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩৮

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩৮
সানা শেখ

“আগামী কাল তোমার ভার্সিটি আছে না?”
“হ্যাঁ।”
“ঘুমিয়ে পড়ো সকালে উঠতে হবে তো। ঘুম না হলে সারা দিন ভালো লাগবে না, মাথা ব্যাথা করবে, ক্লাসেও মন বসবে না।”
“এখন আর ঘুম আসবে না। তোমাকে ছাড়া ভালো লাগে না কিছু।”
“তেরো বছর অপেক্ষা করেছো সেখানে এখন তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে তার মধ্যে পনেরো দিন হয়ে গেছে আর মাত্র আড়াই মাস আছে।”

“একেক টা মিনিট লাগে এক দিনের সমান।”
আলভী তাকিয়ে থাকে মায়ার মুখের দিকে। তারপর আবার বলে,
“ঘুমাও, চোখ মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে। ঠিক মতো নিজের যত্নও নাও না এখন।”
“আসবে না ঘুম, তুমি এসে যত্ন নিও আবার তাহলেই হবে।”
“আগে তো আসি তারপর না যত্ন নেব। এখন এসির টেম্পারেচার কমিয়ে দাও। ব্ল্যাঙ্কেট জড়িয়ে নিজের দুই পাশে বালিশ দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো দেখবে ঘুম চলে আসবে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এভাবে কিভাবে ঘুম আসবে?”
“আসবে, লাইট অফ করে তুমি শুয়ে পড়ো।”
আলভীর কথা মতো তাই করে মায়া। লাইট অফ করে ডিম লাইট অন করে। এখন যথেষ্ট ঠান্ডা লাগছে তাই এসির টেম্পারেচার কমায় না। ব্ল্যাঙ্কেট জড়িয়ে কোলবালিশ টা পিঠের সাথে ঠেকিয়ে নেয় , আলভীর বালিশ টা জড়িয়ে ধরে ফোনের স্ক্রিনে তাকায়। আলভী হয়তো ওকে দেখতে পাচ্ছে না ভালো ভাবে কিন্তু মায়া স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছে আলভী কে।
আলভী বলে,
“এবার চোখ বন্ধ করে ভাবো আমি তোমার সাথে তোমার পাশেই শুয়ে আছি। চোখ বন্ধ করে রাখো, চোখ খুলবে না। আমি এখানেই আছি।”

সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে মায়ার।
শোয়া থেকে উঠে বসে ফোনের পাওয়ার বাটন চেপে স্ক্রিনে তাকায়। সাড়ে সাতটার উপরে বেজে গেছে। আজকেও ফজরের নামাজ মিস গেল।
হেলে দুলে বেড থেকে নেমে দাড়ায়। আলসেমি ভঙ্গিতে দুই হাত দুদিকে মেলে দেয়। তিন মাসে যত টুকু মোটা হয়েছিল পনেরো দিনে সেটুকু চিকন হয়ে গেছে আবার।
এখন আর আগের মতো গোছালো পরিপাটি মায়া নেই, সেই এলোমেলো অগোছালো মায়া হয়ে গেছে।
আলভীর কাছ থেকে আসার পর ঠিক মতো নিজের যত্ন নেয় না। সময় মতো খায় না। যেখানে সেখানে মন
ম রা হয়ে ঝিম ধরে বসে থাকে।

ফোন টা চার্জে লাগিয়ে হেলে দুলে ওয়াশরুমে প্রবেশ করে।
ফ্রেস হয়ে নীচে নেমে আসে। সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে ডাইনিং রুমে।
নাস্তা সেরে রুমে এসে তৈরি হয়ে নেয় ভার্সিটি যাওয়ার জন্য। বিয়ের পর কয়েক দিন ক্লাস করেছিল মায়া। সেই কয়েক দিন আলভী মায়া কে ভার্সিটি নিয়ে যেত আবার নিয়ে আসতো। মায়ার সহপাঠীরা তাঁকিয়ে থাকতো আলভীর দিকে। তার পর টানা তিন মাসের বেশি ক্লাস মিস দিয়েছে।
এই পড়াশোনার জন্যই জার্মানি থেকে ফিরে এসেছে নয়তো ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে আলভীর সাথেই বাংলাদেশে ফিরে আসতো।

