মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৩৭
মুসতারিন মুসাররাত
সাদা শার্ট কালো প্যান্টের ওপর গুছিয়ে ইন করে পড়া। হাতার স্লিভ গুটাতে গুটাতে ড্রয়িংরুমের দিকে আসছিল নীরব। ঠিক তক্ষুনি প্রত্যাশার উকুন তাড়ানোর অভিনব আইডিয়া শুনে মুখ ফুলিয়ে ফুস করে শ্বাস ফেলল। মনে মনে বলল,
-” উফ্! সেমি পা’গ’লি বউ নিয়ে কী যে কপালে আছে আমার!”
তন্মধ্যে শর্মিলা নামিদামি একটা শপিং ব্যাগ প্রত্যাশার দিকে বাড়িয়ে বলল,
-” এইযে মিষ্টি মেয়ে এটা আমার পক্ষ থেকে। খুলে দ্যাখো।”
ভেতরে হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি। শাড়িটা সিল্কের, আর তাতে ছোট ছোট ফুলের কাজ করা। প্রত্যাশা একগাল হেসে মুগ্ধ গলায় বলল,
-” থ্যাংক ইয়্যু ছোটমা। শাড়িটা খুব সুন্দর! তোমাকে এত্তগুলা ভালোবাসা।”
শর্মিলা মুচকি হেসে একটু মজার ছলে বললেন,
-” এমন মিষ্টি হাসি না দিলে গিফট বাতিল করতাম।”
প্রত্যাশা অমনই হাসি ঠোঁটে নিয়ে বলল,
-” ওমা তাই!”
নীরব তাড়া দিয়ে বলল,
-” তাড়াতাড়ি কেক কা”টা হোক। দেরি হচ্ছে তো।”
শর্মিলা কপালে ভাঁজ ফেলে বললেন,
-” একটু ধীরসুস্থেই যা। এত তাড়াহুড়ো কিসের? নীরব তোর তো সবেতেই তাড়া।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ড্রয়িংরুমে রঙিন বেলুনে ভরা। প্রত্যাশা কেক কে”টে সবার মুখে এক টুকরো করে তুলে দিচ্ছে। আবির মোবাইলে ক্লিক করে একেকটা মুহূর্ত বন্দি করছে ক্যামেরায়। আকস্মিক গমগমে স্বরে বলে উঠল আবির,
-” সবাইকে খাওয়ালে, কিন্তু ছোট দাদানকে তো খাওয়ালে না নতুন ভাবি?”
প্রত্যাশা একটু থমকে গেল। মুখে লালচে লজ্জা ছড়িয়ে পড়ল। কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। আবির আবার কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনই চোখ পড়ে নীরবের দিকে। নীরবের দিকে চোখ পড়তেই মুখটা আমসত্ত্ব হয়ে যায় আবিরের। নীরবের চোখে রাগের সুক্ষ্ম ঝলকানি। নীরব চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আবির বাকি কথাগুলো ঝটপট গিলে নেয়। ঢোক গিলে ভাবে— এইরে কাকে নিয়ে ফা’জলামি করতে গিয়েছিলাম। ভুলেই গিয়েছিলাম বা”ঘ সামনেই আছে। থাবা মে*রে দাঁত ফেলেনি এইতো শুকরিয়া।
নিভান এসে হাসিমুখে রঙিন র্যাপিং কাগজে মোড়ানো একটা গিফট বাড়িয়ে বলল,
-” এইযে প্রত্যাশা, নাও গিফট। আজকের স্পেশাল গিফটা বোধহয় আমার তরফ থেকেই পাচ্ছো।”
নীলা ফোড়ন কা’ট’ল,
-” ধ্যাত! ওগুলো আবার দেয় নাকি! বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও যতসব হাবিজাবি দিতে গেলে।”
নিভান দু’টো চকলেট বক্স বাড়িয়ে বলল,
-” এগুলো তোমার আপুর পক্ষ থেকে। আর আমার দেয়া গিফটটা খুলে দ্যাখো।”
-” শিওর।”
প্রত্যাশা ঝটপট খুলল। রঙিন মোড়কের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা নরম গোলাপি কাপড়ে মোড়ানো ফটোফ্রেম। কাপড়টা সরাতেই চোখ ছানাবড়া। ভেতরে একটা ডিজাইনার ফ্রেম। চারটা ছবি একসাথে বসানো। বিয়ের দিনকার ছবি। সোফায় পাশাপাশি বসে ওরা। নীরবের গায়ে ইউনিফর্ম, প্রত্যাশা নীল শাড়িতে মোড়া। শাড়ির ঘোমটা বড় করে টানা। অন্য ছবিতে শফিক সাহেব মেয়েকে নীরবের হাতে তুলে দিচ্ছেন। সেখানে শুধু হাতের ছবিটুকু।
নিভানের গলা শোনে চমকে উঠল প্রত্যাশা,
-” কেমন লাগল? ইউনিক গিফট না?”
