মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪৫
ইশরাত জাহান
কিছু বলবে ভাবী?”
হিয়ার পাশে বসলো মায়া।হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”এভাবে নিজ পরিবার থেকে পালিয়ে যেতে নেই হিয়া।যাকে সহ্য করতে পারো না তার মুখোশ টেনে বেড় করো।”
“দিতেই তো চেয়েছিলাম।কিন্তু উপায় তো পাচ্ছি না।”
“আমি হেল্প করব?”
“পারবে তুমি?ওই নষ্ট পুরুষের মুখোশ সবার সামনে আনতে।ওর নষ্টামি দূর করতে।”
“হুম পারবো।তবে আমার কাজগুলোর সাক্ষী থাকতে হবে তোমাকে। আর এখান থেকে তোমাকে যেতে হবে না।এমনি ট্যুর দিয়ে এসো তারপর নাহয় ক্লাস করলে।”
“ওকে।”
মায়া ও হিয়া মিলে কিছু প্ল্যান করে নিলো।তারপর দুজনে খাবার টেবিলে গেলো।সকালের খাবার খেতে হবে।সবাই নাস্তা করতে থাকে তখন মোহন সরদার বলেন,”আমি চাই আমাদের ব্যাবসাটা এবার রুদ্র দেখুক।”
রুদ্র হেয়ালি করে বলে,”নট ইন্টারেস্টেড ড্যাড।”
ক্ষিপ্ত হন মোহন সরদার।রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলেন,”তোমার বাবার অবস্থাটা একবার দেখো।সে নড়াচড়া করতে অক্ষম।তোমার একটা বোন আছে মা আছে।তাদেরকে দেখতে হবে।নিজের কথা না ভাবো পরিবার নিয়ে তো ভাবতে পারো।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“বড় বাবা আছে বিগ ব্রো আছে এই ফ্যামিলির জন্য।আমি এখনও এসবের জন্য প্রস্তুত নই। আর এসব ব্যাবসা আমার কর্ম না।আমার দ্বারা যেটা সম্ভব আমি সেটাই করব।”
টেবিলের উপর করে হাত রেখে শব্দ করে মোহন সরদার বলেন,”তোমার মতো অকর্মা তো খালি বসে বসে অন্য ধ্বংস করে।কোন কাজে আসো তুমি আমার?বাবা মা আর ছোট বোন আছে তার দিকে তাকাও না।বিয়ে করে বউকে কি খাওয়াবে?বয়স তো কম না তোমার।”
“আমার বিয়ে হোক তখন আমি বুঝব। আর তাকে খাওয়ানোর চিন্তা আমি তখন করব।”
বলেই হিয়ার দিকে তাকালো রুদ্র।হিয়া দেখলো এই চাহনি।তারেক এসেছে এখন।মায়া ডেকেছে তাকে।তারেককে দেখে মিলি উঠে দাড়ায়।তারপর তারেকের জন্য সে খাবার সার্ভ করে।তারেক বলে,”আমি খেয়ে এসেছি।এখন লাগবে না।”
সবাই তাকিয়ে দেখতে থাকে।মায়ার কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে আছে।মিলির চোখ মুখে আনন্দের ছাপ।তারেককে দেখে তার ভিতর সুখের উজ্জ্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে।মায়া সেদিকে তাকিয়ে রাজের কানে কানে বলে,”মিলি ইজ ইন লাভ।”
রাজ ভ্রু কুঁচকে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”কাকে?”
“টু মাই অ্যাসিসট্যান্ট।”
এবার রাজ তাকালো মিলির দিকে।মিলি তারেককে বলে,”আমাদের বাসায় কেউ এসে এভাবে খালি মুখে থাকে না।এটা আমাদের ভদ্রতা। আর মেহমান হয়ে আমাদের দেওয়া নাস্তা খাওয়াটা মেহমানের ভদ্রতা।”
বলেই মিলি চোখের ইশারায় দেখিয়ে দেয়।তারেক নিলো প্লেট।রাজ এবার মায়ার কানে কানে বলে,”সামথিং ইজ ফিশি।”
“এটা পিওর লাভ মন্ত্রী মশাই।আমি মিলির চোখে তারেকের প্রতি এই ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি।আমার ব্যাক্তি জীবনে কাটানো অভিজ্ঞতা দিয়ে বলতে পারি মিলি কোনো ছলনা করছে না।”
“তাহলে ওদের বিয়ে দিতে বলছো?”
