Violent love part 41 (2)
Mariam akter juthi
“চলতি পথে বাধা পেয়ে, পাশাপাশি অসহ্য কারো কণ্ঠ পেয়ে রোদ বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে পিছন ঘুরে বললো,
‘সমস্যা কি? এভাবে আঁচল টেনে ধরেছিস কেন?
রোদের এমন ঝাঁঝানো কন্ঠ পেয়ে জুথি মাথাটা নিচু করে আস্তে করে বললো,
‘তোমাকে কিছু বলব করে।
জুথির এমন দৃঢ় কথায় রোদ জুথির ধরে রাখা আঁচলটা ছো মেরে নিজের কাছে টেনে চোখ রাঙিয়ে দাঁতের দাঁত চেপে বললো,
‘তোর এই ন্যাকামি গিয়ে আরিশের সামনে করিস। আমার সামনে তোর ওই ন্যাকামি করবি না। নয়তো, – ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই জুথি আগের ন্যায় স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,
‘তুমি এভাবে রেগে যাচ্ছ কেন? আমি তো তোমাকে, তোমার নতুন জীবনের শুভেচ্ছা জানাবো করে। তু,,, — জুথি কথাটা সম্পূর্ণ শেষও করতে পারল না, তার আগেই রোদ বাচখাই এর মত তেরে এসে ওর দুই বাহু স শক্তি দিয়ে চেপে ধরে, ওকে ঝাক্কাতে ঝাক্কাতে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘শুভেচ্ছা? শুভেচ্ছা মারাও? আমাকে কি মনে হয়? আমি একটা কাঠের পুতুল? আমার হৃদয় নেই? আমার মন কাউকে চাইতে পারেনা? এই হৃদয়ের সুপ্ত বাসনা থাকতে পারেনা? কেন হল আমার সাথে এমনটা?
রোদ এতোটুকু বলে থেমে যেতে, জুথি রোদের ধরে রাখা দুই বাহুর ব্যথায় চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি ফেলতে লাগলো, তার শরীরে মারের ব্যথাগুলো এখনো আছে, তার ওপর সেই জায়গা রোদ শক্ত করে চেপে আছে, জুথি কিছু বলল না, তবে চোখ বন্ধ করে চোখ থেকে পানি ফেলতে, রোদ সেদিক তাকিয়ে রাগে শূন্য হয়ে ঘণ নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আবারো বললো,
‘কেন এমনটা হয়েছে আমার সাথে জানিস? এটা শুধু তোর জন্য হয়েছে, চাইলাম আরিশকে, পেলাম না তোর জন্য। ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিলাম, কারণ কি জানিস তো, আরিশ তোকে সেই ছোট্টবেলা থেকে ভালবাসে বলে। তাই মোহ ভেবে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম। তবে সত্যি, এটা মোহই ছিল, তাই ভুলতে পেরেছিলাম। কিন্তু ফ্যামিলি, মা বাবা এমন একজনের সাথে আমাকে বিয়ে দিল, সেও কি না তোকেই ভালোবাসে? কেন রে আমার কি কোন কিছুতে কমতি আছে? দেখ না? তাহলে কেন আমার সাথেই বারবার এমনটা হয়? বল?