প্রত্যাশা এক্সাইটেড হয়ে বলল,
-” এই ছবিগুলো যে আছে, সেটা তো জানতামই না আমি! কে তুলেছিল?”
নিভান হাস্যজ্জ্বল মুখে বলল,
-” ঘোমটার আড়ালে কিছু দেখতে পাওনি তুমি। নীলাকে বারবার বললাম ঘোমটা তুলে দিতে। সে কানেই তুলল না। ছবিগুলো ফোনে আমি তুলেছিলাম।”
নীরব একহাত পকেটে গুঁজে অন্যহাতে শার্টের কলার ঠিক করার ভঙি করল। বলল মৃদুস্বরে,
-” বারো হাত শাড়ির তেরো হাত ঘোমটা টেনেছিল সেদিন।”
সবাই মিটমিট করে হাসতে থাকল। নিভানের কথার জবাবে নীলা বলে,
-” আরে আমার কি দোষ, ওতো কবুল পড়ার আগ মুহুর্ত থেকেই ঘোড়ার মতন কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল। বড়রা যখন ওকে ওখানে নিতে বলে, সেইসময় আম্মু ধ’ম’কিয়ে ওর কান্নার বেগ থামিয়ে পাঠায়। ওইটুকু সময়েই কেঁদেকেটে চোখমুখের অবস্থা নাজেহাল করেছিল। কাঁদছিল বিধায় বড় করে ঘোমটা দেয়া হয়।”
নীরবের দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল প্রত্যাশা,
-” আর আপনি? নিজে তো ঠাসঠাস কবুল পড়ে পাঁচ মিনিট না হতেই উধাও।”
মাহবুব সিদ্দিকী এসে দাঁড়ালেন। প্রত্যাশার মাথায় স্নেহের হাত রেখে বললেন,
-” জন্মদিন মানেই শুধু আনন্দ নয় মা। দিন বাড়ছে, মানে হায়াত কমছে। তাই যেমন বড় হচ্ছো, তেমনি বুদ্ধি, ধৈর্য, সহনশীলতা এগুলোও বাড়ুক। আল্লাহ তোমায় হেদায়েত দিক। মানুষের মতো মানুষ হও, মা। আমরা শুধু দোয়া করতে পারি। দোয়া করি অনেক অনেক সুখী হও।”
বলে পাঞ্জাবির পকেট থেকে তিনটা এক হাজার টাকার নোট বের করে দিলেন। প্রত্যাশা নম্রস্বরে বলল,
-” বাবা আপনাদের দোয়াই সবচেয়ে বড় উপহার। এসব লাগবে না।”
মাহবুব সাহেব বললেন,
-” বুড়ো বাবার দেয়া সামান্য এটুকু রাখো মা। কিছু কিনে নিও।”
প্রত্যাশা ইতস্তত করছিলো, পাশ থেকে নীরব চোখের ইশারায় কিছু বোঝাল। প্রত্যাশা আর দ্বিরুক্তি না করে নেয়। সবশেষে নীহারিকা আসলেন। মুখে চিরচেনা গম্ভীরতার রেষ নিয়েই বললেন,
-” একটু একটু করে বয়স বাড়ছে, সেই হিসেবে বুদ্ধিও যেনো বাড়ে। আশাকরি ছেলেমানুষী স্বভাবটা কমিয়ে সবকিছুতে সিরিয়াস হবে। বিয়ে হয়েছে, সংসার করতে হবে আস্তে আস্তে সবটা শিখে-পড়ে নিবে। দোয়া করি সবসময় হাসিখুশি ভালো থেকো, সবাইকে ভালো রেখো।”
সবাইকে একদফা অবাক করে গলা থেকে স্বর্ণের চেইনটা খুলে প্রত্যাশার গলায় পড়িয়ে দিলেন নীহারিকা। প্রত্যাশা ভাষা হারিয়ে ফেলল। বারণ করলেও নীহারিকা ধ’ম’কিয়ে চুপ করে দিলেন ওকে। নীলার মুখটা পানসে হয়ে গেল। ভাবল—- মা যতোই উপরে উপরে প্রত্যাশাকে ধমকাধমকি করুক না কেনো। উনি আসলে ছোট ছেলের বউকেই বেশি ভালোবাসেন।
সন্ধ্যার অন্ধকার ধীরেধীরে গোধূলির আভায় মিশে যাচ্ছে। প্রত্যাশা চনমনে হয়ে কলিংবেল চাপল। অধীর আগ্রহে চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষায় ছিলেন অধরা। বেলের শব্দ কর্ণপটে পৌঁছানোর সাথেসাথেই দরজা খুলে দেন। কোনো কিছু ঠাহর করার আগেই প্রত্যাশা সেকেন্ডের ভেতর মায়ের গলায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুখ গুঁজে আহ্লাদী ভঙিতে বলল,
-” আম্মুউউউ।”
অধরার মুখে প্রশ্রয়ের হাসি। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-” পা”গলী মেয়ে আমার। কেমন আছিস?”
