তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৩৪
নওরিন মুনতাহা হিয়া
চৌধুরী কোম্পানির এমডির চেয়ারে বসে আছে ইভান, তার দৃষ্টি এখনো সামনে দিকে রয়েছে। শুধু সামনে তাকিয়ে থাকা মানুষকে দেখে যাচ্ছে, এতোদিন পর ইনায়াকে দেখে ইভানের কষ্ট হচ্ছে না আনন্দ হচ্ছে না সে বুঝতে পারে না। ইনায়া ও ইভানের দিকে অল্প সময় তাকিয়ে থাকে, এরপর চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। যার সাথে তার এখন কোনো সম্পর্ক নাই, তার জন্য মনে মায়া বাড়িয়ে লাভ নাই। ইনায়া শান্ত হয়ে এগিয়ে যায় ইভানের কাছে, ইভান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ইনায়া তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় এরপর শান্ত গলায় বলে –
“- হ্যালো মিস্টার ইভান চৌধুরী আমি ইনায়া।
ইনায়ার কথা শুনে ইভান মৃদু হাসে, ইভান বলে –
“- হ্যালো আমি ইভান চৌধুরী। চৌধুরী গ্রুপের এমডি, আপনার সাথে অনেক দিন পর দেখা হয়ে ভালো লাগছে “।
ইভানের কথা কেমন যানি অদ্ভুত শুনালো ইনায়ার কাছে, বিয়ের আগে তার সাথে এতো শান্ত, ভদ্র, আর বিনয়ের সাথে কখনো কথা বলে নাই ইভান। ইভানের চোখ মুখ আর চেহারায় সেই রাগী আর রগচটা ভাব নেই, মনে হয় কত রাগ সে নির্ঘুম রাএী কাটিয়ে দিয়েছে তার কোনো হিসাব নাই।ইনায়ার মায়া হয় ইভানের প্রতি, তবে বৃথা মায় বা কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাই নাই। ইনায়া হাসি মুখে বলে –
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“- চলুন মিটিং শুরু করা যাক “।
মিটিং শুরু হয়ে যায় চৌধুরী গ্রুপের অনেক মেম্বার সেখানে উপস্থিত হয়, যার মধ্যে প্রভা ও রয়েছে। প্রভা ইভানের পিএ তার সাথে সবসময় থাকবে, প্রভা কোম্পানির ফাইল বের করে কথা বলা শুরু করে দেয়। ইনায়া সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শুনে যাচ্ছে, যদিও ইভান মিটিংয়ে পূর্ণ মনোযোগ রাখতে পারে না। কারণ তার চোখ হাজার বার শুধু ইনায়ার দিকে চলে যাচ্ছে, ইদানীং বড্ড অতিরিক্ত ইনায়াকে মিস করছে সে। ইনায়া নিজের কাজের মধ্যে তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আসে না, আর তার এখন আগের মতো ইভানকে দেখার ইচ্ছা করে না।
মনের ভিতরে ইভানের জন্য ভালোবাসা বা মায়া হয়েছে, তবে সেটা তার হৃদয়ের এক কোণে তার সমগ্র হৃদয় জুড়ে শুধু অরণ্যর অবস্থান।
নিজের অতীত প্রতিটা নারী ভুলে যেতে চাই,কিন্তু তা হয়তো সম্ভব হয় না। তবে বর্তমান জীবন স্বামী সংসার সব মিলিয়ে হয়তো তার মনে প্রিয় মানুষের থাকা সৃতির উপর ধুলো পড়ে যায। মাঝে মধ্যে রাতের আঁধারে তা মনে পড়ে, আবার সকাল হলে দৈনন্দিন জীবনে সকল মায়ায় তা ভুলে যায়। হয়তো ইনাযার সাথে তাই হয়েছে, আগের মতো ইভানের জন্য তার মনে এখন অনুভূতি জাগে না, রাতের শেষ প্রহরে তার জন্য আর সে চিঠি লিখে না। ইভানের জন্য যত্ন করে আগলে রাখা সকল চিঠি এখন শুধু চিলেকোঠায় ঠাঁই পেয়েছে।
মিটিংয়ে মধ্যে হঠাৎ করে ইনায়ার চোখ যায় ইভানের দিকে, দেখ ইভান এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ইনায়া নিজের চোখ সরিয়ে নেয়, সে আর মিথ্যা মায়া বা ভালোবাসায় নিজেকে জড়াতে চাই না। ইনায়া কাজের উপর মনোযোগ দেয়, প্রভা তার কথার মধ্যে ইভানকে দেখে। ইভানের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখে, সে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। প্রভা বুকটা কেমন যানি মোচড় দিয়ে উঠে, তার মনে একটা কথা হাজার বার সহস্র বার শুনা যাচ্ছে ইভান কি তবে ইনায়াকে ভালোবাসে?
প্রায় এক ঘণ্টা পর মিটিং শেষ হয় ইনায়া আর ইভানের মধ্যে চুক্তি হয়, কোম্পানির ব্যন্ডর হয়ে কাজ করবে। মিটিং শেষ করে সকলে অফিস রুম থেকে বের হয়ে যায়, শুধু ইনায়া, ইভান,প্রভা সেখানে উপস্থিত রয়েছে। প্রভা প্রথম আজ ইনায়াকে দেখছে, অরুণা বেগমের মুখে আগে ইনায়ার কথা অনেক শুনেছে কিন্তু কখনো দেখা হয় না। প্রভা এগিয়ে যায় ইনায়ার কাছে আর বলে –
‘- হাই ইনায়া আমি অরুণা আন্টির বন্ধুর মেয়ে প্রভা “।
প্রভা ইনায়ার সাথে কথা বলে, অরুণা বেগমের বন্ধুর কথা যানে ইনায়া। অন্যদিকে ইভান দূর থেকে শুধু দেখ যাচ্ছে ইনায়াকে, প্রভা সামনে থাকায় তার সাথে কথা বলতে পারছে না। প্রভা ইনায়ার সাথে কথা বলার মধ্যে ইভানের দিকে তাকিয়ে দেখে, ইভানের অস্থিরতা সে বুঝতে পারে। অফিসের কাজের ওযুহাত দিয়ে প্রভা রুমে থেকে বের হয়ে যায়, ইভান এগিয়ে আসে ইনায়ার কাছে। ইনায়ার সামনে এসে দাঁড়ায় আর বলে –
‘- কেমন আছো ইনায়া? নিশ্চয়ই খুব ভালো “।
ইভানের কথা শুনে ইনায়ার হাসি পায়, ইনায়া বলে –
“- খারাপ থাকার কথাও না। আর আপনার আর আমার দুইজনের ভালো থাকার জন্য তালাক আর নতুন করে বিয়ে হয়েছে তাই না “।
ইনায়ার কথা শুনে ইভান মৃদু আত্মর্নাথের স্বরে বলে –
“- অবশ্যই। তবে কি যানো ইনায়া তোমাকে বিয়ে দিয়ে আমি ভালো নেই? কষ্ট হয় তোমাকে ছাড়া আমার? তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে প্রতি রাত কান্না করি, তোমাকে একবার দেখার কামনা কি। তবে কি তোমাকে ভালোবাসি আমি ইনায়া?
ইভানের মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনে ইনায়া চমকে যায়, ইভান তাকে ভালোবাসে, তার জন্য কান্না করে? হয়তো আগের সময় হলে ইভানের ভালোবাসি কথা শুনে ইনায়া খুশি হয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে ইনায়ার মনে শুধু একটু ভালোলাগা কাজ করে এ ছাড়া আর কিছু নয়। ইনায়া বলে –
“- কিন্তু এখন তো আপনার প্রতি আমার সকল অনুভূতি মারা গেছে ইভান ভাই। এই দেখেন আপনার মুখে ভালোবাসি কথা শুনে, আমার কিছুই যায় আসছে না। আপনার কষ্টের অনুভূতি আমার কাছে শুধু মাএ কিছু কথা, তবে কি আমি অরণ্যকে ভালোবেসে ফেলেছি ইভান ভাই?
অন্যদিকে অরণ্যর লোক তার কাজ করছে, রূপনগর গ্রামে শাফায়াতের মৃত্যুর তদন্ত করতে যাওয়ার কথাটা আসল অপরাধী কাছে পৌঁছে দিয়েছে। যদি ও ইনায়ার প্রতিটা গতিবিধির উপর তার নজর রয়েছে, সে শুধু চুপ করে রয়েছে তার পরিকল্পনা সফল করার জন্য। একজন লোক ফোন করে অপর পাশে কেউ রিসিভ করে –
“- হুম বলো “।
“- ম্যাম ইনায়া কিন্তু রূপনগর গ্রামে গিয়ে সবকিছু জানার চেষ্টা করেছে, ও যদি একবার এসএস কোম্পানির আসল খুনির বিষয়ে যেনে যায় তাহলে কিন্তু সব শেষ হয়ে যাবে?
লোকের কথা শুনে অপরিচিত মহিলার কণ্ঠে হাসির শব্দ শুনা যায়, অপর পাশেন মহিলা বলে –
“- ইনায়া আমার শএু নয় আবার বন্ধু ও নয়। ইনায়া শুধু দানের একটা গুটি আসল খেলা খেলছে অরণ্য রাজ চৌধুরী। অরণ্য যতদিন রয়েছে ততদিন ইনায়ার কোনো ধরণের ক্ষতি করা সম্ভব নয়, আর অরণ্য আমাকে ও খুন করবে না। ওকে রাস্তা থেকে সরাতে হবে?
তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৩৩
“- কিন্তু ম্যাম অরণ্য রাজ চৌধুরী কে কি খুন করা সম্ভব?
“- সম্ভব নয় আবার অসম্ভব নয়।