অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১২

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১২
লিজা মনি

ইয়ানা ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলো। অগ্নি শাওয়ার শেষ করে ইয়ানার পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। আয়নায় অগ্নিকে দেখে ইয়ানা ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,,,,,
“” কি হয়েছে ”
অগ্নি ইয়ানার চুলে মুখ ডুবিয়ে বলে,,,,,
” চুলে এত নেশালো সুগন্ধ কেনো সুইটহার্ট।”
ইয়ানা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,
” এইটা চুলের নয় শ্যাম্পুর সুগন্ধ। ছাড়ুন এইবার আমাকে ড্রেস পরে নিন।
এই বলে ইয়ানা অগ্নির সামনে থেকে সরে যায়। ইয়ানা এইভাবে এড়িয়ে চলে যাওয়াতে অগ্নি রাগে হাত দুটি মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। দাতে দাত চেপে ঘাড়ে বৃদ্ধা আঙ্গুল ঘেসে আয়নার দিকে তাকায়।
অগ্নিকে এক জায়গায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে ইয়ানা বলে,,,,,,

” কি হলো দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।”
অগ্নি ঠান্ডা কন্ঠে বলে,,,,,,
“” হুম ”
কিছু সময় ব্যবধানে অগ্নি রেডি হয়ে খাটের উপর বসে। ইয়ানার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মোলায়েম কন্ঠে বলে,,,,,,
” ইয়ানা ”
অগ্নির ডাক শুনে ইয়ানা তার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
” হ্যা কিছু বলবেন “?
অগ্নি — যদি কখনো শুনো আমি ভালো লোক নয় তখন তুমি কি করবে?
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,,
” হঠাৎ এমন প্রশ্ন “?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অগ্নি — বলো না। আমি তো সিরিয়াস বলছি না শুধু জানতে ইচ্ছে করছে।
ইয়ানা মাথায় উড়না বেধে বলে,,,,,,,
” যদি কখনো এমন মনে হয় তাহলে আপনাকে ভালো পথে ফিরিয়ে আনব নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে। ”
অগ্নি — যদি তোমার মনে হয় আমি তোমার ভাবনার চাইতেও খারাপ। আমি এক অন্ধকারের প্রতীক, ধ্বংসাত্বক তাহলে ও কি আমাকে আগলে রাখবে।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা থম মরে যায়। হঠাৎ এমন প্রশ্ন তার বোধগাম্য হচ্ছে না। লোকটাকে এত অন্যরকম লাগছে কেনো আজকে? ওনি কি কিছু লুকাচ্ছে? ওনি কি সত্যি কোনো বাজে লাজে লিপ্ত নাকি? ইয়ানা নিজের মাথায় নিজেই গাট্টা মেরে বলে,,,,

” ধুর বাল কিসের লজিকছাড়া চিন্তাভাবনা আসে মাথায়। হতে পারে উনি একটু বেশি গম্ভীর আর রাগী কিন্তু তাই বলে খারাপ কাজে জড়াবে এইসব ভাবা টা ও পাপ। উনি খুব ভালো একজন ব্যক্তি এক মাসে এইটুকু বুঝেছি। তাই খারাপ হওয়ার কোনো উপাই ওই নেই।
ইয়ানা অগ্নির কাছে এসে হাসি মাখা মুখে এসে দাঁড়ায়।
অগ্নির ঘাড় পর্যন্ত চুলগুলো নাড়াতে নাড়াতে বলে,,,,
” পুরুষ তুমি যদি হও প্রলয়কারী আর আমি হব সেই প্রলয়ের বিনাশকারী। ”
অগ্নি ইয়ানার হাত দুটি নিজের মুঠোয় নিয়ে আলতো চুমু খায়। অগ্নির ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই ইয়ানা সহসা কেঁপে উঠে। ইয়ানা আবেগে অস্ফুর্ত ভাষায় বলে,,,,