মায়ের কাঁধে মাথা রেখে বলল,
-” আব্বুকে আর তোমাকে খুব মিস করছিলাম।”
নীরব এতক্ষণে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়। শফিক সাহেব এগিয়ে এসে বললেন,
-” আরে, আগে নীরবকে আসতে দাও। ভেতরে এসো বাবা।”
অধরা মেয়েকে ছাড়িয়ে নরম স্বরে বললেন,
-” প্রত্যাশা আম্মু আমার নীরবকে আগে রুমে নিয়ে যা। ফ্রেশ হবে।”
প্রত্যাশা মাথা নাড়ল। রুমে ঢুকেই বুক ভরে শ্বাস টেনে নেয় প্রত্যাশা। নিজের রুমের পরিচিত গন্ধটায় একধরণের পুরনো শান্তি এসে ভর করল।
হালকা নাস্তার পর প্রত্যাশার রুমের বেডে বসে নীরব ফোন স্ক্রল করছিল। ইনবক্স, নিউজ, অফিসিয়াল মেইল সব একটুখানি করে দেখে নিচ্ছিল। কয়েক সেকেন্ড পরেই নীরব ফোনটা পাশে নামিয়ে শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিল। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল; দিনভর চাপা ক্লান্তির মতো।
প্রত্যাশা রুমে ঢুকে বেডের একপাশে বসল। কপালে চিন্তার ছাপ ফেলে আস্তে করে শুধাল,
-” নীরব? শুয়ে আছেন যে, শরীর খারাপ লাগছে?”
নীরব চোখ বন্ধ রেখেই বলল,
-” তেমন কিছু নয়। একটু টায়ার্ড লাগছিল।”
-” বেশি খারাপ লাগছে?”
প্রত্যাশার উদ্বেগ, উদ্বিগ্নতা দেখে নীরব প্রসন্ন হাসল। পা’গলীটা যে এতটুকু চিন্তা করেছে এই অনেক। মাথার নিচে হাত ভাঁজ করে রেখে প্রত্যাশার দিকে তাকায় নীরব। বলল,
-” ডোন্ট ওয়ারি। একটু ক্লান্ত লাগছিল। বাট এখন ঠিক আছি।”
প্রত্যাশা প্রত্যুত্তরে মৃদু হাসল। পরপর উঠে কাবার্ড খুলে কুর্তি আর প্লাজো বের করতে করতে বলল,
-” ড্রেস চেঞ্জ করব। এটা অনেক ভারী, ক্যারি করতে কষ্ট হচ্ছে।”
নীরব উঠে বসতে বসতে বলল,
-” প্রত্যাশা আমি এখন আসছি।”
-” আসছি মানে? এখনই যাবেন কেনো? আম্মু ডিনারের জন্য কত কী রান্না করেছে। ডিনার করে যাবেন।”
-” আজ নয়, অন্যদিন ডিনার করব। এখন যেতে হবে।”
-” আজকে কী সমস্যা?”
প্রত্যাশার হাতের ভাঁজে জামাকাপড়। নীরব সামনে এসে দাঁড়াল। চুলে ব্যাক ব্রাশ করে নিয়ে বলল,
-” তোমার পড়াশোনার ক্ষ’তি হোক, সেটা চাই না। আমার জন্য তোমার সময়গুলো ন*ষ্ট হচ্ছে। এর চেয়ে বরং তুমি পড়ো। ভালো করে প্রিপারেশন নাও। সমস্ত মনোযোগ পড়াশোনায় দাও।”
প্রত্যাশা ঠোঁট মেলে কিছু বলবে, তার আগেই ওর শব্দগুলো গলায় আঁটকে যায়। নীরব টুপ করে প্রত্যাশার সফট গালে চুমু খেয়ে বলল,
-” বায়।”
প্রত্যাশা ঠোঁট চেপে হেসে বলল,
-” বায়।”
নীরব দরজা অবধি গিয়ে আবার কিছু মনে উঠতেই বলল,
-” প্রত্যাশা, আজকে কথাটা রাখতে পারলাম না, স্যরি।”
-” ব্যাপার না।”
-” পরশু তোমার পরীক্ষা, যদি আগামীকাল এক ঘন্টা সময় আমাকে দাও, খুব কী বেশি প্রব্লেম হবে?”
