ধূসর রংধনু পর্ব ৩১
মাহিরা ইসলাম
কলেজের পরিবেশ আজ ভীষন গরম।
তারই ইঙ্গিত পেয়েই গেট দিয়ে সকল শিক্ষার্থী প্রতিদিনের নয় হুলস্থুল বাঁধিয়ে ঢোকার সাহস পাচ্ছে না।চুপচাপ স্বল্প কদমে হেঁটে যাচ্ছে।
আজ বোধহয় ক্লাস হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
চারপাশে সকলের চুপি চুপি ফিসফাস ধ্বনি।
এগারোটায় মিটিং ডাকা হয়েছে। কলেজের অধ্যয়নরত সকল শিক্ষক কেই সেখানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কারো কারো মুখ থেকে মিটিংয়ের কারণ টুকরো টুকরো বের হয়ে আসছে।
কেউ বলছে।কাল নাকি মর্গে এক শিক্ষার্থী কে হাত, পা মুখ বেঁধে আটকে রাখা হয়েছিল।
বেঁধে রাখা হয়েছিল তাও আবার কোথায়? মর্গে।
সেটা শুনেই সব শিক্ষার্থী শিউরে উঠছে।
মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য মর্গ একটি আতঙ্কের স্থান।
আর সেখানেই কিনা কাউকে বেঁধে রাখা হয়েছিল।তাও অর্ধ রাত পর্যন্ত সেই শিক্ষার্থী ছিল সেখানে।আদ্যত্বেও সেই শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে তো।সকলের মনেই তখন প্রবল সঙ্কা। আতঙ্কে সবাই হাঁস ফাঁস করছে।
কেউ বলছে কাকে আটকে রাখা হয়েছিল বলো তো সে ছেলে নাকি মেয়ে।
কেউ বলছে মেয়ে তো কেউ বলছে ছেলে।
কেউ বলছে সে কোথায় আছে এখন।
আবার কেউ বলছে হসপিটালেই ভর্তি।
সর্বপরি সবাই ভীষণ কনফিউশানে ভুগছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আর যারা এই কাজ করেছে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে খুঁজে বের করে করে।তাই তারা আরো আতঙ্কে আছে।
কেউ বলছে এই চলনা দেখে আসি মেয়েটা কে হতে পারেন। কি শত্রুটা ছিল তার সাথে কারো।
মানে তাসফিকে আটকে রাখার খবর দাবানলের মতো পুরো কলেজে সকলের নিকট পৌঁছে গিয়েছে।
অনেকের আবার দারওয়ানের কাছে থেকে জানতে পেরেছে নিস্তব্ধ নাকি নিজে সারাটাক্ষন পাগলের মতো এদিক থেকে ওদিক খুঁজে খুঁজে তবে বের করেছে।
ডাঃনিস্তব্ধ ইয়াসার নাকি বলেছে মেয়েটাকে না পাওয়া তার জীবন মরনের প্রশ্ন।
তা শুনে শিক্ষার্থীরা আরো কৌতুহলী হয়ে উঠছে।
যে তাদের এমন একজন ইন্টোভার্ট, এটিটিউড ওয়ালা গম্ভীর স্যারের একজন মেয়ের জন্য জীবন মরণের প্রশ্ন।ভীষণ আশ্চর্যজনক কথা বার্তা।
ঘটনা কি আসলেই সত্য? কতটুকু সত্য।
আর সত্য হলে কেই বা সেই সৌভাগ্যবতী রমণী।যার জন্য তাদের গম্ভীর স্যার পাগলপাড়া হয়ে গিয়েছিল।
সবাই মেয়ে টাকে দেখার জন্য উৎসুক হয়ে আছে।
কেউ কেউ তো সাহস করে দেখতেও গিয়েছিল। কিন্তু নার্স কিছুতেই ঢুকতেই দেয় নি।