” ভালোবাসেন আমায়? ”
অগ্নি ইয়ানাকে তাড়া দিয়ে বলে,,,,,,
” তাড়াতাড়ি এসো আমি যাচ্ছি। ”
ইয়ানার প্রশ্নটাকে অগ্নি এক প্রকার এড়িয়ে চলে গেলো। কি বলবে ও? যেখানে সে নিজেই জানে না কিছু। শুধু জানে মেয়েটাকে ছাড়া সে অসম্পূর্ন। এই মেয়েটার জন্য সে সবকিছু ধ্বংস করতে পারে।
ইয়ানা হতাশ চোখে অগ্নির যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। আকস্মিক চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে।
ইয়ানা নিজের চোখের পানিটুকু মুছে অগ্নির পিছন পিছন চলে যায়।

ভার্সিটির ক্লাস শেষে মিরা আর ইয়ানা একটা ব্রেঞ্চের মধ্যে বসে থাকে। ইয়ানা কখন থেকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে বলে হাত কচলাতে থাকে। কিন্তু প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করতে ও দিধাবোধ হচ্ছে।।
মিরা ইয়ানার নার্ভাস হওয়া চেহারা দেখে বলে,,,,,,
” বলে ফেলো কি বলবে? ”
ইয়ানা — আচ্ছা মিরা তুমি তো অগ্নি চৌধুরিকে দেখেছো তাই না? তার ছবি দেখাতে পারবে।
মিরা ইয়ানার কথা শুনে ঠাট্টা করে বলে,,,,,,

” এই মাতারি বিয়ে হয়ে গিয়েছে তোমার পরপুরুষের দিকে নজর দিবে না। ফলে আমাদের হক নষ্ট হবে।
ইয়ানা — না মিরা সেজন্য নয় তুমি শুধু বলো ওনি দেখতে কেমন?
মিরা ফুস করে শ্বাস নিয়ে বলে,,,,,
” অগ্নি চৌধুরিকে শুধু আমি না কেউ ওই দেখে নি। উনি সবসময় জনসম্মুখে কালো হুডি পড়ে আসে। ওনার বর্ননা সম্পর্কে কোনো ধারনা নেই।
ইয়ানা হতাশ হয়ে বলে,,,,,,
” ওহহ আচ্ছা.”

মিরা — হ্যা কিন্তু হঠাৎ তুমি এত আগ্রহী কেনো ওনাকে জানার জন্য। তুমি তো এদের পছন্দ করো না।
ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” এমনি জিজ্ঞাসা করেছি। তুমি উনার সম্পর্কে বলো আর তাছাড়া আমার হাজবেন্ডের নাম ও অগ্নি তাই জিজ্ঞাসা করেছি। ”
মিরা — এই ইয়ানা তোমার হাজবেন্ড ওই সেই অগ্নি চৌধুরি নয়ত?
মিরার কথা শুনে ইয়ানা আৎকে উঠে। ইয়ানার এই বিধ্বস্ত অবস্থা মিরা উচ্চস্বরে হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” ওহহ ইয়ানা আমি মজা করছিলাম কিন্তু তুমি তো ভয় পেয়ে গেছো। ভয় পেও না এইটা জীবনে ও সম্ভব নয়।
ইয়ানা মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,

“” হ.হ্যা ”
মিরা — খালামনি হব কবে?
আকস্মিক মিরার এমন প্রশ্নে ইয়ানা ভড়কে যায়। যখন বুঝতে পারে তখন লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে।
মিরা হাসি দিয়ে বলে,,,,
” ইসস আর লজ্জা পেতে হবে না। খালামনি কবে হব সেটা বলো?
ইয়ানা — আমাদের মধ্যে এখন ও তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠে নি।
ইয়ানার কথা শুনে মিরা অবাক হয়ে তাকায়। মিরা অবাক সুরে বলে,,,,
” অনেক ধৈর্য আছে ভাইয়ার বলতে হয়। “”
এই বলে উচ্চস্বরে হেসে উঠে। ইয়ানার ইচ্ছে করছিলো লজ্জায় মাটি ফাক করে ডুকে যেতে। এই মেয়ে সেই কখন থেকে হেসেই যাচ্ছে।
মিরা নিজের হাসি সংযত করে বলে,,,,,,

