অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৯

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৯
লিজা মনি

সূর্যে ঢাকা তিমিরকে বিদায় জানিয়ে ধরনীর বুকে এক ফালি আলোর সন্ধান মেলে। পুরো ধরনী সূর্যের তেজে আলোকিত হয়ে পড়ছে। শীতকাল প্রায় শেষের দিকে। গাছগুলো যেনো জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমন বার্তা। ভিবিন্ন অথিতি পাখির আগমন শুরু হয়ে গিয়েছে। সূর্যের এক ফালি আলোকরশ্মী মুখে আছরে পরতেই ইয়ানা চোখ মেলে তাকায়। চারদিকে তাকিয়ে দেখে সূর্যদয় হয়ে গেছে। ফজরের নামাজ পরে আবার ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।ইয়ানা শুয়া থেকে উঠে গায়ে উড়না জড়িয়ে নেই।চারপাশে তাকিয়ে দেখে অগ্নির কোনো অস্তিত্ব নেই। ঘড়িতে মাত্র আটটা বাজে এত সকালে উনি অফিসে চলে গেলেন? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায়।
নিচে নামতেই কাজের খালাকে দেখে প্রশ্ন করে,,,,,,

” আন্টি উনি কি চলে গিয়েছেন? ”
কাজের মহিলাটি — সঠিক বলতে পারি না। স্যারকে দেখেছি জিমের ড্রেস পড়ে বাহিরে যেতে।
ইয়ানা — ওহহ আচ্ছা
এরপর ইয়ানা মাথায় ভালোভাবে উড়না চেপে জিম রুম খুজতে থাকে। কিন্তু ও তো জানেই না জিম করার রুম কোনটা। এত বড় বাড়ি এখন কিভাবে খুজবে ও? ইয়ানা চারদিকে খুজাখুজি করে সুইমিংপুলের কাছে চলে আসে। সুইমিংপুলের কাছে আসতেই রাতের কথা মনে পরে যায়। অগ্নি বলেছে এখানে জীনের বসবাস রয়েছে। পরবর্তীতে বুঝেছে অগ্নি তাকে ভয় দেখানোর জন্য মজা করে বলেছে কিন্তু এরপর ও কোনো এক জায়গায় ভয়টা রয়ে গিয়েছে। ইয়ানা চারপাশে তাকায়। চারদিকে কোনো গার্ড নেই মনে হয় সবাই বর্তমানে বাহিরে আছে । ইয়ানা একটা শুকনো ঢুক গিলে এইখান থেকে প্রস্থান করে। আর ও কিছুক্ষন খুজাখুজির পর কাউচ দিয়ে ঘেরা একটা রুম দেখতে পায়। কৌতূহল বসত সামনে এগোতেই কাঙ্খিত ব্যক্তিকে পেয়ে যায়। ইয়ানা আর ও কাছে গিয়ে কাউচের বাহিরেই অগ্নিকে দেখে থমকে যায়। অগ্নি পর পর বুক ডাউন দিচ্ছে। ফলে ঘামে পরনে থাকা গেঞ্জিটা ভিজে জবজব করছে। পেশিবহুল হাত দুটি দৃশ্যমান। গলায় করা ট্যাটু মনে হচ্ছে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ঘাড় পর্যন্ত চুলগুলো সামনে আছরে পড়ছে বার বার ঘাম জড়ানো মুখে। ইয়ানা এক অন্য ঘোরে চলে যায়। ইয়ানার ভাবনার মাঝেই কারোর ধমক শুনতে পাই….

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” ভিতরে আসো ইডিয়েট”
ধমক শুনে ইয়ানার নেশা কেটে গেছে। সামনে তাকিয়ে দেখে অগ্নি শরীরের ঘাম মুছতে মুছতে তার দিকে এগিয়ে আসছে। ইয়ানা আর এক মুহূর্ত ব্যয় না করে ভিতরে ডুকে যায়।
পুরো রুমে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” এইভাবে শুধু ধমক দেন কেনো? ভালোভাবে কথা বলা যায় না।
অগ্নি ইয়ানার নিচ থেকে উপরে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে,,,,,,,
” বাড়িতে শত শত গার্ড আর তুমি টি- শার্ট এন্ড প্লাজু পরে বাহিরে চলে আসছো?
ইয়ানা বেকুবের মত নিজের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” এখন কি আমার ঘুম থেকে উঠে সেজে বের হতে হবে নাকি আজব?।
অগ্নি — থাপ্পর নামক শব্দ চিনো?
ইয়ানা — চিনবো না কেনো অবশ্যয় চিনি।