কলেজের সবার মাঝে তখন আতঙ্ক, উৎকন্ঠা, উত্তেজনা,জেলাসি,হিংসা,ভয় সকল অনুভুতি মিলেমিশে একাকার। তাই তারা কোনটা প্রকাশ করবে, করবে না সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।
আজ ওই মেয়েকে আঁটকে রেখেছি। কাল যদি তাদের মধ্যে তেকে কাউকে একি ভাবে আঁটকে রেখে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায় তখন কি হবে।
সব চেয়ে বেশি সকলের মনে এই ভয়টাই কাজ করছে।কারণ এরকম কাজ আগে কেউ ঘটায় নি।তাই তো সকলের মনে উত্তেজনা টা একটু বেশি।
এগারোটার মিটিং কি হয় তারা জানতে উদগ্রীভ হয়ে আছে।
মাছের কাটা গলার মাঝে তাদের হাঁসফাঁস করছে।
নিস্তব্ধ স্যার নাকি বলেছেন কলেজের ভেতরের কারোরই এই কাজ।আজ কলেজে যারা আসবে কেউ যেন বাহিরে না যায়।সকলকে থাকতে বলেছে।
গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কি এক অসহ্য যন্ত্রণা।
আশা,আরাধ্য, সর্নিধি কলেজে এসে এসব শুনতেই আতঙ্কে আটখানা হয়ে আছে তারা।
কেউ না জানলেও তারা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে এটা তাদের প্রাণপ্রিয় বান্ধবী তাসফি ব্যতীত আর কেউ হতেই পারে না। কারণ কাল সন্ধ্যা থেকেই তাসফির হদিস পাওয়া যাচ্ছিলো না।
ওরা দৌঁড়ে গেল নিজেদের প্রাণ প্রিয় বান্ধবীর দর্শন পেতে।
যদিও তারা শুনেছে কাউকে কেবিনে এলাও করছে না। তবুও চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি।
ওরা তিনজন তাসফির কেবিনের সামনে এসে নার্সকে অনুরোধ করছে ভেতরে ঢুকতে দিতে বলেছে তারা ওর কাছের মানুষ।কিন্তু এপ্রোন পড়া দেখে ওদের শিক্ষার্থী ভেবে কিছুতেই ঢুকতে দিচ্ছে না।
আসলে সকালে নিস্তব্ধকে যখন সবাই বলল তাসফি বাড়ি চলে গিয়েছে। সবাই তাকে মিথ্যা কথা বলেছিল। তাসফি ওয়াশরুমে গিয়েছিল। নিস্তব্ধকে বাজিয়ে দেখতে তারই ফায়দা লুটেছিল সকলে।
নিস্তব্ধ সব বুঝতে পেরে তখন রাগে কটমট করতে করতে নিজের চেম্বারে ফেরত এসেছিল।
নিস্তব্ধ তখনই তাসফির কি অবস্থা দেখতে এসেছিল।
নিস্তকে দেখতে পেয়ে তিন জন একটু আশার আলো দেখলো।নার্সগুলো বড্ড বেয়াদব।তারা কি আর মিথ্যা কথা বলছে নাকি।ওরা জানে না নিস্তব্ধ স্যার তাদের কথা মানবে কি না।তবুও বলে দেখতে সমস্যা কোথায়।ওরা তিনজন ভয়ে ভয়ে নিস্তব্ধ কে বলল,
-” স্যার আমরা কি একটু ভিক্টিম অর্থাৎ তাসফির সঙ্গে একটু দেখা করতে পারি। ”
আশা অনুরোধ করে বলল,
-” স্যার আপনি তো জানেন আমি ওর বান্ধবী। প্লিজ স্যার?”
নিস্তব্ধ ওদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
অতঃপর বিরক্ত মুখভঙ্গি করে বলল,
-“যাও, তবে বেশি সময় নয়।”
আশা আর সর্নিধি ভেতরে ঢুকে গেল।
আরাধ্য ঢুকতে গেলে নিস্তব্ধ বাঁধা দিয়ে তাকে ধমক দিয়ে বলল,
-” এই ছেলে তুমি কোথায় যাচ্ছো?”
