অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২২
লিজা মনি
লেক আন্টারিওর সবচেয়ে জনপ্রিয় টিলা হচ্ছে স্কারবরো।
এই টিলাগুলি উঁচু, সাদা-ধরনের মাটির গঠনে তৈরি।যা সময়ের সাথে বাতাস ও পানির ক্ষয়ে আকৃতি নিয়েছে। কিছু স্থানে এগুলোর উচ্চতা ৯০ মিটার পর্যন্ত হয় যা লেক অন্টারিওর তীর ঘেঁষে এক অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক দৃশ্য সৃষ্টি করেছে।
টিলাগুলির উপর থেকে অন্টারিও লেকের নীল জলের দিকে তাকালে মনে হয় যেন আকাশ আর জলের মাঝে কোনো সীমা নেই। সবুজে ঘেরা টিলা ও নীচের নীল লেক একটি অপূর্ব রঙের সংমিশ্রণ তৈরি করে। ব্লাফসের নিচে রয়েছে ছোট ছোট সৈকত, যেখানে মানুষ পিকনিক করে। হাঁটে বা সূর্যাস্ত উপভোগ করে।
এই অঞ্চলটি শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যের জন্যই নয় জীববৈচিত্র্যের জন্যও বিখ্যাত। এখানে নানা পাখি, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ দেখা যায়।
অগ্নি ইয়ানাকে নিয়ে একদম সবচেয়ে উচু টিলার উপরে উঠে। ইয়ানা কোল থেকে নামার জন্য মিহি সুরে বলে,,,,,
” নামিয়ে দিন। আপনার কষ্ট হচ্ছে।
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” মোট চারটা টিলা পার করে এখানে এসেছি। এতক্ষন কষ্ট লাগে নি আর এখন লাগবে। তোমার মত চিনেপুটকে সারাদিন কোলে নিয়ে ঘুরলে ও ক্লান্তি আসবে না।
ইয়ানা — অপমান করছেন?
অগ্নি — উহুম সত্তিটা বলছি।
অগ্নি ইয়ানাকে নামিয়ে দেয়। ইয়ানা চারদিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বলে,,,,,
” আবহাওয়া বেশি একটা ভালো না। বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখানে আসাটা ঠিক হয় নি। যে কোনো সময় তুমুল ঝড়ে বৃষ্টিপাত হতে পারে।আসুন চলে যাই।
অগ্নি ইয়ানার দিকে ছোট ছোট চোখে তাকায়। এরপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে তিরিক্ষে মেজাজে বলে,,,,
” কেনো ত্যারামি শেষ। বারন করেছি বলে তো ডাবের মত গাল ফুলিয়ে রেখেছিলে সাথে ননস্টপ বকবক। এখন কেনো চলে যাবে। এই ঝড়ের মধ্যেই থাকবে তুমি। যদি ভয় পাও তার পরে ও থাকবে।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” সমস্যা নেই আছেন তো আপনি সাথে। আপনি আমার সাথে থাকতে আমার ভয় কিসের?
ইয়ানার কথায় ইয়ানা স্তব্দ হয়ে যায়। কেনো যেনো বাহিরের ঝড়ের থেকেও নিজের বুকের ভিতরের ঝড় তীব্র মনে হচ্ছে।
অগ্নি ইয়ানার কাছে এগিয়ে যায়। এরপর ইয়ানার পড়ে থাকা আচলটা শরীরের সাথে ভালোভাবে ডেকে দিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে,,,,
” এতটা বিশ্বাস করো আমাকে? ”
ইয়ানা — নিজের থেকেও বেশি।
অগ্নি — যদি এই বিশ্বাসটা কোনোদিন ভেঙ্গে যায় তখন কি করবে তুমি?
ইয়ানা এক গাল হেসে বলে,,,,,
” সেই সুযোগটাই কখনো আসবে না।
অগ্নি — যদি আসে কোনোদিন?