ভার্সিটি তে আগেই বলা হয়েছিল মায়া তিন মাসের জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছে। এই তিন মাস মায়া কিভাবে পড়াশোনা করবে তার ব্যবস্থা বাংলাদেশ থেকে করেই গিয়েছিল আলভী।
নিচে এসে মাহিদ এর সাথে বেরিয়ে যায় মায়া।
ভার্সিটিতে এখন আর কেউ মায়া কে কিছু বলতে পারে না। এখন সবাই আগ বাড়িয়ে মায়ার সাথে কথা বলতে আসে। মায়া অবাক হয়, আগে যারা ওকে নিয়ে হাসাহাসি করতো এখন তারাই ওকে ফ্রেন্ড বানাতে চায়। মানুষ এভাবে কিভাবে রং বদলাতে পারে?

ভার্সিটি থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে খাবার খেয়ে রুমে ফিরে আসে। আলভী কে কয়েক বার কল করেও পায় না মায়া, হয়তো বিজি আছে।
বেডে শুয়ে কতক্ষন গড়াগড়ি করে উঠে দাঁড়ায়।
ফোন হাতে নিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
সোজা চলে আসে মায়ের রুমে। মেহবুবা মেহের শুয়ে আছেন বেডে। মায়া বেডে উঠে মায়ের শরীর ঘেঁষে শুয়ে পড়ে। মেহবুবা মেহের এর ঘুম হালকা হয়ে আসে। চোখ মেলে দেখেন মেয়ে তার বুকের সাথে মিশে শুয়ে আছে। মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে বলেন,

“কি হয়েছে?”
“কিছু না।”
“মন খারাপ?”
“ভালো লাগছে না।”
“আলভীর সাথে কথা হয়নি?”
“বিজি আছে বোধহয়, কল রিসিভ করছে না।”
“ফ্রি হয়ে কল করবে।”
“আম্মু।”
“হুম।”
“তোমাকে কিছু বলার ছিল।”
“বল।”
মায়া মুখ তুলে মায়ের মুখের দিকে তাকায়। মেহবুবা মেহের মায়ার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছেন।
মায়ার চোখ মুখ এখন কেমন যেন দেখায়। আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে মায়ার মধ্যে।

কে টে গেছে আরো দুই মাস।
এখন রাত দশ টা। বাড়ির সবাই খাওয়া দাওয়া সেরে সোফায় বসে গল্প করছে। আগামী কাল ছুটির দিন তাই কারো তারা নেই ঘুমোনোর জন্য। মায়া ঘুমিয়ে গেছে অনেকক্ষণ আগে। মানতাসাও ঘুমিয়ে গেছে।
ড্রইং রুমে মাহিদও নেই, সন্ধ্যা সাত টার বাড়ি থেকে বেরিয়েছে এখনো ফেরেনি। কয়েক বার কল করেও ওকে পাওয়া যায়নি।
এই তিন জন বাদে বাকি সবাই সোফায় বসে আছে এখন।
সকলের কথার মাঝেই বাড়ির কলিং বেল বেজে ওঠে।
মাহির বসা থেকে উঠে ডোরের দিকে এগিয়ে যায়। নিশ্চই মাহিদ এসেছে তাছাড়া এত রাতে অন্য কেউ আসবে না।
ডোর খুলে মাহির অবাক।
ডোরের সামনে আলভী দাঁড়িয়ে আছে। বড় ভাইয়ের অবাক হওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

“সারপ্রাইজ।”
মাহির নিজেও জড়িয়ে ধরে খুশি হয়ে বলে,
“আজকে যে আসবি একবারও তো বললি না।”
“বললে কি আর সারপ্রাইজ হতো নাকি?”
দুই হাতে দুটো স্যুটকেস নিয়ে মাহিদ ডোরের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“তোমরা দুজন ভেতরে ঢুকে জড়াজড়ি করো, আমাকে ভেতরে ঢুকতে দাও এখন।”
সোফায় বসে থাকা সকলে ততক্ষণে উঠে এসেছে। মাহির কে ছেড়ে সকলের দিকে তাকিয়ে দুই হাত আবারো দুদিকে প্রসারিত করে বলে,
“সারপ্রাইজ।”

