ধূসর রংধনু পর্ব ২৬

ধূসর রংধনু পর্ব ২৬
মাহিরা ইসলাম

-“তোমার নাতিবউয়ের কি বাপের বাড়ির সফর এতদিনেও হয়নি।এখনো শ্বশুর বাড়ি আশার তার কোনো নাম গন্ধ ও নেই যে।”
সুযোগ পেয়ে পাশ থেকে অনিমা বেগম শক্ত কন্ঠে বললেন,
-” ওও আর এবাড়িতে আসবেনা।তাছাড়া তোমায় ওকে নিয়ে আর চিন্তা করতে ও হবে না। ”
নিস্তব্ধ অবাক কন্ঠে সূধালো,
-” আসবেনা মানে?
দাদু এই সুযোগ পেলেন। বিয়ে করবেনা বলে যেমন তার নাতি জেদ ধরে ছিল তেমনি তিনিও মনের সকল আক্রোশ মিশিয়ে নাতিকে ঝাড়ি মেরে বললেন,

-” হ্যাঁ সে আর তোমার বাড়ি আসবেনা। কি করতে আসবে সে।তুমি কি তাকে মানো?কি পরিচয়ে আসবে সে।তাসফি তোমাকে ডিভোর্স দেবে। তোমাকে সমস্ত পেপার’স রেডি করে সই করে তাকে পাঠাতে বলেছে।শুনে নিয়েছো? ”
নিস্তব্ধ রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকালো দাদুর দিকে।ডিভোর্স শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে তার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে যেন।
শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটছে উত্তপ্ত লাভার ন্যায়।
এই বুঝি জ্বালিয়ে দেবে সব।
বসা থেকে নিস্তব্ধ চট করে দাঁড়িয়ে সিংহের ন্যায় গর্জন করে বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” ডিভোর্স? ডিভোর্স দিবে মানে? কিসের ডিবোর্স দেবে।ফাইজলামি পেয়েছে নাকি।”
আয়েশা নিস্তব্ধ’র হঠাৎ সিংহের ন্যায় হুংকার ছেড়ে উঠায় থতমত খেয়ে পাশে বসা বাসন্তীকে জড়িয়ে ধরলো।
বাসন্তী বুকে থুথু দিলো।
তার ভাই কি তাদের মারার প্লান করেছে নাকি।
এখনই তো কলিজা খুঁলে হাতে চলে আসতো তার।
আর কলিজা খুলে হাতে আসলে সে কি আর বেঁচে থাকতো।ইয়া খোদা।
দাদু উল্টো হুংকার ছেড়ে বলল,

-” ফাইজলামি তো তুমি পেয়েছো।মেয়েটাকে এতদিন অবহেলা করে ডিভোর্সের কথা শুনে তুমি এখন নাটক করছো।কোনো নাটক চলবে না।চুপচাপ ডিভোর্সের পেপারে সই করে দেবে।পেপার তোমার বাবা নিজে রেডি করবে। কথাটা মাথায় রেখ।”
রাগে নিস্তব্ধ হাতের কাছে পাশে থাকা ফুলদানি আছাড় মারতেই নিস্তব্ধ’র দানবীয় শক্তিতে তা চুর্ণ বিচূর্ণ হয়ে ভেঙ্গে পরলো টাইলসের সদেফ ফ্লোরে।
বাসন্তী অবাক কন্ঠে সূধালো,
-” কি ব্যাপার ভাই তুই আমাদের বাসার জিনিসপত্র কেন ভাঙছিস? আশ্চর্য। যা বলার তোর বউকে গিয়ে বল। আমাদের বাসার জিনিস কেন ভাংচুর করছিস।”
নিস্তব্ধ রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল,

-” ডিভোর্স দেবে।ডিভোর্স দেবে তাই না।অসভ্য মেয়েটার ডিভোর্স দেওয়া আমি ছুটাবো।চাপকে সোজা করে ওর মাথা থেকে ডিভোর্সের ভুত আমি তাড়াবো।
আমি আমার বউকে কোনো ডিভোর্স টিবোর্স দেব না। শুনেছো তোমরা?
কোনো ডিভোর্স হবে না।তোমরা বলে দিও তাকে। দাদু… তোমার সো কল্ড নাতিবউকে বলে দিও সে কথা।
ঠিক আছে তোমাদের বলতে হবে না আমিই বলে দেব। যাচ্ছি আমি।
-“দাঁড়াও।”

অনিমা বেগমের ডাকে নিস্তব্ধ চোয়াল শক্ত অবস্থায়ই পিছু ঘুরে চাইলো,
অনিমা বেগম রাশভারী কন্ঠে বলল,
-” নিস্তব্ধ তুমি তো বিয়েটা মানতে চাওনি বাবা।এখন তো তোমায় মুক্ত করে দেওয়া হবে।তুমিই তো চেয়েছিলে। তোমার ইচ্ছাই পূরণ হচ্ছে তো। তবে এখন কেন তোমার এই বেপরোয়া অভিব্যাপ্তি।
-” কিন্তু মা এখন আমি…
অনিমা বেগম নিস্তব্ধকে থামিয়ে বললেন,

-” না আর কিছু শুনতে চাই না আমি।তুমি ডিভোর্স দিচ্ছ ব্যাস।এটাই শেষ কথা। আর তুমি ওবাড়িতে এক মুহুর্তের জন্যও যাবে না।কখনো না।কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও।তোমার বউ তুমি কিভাবে সামলাবে সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়।কিন্তু তুমি ও বাড়ি যাবে না ব্যস।”
নিস্তব্ধ দরজা পাশে থাকা টবটাতে রাগে লাথি মেরে নিজের রুমের দিকে ছুটলো সে।
মেজাজ প্রচন্ড গরম তার যে কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে সে এখন।
বেয়াদব মেয়েটাকে হাতের কাছে পেলে সে এখন তাকে খুন করে ফেলতো নির্ঘাত।
তাকে এতদিন জ্বালিয়ে পুরিয়ে অঙ্গার করে দিয়ে এখন এসেছে ডিভোর্স চাইতে।
এই নিস্তব্ধ ইয়াসার কে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলে কত্তবর কলিজা। ওই কলিজা খুলে সে লুডু যদি না খেলেছে তার নাম ওও নিস্তব্ধ ইয়াসার নয়।
ডিবোর্সের ঝাল সে হারে হারে মিটিয়ে নেবে।
যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।

সন্ধ্যা বেলা তাসফি সকল হিনমন্যতা পাশ কাটিয়ে একটু বসেছিল বই নিয়ে।
আশার কল এলে তখন।
রিভিস করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো তার উত্তেজিত কন্ঠস্বর,
-” দোস্ত আজকে কি হয়েছে জানিস। কলেজে তো শুধু চারিদিকে সবাই তোর খোঁজ করছে।কি ব্যাপার বলতো। কলেজে কবে আজবি বলতো?”
তাসফি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
-” এইতো দেখি কাল থেকেই আসতে পারি।ক্লাস মিস দিয়ে তো লাভ নেই।”
আশা আবারো উৎফুল্ল চিত্তে সুধালো,

-” আজ তো নিস্তব্ধ স্যার আমার কাছে তোর খোঁজ জানতে চাইলো।তুই কেন আসছিস না সেগুলো জিজ্ঞেস করলো। আমি তো প্রথমে ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।আবার তোর নোটের প্রশংসাও করলো।কি ব্যাপার বলতো হুম হুম।স্যারের এত তোকে খোঁজার কারণ কি।তলে তলে টেম্পু চালাচ্ছো না তো। আবার তোমার মতো গম্ভীর স্বরপ বলল,
‘ক্লাস মিস দেওয়া মোটেও সমীচীন নয়।’ কি ব্যাপার বলতো তোদের? কি চক্কর চলছে হুম হুম?
তাসফি মনে মনে কৌতুক করে হাসলো।
কিসের নোট আর কিসের প্রশংসা।সে তো ওই অহংকারী লোকটাকে কোনো নোটই দেয় নি।হাহ।
আর প্রশংসা।
করুক না জিজ্ঞাসা। তাকে খুঁজে খুঁজে ধ্বংস হয়ে যাক না তাতে তার কি। খুঁজে খুঁজে শুঁটকি মাছের ভর্তা হয়ে যাক।আর সেই শুঁটকি মাছের ভর্তা দিয়ে তাসফি আরাম করে ভাত খেয়ে ইয়া বড় একটা ঢেকুর তুলবে। আহহ শান্তি।
আশা তাসফি নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব দিলো,

-” খুঁজুক। যার ইচ্ছা হয় খুঁজে হয়রান হোক।সেটা আমার দেখার বিষয় নয় পাখির বাঁসা।তুই তোর কাজ কর।আর একদম আজেবাজে কথা বলবি না। তোকে লাস্ট বার ওয়ার্নিং দিলাম।ওই অহংকারী ডাক্তারকে কুঁচি কুঁচি করে কেটে আমি কিমা বানাবো বুঝলি।ফোন রাখ।
ফোনের ওপাশের আশা বোকার মতো তাসফির কথা শুনে বসে রইলো।যাহ কি হলো।
সে কি বললো আর এই মেয়ে কি বলে ফোন কাটলো।আশ্চর্য।

নিস্তব্ধ অনবরত নিজ কক্ষে পায়চারি করে যাচ্ছে। কত্তবড় সাহস বলে কিনা তাকে ডিবোর্স দেবে।
সিমে ব্লক করেছে।মেসেঞ্জারে কতবার ফোন করলো একটা ফোনও রিসিভ করলো না। উল্টো ব্লক করে দিলো।
নিস্তব্ধ ফোন হাতে নিয়ে মেসেঞ্জারে আজিব গুষ্টির গ্রুপে কল লাগালো।
কল ধরলো সবাই।
নিস্তব্ধ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

-” ডিবোর্সের কথা তোরা জানতিস? ”
ওরা শুষ্ক ঢোক গিললো। আবার হাফ ছেড়ে বাঁচলো।যাক দাদু তাহলে বলে দিয়েছে ডিভোর্সের কথা ।
ওরা সবাই যেন আকাশ থেকে পড়ার ভঙ্গি করে বলল,
-” কার ডিবোর্স?কিসের ডিবোর্স? বাসন্তীর কথা বলছিস নাকি নিস্তব্ধ? ”
নিস্তব্ধ খট করে কলটা কেটে দিলো।সবকটা শয়তানের দল ইচ্ছে করে এমন করছে।সব জানে সবকটা।
নিস্তব্ধ কল কাটতেই ওরা এক একজন খিল খিল করে হেঁসে দিলো।
বেচারা নিস্তব্ধ’র চেহারা খানা দেখার মতো।
চমৎকার ভাবে জব্দ হয়েছে ব্যাটা।
তাসফি নিস্তব্ধ’র আইডির দিকে তাকিয়ে আছে।
কই এতদিনে তো একটা ফেন্ড রিকোয়েস্ট ও পাঠানোর নাম গন্ধ ছিল না।আর এখন তাকে সোজা কল করা হচ্ছে। তার কল ধরতে তার বয়েই গেছে।হুহ।

পরদিন,
চমৎকার একটি সকাল।চারিপাশে হালকা পাখির গুঞ্জনে পরিবেশটা মুখরিত।কিন্তু নিস্তব্ধ’র নিকট তা বিষাক্ত। বাতাসের সঙ্গে প্রতিটি নিঃশ্বাসে যেন সে বিষ টেনে নিচ্ছে। বিষে বিষে বিষক্ষয় হচ্ছে তার মন থেকে মস্তিষ্কের প্রতিটা অংশ।প্রতিটা নিউরনে ছড়িয়ে পড়ছে
এই বিষাক্ত অ্যামোনিয়াম সায়ানাইড। কখন না সে ধ্বংস হয়ে যায় এই চিন্তা। বিয়ের পর থেকেই তো তাকে জালিয়ে পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিচ্ছে অভদ্র মেয়েটা।এতদিন মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে শান্তি হয়নি।এখন শারীরিক , মানসিক দুটোয় দেওয়ার পায়তারা করছে দুষ্টু মেয়েটা।

তাসফিকে আজ কলেজে আসতে দেখে আশা খুব খুশি হলো।এসেই তাকে জরিয়ে ধরলো।নিজের বেঞ্চে কাছে এসে তার পাশে আরেকটি ছেলে আর মেয়েকে বসে থাকতে দেখে তাসফি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আশা দিকে চাইলো।
আশা বলল,
– “এই দেখ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম ওদের কথা।ওরা হচ্ছে আমাদের নিউ ফ্রেন্ড আরাধ্য আর সার্নিধি ।
বেচারা একা একা চুপচাপ বসে থাকতো”
তাসফি তার মাঝে ফোড়ন কেটে বলল,
-” আর তুই অমনি ওদের ফ্রেন্ড বানিয়ে নিলি তাইতো।”
আশা হেঁসে বলল,
-” একদম ঠিক ধরেছিস।তোর না থাকায় ওরাই সঙ্গ দিয়েছে বুঝেছিস।”
আরাধ্য তাসফির উদ্দেশ্যে বলল,

-” হাই আমি আরাধ্য। আর তুই তাসফি রাইট।তুই করে বলছি দেখে রাগ করিস না আবার, আমরা তো ফ্রেন্ড তাইনা। আর ফ্রেন্ডদের মাঝে তুমি শব্দটা না ঠিক খাটে না বুঝলি।”
তাসফি মুচকি হাসলো।সঙ্গে তাসফির বোঝা হয়ে গেল আশা আর আরাধ্য দুটোই সেম কোয়ালিটির বাচাল।
হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়লো সে।
সর্নিধি মেয়েটা বেশি কথা বলল না অবশ্য। শুধু ওদের কথায় মুচকি হেঁসে হ্যাঁতে হ্যাঁ মেলালো।
প্রতিদিনের মতো নিস্তব্ধ ক্লাসে ঢুকে আজও তাসফির খোঁজ করছিলো পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে। আজ তাসফি কে দেখতে পেয়েই নিস্তব্ধ তার দিকে রক্তচক্ষু বদনে তাকিয়ে রইলো।যেন এখনি পরিস্থিতি থাকলে ওই চোখ দিয়েই তাকে খুন করে ফেলত।

তাসফি তার ওই চাহনিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ভাবলেশহীন ভাবে চেয়ে রইলো।
নিস্তব্ধ শরীর তাতে আরো তেঁতে গেল।ইচ্ছে হচ্ছে থাপড়িয়ে ওই অসভ্য মেয়েটার গাল লাল করে দিতে।কত্তবড় সাহস।বলে কিনা তাকে ডিবোর্স দিতে।
কেন এতই যদি সাহস থাকে আমায় এসে বলতি,পরিবারের কাছে কেন বলতে গিয়েছিস।
দেখ কিভাবে তাকিয়ে আছে, যেন আমায় সে চেনেই না আশ্চর্য।
তাসফির পাশে বসা একটা ছেলেকে দেখে নিস্তব্ধ’র রাগটা আরো তরতর করে বেড়ে গেল।
কই এতদিন তো তার পাশে কোনো ছেলেকে বসতে দেখেনি। যেই ডিবোর্সের কথা বলল অমনি ছেলে ওও জুটিয়ে ফেলেছে সঙ্গে সঙ্গে। বাহ দারুন তো। নিস্তব্ধ কি এখন পরগাঁছা বনে গেল ?
নিস্তব্ধ ক্লাস শেষে তাসফিকে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠালো।
কিন্তু তাসফি গেল না।

পিয়ন কে বলে দিল তার কাজ আছে।দ্রুত বাড়ি ফিরতে হবে।
রাগে নিস্তব্ধ শরীর দিয়ে আগুন ঝলসাচ্ছে। কত্তবড় বেয়াদব সে ডেকে পাঠানোর পরে ও এলো না।
কতটা বাড় বেড়েছে তা সেও দেখে ছাড়বে।
আশা তাসফির পাশ থেকে ফিসফিস করে বলল,
-” কি চলছে বলতো? স্যার ডেকে পাঠালো আর তুই গেলি না কেন? কাহিনি কি মামা।”
তাসফি উল্টো ধমক মেরে বলল,
-“চুপ থাক পাঁখির বাসা। মন দিয়ে পড়াশোনা কর।”
আশা ভেঙচি কাটলো।
পরবর্তী ক্লাস শেষে মান্সারা একত্রিত হয়েছে।
বিয়া বলল,

-” কিরে কিছু ভাবলি? তাসফির কি ব্যবস্থা করবি? আজ তো এসেছে দেখলাম।”
মান্সা সয়তানির হেঁসে ওদের সবটা বুঝিয়ে দিলো।
বলল,
-” কাজ টা এখনি করা যাবে না বুঝলি।সময় বুঝে।ফাঁকা মাঠে গোল দিতে হবে বুঝলি তো। তোরা সবাই রেডি থাকিস।যার যার কাজ সে সে করবি।
তাসফি এবার তুই শেষ।আমাকে চর মেরেছিলি তাইনা। এবারে চরের শাস্তি ভোগ করবি।”
কি যে মজা হবে না।
সবগুলো সয়তানি হাসলো।

বাড়ি যাওয়ার আগ মুহুর্তে তাসফি, আশা, আরাধ্য আর সর্নিধি মাঠের এক কোনে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলো আর হাসাহাসি করছিলো।
দোতালার নিজের চেম্বারের জানালা দিয়ে নিস্তব্ধ তা স্পষ্ট অবলোকন করলো।
রাগের হাতের মুষ্ঠি শক্ত করলো আরো খানিক।
সে চায় তাসফি হাসুক। তবে এভাবে একটা ছেলের সঙ্গে ঢ’লে ঢ’লে মোটেও নয়।
ইচ্ছে হচ্ছে গিয়ে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে দিক ওই ছেলেটাকে।সব রেখে তার বউয়ের সাথেই কেন বন্ধুত্ব পাতাতে হবে।ক্লাসে আর মেয়ের কি অভাব পড়েছিল।

আরাধ্য,সর্নিধির আর আশা কথা শেষ করে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছে।
তাসফি ও যাওয়ার জন্য কেবলি পা বাড়িয়েছিল।কিন্তু মনে হলো পেছন থেকে কে যেন ডেকে উঠলো।
তাসফি পেছনে তাকিয়ে কাউকে খুঁজে পেল না।
অগত্যা তাসফি আবারো সমানে পা বাড়াতেই মনে হলো আবারো তার নাম ধরে কেউ ডেকে উঠলো।
কি অদ্ভুত এমন মনে হচ্ছে কেন তার। সে তো স্পষ্ট ডাকগুলো শুনতে পাচ্ছে তবে পেছনে তাকিয়ে কাউকে দেখছে না কেন সে।

কৌতূহল বশত তাসফি সে দিকে এগিয়ে গেল।
কয়েকপা এগোতেই তাসফি বুঝতে পারলে সে আধো আলো আধো অন্ধকার এমন একটি জায়গায় এসে পড়েছে।
চাদিরিকে শাঁই শাঁই করে অ্যাম্বুলেন্সের বহর সাজানো।
কেউ তার সঙ্গে ফাজলামো করলো না তো।
তাসফির এখন ভয় ভয়ই লাগছে।
এখানে তাকে কেউ গুম করে রাখলেও কেউ টের পাবে না।
হঠাৎ তার হাতটা কেউ হ্যাঁচকা টান দিলে তাসফি তাল সামলাতে না পেরে সামনে এগিয়ে গেল।
লোকটা তাকে দেওয়ালের সঙ্গে মিশিয়ে চেপে ধরলো।
আচমকা সব ঘটায় তাসফি ভয় পেয়ে গেল।
কৌতূহলী বুঝি তার কাল হলো।
তাসফির বুক ধরফর করছে।
সঙ্গে পরিচিত পারফিউমের মিশেল তার নাসারন্ধ্রে বারি খেল।
বিকেলের একটুকরো উষ্ণ রৌদ্র তার হাত চেপে ধরা লোকটার চোয়াল মুখাবয়ব হালকা কয়েক সেকেন্ডের জন্য দৃশ্যমান হলো।

নিস্তব্ধ’র শক্ত পোক্ত পরিচিত পুরুষালী মুখটা তার দৃষ্টিগোচর হতেই তাসফি যেন হালকা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
কি অদ্ভুত মেলবন্ধন। যার কাছে ডিভোর্স চাওয়ার জন্য আর্জি জানাচ্ছে তার কাছেই সে নিজেকে নিরাপদ মনে করছে।
নিস্তব্ধ তাসফির মুখের একদম কাছে নিজের নিজের মুখটা এনে থামালো। দুহাতে তার তাসফির হাত দুটো চেঁপে ধরা।
নিস্তব্ধ ‘র উষ্ণ নিঃশ্বাস তাসফির সমস্ত মুখমন্ডলের সঙ্গে সঙ্গে তার হৃদয়কেও এফোঁড়ওফোঁড় করে দিচ্ছে। নিস্তব্ধ’র স্পর্শে সে কেমন মিইয়ে যেতে চাইছে।
কিন্তু তাসফির এতে গলে গেলে হবে না তাকে আরো শক্ত থাকতে হবে।
নিস্তব্ধ তাসফির চোখে মুখে ফুঁ দিলো।
বাঁকা হেঁসে ফিসফিস করে বললো,

-” যে এখনো এই নিস্তব্ধ ইয়াসারের সামান্য স্পর্শে কপোকাত হয়ে যায়।আমার সামান্য কাছে আসায় সে মিইয়ে যায়।আর সে কিনা নিজে থেকে ডিভোর্সের কথা বলেছে তা কি বিশ্বাসযোগ্য বলুন ম্যাডাম? ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং না? যেমন যেঁচে পরে সিংহের গুহায় ঢুকে পড়া।”
কথা শেষ হতেই নিস্তব্ধ’র হাতের শীতল স্পর্শ তাসফি নিজের কোমরে পেল।হ্যাচকা টানে সে তাসফিকে আর একটু নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো।
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার অর্ধাঙ্গীনীর পানে।

তাসফি চোখ বন্ধ করে নিলো।তার সারা শরীর কেমন অজানা আশঙ্কায় শীর শীর করছে। নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করলো সে নিজের কন্ঠস্বরে কিছুটা তাচ্ছিল্য মিশিয়ে সে ও নিস্তব্ধ’র মতন ফিসফিস করে বলল,
-” কপোকাত হলেই তে সব শেষ নয় মিস্টার নিস্তব্ধ ইয়াসার। এই তাসফি যেমন মিইয়ে যেতে পারে।তেমনি করে তার ভেতরের তেজি রুপটাকে ও সঠিক সময় মতো প্রকাশ্যে আনতে পারে বুঝলেন তো ডাক্তার সাহেব।”
নিস্তব্ধ বাঁকা হেঁসে বলল,
-” তাই?”
তাসফির নিস্তব্ধকে অবাক করে দিয়ে তার ঘাড়ের উপর দিয়ে দুহাত নিয়ে আলতো জরিয়ে ধরার ভঙ্গিতে দাঁড়ালো। নিস্তব্ধ অবাক হলো।
তাসফির কোমড়ে থাকা তার হাতটের বাঁধন হালকা হলো।

তাসফি তাতে বাঁকা হাসলো নিস্তব্ধ’র কানের খুব সন্নিকটে মুখ নিয়ে একদম লো ভায়েসে ফিসফিস করে বলল,
-” আমি আপনার এই মেলবন্ধন থেকে মুক্ত চাই নিস্তব্ধ ইয়াসার। ডিভের্স চাই আমি। ডিভোর্স।বুঝলেন?
বলেই নিস্তব্ধ কে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিলো।
প্রস্থান করতে করতে তাসফি মুচকি হেঁসে বললো,

ধূসর রংধনু পর্ব ২৫

-” বলেছিলাম না এই তাসফি যেমন আপনার স্পর্শে মিইয়ে যেতে পারে।তেমনি সময় মতো তার তেজটাও দেখাতে পারে সে চাইলে। ডিভোর্স পেপারে সাইন করে সেটা সহিসালামতে আমায় পাঠিয়ে দেবেন ওকে। টাটা!”
নিস্তব্ধ কে বাকরুদ্ধ রেখে তাসফি গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল।
নিস্তব্ধ বাঁকা হেঁসে তাসফির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
ডিভোর্স লাগবে তাইনা? ডিভোর্স কাকে বলে সে আজন্মকালের মতো বোকা মেয়েটাকে বুঝিয়ে ছাড়বে।
প্রমিস!

ধূসর রংধনু পর্ব ২৭