ইয়ানা — আসবে না বিশ্বাস আছে আমার আপনার উপর। আমি জানি আপনি খুব ভালো। হ্যা তবে আমাকে ধমক দেন, আমার সাথে রাগ করেন । সেগুলো আমি খারাপ লাগা নয় শাষন হিসেবে বেছে নেই। তবে একটা ওয়ার্নিং আমি আপনাকে দিচ্ছি। সবসময় তো আপনি আমাকে দেন। আমি ব্যতীত অন্য কোনো নারী আপনার জীবনে আসলে ওইদিন আমি আপনাকে খুন করব। এরপর ধীরে ধীরে নিজে ও নিঃস্ব হয়ে যাব।
ইয়ানার কথায় অগ্নি হালকা হাসে। এরপর ইয়ানার দুই গাল আলতোভাবে ধরে বলে,,,,,
” অগ্নি চৌধুরী এক আবেদনময়ী নারীর প্রতি মোহিত। এই চোখ যদি ভুলে ও কোনোদিন অন্য নারীর দিকে যায়। সেদিন তুমি সেটা অনুভব করার পূর্বেই নিজেই নিজের চোখ তুলে নিব।
অগ্নি থামে এক মুহূর্তের মধ্যে। ইয়ানা অশ্রুনয়নে অগ্নির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” সত্যি বলছেন তো? আমাকে ছাড়া কোনোদিন কোনো নারীর দিকে তাকাবেন না?
অগ্নি ইয়ানার চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে দিয়ে নিজের সাথে আর ও মিশিয়ে নিয়ে বলে,,,,,
” সামনে যদি নগ্ন স্বর্গও এসে দাঁড়ায় তবু ও আমার চোখ তোমার চেয়ে এক সেকেন্ডও সরবে না। কারণ আমি জানি তোমাকে হারানোর চেয়ে ভয়ানক কিছু আমার অস্ত্রাগারেও নেই।
ইয়ানা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। ধীরে ধীরে বৃষ্টির বিন্দুকণা পড়তে থাকে। এতক্ষন চলা ঝড়টা মুহূর্তেই শান্ত হয়ে যায়। বৃষ্টির ফোটাগুলো বড় বড় আকার ধারন করতে থাকে।
অগ্নি ইয়ানাকে নিয়ে একটা মাটির ঘরে ডুকে। মাটির ঘর দেখে অগ্নি কিছুটা নাক ছিটকায়। কারন বারান্দা ভিজে কেমন হয়ে যাচ্ছে। এখানে আসতে আসতে ইয়ানা খানিকটা ভিজে গিয়েছে। যেহেতু পাতলা শাড়ি তাই ভিজে যাওয়াটা দৃশ্যমান হয়েছে বেশি। মাটির ঘর দেখে ইয়ানার মুখে হাসি ফুটে উঠে। ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” আপনি কি জানতেন এখানে মাটির ঘর ছিলো নাহলে এত তারাতাড়ি আসলেন কিভাবে?
অগ্নি — হুম।
ইয়ানা — কিভাবে জানলেন? এখানে কি আগেও এসেছেন?
অগ্নি — হুম।
ইয়ানা — কেনো এসেছিলেন?
অগ্নি — যেহেতু কানাডায় আমার বেড়ে উঠা সো আসাটাই স্বাভাবিক। কোনো একটা কাজে এসেছিলাম আমি , আরিফ, রায়ান আর ইউভি। ব্যবসায়ীক কাজে আরকি।
ইয়ানা — ওহহ আচ্ছা তাহলে ভিতরে চলুন। বারান্দায় থাকলে বৃষ্টির ফোটা শরীরে আর ও পড়বে। এমনি আমি একদম ভিজে গিয়েছি।
অগ্নি ইয়ানার দিকে এক পলক তাকায়। এরপর সাথে সাথে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
ইয়ানা ভিতরে ডুকে চারপাশে তাকায়। ছোট মাটির কুড়েঘর মনে হচ্ছে অনেক বছর ধরে এই টিলার উপর একাকী দাঁড়িয়ে আছে অবহেলিত ভাবে। মাটির দেয়ালগুলো হালকা করে ভেজা, বৃষ্টির ধাক্কায় দেয়াল থেকে এক টুকরো মাটি ক্ষয়ে পড়ে।দেয়ালের ফাঁকে ফাঁকে শ্যাওলা ধরে আছে তবুও মনে হচ্ছে আদিম সৌন্দর্য লোকিয়ে আছে। ছাদের উপর টিনের চাদর যেটা বৃষ্টির শব্দে গান গাইছে।
মেঝেতে খড়ের মতো শুকনো পাতা ছড়ানো, দেয়ালের কোণায় পুরনো কিছু কাঠ রাখা যেন কেউ অনেক আগে এখানে বসে আগুন জ্বালিয়েছে।
একটা ভাঙা জানালা আছে। যেখানে কাঁচ নেই আছে কেবল কাঠের ফ্রেম।আর বৃষ্টির ফোঁটা টুপটাপ করে সেখানে পড়তে থাকে।
রুমের ভিতরে কোনোরকম আলো নেই।তবে বাইরের বিদ্যুতের চমক মাঝে মাঝে ঘরের ভেতরে আলোর রেখা টেনে দেয়।
কিছুক্ষন পর পর তীব্র আওয়াজে বিদ্যুৎ চমকে উঠছে। কিন্ত ইয়ানা এইসব বজ্রপাত কখনো ভয় পায় না। তাই এইসব বজ্রপাতে তার ভিতরে ভয় জাগিয়ে তোলে নি।
ইয়ানার এইবার প্রচুর ঠান্ডা লাগতে শুরু করে। অর্ধেক শাড়ি ভিজে গিয়েছে। ঠান্ডায় ঠোঁট দুটি কাঁপছে। হঠাৎ ঘাড়ে কারোর গরম নিশ্বাস অনুভব করে ইয়ানা চমকে উঠে। পিছনে ফিরে দেখার জন্য ঘাড় ঘুরাতেই নিজের মেদহীন কোমরে কারোর শীতল স্পর্শ অনুভব করে আকাশের বজ্রের মত কেঁপে উঠে। ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকাতে চাই কিন্তু তাকাতে পারছে না। এক শক্ত বাধনে সে ততক্ষনে আটকা পড়ে গিয়েছে। অগ্নি ইয়ানার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দেয়।
ইয়ানা নিজের স্তব্দতা ভেঙ্গে নিজের ঠোঁটগুলো জিভ দিয়ে ভিজিয়ে মিহি সুরে বলে,,,,,
” কি করছেন কি ছাড়ুন ”
ইয়ানার কথা যেনো অগ্নির কান অব্দি পৌছাল না। অগ্নি হাত বাড়ায়, পিছনে পরে থাকা ভেজা চুলগুলো সরিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,,,,,,,
” তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে ইয়ানা। আমি কখনো কারোর সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা দেই নি। কিন্তু তোমার সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ও থেমে যায়। কারন এই সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা দেওয়ার মত কোনো শব্দভান্ডার আমার মস্তিষ্কে তৈরি হয় নি এখন ও। তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না শাড়ী পড়া এই মেদহীন অস্তিত্ব আমাকে যেকোনো যুদ্ধে পরাজিত করে দিতে পারে।
ইয়ানা চোখ তোলে অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নির চোখে এক প্রকার মাদকতা কিন্তু এরপর ও চোখগুলো কেমন হিংস্র দেখাচ্ছে। ইয়ানা অগ্নির চোখে গভীরভাবে পরখ করে।
অগ্নি ইয়ানার দিকে এক পলক তাকিয়ে তার কাঁপা কাঁপা ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেই। ইয়ানা নির্বাক হয়ে পরে। ধীরে ধীরে অগ্নির আলিঙ্গন গভীর থেকে গভীর হতে থাকে। অগ্নির হিংস্র দবানল ইয়ানার গলা পর্যন্ত গ্রাস করে ফেলে। প্রতিটি স্পর্শ যেনো নিজের অস্তিত্ব খোদাই করছে। ইয়ানার সর্বশক্তি দিয়ে সেই অত্যাচার সহ্য করতে থাকে। যেনো এইসব তার শরীরে সয়ে গেছে। ইয়ানা খেই হারিয়ে পড়ে যায় খড়ের উপর। অগ্নি ইয়ানার দিকে ঝুকে বড় বড় শ্বাস টানে। ইয়ানা অগ্নির চোখে চোখ রেখে বলে,,,,
” আমি কি আপনার চোখের ভাষা বুঝতে সক্ষম হচ্ছি। কি চান আপনি?
অগ্নির সোজাসাপ্টা উত্তর,,,,,
” তোমাকে? এই মুহূর্তে আমার তোমাকে চাই এন্ড সেটা খুব তারাতাড়ি।
ইয়ানা — যখন ভালোবাসেন না তখন চেয়ে কি করবেন?
ইয়ানার কথায় অগ্নি রেগে গিয়ে ওর বাহু চেপে ধরে। ইয়ানা ব্যাথায় সামান্য চোখ খিচে ফেলে।
হঠাৎ করে অগ্নির রাগটা বেড়ে যায়। যখন বার বার বলছে এই মেয়েটাকে সে নিজের জীবনের চেয়ে ও বেশি চাই সেখানে সামান্য ভালোবাসা শব্দটার জন্য এত উতলা কেনো এই মেয়ে। অগ্নি চৌধুরি সামান্য শব্দ দিয়ে তৈরি এক টুকরো ঠুনকো শব্দ দিয়ে ভালোবাসে না। তার চাওয়া পাওয়া এক ধ্বংস আর যুদ্ধের মত যার জন্য সে পুরো দুনিয়ায় আগুন লাগিয়ে দিতে পারে। অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বাহুটা আর ও চেপে ধরে বলে,,,,,
” যখন ভালোবাসাটাই তোমার সবকিছু আমি কিছুই না তাহলে দরকার নেই তোমাকে। প্রয়োজন নেই তোমাকে কাছে পাওয়ার।
এরপর অগ্নি ইয়ানার উপর থেকে উঠে বাহিরে চলে যায়। রাগে পুরো শরীর রি রি করছে। অগ্নির বড় বড় শ্বাস টেনে বাঁশের খুটিতে শক্তভাবে চেপে ধরে। পাগল করে দিবে এই মেয়ে।হঠাৎ গাছের পাশে কারোর ছায়ামূর্তি দেখে সেইদিকে কপাল কুচকে আসে। পরমুহূর্তে কিছু একটা মনে করে কাউকে টেক্সট পাঠাই।
এইদিকে ইয়ানা স্তব্দ হয়ে বসে আছে। কারন অবাকের রেশটা এখন অব্দি কাটছে না। কি এমন বলেছি যে উনি এইভাবে রেগে গেলো? আমি কি ভুল কিছু বলেছি? এই মুহূর্তে রাগানোটা একদম উচিত হই নি। আমি জানি উনি আমাকে কতটা চাই।
ইয়ানা বিরবির করে অগ্নির কাছে যায়। দেখে অগ্নি বাঁশে শক্তভাবে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। ইয়ানা ধীরে পায়ে অগ্নির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। বৃষ্টির এক ফলা আবার ও শরীরে আছড়ে পড়ে। অগ্নি ইয়ানাকে দেখে এখান থেকে সরে যায়।
ইয়ানা একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,
” রাগ কেনো করছেন আমি তো আপনাকে হার্ট করতে বলিনি। প্রশ্নটা জেগেছে তাই বলেছি।তাই বলে এইভাবে চলে আসবেন।
অগ্নি তিরিক্ষ মেজাজে বলে,,,,
” এখানে দাঁড়িয়ে থেকো না বৃষ্টিতে আর ও ভিজে যাবে। বারান্দা থেকে ভিতরে যাও এক্ষনি।
ইয়ানা সরে যায় না। জানে লোকটা তার উপর রাগ করে আছে। ইয়ানা অগ্নির সামনে গিয়ে চোখে চোখ রাখে। কিন্তু অগ্নি তাকায় না। ইয়ানা আহত সুরে বলে,,,,,
” তাকান আমার চোখের দিকে। আপনি কি আমার চোখের ভাষা বুঝতে পারছেন না?
অগ্নি ইয়ানার চোখের দিকে তাকায়। চোখের ভাষা বুঝতে বেশি সময় লাগে নি। অগ্নি ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,,,
” ভেবে বলছো তো?
ইয়ানা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,,,,
” কিন্ত কথা হচ্ছে আপনার ব্যক্তিত্বে লাগবে না। সামান্য ঘুরতে এসেছি বলে পুরো হাউসবোট কিনে নিলেন যাতে অন্যের জিনিসে সময় কাটাতে না হয়। সেখানে এই অন্যের তৈরি মাটির ঘরে কিভাবে সময় কাটাবেন?
অগ্নি ইয়ানাকে পাজা কোলে তোলে নিয়ে বলে,,,,
” আজ না হয় সেই রুলস আর ব্যক্তিত্বের দেয়াল ভেঙ্গে ফেলি। ”
ইয়ানা লজ্জায় অগ্নির বুকে মুখ ডুবাই। অগ্নি আলতোভাবে ইয়ানাকে খড়ের উপর শুইয়ে দেই। ইয়ানা চোখ বন্ধ করে আছে। অগ্নি হালকা হেসে ইয়ায়ানার উষ্ঠ নিজের উষ্ঠের মধ্যে নিয়ে নেই। সেকেন্ড যাচ্ছে, মিনিট যাচ্ছে, দেখতে দেখতে অগ্নি এক হিংস্র রুপ ধারন করে। ওর প্রত্যেকটা স্পর্শ শক্ত আর গভীর হতে থাকে। ইয়ানা চোখ বুজে অত্যাচার সহ্য করে নেই। মনে হচ্ছে ওর শরীরে কেউ দাড়ালো ছুড়ি দিয়ে আঘাত করছে। ইয়ানা থামাতে চাই। কিন্ত এত শক্ত শরীরের সাথে পেরে উঠে না।
বাহিরে বৃষ্টির সামান্য বিন্দু কনা তাদের উপর জানালা দিয়ে আছড়ে পড়ে। এই মুহূর্তটা যেনো অমর হয়ে আছে। বাহিরে বজ্র নেমে আসে দুর আকাশে।
এই মুহূর্তে কোনো অপরাধ নেই।কোনো রাজনীতি নেই। দুনিয়ার কোনো ভয় নেই।
শুধু এক নিঃশ্বাস দূরত্বে ভালোবাসা, কামনা, আর সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ।
এই বৃষ্টির রাতকে ভালোবাসা আর কাছে পাওয়ার হিংস্র রাত বলে সাক্ষী করে।
রাত দুইটা ত্রিশ মিনিট।
একের পর এক ছুড়ি দিয়ে আঘাত করতে থাকে একটা লোককে। খুব সুক্ষ্ণভাবে যাতে মরে না যায়।লোকটা চিৎকার করতে চাই কিন্তু চিৎকার করতে পারছে না। তার জিহ্বা কেটে দিয়েছে সাথে চোখ দুইটা ও তোলে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে পড়ে থাকা লোকটা ছটফট করে, কাতরায় কিন্তু চিৎকার করতে পারছে না। লোকটার হাতে ছুড়ি ডুকিয়ে সামনে থাকা ব্যক্তিটি শান্ত সুরে বলে,,,,
” কত বড় কলিজা নিয়ে ঘুরিস তরা। অগ্নি চৌধুরিকে ফলো করার মত সাহস দেখাস। কলিজা কেঁপে উঠে নাই যদি জানতে পারে তাহলে কি অবস্থা করবে। তুই রায়হানের এসিস্টেন্ট তাই তো? রায়হান পাঠিয়েছে তকে আমাকে অনুসরন করার জন্য?
লোকটা একদম নিস্তেজ হয়ে পড়ে। লোকটার নিস্তেজ হয়ে পড়া অগ্নির একদম সহ্য হয় নি। তাই রাগে হুংকার দিয়ে বলে,,,,,
” কি হলো বলছিস না কেনো? বল রায়হান পাঠিয়েছে তকে?