অগ্নি — ওই তোমার পরিচিত থাপ্পরটা দিয়ে অজ্ঞান করব বিয়াদপ মেয়ে। বলেছি কি আর বলছো কি? বাহিরে বের হলে শালীন পোশাকে বের হবে। আমি চাই না আমি ছাড়া অন্য কেউ তোমাকে এইভাবে দেখুক।বুঝাতে পেরেছি?
ইয়ানা অগ্নির কথার মানে বুঝতে পেরে বলে,,,,,,
” আমি কি অশালীন পোশাক পরে আছি নাকি? যাই হোক কেউ দেখে নি। এরপর থেকে খেয়াল রাখব। এসেছিলাম আপনার খোজে ধমক খেয়ে পেট ভরে গেছে। চললাম আমি।
এরপর ইয়ানা কাউচ ঠেলে বের হতে নিবে এমন সময় অগ্নি হাত ধরে ফেলে। এরপর হাত ধরে নিয়ে জিম সেন্টারে দাড়া করায়। সামান্য ওজনের একটা পাথর হাতে নিয়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,
” এসেই যখন পরেছো হালকা শারীরিক ব্যায়াম করে যাও। এতে শরীরের হাড় শক্ত হবে। পরবর্তীতে আমাকে সামলানোর জন্য সহ্য ক্ষমতা বাড়বে।

ইয়ানা কটমট চোখে অগ্নির দিকে তাকায়। ছিহহ কি কথাবার্তা উনার।
ইয়ানার তাকানো দেখে অগ্নি ইশারা দিয়ে বলে,,,,,,
” নাও ধরো ”
ইয়ানা — এর ওজন তো আমার চেয়ে বেশি। একে হাতে নিলে আমার হাত আর জীবিত থাকবে না। মারতে চান আমাকে?
অগ্নি — ওহুম সহ্য ক্ষমতা বাড়াতে চাই।
অগ্নি রুমের চারপাশের সব পর্দা ছেড়ে দেয়। মুহূর্তেই কাউচের উপর সাদা আস্তরনে ঢেকে যায়।
চারদিকে পর্দা দিতে দেখে ইয়ানা ফের প্রশ্ন করে,,,,,
“” চারদিকে পর্দা দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন কেনো?
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” তুমি এখন আমার সাথে প্রত্যেকটা স্টেপ ফলো করবে।বাহিরের কেউ যাতে তোমাকে দেখতে না পাই তাই পর্দা দিয়ে ঢেকে দিয়েছি।

অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” আমাকে আল্লাহ অনেক শক্তি দিয়েছে আর শক্তির প্রয়োজন নেই। আপনার গন্ডারের চামরা আপনি বানান আমাকে এর মধ্যে টানবেন না খবরদার। কোন ভুতে ধরেছিলো আজ আমি এখানে এসেছি।
অগ্নি সামান্য ধমক দিয়ে বলে,,,,
” টেপ রেকর্ড বন্ধ করো আর চুপচাপ দাড়াও।
অগ্নি গিয়ে ইয়ানার পিছনে দাঁড়ায়। এরপর অগ্নি বারবেল এর দুই সাইড দিয়ে ধরে ইয়ানার হাতের উপর রাখে। ইয়ানার মনে হচ্ছিলো ভূখন্ডটাকে ওর হাতের উপর কেউ রেখে দিয়েছে। ইয়ানা হালকা আওয়াজ দিয়ে বলে,,,,,
” আম্মু গো বাঁচাও আমাকে এই দানবের হাত থেকে”
অগ্নি ইয়ানার গলায় নিজের চিবুক রেখে বলে,,,,,

