অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৬
লিজা মনি
নিশীথের গভীরতায় যখন চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে আসে তখন জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করা রাতের স্নিগ্ধ বাতাস ও এক টুকরো চাঁদের আলো । রুমের সমস্ত দরজার কাউচগুলো খোলে রাখা।বাতাসের হালকা পরশে পর্দাগুলো দুলে ওঠে।আর সেই দুলুনিতে যেন একটি নীরব সঙ্গীত বাজে। চাঁদের আলো ঘরের মেঝেতে ছায়া ফেলে যা মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির নিঃশব্দ সৌন্দর্যকে।
রাত প্রায় এগারোটা বিশ মিনিট।
ইয়ানা টেবিলে বসে পড়ছিলো। এমন সময় তার ফোন বেজে উঠে। ইয়ানা ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে রিসিভ করে বলে,,,,,
” কেমন আছো আম্মু “?
সেলিনা হোসেন — আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস?
ইয়ানা — আমি একদম ভালো আছি? রুই আব্বু তারা কেমন আছে?
সেলিনা হোসেন — সবাই ভালো আছে। একবার জামাইকে নিয়ে আয়। অনেকদিন হলো এসেছিস বার বার শুধু জামাইর কাজের দোহায় দিয়েছিস।
ইয়ানা — আম্মু উনি সকালে যায় একদম রাতে আসে। একদম সময় পাই না। ঠিক আছে আমি উনার সাথে কথা বলছি।
ইয়ানা আর ও কিছুক্ষন আসাদ হোসেন, সেলিনা হোসেন তাদের সাথে কথা বলে। এখন মনটা একটু হালকা লাগছে।কথায় আছে মায়ের মমতা সবকিছুর উর্ধ্বে। মায়ের সাথে কথা বলে মনে হচ্ছে কোনো কষ্ট নেই জীবনে। ইয়ানা খাওয়া দাওয়া করে বিছানা গুছিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু কেনো জানি ঘুম আসছে না। তাই পুনরায় বিছানা থেকে উঠে টেবিলে বসে পড়ে। হুমায়ন আহমেদের লিখা “পথের ধারে বসে আছি” একটা উপন্যাসের বই পড়া শুরু করে। ঠিক তখন অগ্নি রুমে প্রবেশ করে। ইয়ানার দিকে এক পলক তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় শাওয়ার নেওয়ার জন্য। কিছুক্ষন পর একটা কালো ট্রাউজার পড়ে বেরিয়ে আসে।পুরো শরীর উন্মোক্ত। ইয়ানা তাকিয়ে ও আবার পুনরায় বইয়ের ভিতরে মুখ গুজে ফেলে। অগ্নির কাছে বিষয়টা এড়িয়ে যায় নি। ইয়ানার এমন ভোঁতা মুখ দেখে অগ্নি কিছুক্ষন তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসে। ধীরে ধীরে সে ইয়ানার কাছে যায়। ইয়ানার কাছে গিয়ে তার দিকে ঝুকে পরে। অগ্নির চোখ দুইটি ইয়ানার মুখের উপর নিবদ্ধ করা। অগ্নির উম্নুক্ত ভেজা শরীর ইয়ানার এত কাছাকাছি দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। অগ্নির চুলের পানি ইয়ানার গলায় গিয়ে পড়ে। ইয়ানা নিজেকে আর ও গুটিয়ে নেই। ফলে অগ্নি আর ও ঝুকে যায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইয়ানা এইবার কিছুটা রাগ দেখিয়ে উঠতে যাবে এমনি ইয়ানাকে হেচকা টানে নিজের উড়ুর উপর বসিয়ে দেয়। আর অগ্নি বসে পড়ে চেয়ারের মধ্যে। আকস্মিক অগ্নির এমন কান্ডে সে ভড়কে যায়। অগ্নির অন্মুক্ত ভেজা শরীরের সাথে সে লেপ্টে আছে। ইয়ানার হৃদস্পন্দর বাড়তে থাকে। মুহূর্তেই মনে পড়ে যায় বিকেলের ঘটা ঘটনা। ইয়ানা উঠতে যাবে আগ্নি আর ও নিজের সাথে চেপে ধরে।
ইয়ানা — ছাড়ুন আমাকে?