সত্যি সত্যিই সবাই সারপ্রাইজ হয়ে গেছে। অবাকের মাত্রা এমন যে কেউ কিছু বলতেই পারছে না।
বিকেলের দিকে যখন কথা হলো তখনও বলল আরো এক মাস পর আসবে। আর এখন বাড়িতে উপস্থিত সশরীরে।
আলভী সকলের দিকে তাকিয়ে দেখে মায়া নেই এখানে। হয়তো নিজের রুমে রয়েছে। মাকে জড়িয়ে ধরে সকলের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কথা না বলে সবাই এভাবে তাঁকিয়ে আছো কেন? সারপ্রাইজ পেয়ে কথা বলতে ভুলে গেছো নাকি সবাই?”
ঐশী রহমান বলেন,
“তুমি না বিকেল চারটায় বললে সামনের মাসে আসবে? তখন তাহলে কোথায় ছিলে?”
“তখন আমি দুবাই এয়ারপোর্টে ছিলাম।”
“মাহিদ কে কোথায় পেলে?”
“ওকে বলেছিলাম আমি আসছি, ও যেন কার নিয়ে এয়ারপোর্টে যায়।”
“এই জন্য বার বার নিষেধ করার পরেও বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল!”
“হুম।”

আলভী সহ সকলে সোফায় বসে।
আলভী বলে,
“মানতাসা কোথায়?”
“মানতাসা আর মায়া দুজনেই ঘুমিয়ে গেছে।”
আলভী বলে,
“মায়া এত ভালো হলো কিভাবে? আগে তো রাত এক টা দেড় টা পর্যন্ত জেগে থাকতো আর এখন সাড়ে আটটা নয়টার মধ্যে ঘুমিয়ে যায়। আশ্চর্যের ব্যাপার স্যাপার।”
সবাই একে অপরের মুখের দিকে তাকায়। আলভী এদের কাহিনী বুঝতে না পেরে নিজেও সকলের মুখের দিকে তাকাতাকি করে। স্বভাব সুলভ কপাল ভ্রু কুঁচকে বলে,
“একে অপরের মুখের দিকে কি দেখছো সকলে?”
আলতাফ মাহমুদ বলেন,
“মায়ার সাথে দেখা করে আসো আগে। তোমাকে হঠাৎ দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে সো বি কেয়ার ফুল।”
আলভী সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
মাহিদ এসে সোফার পাশে আরো দুটো স্যুটকেস রাখে। বড় বড় চার টা স্যুটকেস দেখে আহনাফ মাহমুদ বলেন,

“এত কি নিয়ে এসেছো এগুলোর মধ্যে? মায়ার সাথেও তো তিন টা দিয়েছিলে।”
আলভী স্যুটকেস চার টার দিকে তাকায়।
গোলাপি রঙের একটা স্যুটকেস দেখিয়ে বলে,
“এটা মানতাসার।”
নীল রঙের একটা স্যুটকেস দেখিয়ে বলে,
“এটা বাড়ির সকলের জন্য।”
বাকি ব্ল্যাক কালার দুটো নিজের দুই হাতে নিয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,
“এ দুটো আমাদের।”
মাহিদ আরেক টা ব্যাগ দেখিয়ে বলে,
“ওই দুটো নিয়ে যাচ্ছো, এটা কে নেবে?”