” শুনো ইয়ানা নিজের স্বামীকে আগলে রেখো। স্বামী দুরে থাকলে সে অন্য নারীতে ঝুকে যায়।”
ইয়ানার হৃদয়টা হাহাকার করে উঠে। অন্য নারী শুনতেই যেনো ভেতরটা ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছে। অগ্নির পাশে অন্য নারীকে দাড়া করানো তার জন্য অসম্ভব।
মিরা — ইয়ানা রিলাক্স এত ঘাবরাচ্ছ কেনো? আমার সকল মজাকেই তুমি সিরিয়াসলি নিয়ে নিচ্ছো। সব ছেলেরা এক হয় না সোনা অনেক ছেলে আছে যারা হাজার নারীর ভিরে নিজের ব্যক্তিগত নারীকেই খুঁজবে। আবার অনেক পুরুষ আছে যাদের কাছে নিজের ব্যক্তিগত নারী ধরা দিতে চায় বার বার কিন্ত তার চোখ আটকায় পরনারীতে। তোমার মত এমন একটা মেয়ের হাজবেন্ড কোনো দিন খারাপ হবেই না। জিজু নিশ্চয় তোমাকে খুব ভালোবাসে। যে সত্যি কারের ভালোবাসে সে তোমার জন্য সব কিছু তছনছ ও করে দিতে পারে। আবার অনেকে ভালোবাসা কেয়ারের নাটক দেখায় দিন ফুরিয়ে গেলে ছুরে ফেলে দেয়।

ইয়ানা — হুম। আচ্ছা মিরা আমার না ভালো লাগছে না পরের ক্লাস আর করব না। মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে তাই বাসায় চলে যাচ্ছি।
মিরা — হ্যা যাও বাসায় গিয়ে রেস্ট নিও।
ইয়ানা মিরাকে বিদায় জানিয়ে ভার্সিটির সামনে এসে দাঁড়ায়। গেইডের সামনে দাড়াতেই চোখ যায় কালকের সেই অসভ্য ছেলেটার দিকে। সে তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। ইয়ানা সেদিকে লক্ষ্য না করে একজনের নাম্বার ডায়েল করে।

অফিসে নিজের চেয়ারে বসে কিছু কাগজ চেক করছিলো এমন সময় তার সামনে এক মেয়ে এসে দাড়ায়। চোখ তুলে মেয়েটাকে দেখে রাগে আর বিরক্তিতে চোখ সরিয়ে নেয়। মেয়েটি নাটকীয় ভঙ্গিতে অগ্নির কাছাকাছি এসে বলে,,,,,
” হাই বেইবি কতদিন পর দেখা হলো ? কেমন আছো বেইবি।
অগ্নি ঘম্ভীর মুখে বলে,,,,,,,,
” রুমে ডুকার আগে পারমিশন নিতে হয়। বেহায়াপনার সাথে সাথে ম্যানার্স ও ভুলে গেছো। আগেরবারের মত থাপ্পর দিয়ে মনে করিয়ে দিতে হবে? মনে হচ্ছে আমার থাপ্পরের ডোজ টা কমে গেছে তাই না ঝর্না।
ঝর্না অপমানে রেগে ফুসফুস করতে থাকে। কিন্তু অগ্নি চৌধুরির সামনে রাগ দেখানো মানে নিজের মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা।

ঝর্না — তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো অগ্নি।
অগ্নি দাতে দাত চেপে বলে,,,,,
” তোমার আবার মান অপমান! জোক্স ভালো ওই জানো। অপমান করব না যদি কয়েকটা লাঠির বারি খাও। খাবে? দিব কয়েকটা বারি?যেখানে আমার বউ কোনোদিন ভালোবেসে ডাকে নি সেখানে তুমি আমাকে এমন ভাবে বেইবি বলছো যেনো আমি সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চা। পরের বার থেকে যাতে এমন ডাকতে না দেখি ঝর্না।
বউ শব্দটা শুনে ঝর্না অবাক হয়ে বলে,,,,,
” তোমার বউ মানে? তুমি বিয়ে করেছো? ”
অগ্নি — হ্যা।
ঝর্না — না তুমি এইভাবে আমাকে ঠকাতে পারো না অগ্নি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
এই বলে সে অগ্নির গায়ে ঝাপটে ধরে। ঝর্নার স্পর্শ পেতেই অগ্নি রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। সাহস কি করে হয় এই মেয়ে তাকে ছোয়ার। নিজের কাছ থেকে সরিয়ে ঝর্নার গালে এক থাপ্পর বসায়। রাগে তার পুরো শরীর কাঁপছে। এইদিকে অগ্নির ফোন বাজছে সেই খেয়াল নেই। তার মাথায় এখন রক্ত চেপেছে। রক্তচক্ষু ঝর্নার দিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে বলে,,,,,,