অগ্নি ইয়ানার ঠোঁটে কাটাস্থানে আলতো করে চেপে ধরে। ইয়ানা ব্যাথা নাক মুখ কুচকে ফেলে। অগ্নি এইবার ইয়ানার ঠোঁটে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বলে,,,,,,
“” এখন ও রাগ করে আছো হুম ”
ইয়ানা — রাগ কেনো করতে যাব? রাগ ভালোবাসার মানুষদের সাথে করা হয় কিন্তু আমি কোন অধিকারে রাগ করব বলতে পারেন?
অগ্নি — স্ত্রীর অধিকারে?
ইয়ানা অবাক হয়ে অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” সেটা তো ভালোবাসার জায়গা পাই নি। শুধু একটা নামের বন্ধন মাত্র।
অগ্নি ইয়ানার কানে ফিসফিস করে বলে,,,,,,
” যদি এক দেহেতে দুইজানি দিত বিধি দম। যদি এক কবরে দুইজন থাকার করিত নিয়িম। তবে তোমায় আমি অন্তত ভালোবাসতাম।
ইয়ানা অগ্নির কথায় কেঁপে উঠে। তবে কি উনি আমাকে ভালোবাসে। অগ্নি ইয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” কিন্তু এমন তো হবে না তাই ভালোবাসার প্রশ্ন ওই আসে না। ভালোবাসার মত এমন ঠোনকো জিনিসে আমি বিশ্বাসী নয়। ভালোবাসা সবাই বলে কিন্তু পালন করতে পারে কয়জন।
এই কথা বলে সে ইয়ানাকে দাড় করিয়ে উঠে পড়ে। ইয়ানা তব্দা লেগে সেই চেয়েরাই বসে থাকে। একটুর জন্য মনে হয়েছিলো অগ্নি তাকে ভালোবাসে। ভাবনা পরিপক্ক হওয়ার আগেই এত বড় ছ্যাকা দিয়ে দিলো? ওনার কাছে ভালোবাসা ঠোনকো মনে হয় । ঠোনকো তো মনে হবেই তিঁতা করলা কিভাবে বুঝবে মিষ্টির স্বাদ। শয়তান এনাকন্ডা দানব একটা। ইয়ানা বিরবির করে বিছানায় যায়। কিন্ত না সে এমন হৃদহীন লোকের সাথে এক বিছানায় ঘুমাবে না। ইয়ানা বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে চলে যায় সোফার মধ্যে। ইয়ানাকে সোফায় যেতে দেখে অগ্নি কপাল কুচকে ফেলে। ইয়ানা তার থেকে আলাদা থাকতে চাচ্ছে ভাবনা মাথায় আসতেই রাগটা পুনরায় মাথায় চেপে বসে। কিন্তু সে অনেক কষ্টে রাগ কন্ট্রল করে।
অগ্নি কোনো কিছু না বলে বেলকনিতে চলে যায়। ইয়ানা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় অগ্নি কি করছে। অগ্নিকে বেলকনিতে যেতে দেখে মুখ বাকিয়ে আবার শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষন পর শরীরে আঘাত অনুভব করে “আউচ” করে উঠে। চোখের সামনে অগ্নিকে এমন অগ্নিমূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিথ্যা হাসি দেই। হাতের দিকে তাকাতেই দেখে একটা লাঠি। অগ্নির হাতে লাঠি দেখে ইয়ানা ধরফরিয়ে উঠে বলে,,,,,
” আপনি এইভাবে লাঠি নিয়ে এসেছেন কেনো? ”
অগ্নির ঠান্ডা হুমকি — বিছানায় যাও। নাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ আমি নিব।
ইয়ানা এইবাদ জেদ ধরে বলে,,,,,,,
” যাব না আমি। থাকব না আমি আপনার সাথে এক বিছানায়। যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে এক বিছানায় থাকার প্রশ্ন এই আসে না।
ইয়ানার কথা শেষ হতেই অগ্নির লাঠি দিয়ে টেবিলের উপর আঘাত করে। এক বিকট শব্দের সাথে সাথে ইয়ানা ও ভয়ে কেঁপে উঠে।
অগ্নি ঠান্ডা গলায় লাঠিটার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” যাবে তুমি? নাকি এখন ও ত্যারামি বাকি আছে? সমস্যা নেই লাঠি আমার হাতে আছে। ত্যারামি কমানোর জন্য আমার হাতের লাঠিই যথেষ্ট।
অগ্নি ইয়ানার দিকে এগিয়ে যাবে সময় ইয়ানা বলে উঠে,,,,
” যাব! যাব ওই তো। এইভাবে ভয় দেখানোর কি আছে। আমি কি আপনাকে ভয় পাই নাকি?
