চেকমেট পর্ব ৪৫
সারিকা হোসাইন
বিশাল কাবার্ডের পাল্লা খুলে নির্বোধ মানুষের ন্যয় দাঁড়িয়ে আছে রূপকথা।কাবার্ড ভর্তি আধুনিক রুচিশীল পোশাক,জুতা,ব্যাগ,সাজ সজ্জার সরঞ্জাম।একটার চেয়ে আরেকটা চোখ ধাঁধানো।জিনিস গুলো সারফরাজ কিনেনি।কিনেছে অন্যজন।কিন্তু যে কিনেছে তার রুচির প্রশংসা করলেও কম পরে যাবে।আপাতত কে কিনেছে না কিনেছে সেসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে এনগেজমেন্ট পার্টিতে কি পরে যাবে সেটা নিয়ে ফোকাস করলো রূপকথা।আরো মিনিট বিশেক দাঁড়িয়ে থেকেও একটা ড্রেস সিলেক্ট করতে পারলো না সে।যদিও এতে রূপকথার দোষ থোরাই আছে?মেয়ে মানুষের বৈশিষ্ট্য ই তো এই।
রূপকথা কিছুক্ষন কাচুমাচু করে মাথা চুলকালো।আঙ্গুল এর নখ ও কাটলো দাঁত দিয়ে।কিন্তু মস্তিষ্ক শিউরিটি দিতে পারলো না নির্দিষ্ট পোশাকে।
সারফরাজ লম্বা শাওয়ার নিয়ে কোমরে একটা সাদা বড় টাওয়েল পেঁচিয়ে ছোট টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে রূপকথার কক্ষের সামনে এসে দাড়ালো।এরপর দরজার পাল্লা সামান্য ফাক করে দেখলো রূপকথা আহাম্মক এর ন্যয় স্থির দাঁড়িয়ে জামা গুনছে।সারফরাজ কপাল কুঁচকে মুখে বিরক্তিকর চ সূচক শব্দ উচ্চারণ করে এগিয়ে এলো রূপকথার পিছনে।এরপর ভারী গলায় বললো
‘মেয়ে মানুষের সমস্যাই এটা।এদের কি থেকে কি ভালো লাগে তারা নিজেরাই জানে না।তোমাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।দোষ তোমার প্রজাতির।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
সারফরাজ এই আকস্মিক গলায় হকচকিয়ে উঠলো রূপকথা।সারফরাজ এর করা অপমানটা বেশ লাগলো তার।প্রচন্ড রাগ উঠে গেলো সারফরাজ এর উপর তার।রূপকথার প্রথমে মনে হয়েছিলো মানুষটা হাজব্যান্ড ম্যাটেরিয়্যালস।কিন্তু দিনে দিনে সেই ভুল ধারনা পাল্টেছে।আস্ত এক শয়তান ম্যাটেরিয়াল।
রূপকথা চোখ গরম করে দাঁত চেপে সারফরাজ এর সামনে ঘুরে ঝাঁঝালো গলায় শুধালো
“তুমি কোথাকার সভ্য প্রজাতি?সেই তো টাওয়েল পরে নাভি দুদু বের করে আধা ল্যাঙটা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ।
সারফরাজ পাত্তা দিলো না রূপকথার মেজাজে।সে একটা ল্যাভেন্ডার রঙের পার্টি গাউন রূপকথার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠলো
“এটা পরে নাও।দেখতে ভালো লাগবে।সবার চাইতে আলাদা লাগবে।যদি লাল পরো তাইলে বউ বউ লাগবে।তখন দেখা গেলো পার্টি সেন্টার বাদ দিয়ে হানিমুনে চলে গেলাম।সাদা পড়লেও বিপদ।আসলে বিপদ সব দিকেই।মিঙ্গেল ব্যাচেলর দের আপদ বিপদের শেষ নেই।ওসব অন্য আরেকদিন বুঝিয়ে বলবো।আপাতত রেডি হও।সময় কম।নয়তো তোমাকে ফেলেই চলে যাবো আমরা সবাই।
