অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৭

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৭
লিজা মনি

বিষন্ন এক রাত। ঘরটা অন্ধকারে ঢাকা এক রক্তেরঞ্জিত পরিত্যাক্ত রুম।শুধু ছাদের বাতির ফ্লিকারিং আলোটা মাঝে মাঝে জ্বলে উঠে আবার নিভে যায়।রক্তে ভেজা মাটিতে পড়ে আছে।দেয়ালে লাল ছোপ ছোপ যা এখন শুকিয়ে বাদামি হয়ে আছে।বাতাসে ভেসে আসছে গরম রক্ত আর ঘামের মিশ্রনে এক মরনগন্ধ।
অগ্নি দাঁড়িয়ে আছে চেয়ারের সামনে। তার সামনেই সামজ্জুমানের ছেলে অভিকে উলটো ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তার মাথা নিচে কিন্তু উপরে পা দড়িতে বাঁধা। অতিরিক্ত টর্চারে অভির চোখ বুঝে রেখেছে কিন্তু অচেতন নয়। অভির নিশ্বাস পরিত্যক্ত টর্চার সেলে গুমোট বেধে রয়েছে। অভি নিভু পল্লব মেলে ভাঙ্গা গলায় বলে,,,,,

” কে তুমি? তোমার সাথে আমার কিসের শত্রুতা? এইভাবে চোরের মত হুডির আড়ালে আছো কেনো? নিজের পরিচয় দাও। একজন মন্ত্রীর ছেলেকে এনে তাকে টর্চার করছো ভয় করছে না। এর কারনে আমি তোমাকে ফাঁসির মঞ্চে দাড়া করাতে পারি।
অগ্নি হুডির আড়ালে এক বিকৃত হাসি দিয়ে ছুড়ি ঘোরাতে ঘুড়াতে বলে,,,,,,
” ভয় আর মায়া এই দুইটা আমার ধাঁচে নেই। কারন আমি নিজেই একটা ভয়। বাংলাদেশের কোনো জেল মেবি আমাকে বেশিক্ষন আটকিয়ে রাখার ক্ষমতা নেই আর ফাঁসির শব্দটা তো বিলাসিতা মাত্র। যার নাম শুনলে কানাডার লোকেদের আত্না কেঁপে উঠে। আমি সে যার একটা নিশ্বাস ও শত্রুদের রুহ বেরিয়ে আসার উপক্রম। বাংলাদেশে আহান চৌধুরি আর কানাডায় অগ্নি চৌধুরি।অবশ্য আমাকে বাংলাদেশে অনেকে অগ্নি চৌধুরি হিসেবে ও জানে তবে সেটা সাধারন জনতা হিসেবে। এইবার ভেবে নে আমি কে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

লোকটা অবাক আর ভয় জোড়া চোখ নিয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। আহান চৌধুরি কে? সাজিদ চৌধুরির ছেলে কি? তাহলে সাজিদ চৌধুরির ছেলেই সেই মাফিয়া অগ্নি চৌধুরি? অভি অবাক আর একরাশ ভয় নিয়ে বলে,,,,,,
” অ.. অগ্নি চৌধুরি? এইজন্য নিজেকে সবসময় হুডির আড়ালে লোকিয়ে রাখো অগ্নি রুপে যাতে তোমায় কেউ চিনতে না পারে? তুমি সাজিদ চৌধুরির ছেলে?
অগ্নির পড়নে লং কোর্টটা সরিয়ে চেয়ারে পায়ের উপর তোলে আয়েশ করে বসে । এরপর অভির দিকে শান্ত দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে,,,,,,
” মরতে বসেছিস অথচ আমার জীবনী পড়া শুরু করেছিস। নিজের কথা ভাব। আমি তকে এক বারে মারব না তিলে তিলে কষ্ট অনুভব করাব।