ইয়ানার কান্ড দেখে অগ্নি আবার ঠোঁট কামড়ে হাসে।
অগ্নি — তুমি আমাকে ভয় পাও না?
ইয়ানা — নাহ।
অগ্নি — তাহলে সামান্য লাঠি দেখে এইভাবে কাঁপছো কেনো?
ইয়ানা আর কি বলবে। সত্য কথা এইটাই সে অগ্নির রাগকে ভয় পাই। ইয়ানা কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।
অগ্নি ও আর কিছু বলে না ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরে সে ও শুয়ে পড়ে। অগ্নির স্পর্শে ইয়ানার রাগ হলে ও চুপ করে থাকে। এত রাতে সে আর রাগাতে চাই না। এখন লাঠি নিয়ে আসছে দেখা গেলো পরে ছুরি নিয়ে এসেছে খুন করার জন্য।
রুয়ানা প্রাইভেট শেষ করে বাড়িতে যাএয়ার জন্য রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছিলো। এমন সময় একটা প্রাইভেট কার দেখতে পাই। গাড়ির কাউচে নিজেকে দেখে হাসি মুখে হাসি ফুটে উঠে। গাড়ির ভিতরে কেউ আছে কি নেই সেদিকে খেয়াল না করে নিজের চুল ঠিক করতে থাকে। নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরে দেখছিলো। ভিবিন্ন কার্টুনের অঙ্গিভঙ্গি দেওয়ার চেষ্টা করছিলো। এক পর্যায়ে ঠোঁট দিয়ে উড়ন্ত চুমু দিতে যাবে এমনি গাড়ির কাউচ নেমে যায়। চোখের সামনে ভেসে উঠে এক সুদর্শন পুরুষ। রুয়ানা তব্দা লেগে আঁছে এখন ও। নিজের হুশ ফিরতেই এতক্ষন করা কর্মকান্ডে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। এরপর এমন একটা ভাব নেই যেনো কিছুই হই নি। রুয়ানা ঘুরে চলে যেতে নিবে এমন সময় কারোর আদেশে দাঁড়িয়ে পড়ে।
“” দাড়াও ”
রুয়ানা দাড়িয়ে পড়ে। পিছন ঘুরে একটা ভাব নিয়ে বলে,,,,
” জি কিছু বলবেন? আমার একটু তাড়া আঁছে।
গাড়িতে থাকা ব্যক্তিটি বলে উঠে,,,,,,
” হ্যা কি তাড়া এতক্ষন তো তাই দেখতে পেলাম। আই থিংক তোমার বড় বোনের নাম ইয়ানা?
লোকটির কথা শুনে রুয়ানা অবাক হয়ে পড়ে। এই লোক তার আপুকে কিভাবে চিনে?
রুয়ানা — জি হ্যা। আমার বড় নাম ইয়ানা।
লোকটি — আর তোমার নাম কি পিচ্চি?