রূপকথা কপাল কুঁচকে মুখ ভার করে ফট করে উত্তর করলো
“তাহলে চলেই জাও।আমি যাবো না তোমার মতো অসভ্য লোকের সাথে।
সারফরাজ বাঁকা হাসলো।এরপর হাস্কি গলায় বললো
“বড় বড় অজগর সন্ধ্যা নামলেই এই বাড়ির চারপাশে ঘুরে বেড়ায় ম্যাডাম।কি ভয়ানক তাদের নিঃশ্বাসের শব্দ।যদি তাদের ডিনার হতে চাও তবে যেও না।বসে বসে চুষো।ওই আঙ্গুল আর কি।
বলেই চোখ টিপে চলে গেলো সারফরাজ।সারফরাজ এর যাবার পানে তাকিয়ে মুখ বাঁকালো রূপকথা।এরপর ধাম করে দরজা আটকে দিলো।সারফরাজ এর পছন্দ করা পোশাক ইচ্ছে করেই গায়ে তুললো না রূপকথা।সে একটা অফ সোল্ডার সাদা গাউন তুলে নিলো।এরপর সেটা পড়লো।আয়নায় নিজেকে পরখ করলো।বেশ লাগছে তাকে।সিন্ড্রেলার মতো একদম।ড্রেসের সাথে ম্যচ করে ছোট একটা হ্যান্ড ব্যাগ নিলো।এরপর আয়নার সামনে বসে সাজতে আরম্ভ করলো।নিখুঁত ভাবে খুব অল্প সাজলো রূপকথা।ঠোঁটে মেরুন লিপস্টিক, চোখে আইলাইনার অল্প ব্লাশন ব্যস।এরপর অর্নামেন্ট সিলেক্ট করলো।পার্ল এর চকার আর দুল।হাতে দিলো চিকন ব্রেসলেট।মাথায় স্টোনের কাটা গুঁজে অফ হোয়াইট উঁচু হিল পরে হেলে দুলে বেরিয়ে এলো রূপকথা।রূপকথা সিঁড়ি ধরে ড্রয়িং রুমে নামলো।কিন্তু ড্রয়িং রুম শুনশান নীরব।কেউ নেই।সামান্য ভীত হলো রূপকথা।
“তবে কি সারফরাজ আমায় ফেলে সত্যি সত্যি চলে গেলো?
দেয়ালে থাকা ঘড়িতে নজর বুলালো রূপকথা।সন্ধে ছ’টা বাজতে আরো মিনিট পাঁচেক দেরি।দরজার পানে অসহায় নজর পাতলো।সেটা বন্ধ।বাইরে থেকে নাকি ভেতর থেকে তা বোঝা যাচ্ছে না।লুইস ইয়ং কেউ নেই।এবার মন ভার হলো রূপকথা।সে মেঝের টাইলসে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।এমন সময় জুতার খট খট শব্দে উপরে নজর মেললো রূপকথা।সিঁড়ি ধরে আভিজাত্য চলনে নামছে সারফরাজ গলার নেক টাই ঠিক করতে করতে।রূপকথা খেয়াল করলো মাথার চুলে নতুন হেয়ার কাট দিয়েছে সারফরাজ।ফর্সা মুখটা আরো বেশি চকচক করছে আজ।তীক্ষ্ণ খাড়া নাকের ডগা গ্লেস ছড়াচ্ছে।কালচে লাল ঠোঁট আর শক্ত চোয়াল যে কাউকে ঘায়েল করতে ওস্তাদ।আর ওই আইস ব্লু চোখ?গায়ে কালো স্যুট আর সাদা শার্ট জড়িয়েছে সারফরাজ।বরাবরই এমন পোশাক পরে।ইঠাত দুই একটা কালার তাকে পড়তে দেখেছে রূপকথা।প্রতিদিন একই রংগের পোশাক পড়লেও একেকদিন একেক সৌন্দর্য ধরা দেয় এই পুরুষের।রূপকথার মনে হয় কালো রঙের ভেতরেও মনে হয় হাজারটা চোখ ধাঁধানো রঙ রয়েছে।নয়তো একই রঙে একটা পুরুষ প্রতিদিন প্রতিবার কি করে এতো সুদর্শন হয়?
সারফরাজ এর পায়ের কদম গুনলো রূপকথা।প্রত্যেকটি পায়ের গতি তাল মিলিয়ে চলছে।দীর্ঘদিন বাদে সারফরাজ কে ক্লীন শেভে দেখে চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেলো রূপকথা।সারফরাজ কে দেখতে সত্যি সত্যিই প্রিন্স দের মতো লাগছে।তাকে মোটেও দেশি কোনো মানুষ মনে হচ্ছে না।মনে হচ্ছে বিদেশী কোনো সিনেমার নায়ক।নিজের বেহায়া নজর হটাতে চাইলো রূপকথা।কিন্তু পারলো না।সারফরাজ ততক্ষনে রূপকথার একদম সামনে চলে এসেছে।সারফরাজ এর গায়ের পুরুষালি পারফিউম রূপকথার নাসা রন্ধ্রে ভুরভুর করে ঢোকে সুড়সুড়ি দিলো।মাথা উঁচু করে সারফরাজ এর নীল চোখের পানে ঠাঁয় তাকিয়ে রইলো রূপকথা।সারফরাজ নিজের হাত উঁচু করে রূপকথার চোখ ঢেকে দিলো।এরপর নাকে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললো
“নজর লেগে যাচ্ছে জান।এভাবে দেখো না।বিয়ের আগেই সব দেখে ফেললে পরে আর ইন্টারেস্ট কাজ করবে না।
সারফরাজ এর ফিসফিসানি তে রূপকথার হুশ এলো।নিজেকে ধাতস্থ করে চোখ নামিয়ে নিলো।রূপকথার ফাঁকা কাঁধে হাত রাখলো সারফরাজ।এরপর বললো
“বলেছিলাম ল্যাভেন্ডার পড়তে।
রূপকথা ইতস্তত করে বললো
“এটা ভালো লেগেছে আমার।
অল্প কুটকুট করে হাসলো সারফরাজ।এরপর বললো
“এখনই মতের অমিল?
রূপকথা চুপচাপ রইলো।সারফরাজ রূপকথার কাঁধে নাক ঘষলো।এরপর কানের কাছে মুখ এনে বললো
“তোমার এই আগুন ঝরা সৌন্দর্যে উন্মাদ হয়ে বিশাল বড় বড় ভুল করতে ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে।কি করবো বলোতো?ভুল গুলো করলে কি সাজা বেশি হবে?নাকি নিয়মের লঙ্ঘন হবে?
সারফরাজ এর তপ্ত শ্বাস রূপকথার গাল আর কান পুড়িয়ে দিলো।লজ্জায় আড়ষ্ট হলো খানিক সে।সারফরাজ এর পেটের কাছের সুট খামচে ধরে মাথা নিচু করে রূপকথা বললো
“চ চ চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
সারফরাজ রূপকথার সম্মোহনী রূপ থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না।তার সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।অস্থির লাগছে।হাঁসফাঁস করছে বুক।দম আটকে আসছে।শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার হচ্ছে মুহূর্তেই।শরীরে জ্বলছে হুতাশন।সারফরাজ নিজেকে সামলানোর চূড়ান্ত চেষ্টা করলো।দুই হাত দিয়ে মাথায় চাপড় দিলো।এরপর হনহন করে রূপকথাকে ফেলেই বেরিয়ে গেলো।পেছন পেছন গুটি গুটি পায়ে গাউন সামলে হাটতে নিলো রূপকথা।কিন্তু ছড়ানো বিশাল ঘের যুক্ত গাউন সামলাতে হিমশিম খেলো।সারফরাজ খেয়াল করলো তা।সে আবার পেছন ফিরে রূপকথাকে হ্যাচকা টানে কোলে তুলে নিলো।এরপর আরেক হাতে রূপকথার ব্যাগ নিয়ে ছুটলো গাড়ির নিকট।
ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশ আজ যেন একটু বেশিই ঝকঝকে।
সিয়েরা ক্লিফের গা ঘেঁষে প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে কাঁচের রাজপ্রাসাদ তথা মিস্টার নোলানের ব্যক্তিগত ভিলা।আজ সন্ধ্যায় এক অন্য রকম আলো জ্বলে উঠেছে এই ভিলায়। বাতাসে মোহনীয় সুগন্ধি আর সাদা অর্কিডের সুবাস।সেই সাথে দূরের সমুদ্রের ঢেউ।মিস্টার নোলানের গা ছমছমে বাড়িটি আজ মানুষের কলকাকলিতে মুখর।আজ এখানে নেই কারো চিৎকার, কারো আর্তনাদ নেই কোনো বন্দুকের ভয়ানক শব্দ।আজ চারপাশে শুধু হাসি আর আনন্দ।কারন আজ মিস্টার নোলানের একমাত্র কন্যা ন্যান্সির এনগেজমেন্ট।
এটা কোনো সাধারণ এনগেজমেন্ট পার্টি নয়।
এটা যেন বিশাল এক আয়োজন।
পুরো বাড়িটি নিখুঁতভাবে সাজানো হয়েছে তাজা ফুল আর বাহারী আলোয়।
এক পলকে দেখলে মনে হবে প্রত্যেকটা আলো, প্রতিটা পদক্ষেপ, প্রতিটা হাসিও যেন আজ ঠিক জায়গায় বসানো।
ইতোমধ্যে অতিথিরা আসতে শুরু করেছে একের পর এক।কেউ হেলিকপ্টারে, কেউ দামি দামি গাড়িতে , কেউ বা স্রেফ হেঁটে।মিস্টার নোলান আর তার সহধর্মিণী সবাইকে হাসি মুখে বরণ করে নিচ্ছে।
নোলানের কন্যা ন্যান্সি হলুদাভ সোনালি গাউনে নিজেকে সাজিয়েছে আজ। ন্যান্সির সৌন্দর্যে মনে হচ্ছে আকাশের ফকফকে হলুদ চাঁদটা আজ মাটিতে নেমে এসেছে।বরটাও বেশ মার্জিত আকর্ষণীয়। তাদের নিয়ে আলোচনা আরম্ভ হলো অতিথি মহলে।ক্যামেরা ম্যান আজ খুব ব্যস্ত।নিজের জীবন হাতে নিয়ে একেকটা ক্যাপচার করছে সে।কারন সে কোনো সাধারণ মানুষের বাড়িতে নয় স্বয়ং জমের বাড়িতে এসেছে ছবি তুলতে ।
চারপাশে সবকিছু নিখুঁত সুন্দর সাবলীল।ড্যাভিন ইতোমধ্যে নোলান কে সারফরাজ এর বাণী পৌঁছে দিয়েছে।সারফরাজ এর শুভাকাংখী আর কাছের মানুষ জন অপেক্ষা করছে সেই খবর মোতাবেক।
“আজকের অনুষ্ঠানে একজন রানী উপস্থিত থাকবে।
সেই রানীকে দেখার উৎকণ্ঠা সকলের মাঝে।এমন সময় সারফরাজ এর দামি বিলাসবহুল গাড়িটি থামলো নোলানের বাড়ির গেটের সামনে।সারফরাজ গাড়ি থেকে নামার আগেই কেউ একজন মিস্টার নোলান কে খবর পাঠালো।নোলান আর তার দলবল দৌড়ে গেলো বাড়ির বাইরে।নোলান তার লোক কে চোখের ইশারা করতেই দৌড়ে কোথাও চলে গেলো তারা।ফিরলো তৎক্ষণাৎ।হাতে লাল গালিচা নিয়ে।এরপর তা বিছিয়ে দিলো সারফরাজ এর গাড়ির দরজার নিকট।
বাঁকা হেসে অপর পাশের দরজা খোলে বেরিয়ে এলো সারফরাজ।পেছনের গাড়ি থেকে নামলো ইয়ং আর লুইস।সারফরাজ এর গাড়ি থেকে বের হয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো ড্যাভিন।ঠোঁটে একটা সিগারেট ধরিয়ে দেখতে লাগলো বড়লোকি তামাশা।
গাড়ি থেকে নেমে নিজের স্যুট ঠিক করে দরজা খোলা হাত বাড়ালো সারফরাজ।ভয়ে আর জড়তা নিয়ে সারফরাজ এর হাত খামচে ধরলো রূপকথা।সারফরাজ চোখের পাতা ঝাপটা আশ্বস্ত করলো তাকে।রূপকথা মাথা নিচু করে গাড়ি থেকে নামলো।এরপর সারফরাজ এর পায়ের গতি অনুকরণ করে আরেক হাতে গাউন উঁচু করে চলতে লাগলো অভিমুখে।
আগত পুরুষরা রূপকথার সৌন্দর্যে মোহিত হলো।ঈর্ষান্বিত হলো মেয়েরা।তাদের মধ্যে সারফরাজ এর পাশে রূপকথাকে দেখে কেউ কেউ অগোচরে,গোপনে অশ্রাব্য গালিগালাজ ছুড়তেও ভুললো না।তাদের মতো হট ,লাস্যময়ী রমণী রেখে সারফরাজ এমন পাট কাঠির মতো মেয়েতে মজেছে এটা মানতে তাদের কষ্ট হলো।
নোলানের স্ত্রী ডেইজি দৌড়ে এসে সারফরাজ এর সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো।সারফরাজ কে দেখে উপস্থিত মানুষ গুলো কেমন মাথা নত করে রইলো।সারফরাজ এর ঠোঁটে অহংকারী হাসি।রূপকথা আড় চোখে চারপাশ দেখলো।বাপের জন্মে এমন আড়ম্বর দেখেনি সে।
সারফরাজ কে সম্মান দেখিয়ে সকলেই রাস্তা ছেড়ে দিলো।সারফরাজ ঠোঁটে প্রশস্ত হাসির রেখা ফুটিয়ে এগিয়ে গেলো ন্যান্সির পানে।রূপকথা হাতে থাকা সাদা গোলাপ ন্যান্সির হাতে তুলে দিয়ে বললো
“কনগ্রাচুলেশনস।বেস্ট অফ লাক।
সারফরাজ ইয়ং আর লুইস কে ইশারা করতেই গাড়ি থেকে কতো গুলো দামি শপিং ব্যাগ এনে ন্যান্সির হাতে দিলো তারা।শপিং ব্যাগ দেখেই হুশ উড়ে গেলো আশেপাশের সকলের।সাধারণ একটা এনগেজমেন্ট পার্টিতে এতো দামি উপহার দেখে কেউ কেউ ফিসফিস করতেও ভুললো না।
সবকিছুর পর শুরু হলো খাওয়া দাওয়ার পর্ব।গোল টেবিলে খেতে বসেছে সারফরাজ সহ আরো অনেকে।রূপকথা নিজে থেকেই বসলো না সারফরাজ এর সাথে।এতগুলো ছেলের মধ্যে খেতে তার অস্বস্তি হবে।সারফরাজ ও জোর করলো না।যেই টেবিলে গ্লাসে গ্লাসে মদ গেলবে মানুষ জন ওই টেবিলে রূপকথাকে কখনোই বসাতে পারে না সে।খাওয়া দাওয়ার মাঝ পর্যায়ে সারফরাজ এর দৃষ্টি স্থির হলো আগত এক মেহমান এর ছেলের প্রতি।সে রূপকথার পানে বাজে দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে বার বার আর ঠোঁট কামড়ে হাসছে।সারফরাজ মুখে খাবার পুড়ে চিবুতে চিবুতে ছেলেটির পানে নজর তাক করে রাখলো।ছেলেটি তার বন্ধুকে ইশারা করে দেখালো রূপকথাকে।এরপর বলে উঠলো
“শী ইজ সো হ…..