অভি– কেনো এমন করছো? কি করেছি আমি?
অগ্নি — ভালো করেই জানিস। নিজের পরিবারের এক চিলতে ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য কোনোদিন নিজেকে প্রকাশ ওই করে নি। আর তুই গিয়েছিস আমার সামনে আমার বাবার বুকে গুলি চালাতে। কত বড় কলিজা হলে অগ্নি চৌধুরির পরিবারের দিক হাত দিয়েছিস বাস্টার্ড।
অগ্নির কথা শুনে অভি স্তব্দ হয়ে যায়।কিছুক্ষন পর নিজের স্তব্দতা কাটিয়ে ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বলে,,,,,,
” তুমি কিভাবে জানলে এইটা আমরা তিন জন ছাড়া তো কেউ জানত না। এমন কি আমার বাবা ও না।
অভির কথা শুনে অগ্নি একটা কুটিল হাসি দেই। এরপর সেই আগের মত শান্ত কন্ঠে বলে ,,,

” যার রক্তের দিকে হাত বাড়াতে গিয়েছিস তার সম্পর্কে একটু তো জেনে আসবি। তরা যেই রাজনীতি করিস তার চেয়ে বড় রাজনীতির সাথে জড়িত আমি। শত্রু কখন কোন সময় আ্যটাক করবে সেটা অন্তত বুঝি। তর দেওয়া বুলেট যদি আমার বাপের বুকে লাগত তাহলে এতক্ষনে ওনার মৃত্যুতে পুরো ঢাকায় আধার নেমে আসত। তুই কি ভাবছিস ছেড়ে দিব তকে? এতটা ভালো মনে হয় তর আমাকে?
অভি — মরেনি তো তাহলে? উনি তো এখন সুস্থ আছে।

অগ্নির চোখে এতক্ষন যে শান্ত দৃষ্টি ছিলো তা ধীরে ধীরে কঠোর হতে থাকে। এতক্ষন শান্ত থাকাটা যেনো ছিলো ঝড়ের পূর্ভাবাস। আর এখন সেটা ধীরে ধীরে তান্ডাবের রুপ নিচ্ছে। অগ্নি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। অগ্নির পদচারন যত এগোতে থাকে গার্ডগুলো ভয়ে জড়োসরো হয়ে দাঁড়ায়। অগ্নির হাতে এক ধারালো ছুঁরি। যেটা বাম হাতে ঝুলিয়ে রেখে একদম অভির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অভির সামনে দাড়াতেই চোখ ভেসে উঠে অভির ইশারাগুলো সাজিদ চৌধুরিকে মারার জন্য দিয়েছিলো। ধীরে ধীরে চোখের রং পাল্টাতে থাকে। মনে হচ্ছে চোখের কার্নিশ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়বে।
অগ্নির মুখ মাক্সের আড়ালে থাকলে ও অগ্নি চোখ দেখে অভি ভয় পেয়ে যায়। অগ্নিকে এইভাবে কাছে আসতে দেখে বলে,,,,,,

” ভুল করিস না। আমি এক মন্ত্রীর ছেলে। আমাকে মেরে নিজের জীবনে বিপদ কে আলিঙ্গন করিস না।
অভির কথা শেষ হতেই দারালো ছুরি দিয়ে অভির গলায় বসিয়ে দেই। সাথে সাথে অভি মরনব্যধী চিৎকার দিকে উঠে। গলায় ছুরি ডুকালে সেটা একদম নিখুঁত ভাবে ডুকিয়েছে যাতে অভি মারা না যায় । গলা থেকে গলগল করে রক্ত পরছে। যে কোনো সময় রক্তক্ষরনে মারা যাবে। গলা থেকে রক্তের ফেনা বের হতে ত্থাকে সাথে ফেঁচ ফেঁচ শব্দ।
অগ্নি ছুরিটা অভির হাতের চামরার ভিতরে ডুকিয়ে শান্ত গলায় বলে,,,,,,,,