পিচ্চি বলাতে রুয়ানা চোখ বড় বড় করে ফেলে। ক্লাস নাইন পড়ুয়া মেয়েকে কোন দিক দিয়ে পিচ্চি মনে হয়। তার পর ও ভদ্রতার খাতিরে নামটা বলতে হয়। যেহেতু আপুকে চিনে তার মানে আপুর পরিচিত কেউ। সেখানে অভদ্রতামি করলে আপুর হাতের মাইর খেতে হবে।
রুয়ানা — আমি রুয়ানা বিনতে আসাদ। ডাকনাম রুই মানে রুয়ানা।
লোকটা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” আমি ইউভি। অগ্নি চৌধুরির বেস্ট ফ্রেন্ড।
রুয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,,
” আপনি ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড।”
ইউভি — হুম। তুমি মেবি বাসায় যাবে রাইট? চলো তোমাকে দিয়ে আসি।
রুয়ানা — না তার কোনো প্রয়োজন নেই ভাইয়া আমি চলে যেতে পারব। আপনারা একদিন আসবেন। আল্লাহ হাফেজ।
এরপর রুয়ানা এখান থেকে চলে যায় । তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে এক শক্তপোক্ত সুদর্শন যুবক। কিছুক্ষনের ভিতরে এক বাচ্চা মেয়ে তার হৃদয়কে কাঁপিয়ে চলে গেলো। উহুম এটা কিছুক্ষনের ভিতরে নয় আর ও অনেক আগে থেকেই।
নিজের কেবিনে বসে কাগজ পত্র দেখছিলো অগ্নি। এমন সময় রায়ান ভিতরে প্রবেশ করে। অগ্নির সামনে বসে প্রশ্ন করে,,,,,,,
” দুইটা ছেলে নিখোঁজ। শুধু তাদের কাটা হাত পাওয়া গেছে। তাদের ছবি পেপার পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে। এখন ও চব্বিশ ঘন্টা হয় নি তাই তারা কোনো আ্যকশন নিতে পারছে না। তাদের মৃত্যুতে আমার সন্দেহ হচ্ছে।
রায়ানের কথা শুনে অগ্নি পেপারের দিকে তাকিয়েই হাসে। অগ্নির হাসি দেখে রায়ানের সন্দেহ বিশ্বাসে পরিনত হয়।
রায়ান — কেনো মেরেছিস ওদের? ওরা তো রানবীর আর আতিকের লোক না তাহলে?
অগ্নি — নিজের কাজের হিসেব দিয়েছি কখনো যে আজ দিব। সন্দেহ করেছিস সেটা নিয়ে বসে থাক প্রশ্ন করছিস কেনো? আমার কলিজায় হাত বাড়িয়েছিলো তাই ওর কলিজা ছিড়ে কুকুর দিয়ে খাইয়েছি।
রায়ান অবাক হয়ে বলে,,,,
” কি করেছিস? সালফউরিক এসিডে ডুবিয়ে দিয়েছিস.?
অগ্নি আবার ও হাসে।
রায়ান একটা মেকি হাসি দিয়ে টেবিলে হাত রেখে বলে,,,,,,
” তাহলে পুলিশ কেনো ওদেএ চৌদ্দঘোষ্টি ও ওদের খুজে পাবে না।”
অগ্নি — তর কথা বলা শেষ? আমার একটু প্রাইভেসি চাই।
অগ্নির কথা শুনে রায়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” তর মত লোকের আবার প্রাইভেসি?
অগ্নি — কেনো থাকতে পারে না? বিয়ে করেছি যখন প্রাইভেসি তো থাকতেই পারে। বউয়ের সাথে যা বলব তা তো আর সবার সামনে বলতে পারি না।
রায়ান মুখ বাকিয়ে বলে,,,,,,
” কি আর বলবি? ধমক ছাড়া। রুমান্টিকতার মানে বুঝিস তুই?
অগ্নি — একদিন রাতে আমার রুমে গিয়ে বসে থাকবি? তাহলে দেখতে পাবি আমি শুধু ধমক দেই নাকি বউকে আ…..
অগ্নির কথা শেষ হওয়ার আগেই রায়ান কেঁশে উঠে।
রায়ান — আমি সিঙ্গেল। আমার সামনে এইসব বলিস না।
অগ্মি — জানি তুই সিঙ্গেল শুধু সুমুর সাথে রাতে কথা বলিস। এসেছিস পনেরো দিন ও হই নি এর মধ্যে মেয়ে ও জুটিয়ে নিয়েছিস।
অগ্নির কথা শুনে রায়ান অবাক হয়ে তাকায়। রায়ান আর কিছু বলতে যাবে অগ্নি ধমক দিয়ে বলে,,,,,
” আউট! বের হ। বললাম না প্রাইভেসি প্রয়োজন।
রায়ান অগ্নিকে কয়েকটা গালি দিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে পড়ে।
ইয়ানা রুমে বসে গল্পের বই পড়ছিলো এমন সময় আহিয়া রুমে ডুকে। আহিয়াকে এত চিন্তিত দেখে ইয়ানা হাসিমুখে প্রশ্ন করে,,,,,,,
” কি হয়েছে আহিয়া? তুমি এতটা চিন্তিত কেনো?