“, এখানে তোমার চৌদ্দঘোষ্টির মধ্যে এক ঘোষ্টি ও নেই আমি ছাড়া।আমি তো সাথে আছি তাহলে এত হাইপার হচ্ছো কেনো জান। যাস্ট পাঁচ থেকে দশ মিনিট আমার সাথে তাল মিলাও দেখবে সহজ হয়ে যাবে। এইটা তোমার পেশি গোষ্ঠীর উন্নতি করবে। Testosterone এন্ড growth হরমোন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
অগ্নির ফিসফিস করে কথা ইয়ানার চুপ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। অগ্নির শরীরের পুরুষনালী ঘ্রান ইয়ানার ভিতরে নারিয়ে তুলছে। অগ্নির গরম নিশ্বাস ওর ঘাড়ে আছরে পড়ছে। ইয়ানা এক অন্য জগতে চলে যায়। ভাবনার প্রহর কাটে অগ্নির কথায়,,,,,,
” হ্যালো মিসেস অগ্নি চৌধুরি কোথায় হারিয়ে গেলেন আপনি? কল্পনার রাজ্য থেকে বাস্তবে আসুন প্লিজ। প্রথম স্টেপ শেষ।
ইয়ানা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। এত সময় কেটে গেলো আর এইদিকে সে অন্য চিন্তায় মগ্ন হয়ে ছিলো?
এরপর অগ্নি ইয়ানাকে নিয়ে যায় পুল আপ বারের কাছে।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

” দেখতে তো দেখা যাচ্ছে কাপড় শুকানোর খুঁটি। কি এইটা?
অগ্নি — এইটা কাপড় শুকানোর খুঁটি নয় ইডিয়েট। এইটা পুল আপ বার। নাও এখন উপরে দুইটা হাত রেখে পুল আপ করো।
অগ্নি নিজের হাতে ইয়ানাকে শূন্য উঠিয়ে ইয়ানার কোমর চেপে ধরে। ইয়ানা নাক মুখ খিচে শুকনো ঢুক গিলে।
কোথায় এসে ফেসে গিয়েছে ও।
অগ্নি নিজের বাধন একদম হালকা করে দিতে ইয়ানা চিৎকার করে উঠে,,,,,
” ছেড়ে দিবেন না পড়ে যাব আমি। প্লিজ! প্লিজ।”
অগ্নি মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” ছাড়ছি না,আছি আমি তোমার সাথে। এই আপ ডাউন তোমার পুরো বডিকে এক্টিভ করবে। যাতে আমার স্পর্শ পেলে নেতিয়ে না পড়ো।
ইয়ানাকে খুচা মেরে অগ্নি নিজের ঠোঁট কামড়ে হাসে। ইয়ানাকে অপদস্থ করার জন্য সে লাস্ট কথাটা ইচ্ছে করেই বলেছে।
ইয়ানা বিরবির করে বলে,,, অসভ্য।
এরপর একই ভাবে একের পর এক স্টেপ দিতে থাকে। মনে হচ্ছে অগ্নি একজন শিক্ষক আর ইয়ানা স্টুডেন্ট।

আসাদ হোসেন সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। আর তার সামনে বসে সেলিনা হোসেন সেই কখন থেকে বকবক করে যাচ্ছে।
সেলিনা — সব তোমার দোষ আসাদ। আগে যদি জানতাম মেয়েটাকে দেশ ছেড়ে বিদেশ নিয়ে রাখবে তাহলে আমি জীবনে ও এই জায়গায় বিয়ে দিতাম না। তোমরা তো বলেছিলে ছেলে প্রফেস্যার তাহলে বিদেশ কি করছে?
রুয়ানা হতাশ চোখে মায়ের দিকে তাকয়ে বলে,,,,,,
“” আম্মু এখন তো একটু চুপ করো। আপুর সাথে তো রাতে কথা বললেই। আপু তো জানিয়েছে ইমার্জেন্সি কাজে দ্রুত তারা কানাডায় যেতে হয়েছে। হয়ত ভাইয়ার সময় হয়ে উঠে নি তাই আসতে পারে নি। আর ওরা বংশগত ব্যবিসায়ী আম্মু। আঙ্কেল হয়ত রাজনিতী করে কিন্তু তাদের রক্তে ব্যবসা বিরাজ করে সবসময়। কানাডায় তাদের ব্যবসার একটা অংশ। উনি সেটা দেখাশুনা করে। তাহলে ভাইয়া যদি কানাডায় যায় আপুকে কি রেখে যাবে? অবশ্যয় সাথে নিয়ে যাবে সেখানে তুমি এত রাগ করছো কেনো?

আসাদ হোসেন — বুঝা তর মাকে ভালো করে। স্বামী যেখানে থাকে স্ত্রী তো সেখানেই থাকবে। আমি যদি অন্য জায়গায় যায় তর মাকে কি নিয়ে যাব না। কিন্ত এই সামান্য কথা তর মায়ের মাথায় ডুকছে না।
সেলিনা হোসেন — মায়ের মন তুমি কখনো বুঝবে না আসাদ। কতদিন হলো মেয়েটাকে সামনে থেকে দেখি না। আমার পুরো সংসারটাকে অর্ধেক ও সামলে রেখেছে। পুরো বাড়ি এখন শূন্য শূন্য লাগে।
এই বলে সেলিনা হোসেন পুনরায় রান্নাঘরে চলে যায়। আসাদ হোসেন একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে পুনরায় খবর পড়ায় মনযোগ দেই। রুয়ানা ও নিজের প্রাইভেটের উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।

ইয়ানা শাওয়ার শেষ করে বিছানায় এসে বসে। পুরো শরীর ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে পুরো শরীর অবশ হয়ে যাবে কিছুক্ষনের মধ্যে। হাত দুইটা মুষ্টিবদ্ধ করা যাচ্ছে না ব্যাথা করে। ইয়ানা মনে মনে অগ্নিকে হাজারটা গালি দেই। কিছুক্ষন পর অগ্নি ও শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আসে। টাওয়াল দিয়ে মাথার চুল মুছতে মুছতে ড্রয়ার থেকে একটা পেইন কিলার এনে ইয়ানাকে খাইয়ে দেয়।
অগ্নি — যদি ব্যাথা করে ও তাহলে সামান্য করবে। ঔষধ খাইয়ে দিয়েছি ব্যাথা তীব্র হবে না।
ইয়ানা — জুতা মেরে অন্যদান। ইচ্ছে করে আমাকে এই শাস্তি দিয়েছেন তাই না?
অগ্নি — বেশি বুঝলে এই এক জালা। করি এক কাজে আর ভেবে নেই আরেকটা। তোমার ভালোর জন্য শিখিয়েছি। তোমাকে শাস্তি দিয়ে আমার কি লাভ
ত্যারামি করলে অবশ্যয় দিতাম। যদি আমার কথা না শুনে তিরিং বিরিং করতে থাহলে আজ সারাদিন ওইখানে বসিয়ে রাখতাম। কিন্তু তুমি শুনেছো তাহলে শাস্তি দিতে যাব কোন দুঃখে।
ইয়ানা গাল ফুলিয়ে বলে,,,,,,

” এইটা শাস্তির থেকে কম কিছু নাকি ”
অগ্নি — এইটা শাস্তি নয় সুইটহার্ট। আমার ওজন সহ্য করার জন্য তোমাকে দিয়ে ট্রেনিং দিয়েছি।
ইয়ানা রাগান্বিত হয়ে অগ্নির দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে,,,,,,,,,
“” আপনি এত ঠোঁট কাটা নির্লজ্জ কেনো? ”
অগ্নি ইয়ানার চোখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। এরপর সিরিয়াস হয়ে ঘম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,,,
” মেবি বস্ত্রবিহীন জন্মগ্রহনের কুফল এইটা। সেকারনেই নির্লজ্জা আমি।
ইয়ানা দাতে দাত চেপে তাকায় অগ্নির দিকে। এত বেশরম পুরুষ কিভাবে হয় । মুখে কিছু আটকায় না। এখান থেকে যে নিচে যাবে সে উপায় ও নেই। মেঝেতে পা রাখতে পারছে না। পায়ের তালু পুরোটা ব্যাথা হয়ে গেছে। ইয়ানা নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,,,,,,

” ক্ষমা করে দিন মি, চৌধুরি আপনাকে আর কোনো প্রশ্ন করব না। তবুও অন্তত আমাকে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেলবেন না।
অগ্নি — পরবর্তীতে ভেবে দেখব। আবহাওয়া ভালো না মেবি বৃষ্টি আসতে পারে । আমি বাহিরে যাচ্ছি যদি বেশি বজ্রপাত হয় তাহলে আন্টির কাছে চলে জাইয়ো।
ইয়ানা — কি মনে করেন আমাকে ভিতু? আমি এইসবে ভয় পায় না মি, অগ্নি চৌধুরি।
অগ্নি পারফিউম লাগাতে লাগাতে বলে,,,,,,
” হ্যা তার নমুনা কাল রাতেই দেখতে পেয়েছি।”
ইয়ানা — সেটা আপনি ইচ্ছে করে ভয় দেখিয়েছেন বদ লোক।
অগ্নি — আমি না হয় দেখিয়েছি তোমার ভয় পেত হলো কেনো? তুমি দাঁড়িয়ে থাকতে চুপচাপ।
ইয়ানা অভীমানী সুরে বলে,,,,
“মজা নিচ্ছেন আপনাকে জড়িয়ে ধরেছি বলে”

অগ্নি এসে ইয়ানার সামনে দাঁড়ায়। এরপর ইয়ানার দুই গালে হাত রেখে মিহি সুরে বলে,,,,,
” যখন, যেখানে ইচ্ছে, যেকোনো সময় তুমি জড়িয়ে ধরার ক্ষমতা রাখো। কারন এইটা তোমার লিখিত দলিল। যেটা সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেলে ও বদলাবে না ইভেন কেউ মাথা রাখার ঠাই পাবে না শুধু তুমি ছাড়া। যেদিন তুমি ব্যাতিত কোনো অন্য নারী আমার এই বক্ষে মাথা রাখবে সেদিন এই বক্ষ আমি জালিয়ে দিব। তোমার সম্পত্তি নেওয়ার কারোর রাইট নেই সোনা।
ইয়ানার চোখের কার্নিশে পানি চিকচিক করছে।সত্যি কি লোকটা তাকে এতটা চাই। তার জীবনের সাথে জিড়িয়ে এতটা অধিকার দিয়েছে। তাহলে কেনো তাকে ভালোবাসি বলে আপন করে নিচ্ছে না। কেনো উনি এতটা ডেম্পারেট। আজকাল কোনো হাজবেন্ড তার স্ত্রীর প্রতি এতটা পজেসিভ হয়। কিন্ত অগ্নি চৌধুরি পজেসিভ নিজের স্ত্রীকে নিয়ে।ভালোবাসে না বলেও দুই হাতে আগলে রেখেছে।
ইয়ানা কান্নামিশ্রিত হাসি দিয়ে বলে,,,,,,

” আপনি খুব ভালো অগ্নি চৌধুরি। নিজের জীবনের চেয়ে বেশি বিশ্বাস জন্মেছে আপনার প্রতি। সত্যি আপনার মত হাজবেন্ড পাওয়া একটা বিলাসিতা। কিন্তু সেই বিলাসিতা আমি করেছি আপনাকে পেয়ে। ভাগ্য করে আমি আপনাকে পেয়েছি। সবসময় আপনার সাথে থাকতে চাই একদম মৃত্যুর আগে পর্যন্ত। পরো পারে ও যাতে বিধাতা আপনাকে আমার নামে করে দেই।
ইয়ানা অগ্নিকে জড়িয়ে ধরে। অগ্নি নির্বাক। এতটা প্রশংসা পাওয়ার তো ও যোগ্য না। অগ্নি বড় বড় শ্বাস নিতে থাকে। কোনো এক অজানা ভয় চারপাশ দিয়ে ঘিরে ধরছে। অগ্নি আর এক মুহূর্ত ও এখানে না দাড়িয়ে ইয়ানাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রুম ত্যাগ করে।
ইয়ানা অগ্নির এইভাবে চলে যাওয়াতে অবাক হয়। পরবর্তীতে মুচকি হাসি দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।

রায়ান আর ইউভির সামনে অগ্নি একদম শান্ত ভাবে বসে আছে। রায়ান অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
“” তাদের লেলিয়ে দেওয়া চেলা – পেলারা হয়ত দেখেছে তকে আর ইয়ানাকে এক সাথে। সেটাই গিয়ে আতিক রনবীরের কাছে বলেছে। কিন্ত চিন্তা হচ্ছে গিয়ে ওরা ইয়ানাকে যদি কিছু করে। কারন এখন থেকে ওদের টার্গেটের ভিতর ও থাকবে।
অগ্নি — কেউ হাত বাড়িয়ে দেখুক কলিজা ছিড়ে আনব। আর মনে হয় না ওরা এইসবে জড়াবে।
ইউভি — এতটা বিশ্বাস কেনো তর?
অগ্নি বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,,
” ওরা জানে আমি ইয়ানাকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিয়ে করেছি। তাই তারা এইটা নিয়ে আর মাথা ঘামাবে না।
রায়ান আর ইউভি এই কথা শুনে অবাক হয়ে অগ্নির দিকে তাকিয়ে ভলে,,,,,

” তার মানে? তুই সত্যি কি প্রতিশোধ নিতে বিয়ে করেছিস?
অগ্নি — বলদের মত কথা বললে আছাড় দিয়ে মগজ বের করব। ওর সামান্য আর্তনাদে আমার রুহ কেঁপে উঠে আর আমি তাকে আত্যাচার করব লাইক সিরিয়াসলি।
ইউভি — তাহলে খোলাসা কর এই ব্যাপারটা কেনো বিয়ে করেছিস ইয়ানাকে? তুই হঠৎ বিয়ের মত এমন একটা কাজ করলি, একটা মেয়ের সাথে নিজের জীবন জড়িয়েছিস। আর শুধু ওর সাথে জীবন জড়িয়েই নিস নি একদম ডেম্পারেট হয়ে আছিস। আগে এইটা বল বিয়ে কি আন্টি দিয়েছে নাকি তুই আন্টীকে বলেছিস কোনটা?
অগ্নি ঘম্ভীর কিন্তু ওর চোখ দুইটা হাসছে।

“” আজ পর্যন্ত কারোর কথা শুনেছি যে আম্মুর সামান্য ব্লেকমেইলে আমি একটা মেয়েকে বিয়ে করতে যাব? ইয়ানা যেদিন আমাকে থাপ্পর দিয়েছিলো এর আগে আমি তাকে বাচ্চাদের আশ্রমে দেখেছিলাম। একদম মিষ্টি প্রানবন্ত আর আবেদনময়ী। যার হাসিতে ছিলো না কোনো কূটিলতা আর না ছিলো হিংসা। তখন থেকেই ওর প্রতি ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ি। এক পর্যায়ে এটা আমার নেশার রুপ ধারন করতে থাকে। ওকে না দেখলে আমি মাতাল হয়ে যেতাম। মাত্র দশ দিনে ও আমার হৃদয় মস্তিষ্কে জায়গা করে নেই একদম সম্পূর্নরুপে। পরবর্তীতে ওর থাপ্পর খেয়ে ও চুপ ছিলাম। ওর জায়গায় যদি অন্য কেউ থাকত তাহলে সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে খুঁড়ে দিয়ে আসতাম। ওকে যাস্ট এক নজর দেখার জন্য ভার্সিটিতে জয়েন করি। তদের সবাইকে জানিয়েছি কোনো এক কাজে জয়েন হয়েছে। এইটাই ছিলো মেইন কাজ। তদের বিশ্বাস করাতে পারলে মিসেস শিখা চৌধুরি মানে আমার আম্মুকে বিশ্বাস করাতে পারে নি।

কথায় আছে সন্তানের মন মা পড়তে পারে। উনি আমার মা ওনার বুদ্ধি তো সবসময় থাকবে এটাই স্বাভাবিক। উনি ধীরে ধীরে জেনে যায় কে সেই মেয়ে? যার প্রতি আমি এতটা ডেম্পারেট। এরপর আম্মু খুশি হয়ে ছিলেন । আমাকে ওই মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে চাইলেন। কিন্তু আমি না করে দেই। এইসব নেশা কেটে যাবে দেশের বাহিরে গেলেই। এইসব আজাইরা মেয়েলি জিনিসে জড়াতে চাই নি।কিন্তু আম্মু যেহেতু আমার হালকা দুর্বলতার সন্ধান পেয়েছে এইটা নিয়ে উনি বেঁকে বসেন। আমাকে ওর সাথে বিয়ে দিয়েই উনি শান্ত হবেন। বেছে নিলেন ইমোশনাল সুসাইড অভিনয়। আম্মুর অভিনয় জানা সত্তে ও বিয়েতে হ্যা করে দিয়েছি। সমস্ত কাজ হয়েছে একদম শান্তভাবে। ইয়ানার সামনে ও আমি একটু অপরিচিত সাজলাম। বাংলাদেশে গিয়েছিলাম আতিকের গোপন তথ্য নেওয়ার জন্য। আর সেই জায়গায় এখন নিজের ওই গোপন তথ্য রেখে এসেছি।
ইউভি আর রায়ান শুধু অবাকের পর অবাক হচ্ছে। ওরা ভেবেছিলো শিখা চৌধুরিকে ফোঁর্স করে বিয়ে করিয়েছে। বিষয়টা মানতে কষ্ট হলেও ওরা মেনেছে।
ইউভি — ভালোবাসিস তুই ইয়ানাকে?

অগ্নি — না। ও আমার এক তীব্র অনুভব। আমার এক তীব্র নেশা। মানুষ সব কিছুর সাথে পেরে উঠলে অনুভুতির সাথে পেরে উঠে না। আমি ওকে চাই সারাজীবন আমার পাশে। ভালোবাসা এইসবের কাছে নেই আমি।
রায়ান — আসলেই ইয়ানা খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। ওর মুখের দিকে তাকালে তার হাসি দেখেই সবাই মুগ্ধ হয়ে যাবে।
অগ্নি কপাল কুচকে রায়ানের দিকে তাকায়। এরপর দাতে দাত চেপে বলে,,,,,,,
” ওর সৌন্দর্যের গভীরতা আমি জানি তকে কে বলেছে এক্সপ্লেইন করতে। আজ থেকে ইয়ানার দিকে তর তাকানো নিষেধ।
রায়ান অগ্নির কথা ভেবেচেকা খেয়ে বলে,,,,,

” আমি ভাই হিসেবে বলছিলাম অগ্নি একদম নেগেটিভ ভাবে নিবি না। আমি সম্পূর্ন জেন্টাল বয়। আমি ও এক নারীতে আটকে আছি। এখন শুধু ওকে বিয়ে করে এখানে আনার কথা ভাবছি।
রায়ানের কথা শুনে ইউভি তার দিকে অবাক হয়ে তাকায়।
আর অগ্নি ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিয়ে একটা মুচকি হাসি দেই।
ইউভি — কোন নারী সে? কার প্রতি তুই পিছলে পড়েছিস বল শালা?
রায়ান নিজের কথায় নিজেই টাস্কি লেগে বসে আছে। উত্তেজনার ফলে সব বলে দিয়েছে। এখন না বললে ইউভির হাতের মাইর খেয়ে জীবন হারাতে হবে।
রায়ান — ইয়ানার বান্ধুবী সুমু। ওকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি।
রায়ানের কথা শুনে ইউভি প্রথমে অবাক হয়ের এরপর উচ্চস্বরে হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,
“” প্রেম কি জুতার বারি খেয়ে হয়েছে নাকি এর আগে কোনটা ”
রায়ান কটমট চোখে বলে,,,,,,,

” হাসবিনা একদম। জানি না কখন হয়েছে তবে ওর থেকে দুরে এসে শূন্যতা অনুভব করছি ব্যাস এইটুকুই জানি।
ইউভি — তো কি ভেবেছিস? তুই থাকিস কানাডা আর ও হচ্ছে বাংলাদেশে প্রেম করবি কিভাবে?
রায়ান — প্রেম করব তকে কে বলেছে? একদম বিয়ে করে সাথে নিয়ে আসব। সুমু ওর মামার বাড়িতে থাকে ওর বাবা নেই। ওর মাকে আর মামাকে শুধু রাজি করাতে হবে। কিন্ত তার আগে ইয়ানাকে জানাতে হবে। ওকে রাজি করাতে পারলে আমার কাজ সহজ হয়ে যাবে।
রায়ানের কথা শুনে অগ্নি সতর্ক সুরে বলে,,,,,,
” খবরদার আমার বউয়ের দিকে তাকিয়ে কথা বলবি না”
রায়ান কিছুটা রেগে বলে,,,,,,

” ক্ষমা কর ভাই আর কোনোদিন তর বউয়ের প্রশংসা করব না। তর হানিমুনের টিকেট আমি কেটে দিব এরপর ও এইসব বলা থেকে চুপ থাক।
অগ্নি ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,,,,
” হানিমুনে কে যাচ্ছে? ”
রায়ান — বিয়ে তো হয়েছে কয়েক মাস হতে চলল তাহলে হানিমুনে যাচ্ছিস না কেনো?
অগ্নি — হানিমুনে গিয়ে বউয়ের সাথে সময় কাটায়। আমার এত বড় বাড়ি থাকতে অন্যের তৈরি করা বাড়িতে বউয়ের সাথে সময় কাটাতে যাব কোন দুঃখে?
রায়ান হতাশ সুরে বলে,,,,,,
” বিয়ে হয়েছে একটু তো রুমান্টিক মুডে আয়। মেয়েটাকে নিয়ে ঘুরতে যা দেখবি ওর ভালো লাগবে।ফলে ও শহর সম্পর্কে জানবে চিনবে।
অগ্নি ঘম্ভীর গলায় বলে,,,,,,,

” জানার দরকার নেই। অপরিচত ওই ভালো।
রায়ান — কেনো তর সত্যি জেনে যাবে সেই ভয়?
অগ্নি — তদের মনে হয় আমি এইটা নিয়ে ভয় পাই?
ইউভি — সত্যি ভয় পাস না অগ্নি? একবার ও ভেবেছিস সবটা জানলে কি হবে?
অগ্নি রহস্যময়ী হাসি দেই। যেই হাসির অর্থ তার ও অজানা।

সন্ধ্যার দিকে ইয়ানা মেঘলা আকাশের দিকে তাকায়। পুরো দিন আজ আকাশ মেঘে ঢাকা ছিলো। সকালে সূর্যের তেজ পড়লে ও এখন আর নেই। বৃষ্টি আসবে কি না তার ও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ঔষধ খাওয়ার ফলে শরীর তেমন একটা ব্যাথা অনুভব হয় নি। তবে শরীরটা মেজমেজ করছে। বিকেলে ইয়ানা সারাক্ষন কাজের আন্টির সাথে কথা বলে সময় কাটিয়েছে। কাল থেকে আবার ভার্সিটি যেতে হবে তাই মিরার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে হল্লা গ্রুপে ফোন দেই। এই হল্লা পার্টি হচ্ছে তার জীবনের এক টুকরো খুশির ঝিলিক। এদের সাথে কথা বললে হাসতে বাধ্য । যত মন খারাপ থাকুক হাসতে হবেই। ইয়ানা কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে উপরে যায়। এরপর পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে । আবার ও চলে যায় সেই তালায় যেখানে গেলে সে মাঝে মাঝে অদ্ভুত কন্ঠ শুনতে পাই। ইয়ানা যত কাছে যায় মনে হচ্ছে কেউ বড় বড় নিশ্বাস ফেলছে। আর কেমন জংলি পশুদের মত আওয়াজ। ভালো করে শুনা যাচ্ছে না তবে ধারনা করার মত। ইয়ানা কিছুটা ভয় পেয়ে সেখান থেকে চলে আসে। বলা যায় না যদি ওনার কথা অনুযায়ী সত্যি কোনো জীন থেকে থাকে।

ইয়ানা কিছুটা ভয় পেয়ে পুনরায় নিজের রুমে চলে যায়। কিন্তু মনের মধ্যে একটা খচখচ থেকেই যায়। কার এমন বিশাল আমানত এখানে যার দরজা উনি আজ ও খুলেন নি। যদি আমানত ওই হয় তাহলে এমন আওয়াজ হয় কেনো?
ইয়ানা পুরো রুমে কিছুক্ষন পায়চারী করে। মন বলছে আবার ওইখানে যেতে। এই রুমের ভিতরে ডুকে শুধু একবার দেখার জন্য কি আছে ওইখানে। আচ্ছা যদি আন্টিকে নিয়ে যায় তাহলে কেমন হবে? ইয়ানা কিছু একটা ভেবে দরজার সামনে যেতেই কোনো শক্তি কিছুর সাথে ধাক্কা খাই। সামান্য ব্যাথা পেয়ে আউচ করে উঠে।
ইয়ানার আর্তনাধ শুনে সামনে থাকা ব্যক্তিটি অধৈর্য হয়ে বলে,,,,,,,

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৮

” দেখে হাটবে না। এত তারাহুড়া করে কোথায় যাচ্ছিলে?
ইয়ানা — আমি তো ওই রু…..
ব্যাস ইয়ানা থেমে যায় কথা বলা থেকে। ইয়ানাকে থেমে যেতে দেখে অগ্নি কপাল কুচকে বলে,,,,,,
” আমি তো কি? ”
ইয়ানা মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,
” আরে আমি তো আন্টির কাছে যাচ্ছিলাম। তেমন কিছু না। ”
এই বলে ইয়ানা বিছানার কাছে চলে যায়। অগ্নি ইয়ানার চলে যাওয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকায়।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২০