” আলিঙ্গন করি? বিপদকে একটু আলিঙ্গন করতে চাই।”
অভি কথা বলতে পারছে না।যেনো কেউ জবান বন্ধ করে দিয়েছে।
অগ্নি অভির হাতের চামরা তুলে স্ক্যাচ করে বিরবির করে বলে ,,,,,
“”তুই জানিস এই জায়গাটা আমার টর্চার সেল। এখানে আমি আমার মত কারুকাজ করি। রং হচ্ছে তদের রক্ত। এখানে তুলির কাজ করে আমার এই ধারালো ছুরি আর ক্যানভাস হচ্ছে তোদের মতো পচা মাংস।”
অগ্নি চামরা তুলে অভির কাছ থেকে সরে এসে গার্ডকে ইশারা করে কিছু নিয়ে আসার জন্য। অভি একদম অচেতন হয়ে গেছে। শ্বাস চলছে কোনোরকম প্রায় অর্ধমৃত। শুধু আজরাইল এসে রুহটা বের করা প্রয়োজন।
অগ্নির ইশারা পেয়ে সাতজন গার্ড মিলে একটা বড় ড্রাম নিয়ে আসে। যেটার উপরে ডাকনা লাগানো। ড্রামটা ছিলো একদম কালো রঙ্গের। ড্রামটা নিয়ে একদম অভির নিচে রাখা হয়। অগ্নি উঠে গিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে ড্রামটা খুলে দেই। ড্রামের ভিতরে রয়েছে অজস্র বিষধর সাপ। যারা একজন আরেকজনের সাথে পেচিয়ে রেখেছে। মনে হচ্ছে খুবি ক্ষুধার্থ। এই মুহূর্র খাবারের প্রয়োজন। অগ্নি ড্রামের ভিতরে তাকিয়ে বলে,,,,

” বুঝতে পেরেছি ক্ষুধার্থ তরা। চিন্তা নেই খাবার পেয়ে যাবি। চামরা আলাদা করে দিয়েছি যতখুশি রক্ত খেয়ে নে।
এই বলে অভির পায়ে বেধে রাখা দড়িটা ছুরি দিয়ে কেটে ফেলে। অভি গিয়ে পড়ে একদম সাপগুলোর উপরে। অচেতন হয়ে থাকা ব্যক্তিটি এখন এক গগনবিধায়ী চিৎকার দিয়ে উঠে।
অগ্নি একদম শান্ত ভাবে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে পরে।
পর পর অভির চিৎকার পুরো টর্চার সেলে গুমোট বেধে গেছে। সাপগুলো বিষাক্ত ফনা তুলে অভির পুরো দেহটাকে খুবলে খেতে থাকে। মনে হচ্ছে শরীরের সমস্ত রক্ত চুষে নিচ্ছে। একসময় অভির চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয় নি বন্ধ হতে বাধ্য হয়েছে। কারন সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। সাপ গুলো অভির শরীরটাকে পেচিয়ে রেখেছে। পুরো শরীরে যেনো কেউ মানচিত্র এঁকে রেখেছে।
অগ্নি আরিফের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

” সালফিউরিক এসিড দিয়ে দে। সাপগুলোর সাথেই।”
আরিফ ভয়ে ভয়ে বলে,,,,,,
” জ.. জি ভাই ”
অগ্নি আরিফের দিকে কপাল কুচকে বলে,,,,,,
” তুই ভয় পাচ্ছিস কেনো? তকে কিছু করেছি আমি?
আরিফ — না ভাই ভয় পাচ্ছি না।
অগ্নি — গুড। এখন অভির ছবি তোলে আমার মোবাইলে সেন্ড কর।
অগ্নি বেরিয়ে যায় টর্চার সেল থেকে। আরিফ বিরবির করে বলে,,,
” এখানে দুর্বল কোনো মানুষ যদি আসে তাহলে সে হার্ট আ্যটাক করে মরবে তার কোনো সন্দেহ নেই। যেখানে আমাদের ওই ভয়ে আত্না যায় যায় উপক্রম। জানি না উনি কেনো এত নির্মম মৃত্যু দেন। পুরাই কুখ্যাত গ্যাংস্টার। বিয়ে হয়েছে এখন ও দয়া মায়া সৃষ্টি হয় না। বউকে ছাড়া আবার এক মুহূর্ত থাকতে পারে না। উনার মত লোকে ও কারোর জন্য এত ডেম্পারেট হয়।
আরিফ বির বির করে গিয়ে ড্রামের ভিতরে উকি দেই। মুহূর্তেউ চিৎকার দিকে সরে আসে।
গার্ডগুলো আরিফকে ধরে বলে,,,,,,