আহিয়া ইয়ানার পাশে গিয়ে বসে। এরপর আতঙ্কিত হয়ে বলে,,,,,,
“বউমনি কালকে যখন ফুচকা খেতে গেয়েছিলাম তখন মনে আছে দুইটা ছেলে বাজে কথা বলেছে?
ইয়ানা — হ্যা মনে আছে।
আহিয়া — ওদের কেউ খুন করেছে বউমনি।
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,, কিহহহ! খ.. খুন কে করেছে?
আহিয়া — জানি না বউমনি। ওদের লাশ পাওয়া যায় নি। শুধু কাটা জিহ্বা আর হাত পাওয়া গেছে। লোকগুলোর একজনের হাতের আংটি আরেকজনের হাতের ঘড়ি এই দুইটা জিনিস দেখে ওদের পরিবার নিশ্চিত হয়েছে হাত দুটি ওদের।
ইয়ানা ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। এত এত জঘন্য খুন হচ্ছে কিভাবে? ও যাদের মৃত্যু কামনা করে একদিন না পেরোতেই তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এ কেমন বাস্তবতা? এতটা নিশ্বংস খুন কে করতে পারে?
ইয়ানার ভাবনার মাঝে ওর ফোন বেজে উঠে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে অগ্নির নাম্বার। ইয়ানা নিজেকে স্বাভাবিক ফোন রিসিভ করে বলে,,,,
” আসসালামু আলাইকুম”
অগ্নি ইয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” ওয়া আলাইকুম আসসালাম। মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেনো? আর এইভাবে বত্রিশ হাতের ঘোমটা দিয়েছো কেনো?
আহিয়া বুঝতে পারে অগ্নি ফোন দিয়েছে তাই সে ভাই আর ভাবির পার্সোনাল সময় থাকতে চাই না। ইয়ানাকে আশ্বস্ত করে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
ইয়ানা আহিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নি ইয়ানার দিকে তিক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে আছে।
ইয়ানা — ক.. কিছু না। কোথায় আমার মুখ শুকনো দেখলেন?
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,
” আমি তোমাকে মাথা থেকে ঘোমটা সরাতে বলেছি ইয়ানা। আমি কোনো পরপুরুষ নয়। আমার সাথে মিথ্যা বলা আমি পছন্দ করি না।সত্তিটা জানতে চেয়েছি তোমার না নয়।
ইয়ানা অগ্নির হালকা ধমক খেয়ে মাথা থেকে ঘোমটা সরিয়ে নেই। আর সত্যি কি কি বলবে ও?
ইয়ানা — তেমন কিছু না। আহিয়া আর আমি নিউজ শুনছিলাম সেখানেই কিছু মৃত খবর শুনেছি। দুইটা ছেলের কাটা হাত আর জিহ্বা পাওয়া গেছে এইটা শুনেই একটু ভয় লাগছে।
ইয়ানার কথা শুনে অগ্নি ইয়ানার পুরো মুখে চোখ বুলায়। এরপর খাপছাড়াভাবে বলে,,,,,
” ওর জীবনের সময় শেষ তাই মরে গেছে এখানে তোমার এত ভয় পাওয়ার কি আছে। অন্যের জন্য তোমার চোখে মুখে ভয় থাকবে সেটা আমার পছন্দ নয়। এখন বলো।খাওয়া দাওয়া করেছো?
ইয়ানা — হুম। আপনি?
অগ্নি ঠোঁট কামড়ে বলে,,,,,,
” না। পাশে খাইয়ে দাওয়ার মত কেউ নেই তাই খাওয়ার ইচ্ছে জাগে নি। পাশে যদি এখন বউ থাকত তাহলে আর অভুক্ত থাকতে হত না।
ইয়ানা — কবে থেকে বউ পাশে নিয়ে খাওয়া শুরু করেছেন? কই আমি তো কোনোদিন দেখি নি।
অগ্নি — দেখবে কিভাবে কখনো খেয়াল করেছো আমায়? তোমার জন্য আমার ভিতরে কি হাহাকর করে।
ইয়ানা শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এ কোন অগ্নি চৌধুরিকে দেখছে সে। ভুতের মুখে রাম রাম। ইয়ানাকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অগ্নি ধমক দিয়ে বলে,,,
” যাও পড়তে বসো। সারাদিন ঘুরাঘুরি না করে পড়াশুনায় মনযোগ দাও।
এই বলে অগ্নি ফোন কেটে দেই। ইয়ানা ফোনের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে। এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লো সে। নিজে কথা বলে নিজেই ধমক দিচ্ছে। গিরগিটিও এত তাড়াতাড়ি নিজের খোলস পাল্টাই না অগ্নি চৌধুরি যত দ্রুত পাল্টাই। এই ধমকে দিয়ে মগজ বের করবে এখন আবার সেই হাসি মাখা মুখ। কিন্তু এই হাসিটা যে আমার খুব প্রিয়। আপনার এই গম্ভীর মুখে যখন এক চিলতে হাসি দেখতে পাই তখন আপনার দেওয়া ধমকের কথা ভুলে যাই। ভালোবেসে ফেলেছি আমি আপনাকে অগ্নি চৌধুরি ভীষনভাবে। যাকে আমি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করতাম আজ সে আমার পুরো অস্তিত্ব দখল করে নিচ্ছে। কিন্তু আপনি আমাকে কবে ভালোবাসবেন? এই ভালোবাসি কথাটা কি আপনার মুখ থেকে আমি কখনো শুনতে পাব? কেনো এত অপেক্ষা করাচ্ছেন? বলে দিন না একবার আপনি আমাকে ভালোবাসেন। ট্রাস্ট মি, অগ্নি চৌধুরি সেদিন আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হবে না। সেই খুশিতে থাকবে এক আত্নসমর্পনের দলিল।
কেটে যায় অনেক দিন। আজ মন্ত্রী নির্বাচন। শহরের আনাচে – কানাচে এতদিন মিছিল সংবাদ ছিলো। আজ পুরো ঢাকা শহর গরম হয়ে আছে।
অগ্নি যেতে চাই নি তার পর ও সাজিদ চৌধুরির এক প্রকার জোড়াজোড়িতে যেতে হয়েছে। দেশের সমস্ত মন্ত্রী সংসদ সদস্য, সাধারন জনগন সবাই উপস্থিত। ভোটার শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এখন ভোট গননা করা হচ্ছে। সবার ভিতরে এক প্রকার আতঙ্ক। অরিদ একবার বসছে আরেকবার দাড়াচ্ছে। কিন্তু অগ্নি নির্বাকভাবে ফোন টিপে যাচ্ছে। অগ্নির এমন খেয়ালিপনা দেখে ইউভি বলে,,,,,,
“” ভাই তর বাপের নির্বাচন হয়েছে। একটু পর ফলাফল ঘোষনা করবে। কিন্ত তুই এমনভাবে বসে আছিস মনে হচ্ছে অনুষ্ঠানের দাওয়াত খেতে এসেছিস।
ইউভির কথা শুনে অগ্নি ফোন থেকে চোখ সরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” আমি যদি এখন টেনশন করে এই ভবন থেকে ওই ভবনে যায় তাহলে আব্বু কি পাস করে যাবে। আর যদি আমি এমন না করি তাহলে উনি নির্বাচিত হবেন না। যদি এর সাথে নির্বাচনের পাস আর ফেইলের সম্পর্ক না থাকে তাহলে এনার্জি নষ্ট করে টেনশন করতে যাব কেনো?