“তারেক কি চাইবে ওকে বিয়ে করতে?ওর একটা অতীত আছে।যেখানে ও ওর ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছে।খুব বাজে ভাবে হারিয়েছে।সেদিক থেকে ওর মনে দ্বিতীয় নারী আসবে কি না এটা ওর কাছেই শুনতে হবে।”
“যদি ওরা দুজন দুজনকে ভালোবেসে সুখে থাকতে চায় তাহলে কাকাইকে বলে দেখবো।”
“আমার মনে হয় না মানবে উনি।”
“ভাগ্যের উপরে ছেড়ে দেও।আগে ওরা নিজেদের ভালোবাসা একে অপরকে ভালোভাবে প্রকাশ করুক তারপর।”
আয়রা এসে মোহন সরদারকে খাইয়ে দিতে থাকে।সোনালী সেদিক তাকিয়ে বলে,”নার্স হলে কি অন্যের বরকে খাইয়ে দিতে হয়?”
“আর ইউ জেলাস মিসেস সোনালী?”
প্রশ্ন করে আয়রা।সোনালী হকচকিয়ে যায়।সবাই মিটিমিটি হাসতে থাকে।মাহমুদ সরদারের এবার মনে হচ্ছে এই বাড়ির একেক জনের একেক বৈশিষ্ট্য আছে।ছেলে দুটো লাগামহীন হয়েছে।মনে যা আসে ঝরঝর করে বলে দেয়।বউমা পেয়েছে রক্তবতী।ভাই তো হয়েছে বুড়ো বয়সেও নারীবাজি।ভাইয়ের বউ কম না।এখন আবার এই নার্স।শুধু তার জীবনটাই এসব দেখতে দেখতে কোনো রকমে কেটে যাচ্ছে।
বেশ রাত করে বাসায় ফিরেছে রুদ্র।রাজ আজ বাইরে।ওর নিজস্ব কাজে ব্যাস্ত।রুদ্রকে দেখে মায়া আসে রুদ্রের সামনে।মায়াকে দেখে রুদ্র বলে,”কি ব্যাপার ভাবী জি!আজ আমার সামনে?”
দুই হাত ভাঁজ করে মায়া বলে,”কেনো আসতে পারি না?দেবরের ভালো মন্দ জানতে চাইতে পারি না?”
“তা অবশ্য পারো।কিসের খোঁজ নিতে চাও বলো।”
মায়া এবার একটা বোতল দেখিয়ে বলে,”লেটস ইনজয় দ্যা ড্রিংক?”
“শিওর আই লাভ ইট।লেটস গো।”
বলেই মিটিং রুমে এসে বসে রুদ্র।মায়া নিজেও এসেছে সেখানে।দুটো বোতলে ড্রিংক ঢেলে মায়া একটা গ্লাস এগিয়ে দেয় রুদ্রের দিকে।রুদ্র এক ঢোকে গিলে ফেলে ড্রিংক।মায়া সেদিকে তাকিয়ে ডেভিল হাসি দেয়।নিজের হাতের ড্রিংক সেভাবেই রেখে দেয়।রুদ্র ড্রিংক শেষ করে মাথা ঝাকিয়ে নেয়।মায়া বলে,”আরো নিবে?”
“ইয়াহ।”
মায়া আবারও দিলো রুদ্রকে।এভাবে আরো কয়েক গ্লাস ড্রিংক করার পর রুদ্র পুরো নেশাক্ত হয়ে উঠেছে।দুলে দুলে পড়ছে রুদ্র।মায়া রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে,”তো আজকে কোথায় গিয়েছিলে?”
রুদ্র হো হো করে হাসতে থাকে।নেশা ধরে গেছে তার।কিছুক্ষণ হেসে রুদ্র বলে,”আমি তো বারে ছিলাম।কচি কচি জামা পরা মেয়েদের দেখছিলাম।”
“হিয়াকে ভালোবাসো?”
“নো আমি বাসিনা ভালো।ওটা তো একটা ট্র্যাপ।হিয়াকে ফাঁসিয়ে এই সম্পত্তি নেওয়া।”
মায়া এবার তাকালো দরজার দিকে।ওখানে হিয়া আছে। আরি পেতে আছে হিয়া।হিডেন ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করা হচ্ছে।রুদ্রের মুখে এমন কথা শুনে কান্না আসতে থাকে হিয়ার।মিথ্যা এক লোকের প্রতি ভালোবাসা জন্মেছে তার মনে।হিয়া ঠোঁট চেপে ফুফিয়ে কান্না করতে থাকে।মায়া এটা দেখে নিজেই দুর্বল হয়।হিয়ার ভালোবাসা একদম শুদ্ধ।এখানে কোনো ভেজাল নেই।একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের দুঃখ সহ্য হয় না মায়ার।রুদ্রকে প্রশ্ন করে,”কেনো মিথ্যা অভিনয় করো ওর সাথে?”
“মম চায় তাই।লিসেন জারা ব্যার্থ ব্রোকে ফাঁসাতে।বাট আমি নই।আমি তো হিয়াপাখিকে আমার করে আলিশান বাড়িতে রাজত্ব করব।”
বলেই হাসতে থাকে রুদ্র।মায়া আর কিছু না বলে বেড়িয়ে আসে।হিয়ার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে হিয়াকে নিজের ঘরে নিয়ে আসে মায়া।রাজ নেই তাই আজকে রাত হিয়াকে কাছে রাখবে মায়া।হিয়ার কষ্টগুলো সহ্য করতে পারছে না।সেও যে তার মন্ত্রী মশাইয়ের প্রতি এমন ভাবেই দুর্বল।
সকালবেলা রাজ আসে বাড়িতে।ঘরে এসে বউ আর বোনকে একসাথে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে খুশি হয়।গায়ে লেপ্টে থাকা রক্ত পরিষ্কার করতে হবে এখন তার।সাদা পাঞ্জাবিতে তাজা রক্ত লেগে আছে।এই রক্ত কাউকে খুন করে এসেছে রাজ।নারী পাচার করতে আরো দুজন লোক পাঠানো হয়েছিলো।যাদের ধরতে পেরেছে রাজের লোক।রাতের আধারে লোকজনের অগোচরে ওদের শেষ করে দিচ্ছে।সবার সামনে প্রকাশ্যে খুন করলে শত্রুরা এলার্ট হবে।তাই রাজ চায় না এখন কেউ জানুক যে দেশে নারী পাচারকারী বৃদ্ধি পাচ্ছে।যেই যেই জায়গা রিস্কে আছে সেই জায়গাগুলো রাজ কড়া গার্ড দিয়ে রাখছে।বস্তি এলাকাগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছে।
ওয়াশরুমের শব্দে চোখ মেলে তাকালো মায়া।রাজ এসেছে বোঝা যাচ্ছে।মায়ার কোলে হিয়ার হাত আছে।মায়া উঠতেই হিয়া উঠে পড়ে।চোখ ডলতে থাকে হিয়া।মায়া বলে,”তোমার ভাই এসেছে।”
হামি তুলতে তুলতে হিয়া বলে,”আচ্ছা ভাবী।আমি তাহলে যাই ফ্রেশ হতে হবে।”
“হ্যাঁ যাও। আর কালকের বিষয় নিয়ে দুঃখ পাবে না।একদম স্ট্রং থাকবে।”
“হুম।”
বলেই বেড় হয় হিয়া।রাজ ফ্রেশ হয়ে বেড় হতেই দেখলো মায়া উঠেছে আর হিয়া নেই।মায়ার কাছে এসে মায়ার ওষ্ঠে ভালোবাসা দিয়ে রাজ বলে,”মর্নিং সুইট আদায় করে নিলাম।অনুমতির কথা ভুলেও বলবে না।এটা আমার হক।”
মায়া আলতো হেসে বলে,”আসল আসামি কে মন্ত্রী মশাই?কারা এসব করছে?”
“সময় হলে জানতে পারবো।শুধু এমনভাবে ওদেরকে হারাতে হবে যাতে শত্রু নিজে এসে ধরা দেয়।”
“তোমার কথায় আমি চুপ আছি।”
“আই নো মায়াবতী।সবকিছুই হবে।তবে একটু সময় লাগবে।আচ্ছা চলো ফ্রেশ হবে।বউকে নিয়ে সকালের বাথরুম বিলাস করব।”
ভ্রু কুঁচকে মায়া বলে,”বাথরুম বিলাস?”
“হুম বাথরুম বিলাস।চাঁদের সামনে দাড়ালে চন্দ্রবিলাস হয় বৃষ্টিতে ভিজলে বৃষ্টিবিলাস হয় রোদের ভিতর দাড়ালে রৌদ্র বিলাস হয় তাহলে বাথরুমে শাওয়ার নিলে কেনো বাথরুম বিলাস হবে না?”
“ওহ মন্ত্রী মশাই তুমিও না।”
বলেই হেসে দেয় মায়া।রাজ মায়াকে কোলে নিয়ে চলে যায় বাথরুম বিলাসে।
হলরুমে সবাইকে এক করেছে মায়া।সবাই এসে হাজির সেখানে।মাহমুদ সরদার এবার মায়াকে বলেন,”কি হয়েছে মা?আমাদের এক করলে হঠাৎ?”
“আপনাদের কিছু দেখাবো। এই পরিবারে রুপধারি কিছু লোক আছে।ওদের মুখোশ খোলার সময় হয়েছে।”
অবাক হয় সবাই।হিয়া এগিয়ে এসে একটি পেনড্রাইভ দিলো মায়ার হাতে।মায়া ওটা অন করতে যাবে ওমনি সদর দরজা দিয়ে একটি মেয়ে ঢুকে বলে,”আমি আমার অন্যায়ের বিচার চাই।”
সবাই অবাক হয়ে তাহলে দরজার দিকে।হিয়া তাকালো মায়ার দিকে।মায়ার কাছে এসে বলে,”এই মেয়েটা কে ভাবী?”
“আমি নিজেও জানি না।”
মেয়েটি সবার সামনে এসে বলে,”আপনাদের বাড়ির ছেলে আমাকে চিট করেছে।আমার সাথে প্রেমের অভিনয় করে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।আমি এর বিচার চাই।”
মাহমুদ সরদার মেয়েটির কাছে এসে বলে,”তুমি কার কথা বলছো?”
মেয়েটি তাকালো রাজের দিকে।তারপর বলে,”কেনো এই বাড়ির কোন ছেলে আমাকে চিট করবে বলে আপনার মনে হয়?নিজের ছেলের প্রতিও বুঝি বিশ্বাস নেই আংকেল!”
মেয়েটির দিকে এগিয়ে এলো মায়া।মেয়েটির হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে বলে,”কথা না পেচিয়ে বলো কার কথা বলছো তুমি?”
মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪৪
ফিচেল হেসে মেয়েটি বলে,”সাবধানে কথা বলো আমার সাথে।আমি প্রেগনেন্ট।এই সময় এভাবে হুট হাট টান লাগলে আমার আর আমার বেবীর সমস্যা হবে।”
অবাক হলো বাসার সবাই।এই মেয়ে হঠাৎ করে এসে বলছে যে সে প্রেগনেন্ট।