” কি হলো স্যার চিৎকার দিয়েছেন কেনো?
অরিফ গার্ডগুলোর দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে,,,,
” যাহ গিয়ে দেখে আয় কি অবস্থা। ছিহহহ দেখেই বমি পাচ্ছে। এই নে ছবি তোলে এনে দে আমি পারব না।
গার্ডিগুলোর মধ্যে থেকে একজন ছবি তোলে অগ্নির মোবিলে ট্রান্সফার করে।
এরপর ঢেলে দেওয়া হয় সেই মরনব্যাধী তীব্র সালফিউরিক এসিড। এসিড ধীরে ধীরে গভীরে ডুকতে থাকে।কোষের দেয়াল, এনজাইম, প্রোটিন সব ভেঙ্গে দেই।অভি সহ সাপগুলোর মাংস ও খসে পড়তে থাকে। ধীরে ধীরে নিশ্বেঃস হতে থাকে তাদের অস্তিত্ব। এরপর তাদের অস্তিত্ববিহীন পুড়ে যাওয়া মাংসগুলোকে উচ্চ তাপমাত্রায় ২০০০- ৩০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা হয়।তখন জৈব অনুগুলো পুড়ে কার্বন ডাই – অক্সাইড,পানি বাষ্প, নাইট্রোজেন গ্যাসে পরিনত হতে থাকে। ধীরে ধীরে পুরো অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়।

সাপে পেচিয়ে রাখা অভির রক্তাক্ত বিকৃত দেহটা সকল যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। পুলিশ, র‍্যাব, সিআইডি সকল ফোর্স লাগানো হয় শহরের আনাচে কানাচে। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আইনের লোকেরা তদন্ত করছে না। মন্ত্রী সামসুজ্জামানের ছেলে অভি নিখোঁজ তার চেয়ে বড় সারা ফেলেছে অভির সাপে পেচানো এই বিকৃত লাশ। কেউ কেউ আতঙ্কে একবার দেখে আর দেখার সাহস করে উঠে নি।
রাত এখন প্রায় বারোটার কাছাকাছি।
অগ্নি বাড়ির মেইন দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতেই শিখা চৌধুরির সম্মুখীন হয়। অগ্নি ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতেই শিখা চৌধুরি ডিভান থেকে উঠে গিয়ে বলে,,,,

” কে মেরেছে অভিকে? ”
অগ্নি খাপছাড়া ভাব নিয়ে বলে,,,,,
” আমি কি করে জানব? আমাকে প্রশ্ন করছ কেনো?
শিখা চৌধুরি —- তুমি যত বড় গ্যাংস্টার হও না কেনো সর্বপ্রথম আমি তোমার মা অগ্নি। তাই সবার চোখ ফাকি দিলেও আমার চোখ ফাকি দেওয়ার মত ভুল করো না। কেনো মেরেছো?
অগ্নি একটা বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,
” তোমার ছেলে বলেই এত বুদ্ধি আমার আম্মু। আর নিজের কাজের হিসেব আমি কাউকেই দেই না সেটা তুমি ও জানো।

শিখা চৌধুরি — তুমি দিন দিন জানোয়ারে পরিনত হচ্ছো।
অগ্নি — আর সেই জানোয়ারটাই তোমার ছেলে।
শিখা চৌধুরি রেগে গিয়ে বলেন,,,,,
” হ্যা জীবনে কি এমন পাপ করেছিলাম যে তোমার মত ছেলের জন্ম দিয়েছিলাম। পরিস্থিতির
শিকার সবাই হয় কেউ বেশি আবার কেউ কম কিন্তু তোমার মত হিংস্র কেউ হয়ে পড়ে না অগ্মি। বিয়ে হয়েছে সংসার করো। আর মনে রেখো তোমার কারনেই কিন্তু ইয়ানাকে আমি এই বাড়ির বউ করে এনেছি। ভেবে দেখেছো যেদিন ইয়ানা তোমার আসল পরিচয় জানবে তখন কি হবে.?

অগ্নি — আমার বউ তো আমি সামলে নিব। সেটা নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না।
শিখা — ওরা সাধারন ঘরের মেয়ে অগ্নি। তাদের কাছে কাউকে সামান্য গায়ে হাত তোলাটা অনেক বিশাল ব্যাপার। আর কাউকে খুন করা তো কল্পনার বাহিরে। তুমি জানো অভির লাশ দেখে তোমার বউ ঠিক কতটা ভয় পেয়েছিলো। কান্না করতে করতে বলছিলো কোন অমানুষ আর জানোয়ার এই কাজ করেছে। ওর চোখে আমি ঘৃনা দেখেছি। যেদিন তোমার সত্যি জানবে জানি না পরিস্থিতি কি হয়। শুধু ওর ঘৃনার পাত্র না হলেই হয় । এখন ও সময় আছে ছেড়ে দাও সবকিছু। ফিরে আসো আমাদের মাঝে। দেখবে জীবন কল্পনার থেকে ও সুন্দর।
শিখা চৌধুরি কিছু বলতে যাবে তার আগেই অগ্নি সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। অগ্নির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা নিশ্বাস ছাড়েন। হাজার বার ভেবেছে অগ্নিকে পুলিশের হাতে তোলে দিবে। কিন্তু দিয়ে কি লাভ। পুলিশের হাতে দিলে দশ মিনিটের ভিতরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিবে। শিখা চৌধুরি ডিভাবে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে পড়ে।

অগ্নি রুমে প্রবেশ করতেই কেউ তাকে জাপটে ধরে। কিছুক্ষনের মধ্যেই বুঝতে পারে ব্যক্তিটি কে। অগ্নি ইয়ানাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,,,,,
” আমি বাহির থেকে এসেছি জান। আগে ফ্রেশ হয়ে আসি এরপর সারারাত জড়িয়ে রেখো।
ইয়ানা অগ্নিকে আর ও জাপটে ধরে। ইয়ানা ভয়ে কাঁপছে দেখে অগ্নির কপাল কুচকে আসে। ইয়ানাকে কোলে তোলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেই। ইয়ানা অগ্নির শার্ট খামচে ধরে রখেছে। যেনো অগ্নি কোথাও পালিয়ে যাবে। অগ্নি ইয়ানাকে ধরে বলে,,,,,

” কি হয়েছে এমন করছো কেনো? কি নিয়ে এত ভয় পেয়েছো? বলো আমাকে?
ইয়ানা নিশ্চুপ। যেনো সে এতক্ষনে রাখা ভয়টা কাটিয়ে শান্তির জায়গা খুজে পেয়েছে।
ইয়ানাকে শান্ত হতে দেখে অগ্নি ইয়ানার মাথায় হাত দিয়ে বলে,,,,,,
” এখন বলো ভয়টা কি নিয়ে? না বললে আমি বুঝব কিভাবে।
ইয়ানা মাথা তোলে অগ্নির দিকে তাকায়। এরপর আতঙ্কিত কন্ঠে বলে,,,,
” আপনাকে নিয়ে ভয় হচ্ছিলো প্রচন্ড। ফোন দিচ্ছিলাম কিন্তু বার বার সুইচ অফ বলছিলো।
অগ্নি — হঠাৎ আমাকে নিয়ে এত ভয় কেনো পাচ্ছিলে?
ইয়ানা অগ্নির বুকে মাথা রেখে বলে,,,,,,

” বাবার নির্বাচনের বিজয়ী নিয়ে সবাই মজা করছিলাম তখন অরিদ ভাইয়া জানান সামজুজ্জামানের ছেলেকে কেউ খুন করেছে আর সেটা আপনি তো জানেন । সবার আনন্দ কিছু মুহূর্তের জন্য স্তব্দ হয়ে যায়। এরপর কিছুক্ষনের মধ্যে আম্মু বাসায় আসে। উনার মুখে ও এক ভয় দেখতে পেয়েছি। যাকে কোনোদিন ভেঙ্গে পড়তে দেখিনি তার মুখে ভয়ের ছাপ দেখে অবাক হয়ে যায়। আম্মু এসে টিভি অন করলেই সে ভয়ানক বিকৃত ডেড বডি। যাকে শত শত সাপে পেচিয়ে রেখেছে। কি বিচ্ছিরি অবস্থা ছিলো। এর মধ্যে বাবা ও চলে এসেছে। এতক্ষনের মিছিল রেখে পুরো শহর স্তব্দ হয়ে যায়। আপনি ও বাসায় আসছিলেন না। তার উপর ফোন সুইচ অফ। টেনিশন হচ্ছিলো আপনাকে নিয়ে। এই কয়েকদিন যতগুলো লাশের ছবি ভাইরাল হয়েছে সবগুলো কি বিকৃত। কথা দিন আমাকে কারোর সাথে ঝামেলায় জড়াবেন না। কেউ কিছু বললে মাথা ঠান্ডা রাখবেন একদম রাগ করবেন না।
অগ্নি ইয়ানার কান্নামিশ্রিত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই মেয়েটা অগ্নির জন্য কান্না করে বুক ভাসাচ্ছিলো। তাকে নিয়ে চিন্তা করছিলো। এইটা ভেবেই সকল বিরক্তি যেনো কোথাও ভেনিস হয়ে যায়। অগ্নিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,,,,,,,,