আলভী ফিরে এসে ব্যাগ টা কাঁধে নিয়ে আবার সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়। এই ব্যাগের মধ্যে ওর ল্যাপটপ, পেপার্স সহ আরো অনেক কিছু আছে। একটা একটা করে স্যুটকেস দুটো উপরে তোলে, অনেক ভারী। এই স্যুটকেসের জন্য আলাদা করে অনেক টাকা খরচ হয়েছে।
উপরে এসে স্যুটকেস দুটো টেনে নিয়ে নিজের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। ডোর হাত দিয়ে ঠ্যালা দিতেই খুলে যায়। ভেতরে ডিম লাইটের নীল আলো জ্বলছে।
ভেতরে প্রবেশ করে ডোর লক করে দেয় ভেতর থেকে। স্যুটকেস ব্যাগ এক পাশে রেখে মায়ার শিয়রে এসে দাঁড়ায়। বড় লাইট অন করে দেয়, মুহূর্তেই পুরো রুম সাদা আলোয় ঝলমলিয়ে ওঠে। মায়ার মুখ টা চোখের সামনে স্পষ্ট হয়। পা থেকে গলা অব্দি ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে ঢাকা। বিভোর হয়ে ঘুমিয়ে আছে। আলভী হাঁটু মুড়ে বসে। হাত বাড়িয়ে মায়ার গালে হাত ছোঁয়ায়। ছোঁয়া পেয়ে কপাল ভ্রু কুঁচকে নেয় মায়া ঘুমের ঘোরেই। আলভী একটু উচু হয়ে মায়ার কপালে গালে ওষ্ঠ ছোঁয়ায়। মৃদু ভাবে নড়ে ওঠে মায়া। কপাল ভ্রু আগের চেয়েও বেশি কুঁচকে নিয়েছে।
আলভী মায়ার এক হাত বের করে মুঠো করে ধরে।
আলভী মৃদু স্বরে ডাকে,

“মায়া পরী।”
মায়ার সাড়া শব্দ নেই। আলভী আবার ডাকে,
“মায়া পরী আমি এসে গেছি।”
মায়া চোখ বন্ধ রেখেই ঘুম জড়ানো গলায় বলে,
“আসো ঘুমাও।”
“স্বপ্ন দেখছো এখনো! চোখ মেলে তাকাও দেখো আমি সত্যি সত্যিই এসেছি তোমার কাছে। চোখ খোলো মায়া পরী।”
এতক্ষণ মায়ার মনে হচ্ছিল স্বপ্নে আলভী কে দেখছে আর ওর কথা শুনছে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আলভী সত্যি সত্যিই এসেছে। চোখ মেলে তাকায়। চোখের সামনে ভেসে ওঠে আলভীর হাস্যোজ্বল চেহারা। মায়া চোখ বন্ধ করে আবার তাকায়। সত্যি সত্যিই তো আলভী ওর সামনে বসে আছে।
লাফিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে। দুই পা বেড থেকে নামিয়ে দিয়ে বসে আলভীর মুখ দুই হাতে আগলে ধরে।
কান্না জড়িত গলায় বলে,

“তুমি সত্যি সত্যিই এসেছো?”
উপর নিচ মাথা নাড়ায় আলভী। বেড থেকে নেমে আলভীর কোলে চড়ে বসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আলভীর গলা। খুশিতে আর একটা কথাও বের হয় না মায়ার মুখ দিয়ে। নিজেকে সামলাতে না পেরে কেঁদে ওঠে। আলভী নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো ফ্লোরে।
পাঁচ, দশ মিনিট এভাবে প্রায় ত্রিশ মিনিটের মতো পেরিয়ে যায় একে অপর কে জড়িয়ে ধরে থেকে। মায়ার কান্না বন্ধ হয়ে গেছে অনেকক্ষণ আগে। এখনো আগের মতোই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। মায়ার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আলভী সত্যি সত্যিই এসেছে। ওর মনে হচ্ছে এটা স্বপ্ন, আলভী কে ছেড়ে দিলেই ওর ঘুম ভেঙে যাবে আর আলভীও উধাও হয়ে যাবে। তাই ছাড়ছে না আলভী কে।
আলভী মায়ার মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,

“মায়া পরী তোমার মুখ টা তো একটু দেখি। কত দিন ধরে সামনে থেকে তোমাকে দেখি না।”
“তুমি সত্যি সত্যিই এসেছো নাকি এটা আমার স্বপ্ন-কল্পনা?”
“আমি সত্যিই এসেছি, এটা তোমার স্বপ্ন বা কল্পনা নয়।”
“তুমি না বললে আরো এক মাস পর আসবে।”
“মিথ্যে বলেছিলাম তোমাদের সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।”
মায়া আলভীর গলা ছেড়ে কোল থেকে নেমে বসে ফ্লোরে। আলভী মায়ার মুখ আগলে ধরে দুই হাতে। গাল দুটো আগের চেয়েও বেশি ফুলে গেছে, গলুমোলু হয়ে গেছে। এগিয়ে ঝুঁকে পড়ে মায়ার সারা মুখে অসংখ্য চুমু খায়। মনের তেষ্টা মিটিয়ে দেখতে শুরু করে।
মায়া নিজেও তাঁকিয়ে আছে আলভীর মুখের দিকে। আলভী আগের চেয়েও শুকিয়ে গেছে।
মায়া আলভীর গালে হাত রেখে বলে,