-” না না। কত সময় আমি এমনি ন’ষ্ট করে থাকি। বরং সত্যিটা জানলে মাথার ভেতর থাকা চাপা কৌতুহল, টেনশন সব দূর হবে। আর দূর হলেই আমি ফ্রি মাইন্ডে একটু পড়াশোনা করতে পারব।”
-” ওকে।”
হোটেলের সেই বয়টার সঙ্গে নীরবের শেষপর্যন্ত ফোনে যোগাযোগ হয়। সরাসরি সব কিছু না বললেও, কথায় কথায় কিছু দরকারি তথ্য বের করে আনে নীরব। ওকে বুঝিয়ে বলে; সব সত্যি বললে কিছু হবে না, কিন্তু লুকোচুরি করলে মামলা হবে। শুনে ছেলেটা ভ”য় পায়, কারণ ক’দিন পরেই সে মালয়েশিয়া যাবে। এখন কোনো কেসে জড়িয়ে পড়লে ঝামেলায় পড়বে। তাই সে আর লুকায় না, সব কিছু খোলাখুলি বলে ফেলে।
প্রীতি একটা নামকরা বিদেশি প্রজেক্টে চাকরি করে। গতকাল তার ওখানে রাত দশটা পর্যন্ত প্রোগ্রাম ছিল। তাই বাসায় ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। প্রীতির ফিরতে রাত হবে এটা জানার পরেই নীরব সিদ্ধান্ত বদলায়।
পরেরদিন…..
পড়ন্ত বিকেল। প্রত্যাশা বাড়িতে বলেছে — মাইন্ড রিফ্রেশ করতে একটু ঘুরতে যাবে। ঘন্টার আগেই ফিরবে। নীরব এদিক দিয়ে যাচ্ছিল গেইটে আছে।
কথাটা অবশ্য প্রত্যাশার নয়, নীরবের শেখানো কথাটা তোতা পাখির মতন বলে বেরিয়ে আসে প্রত্যাশা।
প্রীতির লম্বা সরু আঙুলগুলো ল্যাপটপের কিবোর্ডে থেমে থেমে চলছিল। নিখুঁত দক্ষতায় ফাইল তৈরি করছিল সে। এমন সময় বুয়া এসে বলল,
-” ম্যাডাম, ওই স্যার আসছে?”
-” ওই স্যার মানে?”
-” ওই যে পুলিশ অফিসার স্যার।”
প্রীতির মসৃণ কপালে কুঞ্চন পড়ে গেল। পাতলা ঠোঁট নাড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,
-” নীরব? এই সময়ে?”
পরক্ষণেই ঠোঁটে ব্যঙ্গাত্মক হাসি টেনে বলল,
-” ইচ্ছের সাথে দেখা করতে।”
বুয়া গলায় ভ”য় মিশিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
-” ম্যাডাম, উনি আপনাকে ডাকতেছেন।”
ওড়নাটা কাঁধে তুলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল প্রীতি। একগাছি চুল কাধের উপর দিয়ে সামনে টেনে আনতেই চোখ পড়ে নীরবের দিকে। হাত দুটো জিন্সের পকেটে গুঁজে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কফি রঙা টিশার্ট ফর্সা গায়ে আঁটসাঁট হয়ে আছে। প্রীতির মুখের ভাব এক মুহূর্তেই বদলে গেল, নীরবের পিছনে প্রত্যাশাকে দাঁড়িয়ে দেখে। ঠোঁট শক্ত হয়ে এল। তীব্র গলায় বলল,
-” ডেকেছো ক্যানো? কী দরকার? তোমাদের ফ্যামেলির কারো সাথেই তো আমার কোনো দরকার থাকার কথা নয়। তাহলে আজ হঠাৎ এএসপি নীরব মাহবুবের আমাকে কেনো দরকার পড়ল? তাও আবার এই অসময়ে!”
নীরবের জবাব দেয়ার ধরণ দেখে প্রত্যাশা আঁতকে উঠল। অবিশ্বাস্য ঠেকল নিজের চোখ-কানকে। প্রীতির গালে কষে একটা চ”ড় মা*রে নীরব। চারদেয়ালের মাঝে চড়ের শব্দ ধ্বনিত হতে থাকে। প্রত্যাশা অবিশ্বাস্য নয়নে ক’বার পলক ফেলল। নীরবের চোখমুখ কঠিন। প্রীতির গালে আপনাআপনি ডান হাতটা চলে আসল। প্রীতি গালে হাত রেখেই চোখে আ*গুন নিয়ে গর্জে উঠল,
-” নীরব, হাউ ডেয়ার ইউ?”