” কি হলো কথা দিন। এইসব খুন আমার প্রচন্ড ভয় করে। মনে হয় আমার আপনজনের কিছু একটা হয়ে যাচ্ছে। জানি না কে এমন করছে? তবে আমি আপনাকে বলছি কারোর সাথে তর্কে জড়াবেন না। যদি আপনার কিছু হয়ে যায় আমি বাঁচব না।
অগ্নি ইয়ানাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,,,,,,,
” শান্ত হও আমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না। কথা দিলাম অনুভবের সেহজাদী। তুমি জানো না তোমার এই সামান্য কাতরতা আমার কতদিনের মানসিক শান্তি।
ইয়ানা — যান এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন।
অগ্নি — জড়িয়ে যখন ধরে আছি আর কিছুক্ষন থাকি।
ইয়ানা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অগ্নির গলায় টাওয়াল পেচিয়ে দিয়ে বলে,,,,,,,

” আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন। জানি না কেনো সবসময় রাতে আপনি শাওয়ার নেন। মাঝে মাঝে আমার সন্দেহ হয়।
অগ্নি ঠোঁট চেপে বলে,,,,,,,
” সন্দেহের মাত্রাটা তীব্র হত যদি তুমি আমার সাথে থাকতে। তখন রাতে না ঘন্টায় ঘন্টায় শাওয়ার নিতাম। তবে তুমি চাইলে নিতেই পারি।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা কটমট চোখে তাকিয়ে বলে,,,,,,,
” যাবেন আপনি বেশরম লোক।।
এরপর ইয়ানা ঘুরে যায়। লজ্জায় ইচ্ছে করছে মাটির সাথে মিশে যেতে। সে এতক্ষন অগ্নিকে জাপটে ধরে ছিলো ছিহহ কি লজ্জাজনক ব্যাপার।

প্রায় বিশ মিনিট পর অগ্নি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে। পরনে তার কালো ট্রাউজার আর কালো টি- শার্ট। জিম করে রাখা পেশিবহুল হাত দুটি দৃশ্যমান। ইয়ানার অবাধ্য চোখ দুটি সেখানে গেলেই আবার সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নেই। আমার চোখগুলো ও আজকাল অগ্নি চৌধুরির মত বেহায়া হয়ে যাচ্ছে। শুধু ভুলভাল যায়গায় চোখের দৃষ্টি চলে যায়।
অগ্নি ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় বসে পড়ে। ইয়ানা অগ্নিকে বসতে দেখে বলে,,,,,,

” খাবেন না? ”
অগ্নি কিছুক্ষন ইয়ানার দিকে তাকায় এরপর বলে ,,,,,,
” খাব যদি তুমি খাইয়ে দাও। ”
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা টাস্কি খাওয়া সুরে বলে,,,,,,
” তা বড়লোক বাবার ব্যক্তিত্যসম্পন্ন ছেলে হঠাৎ অন্যের হাতে খাওয়ার শখ জেগেছে কেনো? চামচ নামক একটা খুঁটি ছাড়া তো কোনোদিন খেতে দেখিনি। আর আজ এই খুঁটি রেখে অন্যের হাত দিয়ে খাবেন?
অগ্নি — কথা শুনাচ্ছো? খাইয়ে না দিলে খাব না।
ইয়ানা — আরে আজব তো আপনি ছোট বাচ্চা নাকি?

অগ্নি — ওহুম তোমার একমাত্র হাজবেন্ড। যার স্পর্শ তোমার দেহে থাকবে । যার বাচ্চার মা হবে তুমি। যার…
অগ্নি কথা শেষ করার আগেই ইয়ান উচ্চস্বরে বলে,,,,,
” বন্ধ করেন আপনার এইসব বেহায়া বাক্য নির্লজ্জ লোক। খাইয়ে দিচ্ছি আমি তবুও অন্তত আফ যান।
ইয়ানা মিনি টেবিল থেকে খাবার নিয়ে অগ্নির কাছে যায়।এরপর প্রথম লোকমা মুখে দিতেই অগ্নি হাতে কামড় বসিয়ে দেই।
ইয়ানা নিজের আঙ্গুলে ফু দিয়ে বলে,,,,,
” রাক্ষস হয়ে গেছেন? খাবার খাচ্ছেন সেটা এনা খাবেন আমার হাত কামড়াচ্ছেন কেনো?
অগ্নি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,,,,,,,
” আঙ্গুলটাকে মিষ্টি ভেবে কামড় দিয়েছি। আমি তো ভেবেছিলাম কোনো মিষ্টি জাতীয় কিছু। তোমার আঙ্গুলটাই এত মিষ্টি তাহলে..
অগ্নি কথা শেষ করার আগেই ইয়ানা আরেক লোকমা ডুকিয়ে দিয়ে কটমট চোখে বলে,,,,,

” খেতে বসেছেন সেটা না করে আমাকে কেনো জালাচ্ছেন। খেতে বসলে মানুষ শুক্রিয়া আদায় করে আর আপনার মুখ থেকে বের হচ্ছে বেহায়া কথা।
অগ্নি শুধু ঠোঁট টিপে হাসে। খাওয়া শেষে ইয়ানা উঠতে যাবে এমন সময় অগ্নি ওর হাত ধরে ফেলে। ইয়ানা ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,,,
” আবার কি? ”
অগ্নি — বসো এখানে?
ইয়ানা — কেনো? আবার কি প্রয়োজন?
ইয়ানার এমন বোকা কথা শুনে অগ্নি ধমক দিয়ে বলে,,,,
” থাপরিয়ে অজ্ঞান করব বিয়াদপ মেয়ে। খাওয়ার প্রতি এত অনিহা কেনো তোমার ইয়ানা। আমি জানি তুমি এখন ও খাও নি আর খাবে ও না।

ইয়ানা — কে বলল খাই নি খেয়েছিতো?
অগ্নি চোখ পাকিয়ে বলে,,,,,,
” আবার মিথ্যে”
ইয়ানা — খাব না এখন। খেতে ভালো লাগছে না।
অগ্নি ইয়ানার কথাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের কাছে এনে জোর করে বসিয়ে দেই। এরপর কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইয়ানার মুখে ভাত ডুকিয়ে দেই। ইয়ানা হতভম্ব হয়ে তাকায় অগ্নির দিকে। যে ছেলে নিজে কখনো চামচ ছাড়া খাই নি সে আজ ওকে খাইয়ে দিচ্ছে সত্যি অবিশ্বাস্য ব্যাপার। আরেক লোকমা মুখে দিতেই ইয়ানা সর্বশক্তি দিয়ে অগ্নির আঙ্গুলে কামড় বসিয়ে দেই। অগ্নি নির্বিকার যেনো কিছুই হয় নি।
ইয়ানার মুখ মুছে দিয়ে বলে,,,,,,

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৬

” রিভেঞ্জ নিলে সেটা ভেবেচিন্তে নিও। পরে আমি কামড় শুরু করলে এক মাস আগে রুম থেকে বের হতে পারবে না।
ইয়ানা নির্লজ্জ বলে ডিভান থেকে উঠে পড়ে।
মানুষের মুখ দিয়ে এত বেহায়া কথা আসে কিভাবে।
অগ্নি কিছু বলতে যাবে এমন সময় মোবাইলে কল আসে।
অগ্নি ইয়ানার দিকে পলক তাকিয়ে বলে,,,,,
” তুমি দশ মিনিট অপেক্ষা করো আমি আসছি।
এরপর অগ্নি ফোন রিসিভ করে বেলকনিতে চলে যায়।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৮