বাকি কথা শেষ করার আগেই স্টেক কাটার চাকু ছেলেটির চোখ বরাবর ঢুকিয়ে দিলো সারফরাজ।ফিনকি দিয়ে তাজা রক্ত ছিটে ভিজিয়ে দিলো সারফরাজ এর মুখ হাত আর গাঁয়ের পোশাক।তাতেও মুখয়ব এর কোনো পরিবর্তন হলো না এই কঠিন হৃদয়হীন পুরুষের।অবস্থা আঁচ করার আগেই চোখ চেপে ধরে গগনবিদারী চিৎকার করে উঠলো ছেলেটি।আশেপাশের মানুষ সহ সকলেই কথা বলার ভাষা হারালো।ভয়ে সিটিয়ে উঠলো রূপকথা।মুহূর্তেই খাবার টেবিলে হৈচৈ নেমে এলো।যারা সারফরাজ কে চিনে তারা কোনো শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করলো না।সারফরাজ চোখের ইশারায় ড্যাভিন কে ডাকলো।অন্য টেবিল থেকে খাওয়া থামিয়ে ঝুটা হাতে উঠে এলো ড্যাভিন।সারফরাজ কাটা চামচ দিয়ে অল্প খাবার মুখে তুলে চিবুতে চিবুতে বললো
“কিল হীম।
আদেশ পাওয়া মাত্র লুইস আর ইয়ং চেপে ধরলো ছেলেটিকে।ছেলেটির দোষ কি কেউ জানেনা।যার ছেলে সে সারফরাজ এর পায়ে পরে কাঁদতে আরম্ভ করলো।কিন্তু সারফরাজ নির্বিকার।হাতের মুখের সব শেষে কাপড়ের রক্ত টিস্যু দিয়ে মুছে সে পুনরায় খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।যেনো কিছুই হয়নি।আশেপাশের কেউ খাচ্ছে না বলে সারফরাজ টেবিল ইশারা করে বললো
“ডিগ দিজ ফুড।
ভয়ে ভয়ে কেউ কেউ খেতে আরম্ভ করলো।মিস্টার নোলান দৌড়ে এসে সারফরাজ এর হাত চেপে ধরে ভীত গলায় শুধালো
“Pardon me. Just tell me what he did? I’ll deal with him myself….
সারফরাজ তাচ্ছিল্য হাসলো।এরপর শক্ত গলায় বললো
“I warned you in advance,a queen would walk in tonight. Make sure the arrangements are worthy of her..
নোলান আর কিছু বলার ভাষা পেলো না।সারফরাজ কাউকে এমনি এমনি খুন করবে না এটা সে জানে।তবুও নিকট আত্মীয় বিধায় একটু অনুরোধ করতে চাইলো।সারফরাজ বাঁকা হেসে ঠান্ডা গলায় শুধালো
“ড্রাগ ডিলার মিস্টার মাইক কে করে দেই ,কি বলেন?
নোলান মাথা নত করে বহু কষ্টে আওড়ালো
“কিল দ্যাট বাস্টার্ড।
চেকমেট পর্ব ৪৪
সারফরাজ দামি ন্যাপকিনে মুখ হাত মুছে টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো।এরপর রূপকথার সামনে এসে দাড়ালো। রূপকথার ছড়ানো গাউন গুটিয়ে কোলে তুলে বলে উঠলো
“বাড়ি চলো।খাবার মজা হয়নি।দামি গিফট গুলো বেকার দিলাম।আফসোস হচ্ছে।টোটাল মানি ওয়েস্ট।এর চাইতে এই টাকা গুলো তোমার ছেলে নাচানো তে ইনভেস্ট করলে ভালো হতো।এটলিস্ট আনন্দ পেতে।রোমান্টিক মুভি দেখাতে আনলাম,হলো থ্রিলার আর কিলার।কিছু হইলো এটা?ধুর!