” সাহস কি করে হয়। তর আমাকে ছোয়ার বেহায়া মেয়ে। আমার এই শরীরে একমাত্র ইয়ানা নামক মেয়েটির স্পর্শ থাকবে তর মত বেহায়ার নয়। দিলিতো আমার শরীরটাকে অপবিত্র করে। এখন আমার বউ এই অপবিত্র শরীরে স্পর্শ করবে কিভাবে?
অগ্নির যেনো তর তর করে রাগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ঝর্নাকে জানে মেরে ফেলতে। রাগে বোধশক্তি হারিয়ে হাতে চাকু নিয়ে ঝর্নাকে আঘাত করতে যায়। কিন্ত কিছু একটা ভেবে থেমে গিয়ে হুংকার দিয়ে বলে,,,,,
” আউট ”

অগ্নির এই আউট শব্দটা যেনো কলিজা কাঁপিয়ে দেওয়ার মত। অগ্নির এত রাগ দেখে ঝর্না ও ভয় পেয়ে যায়। সে অগ্নিকে যমের মত ভয় পায়। হাতে নিজের ব্যাগ নিয়ে এক প্রকার রাগ আর ভয় নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে পড়ে।
ঝর্না চলে যেতেই অগ্নি টেবিলের উপরে থাকা ফ্লাওয়ার টপটা ফেলে দেয়। পুরো শরীর অস্বস্থি হচ্ছে শাওয়ার নিয়ে এই মেয়ের স্পর্শ মুছতে হবে।

অগ্নি কেবিন থেকে বের হয়ে রেস্ট রুমে চলে যায়। এরপর ওয়াশরুমে গিয়ে লম্বা একটা শাওয়ার নেই। কিছু সময় ব্যবধানে কালো শার্ট আর প্যান্ট পড়ে কেবিনে চলে আসে। ইয়ানার কথা মনে পড়তেই মোবাইল হাতে নেই। আজ সে যাবে না আরিফকে পাঠাবে ইয়ানাকে বাড়ি দিয়ে আসার জন্য। আরিফকে ফোন করার জন্য মোবাইল হাতে নিতেই দেখে আরিফের অনেক গুলো মিসড কল। এতগুলো ফোন দেখে অগ্নির কপালে খানিকটা ভাঁজ পড়ে। কোনো কিছু না ভেবে আরিফের মোবাইলে ফোন লাগায়। ফোন দিতেই সাথে সাথে রিসিভ হয়।

আরিফ — আসসালামু আলাইকুম ভাই।
অগ্নি — ওয়া আলাইকুম আসসালাম। ফোন দিয়েছিলি কেনো?
আরিফ — ভাবিকে বাড়িতে দিয়ে এসেছি সেজন্য ফোন দিয়েছিলাম। ভাবিকে কত হাসি খুশিভাবে ডুকতে দেখেছি আপনার কেবিনে কিন্তু দুই পাঁচ মিনিট পর ওই চলে আসে।
আরিফের কথা শুনে অগ্নি অবাকের চরম সীমায় পৌছায়। ইয়ানা কখন তার অফিসে এসেছে? কই তার সাথে তো তার দেখা হয় নি।
অগ্নি কপাল ঘসে আরিফকে প্রশ্ন করে,,,,

“” কখন এসেছিলো “?
আরিফ অবাক হয়ে বলে,,,,,,
“ওই আধা ঘন্টা আগে। ”
অগ্নি — বাড়িতে নিয়ে দিয়ে এসেছিস?
আরিফ — হ্যা ভাই।
অগ্নি — ঠিক আছে। আজকের মিটিং ক্যান্সেল কর। ইটালির যে প্রজেক্টা টা আছে জানিয়ে দে সেখানে এটেন্ড করব না।
আরিফ আশ্চর্য হয়ে বলে,,,,,

” কিন্তু ভাই এইটা আমাদের কম্পানির জন্য অনেক বড় একটা চাওয়া ছিলো। ক্যান্সেল করলে তো কম্পানির ক্ষতি হবে।
অগ্নি — সমস্যা নেই কিছু হবে না।
এই বলে অগ্নি ফোন কেটে দেয়। আর এইদিকে আরিফ হতভম্ভ হয়ে রয়েছে। এই প্রজেক্ট কম্পানির অনেক বড় একটা পাওয়া ছিলো। কিন্তু এইটা এইভাবে রিজেক্ট করাটা সত্যি হতাশাজনক। অনেকে এইটা পায় না আর ভাই এইটা পেয়েও ছেড়ে দিলো। কিন্তু ভাই যদি ভাবিকে না দেখে থাকে তাহলে ভাবি গিয়েছিলো কোথায়?

অগ্নি আরিফের সাথে কথা শেষ করে এক মুহূর্তে ও দেরি না করে চলে যায় নিজের ডুপ্লেক্স বাড়িতে। বাড়ির সামনে গিয়ে ফিঙ্গার টাচ করে দরজা খুলে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করে। ড্রয়িং রুমে যেতেই দেখে কাজের মহিলা ধোয়া মুছা করছে। অগ্নি সেদিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” আন্টি ইয়ানা বাড়িতে এসেছে “?”
কাজের মহিলা — হ্যা বাবা এসেছে। আজ ভার্সিটি থেকে তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। প্রতিদিন এসে হাসিখুশি ভাবে আমার সাথে গল্প করে আর আজ সোজা রুমে চলে গেলো। এতবার ডাকলাম খাবার খেয়ে যেতে দুপুরের খাবারটা ও খায় নি। সকালে হালকা ব্রেকফাস্ট করে আর এখন বিকেল হতে চলল সারাদিন অভুক্ত।

ইয়ানা দুপুরে খাই নি কথাটা শুনে অগ্নি রেগে একবার উপরের রুমের দিকে তাকায়। সারাদিন ধরে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে রেখেছে। এত তেজ কোথায় থাকে এই মেয়ের? একটা কিছু দেখল কি না দেখল জিজ্ঞাসার ও প্রয়োজন বোধ করে নি। প্রথমত না জানিয়ে ওর অফিসে গেছে যদি কেউ ওর পরিচয় জানত কি হত এই মেয়ের কোনো ধারনা আছে। চারপাশে শত্রুরা ফঁদ পেতে রেখেছে দুর্বল জায়গায় আঘাত করবে বলে। আর এই মেয়ে ঢেং ঢেং করে অফিসে চলে গিয়েছে না জানিয়ে। তার উপর ওকে অবিশ্বাস করার সাহস হয় কিভাবে?

অগ্নি রেগে হনহন করে উপরে চলে যায়। রুমের সামনে গিয়ে দরজা ধ্বাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। রুমের সমস্ত জানালা লাগিয়ে রুম অন্ধকার করে রেখেছে। অগ্নি রুমের লাইট জালাতেই তার চোখের সামনে ভেসে উঠে ইয়ানার বিধ্বস্ত অবয়ব। অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকাতেই ইয়ানা তাকায় সাথে সাথে ঘৃনা নিয়ে চোখ সরিয়ে নেই। ইয়ানার কান্না মিশ্রিত ফোলা ফোলা চোখ, পুরো মুখ লাল হয়ে আছে একটুর জন্য অগ্নির রাগটা কমে গিয়েছিলো কিন্তু ইয়ানার দৃষ্টিতে আজ ওর জন্য ঘৃনা যা ওর জন্য মোটে ও কাম্য নয়। ইয়ানার চোখে নিজের জন্য ঘৃনা ভাবতেই তরতর করে রাগটা যেনো মাথায় চেপে বসে। তার পর ও রাগ সংযত রাখে।

সোজা গিয়ে ইয়ানার সামনে বসে শান্ত সুরে বলে,,,,
” খাবার খাও নি কেনো? ”
ইয়ানা নিশ্চুপ।
অগ্নি — আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করছি ইয়ানা?
ইয়ানা তবুও নিশ্চুপ।
অগ্নি এইবার নিজের রাগের কন্ট্রোল হারিয়ে ধমক দিয়ে বলে,,,,,
” আরে কিরে বাবা কথা বলছি কানে যায় না। এইভাবে থ মেরে বসে আছো কেনো? আমি রাগকে কন্ট্রোল করতে পারি না সেটা তুমি জানো ইয়ানা। তুমি না জানিয়ে অফিসে গিয়েছিলে কেনো?
ইয়ানা অগ্নির প্রশ্ন শুনে এইবার বলে,,,,,,,

” কেনো বেশি অন্যায় করে ফেলেছি? অন্য মেয়ের সাথে অফিসে গিয়ে তামাসা করেন সেটা দেখে ফেলেছি? ইগোতে লাগছে খুব তাই না। লজ্জা করে না বাড়িতে বউ থাকতে অন্য মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করতে। ছিহহ কার সাথে এতদিন সংসার করতাম আমি? কাকে এতটা বিশ্বাস করেছি, ভালোবেসেছি। এখন নিজের প্রতি ঘৃনা হচ্ছে।
ইয়ানার কথা শুনে অগ্নি হাত মুঠো করে ফেলে। রাগে পুরো শরীর কাঁপছে। অগ্নি চোখ বন্ধ করে বলে,,,,,
” থেমে যাও ইয়ানা। অনেক সময় যা দেখানো হয় সেটা সত্তি নয়। তুমি কি দেখেছো জানি না বাট যতটুকু দেখেছো ভুল দেখেছো।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা রেগে বলে,,,,,

” কি ভুল দেখেছি? নিজের চোখে যা দেখেছি সেটা ভুল? গিয়েছিলাম স্বামীকে সার্প্রাইজ দিব বলে কিন্তু গিয়ে নিজেই সার্প্রাইজ হয়ে এসেছি। স্পষ্ট দেখেছি আপনাকে ওই মেয়েটা জড়িয়ে ধরে আছে। আর এখন এসে বলছেন ভুল দেখেছি। আমরা মেয়েরা সব সহ্য করতে পারি কিন্তু নিজের স্বামী সাথে অন্য নারীকে নয়। মিরা ঠিক বলেছে পুরুষদেরকে আটকে রাখতে হয় নাহলে অন্য জায়গায় মুখ দেই। সেটা শুনে খারাপ লাগছিলো তাই আপনাকে এক নজর দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্ত গিয়ে যা দেখলাম মিরার কথাটাই সত্যি হলো। মাত্র কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে পারেন নি? বিয়েটা হুট করে হয়ে গিয়েছিলো তার উপর আপনি আমার স্যার ছিলেন যে আমাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করত তাই আমি মানিয়ে নিতে পারে নি। একটু সময় চেয়েছিলাম আপনার কাছে। এই কয়েকদিনের ভিতরে আপনার অন্য মেয়ের কাছে যেতে হলো। শরীরের প্রয়োজন হলে আমাকেই ফোর্স করতে দিয়ে দিতাম শরীর।

আপনি……….
ইয়ানা আর কথা শেষ করতে পারে নি। আকস্মিক থাপ্পরে খাটের কর্নারে গিয়ে বারি খায়। জীবনে কোনোদিন এত জোড়ে থাপ্পর খায় নি। মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী ঘুরছে। এখন ওই ঙ্গান হারিয়ে ফেলব। নিজের অবস্থান বুঝার আগেই অগ্নি ইয়ানাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। অগ্নির চোখ দেখে ইয়ানা ভড়কে যায়। এতটা রাগ করতে সে কখনো দেখেনি। মুহূর্তের মধ্যে ভেসে উঠে অগ্নিকে একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরেছে। কথা বলতে পারছে না গালের ব্যথায় টনটন করছে। মাথাটা এখন ও ঘুরছে তার পর ও কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে,,,,,,
” ছুবেন না আমাকে অসভ্য লোক। বউ থাকতে অন্য মেয়ের সাথে গিয়ে ঘেসাঘেসি করেন। আপনার মত ক্যারেক্টার লেস লোক ছুবেন না আমায়। ওই মেয়ের কাছে যান।
ইয়ানা কথা শেষ হওয়ার পর পর পুনরায় থাপ্পর পড়ল আরেক গালে। এইবার দুই গালে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে কঁদে উঠে।

ইয়ানা — আবার থাপ্পর দিলেন কেনো ব্যাথা পায় না আমি?
অগ্নি — তো ব্যাথা পাওয়ার জন্যই দিয়েছি ভালোবাসার জন্য তো আর দেই নি। যদি নিজের তেজ কমে থাকে তাহলে বলতে পারেন? নাহলে চিন্তা করো না তেজ যদি এখন ও থাকে তাহলে ও বলতে পারো। একশটা থাপ্পর দিয়ে হসপিটালে ভর্তি করাতে ও আমি দুইবার ভাববো না। তোমাকে শুধু একটা থাপ্পর না থাপ্পর দিতে দিতে গাল ফাটিয়ে দেওয়া উচিত।
ইয়ানা গাল থেকে হাত সরিয়ে খাট থেকে নামতে নামতে বলে,,,,,,,, ,
” অসভ্য লোক মেয়ে নিয়ে তামাসা করে আর বললেই দোষ।
কথা শেষ করার সাথে সাথে গালে আরেকটা থাপ্পর পরে। পর পর তিনবার এত শক্তপোক্ত হাতের ত্থাপ্পর পরায় মাথা ঘুরিয়ে পুনরায় বিছানায় বসে পড়ে।
ইয়ানা বিছানায় বসলে অগ্নি হেচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ইয়ানার কান্নার শব্দ কানে আসতেই কিছুটা ধমক দিয়ে বলে,,,,,

” কান্নার শব্দ আসলে ও থাপ্পর খাবে। এই কি দেখেছো তুমি? একটা মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে ব্যাস এইটুকুই? আর কিছু দেখো নি এই মেয়েকে যে জড়িয়ে ধরার অপরাধে শাস্তি দিয়েছি সেটা দেখো নি?
অগ্নি মেয়টাকে শাস্তি দিয়েছে শুনে ইয়ানা দুই গালে হাত দিয়ে তার দিকে তাকায়।
ইয়ানার তাকানো দেখে অগ্নি পুনরায় ধমক দিয়ে বলে,,,,,,,
” এইভাবে বোকার মত তাকিয়ে আছো কেনো? একটু আগে যে আমাকে কথা গুলো শুনালে একটু ও বোকা মনে হয় নি ট্রাস্ট মি। মনে হয়েছিলো মস্তিষ্ক ছাড়া ইডিয়েট। কি হলো বলো শাস্তি দিয়েছি সেটা দেখো নি?
ইয়ানা মাথা নাড়িয়ে বলে,,,,,

” না দেখি নি। একটু দেখেই চলে এসেছিলাম?
অগ্নি এইবার তেঁতে উঠে বলে,,,,,,,
” কেনো দেখলে না কেনো? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা দেখে আসতে বিয়াদপ। কেউ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলে তখন আমি কি করতে পারি। সর্বোচ্চ একটু আঘাত করতে পারি।যেটা আমি করেছি। ও একটা মেয়ে এর বেশি তো তাকে কিছু করতে পারি না।
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,,
” আপনি ওকে আঘাত করেছেন? ”
অগ্নি দাতে দাত চেপে বলে,,,,,,,