“আগের চেয়ে শুকিয়ে গেছো তুমি।”
“তুমি আছো তো, এখন আবার আগের মতো হয়ে যাব।”
“বিকেলে যখন তোমার সাথে কথা বললাম তখন তুমি কোথায় ছিলে? এত দ্রুত কিভাবে আসলে?”
“তখন দুবাই এয়ারপোর্টে ছিলাম।”
মায়া আবার আলভী কে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি এসেছো।”
“কি করলে বিশ্বাস হবে?”
“জানিনা।”
“সারপ্রাইজ কেমন দিলাম?”
“তোমাকেও সারপ্রাইজ দেওয়ার আছে।”
“কি সারপ্রাইজ?”
মায়া আলভী কে ছেড়ে বসে আবার।
আলভীর মুখের দিকে তাকায়। আলভীও তাকিয়ে আছে মায়ার মুখের দিকে কি সারপ্রাইজ দেবে সেটা দেখার আশায়।
মায়া আলভীর ডান হাত টেনে এনে নিজের তল পেটে চেপে ধরে। হাঁসি মুখে বলে,

“কিছু অনুভব করতে পারছো?”
আলভীর চোখ দুটো স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বড় বড় হয়ে যায়। বুকের ভেতর ধড়ফড় করতে শুরু করে।
উত্তে*জনায় হাত পা কাঁপতে শুরু করে। কাঁপতে থাকা হাত টা আরেকটু প্রেসার দিয়ে চেপে ধরে পেটে। বাম হাত টা উঁচু করে। হাত টা কাপছে থরথর করে। মায়া তাকিয়ে আছে হাত টার দিকে। আলভী এক আঙ্গুল দিয়ে নিজের দিকে দেখিয়ে বলে,
“আ আ আমি বাবা হব?”
উপর নিচ মাথা নাড়ায় মায়া। আলভীর মধ্যে কিছু একটা হচ্ছে। ওর হাত আগের চেয়েও বেশি কাপছে। ঠিক ভাবে কথাও বলতে পারছে না।
আবার তোতলাতে তোতলাতে বলে,

“স সত্যি সত্যিই আ আমি বাবা হ হব।”
“হ্যাঁ।”
“ক কত দিন হয়েছে বে বেবির বয়স?”
“বেবি না বেবিদের বলো। তিন মাস পাড় হয়ে চার চলছে। গত কাল চেকআপ করাতে গিয়েছিলাম। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করার পর ডক্টর বলেছেন দুটো ভ্রূণ আছে। টুইন বেবি হবে আমাদের। আমি এবং বেবিরা তিন জনেই সুস্থ আছি।”

আলভীর হাতের কাঁপুনি আরো বেড়ে গেছে। আলভী খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে কিন্তু হাসতে পারছে না।
অতিরিক্ত সারপ্রাইজ পেয়ে এখন অবস্থা খারাপ। একে তো এত গুলো দিন পর বাড়িতে এসেছে, নিজের ফ্যামিলি কাছে পেয়েছে, ভালোবাসার মানুষ টা কে কাছে পেয়েছে। আবার শুনেছে বাবা হবে, এখন আবার শুনছে টুইন বেবির বাবা হবে। ফ্যামিলি কে কাছে পাওয়ার খুশি, ভালোবাসার মানুষ টা কে কাছে পাওয়ার আনন্দ, বাবা হবে এত বড় সারপ্রাইজ, উত্তে*জনা, এক্সাইটমেন্ট হজম করতে পারে না আলভী। থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে ঠাস করে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।

