প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৭৮ (২)
আদ্রিতা নিশি
রাত পেরিয়ে গেছে ছয়টার কোঠা। অরিত্রিকা নিখোঁজ হওয়ার চার ঘণ্টা হয়ে গেল।কিন্তু এখনও তার কোনো হদিস নেই। ইতিমধ্যেই পুলিশ আর অনুসন্ধানী দল মাঠে নেমেছে। চৌধুরী পরিবারের ভেতরের লোকেরা তাদের পরিচিত আইনজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। সবাই যার যার মতো করে চেষ্টা করছে তাকে খুঁজে পাওয়ার।
এইদিকে সারহানের কাছে কিছু অতি গোপনীয় তথ্য ছিল সেগুলো কাজে লাগিয়েছে পরিস্থিতি সামাল দিতে। তার অর্ডারে ইতোমধ্যে পুলিশের স্পেশাল ফোর্স কাজে লেগে পড়েছে। পুলিশ বাদেও লিকারকে কাজে লাগিয়েছে। পুরো শহরজুড়ে এখন সতর্ক অবস্থান।
প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি সব জায়গায় বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। পরিত্যক্ত এলাকা, গ্যারেজ, গুদামঘর এমনকি শহরের প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতেও চলছে তল্লাশি। কোনো সুযোগ ছাড়ছে না তারা।সারহান নিজের কৌশল কাজে লাগিয়ে গোটা শহরটাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে মুড়ে ফেলেছে। কিড*ন্যাপারের শহর ছেড়ে পালানোর কোনো পথ খোলা রাখেনি। প্রত্যেকটা রুট, প্রতিটি সম্ভাব্য গেটওয়ে নজরদারির আওতায়।সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছে উদ্ধার অভিযান। রাজশাহী শহরের রাস্তায় কালো রঙের গাড়ি শব্দ তুলে ছুটে চলেছে। স্টিয়ারিংয়ে আবির চোয়াল শক্ত করে দ্রুত ড্রাইভ করে চলেছে। পাশে বসে থাকা সারহান নিরবচিত্তে জানালার বাইরে নিগূঢ় চাহনিতে তাকিয়ে আছে। আবির বন্ধুর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে পাশের সিটে তাকায়। গাড়ির হালকা সাদাটে আলোয় সারহানের র*ক্তাভ বর্ণের তীক্ষ্ণ তলো*য়ারের মতো চোখ দুটো দেখে আঁতকে ওঠে। সে গাড়িটা হালকা শ্লো করে সামনে তাকায়। অতঃপর শঙ্কা গিলে বলে ;
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“দোস্ত! চিন্তা করিস না। অরিত্রিকাকে খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবো।”
সারহান সিটে হেলান দেয়। তার মুখাবয়ব অতিশয় গম্ভীর। চুলগুলো খানিকটা উষ্কখুষ্ক। চক্ষুদ্বয় র*ক্তের ন্যায় লাল! দুশ্চিন্তায় নিমজ্জিত হওয়ায় কপালের রগগুলো দৃশ্যমাণ। কাঠিন্যতায় মোড়া ব্যক্তিত্ব যেন কিছুটা নড়বড়ে দেখাচ্ছে। চোখে মুখে উদ্বেগ, উৎকন্ঠার ছাপ স্পষ্ট!সে সুস্পষ্টরূপে আবিরের কথা শ্রবণ করল। কিন্তু কোনো প্রতিত্তোর করল না। কি ভাবে বলবে? এ মুহুর্তে অন্তঃকরণে তীব্র তাণ্ডবলীলা চলমান! প্রিয়তমাকে হারানোর আশঙ্কা বক্ষপিঞ্জরে গেঁথে যাচ্ছে কাঁটার ন্যায়। এক অজানা আতঙ্কে, বিভ্রান্তিতে সর্বাংশে অসহায় বোধ করছে।এই প্রথমবার সে নিজেকে অনুধাবন করল দুর্বলরূপে।
যে মন চিরকাল কঠোর ও পাষাণপ্রতিম ছিল সেই মনের গভীরে আজ স্পষ্ট ভয়ের অনুভব। তবে কি, কঠিন হৃদয়ও কাউকে হারাবার আশঙ্কায় কেঁপে উঠে? ভালোবাসা নামক মায়ায় আবদ্ধ হলে কি মানুষ কখনো অক্ষম, নিরুপায় বোধ করে? হ্যাঁ, করে। প্রকৃত প্রেম হৃদয়ে প্রশান্তির পাশাপাশি একধরনের অস্থিরতাও আনে।তবুও, এই মুহূর্তে ভগ্নপ্রায় হওয়া চলবে না। বুকে যেই বেদনার ঢেউই প্রবাহিত হোক না কেন, বাহিরে সে অটল, দৃঢ়। বক্ষে পাথরের ন্যায় ভার চাপিয়ে স্থিরচিত্তে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। সারহান নির্জীব, নিস্পৃহ চাহনিতে হাতে থাকা ফোনটার লক খুলে হোম স্কিনে দৃষ্টি স্থির করল। তখুনি জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠল লাল পাড়যুক্ত শ্বেতবর্ণ শাড়িতে আবৃত কিশোরীর ছবি।
বয়স তখন ষোলো বা সতেরো! হালকাভাবে অলংকৃত, প্রসাধিত মুখশ্রীতে নির্মল হাস্যচ্ছটা,খোলা কৃষ্ণ বর্ণের চুলগুলো কোমর পর্যন্ত বিস্তৃত।কাজলবরণ আঁখিযুগল উন্মীলিত, স্থিরভাবে চেয়ে আছে দূর আকাশপ্রান্তে।সময়টি ছিল গোধূলিলগ্ন।সূর্য অস্তগমনকালে আকাশে ধূসর সোনালি রেখার আবির্ভাব। সারহান তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গম্ভীর ও রূঢ় প্রকৃতির ছাত্র।সেই গোধূলি ক্ষণেই, পুরুষালি হৃদয়ের অন্তঃস্থলে প্রথম অপূর্ব অনুভবের উদয় ঘটে।এক দুর্বোধ্য আবেগ আলোকচ্ছটার ন্যায় করেছিল এক দাম্ভিক মনে। সেই অনুভূতি চঞ্চলা, সহজিয়া, সরলমনা এক কিশোরীর প্রতি ভালোলাগা অনুভব করেছিল।সেই অনুভূতির নাম প্রণয়ানুভূতি।
সারহানের চক্ষুদ্বয় জ্বলে ওঠে। স্মৃতিচারণে মস্তিষ্ক থিতিয়ে উঠে। একের পর এক অরিত্রিকার করা উদ্ভট কর্মকাণ্ড, সাজ এবং প্রণয়কাহনের দৃশ্য চক্ষুপটে ভাসতে থাকে। তাতেই বুকের ভেতর দাবানলের ন্যায় আগুন দগ্ধ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। সে দ্রুত ফোনটা বন্ধ করে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসে। রুদ্ধ শ্বাস টেনে নির্জীব, উৎকন্ঠিত গলায় অস্পষ্ট কন্ঠে আওড়ায়;
“ফাইরুজ! তুই কোথায়? আমার সোনাটাহ! এভাবে আমাকে নিঃশেষ করার আয়োজন করে কোথায় হারিয়ে গেলি? পুরো শহরে পুলিশ, আমার লোক লাগিয়েছি তোকে খুঁজতে অথচ কোথাও তুই নেই। এই প্রথমবার তোর নেতাসাহেব অসহায় অনুভব করছে। তোকে হারানোর ভয় করছে। তোকে ছাড়া দমবন্ধ হয়ে আসছে।”
এতোটুকু বলেই দিশেহারা, উদভ্রান্ত কন্ঠস্বর থেমে গেল। ভয়সবত প্রেমিক পুরুষ জ্বলে ওঠা চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে মাথা ঠেকায় সিটে। আতঙ্কে ভেজা অস্তিরতায় ডুবন্ত চোখের কার্ণিশ বেয়ে একফোটা অশ্রু গড়ায়! আশ্চর্য পাষান মানবের চোখে কি অশ্রু মানায়? হ্যা মানায়, ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয়ে অশ্রু গড়ায়। গাড়িটা রাজশাহীর মেইন ওয়ে দিয়ে ছুটছে। সময় নিজের গতিতে চলে যাচ্ছে। আবির কিয়ৎ সময় মৌন রইল। কি স্বান্তনার দিবে বুঝতে পারলো না। বন্ধুকে কোনোদিন এমন দুর্দশা এবং ভঙ্গুর অবস্থায় দেখেনি সে। তবে এবার দেখল। ভালোবাসা সত্যি অদ্ভুত! একজন কঠিন মনের মানুষকে নিমেষে দুর্বল করতে পারে। সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। নীরবতা ভেঙে উৎকন্ঠা চেপে বলল;
“নিজেকে শান্ত রাখ।”
সারহান চক্ষুদ্বয় খুলে। অস্থিরতায় পরিপূর্ণ মনোভাব নিয়ে বিরস কন্ঠে বলল;
“শান্ত থাকতে পারছিনা আমি। চার ঘন্টা পেরিয়ে গেল অথচ ফাইরুজের খবর নেই। সেই সাথে শু*য়োরের বাচ্চাও উধাও।”
“আমি শিউর অরিত্রিকাকে ওই জা*নোয়ারটাই কিডন্যাপ করেছে। শ্লা! সেদিন ওকে ছেড়ে না দিয়ে মে*রে হাত পা অকেজো করে দিলে তোর কলিজায় হাত দেওয়ার সাহস করতো না।”
“ভেবেছিলাম, মার খেয়ে, অপমানিত হয়ে শিক্ষা হয়ে গেছে। কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না। আমার একটা ভুলের জন্য ফাইরুজ দ্বিতীয়বারের মতো বিপদে পড়ল।”
“শ্লা! একটা সাইকো। তাজিয়া তোকে ভালোবাসতো, সামান্য এই কারণে মেয়েটাকে মে*রে দিলো? এই ঘটনার সাথে মেয়েটার নিজের বাপও জড়িত। নয়ন তালুকদারের ডান হাত এবং তাজিয়াকে কে কে মে*রেছিল জানার পর ছুটে গিয়েছিলাম নাটোরে। ওখানে গিয়ে দেখি আগেই তোর সাথে ওর মুলাকাত হয়ে গেছে।”
আবির গমগমে কন্ঠে বলল। সারহানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হলো। কাঠিন্যতা এঁটে বলল ;
“তুই জানার আগে থেকে জানতাম এসব কাহিনী। কিন্তু এসব কান্ডে আমাদের কোনো এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জড়িত থাকবে তা একদম অপ্রত্যাশিত ছিলো।”
আবির বিরক্তিপ্রকাশ করে বলল;
“তুই ওকে বন্ধু কেন বলিস? ও বন্ধু বলার অযোগ্য। মনে আছে ভার্সিটিতে কি করেছিল?”
“হুম মনে আছে।”
“দয়া করে শা** কে বন্ধু বলিস না। এমনি অরিত্রিকাকে পাচ্ছি না তাই মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ওসব বালের আলাপ করার মুড আসছে না। ওরে পাইলে গোবর ওয়ালা জুতা দিয়ে পিটাইতাম।”
আবিরের কথা শেষ হতেই সারহানের ফোনে একটা মেসেজ আসলো। সারহান দ্রুত হাতে মেসেজ চেক করল। মুহুর্তেই মুখাবয়ব অতিশয় শান্ত হয়ে গেল। দিশেহারা, উদভ্রান্ত মনে যেন স্বস্তি এলো। বক্ষপিঞ্জরে নিভৃতসুধাকে হারানোর ভয় কিছুটা কমে এলো। মনে ঝড়, তান্ডবলীলা কমতে শুরু করল। সে আবিরের দিকে তাকাল। অদ্ভুত কন্ঠে বলল;
“গোবরওয়ালা জুতার ব্যবস্থা কর। কারণ একটু পরেই পেটানোর সুযোগ পাবি।”
“মানে?”
আবির অবুঝের মতো জিজ্ঞেস করল। সারহানের গম্ভীরমুখ কিঞ্চিৎ শীতল হলো। সে ফোনটা বের করে একটা মেসেজ দেখালো। আবির ব্রেক কষলো। চক্ষুদ্বয় বড় করে বিস্মিত কন্ঠে বলল;
“ওর লোকেশন পেয়ে গেছিস?”
সারহান গম্ভীর স্বর তুলে বলল;
“হুমম।”
“এই জন্য এতোক্ষণ নিশ্চিন্তে বকবক করছিলি?”
“মাত্র ম্যাসেজ এসেছে।এবার দ্রুত লোকেশন অনুযায়ী গাড়ি নিয়ে চল।”
“অরিত্রিকা ঠিক আছে তো?”
“ওখানে গেলে বুঝতে পারবো। দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দে।”
সারহানের আদেশ পেয়ে আবির দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ড্রাইভ করতে লাগল। সারহান সাদাতের নাম্বারে ছোট্ট একটা মেসেজ পাঠালো — “তোর ভাবিকে পাওয়া গেছে। সবাইকে জানিয়ে দিস।” অতঃপর কল লিস্টে ঢুকে কারো নাম্বারে কল দিলো সারহান। এরপর দাম্ভিকতা নিয়ে ফোনটা কানে গুঁজল। অপর পাশ থেকে ভেসে আসলো একজন পুরুষের কন্ঠস্বর;
“ আসসালামু আলাইকুম স্যার!”
সারহান কন্ঠে দৃঢ়তা এনে প্রতিত্তোর করল ;
“ ওয়ালাইকুম আসসালাম ওরিয়ন!”
ওরিয়ন হাসল। গদগদ হয়ে বলল;
“স্যার! লোকেশন পেয়েছেন?”
সারহান পুরূ কন্ঠে বলল;
“পেয়েছি। ফাইরুজের খবর পেয়েছো?”
“জ্বি স্যার! ম্যাডাম সাইকো ব্যাটায় এখনো ওইখানে যায়নি।”
“ওকে! টাকা কিছুক্ষণের মধ্যে পেয়ে যাবে।”
“শুকরিয়া।”
সারহান কল কেটে ফোনটা পাঞ্জাবির পকেটে রাখল। এতোক্ষণের চিন্তিত ভাব, উদভ্রান্ততা মিলিয়ে ক্রোধে পরিণত হলো। সে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস টানলো। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা! লোকেশন অনুযায়ী পৌঁছতে পারলেই লুকোচুরি, শত্রু- বন্ধু খেলার পরিসমাপ্তি ঘটবে।
❝Do you recognize me?I’m the mysterious shadow who gifted you that disgraceful past… three years ago . Do you remember that night, when you were so close to me?
I never forgot it.But you did, didn’t you?
Of course you did…Because you were unconscious.❞
[তুমি কি আমাকে চিনতে পারছো? আমি সেই রহস্যময় মানুষ, যে তিন বছর আগে তোমার জীবনে এক কলঙ্কিত অতীত রেখে গিয়েছিলাম। মনে আছে সেই রাতের কথা? তুমি ছিলে আমার খুব কাছে খুবই কাছে। আমি আজও ভুলিনি সেই রাতের প্রতিটি মুহূর্ত। অথচ তুমি ভুলে গেছো, তাই তো? ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক! তুমি তো সেদিন অচেতন ছিলে।]
পরিত্যক্ত দ্বিতীয় তলার একটা বাড়ির নিচতলার এল রুমে চেয়ারে অর্ধ অচেতন বেঁধে রাখা হয়েছে অরিত্রিকাকে। দুই, হাত দুই পা মোটা দড়ি দিয়ে বাঁধা। মুখ খোলা। গায়ের জামাটা ময়লা এবং কিছু অংশে ছেঁড়া। ওড়নাটা এলোমেলো করে গলার দুপাশে ফেলা। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। মেয়েলী শরীরে হাত, গলায়, পায়ে ক্ষ*ত দৃশ্যমান। ঠোঁটের কোণে, কপালে এক পাশে এখনো র*ক্ত ঝড়ছে। মেয়েটা কিছুক্ষণ পর পর য*ন্ত্রণা, ব্য*থায় ফুপিয়ে উঠছে। চোখ দুটো বন্ধ করে অনবরত নিঃশব্দে কাঁদছে। তার অবস্থা করুণ।হঠাৎ কোথা থেকে ভেসে আসে এক পুরুষ কণ্ঠস্বর। মুহূর্তেই সাড়া দেয় অরিত্রিকার নিস্তেজ, মেয়েলি শরীরটা।ভয়ে কেঁপে ওঠে সে।
বুকের ভেতর ধড়ফড় শুরু হয়, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসে।ধীরে ধীরে খুব কষ্টে চোখ মেলে তাকায় সে।চোখে ক্লান্তি, ভয় আর অসহায়তা। তটস্থ দৃষ্টিতে চারপাশে তাকিয়ে কণ্ঠের উৎস খোঁজে। ঠিক তখনই সামনে দেখতে পায় একজন কালো হুডি পরা পুরুষকে। মুখে কালো রঙের মাস্ক।দেখা মাত্রই থমকে যায় অরিত্রিকা। মুহূর্তেই ঝাঁপিয়ে পড়ে স্মৃতিতে সেই জঘন্য রাতের ভয়াল দৃশ্য। শরীরটা যেন জমে যায়। মনটা ছটফট করে পালাতে। আতঙ্কে নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে। চোখ বড় হয়ে যায়।উদ্বিগ্নতা, আতঙ্ক আর চরম ভয় তাকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। সে চেষ্টা করে চেয়ার থেকে ছুটে পালাতে, দড়ির বাঁধনে দুলে ওঠে কেবল। কিন্তু চেষ্টা থামায় না মাথা নাড়ায়, হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে।
“আরেহ! ভাবী ভয় পাচ্ছেন কেন দেবরকে দেখে? শান্ত হয়ে বসুন তো।”
অরিত্রিকা থেমে যায়। পুনরায় বিমর্ষ চাহনিতে তাকায়। বুকের মধ্যে চাপা ক্রোধ উগ্রে বেরিয়ে আসতে চায়। কিন্তু ঠোঁটে ক্ষ*ত থাকায় কথা বলতে কষ্টকর! সে চেষ্টা করে। জ্বলন্ত চাহনি নিক্ষেপ করে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠে;
“আপনি আবারও কেন আমার জীবনে ফিরে এসেছেন? একবার তো আমায় জীবন্ত লা*শ বানিয়ে চলে গিয়েছিলেন। এবার কি মে*রে ফেলতে এসেছেন?”
ব্যক্তিটি হেলেদুলে এগিয়ে আসলো। পাশে রাখা একটা চেয়ার টেনে পায়ের ওপর পা তুলে বিদঘুটে ভাবে হেসে বলল;
“তেমনটাই ভাবুন ভাবী।”
“ভাবী, ভাবী কেন করছেন কেন বাঙ্গির পুত? আমি আপনার কোন ভাইয়ের বউ লাগি?”
“ভাবী! আপনার সাহস দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি। আপনি আমাকে গালি দিচ্ছেন? ভুলে গেছেন সবকিছু।”
“কিছু ভুলিনি আমি। মেজাজ গরম না করে আসল পরিচয় বলুন।”
“তোর সারহান ভাইয়ের কোনো এক সময়ের বন্ধু।”
ব্যক্তিটি কুটিল হাসি দিয়ে মুখের মাস্কটা খুলে ফেলল। দৃশ্যমাণ হলো রহস্যময় ব্যক্তিটির মুখ। অরিত্রিকা আরেক দফা চমকালো। এই চেহারা সে চিনে। সারহান ভাইয়ের প্রোফাইলে ভার্সিটিতে পড়াকালীন সময়ে পোস্টকৃত কক্সবাজারে ট্যুরের গ্রুপ ফটোতে এই মানুষটাকে দেখেছিল। ভাবতেই ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসলো বন্ধুর মুখোশ পড়ে বন্ধুর পিঠ পিছে ছুড়ি ঢুকিয়ে দিয়েছে। বন্ধু থেকে শত্রু হয়েছে। সেই শত্রুতার সূত্রপাত ধরে তার জীবনটা বিষিয়ে দিয়েছিল। কিভাবে পারল এমন জঘন্য কাজ করতে? অরিত্রিকা এটা ভেবে কেঁদে ফেলে। মনে পড়ে সামনে বসে থাকা মানুষটা তাকে কিভাবে ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছিল।হুমকি দিয়েছিল ভিডিওটি ছড়িয়ে দেওয়ার। শুধু মানসিক নয়, শারীরিকভাবেও অরিত্রিকাকে লাঞ্ছিত করেছিল।
কোনোরকমে নিজের সম্মান বাঁচিয়ে পলায়ন করেছিল। সেই অন্ধকার রাতে অস্পষ্ট এক পুরুষের অবয়ব দেখেছিল। ক্ষীণ আলোয় আবছা মুখ দেখেছিল। কিন্তু সেই আবছা – অস্পষ্ট চেহারা তার কাছে পরিষ্কার ছিল না। তবে এখন কাপুরুষটাকে চিনতে পেরেছে। সেই ঘটনার পর ভয়, লজ্জা আর অপমানে কারো কাছে কিছু বলতে পারেনি সে। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল ধীরে ধীরে। ব্যক্তিটির মুখে যেন হাসি সরছে না। কেমন খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেয়েলী শরীর দেখছে।
“তোকে দেখে আবারও মনটা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাচ্ছে। সেদিন তো আমার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে পালিয়েছিলি কিন্তু আজ পালাতে পারবি না। ক্যান আই….”
কথাটি অসমাপ্ত রেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল ব্যক্তিটি। অরিত্রিকা ভয়ে সিঁটিয়ে গেল। চোখ মুখ কুঁচকে ডুকরে কেঁদে উঠল। কন্দনরত কন্ঠে বিরবির করে বলল;
“সারহান ভাই আপনি কোথায়? দ্রুত আসুন, আমাকে নিয়ে যান এই পিশাচের কাছে থেকে।”
ব্যক্তিটি কুটিল হাসি বজায় রেখে বলল;
“ যতক্ষণ আমি না চাইবো তোর সারহান ভাই এখানে আসতে পারবে না।”
“আপনি….. একটা জঘন্য মানুষ।”
“আরেকটু জঘন্য হই?”
“দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন।… আমাকে বাঁচতে দিন।”
“স্যরি কথাটা রাখতে পারলাম না। আমি তাজকে হারিয়ে যতটা কষ্ট পেয়েছি ততটা কষ্ট সারহানকে দেবো আমি। তোকে ওর জীবন থেকে চিরদিনের জন্য সরিয়ে দেবো। তোকে এমন মৃ*ত্যু দেবো যেন মানুষের মুখে মৃ*ত্যু কারণ বলতে বাঁধে।”
ব্যক্তিটি হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে আসলো অরিত্রিকার দিকে। হাতটা উঁচিয়ে আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করল ওষ্ঠকোণের ক্ষ*ততে। অরিত্রিকা মুখটা ঘৃণায় সরিয়ে নিলো। ব্যক্তিটি হাসল;
“র*ক্ত আমার ভীষণ প্রিয়। আজ তোর র*ক্ত দিয়ে খেলবো। জানিস, তাজ সারহানকে ভালোবাসতো। আমি জানার পর মেনে নিতে পারিনি। মেয়েটাকে অনেকবার বুঝিয়েছি কিন্তু অবুঝ মেয়ে বোঝেনি আমার ভালোবাসা। তাই ওকে মে*রে দিয়েছি।”
অরিত্রিকা লোমহর্ষক কথাটা শুনে শিউরে উঠল। তৎক্ষনাৎ কান্না থেমে গেলে। হতবিহ্বল হয়ে ভীতিগ্রস্ত বদনে চাইল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা দিকে। ব্যক্তিটি হঠাৎ অরিত্রিকার হাত, পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে সটান হয়ে দাঁড়াল। কন্ঠে ক্রূরতা মিশিয়ে বলল;
“আরেকটা কারণ আছে ওর ম*রার পেছনে। সেটা হলো ; আমি তোর সাথে এবং সারহানকে মা*রার জন্য যা কিছু করেছিলাম সব তাজ জেনে গিয়েছিল। মামুর অপকর্ম, অ*বৈধ অস্ত্র,মে*য়ে পাচার এবং কে, ফাউন্ডেশনের অপকর্ম মানবদেহের অর্গান পাচা*রের সব প্রমাণ হাতে পেয়েছিল। সেই প্রমাণ সারহানকে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল। মেয়ে মানুষ আসলেই বোকা! সারহানকে পাওয়ার জন্য নিজের জীবন বাজি রাখল। মেয়েটা ভেবেছিল আমি কিংবা মামুজান ওকে কিছু করব না। আমরা সেই দৃঢ় বিশ্বাসকে লাথি মে*রে ওর জীবনটাই নিয়ে নেই। ইশ! কতো কষ্ট।”
অরিত্রিকা স্তম্ভিত হয়ে গেল। তার মস্তিষ্ক যেন অচল হয়ে গেল। সামনে দাঁড়ানো মানুষটা কিভাবে অবলীলায় তার সামনে অপরাধ স্বীকার করছে! তার শরীরে লোম দাঁড়িয়ে গেল। তাজিয়া নাম অচেনা মেয়ের জন্য ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। মানুষ কিভাবে পারে নিজের মেয়ে, আত্নীয়কে মা*রতে? তখুনি কিছু একটা অনুধাবন করে চমকে উঠল সে। সামনে দাঁড়ানো মানুষটি আর কেউ নয় বরং ইলহাম তালুকদারের ফুপাতো ভাই এবং নয়ন তালুকদারের বোনের ছেলে! তার বুক উত্তেজনায় কেঁপে উঠে। ওষ্ঠ ভিজিয়ে কম্পনরত কন্ঠে বলে;
“আপনি ইলহাম তালুকদারের ফুপাতো ভাই?”
ব্যক্তিটি এবার উচ্চস্বরে হেসে মাথায় থেকে হুডি ক্যাপটা ফেলে পাারি করে বলে উঠে;
“Yes! I am the villain haunting your existence, the shadow of fear in your soul, the stained chapter written in your life. I am none other than Nishad Ehsan.”
নিশাদ এহসান নামটা যেন বদ্ধ ঝংকার তুলল। অরিত্রিকা মুখ ফিরিয়ে নিল ঘৃণা আর ক্ষোভে। চোখের কোণ বেয়ে নীরবে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু। বুকটা যেন হঠাৎ করে চেপে ধরল কেউ। অসহনীয় য*ন্ত্রণা তাকে অস্থির করে তুলল। সেই পুরনো, ভয়ানক স্মৃতি আবার ফিরে এসে তাকে আরও একবার ভেঙে দিল ভেতর থেকে। সেই জঘন্য স্পর্শের কথা ভাবতেই গা গুলিয়ে উঠল।
একজন মেয়ের কাছে তার মর্যাদা, তার সম্মান সবচেয়ে বড়। আর যদি কেউ সেটা কেড়ে নিতে চায়, জোর করে, নির্দয়ভাবে? কী নামে ডাকা হয় এমন কাজকে?অরিত্রিকার জানা নেই, কিংবা হয়তো জানেও কিন্তু মুখে আনার সাহস হয় না। শুধু এটুকু জানে সে স্পর্শ তাকে কলঙ্কিত করেছে। শরীরের প্রতিটি কোষে লেগে আছে সেই দিনের দাগ আর সেই ভার বইতে বইতে কেটে গেছে তিনটা বছর। কেউ জানে না অথচ, প্রতিদিন একটু একটু করে পুড়েছে সে ভিতরে ভিতরে। যদি একটু সাহসী হয়ে সারহান ভাইকে তিনবছর আগে বলতে পারতো তবে আজ আবার এইদিন দেখতে হতো না। ছোট ছিল, অবুঝ ছিলো তাই হয়তো কোনটা ঠিক হবে বুঝতে পারেনি।
“আমি খুব সহজেই তোকে ব্ল্যাকমেইল করে চৌধুরী বাড়ির ভিতটা নাড়িয়ে দিয়েছিলাম। তখন ভেবেছিলাম, সারহান এবার নিশ্চয়ই দুর্বল হয়ে পড়বে, নির্বাচন করতে সাহস পাবে না। কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম সে মোটেও সাধারণ ছেলে না। নিজের দুর্বলতাকে ঢেকে রেখে উল্টো আরও দৃঢ়ভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে লাগল।
তখনই আমি ঠিক করলাম আরও বড় একটা চাল দিতে হবে। টার্গেট বানালাম ইসমা বেগমকে। টাকার লোভ দেখিয়ে চৌধুরী বাড়ির গোপন তথ্য হাতিয়ে নিতে থাকি। লোভে অন্ধ হয়ে সেই মহিলা একে একে সব খবর ফাঁস করে দিলো।
এই সুযোগেই তোকে ব্যবহার করি।তখনই জানতে পারি সারহান তোকে ভালোবাসে। এই ভালোবাসাকে অস্ত্র করে ওকে কাবু করার নতুন প্ল্যান সাজাই।তোর ফুপুকে বলি ইরফানের সঙ্গে তোর বিয়ে দিলে তুই চৌধুরী পরিবারের সম্পত্তির একটা অংশ পাবি। বোকা মহিলা কথাটা গিলে নেয়, আর কান্নাকাটি করে তোর বাবাকে রাজি করায় যেন তুই তার ছেলের বউ হোস। তোর বাবাও বোনের কান্না দেখে আর না বলতে পারে না।সবকিছু প্ল্যানমাফিক এগোচ্ছিল অরিনের সঙ্গে ব্রেকআপ করি, রাহাতের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তুতি করে দেই, তোকে ইরফানের সঙ্গে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকি।কিন্তু শেষ মুহূর্তে সারহান পুরো প্ল্যানটাই ভেস্তে দেয়। হুট করে অরিনের বিয়ে দিয়ে দেয় আবিরের সঙ্গে। আর তোকে নিজেই বিয়ে করে নেয়। দুইবার ব্যাটাকে মা*রার চেষ্টা করলাম। ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেছে।”
নিশাদ কথাটা কাঠিন্যতা এটে বলল। অরিত্রিকা আরও বেশী ভয় করতে শুরু করল। অতিরিক্ত চাপে মাত্রারিক্ত ঘামতে লাগল। সামনে দাঁড়ানো মানুষটিকে তার স্বাভাবিক মনে হলো না। গল্প, উপন্যাসে বিকৃত মস্তিষ্কের কিছু মানুষের গল্প পড়েছে। ঠিক তেমন মনে হলো। এই প্রথম নিজ চোখে সাইকো ধরনের মানুষ দেখল। সে ঘন ঘন শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করার প্রয়াস চালালো। চতুরতার সহিত আশেপাশে নজর বুলিয়ে পালানোর রাস্তা খুঁজতে লাগল। মনে মনে আকুলতা মিশিয়ে সৃষ্টিকর্তার থেকে সাহায্য চাইল। নিশাদ হয়তো বুঝতে পারলো মেয়েটির মনের ভাবনা। সে এগিয়ে আসলো। অতঃপর খপ করে ধরল অরিত্রিকার হাত। মেয়েটি আঁতকে উঠল। কিছু বোঝার আগেই পুরুষালি হাতটা তাকে টেনে নিয়ে পাশেই এক রুমের বিছানায় ছুঁড়ে ফেলল। অতঃপর আঙুল উঁচিয়ে হিসহিসিয়ে বলল;
“আমার কবল থেকে পালানোর চিন্তা বাদ দে। যার দিকে আমার একবার নজর পড়েছে সেই আমার শিকার হয়েছে। উদাহরণস্বরুপ ; মিহি এবং তাজকে দেখে নে।”
বিছানায় আছড়ে ফেলায় অরিত্রিকার হাতে এবং শরীরের ক্ষ*তে আঘাত লাগল। সে চোখ মুখ খিঁচে ব্য*থাতুর কন্ঠে চিৎকার দিয়ে উঠল। দুর্বল শরীরটা বিছানার ওপর নেতিয়ে পড়ল।তার চোখ দুটো ঘোলা হয়ে গেল। কেন যেন মনে হলো তার চারিপাশ অন্ধকারে ঢেকে আসছে। সে শুকনো ঢোক গিলল। আস্তে করে কাঠের বিছানায় মাথা ঠেকায়। কিছুক্ষণের মধ্যে শরীরটা স্থবির হয়ে আসে। চক্ষুদ্বয় বন্ধ হয়ে আসে। অনবরত অশ্রু গড়ায় চোখ বেয়ে। এক মুহুর্তে থেমে যায় তার পুরো দুনিয়া। মনে হয় এই বুঝি ডাক এসেছে দুনিয়া ছাড়ার। অর্ধ অচেতন সচল মস্তিষ্কে হঠাৎ ঝড় তোলে পরিবারের সদস্যদের মুখ, কাটানো মুহুর্তের স্মৃতি। পরপর সারহান ভাইয়ের সাথে কাটানো সুন্দর মুহুর্ত, রাগ অভিমানের মুহুর্ত, বিয়ের মুহুর্ত ভেসে ওঠে। সে ম্লান হাসে। শরীরের যন্ত্র*ণা ভুলে অতি কষ্টে আক্ষেপ করে অস্পষ্ট কন্ঠে আওড়ায় ;
“হয়তো আমাদের আর একসঙ্গে সংসার করা হলো না, সারহান ভাই… সারাজীবন পাশাপাশি থাকার যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, তা পূর্ণ হলো না। মৃ*ত্যুর আগে অন্তত একবার আপনাকে দেখে যেতে পারলাম না।এই আফসোসটাই বোধহয় সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।”
তখুনি নিশাদের হিংস্রাত্মক কন্ঠস্বর শোনা যায়;
“তোর সময় ফুরিয়ে এসেছে। আজ তোকে খু*ন করে আমি সারহানের থেকে প্রতিশোধ নেবো। ওকে বোঝাবো ভালোবাসার মানুষ হারানোর কষ্ট!”
কথাটি শেষ হতে গুলির শব্দে চতুর্দিক কেঁপে উঠল।লাল রঙের ন্যায় র*ক্তে রঞ্জিত হলো অরিত্রিকার শরীর। মুহুর্তেই নিস্তেজ শরীর কেঁপে উঠল। এক আত্নচিৎকারে ভারী হয়ে উঠল পরিবেশ। তখনই শোনা গেল পদধ্বনি। কেউ একজন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো বিছানার কাছে। উদভ্রান্তের ন্যায় অবহেলায় পড়ে থাকা শরীরটাকে দুহাতে আঁকড়ে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল। এরপরে মলিন, ফ্যাকাসে মুখখানায় অস্থির চিত্তে মেয়েলী মুখশ্রীতে উন্মাদসুলভ ভঙ্গিতে চু*মু দিয়ে ভড়িয়ে দিতে লাগল। ক্ষ*ত কিংবা র*ক্তের দাগের কোনো পরোয়া না করে ভালোবাসায় সিক্ত করল। পুরুষালি হাতদুটো মেয়েলী অসাড় শরীরটা আরো দৃঢ়ভাবে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে মানুষটি যন্ত্রণাক্লিষ্ট চিৎকার করে বলল;
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৭৮
“পাখি, চোখ মেলে তাকা আমার দিকে। দেখ আমি এসেছি৷ তোর সারহান ভাই এসেছে তোকে নিতে। একবার চোখ খুলে তাকা। এই শুনতে পাচ্ছিস, তোর নেতাসাহেব এসেছে। একবার কথা বল। একবার আমার দিকে তাকা।”
সারহানের কাতর কন্ঠ, অস্থিরতায় ভারী উঠল পরিবেশ। মানুষটা উদভ্রান্তের মতো প্রেয়সীকে ডাকতে লাগল। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পেল না। সে আরও অস্থির হয়ে উঠল। অবর্ণনীয় কষ্টে আবারও কাতর গলায় বলল;
“এই ফাইরুজ! ওঠ। এভাবে চুপচাপ হয়ে আছিস কেন? তোকে এমন মানায় না। আমি তোর নিশ্চুপতা সহ্য করতে পারছি না। একবার চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে আমায় ডাক না সোনা।”