” প্রশ্ন করছো কেনো নিজেই দেখে আসতে। এই কি বলছিলে শরীরের জন্য আমি গিয়েছি?
অগ্নি এইবার রাগের খেই হারিয়ে বেড টেবিলের উপর থেকে ফুলদানিটা ফেলে দিয়ে হুংকার দিয়ে বলে,,,,,
“” শালার জিন্দেগী আমার চরিত্র নিয়ে এখন কথা শুনতে হচ্ছে।
অগ্নির পর পর ধমকে ইয়ানা কেঁপে উঠছে। ও যা দেখেছে তা নিয়ে সব মেয়েরাই রিয়েক্ট করত। আমি কি জানতাম নাকি ওই মেয়ে অনুমতি ছাড়া জড়িতে ধরেছে। যতটুকু দেখেছি তাতে কি খারাপ ভাববো না।
ইয়ানা —- এইটা বুঝিয়ে বললেই হত। এইভাবে থাপ্পর দেওয়ার কি ছিলো?
ইয়ানার কথা শুনে অগ্নি আর ও দ্বীগুন রেগে যায়।

অগ্নি — থাপরিয়ে অজ্ঞান করব বিয়াদপ মেয়ে বুঝানোর সময় দিয়েছিলে আমাকে? তেজ দেখিয়ে চলে আসলে। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেবদাস বসে রয়েছো পুরো রুম অন্ধকার করে। জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করো নি আমাকে। দেখো ইয়ানা আজ তোমার চোখে আমার জন্য এক মুহূর্তের জন্য যে ঘৃনা দেখেছি তা যাতে আর কখনো না দেখি। কারন এই চোখের ঘৃনা অগ্নি চৌধুরি সহ্য করতে পারে না। পুনরায় এমন হলে ধ্বংস বয়ে আনব আই রিপিট ধ্বংস বয়ে আনব।

এই বলে অগ্নি রুম ত্যাগ করে। অগ্নি চলে যেতেই ইয়ানা দুই হাত দিয়ে গালে চাপ দেয়। চাপ দিতেই ব্যথায় নাক মুক খিচে ফেলে। দুই গাল টন টন করছে। কপালে আঘাত পেলেও রক্ত বের হই নি কিন্ত ফুলে গেছে। এইটা থাপ্পর দিয়েছিলো নাকি ইট দিয়ে আঘাত করছে। অন্য মেয়েকে দেখে সন্দেহ করব না। আপনার নামটাই তো আমার সবচেয়ে বড় সন্দেহ অগ্নি চৌধুরি।

ইয়ানা মুখে পানি দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আচমকা তাকে কেউ কোলে তোলে নিয়ে হাটা শুরো করে। ইয়ানা অগ্নিকে দেখেই নামার জন্য ছটফট করতে থাকে,,,,,,
” নামান আমাকে হৃদয়হীন লোক”
অগ্নি — এইভাবে নাড়াচড়া করো না সোনা আমরা এখন বাংলাদেশে যাচ্ছি।
বাংলাদেশের নাম শুনতই ইয়ানা চোখ বড় বড় করে ফেলে। অবাক হয়ে বলে,,,,,,
” পাগল হয়েছেন নাকি? বাংলাদেশে কেনো যাচ্ছেন? তা ও আবার এত তাড়াতাড়ি সব কিছু রেডি করেছেন কিভাবে?

অগ্নি — কেনো তুমি যেতে চাও না। কাজের জন্য যাচ্ছি। তোমাকে তো একা রেখে যেতে পারব না।
ইয়ানা — হ্যা যেতে চাই। কিন্ত এত তাড়াতাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা কিভাবে করলেন? কানাডায় তো যাওয়া যায় না আমি যতটুকু জানি।
অগ্নি ইয়ানাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে বলে,,,,,
” সেটা তোমার না জানলেও চলবে। আমাদের সাথে ইউভি আর রায়ান ও যাচ্ছে। ”

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১১

ইয়ানা আর কিছু জিজ্ঞাসা করে না। যেভাবে খুশি যাক তাতে ওর কি? ওর যাওয়ার সে যাচ্ছে। কতদিন পর নিজের দেশে যাচ্ছে। হল্লা পার্টি, বাবা – মা, দাদুমনি সবার সাথে দেখা করবে। এতদিন ফোনে কথা বললে ও শান্তি পাই নি। সবাইকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করত।
অগ্নি ইয়ানার হাসিমাখা মুখ দেখে একটা রহস্যময় হাসি দেয়।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৩