আলভী কে এভাবে পড়তে দেখে মায়া শকড। দ্রুত আলভী কে ধরে দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছে। মায়া চিৎকার করে বাবা ভাই সকল কে ডাকে আর বার বার আলভী কে ডাকে।
একটু সময়ের মধ্যেই সকলে চলে আসে ওদের রুমের সামনে। ডোর ধাক্কা দিয়ে বার বার জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?
মায়া দ্রুত উঠে গিয়ে ডোর খুলে দেয়। হুড়মুড়িয়ে সবাই ভেতরে প্রবেশ করে। আলভী কে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে সবাই উতলা হয়ে ওঠে। মাহির আর আলতাফ মাহমুদ জগ থেকে পানি নিয়ে আলভীর চোখে মুখে দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে। ঐশী রহমান প্রায় কেঁদেই দিয়েছেন। বাকি সবাইও বেশ উতলা হয়ে আছে। আহনাফ মাহমুদ মায়ার দিকে তাকিয়ে বলেন,

“আলভীর কি হয়েছে মায়া?”
মায়া আলভী কে ধরে বসে আছে। কাদতে কাদতে বলে,
“জানিনা কি হয়েছে?”
“কিছু করেছিস? কি বলেছিস ওকে?”
এর মধ্যে আলভীর জ্ঞান ফিরে আসে। মায়া আলভীর দিকে তাকিয়ে আবার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
“ওকে কি করবো আমি? বাবা হবে সেটাই বলেছি শুধু। শোনার পর থেকেই ওর হাত কাপছিল, টুইন বেবি হবে সেটা বলার একটু পরেই অজ্ঞান হয়ে গেছে।”
আলভী উঠে বসে। মায়ার ওড়না টেনে চোখ মুখ মুছে নেয়। এখনো আলভীর হাত পা কাপছে।
মাহির বলে,

“চাচ্চু বললো মায়া তোকে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে। সেজন্য তোকে সাবধানও করে দিল। উল্টো তুই কিনা টুইন বেবির বাবা হবি শুনে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি!”
ঐশী রহমান বলেন,
“ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে সবাই কে।”
আলভী এক হাতে মায়া কে জড়িয়ে ধরে বলে,
“এত বড় সারপ্রাইজ পেয়ে অজ্ঞান হবো না তো কি হব? এত বড় সারপ্রাইজ পেয়ে এ্যাটাক যে চলে আসেনি সেটাই তো অনেক। পর পর এত বড় বড় সারপ্রাইজ পেয়েছি যে খুশি ওভার লোড হয়ে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলাম। এখন বের হও সবাই রুম থেকে।”
মাহির রুম থেকে বের হতে হতে বলে,
“জীবনের প্রথম দেখলাম টুইন বেবির বাবা হবে শুনে কেউ অজ্ঞান হয়ে যায় খুশির ঠেলায়।”
মাহিদ বলে,

“আবার অজ্ঞান হয়ে যেও না।”
আস্তে আস্তে সবাই বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
আলভীর হাত পা শরীর তখনও কাপছে। মায়া কে তুলে বেডে বসানোর চেষ্টা করে। তুলতে না পেরে বলে,
“পা ঝুলিয়ে বেডে বসো।”
মায়া বিনা বাক্যে বেডে উঠে বসে পা ঝুলিয়ে।
আলভী মায়ার পেটে আবার হাত রাখে। পেট আগের চেয়ে অনেক টা উঁচু হয়েছে। হাত রাখলে অনুভব করা যায় পেটের ভেতর কেউ আছে।
মায়ার কোমর জড়িয়ে ধরে পেটে গাল ঠেকিয়ে বসে রইলো।
মায়া আলভীর চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দেয়।।
আলভী পেটে গাল ঠেকিয়ে রেখেই বলে,

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩৭

“চার মাস হয়ে গেছে আর আমি আজকে জানতে পারলাম আমি বাবা হব। এত দিন কেনো বলোনি কেউ?”
“যেদিন টেস্ট করিয়েছি সেদিনই বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পরে আবার ভাবলাম তুমি বাড়িতে আসলে তখন তোমাকে জানাব। সবাই মিলে তোমাকে সারপ্রাইজ দেব ভেবেছিলাম।”
“এসেছিলাম সবাই কে সারপ্রাইজ দিতে উল্টো সবাই মিলে এত বড় সারপ্রাইজ দিলে যে হজম করতে না পেরে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলাম।”
মায়া হেঁসে ওঠে আলভীর কথা শুনে।

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩৯