প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ৩৯

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ৩৯
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

তখন রাত! রাহা মেয়েকে বুকে নিয়ে ঘুমোচ্ছে বেঘোরে। ঘুমানোর আগেই রাহা রোহানের সাথে অল্প কি কথা নিয়ে যেন কথা কাঁটাকাটি করে মেয়েকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। সতর্কতা দিয়েছে তাদের মা মেয়ের দিকে যেন একটু না চাপে সে। নির্দিষ্টি জায়গার মধ্যেই যেন ঘুমিয়ে পড়ে। অথচ তার ঘুম এল না। রাহাকে জড়িয়ে না ধরে আজকাল তার খুব একটা ঘুম আসেও না। রোহান হতাশ হয়ে এক দৃষ্টিতে তাকায় মা মেয়ের দিকে। অবিকল এক যেন দুইজনই। দুইজনের ঘুম যাওয়ার দৃশ্যটাও এক। মায়াবী মুখটা ফুলোফুলো হয়ে পুতুলের ন্যায় লাগে। রোহান তাকায়।যতোটা সময় সে জেগে আছে ততক্ষনই তাকিয়ে থাকে। কি এক মুগ্ধতা যেন। রোহান মুচকি হাসল। মুখ নামিয়ে সর্বপ্রথম তার আর রাহার মাঝখানে থাকা তাদের মিষ্টি মেয়েটাকে চুমু দিল। কপালে, গালে দুটো চুমু এঁকে ফিসফিসিয়ে শুধায়,

” আম্মু? তুমি আমার লাইফে সত্যিই একটা চমৎকার।তুমি জানো? আমি এখনোও একদম নতুন আনন্দময় একটা অনুভূতি টের পাই নিজের হৃদয়ে যখন ভাবি আমার একটা মেয়ে আছে। একদম তোমার আম্মুর মতোই হুবুহু একটা মেয়ে!”
রোহান কথাগুলো বলেই ফের চুমু দিল মেয়ের ফুলো গালে। এত আদুরে কেন তার মেয়েটা? এত মায়া! রোহান যখন চুমু দিল তখনই নড়চড় করে উঠল তার মেয়েটা। রোহান হাসে। এক ফাঁকে রাহার থেকে নিজের মেয়েকে টেনে নিজের বুকে রাখে।অতঃপর হেসে শুধায়,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ আব্বুর কাছেই ঘুমাও। আব্বু বরং তোমার আম্মুকেই দেখি। ”
তার ঠিক কিছুটা সময় পরই চোখ ফিটফিট করে তাকাল রাহা। ঘুমের মধ্যে হাতড়ে যখন নিজের মেয়েকে পেল না তখনই মস্তিষ্কের আগাম বার্তায় ঘুম ভাঙ্গতে বাধ্য তার। রাহা ফ্যালফ্যাল করে তাকাতেই যখন নিজের আদরের মেয়েকে বাবার বুকে ঘুমোতে দেখল এবং মেয়ের বাপকে নিজের দিকে ফিরে তাকিয়ে থাকতে দেখল তখন ভ্রু কুঁচকাল। জিজ্ঞেস করল,
“ ওকে বিছানা থেকে নিয়ে এভাবে আপনার বুকে রাখার কি কারণ? আর ওভাবে চেয়ে চেয়ে কি দেখছিলেন? ”
রোহান হাসল। উত্তরে হেসে বলল,
“ বিয়ের এতবছরে যে মেয়েটাকে দেখি তাকেই দেখছিলাম।একদম আমার মেয়েটার মতোই মিষ্টি।”
রাহা হাসবে কিনা বুঝল না। তবে হাত বাড়িয়ে শুধাল,

“ আমার কাছে দিন ওকে। ”
“ থাকুক না। ”
“ ওভাবে ঘুমিয়ে শরীর ব্যাথা হবে মেয়েটার৷ ”
রোহান ছোটশ্বাস ফেলে মেয়েকে আগের ন্যায় শুঁইয়ে দিল। শান্তস্বরে বলল,
“ ঠিকাছে, ঘুমাক। ”
রাহা ফের মেয়েকে জড়িয়ে চোখ বুঝল। রোহানের উদ্দেশ্যে বলল,
“ ঘুমিয়ে পড়ুন। এদ রাত জাগা তো ভালো অভ্যাস নয়। ঘুমান। ”

রোহান তাকায়। পরপরই আলো নিভাল। তার ঠিক দুই সেকেন্ড পরই এপাশ থেকে অবস্থান পাল্টে উঠে গেল। এর ঠিক দুই সেকেন্ডই পরই নিঃশব্দে হেঁটে গিয়ে অবস্থান নিল রাহার পেছনে। অতঃপর রাহার পেট আঁকড়ে জড়িয়ে ধরে মুখ ঘেষল রাহার কাঁধে। আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে সেভাবেই মুখ ঘেষে বলে উঠল,
“ আমার আসলে ঘুম আসছে না তুমি ছাড়া নবনী। এতোটা অভ্যেস খারাপ করেছো আমার, আমি তোমাকে না জড়িয়ে ঘুমোতেও পারছি না। কি যন্ত্রনা! ”
রাহা নড়চড় করে না।উত্তর ও করে না। তবে প্রিয় পুরুষের এমন বাক্যে ঠোঁট চওড়া হয় তার। নিঃশব্দে হাসে। কোথাও যেন সুখ সুখ অনুভূতিরা এসে বলে যায় সে সত্যিই সুখী। সত্যিই!

খু্ব অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই গত দুদিন যাবৎ সিয়ার কাছে কয়েকটা চিঠি আসছে। চিঠিগুলোর মাধ্যম কি তাও সিয়ার অজানা। তবে সকাল সকাল যখন বের হয়? ঠিক তখনই দরজার সামনে চিঠি গুলো মিলে। এই নিয়ে তিনটে হলো। সিয়া ভ্রু কুঁচকায়। আজকের চিঠিটা মেলে ধরতেই ভেসে উঠে,

” সম্ভবত তুমি আমায় ভুলে বসেছো সেই কবেই। অথচ আমার মস্তিষ্কে খুব ক্ষুদ্র জায়গা নিয়েও তুমি কি প্রগাঢ় হয়ে থেকে গেলর সিয়া। আমি সত্যিই কখনো তোমাতে ডুবতে চাইনি, তবুও যখন আমি বুঝতে পারলাম তুমি কখনোই আর আমার হবে না তখনই আমার যন্ত্রনার সূচনা ঘটল। আমি দিনরাত এত তীব্র বেদনায় মূর্ছা যাওয়ার মতো ডু্বে থাকতাম।নেহাৎই তোমার সামনে এসে দাঁড়ানোর আমার সাহস ছিল না, নয়তো তোমাকে ফিরতি ভালোবাসা দেওয়ার কমতি বোধহয় আমার হৃদয় ও রাখে নি। ঠিক যতটুকু ভালোবাসা তুমি আমায় দিলে? আমিও ততখানি ভালোবাসা নিরবে নিভৃতে সিয়া নামক রমণীটির নামে লিখে দিলাম। অথচ ততদিনে জানতাম রমণীটি অন্য কারো নিজস্ব নারী। সাহস হলো না তোমার সামনে দাঁড়ানোর। কি করেই বা দাঁড়াতাম? যেখানে নিজেরই ঠাঁই নেই, সেখানে কি করে তোমায় আগলে নিতাম বলো? তোমার মতো রাজকন্যাকে তখনকার আমি মোটেই আগলে নিতে পারতাম না। তবুও জানতে ইচ্ছে হয়, আমায় একটিবার তোমায় আগলানোর সুযোগ দিবে? আর একটিবার আমায় তোমার দুর্বলতা দেখাবে? আর একটিবার আমার প্রতি অনুভূতব পোষণ করবে লক্ষীটি?

ইতি,
বরাবরের মতো সম্বোধনটা আজও ঠিক মাথায় আসছে না
সিয়া হতবিহ্বল দৃষ্টিতর চেয়ে থাকে। কে লিখল এই চিঠি? কেই বা লিখে? বুঝে উঠে না। কৌতুহলটাকে চেপে রেখে চিঠিটা ব্যাগে পুরে যখন বের হবে ঠিক তখনই সেখানে এল সুহা। সুহার চোখেমুখে খুশির আভাস দেখে সিয়া ও হাসে৷ কাঁধে ব্যাগ তুলতে তুলতে বলে,
“ আমাদের স্নিগ্ধর ভাইবোন আসা ব্যাতীত অন্য কোন শুভ খবর ও কি আছে আপু? এত খুশি খুশি দেখাচ্ছে তোমায়? কিন্তু কি কারণে?”
সুহাও মিষ্টি করে হাসল। সিয়াকে জড়িয়ে ধরে আলতো করে বলল,
“ আজ না গেলে কি হয়? ”
সিয়া হেসে শুধাল,

“ ছুটি একদিন নিয়ে নিয়েছি তো৷ কিন্তু কেন? আজ কি বিশেষ কিছু আপু?কিন্তু কি?”
সুহা হাসল মিষ্টি করে। উত্তরে বলল,
“ আজ বিশেষ কিছু, তবে বিশেষ কি তা সিক্রেট। ”
সিয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ সিক্রেট কেন? ”
“সারপ্রাইজ। ”
সিয়া ভাবল। ওর জম্মদিন কি? কিন্তু তেমন কিছু তো নেই আজ। বলল,
“ আজকে তো কিছু নেই আপু। ”
“ নেই তো কি হয়েছে, সারপ্রাইজ থাকতে পারে না? ”
সিয়া এই পর্যায়ে হাসল। বলল,
“ অবশ্যই পারে। আমি অপেক্ষায় থাকলাম সেই সারপ্রাইজের। ”
“ জলদি ফিরো। ”
যেতে যেতে সিয়া বলল,
“ অবশ্যই। ”

তখন বিকাল।আশপাশে সুন্দর আবহাওয়া। বসার ঘরে সাদ সহ সাদের পরিবারের লোকজন তখনও অপেক্ষা করছিল সিয়ার আসার জন্য। উদ্দেশ্য সিয়া পর্যন্ত বিয়ের প্রস্তাব রাখা। সুহা, স্বচ্ছ, স্বচ্ছর পরিবারের সকলেই জানে সিয়া কার জন্য এতগুলো দিন অপেক্ষা করেছে। কার জন্য সব বিয়ে ভেঙ্গেছে। কত করে তার পরিবার বুঝিয়েছিল এই ছেলেটাকে ভুলে যেতে অথচ সিয়া নিজের সিদ্ধান্তেই অটুট ছিল৷ আজ যখন সে ছেলেটা নিজের বিয়ের প্রস্তাব রেখেছে তখন তার পরিবারের সবাই না রাজি হয়ে কি করবে?

মেয়ের একমাত্র ভালোবাসা!সিয়া মুখে না বললেও এই কারণটা জেনেছিল বহু আগেই তারা। স্বচ্ছকেও আজ খুশি দেখাল। সুহা, স্বচ্ছ সকলেই উপস্থিত।স্বচ্ছ বার কয়েক কল করে সিয়াকে জানালও তাড়াতাড়ি ফিরতে। অতঃপর নিজেই আনতে যাবে কিনা তাও জিজ্ঞেস করল। কিন্তু সিয়া নিষেধ করাতে আর গেল না। সাদ শুধু ঘড়িতে সময় দেখছিল। কোন এক অজানা কারণেই তার বুক ঢিপঢিপ করছে। সিয়া কি আজ রাজি হবে?

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ৩৮

নাকি নাকোচ করবে বিয়ের প্রস্তাবটা? আচ্ছা, সিয়া কি এখনো তার প্রতি অনুভূতি রেখেছে? নাকি ভুলে বসেছে এই পুরুষটিকে। এই এত এতসব প্রশ্ন যখন মাথায় খেলা করছিল ঠিক তখনই সিয়ার নাম্বারে স্বচ্ছ কল দিল আবারও। অথচ এবারে সিয়া কল তুলল না। তুলল অপরিচিত এক ব্যাক্তি। আর কল তুলেই জলদি জানাল,
“ আপনি মহিলাটির কে হন? মহিলাটার খুবই জঘন্যভাবে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে….”

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ৪০