আরাধ্য আমতা আমতা করে বলল,
-” কেন স্যার ভেতরে। ”
নিস্তব্ধ বলল,
-” না তোমাকে যেতে দেওয়া যাবে না। যাও ক্লাসে যাও। গো।”
অতঃপর নিস্তব্ধ কেবিনের ভেতরে ঢুকে গেল।
আরাধ্য হতভম্ব হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো।
সে বুঝতে পারলো না স্যার ওদের ঢুকতে দিলো অথচ তাকে কেন ঢুকতে দিলো না।
সেও তো তাসফির বন্ধু নাকি।
আশ্চর্য।
আশা আর সর্নিধি ভেতরে ঢুকেই তাসফি কে জরিয়ে ধরলো।
কিছু টুকটাক কথা বার্তা বলে ওরা জিজ্ঞেস করলো তুই কাউকে দেখিস নি কে তোকে আটকে রাখলো।
তাসফি না বোধক মাথা নাড়লো।
বলল, ” আমাকে পেছন থেকে চোখ বন্ধ করে ধরে ছিল। দেখতে পাইনি।”
নিস্তব্ধ এবারে আশা আর সর্নিধির উদ্দেশ্যে বলল,
-” হয়েছে।এবারে তোমরা আসতে পারো।”
কি আর করার স্যারের আদেশ ওরা মেনে নিয়ে বেরিয়ে গেল।
তবে যাওয়ার আগে আশা আড় চোখে নিস্তব্ধ স্যারের দিকে সন্দেহের দৃষ্টি দিয়ে দেখলো।
বাইরে নিস্তব্ধকে নিয়ে বলা গুঞ্জন গুলো সেও শুনেছে।তবে তা কতটুকু সত্য কিংবা মিথ্যা তার ওও
জানা নেই।
নিস্তব্ধ সামনে থাকায় এসব ব্যাপারে সে তো তাসফিকে চেঁপে ধরে কিছু জিজ্ঞেস ওও করতে পারলোনা।তারও স্যার কে নিয়ে একটু সন্দেহ হয়।তাসফির প্রতি প্রজেসিভনেশ একটু বেশীয় সন্দেহজনক।সে খুব করে খেয়াল করেছে।
অতঃপর আশা ও তাদের দিকে চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে বেরিয়ে গেল।
তাসফি চুপচাপ ওদের গমন দেখলো। টু শব্দটি করলো না।
নিস্তব্ধ এবারে ওখান থেকে একটা বেঞ্চ টেনে বসলো পায়ের উপর পা দিয়ে সাহেবের মতন।
তাসফি আড় চোখে তা দেখে মনে মনে ঢঙের আক্ষায়িত দিয়ে দিল।
নিস্তব্ধ তাসফিকে সিরিয়াস মুখ করে বলল,
-” মিসেস নিস্তব্ধ ইয়াসার আপনাকে এখন কিছু প্রশ্ন করা হবে। ঠিকঠাক উত্তর দিবেন ওকে।”
তাসফি জবাব দিলো না।
নিস্তব্ধ তা পাত্তা না দিয়ে গম্ভীর স্বরে সুধালো,
-” মিসেস নিস্তব্ধ ইয়াসার,আপনি কি জানেন আপনাকে কে উদ্ধার করেছে?”
তাসফি নির্লিপ্ত স্বরে জবাব দিলো,
-“জ্বী। ”
-” তাদের নাম বলুন।”
তাসফি এবারেও নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,
-” সুজন এবং মাহীন।”
নিস্তব্ধ বুঝলো তাকে ইচ্ছে করে রাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবুও সে শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
-” আপনি কি জানেন না আপনাকে দুজন নয় বরং তিনজন মিলে উদ্ধার করা হয়েছে?”
তাসফি আশ্চর্য হওয়ার ভঙ্গিমা করে বলল,
-” নাহ।”
-” ওকে ফাইন।নিস্তব্ধ ধৈর্য আবার প্রশ্ন করলো,
“মিসেস নিস্তব্ধ ইয়াসার আপনি কি বলতে পারবেন আপনাকে কারা অ্যাটাক করেছিল? তাদের দেখে ছিলেন বা উপলব্ধি করেছিলেন?”
তাসফি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে স্বরে বলল,
-” জানিনা।”
-” তার মানে আপনি বলতে চাইছেন আপনাকে যারা আঁটকে রেখেছিলো। তাদের কাউকে আপনি দেখেননি। আর কারা এমনটা করতে পারে তাও জানেন না বা বলতে পারবেন না। তাই তো। কি অদ্ভুত ব্যাপার,সামান্য মুখ চেপে ধরায় আপনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন।এই টুকু খরগোশের জানের সাহস নিয়ে চলাফেরা করেন।আবার নিজের সর্বেসর্বা বলে দাবী করেন।বাহ ইন্টারেস্টিং।
“দেখুন আপনি কিন্তু এবারে বেশি বেশি করছেন।”
“বিয়ের পরদিন থেকে তো দেখেই আসছি শুধু। থামাথামির তো নাম গন্ধ ওও নেই। না তো আর করছেন না দেখতে । মাই গুড লাক বাট ইউর’স ব্যাডলাক।”
তাসফি অবাক চোখে চেয়ে রইলো। কিসের কথা বলছে লোকটা।আশ্চর্য!
“মিসেস নিস্তব্ধ ইয়াসার..
নিস্তব্ধ কে থামিয়ে দিয়ে তাসফি এবারে শোয়া থেকে উঠে বসে বিরক্তির স্বরে বলল,
-” এই আপনি কথায় নিজের নামের সঙ্গে আমার নাম টা জুড়ে দেবেন না তো।শুনতে না যাস্ট অসহ্য লাগে।বিরক্তিকর।”
নিস্তব্ধ ভাবলেশহীন কন্ঠে বলল,
-“কিন্তু নাম তো অলরেডি জোড়াই আছে। এটাকে কাটছাট করার তো কোনো ওয়ে নেই মিসেস নিস্তব্ধ ইয়াসার। ”
তাসফি নিস্তব্ধ’র চোখে চোখ রেখে রাগি স্বরে বলল,
-” কিন্তু মিস্টার নিস্তব্ধ তা আর জোড়া থাকবে না। অলরেজি ক্লোজ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সো প্লিজ এই মিসেস নিস্তব্ধ ইয়াসার নামটা না আমার সামনে অন্তত উচ্চারণ করবেন না।আমার গলায় না কাঁটার মতো বাঁধে বুঝলেন।লজ্জা লাগে আমার শুনতে।
নিস্তব্ধ বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ালো। মুহুর্তেই তাসফি কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বসালো।
কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বাঁকা হেঁসে বলল,
-” কিন্তু এই নামের গোটা ব্যক্তিটাকেই তো জ্ঞান হারানোর আগে ভালোবাসার কথা বলে ছিলেন।
তখন অসহ্য লাগে নি।তখন লজ্জা লাগে নি।
এই গোটা নামের মানুষটাকেই যখন আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরেছিলেন তখন লজ্জা লাগে নি মিসেস নিস্তব্ধ ইয়াসার হুম?”
তাসফি ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” আমি কখনো এরকম কিছু বলিনি।”
-” বলেছেন।”
-” বলিনি।”
-” বলেছেন। ”
-” বললাম তো বলিনি।তাই লজ্জা লাগার প্রশ্ন ওও আসেনা।”
-” ওকে। আপনি মানবেন না?ফাইন! মানতে হবে না আমিই মানিয়ে নেব। সঙ্গে নিজের সব টুকু অধিকার ও পুষিয়ে নেন। মাথায় রাখবেন। আজ হসপিটাল থেকে নড়বেন না। আমি এসে যেন আপনাকে আজ রাতে হসপিটালেই দেখতে পাই।এন্ড দ্যাটস মাই ওয়ার্নিং। ”
তাসফি শুষ্ক ঢোক গিললো।
-” কি ব্যাপার বলুন তো।মিসেস নিস্তব্ধ এত ঘামছে কেন? এনি প্রবলেম মিসেস। ”
তাসফি মনে মনে বলল,
প্রবলেম তো বিরাট প্রবলেম।
সে আর যদি আপনাকে বলা যেত।সত্যি এমন কিছু বলে ফেলেনিতো সে।নিজের মন কে তার নিজেরি বিশ্বাস হয় না। আর কিসের অধিকার পুষিয়ে নেবে লোকটা।
নিস্তব্ধ দরজা পর্যন্ত গিয়েও আবার ফিরে এলো।
বাঁকা হাসলো। মুহুর্তে মাঝে তাসফির কোমর আঁকড়ে ধরলো। আঙুলের সাহায্যে কিছুটা চাপ ও প্রয়োগ করলো উক্ত স্থানে।
তাসফি কিছুটা আর্তনাদ করে উঠলো।
নিস্তব্ধ কিছুটা থেমে টেনে টেনে বলল,
“বাই দ্যা ওয়ে, ম্যাডাম ‘ইউ’র ফি*গার ইজ সো হ*ট,সফট এন্ড এ্যাটাক্টিভ।
আই লাইক ইট সো ব্যাডলি।”
তাসফি চোখ বড় বড় করে ফেলল।
“ছিঃ!”
নিস্তব্ধ তৎক্ষণাৎ তাসফির কানের লতিতে কামড় বসালো,
হালকা ব্যাথায় উফফ শব্দ করে উঠলো তাসফি।
নিস্তব্ধ তাতে ফিসফিস করে বলল,
-” ব্যাড সাউন্ড। বাট আই ডোন্ট রিয়েলি ডু এনিথিং। ”
নিস্তব্ধ পুনরায় একি কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটালো।
তাসফির প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হলো।
তাসফি অহংকারী পুরুষটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলো।এই লোকের অহংকারে একটুকরো ভাঁটা পরে নি এতদিনে।
কিন্তু নিস্তব্ধ তার আগে তাকে ছেড়ে দিলো।
অতঃপর কৌতুক করে বলল,
-” বলেছিলাম সবসময় আপনার এই একই টেকনিক কাজে লাগবেনা।কাম’অন, অ্যাপলায় দ্যা নিউ মেথড।”
তাসফিকে হতভম্ব করে রেখে নিস্তব্ধ তস্থ কদমে কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
পালাতে হবে তোকে তাসফি।
আর এক মুহুর্ত ও এই সিংহের গুহায় থাকার ইচ্ছে নেই তার।
তার অভদ্র ডাক্তার সাহেবের অসভ্য কতাবার্তার সঙ্গে নিরব হুমকিতে শিহরনের সঙ্গে তার গলা শুকিয়ে মরুভূমির ন্যায় কাঠ কাঠ হয়ে গেছে।
পাশের টেবিলে থাকা পানি গ্লাস উঠিয়ে ঢকঢক করে পান করে এক নিমিষে পুরোটুকু সাবার করে দিলো।
বাসন্তী এলো তখন কেবিনের রুম ঠেলে।
সকালেই সবাই ওসমান ভিলায় চলে গিয়েছিল।
বাসন্তী ফ্রেস হয়ে আবার আসলো। মেয়েটার শরীর দুর্বল।তাই তো আজ দিনটা হসপিটালেই কাটাতে।
তাসফিকে এতটা অস্থির দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“কি ব্যাপার তাসফি এতটা ঘাবড়ে গিয়েছিস কেন? কোনো সমস্যা। ”
তাসফি বাসন্তী কে টেনে নিজের কাছে বসিয়ে বলল,
-” একটু সাহায্য করো না আমার মিষ্টি আপাই।”
-” কি সাহায্য। আর কলেজের পরিবেশ কখন ঠান্ডা হবে বলতো।”
তাসফি দ্রুততার সহিত বলল,।
-” জানিনা।শুনো আমি বের হবো।বাড়িতে যাবো।”
বাসন্তী অবাক স্বরে বলল,
-” সে কি তোর শরীর তো দুর্বল। স্যালাইন আরেকটা দেওয়া হবে।”
-” রাখো তো তোমার স্যালাইন। বাড়ি গিয়ে ভাত আর, আপেল, মালটা, কমলা, আনার খেয়ে নেব।সুস্থ হয়ে যাবো।শুনো আমি বের হবো আড়ালে বুঝেছো? তোনার দ্বায়িত্ব শুধু তোমার ভাই যেন রাতের আগে টের না পায় আমি কেবিনে নেই।
কিভাবে সামলাবে আমি জানিনা।”
তাসফি উঠতে উঠতে বলল,
ধূসর রংধনু পর্ব ৩০
-” আমি গেলাম।টাটা।”
বাসন্তী কিছু বলবে তার ওও সুযোগ পেল না। মেয়েটা এত দুরন্ত হলে কেমন করে।
এখন তাকপই তার ভাইকে সামলাতে হবে।
কেন যে বড় হতে গিয়েছিল।সব দ্বায়িত্ব তার কাঁধেই এসে পড়ে।উফফ!