দাঁত কড়মড় করে নীরব আরেকটা চ’ড় বসাল প্রীতির অপর গালে। বজ্র কণ্ঠে বলল
-” তোমার মতো একটা মেয়েকে থা”প্পড় মা”রতেও আমার গা ঘিনঘিন করে। মনে হচ্ছে নিজের হাতটাই নোং/রা করে ফেললাম।”
মূহুর্তেই প্রীতির চোখে পানি টলমল করে উঠল। প্রতিটা শব্দ ছু/রি হয়ে বিঁধছিল প্রীতির বুকের ভেতর। চোখভরা এক প্রস্থ জল নিয়ে মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইল প্রীতি। নীরব প্রশ্ন ছুঁড়ল,
-” সত্যি করে বলো, কেনো প্রত্যাশার সাথে অমন করেছিলে? ক__”
প্রীতি কথা কেড়ে নিয়ে ভ”য়ে ঢোক গিলে বলল,
-” ক-কী করেছি আমি?”
নীরব দাঁত চেপে বলল,
-” নাটক বন্ধ করো। যা প্রশ্ন করব, সত্যি করে উত্তর দেবে। প্রত্যাশাকে কিভাবে অচেতন করেছিলে? কেনো হোটেলের বয়কে দিয়ে ছবি তুলালে? এতে তোমার লাভ কী?”
প্রত্যাশার শরীর শিউরে উঠল। প্রীতি মাথা নেড়ে অস্বীকার করল,
-” আমি কিছু জানি না।”
কথাটা শেষ না হতেই আরেকটা থা”প্পড় এসে পড়ল গালে। ঠোঁট কে”টে র”ক্ত গড়িয়ে পড়ল। নীরব রুক্ষভাবে বলল,
-” সিসিটিভি ফুটেজে তোমাকে স্পষ্ট দেখা গেছে। তুমি নিজ হাতে হোটেলের বয়কে টাকা দিচ্ছো। আর তার বয়ান আমি ফোনে রেকর্ড করে রেখেছি। শুনতে চাও?
তুমি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের অচেতন অবস্থার সুযোগ নিয়েছো। তার ছবি তুলে পাঠিয়েছো তারই স্বামীর কাছে। তুমি শুধু একটা মেয়েই নও, পুরো নারী সমাজের লজ্জা তুমি, কলঙ্ক তুমি। এতটুকু মনুষ্যত্ব, মানবতা, এতটুকু বিবেকও তোমার ভেতরে নেই।”
রাগে-দুঃখ,কষ্ট অপমানে প্রীতির ভেতরটা ছিঁ”ড়ে যাচ্ছে। তবুও ও নিজের ভেতরকার অহং নিয়ে চেঁচিয়ে উঠল,
-” না বাঁধেনি। কারন যা হয়েছে এমন কিছু হওয়ারই ছিলো। এরজন্য কোনো না কোনোভাবে স্বয়ং তুমি দায়ী।”
নীরব ক্ষিপ্ত গলায় চেঁচিয়ে উঠল,
-” এতবড় একটা অন্যায়, পা”প করার পরও বড় গলায় কথা বলছো কীভাবে? এতটুকু লজ্জা নেই। লজ্জায় তো মাটির সাথে মিশে যাওয়ার কথা। একে তো অন্যায় করেছো তারউপর গলা চড়িয়ে কথা বলছো। শেইম অন ইউ।”
প্রীতি দৃঢ় গলায় চ্যাচানো সুরে বলল,
-” সবকিছুর জন্য পরোক্ষভাবে তুমি দায়ী।”
নীরবের রাগের পারুদ বাড়ল। কষিয়ে আরেকটা চ’ড় মা’র’ল। প্রীতি দু পা পিছিয়ে ফ্লোরে পড়ে। প্রীতির ফর্সা দুইগালে পাঁচ আঙুলের ছাপ পড়ে র*ক্ত জমাট বাধতে শুরু করে। প্রত্যাশা ভ*য়ে জড়সড় দাঁড়িয়ে। নীরব ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,
-” প্রত্যাশার সাথে তোমার কিসের শ”ত্রুতা? একটা নিরীহ মেয়েকে কেনো বিপদে ফেললে? ওর সরলতার সুযোগ নিয়ে__”
রাগে কথা সম্পূর্ণ করতে পারে না নীরব। তানিয়া চেঁচামেচি শুনে এসেছে। প্রীতি ফ্লোরে দুইহাত রেখেই ভেজা গলায় উচ্চস্বরে বলল,
-” প্রত্যাশার সাথে আমার কোনো শ*ত্রুতা ছিলো না। বললাম না যা হয়েছে তোমার জন্য। তোমার চোখে ওকে খা*রাপ বানাতে ছবিগুলো তোলা। ওর ডাবের জলে ড্রা*গ মেশানো হয়। তারপর ছবি__”
নীরব একদলা থুতু ফেলে তিরস্কার, ধিক্কার জানিয়ে বলল,
-” বাহ্, বাহ্। প*শুর থেকেও হিং/স্র হয়ে এতবড় একটা অপরাধ করলে, এতটা নিচে নামলে। আবার বড় গলায় বলছো। লজ্জারাও তোমাকে দেখে লজ্জা পাবে। বাট এখন তো আমার ধারণা, আমার সন্দেহ প্রকট হচ্ছে, নীবিড়ের অসুস্থতার পেছনে তোমার হাত আছে। তুমি নিজেই?”
প্রীতি উঠে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলল,
-” নীরব, সেটা তো বলেছি আগেই, পারলে প্রুভ করে দেখাও। প্রীতির ভ’য় নেই সত্যি বলতে। প্রীতি কাউকে ভ’য় পায় না।”
নীরব কপালে আঙুল চেপে ধরল। বলল,
-” তোমার স্পর্ধা দেখে আমি স্তব্ধ। তুমি আমার বউয়ের সরলতার সুযোগ নাও।”
কথা শেষ করার আগেই আরেকটা থা’প্প’ড় দিতে দিতে বলল নীরব,
-” কেনো করেছো এসব? কি চাও তুমি?”
প্রীতি পড়ে যেতে নেয়। ঠিক তক্ষুনি দুটো বলিষ্ঠ হাত এসে আঁকড়ে ধরে। সার্থক দুহাতে আগলে ধরে। উপর থেকে সে সবটা না শুনলেও শেষের দিকের কথাবার্তা শুনেছে। প্রীতি রাগে কাঁপতে কাঁপতে গলা ফাটিয়ে বলল,
-” কারন আমি ত__”
প্রীতির কথা ঢাকা পড়ে সার্থকের কথায়। অকস্মাৎ সার্থক বলে উঠল,
-” কারন আমি। প্রীতি যা করেছে আমার কথায়।”
নীরবের কপালে প্রগাঢ় রেখার উদয় হয়। বলল,
-” হোয়াট?”
প্রীতিকে দাঁড় করিয়ে সার্থক নির্ভয় চিত্তে দু’কদম এগিয়ে বলল,
-” ইউ নো আমি প্রত্যাশাকে পছন্দ করতাম। প্রত্যাশাকে পেতে এটা আমার প্লান ছিলো। প্রীতির দোষ নেই ও আমাকে হেল্প করেছে। একজন বোন ভাইয়ের কথা ফেলতে পারেনি। প্রীতি যা করেছে সবটা আমার কথায়।”
প্রত্যাশার মাথা ফাঁকা ফাঁকা ঠেকছে। নীরবের মেজাজ বিগড়ে গেল সার্থকের শার্টের কলার চেপে ধরল। রাগে বিশ্রী গা/লি দিল,
-” ইউ বা/স্টা/র্ড। অন্যের বউকে পেতে তোরা নোং/রামি করিস। এত এত লেখাপড়া শিখে কী হলো? তোদের থেকে রাস্তার কু/কুরও ভালো।”
প্রীতি স্তম্ভিত। ও নিজে যখন একসময় ভাইকে ফাঁসাতে ভাইয়ের পুরনো সিম দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে সেখান থেকে নীরবের কাছে মেসেজ দিয়েছিল। আর আজ কী না তার ভাই নিরপরাধ হয়েও নিজের কাঁধে দোষ তুলে নিচ্ছে অবলীলায়। শুধুমাত্র বোনের দোষ ঢাকতে। প্রীতির বুক ফেটে আসলো দ্রুত নীরবের হাত ধরে বলল,
-” ছাড়ো, নীরব ভাইয়ার কলার ছাড়ো।”
প্রত্যাশা পাশ থেকে বলল,
-” নীরব মাথা ঠাণ্ডা করুন। প্লিজ ঠাণ্ডা মাথায় যা করার করবেন।”
নীরব তাচ্ছিল্য ভাবে হাতটা সরাল। আঙুল তুলে বলল,
-” সব প্রমাণ আমার কাছে আছে। একটা মেয়েকে ড্রা*গ দিয়ে অবেচতন করার অপরাধে কী শা’স্তি হতে পারে জানা আছে তো? আমি তোমাদের দুজনকেই আজকের মধ্যে থানায় ভরব। উপযুক্ত শা/স্তি আইন দিবে। আমার হাত নোং/রা করতে চাই না।”
তানিয়া মুখ খুললেন। অনুনয় করে ব্যাকুল স্বরে বললেন,
-” নীরব বাবা ওরা দু’জনে খুব রাগি আর জিদি। একটা ভুল না হয় করেই ফেলেছে। এবারের মত ক্ষমা করে দাও। এসব ব্যাপার নিয়ে কেস কাচারী হলে লোক মুখে ঘটনা ছড়িয়ে যাবে। সেখানে দুই পরিবারেরই সম্মান হানি হবে।”
সার্থককে লেবুর শরবত নিয়ে যাওয়া, তারপর বয়টি বলেছে প্রীতি ছবি তুলতে বলেছিল। দূর থেকে জুম করে ছবি তোলা হয়। সেই হিসেবে সার্থকের দিক থেকে সব সন্দেহের তীর সরিয়ে নেয়া হয়। আর সার্থক যে প্রত্যাশাকে পছন্দ করে এটা তো নীরবের অজানা নয়। তাই বিষয়টা নীরবের কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকল না। তানিয়া আরো অনেককিছু অনুরোধ, অনুনয় করে বললেন। প্রত্যাশা পাশ থেকে নীরবকে বলল। এটা আর না বাড়াতে। তানিয়া মেয়েকে শাসিয়ে বললেন,
-” প্রীতি নীরব-প্রত্যাশার থেকে ক্ষমা চেয়ে নাও। সার্থ তুমিও।”
প্রীতি অনড়। সার্থক সবটা নিজের কাঁধে নেয়। বোঝাতে চায় প্রীতি শুধু তাকে সাহায্য করেছে। প্রত্যাশা নীরবকে বোঝাল,
-” নীরব, এটা নিয়ে কেস-কাচারি হলে বাসার সবাই জেনে যাবে। বিষয়টা বোধহয় ভালো হবে না। আপনি, আমি সত্যিটা জানি এটাই যথেষ্ট। আর ওনারা যেহেতু ভুল বুঝতে পেরেছেন। একটু মার্সি না হয় করলেন।”
তানিয়া হাত জোড় করে বললেন,
-” নীরব বাবা আমি আমার বাচ্চা দু’টোর হয়ে হাত জোর করে মিনতির সুরে বলছি, দয়া করে এটা নিয়ে মামলা করো না। এতে ওদের দুজনের ক্যারিয়ারের উপর প্রভাব পড়বে। স্ক্যান্ডাল ছড়িয়ে পড়বে। বৃদ্ধা আন্টির উপর এতটুকু দয়া করো বাবা।”
নীরব ঘৃ*ণায় কিছুই বলতে পারল না। রাগটা দমিয়ে কোনো বাক্য ব্যয় না করে সোজা প্রত্যাশার হাত ধরে বেরিয়ে যায়।
প্রীতি রুমে গিয়ে বিছানা থেকে ল্যাপটপ তুলে ছুঁড়ে মা”রে। একেএকে সবকিছু ভাঙতে থাকে। ফ্লাওয়ার ভাজটা হাতে তুলে আয়নার উপর মা”রল। আয়নার কাঁচ সেকেন্ডেই গুঁড়ো গুঁড়ো হয়। একটা কাঁচ হাতে তুলে নেয়। হাতের শিরা কা*টতে শুরু করবে সেই সময় সার্থক চেঁচিয়ে আটকে দেয়। প্রীতির ইগো হার্ট হলে, প্রিয় মানুষের কাছ থেকে অপমানিত হলে ও যে নিজেকেই শেষ করে দিতে পারে। প্রীতিকে এতটুকু চেনে বলেই সমস্ত দায়ভার নিজের কাঁধে নেয় সার্থক। ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে দু’জনের হাতই কে”টে যায়। সার্থক বোনের মাথাটা বুকে চেপে বলল,
-” প্রীতি পা”গল হয়েছিস তুই?”
প্রীতি ঝরঝরিয়ে কেঁদে উঠল,
-” ভাইয়া নীরব আমার গায়ে হাত তুলেছে। যা নয় তাই বলেছে। তাও ওই মেয়েটির সামনে। একটা সাধারণ মেয়ের জন্য নীরব আমাকে থা”প্পড় মে*রেছে।”
-” প্রীতি ওই মেয়েটা তোর কাছে সাধারণ লাগতে পারে। বাট মেয়েটা সবার কাছে সাধারণ নাও হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা মেয়েটা নীরবের স্ত্রী। আর তুই যা করেছিস, এরকম হওয়ারই ছিলো। রাগে তুই হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিস। মনুষ্যত্ব জলাঞ্জলি দিয়েছিস। প্রীতি এখনো সময় আছে। নিজের ভুল শুধরে নে।”
ওদিকে রেস্টুরেন্টে বসে নীরব-প্রত্যাশা। নীরবের টেনশন হচ্ছে। মনে হচ্ছে বোকামি হয়ে গেল। আসলে ওই ছেলেটির সাথে গতকালই নীরবের কথা হয়েছিল। তাই প্রীতির মুখোমুখি না দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। আবার প্রত্যাশাকেও জানানো উচিত। ওর সরলতার সুযোগ কীভাবে অন্যরা নেয়। মানুষ চেনা দরকার। যাতে পরবর্তীতে কোনো কাজ করার আগে একবার হলেও ভাবে। প্রত্যাশা বারবার বলছে— ঠিক আছে, সমস্যা নেই। ও এসব মাথা থেকে ঝেড়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করবে। অনেক কথাবার্তা শেষে প্রত্যাশা বলল,
-” নীরব, আপনি কাল পরীক্ষার আগে দেখা করবেন তো?”
-” নিশ্চয়।”
-” আমি কিন্তু হলে ঢোকার আগে আপনার অপেক্ষায় থাকব। আব্বু সাথে যাবে। তবুও আমি আপনাকেও চাই।”
অনেকক্ষণ কথাবার্তা শেষে পরিবেশটা স্বাভাবিক হয়। নীরব মাথা ঝেড়ে ফেলল। বলল,
-” আমি ঠিক টাইম মতো উপস্থিত হবো।”
সকালে ইচ্ছে মায়ের রুমে যায়। মায়ের ফোনে গেইম খেলবে বলে। প্রীতির একহাত বেড ছাড়িয়ে নিচের দিকে ঝুলছে। ইচ্ছে বেডে উঠে ডাকল,
-” মাম্মা? মাম্মা ?”
প্রীতির নড়চড় নেই। ইচ্ছের চোখ গেল প্রীতির ঠোঁটের কিনারায়। ঠোঁটের কোণে ভেজা, ছ্যাপছ্যাপ কিছু চিকন রেখা হয়ে পড়ছে। ফ্রক তুলে ইচ্ছে ছোট্ট হাতে মুছে দিল মায়ের ঠোঁটের পাশটা। আবার ডাকল,
-” মাম্মা? তোমার ফোন?”
বারবার ডেকেও কোনা সাড়া না পেয়ে ইচ্ছে ভ’য় পেল। ছোট্ট মনে কার্টুনে দেখা দৃশ্যের কথা স্মরণ হলো। এক দৌড়ে মামার ঘরে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মামাকে ডেকে আনল।
-” মামা, মাম্মা কথা বলছে না।”
সার্থক উদ্ভ্রান্তের মতো আসে। প্রীতিকে অসাড় নিস্তেজ হয়ে বিছানায় দেখে বুকটা হাহাকার করে উঠলো। কাঁপা কাঁপা হাতে পালস চেক করলো। পাশের বেড টেবিলে স্লিপিং পিলের পাতা ফাঁকা। সার্থক চোখবুঁজে অসহায় হয়ে আওড়ালো— উফ্! যেই ভ”য়টাই পাচ্ছিলাম। সেটাই হলো।
কিছুক্ষণ পর,,
ইচ্ছে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির টেলিফোন থেকে নীরবের কাছে কল করে। নীরবের নম্বর তার মুখস্থ। সেটা নীরব নিজেই করিয়ে গেছিল। শিখিয়ে দিয়ে বলেছিল—- তোমার কোনো সমস্যা হলেই তুমি আমাকে ফোন করবে।
নীরব শাওয়ার নিয়ে বের হয়। আগে যাবে প্রত্যাশার পরীক্ষা কেন্দ্রে তারপর অফিসে। এমন সময় ফোন বাজল, নম্বর দেখে ভ্রূ কুঁচকে যায়। রিসিভ করতেই কান্নার শব্দ এলো। নীরব ব্যগ্র কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
-” ইচ্ছে? ইচ্ছে সোনা, কী হয়েছে? কাঁদছো কেনো?”
ইচ্ছের কান্নার বেগ থামছে না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল,
-” মাম্মা, মাম্মা কথা বলছে না। জানো পাপা মাম্মা চোখ খুলছে না।”
নীরব জিজ্ঞেস করল,
মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৩৬
-” তুমি কান্না থামাও। কী হয়েছে?”
-” মাম্মা কথা বলছে না। আমি ডাকছি তাকাচ্ছে না। আমি জানি না। মনা নানুকে বলছে, মাম্মা ঘুম ঔষধ খেয়েছে। মাম্মার ঘুম ভাঙছে না। মাম্মা কী তারা হয়ে যাবে পাপা? আমি মোবাইলে দেখেছি, যাদের মাম্মা থাকে না, মাম্মাকে মিস করলে আকাশে তারা দেখে।”
নীরব জোড়াল শ্বাস ফেলে আওড়ালো,
-” ওহ্, শিট!”