অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২০
লিজা মনি
ইয়ানা আর মিরা ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে ছিলো। মিরা ইয়ানার দিকে তাকিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে,,,,,,
” জনির খুনিকে কি খুজে পাওয়া গিয়েছে? শুনেছি খুনীর নাকি একটা সূত্র ও পাই নি।
ইয়ানা — আমাকে তো উনি তাই বলল।
মিরা — একবার যদি তাকে সামনে থেকে দেখতে পেতাম।
ইয়ানা — তোমার কেনো মনে হয় যে জনিকে মেরেছে সে ও কোনো ভালো ব্যক্তি। সে তো জনির থেকে ও নিকৃষ্ট হতে পারে। কোনো ভালো লোক কাউকে এতটা জঘন্যভাবে খুন করতে পারে না। আমি তো বলি ও সাইকো ছাড়া কিছু নই।
মিরা হালকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,
” ও ভালো নাকি খারাপ তা জেনে আমি কি করব ইয়ানা? জনিকে যদি আমি কাছে পেতাম তাহলে এইভাবেই ভয়ংকর মৃত্যু দিতাম। অজান্তেই ও আমার প্রতিশোধ নিয়ে দিয়েছে। হয়ত সে জানে ও না ওর জন্য কতটা মানসিক শান্তিতে আছি আমি। এত দিনে মনে হচ্ছে মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছি। না আছে কোনো ভয় আর না আছে কোনো আতঙ্ক। অনেক মাস হলো নিজের বাবা – মাকে চোখে দেখি না। নিজের মাতৃভুমিতে তো ফিরতে পারব এই অনেক।
ইয়ানা — কবে যাচ্ছ তাহলে?
মিরা — সঠিক জানি না।
ইয়ানা — তাহলে আজ আসো আমাদের বাড়িতে। কিছুক্ষন সময় কাটালে তোমার ও ভালো লাগবে।
মিরা — যেতে বলছো?
ইয়ানা — হ্যা।
মিরা — ভার্সিটি ছুটি হতে আর ও আধাঘন্টা আছে। চলো তোমাকে পুরো ভার্সিটি ঘুরে দেখাই। তুমি তো কিছুই চিনো না
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইয়ানা — চলো। আমি ও সেটাই ভাবছিলাম একদিন পুরোটা দেখব।
মিরা ইয়ানাকে নিয়ে একটা গবেষনা কেন্দ্রে যায় যেখানে মেডিকেল রিসার্চ, পাবলিক পলিসি ও পরিবেশবিদ্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এরপর নিয়ে যায় একটা ক্যাম্পাসে। ইয়ানা মুগ্ধ নয়নে চারপাশে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” জায়গাটা অনেক সুন্দর মিরা।
মিরা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” একে অতীতে ঘেরা আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়। সৌন্দর্য তো থাকবেই।
ইয়ানা চারপাশে তাকিয়ে দেখে ক্যাম্পাসজুড়ে ছায়া ঘেরা গাছ, খোলা মাঠ, ফুলের বাগান ও ওয়াকওয়ে। মনে হচ্ছে কোলাহল থেকে দুরে কোনো শান্তিপূর্ন জায়গায় এসেছে।
এইভাবে তারা অনেক্ষন হাটাহাটি শেষে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসলে ইয়ানা আর মিরা বাড়ির উদ্দ্যশ্যে বের হয়ে যায়।
মিরা আর ইয়ানা ডিভানে বসে গল্প করছিলো। কাজের আন্টি কিছু হালকা খাবার দিয়ে যায়। মিরা বাড়ির চারপাশে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” বাড়িটা খুব সুন্দর ইয়ানা। মনে হচ্ছে কোনো রাজপ্রাসাদে বসে আছি। ভাইয়ার পছন্দ আছে বলতে হয়।
ইয়ানা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“বিয়ে করছো কবে?”
মিরা — ভাবি নি কখনো। আজকাল ছেলেদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় প্রচন্ড। কোনো ছেলের জীবনের সাথে জড়াতে ভয় হয়।
ইয়ানা — কে বলল তোমাকে সব ছেলে খারাপ? অন্ধকার এই সমাজে এখন ও কিছু আলোর টুকরো আছে। এক কাজ করি তোমাকে আমি আমার ছোট জা করে নিয়ে যাই।
ইয়ানার কথা শুনে মিরা উচ্চস্বরে হেসে উঠে। অন্য কোনো মেয়ে হলে হয়ত লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলত। মিরা হাসি সংযত করে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” তুমি সাজিদ চৌধুরির ছোট ছেলে অরিদ চৌধুরির কথা বলছো রাইট ইয়ানা?
ইয়ানা — হ্যা তুমি চিনো ভাইয়াকে?
মিরা আপেলে কামড় বসিয়ে বলে,,,,,,
” নাহ তেমনভাবে চিনি না। বাট ওনার সাথে আমার একবার একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিলো। আমি একবার নানো বাড়ি গ্রামে গিয়েছিলাম। তখন অরিদ চৌধুরি আর ওনার দুই ফ্রেন্ড ও চট্টগ্রামে গিয়েছিলো কোনো এক কাজে মেবি। আমি আর আমার কাজিন মিলে গ্রাম ঘুরে দেখছিলাম তখন ওই উনার সাথে আমার ধাক্কা লাগে। উনি গিয়ে একদম কর্দমা যুক্ত খালে পড়ে। আর আমি গিয়ে পড়ি শক্ত মাটির উপর। আমাকে আর পাই কে এক দৌড়ে বাড়িতে চলে আসি। পরে জানতে পারি উনি নাকি মন্ত্রীর ছেলে। আমাকে অনেক খুজেছে বাট পাই নি আমি ওইদিন রাতেই নিজের বাড়ি চলে আসি।
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,,
” তাহলে তো ভাইয়াকে ব্যাপারটা জানাতে হয়। উনার শত্রুকে খুজে পাওয়া গিয়েছে।
মিরা — আরেহ না। উনি হয়ত ভুলে গেছেন এতদিনে। আমার ও মনে থাকত না বাট একজন মন্ত্রীর ছেলেকে কাদায় ফেলেছি তাই মনে আছে।
ইয়ানা — ভালোবাসার প্রথম দিক এইটা। ঝগড়া থেকে ভালোবাসা শুরু ঠিক আমাদের মত।
এইভাবে খুনশুটি, আড্ডা দিতে দিতে প্রায় বিকেল হয়ে যায়।
অগ্নি নিজের ফিঙ্গার টাচ করে ড্র্য়িংরুমে প্রবেশ করে। মুখে এখন ও মাক্স রয়েছে। ড্রয়িংরুমে ইয়ানার পাশে অপরিচিত কাউকে দেখতে পেয়ে কপাল কুচকে আসে। এরপর নিজের মুখ থেকে মাক্সটা খুলে ফেলে। কিন্তু মিরা এক ঝটকায় অগ্নিকে মাক্স পরিধান করা অবাস্থায় দেখে ফেলে। এই সেই ঠান্ডা ভয়ানক চোখ জোড়া। যাকে পুরো শহর ভয় পাই। মিরা উত্তেজনার ফলে কাঁপতে থাকে। কিন্তু এটাকে সেই চোখ। না হয়ত ভুল হচ্ছে আমার।
ইয়ানা অগ্নিকে দেখে তার কাছে গিয়ে বলে,,,,,
” আজ এত তারাতাড়ি চলে আসলেন? ভালো হয়েছে এসেছেন। আপনাকে মিরার কথা বলছিলাম না ও হচ্ছে মিরা।
এরপর মিরার দিকে তাকাতেই দেখতে পাই মিরা অস্বাভাবিকভাবে কাঁপছে। ইয়ানা মিরার দিকে কাছে এসে বলে,,,,,,
” কি হলো মিরা খারাপ লাগছে? ”
মিরা নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,,,,
” না আমি ঠিক আছি। কিছু হয় নি হালকা মাথাটা ব্যাথা করছে এই আরকি।
ইয়ানা — ওহহ আচ্ছা। মিরা উনি হলেন মি, চৌধুরি।
মিরা অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
অগ্নি — ওয়া আলাইকুম আসসালাম। তোমরা কথা বলো আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি।
এরপর অগ্নি বড় বড় পা ফেলে উপরে চলে যায়।
অগ্নি চলে যেতেই মিরা ইয়ানার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,,,
” ইয়ানা ভাইয়া কি শুধুই একজন ব্যবসায়ী আর অন্য কিছু নয়।
ইয়ানা — হ্যা উনি একজন সফল ব্যবিসায়ী। আর কিছু নয়। কিন্তু কেনো মিরা? তুমি এই প্রশ্ন কেনো জিজ্ঞাসা করছো?
মিরা — নাথিং। আচ্ছা ইয়ানা আমি তাহলে আজ আসি। ভাইয়ার তোমাকে প্রয়োজন পড়বে।
ইয়ানা — আর কিছুক্ষন থাকো।
মিরা — না বিকেল হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যার আগে হোস্টেলে যেতে হবে নাহলে পরে গেইড বন্ধ করে দিবে।
ইয়ানা — ওকে তোমার ইচ্ছে।
ইয়ানা মিরাকে গেইড পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসে। এরপর ড্রয়িংরুমে এসে দরজা লাগিয়ে উপরে উঠতে নিবে এমন সময় পুনরায় কলিংবেল বেজে উঠে। ইয়ানা দরজা খুলে দিলে সামনে ইউভি আর রায়ানকে দেখতে পাই।
ইয়ানা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” কেমন আছেন ভাইয়ারা? ”
ইউভি — এইতো আছি আলহামদুলিল্লাহ। অগ্নি বাড়িতে চলে এসেছে।
ইয়ানা — হ্যা এই মাত্র আসলো রুমেই আছে।
ইয়ানার কথামত ইউভি আর রায়ান উপরে চলে যায়। এরপর অগ্নির রুমে ডুকে একদম গিয়ে বিছানায় বসে পড়ে। অগ্নি ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিলো। সামনে ইউভি আর রায়ানকে দেখতে পেয়ে কপাল কুচকে বলে,,,,,
“” অনুমতি ছাড়া রুমে প্রবেশ করলি কেনো?
রায়ান হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” কিসের অনুমতি নিব যেখানে তর বাসর দেখার অনুমতি আছে।
অগ্নি একটা ফুঁস করে শ্বাস নেই। সবকয়টা লিমিট ছাড়া ড্রামাবাজ। অগ্নি কিছুটা ঘম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,
“” কিসের জন্য এসেছিস সেটা বলে বিদায় হ।
এর মধ্যে ইয়ানা হাতে লেবুর শরবত নিয়ে রুমে ডুকে ।
ইউভি শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে বলে,,,,,
” ইয়ানা ঘুরতে যাবে? ”
ইয়ানা — কোথায় ভাইয়া?
ইউভি — সেটা তোমার হাজবেন্ডকে জিজ্ঞাসা করো কথায় নিয়ে যাবে।
অগ্নি — আমি কখন বলেছি যে ওকে নিয়ে কোথাও যাব?
রায়ান অগ্নির উদ্দ্যেশে হতাশা কন্ঠে বলে,,,,,,,
” কিপটামি বাদ দে ভাই। তর এইসব অটাল সম্পত্তি দিয়ে কি করবি যদি বউয়ের সাথে কিপটামি করিস। বউকে নিয়ে সামান্য ঘুরতে যাবি এতে তর এত কিপটামি অগ্নি ছিহহহ।
অগ্নি রায়ানের উদ্দ্যেশ্যে কটমট চোখে বলে,,,,,,
” ভুলভাল কথা বললে এখানেই শুট করে মারব ইডিয়েট। আমার সহজ সরল বউটার ব্রেইন ওয়াশ করতে এসেছিস।
ইউভি — রায়ানের কথা ছাড় আমি তকে বলছি। কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আয় ইয়ানাকে নিয়ে। আমি, রায়ান আর আরিফ মিলে সব সামলে নিব।
অগ্নি — পারব না। বাহিরে গিয়ে আজাইরা রং – তামাসা করার মুডে আমি নেই।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা কপাল কুচকে বলে,,,,,,
” আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া আপনার কাছে আজাইরা রং তামাসা মনে হয়? সেই এমন হবেই তো।
ইয়ানার কথা শুনে অগ্নি রায়ান আর ইউভির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” দেখ আমার সহজ – সরল বউটার ব্রেইন কিভাবে ওয়াশ করেছিস। তরা খুব ভালো করেই জানিস এখন বাহিরে যাওয়া ঠিক না। চারদিকে শত্রুর আনাগোনা যেকোনো সময় অ্যটাক করতে পারে।
ইয়ানা — আপনার এত শত্রু কেনো? কই আগে তো কখনো শুনিনি।
অগ্নি — মানবজীবনে চলতে গেলে শত্রু থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কারোর শত্রুতা যুদ্ধের মত আবার কারোরটা নরম। আর ব্যবসায়ীক কাজে কিছু শত্রু তো থাকতেই পারে তাই না।
ইয়ানা অগ্নির কথায় নাক ছিটকিয়ে বলে,,,,,,
” ছিহহ আপনি এত ভিতু আগে তো জানতাম না। সাধারন কয়টা শত্রুর জন্য আপনি বাহিরে যেতে ভয় পান।
ইয়ানার কথা শেষ হতেই ইউভি আর রায়ান অবাক হয়ে ইয়ানার দিকে তাকায়। অগ্নি চৌধুরিকে কেউ ভিতু বলল লাইক সিরিয়াসলি। একেই বলে পুরুষ মানুষ পুরো দুনিয়ার সামনে বাঘ হলেও বউয়ের সামনে মিউ মিউ করা বিড়াল।
রায়ান আর ইউভিকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইয়ানা ফের প্রশ্ন করে,,,,,,,,,
” আমি কি ভুল কিছু বললাম ভাইয়া। উনি কি ভিতুর পরিচয় দেন নি।
ইউভি — একদম ঠিক বলেছো। ছিহহ অগ্নি তুই এত ভিতু।
ইয়ানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে কারোর শক্ত বাধনে আটকে পড়ে। অগ্নি ইয়ানাকে পাজা কোলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। ইয়ানা নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে ছটফট করে বলে,,,
” কি করছেন কি নামান বলছি? নির্লজ্জ লোক ভাইয়া তাদের সামনে কোলে তোলেছেন কেনো? আপনার লজ্জা না থাকতে পারে কিন্তু আমার তো আছে।
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে রুক্ষ মেজাজে বলে,,,,,,
‘ একদম চুপচাপ থাক নাহলে নিচে ফেলে দিয়ে মগজ বের করব ইডিয়েট।
ইয়ানা মন খারাপ করে বলে,,,,,
” সব সময় এত ধমকাধমকি করেন কেনো আপনি?
অগ্নি ইয়ানাকে ফন্ট সিটে বসিয়ে মিহি সুরে বলে,,,,,
” আদর করি না। ”
ইয়ানার চুপ হয়ে যাওয়ার জন্য এই কথাটাই যথেষ্ট ছিলো।
ইয়ানা বিরবির করে বলে,,,,,,
“” ছিহহ কি ঠোঁট কাটা লোক।
অগ্নি — তোমার ভাবনার চেয়ে ও বেশি।
ইয়ানা — আমরা কোথায় যাচ্ছি?
অগ্নি — সেটা গেলেই দেখতে পাবে। আমি ও দেখি তুমি কত ঘুরতে পারো।
ইয়ানা — কিন্তু আমি তো কোনো কাপড় আনিনি। ওইখানে গিয়ে পড়ব কি?
অগ্নি — আমার সামনে পড়ার দরকার নেই।
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,,,
“” কিহহ! কাপড় ছাড়া থাকব নাকি?
অগ্নি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,,,,,,
” থাকলেই বা কি ”
ইয়ানা নাক মুখ খিচে সিটে হেলান দিয়ে মনে মনে অগ্নিকে হাজারটা গালি দেই।
ইয়ানা আর অগ্নি চলে গিয়েছে প্রায় বিশ মিনিট হতে চলল। এখন ও ইউভি আর রায়ান তব্দা লেগে রুমে বসে আছে।
ইউভি রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” কি বুঝলি ভাই?
রায়ান সোজা হয়ে বলে,,,,,,
” শালা সব কিছুতে ফার্স্ট। আমরা এসে আর ও অনুনয় করছিলাম কিন্তু ও তো একদম বউকে কোলে করে নিয়ে চলে গেছে।
ইউভি — কোথায় গিয়েছে বলতো?
রায়ান — সেটা তো কাল ওই বলতে পারব। এখন ফোন দেওয়ার প্রয়োজন নেই। একটু আমিষ হতে পাঠিয়েছি।
এরপর রায়ান আর ইউভি কিছু প্রয়োজনীয় কথা বলে।
খোলা আকাশের নিচে নিস্তব্দ এই রাতে আপন গতিতে ছুটে চলছে অগ্নির ব্ল্যাক কালারের phantom গাড়িটি। ইয়ানা কাউচ থেকে পর্দা সরিয়ে এক দৃষ্টিতে বাহিরে তাকিয়ে আছে। রাতের আধারে বাহিরের ঠান্ডা বাতাস পুরো শরীরকে নাড়িয়ে তুলছে। মুখে বার বার লম্বা চুলগুলো আছড়ে পড়ছে। আর ইয়ানা বিরক্তি নিয়ে চুলগুলো কানের নিচে গুজে দেই। কিন্তু ইয়ানাকে এইভাবে বাহিরে তাকিয়ে থাকতে দেখে অগ্নি কিছুটা বিরক্তি হয়। মনে হচ্ছে ইয়ানা তার থেকে অনেক দুরে বসে আছে। অগ্নি এক হাত দিয়ে গাড়ির কাউচ লাগিয়ে দেয়। এরপর গাড়ির ভিতরে থাকা লেড লাইট জালিয়ে দেয়। অগ্নিকে কাউচ লাগাতে দেখে ইয়ানা ফের প্রশ্ন করে,,,,,,
“” কাউচ লাগিয়েছেন কেনো?
অগ্নি — কাছে এসে বসো তোমাকে অনুভব করতে পারছি না।
ইয়ানা অগ্নির কথাকে পাত্তা না দিয়ে ব্যাক সিট দেখার জন্য পিছানে ফিরে। কিন্তু তাকিয়ে দেখে কোনো ব্যাক সিট নেই।
ইয়ানা সামান্য অবাক সুরে বলে,,,,,,
“” আপনার গাড়ির ব্যাক সিট কোথায়?
অগ্নি গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে উত্তর দেই,,,, নেই। এসব গাড়ির ব্যাক সিট থাকে না।
ইয়ানা নাক ছিটকানো দিয়ে বলে,,,,,,
“” কম দামী গাড়ি নিয়ে এসেছেন কেনো? আপনার ওইসব গাড়ি ওই তো ভালো ঘুমানোর জন্য অন্তত ব্যাক সিট ছিলো।
ইয়ানার কথা শুনে হালকা হাসে তবে সেটা ইয়ানার চোখের আড়ালে। ইয়ানা সিটে হেলান দিতেই কারোর হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠে। দেখে তার মাথাটা অগ্নির উড়ুর উপর রেখেছে।
ইয়ানা কিছুটা আমতা আমতা করে বলে,,,,
“” আমি সিটেই ঠিক আছি। এইভাবে শুয়ে থাকলে আপনার গাড়ি চালাতে অসুবিধা হবে।
অগ্নি ইয়ানার মুখে আসা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বলে,,,,,,,
“” তুমি যদি আমার পাশে থাকো তাহলে গোটা এক যুদ্ধ আমি জয় করে আসতে পারব। সেখানে তোমার সামান্য মাথার ওজন কিছু যায় আসে না জান। গাড়িতে ব্যাক সিট না থাকলে ও ফন্ট সিট অনেক বড়। তুমি পা তুলে নিজের মত করে শুইয়ে পড়ো।
ইয়ানা অগ্নির কথামত উড়ুর উপরে মাথা রেখে কিছুক্ষনের মধ্যে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়। অগ্নি সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালানোতে মনযোগ দেই।
কিন্তু আদ ও কি গাড়ি চালানোর মধ্যে মনযোগ দিতে পারছে। ঘুমের ঘোরে ইয়ানা অগ্নিকে ঝাপটে ধরে। ফলে ইয়ানার গরম নিশ্বাস অগ্নির পেটের কাছে আছড়ে পড়ছে। দাতে দাত চেপে নিজের গন্তব্যের দিকে আগ্রসর হয়।
প্রায় অনেক্ষন জার্নি শেষে অগ্নির গাড়িটি এসে থামে একটা সমতল জায়গায়। সামনেই সমুদ্রের মত জলরাশি ঢেউ তুলছে। পূর্ব দিকে রয়েছে একটা বীচ। রাতের অন্ধকারে চারদিকে হাজার হাজার লাইটিং ফলে পুরো পরিবেশ আলোকিত হয়ে রয়েছে। অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখে সে এখন ও ঘুমে মগ্ন। অগ্নি গাড়ি থেকে নেমে ইয়ানাকে কোলে নিতে যাবে এমন সময় ইয়ানা হুট করে চোখ মেলে তাকায়। অগ্নিকে এত কাছে দেখে ইয়ানা সামান্য ভড়কে যায়। তারাতাড়ি করে নিজের গায়ে উড়না জড়িয়ে নেই।
ইয়ানার অবস্থা দেখে অগ্নি ঠোঁট চেপে হাসে। পুরো রাস্তায় উড়নার খবর ছিলো না আর এখন উড়না নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিয়েছে। ইয়ানা
গাড়ি থেকে নেমে চারপাশে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়। তারা লেক আন্টারিওতে আছে। মুভিতে কত দেখেছে এই জায়গা আর আজ সে এখানে চোখের সামনে দেখবে কল্পনাও করে নি। পিছনে সবুজ ঘাসে ঘেরা উচু উচু টিলা বাট সব জায়গা সমতল। পানির স্রোত আর কলধ্বনি চার পাশে মোঁ মোঁ করছে। রাতের এই নিস্তব্দ অন্ধকারে ও কত মানুষের চলাচল।ইয়ানাকে এত হাসিখুশি দেখে ইয়ানার কপাল কুচকে আসে। কেনো জানি ইয়ানার হাসি মুখটা তার সহ্য হচ্ছে না। কই তার সাথে থাকলে তো এত হাসিখুশি থাকে না। এই সামান্য বীচে এসে যতটা হাসিখুশি দেখাচ্ছে। অগ্নি বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস নেই। গাড়ির ভিতর থেকেপানি নিয়ে ঢক ঢক করে গিলে ফেলে।
অগ্নিকে এত অস্বাভাবিক দেখে দেখে ইয়ানা অধৈর্য হয়ে বলে,,,,,
” কি হয়েছে আপনার? শরীর খারাপ লাগছে? মনে হয় এতক্ষন গাড়ি চালানোর ফলে এমন লাগছে।চলুন রেস্ট নিবেন। কিন্তু রেস্ট কোথায় নিবেন?
অগ্নি — কিন্তু তুমি তো মাত্র আসলে চারদিক না দেখেই চলে যাবে?
ইয়ানা — প্রয়োজন নেই এখন দেখার। আপনি সুস্থ হলে অনেক দেখার সময় পাব এখন ওইত চলে যাচ্ছি না।
ইয়ানাকে এতটা অধৈর্য হতে দেখে অগ্নির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। এটাই তো সে চাই সবকিছুর উর্ধ্ব শুধু ওকে প্রাধান্য দিক। অগ্নি ইয়ানাকে আলতোভাবে পাজা কোলে নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। আকস্মিক এমন কান্ডে ইয়ানা ভড়কে গিয়ে বলে,,,,,,,
” কি করছেন কি নামান বলছি? বার বার আমার ইজ্জতের ফালুদা করে কোলে তোলে নেন কিসের জন্য? চারদিকে কত মানুষজন রয়েছে দেখেছেন।
অগ্নি ইয়ানার কথায় ভ্রু নাচিয়ে বলে,,, ,
” এইটা বাংলাদেশ নয় জান এইটা হচ্ছে কানাডা। ওরা জনসমাবেশেই সবকিছু করতে পারে সেখানে তোমার সামান্য কোলে উঠাতে কেউ তাকিয়ে থাকবে না।
ইয়ানা — সব কিছু করে মানে?
অগ্নি নিচের ঠোঁটে দাত দিয়ে চেপে ধরে বলে,,,,,,,,
” উমম সবকিছু মানে অনেককিছু। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তো অনেককিছুই হই সেটা নিশ্চয় তোমাকে ভেৃঙ্গে বুঝাতে হবে না।
ইয়ানা নাক মুখ খিচে বলে,,,,,,
“” নাউযুবিল্লাহ কিসব কথাবার্তা এইগুলো। মানুষের আবার লজ্জা সরম থাকে না কিভাবে?
ইয়ানার কান্ড দেখে অগ্নি মুচকি হাসি দেই। কিন্তু প্রত্যেকটা হাসিই ইয়ানার আড়ালে।
অগ্নি ইয়ানাকে নিয়ে একটা ছোটখাটো বিলাশবহুল হাউসবোর্ডের উপরে দাড় করায়। এরপর ইয়ানার হাত ধরে নিয়ে যায় ভিতরে। ইয়ানা চারদিকে তাকিয়ে দেখে চমৎকার সোফার সেটা, ওয়াল মাউন্টেড স্মার্ট টিভি এন্ড হুম থিয়েটারের সাউন্ড সিস্টেম। জানালায় সাদা আর পিন্ক কালারের পর্দার আস্তরন। বেড রুমে রয়েছে এক রাজকীয় বিছানা। লেড রিডিং লাইট আর ইন – রুম ক্লাইমেট কন্ট্রোল।
ইয়ানা চারপাশে তাকিয়ে দেখে অগ্নি সোফায় বসে তার দিকেই কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা হাসি দিয়ে অগ্নির কাছে গিয়ে বলে,,,,,,
” এইটা নৌকা নাকি কোনো রিসোর্ট। ভিতরে ডুকে মনেই হচ্ছে না কোনো নৌকায় আছি। চারপাশের দৃশ্য সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর একটা পরিবেশ।
অগ্নি — এত খুশি হবে জানলে আগেই কিনে ফেলতাম।
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,,,
” মানে? কার এইটা আপনি কিনেছেন নাকি?
অগ্নি — হুম।
ইয়ানা চোখ বড় বড় করে তাকায়। এরপর টাস্কি খাএয়া শুরে বলে,,,,,,
” আপনি হাউসবোর্ড দিয়ে কি করবেন? এইটা কিনতে গেলেন কেনো আবার?
অগ্নি কিছুটা ঘম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,
” নিজের বউয়ের সাথে সময় কাটাব সেটা কি অন্যের জিনিসে থেকে নাকি আজব। আমি অন্যের জিনিস ব্যবহার করি না যদি না সেখানে আমার অধিকার থাকে। বউ আমার জিনিস ও আমার সিম্পল।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা হতবম্ভ হয়ে যায়। এটা কি ধরনের কথা। একে পাগল বলে নাকি সাইকো। সত্যি কিছু বলার নেই পাগল লোক একটা।
ইয়ানা *- ঠিক আছে চলুন তাহলে খোলা আকাশের নিচে ঠান্ডা হাওয়া লাগিয়ে আসি।
অগ্নি — এই মাত্র ওইতো বাহির থেকে আসলে এখন আবার হাওয়া লাগানোর কি প্রয়োজন ।
ইয়ানা — এমন একটা রুমান্সকর জায়গায় করলার জুসের মত কথা বলছেন কেনো?
ইয়ানার কথায় অগ্নি ঠোঁট চেপে হাসে এরপর সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়। প্যান্টের পকেটে হাত গুজে দিয়ে ইয়ানার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। অগ্নিকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে দু পা পিছিয়ে যায়। এরপর নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,,,,,,,
” ওইখানে বসে ছিলেন সেটাই তো ভালো ছিলো কষ্ট করে উঠতে গেলেন কেনো?
অগ্নি — রুমান্সকর মোমেন্ট উপভোগ করার জন্য। আমার রুমান্সকর মোমেন্ট অন্যরকম জান তার জন্য তোমায় চিৎকার করতে হবে।
অগ্নির এমন নেশালো কন্ঠে ইয়ানা ভড়কে যায়। অগ্নি একদম ইয়ানার কাছে। ঠিক ততটা কাছে যতটা কাছে আসলে একজন আরেকজনের হৃদস্পন্দন অনুভব করা যায়। অগ্নি ইয়ানার দিকে এগিয়ে যাবে এমন সময় ইয়ানা ভোঁ দৌড়। হঠাৎ এমন হওয়াতে অগ্নির কপাল কুচকে আসে। ইয়ানার কাহিনী মাথায় আসতেই রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। ইয়ানার এড়িয়ে চলে ওর একদম পছন্দ নয়। ইয়ানার জায়াগায় অন্যকেউ থাকলে এতক্ষনে মেরে পুঁতে ফেলত। অগ্নি হাত মুঠোই করে বড় বড় শ্বাস নিয়ে বিরবির করে বলে,,,,,,,,
” কন্ট্রোল অগ্নি। ও অন্যকেউ নয় তর অনুভবের সেহিজাদী। তর রাগ ও সহ্য করতে পারবে না তাই ভুলে ও এই কাজ করিস না। যাস্ট নিজের বউকে অনুভব কর। যাস্ট ওকে অনুভব কর।
অগ্নি কিছুটা শান্ত হয়ে বোর্ডের ছাদে চলে যায়। গিয়ে দেখে ইয়ানা মাঝ জায়গায় চোখ মুখ খিচে দাঁড়িয়ে আছে। ইয়ানার এমন করার কারন মাথায় আসতেই একটা বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,
” কি হলো ম্যাডাম ওই খানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? দৌড়ঝাপ করবেন না?
অগ্নির কন্ঠ পেয়ে ইয়ানা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,,,,,,,
” প্লিজ মি, চৌধুরি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান। পুরোটা কাউচ কেমন ভয় করছে। যেকোনো সময় ভেঙ্গে পরে যাব।
অগ্নি – কাছে আসতে বলছো?
ইয়ানা — হুম।
অগ্নি ধীরে পায়ে ইয়ানার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। অগ্নি কাছে যেতেই ইয়ানা অগ্নিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ভয়ে এখন ও তার শরীর কাঁপছে।
অগ্নি ইয়ানার চিবুক ধরে মাথাটা তুলে চোখ চোখ রেখে বলে,,,,,,
” কেনো এত ভয় পাচ্ছ আছি তো আমি তোমার কাছে। যাস্ট রিলাক্স ইয়ানা। বিধাতা ছাড়া এমন কারোর শক্তি নেই আমার উপস্থিতিতে তোমাকে আঘাত করার।
আর এই যে কাউচগুলো দেখছো এইগুলো উপর থেকে কাউচ মনে হলে ও ভিতরে এলুমিনিয়াম আর শক্ত স্টিল দিয়ে সুগঠিত। তাই এগুলোভেঙ্গে পড়ার কোনো সুযোগ নেই।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানার ভয়টা কমে যায়। অগ্নির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আলাদা হয়ে দাঁড়ায়। ইয়ানার কান্ডে অগ্নি ফের প্রশ্ন করে,,,,,,,
” চলে গেলে যে তোমার না ভয় করছিলো?
ইয়ানা — যখন ভেঙ্গে পড়বে না তখন ভয় কিসের।
ইয়ানার কথায় অগ্নি আবার ও ঠোঁট কামড়ে হাসে।
ইয়ানা এতক্ষন ভয়ের চোটে চারপাশে লক্ষ ওই করে নি। আশেপাশে ভিবিন্ন রঙ্গের লাইটিং সাথে পর্দা দিয়ে ঘেরা। পর্দাগুলো বাতাসে দুল খাচ্ছে বার বার। সামনেই রয়েছে ইনডোর ডাইনিং টেবিল যেখানে মোমবাতি দিয়ে ঘেরা ভিবিন্ন খাবারের সমাহার। টেবিলের পাশে রয়েছে একটা গিটার। ইয়ানা গিয়ে গিটারটা হাতে নিয়ে অগ্নির দিকে এগিয়ে যায়। এরপর আবদার সুরে বলে,,,,,,
“”একটা গান গিয়ে শুনান মি, অগ্নি চৌধুরি।”
অগ্নি ইয়ানার এমন আবদারে ঘম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,,,
” অসম্ভব ! আমি এইসব গান গাই না।
ইয়ানা জেদ ধরে বলে,,,,,,
” কেনো আমার জন্য একটা গান গাইতে পারবেন না?
ইয়ানা — আমার জীবনে রং নেই ইয়ানা তাই রঙ্গিন কিছু আলিঙ্গন করতে বলো না। আমি গান গাওয়ার মত হাস্যকর কিছু হতেই পারে না।
ইয়ানা কিছুটা অবাক হয়ে বলে,,,,,,
” অর্থৎ? ঠিক বুঝলাম মি, চৌধুরি।
অগ্নি — নাথিং।
অগ্নির এমন খাপছাড়া ভাব দেখে ইয়ানার মাথায় জেদ চেপে ধরে। যে করেই হোক আজ সে অগ্নির মুখ দিয়ে গান গাইয়েই ছাড়বে। ইয়ানা মনে মনে একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে অগ্নির কাছে গিয়ে মিহি সুরে বলে,,,,,,,
” আপনি জানে না স্ত্রী যদি কোনো আবদার করে তাহলে পুরন করতে হয়। একটা গান গেয়ে শুনান না প্লিজ।
অগ্নি ইয়ানার কান্ডে কিছুটা বিরক্তি হয়ে বলে,,,,,,,
” কি হচ্ছেটা কি ইয়ানা। এমন কিছু আবদার কেনো করো যা আমি পুরন করতে ইচ্ছুক নয়।
অগ্নির ধমকে ইয়ানা চুপ হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে মুখটা কালো অন্ধকারে ঢেকে যায়। হৃদয়হীন লোক ঘুড়তে নিয়ে এসেছে এরপর ও একটার পর একটা ধমক দিয়েই চলছে। এত সুন্দর একটা মোমেন্ট নষ্ট করে দিলো। কেনো সামান্য একটা গান বললে কি এমন হত। থাকব না আমি ওনার সাথে। কাল সকালেই বাড়ি চলে যাব।
ইয়ানাকে এভাবে মুখ কালো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অগ্নি একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে গিটারটা হাতে নেই। এরপর ইয়ানার হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলে,,,,,,,
” বসো এখানে। পুরন করছি তোমার জেদ। তবুও আধারের মত মুখ কালো করে রেখো না দেখতে বিশ্রি লাগে।
অগ্নির কথায় ইয়ানা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” ধন্যবাদ। রোমান্টিক মোমেন্টে একটা আবেগময় গান বলেন।
অগ্নি একটা চেয়ারে বসে গিটারের সুর তুলে। জানি না এই মেয়ে আর কত অনাকাঙ্খিত কাজ করাবে যা কোনোদিন করব বলে কল্পনাও করি নি।
অগ্নি গিটারের সুর তুলতে থাকে। অগ্নি একদম ইয়ানার ইয়ানার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,,,,,,,,
~ প্রতি নিশ্বাসে নাম তোমার লিখা আমার এই মনের ভিতরে।
~ পুরো দুনিয়া জালিয়ে দিব করব ছারখার তোমায় না পেলে।
~ পাগল হয়েছি আমি অনেক আগেই, হেরে গেছি আজ আমার নিজের কাছেই।
~ কিছু বুঝে না এই দুই চোখ তুমি ছাড়া, সব হারাতে ও রাজি পেতে তোমাকে।
~ঝড় হয়ে দিকে সব ধ্বংস করে,, ক্ষত দেখাব কাকে,,
~ পারবে না থামাতে কেউ আমাকে সব শেষ করব নিজের হাতেই।
~ প্রতি নিশ্বাসে লিখা নাম তোমার এই মনের ভিতরে।
~ পুরো দুনিয়া জালিয়ে দিব করব ছারখার তোমায় না পেলে…..
ইয়ানা এক দৃষ্টিতে অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছে। এত গম্ভীর আর সুন্দর কন্ঠ থেকে ও লোকটা গান বলতে চাইছিলো না।
অগ্নি কিছুটা থেমে ইয়ানার চোখে চোখ রেখে পুনরায় বলে,,,,,
~ তোমাকে না পেলে যে পাবে না কেউ জলবে আগুন বারেবার।
~ ঝড় হয়ে দিলে সব ধ্বংস করে ক্ষত দেখাব কাকে।
অগ্নি থেমে যায়। গিটারটা টেবিলের উপর রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে। কোনোদিন কল্পনা ও করে নি একান্ত এত সুন্দর একটা সময় পার করবে।
ইয়ানা অগ্নির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” এইটা কি গান ছিলো নাকি হুমকি? একটা আবেগপূর্ন গান বললে কি এমন হত।
অগ্নি গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৯
” এইসব আবেগী গান আমি বলতে পারি। ভিতরে চলো অনেক রাত হয়েছে। যদি থাকতে চাও তাহলে থাকতে পারো। আমি যাচ্ছি।
এই বলে অগ্নি এইখান থেকে প্রস্থান করে। নিজেকে কেমন অগুছালো লাগছে। ইয়ানা অগ্নির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। এরপর……..