ধূসর রংধনু পর্ব ৩৫

ধূসর রংধনু পর্ব ৩৫
মাহিরা ইসলাম

ওপর পাশ দিয়ে নিস্তব্ধ এসে বসলো ড্রাইভিং সিটে।
তাসফি দরজা ধাক্কাতে লাগলো।
নিস্তব্ধ কৌতুক করে বলল,
-“বোকার মতো করবেন না মিসেস। ওটা লক করা। আপনার ওই পিঁপড়ের মতো শক্তির ধাক্কায় তা মোটেও খুলবেনা।”
নিস্তব্ধ এগিয়ে এসে তাসফি সিট বেল্ট বেঁধে দিলো।
কর্ণে ফিসফিস করে বলল,

-” বেস অফ লাক মিসেস ইয়াসার। ”
বলতে দেরী ক্ষণমুহুর্তে তাসফির কোমল গালে নিজের পুরু ঠোঁট দ্বারা সেকেন্ড চুমু খেতে দেরী নেই।
তাসফি চোখ বড় বড় করে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো।
বিরবির করে বলল,
-” অসভ্য পুরুষ মানুষ। ”
নিস্তব্ধ বাঁকা হেঁসে গাড়ি স্টার্ট করলো।
উত্তর করলো,
-“আপনার।”
মুহুর্তেই তুমুল গতিতে গেট পার হয়ে গেল গাড়িটি। নিজের স্থান করে নিলো মসৃন রাস্তার ভাঁজে।
সন্ধ্যার পরে ড্রয়িংরুমে আজ আড্ডার আসরে নিলয় সাহেব নিজের ছোট ছেলের দেখা না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” কি ব্যাপার? লাট সাহেবের ব্যাটা আজ বাসায় ফেরেন নি?”
অনিমা বেগম কৌতুক করে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” হ্যাঁ তাই তো, বাপ লাট সাহেব। তার ব্যাটা তো লাট সাহেব হবেই।আপনার গুনধর ব্যাটা আসলে তো তাকে দেখতেই পেতেন। ”
নিলয় সাহেব মুখ কাচুমাচু করলেন।গিন্নি তার ভুল ধরতে ওস্তাদ।
-” আহাঃ। ত্যাড়া কথা না বলে সোজা কথা বলো না।”
আয়েশা মুচকি হেঁসে বলল,
-” বাবা দেয়রজি আজ আসেন নি।”
-” কেন আসেনি?”
অনিমা বেগম কথার মাঝে ফোড়ন কেটে বলল,
-” মাসের পর মাস থাকেন তো বাড়ির বাহিরে।বাড়িতে থাকেন চার সপ্তাহের এক সপ্তাহ। এই কটা দিন নাহয় ছেলের খোজ টা নিজেই নিয়ে নেবেন।তাছাড়া আপনার ছেলে তো আমাদের বলে যায় সে আজ কেন আসেনি,আসবেনা, আসবে।”
আয়েশা বলল,

“আসলে বাবা হয়েছে কি।নিস্তব্ধ বলল আজ বাসায় আসবে না। কোথাও।”
অনিমা বেগম তাকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল,
-” তুমি চুপ থাকো।নিজের ছেলের খোঁজ নিজে নিয়ে নেক সে।”
বাসন্তীর হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো।
সে বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে আড়ালে গিয়ে মাহীনের কল রিসিভ করলো।
-” হ্যাঁ বলো।”
মাহীন নিঃশব্দে হেঁসে মাদকীয় স্বরে সূধালো,
-” কেমন আছেন বাসন্তী সুন্দরী?”
বাসন্তী চোখ বন্ধু করে নিলো
ছেলেটার কন্ঠ কেমন নেশা ধরানো।
অদ্ভুত টান টের পায় সে মাহীনের প্রত্যেকটা কথার ভাজে।
-” আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?”
মাহীন স্বাভাবিক স্বরেই উত্তর করলো,

-” আপনার কল রিসিভের অপেক্ষা করছিলাম। তো কি করছিলেন?”
ছেলেটার কন্ঠ স্বাভাবিক। তবুও বাসন্তী প্রত্যেক কথার ভাঁজে অদ্ভুত মায়া খুঁজে পায়। যেন সেই মায়াজাল তাকে আবদ্ধ করতেই সৃষ্টি করা।
বাসন্তী বলল,
-” ড্রয়িংরুমে বসে ছিলাম। ভাই আজ বাসায় থাকবেনা।এমনটা খুব কমই হয়।ওও হ্যাঁ ভালো কথা। ভাই কি আপনাদের সঙ্গে থাকবে নাকি?”
মাহীন ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” কই না তো।এমন তো কোনো কথা আমাদের সঙ্গে হয় নি।”
বাসন্তী চিন্তিত কন্ঠে বলল,
-” তাহলে কই যেতে পারে।”

ড্রয়িংরুমের পরিবেশ গরম বুঝতে পেরে বাসন্তী মাহীনকে বলল,
-” আচ্ছা তোমার সঙ্গে পরে কথা বলছি রাখছি।”
মাহীন তারাহুরো করে বলল,
-” আমি অপেক্ষায় থাকবো কিন্তু বাসন্তী। ”
-” কিসের?”
-” আপনার কলের।”
বাসন্তী ঠাস করে কলটা কেটে দিলো।
এপাশ থেকে মাহীন নিঃশব্দে হাঁসলো
বাসন্তী ড্রয়িংরুমের থমথমে পরিবেশ দেখে জিজ্ঞেস করলো,
-” কি হয়েছে মা। তুমি চিল্লাচ্ছ কেন?
অনিমা বেগম রাগে চিরবিরিয়ে বললেন,
-” আমিও তো সেটাই জিজ্ঞেস করছি তোর বাপ কে।কি হয়েছে? আমাদের টেনশনে না ফেলে বলতে বল।”
বাসন্তী নিলয় সাহেবের হতভম্ব মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

-” কি হয়েছে বাবা। বলছো না কেন, মা কি বলছে?
নিলয় সাহেব ফোন টেবিলে রেখে অনিমা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“নিস্তব্ধ’র ফার্মহাউস থেকে দারওয়ান ফোন দিয়েছিল।”
অনিমা বেগম দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-” তো কি হয়েছে। আসল কথাটা বলো না।”
নিলয় সাহেব রাগে কটমট করে বলল,
-” তোমার গুনধর পুত্র নাকি আজ একটু আগে একটা মেয়েকে জোড় করে তার ফার্মহাউজের ভেতরে নিয়েছে। তবুও কোলে করে।”
ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সবাই চোখ বড় বড় করে ফেলল।
আয়েশা ভ্রু কুঁচকালো।
মুহুর্তেই কিছু মনে হতে শ্বশুড়ি আর ননদের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” মা আজ তাসফি ওও বাড়িতে তাকবেনা। কোন বান্ধবীর বাসায় নাকি থাকবে।ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন তো? আবার দেয়র সাহেব কোনো মেয়েকে জোড় করে তার ফার্মহাউজে নিয়েছে।মা, আপা সমীকরণ টা মেলাতে পারছেন তো?”

অনিমা বেগম আর বাসন্তী বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে বলল,
-” তুমি ঠিক বলছো তো?”
আয়েশা মাথা নাড়ালো।
নিলয় সাহেব রেগে বললেন,
-” কিসের সমীকরণ মেলানোর কথা বলছো তোমরা। অনিমা তুমি ভাবতে পারছো। আমাদের বিবাহিত ছেলে তারওপর ডিভোর্স পেপার ছিড়ে এখন ফার্মহাউজে গিয়েছে মেয়ে নিয়ে।ছেলের কতটা অধপতন হয়েছে তুমি ভাবতে পারছো?অনিমা আমাদের ছেলে।
খুব তো বলতে ছেলে তোমার মতো অধৈর্য্য নয়। কোথায় গেল এখন তোমার সেই নীতি বাক্য।
কিন্তু আমি তো বউমাকে ঠকাতে দেব না। আমি এখনি যাবো ওর কান ধরে টেনে আনতে।”
অনিমা বেগম বিরক্তি নিয়ে বলল,

-” কি শুরু করলে।ছেলে আর তার বউয়ের মাঝে তুমি ব্যাগড়া দিতে যাচ্ছো কোন সাহসে। সব যায়গায় জামেলা বাঁধাবে তো দেখছি এই লোক।
আর কেমন দারওয়ান রেখেছো।
ছেলে আর বউয়ের কার্যকলাপ লুকিয়ে দেখে। এখনি ওটাকে ছাঁটাই করবে।”
নিলয় সাবেব অবাক চোখে নিজ গিন্নির দিকে তাকিয়ক রইলো। মাথা মুন্ডু কিছুই সে বুঝলোনা।
অবুঝের মতো সে বাসন্তীর দিকে তাকালো।
বাসন্তী বাবার দৃষ্টি বুঝে বলল,
-” বাবা তোমায় এতকিছু বুঝতে হবে না। শুধু দারওয়াব কে আবার ফোন দাও।জিজ্ঞেস করে মেয়েটা কি সাদা এপ্রোন পড়া ছিল কি না।”
নিলয় সাহেব তাই করলেন,ফোন লাগালেন দারওয়ান কে।
-” আচ্ছা আবু ভালো করে মনে করে বল তো।মেয়েটাকি সাদা এপ্রোন পড়া ছিল?”
আবু উৎফুল্ল চিত্তে বলল,

-” হ্যাঁ হ্যাঁ বাবু ঠিকই কইছেন। মাইয়াডা সাদা এপপুন পড়ন ছিলো তো।”
অনিমা বেগম নিলয় সাহেবের হাত থেকে ফোন নিয়ে আবু কে ঝাড়ি মেরে বলল,
-” সাটআপ! সম্মাব দিয়ে কথা বলো। মাইয়াডা কি হ্যাঁ? উনি তোমাদের ছোট সাহেবের বউ।বউদিমনি বলো।”
আবু চোখ বড় বড় করে নিলো।
মনে মনে পড়লো।আসতাগফিরুল্লাহ,আসতাগফিল্লাহ।তওবা তওবা।
ছিঃ ছিঃ আবু কেমন নির্লজ্জ তুই বউদিমনির দিকে এমন করে লুকিয়ে তাকালি তোর ঘোর পাপ হবে।
এখনি যা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে আয়।আর দোয়া করে আয়।
নিলয় সাহেব অবুঝের মতন তখন ওও তাকিয়ে আছেন।
অনিমা বেগম তাকে টেনে নিয়ে উপরে চললো

-” এই তুমি চলো তো। অনেক হয়েছে
তোমার আর এখানে থাকা লাগবে না।”
বাসন্তী আর আয়েশা মুচকি হাঁসলো বাবা মায়ের খুনশুটি তারা এখনো উপভোগ করে।
ঠিক যেন নিস্তব্ধ আর তাসফির মিষ্টি ঝগড়ার মতো।
যাক এবারে দুজনের মাঝে একটু ভালেবাসাবাসি হলেই হয়।এতেই তারা খুশি। আর কতকাল দুটো সাপে নেউলে যুদ্ধ করবে।সঙ্গে তাসফির নিরব অভিমান। নিস্তব্ধ’র ভাবলেশহীন লোচন নিয়ে।
ডিভোর্সের কথা তো শুধু নাম মাত্র।
তারাও তো চায় না কোন ডিভোর্স।

সন্ধ্যা পেরিয়েছে বহুক্ষণ। চারিদিকে বিভিন্ন গাড়ির হেডলাইটের আলো ব্যতীত চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার।চাঁদমামার দেখা নেই গগনে।আকাশের বুকে বর্তমানে নিজের আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছে মেঘগুচ্ছের দল।হয়তো বর্ষণ নামাবে ধরণীর বুকে।
ঘন্টা যাবত গাড়ির চাকা চলন্ত। থামার নাম নেই।
তাসফি, আমাকে নামান।আমাকে নামিয়ে দিন এখুনি।আমি আপনার সঙ্গে যাবো গান বলে বলে নিস্তব্ধ’র কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়ার জোগাড়। যেন তাই করারই পায়তারা করছে বোকা মেয়েটা।
নিস্তব্ধ’র বিরক্তিতে কপালে পরলো শত ভাঁজ।
সে ঠাট্টার ছলে বলল,

-” এই একই গান বার বার না গেয়ে একটা রোমান্টিক গান ও তো শোনাতে পারেন।”
তাসফি তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,
” গান? আমি? রোমান্টিক? আমার কি খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই যে আপনার মতো খাটাস মার্কা পুরুষকে গান গেয়ে শোনাবো। আবার রোম্মানটিখ হুহ।”
” অফকোর্স! শোনাতে নিষেধ নেই তো। অন্তত ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ স্ট্রেবল হবে।আপনার এক গানের প্যান প্যানানিতে পরবর্তীতে এক্সিডেন্ট ঘটলে আমার কিন্তু দোষ নেই ম্যাডাম।”
তাসফি বিদ্রুপ করে বলল,
-” হোক।হোক এক্সিডেন্ট। এক্সিডেন্ট হয়ে গাড়ি উড়িয়ে নিয়ে খাদে ফেলুক।”
-” দুঃখিত মাই মিসেস। আশে পাশে আপনি কোনো খাদ পাবেন না। তবে হ্যাঁ নিঃসন্দেহে আশে পাশে ঝোড় জঙ্গল পাবেন।”

তাসফি কটমট করে চাইলো নিস্তব্ধ’র দিকে।
লোকটা শুরু থেকে ত্যাড়া কথা বলেই যাচ্ছে।
তার ওপর তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। এই রাস্তায় সে কখনো আসেই নি।
কোথায় যাচ্ছে লোকটা।
-“আমায় নামান। আমি বললাম তো আমি যাবো না আপনার সঙ্গে কেন শুনছেন না।প্লিজ স্টপ দ্যা কার।প্লিজ। ”
সঙ্গে সঙ্গে নিস্তব্ধ গাড়ির ব্রেক কষলো।
তাসফি ভাবলো হয়তো সত্যি সত্যিই তাকে নামিয়ে দেবে। সে অস্থির চিত্তে গাড়ির দরজা ধাক্কিয়ে বলল,
-” লক খুলুন। গাড়ির লক খুলুন। আমি বের হবো কেমন করে।কি হলো খুলুন।”
তাসফির ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করে নিস্তব্ধ অদ্ভুত কাজ করে বসলো।
নিস্তব্ধ তাসফির ডান হাতের কব্জি টেনে এনে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো।
তাসফি বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইলো।
নিস্তব্ধ ফিসফিস করে বলল,

-” হুঁশশ! কোনো কথা নয়।সাইলেন্ট হয়ে বসে থাকো।”
লোকটা তাসফির কোমর জরিয়ে আছে একহাত দিয়ে।অপরহাতে গাড়ির স্টেয়ারিং সামলাচ্ছে।
তাসফির হৃদপিণ্ডের গতিবেগ দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। আচ্ছা সাইন্স তো বলে প্রেম, ভালোবাসা, অনুভুতির সাথে হৃদপিণ্ডের কোনো কানেকশন নেই।তবে তার হৃদপিণ্ডের গতিবেগ কেন বাড়ছে।
তার মনে হচ্ছে এই অনুভূতি কবল থেকে আজ সে নিস্তার পাবে না। কিন্তু সে তো এত সহজে ধরা দিতে চায় না।অহংকারী পুরুষটা যদি নিজে থেকে নত না হয় তবে সে তো কিছুতেই এত সহজে সব হতে দেবে না। উহু কখনোই না।যে করেই হোক তাকে পালাতে হবে ।
গাড়ি এসে থামলো একটি ফার্মহাউসের মতো বাড়ির সামনে।
তাসফি ভ্রু কুঁচকে বলল,

-” কার বাড়ি এটা।”
-” আপনার হাসবেন্ডের নিজের টাকায় গড়া ”
তাসফি চোখ বড় বড় করে চাইলো নিস্তব্ধ’র দিকে।সুধালো,
-” এই আপনি ডাক্তারী করছেন কয়বছর ধরে?এত টাকা পেলেন কথায়?”
নিস্তব্ধ ভ্রু নাচিয়ে বলল,
-” সেটা আপনার না জানলেও চলবে।”
তাসফি সন্দেহসূচক কন্ঠে বলল,
-” মানে টাকি। এই এক মিনিট। কালো ব্যবসা করেন না তো আপনি। আপনি মানুষের হৃদপিণ্ডের,কিডনি অপারেশন করতে গিয়ে আবার সেগুলো বের করে বেঁচে দেন না তো।আপনাকে দিয়ে একদম বিশ্বাস নেই। ”
নিস্তব্ধ সয়তানি হেঁসে তাসফির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
-” হ্যাঁ দেই তো। এবারে আপনার হৃদপিণ্ড, কিডনি,ফুসফুস সব বের করে বেঁচে দিয়ে আবার সেলাই করে দেব প্রমিস।সো মাই মিসেস আর ইউ রেডি?
তাসফি তীব্র বিরোধিতা করে বলল,

-” নো।”
-” বাট হোয়াই”
-” আগে বলুন এটা কোন জায়গা। কোথায় নিয়ে এসেছেন আপনি আমায়?”
নিস্তব্ধ গাড়ি পার্ক করে দরজার লক খুলতেই তাসফি সুযোগ পেয়ে বেরিয়ে গেল।
নিস্তব্ধ রাগি চোখে সেদিকে তাকিয়ে বলল,
-” তাসফি ভালো হবে না।স্টপ। ”
তাসফি গেটের কাছে যাওয়ার আগেই নিস্তব্ধ পেছন থেকে তাকে খপ করে ধরে ফেললো।
তাসফি সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়লো।
নিস্তব্ধ তার হাত ধরে টানতে লাগলো।তবে কাজ হলো। বকের মতো লাফাচ্ছে সে।ইচিংবিচিং ভঙ্গিতে।সব নিস্তব্ধ’র হাত থেকে ছুট পাওয়ার পায়তারা।
তাসফি বসেই রইলো।
নিস্তব্ধ হাঁপিয়ে উঠে কোমরে হাত রেখে তাসফির দিকে রক্তচক্ষু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,

-” কি সমস্যা। ইডিয়েট এর মতো বিহ্যাব কেন করছো।
উঠতে বলেছি কিন্তু। উঠো।”
তাসফি মাথা নাড়িয়ে বলল,
-” না উঠবো না। আমি যাবো না বাড়ির ভিতরের।আমায় বাড়ি দিয়ে আসুন।”
-” বাট হুয়াই।”
তাসফি মুহুর্তেই নিজের রং পরিবর্তন করে রাগী স্বরে তাকিয়ে বলল,
-” কেন যাবো আমি আপনার সঙ্গে। কেন যাবো বলুন? আপনি আমায় বউ হিসাবে মানেন না কেন যাবো।”
পুনরায় চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“তাছাড়া আপনার লক্ষণ, মতিগতি আমার কাছে একদমই ভালো ঠেকছে না। কেমন অসভ্যের মতো দৃষ্টি দিয়ে আছেন শুরু থেকে।”
নিস্তব্ধ তাসফির দিকে ক্ষণ সেকেন্ড কটমট করে তাকিয়ে থেকে বলল,

-” অসভ্যের দৃষ্টি তাইনা।”
তাসফি অবুঝ বালিকার মতো মাথা নাড়লো।
-” ওকে।ফাইন।”
নিস্তব্ধ এবারে তাসফির দিকে তেড়ে এসে তাকে পাঁজা কোলে তুলে নিলো।
তাসফি আর্তনাৎ করে উঠলো।
-” কি করছেন। কথায় কথায় কোলে কেন উঠান।নামান বলছি। ”
নিস্তব্ধ বাঁকা হেঁসে বলল,
-” বাসর করবো।”
তাসফি বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে নিস্তব্ধ’র দিকে তাকিয়ে রইলো।
তার ভ্রম কাটতেই হাত পা ছুঁড়ে নামতে চেষ্টা করলো।কিন্তু নিস্তব্ধ’র দানবীয় শক্তির কাছে তা নেহাৎ তুচ্ছ।
কিছুতেই কিছু না হওয়ায় তাসফি এবারে নিস্তব্ধ গলায় জোড়ছে কামড় বসালো।
তাসফি বোধহয় এই কামড়ে নিজের সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে।
নিস্তব্ধ ব্যাথায় চোখ বুঁজে নিলো।

ততক্ষণে হেঁটে এসে সে নিজ বেডরুমে অবস্থান করেছে।
তাসফি কে বেডের উপর ছুঁড়ে ফেললো।
ব্যাথার যায়গায় হাত বুলিয়ে নিস্তব্ধ “উফফফ” শব্দ করে উঠলো।
চোখ খুলে সে চোখ লাল করে তাকালো তাসফির দিকে।
তাসফি ভয়ে শুষ্ক ঢোক গিললো।
এই রে বড্ড ভুল কাজ করে ফেলেছে সে।
এবার তাকে রক্ষা করবে কে।
ইচ্ছে করে সে সাপের লেজে পা দিয়ে ফেলেছে।
সোবল তো এবার খেতেই হবে।
নিস্তব্ধ ধীরে ধীরে তাসফির দিকে এগিয়ে এলো।

ধূসর রংধনু পর্ব ৩৪

তাসফিকে অবাকের চরম পর্যায় পৌঁছে দিয়ে অহংকারী পুরুষটা তার স্বভাবের বিপরীতে গিয়ে
সেই অভাবনীয়, অনাকাঙ্ক্ষিত কাজটাই করে বসলো…..

ধূসর রংধনু পর্ব ৩৬