জুথি রোদের পরপর এমন কথায়, মাথাটা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে, কিছু বলল না। কি বলবে সে? রোদ যে তার কথায়, তাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য এভাবে কষ্ট পাবে, বুঝতে পারলে কখনো সে তাকে সামান্য কথাটুকু বলতো না। জুথি কোনরকম কথা না বলে মাথা নিচু করে আছে দেখে, রোদ নাক ফুলিয়ে, জেদ দেখিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে, জুথি হঠাৎ এমন ধাক্কায় ব্যালেন্স হারিয়ে দু’পা পিছিয়ে পড়ে যেতে নিলে, মধু শব্দে আওয়াজ করে বলল, — ‘ আহহ।
“কিছু সময় অতিবাহিত হতে, জুথি শরীরে পড়ে যাওয়ার কোনতুর ব্যাথা না পেয়ে খিঁচে রাখা চোখ দুটো পিটপিট করে খুলতে অনুভব করল, কেউ তার পিছন থেকে হাত দুটো বুকের একটু নিচে বরাবর শক্ত করে ধরে আছে, যার দারুন সে এখন পর্যন্ত সেভ আছে। এটা মনে হতে, জুথি মাথাটা নিচু করে বুকের কাছে ধরে রাখা হাতটার দিক তাকাতে কানে ভেসে এলো চেনা পুরুষোয়ালি গম্ভীর কণ্ঠে বলা কিছু কথা,
‘তোকে আগেও বলা হয়েছে, এখনো বলছি। মৌ তোর বয়সে ছোট হতে পারে, সম্পর্কে না। তাহলে ওর সাথে মিসবিহেভ করার সাহস হয় কি করে তোর? নেক্সটাইম ফের আমার চোখে যদি এমন কোন ঘটনা পরে তো সেদিন আমি তোকে ছেড়ে দিব না। কারণ ওকে ছোট করা, কিংবা আঘাত দেওয়ার রাইট আমি কাউকে দেইনি। কথাগুলো বলার সময় মনে হচ্ছিল আরিশের চোখ থেকে আগুন বের হবে। আরিশের এমন চাওনি দেখে রোদ মাথাটা নিচু করে আস্তে বললো,
‘সরি, মাথা ঠিক ছিল না। — বলে আস্তে ওদের পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে, আরিশ মাথাটা ঝাঁকি মেরে, রাগটাকে কমিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বলল,
‘রোদ?
রোদ যেতে নিয়েও, আরিশের ডাক শুনে পিছন ঘুরে বলল,
‘হুম।
‘যেটা চলে গেছে, সেটা নিয়ে পড়ে থাকিস না। যেটা বর্তমান পেয়েছিস, সেটা কে নিজের মতো করে, সময় থাকতে গুছিয়ে নে। কারন সেটা এখন তোর, তাহলে দেখবি, তুই ঠুনকো নয়, তুই অপরূপা।
আরিশের কথায় রোদ, কি বুঝল কে জানে? তবে উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে সায় জানাতে আরিশ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আবারো বলল,
‘আমি জানি তুই চেষ্টা করলে পারবি রোদ। – হালকা হাসার চেষ্টা করে।
রোদ আরিশের কথায়, অনুশোচনা বোধ করে চোখ মুখ ছোট করে বলল,
‘আমি সরি, জুথির সাথে মিসবিহেভ করার জন্য। আসলে আমি তোমার মত করে ভেবে দেখিনি, তাই ওকে দেখলে রাগ লাগতো। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও আরিশ ভাই।
রোদের কথায়, আরিশ কিছু বলল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে, রোদ আর কোন কথা না বাড়িয়ে, সেও সিঁড়ি বেয়ে নিচে বসার রুমে চলে আসতে,আরিশ এবার ঘুরে জুথির দিকে তাকিয়ে ওকে কিছু বলবে তার আগেই জুথি ওকে ঠেলে নিজের থেকে সরিয়ে হালকা জেদ দেখিয়ে বলল,
‘ছুবেন না আপনি আমাকে, অসহ্য লাগে আপনার ছোয়া।
‘মৌ আমার মাথা গরম করবি না।
‘কিসের মৌ হ্যাঁ? আঘাত করার সময় মনে থাকে না আমি আপনার মৌ হই? – হালকা চেঁচিয়ে।
‘মৌ গলা উঁচিয়ে কথা বলা, আমার মোটেও পছন্দ না। তোকে সাবধান করছি, ফের এমন সাহস দেখালে,, –ওর কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই জুথি আবারো একইভাবে চেঁচিয়ে বলল,
‘কি করবেন হ্যাঁ? আঘাত করবেন? মারবেন? মারুন না, সেদিন তো মেরেই ফেলছিলেন, ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেছি। আজ না হয় সম্পূর্ণটা মেরে ফেলুন। — জুথি দিকশূন্য হয়ে কথাগুলো আনমনেই বলে ফেলল, ও স্মরণে আনলো না, ও বাঘের সামনে খাবার ধরে সেটা ছিনিয়ে আনার মন্ত্র করল। তাহলে হয়তো এভাবে কথাগুলো বলত না। – বলে হিচকি দিয়ে কান্না করে ডান হাত বাম হাত দ্বারা চোখের পানি ঘষে মুছে, ঘুরে রুমে দিক যেতে নেবে এমন সময় আরিশ ওকে টেনে কোলে তুলে নিজের রুমে যেতে নিলে জুথি ওর থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য, পা দুটো ছটফট করে দু’হাত দ্বারা আরিশের বুকে ঠেলে সরাতে চেয়ে বলল,
‘নামান বলছি, যাব না আমি আপনার সাথে। – বলে ওর ছটফট করার মধ্য আরিশ ওকে ওর রুমে এনে সজরে বিছানার উপর ফিক্কা মেরে, দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে দরজাটা লক করে পুনরায় জুথির কাছে এসে ওর ডান পা ধরে টেনে কাছে এনে ওর মুখের কাছে ঝুঁকে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
‘আবারো বলছি আমাকে রাগাস না। নয়তো বিষয়টা তোর জন্য ভালো হবে না। – বলে ওর থেকে সরে আসতে নিলে, জুথি তখনো কোন কিছু স্মরণে না এনে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
‘থ,থাকবো না অ,আমি আপনার সাথে, করবো না আমি আপনার সংসার। স্বামী বলে যা ইচ্ছে তাই করবেন?
জুথির পরপর এমন কথায় আরিশ নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে চেয়েও পারলো না। তেরে এসে ওর চুলের মুঠি শক্ত করে চেপে ধরে চেঁচিয়ে বলল,
‘আমি তোর স্বামী হই এটা তোকে কে বলল?
জুথি আরিশের চেপে রাখা চুলের মুঠি ছাড়াতে চেয়ে ফুপিয়ে বলল,
‘অ,আমার শাশুড়ি বলেছে, আ,আপনার আম্মু।
‘ও তাহলে তো তুই জেনেই গেছিস আমি তোর কি হই? জানিস তো একটা মেয়ের বিয়ের পর তার ওপর, তার নিজের থেকেও স্বামীর অধিকার থাকে বেশি?
জুথি আরিশের থেকে নিজের চুল ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টায় পুনরায় বলল,
‘সে আপনি আমার যাই হন,কোন অধিকার নেই আপনার আমার উপর।
‘আমার অধিকারের প্রয়োজন নেই, আমার যেটা চাই, সেটা আমার চায়ই চাই। – বলে জুথির চুলগুলো ছেড়ে ওর ঠোঁটের দিক অগ্রসর হতে নিলে, জুথি ওকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে জেদে আবারো চেচিয়ে বলল,
‘বলেছি না, থাকবো না আপনার সাথে। করবো না তো আপনার সংসার। আমি এখনি চলে যা,, — ওর কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই, আরিশ সজোরে ওর ডান গাল বরাবর ঠাটিয়ে দাবাং মার্কা বসিয়ে দিল,
‘ঠাসসসসস। — আরিশের হাতে এমন দাবাং মার্কা থাপ্পড় খেয়ে, জুথি বধশূণ্য হয়ে জোরে জোরে কান্না করতে করতে বলল,
‘আবারো মেরেছেন না, এখন তো থাকবোই না আপনার সাথে। এক্ষুনি চলে যা,,
‘ঠাসসসসসসসস। এবারও আগের ন্যায় শক্ত হাতে থাপ্পড় খেয়ে, দমে না গিয়ে বলল,
‘অসভ্য, *বালের স্বামী আমার,থাকবো না আপনার সাথ,,
‘ঠাসসসসসসস। — পরপর এ গালে ও গালে তিন তিনটে শক্তপোক্ত হাতের থাপ্পর, খেয়ে জুথি হাতের কাছের বালিশটা অপর পাশে ফিক্কা মেরে ফুঁপিয়ে বলল,
‘অ,অআমি বড় আ,অআম্মু কে সব বলে দিব, তারপর ও থাকবো না, থাকবো না আপনার সাথে। করবো না তো আপনার সং,
‘ঠাসসসসসসস। এবারও থাপ্পর খেতে, জুথি বিছানা থেকে নামতে নিলে, আরিশ ওকে টেনে আবারো ঠাটিয়ে একটা থাপ্পর লাগালো, – ‘ঠাসসসসসসস। – একনাগাড়ে পাঁচ পাঁচটা থাপ্পর খেয়ে, জুথি এবার সম্পূর্ণ জেদ ছেড়েই দিল। তার মাথা এখন ভনভন করে ঘুরছে, গাল দুটো চিনচিন ব্যথা করছে। মনে হচ্ছে সেদিনের ন্যায় আবারও জ্ঞান হারাবে। তাই ফুপিয়ে কোনরকম বলল,
‘করবো তো আপনার সংসার, থাকব তো আপনার সাথে। – এতোটুকু বলে জুথি ফুপাতে ফুপাতে কাত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়তে ওভাবে আস্তে বলল,
‘বললে’ই কি আমি চলে গেছি? তাই বলে এতগুলো মারবেন?
জুথি নেতিয়ে বিছানায় পড়ে যেতে, আরিশ তখনো হাত দুটো মুঠি বদ্ধ করে রাগে রি রি করছে। এইটুকুখানি মেয়ে, বলে কিনা তার সাথে থাকবে না, তার সংসার করবে না। মনে তো চাচ্ছে বিছানা থেকে টেনে আরো দুটো দেই। আরিশ আর ওভাবে দাঁড়াতে পারল না, ঘনঘন নিশ্বাস ত্যাগ করে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ, নিয়েও পিছন ঘুরে জুথি কে টেনে তুলে ওর বাহু চেপে কন্ঠে গম্ভীরতা এনে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
‘আজ এই মুহূর্তে তোকে একটা কথা বলছি, মাথার মধ্যে ভালো করে ঢুকিয়ে নিস। আঘাতো আমি করব, ভালোও আমিই বাসবো, দুঃখ আমি দিব, দুঃখ ঘুচিয়েও আমিই দিব। তবুও আমাকে ছেড়ে যাওয়া চলবে না। ফের কোনদিন যদি তোর মুখ থেকে থাকবো না শব্দটা শুনেছি, আজ তোকে খোদার কসম বলছি, সেই দিন এই পৃথিবীর শেষ দিন হবে তোর জন্য। – বলে দফ দফ পা ফেলে রুমের দরজা বাহির থেকে পিন লক করে চলে যায়। আরিশ চলে যেতে জুথি অতি অভিমানে কান্নায় ভেঙে পড়ে, বালিশটা খামচে ধরে টপটপ চোখের পানি ফেলতে ফেলতে একসময় অতিরিক্ত কান্নার রেশ ধরে ঘুমিয়ে যায়।
“দিনের আলো, রাতের অন্ধকার দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে তিন তিনটা দিন। এই তিন দিনে, আরিশ ও ইচ্ছা করে জুথির সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলেনি। আর না জুথি বলেছে। মান অভিমানের পাল্লাটা যেন ক্রমশ বেড়েই চলছে। যদিও আরিশ সেদিন ওভাবে রেগে মেগে চলে যাওয়ার পর, তার কিছুক্ষণ পর আবারো রুমে এসেছিল। এসে জুথি কে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে, ওর পাশে বসে ওকে টেনে কোলের মধ্যে নিয়ে, ওর জামাটা চেঞ্জ করে,আরিশের একটা টি শার্ট পরিয়ে হাতের বাহুতে কেটে যাওয়া পিটানোর দাগগুলোতে মলম লাগিয়ে দিয়ে, ওকে আস্তে করে ঘুরিয়ে ওর নাকে মুখে চুমু খেয়ে আবারো বিছানায় শুইয়ে দেয়।
Violent love part 41
“এই তিন দিন, কেউ কারো সাথে কথা না বললেও, আরিশ জুথি কে একটু ও হাতছাড়া করেনি। কথা না বললেও রাতে ঘুমানোর সময় জুথি জেদ দেখালেও আরিশ ওকে টেনে বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুমাতো। তবে পরপর তিনদিন এভাবে, কথা না বলে থাকলেও, আরিশ আর পারলো না, তার মৌয়ের সাথে কথা বলে না থাকতে। তাই নিজের পার্সোনালিটি রেখে, তপ্ত নিশ্বাস ফেলে,আরিশ তার মৌয়ের সাথে কথা বলবে দেখে, তাকে একটু আদর করবে ভেবে, নিজের রুমের দিক অগ্রসর হয়…