অগ্নির যুক্তি শুনে ইউভি থমথমে খেয়ে যায়।
ইউভি — টেনশ কি ইচ্ছে করে আসে নাকি? এইটা তো এমনি আসে।
অগ্নি — কিন্তু আমার তো আসছে না। আর টেনশন নামক কোনো ওয়ার্ড অগ্নি চৌধুরির রুলসে নেই।
ইউভি আর কিছু বলে না। কিছু বললে আবার আরেক যুক্তি দিয়ে দিবে।
প্রায় দুই ঘন্টা পর ফলাফল প্রকাশিত হয়। সবার মধ্যে এক প্রকার উত্তেজনা। সাজিদ চৌধুরি আর তার বিরোধী পক্ষ শান্ত হয়ে বসে আছে পাশাপাশি। এক হাজার সত্তর ভোট বেশি পেয়ে সাজিদ চৌধুরি নির্বাচিত হন। জনতার মধ্যে এক ধরনের উল্লাশ কাজ করছে। সাজিদ চৌধুরিকে ফুলের মালা দিয়ে বরন করে নেওয়া হয়। তিন তিন বার মন্ত্রীত্ব নিয়ে কিছু বক্তব্য পেশ করেন। বক্তব্য শেষ করে উনি নিজের চেয়ারে বসেন। এমন সময় একটা বন্ধুক উনার দিকে তাক করে। অগ্নির ইশারা পেয়ে একজন গার্ড সেই বন্ধুক ধরে রাখা ব্যক্তির হাত বরাবর শুট করে দেই। সাথে সাথে জনগনের মধ্যে এক আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে। অগ্নি একদম নির্বিকার। যেনো সে জানত এমন কিছুই হবে। অগ্নি বিরোধী দল সামজ্জুমানের ছেলে অভির দিকে তাকায়। যে এই মুহূর্তে ক্রোধ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । অগ্নির যা বুঝার ইতিমধ্যে বুঝে গেছে। অভির দিকে তাকিয়ে এক রহস্যময় হাসি দিয়ে ভোটার কেন্দ্র থেকে চলে আসে।
অগ্নি গাড়ির কাছে আসতেই রায়ান আর ইউভি পিছনে আসে। রায়ান ব্যাক সিটে বসতে বসতে বলে,,,,,
“” সামসুজ্জামানের পার্সোনাল বডিগার্ডকে গুলি কে মেরেছে?
অগ্নি গাড়ির স্ট্রিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে বলে,,,,,
” আমি কিভাবে বলব? ”
ইউভি — নাটক না করে সত্তিটা বল। যদি কিছু না করিস তাহলে এইভাবে মিটিমিটি হেসেছিস কেনো? ও আঙ্কেলকে শুট করতে এসেছে তুই ওকে শুট করিয়েছিস আমি সিউর?
ইউভির কথা শুনে অগ্নির মুখে আবার ও সেই রহস্যময় হাসি। অগ্নির দিকে তাকিয়ে রায়ান বলে,,,,
” ওয়েট ওয়েট তুই আগে থেকেই জানতি এমন হবে তাই না? আর তুই মোবাইলে এতক্ষন এইসব নিয়েই আলোচনা করেছিস।
অগ্নি এইবার কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে,, ,,
” বন্ধ করবি তদের টেপ রেকর্ড যখন জানিস তখন এত প্রশ্ন করছিস কেনো? আজ একটা মিশন আছে এইটা কমপ্লিট করতে হবে। আর এমনিতে তো কাল কানাডা চলেই যাচ্ছি। শুনলাম আতিক রহমান ও নাকি পড়শু কানাডায় গেছে। রানবীর শেখের ছেলে রায়হান খবর পাঠিয়েছে যাওয়ার জন্য।
রায়ান এইবার সিরিয়াস নিয়ে বলে,,,,,,,,
” কেনো তুই জানিস না? আমাকে তো আরিফ বলল।”
অগ্নি — বলেছে কিন্তু কথা কানে তুলে নি। কানাডায় গেলে আমার কাজ আর ও সহজ হবে সমস্যা নেই। আমি ও চাই ওরা যাতে আমার কাছাকাছি থাকে ।
ইউভি — জানি না এই রক্তের খেলা কত দিন চলবে। যদি ভুলে ও আতিক তারা টের পায় তুই ওদের মেইন শত্রু তাহলে পাগলা কুকুরের মত ক্ষেপবে। জানি না ও কি করবে।
অগ্নি বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৫
” জানলে তো কিছু যায় আসে না। আতিক আর রানবীরকে শেষ করার জন্য যা পাওয়ার তা আমি পেয়েছি। কিন্তু জেনে গেলে সেই লুকোচুরি খেলাটা থাকবে না। তরা কি ভাবছিস রানবীর আর আতিক রায়হানের কথায় কানাডায় গিয়েছে? না ব্রো ওদের মনে ভয় ডুকেছে তাই কিছুদিনের জন্য আড়াল হয়েছে।
আমি ও দেখি কতদিন এইভাবে থাকতে পারে। যেদিন ধরব ওইদিন এক একটার কলিজা কেটে আমি শকুন দিয়ে খাওয়াব। আগে ওর চেলাদের শেষ করতে হবে এর মনে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য।