লোকটা একদম নিশ্চুপ। যেনো সে আজ কিছুতেই বলবে না কে পাঠিয়েছে।
লোকটার নিরবিতায় অগ্নি এক অট্টহাসি দিয়ে উঠে। এত ভয়ংকর আর গম্ভীর হাসির শব্দে দেয়ালের ইটগুলো ও জানান দিচ্ছে এখন ভয়ংকর কিছু ঘটবে। গার্ডগুলো জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ায়। পাশেই আরিফ দাঁড়িয়ে আছে এক আতঙ্ক নিয়ে। আরিফ মাঝে মাঝে অগ্নি চৌধুরিকে চিনতে পারে না। কত ভালোবেসে তাকে আগলে রেখেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা যখন ভাবির সামনে যায় একদম নিষ্পাপ। যেনো জীবনে কিছুই করে নি। কিন্তু এই টর্চার সেলে যেনো এক জেগে উঠা সিংহ হয়ে উঠে।
অগ্নি নিজের হাসি থামিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” ওকে বলিস না। এইসব জানা আমার বা হাতের কাজ।
এরপর লোকটার দিকে তাকিয়ে আরিফের উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,
” আরিফ ফুটন্ত গরম তেলে ছেড়ে দে।
অগ্নির কথায় আরিফ আৎকে উঠে।লোকটা এইবার অগ্নির পায়ের কাছে গিয়ে লুটিয়ে পড়ে। ও ভেবেছিলো হয়ত দুই একটা বুলেট দিয়ে মেরে ফেলবে। কিন্তু এইভাবে নরক যন্ত্রনা দিবে কল্পনা ও করে নি। লোকটার জিহ্বা নেই একদম নিস্তেজ শরীরটা টেনে নিয়ে যায় অগ্নির কাছে। এরপর হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।
অগ্নি একটা সিগারেট ধরিয়ে সামান্য ফুঁ দিয়ে বলে,,,,
” সত্যিটা বললে তকে যাস্ট গুলি করে মেরে ফেলতাম। বাট তুই বলিস নি। সুযোগ আমি কাউকেই দেই না তবে তকে দিয়েছিলাম। কারন তুই পোষা গুন্ডা মাত্র।আসল কালপ্রিট তো অন্য কেউ। আমার বউ আর আমার একান্ত সময় কাটানোর মধ্যে তুই অনুসরন করেছিস সেখানে তর বেঁচে থাকার কোনো রাইট নেই। আমি যাস্ট তেলে ছাড়ব আর আজরাইল তর রুহটা বের করে নিবে।
লোকটা যেনো পাগল প্রায়। হাত জোড় করে মাফ চাচ্ছে কিন্ত অগ্নি নির্বাক যেনো কিছুই হচ্ছে না।
লোকটাকে কয়েকজন গার্ড মিলে নিয়ে যায় একটা বড় পাত্রের সামনে। লোকটা বার বার মাথা দিয়ে না করছে আর ছটফট করছে।
চারজন গার্ড মিলে লোকটাকে সেই ফুটন্ত গরম তেলে ছেড়ে দেই। মুহূর্তের মধ্যে এক বিকট চিৎকারে পুরো টর্চার সেল নিস্তব্দ হয়ে যায়। চিৎকার থেমে যায়। আরিফ নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে। নিজের কলিজাটা কেঁপে উঠছে ভয়ে। হাজারটা গুলি ও চালিয়েছে কিন্ত হাত কেঁপে উঠে নি। কিন্তু এত নির্মম মৃত্যু দেখার ক্ষমতা যেনো হয়ে ও হচ্ছে না।
অগ্নি একদম শান্তভাবে চেয়ারে বসে আছে। যেনো এই মুহূর্তে আহামরি কিছুই ঘটে নি।
অগ্নি নিজের সিগারেটটা শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। এরপর সেই পাত্রের কাছে গিয়ে লোকটার অস্তিত্ব খুঁজতে থাকে। পুরো শরীর একদম পুরে গিয়েছে মানুষ নাকি কোনো জন্তু সেটা ও বুঝা যাচ্ছে না।
অগ্নি বিরবির করে বলে,,,,
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২১
” বাস্টার্ড!
এরপর বের হয়ে যায় টর্চার সেল থেকে। আরিফ ও পিছু পিছু চলে যায়।
আরিফ হাটছে ঠিক কিন্ত ওর সম্পূর্ন ধ্যান আর ধারনা অন্য দিকে গিয়ে আছে। বার বার অগ্নির হিংস্রতা মনে করতে থাকে আর ইয়ানার কোমলতা। আচ্ছা যদি কখনো ভাবি ভাইয়ের সম্পর্কে জানে তাহলে তাদের সম্পর্কের সমীকরন কোথায় যাবে। ভাবি কি ভাইকে ভুল বুঝবে, ছেড়ে চলে যেতে চাইবে, বা ছেড়ে চলে যাবে। কোনো কোমল মেয়ে এত হিংস্র হৃদয়হীন মানুষের সাথে থাকতে চাইবে না। ভাবি কি সত্যি আলাদা হয়ে যাবে আর ভাই কি যেতে দিবে? ভাবির পাগলামি যদি ভাইকে আর ও হিংস্র করে তোলে তাহলে? উফফ আর ভাবতে পারছি না। আল্লাহ তুমি শুধু রক্ষা করো জানি না ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে।