প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৭৯
আদ্রিতা নিশি
সারহান তার কণ্ঠের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে চিৎকার করল অরিত্রিকার নি*থর মুখের দিকে তাকিয়ে। মেয়েটা নিশ্চুপ, নিস্প্রান হয়ে আছে। ফর্সাটে মুখশ্রী মলিন, ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করেছে। যে শরীরে কেউ টোকা দেওয়ার সাহস করেনি সেই শরীরে অসংখ্য ক্ষ*তের দাগ। পুরুষালি তীক্ষ্ণ চাহনিতে সেই অসহনীয় দৃশ্য দৃশ্যমাণ হতেই বক্ষস্থল দুমড়ে মুচড়ে উঠল। দৃঢ় শক্তপোক্ত হাতটা কেঁপে উঠল। অন্তঃকোণের অবর্ণনীয় য*ন্ত্রণায় কার্ণিশ বেয়ে নোনাজল পড়ল। এক অর্ধাঙ্গ তার অর্ধাঙ্গিনীকে হারানোর ভয়ে মুর্ছে যেতে লাগল। রুমের ভেতরের নিস্তব্ধতা ভেঙে একের পর এক শুধু চিৎকারের প্রতিধ্বনি ভেসে বেড়াচ্ছে চতুর্দিকের শীতল বাতাসে।
সারহান নিরুত্তাপ চাহনিতে তাকিয়ে উন্মাদের মতো অরিত্রিকার চোখ মুখে লেগে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে দিতে লাগল। তার রুমাল দিয়ে র*ক্ত মুছে দিতে লাগল।সেই মুহুর্তে আবির কোথাও থেকে দৌড়ে এসে আসলো। তার হাতে পানির বোতল। সে ব্যতিব্যস্ত ভঙ্গিতে বোতলে থাকা পানি ছিটিয়ে দিতে লাগল অচেতন অরিত্রিকার মুখে। সে মেয়েটার এমন করুণ অবস্থা দেখে কেঁপে উঠল। নিষ্পাপ মুখখানা দেখে মায়া হলো। জা*নোয়ার, নিশাদ শত্রুতার জের ধরে এমন একটা কাজ করেছে ভাবতেই রাগ ছলকে উঠল। তার বন্ধুর পাগল প্রায় অবস্থা দেখে ম*র্মাহত হলো। হঠাৎ ক্ষীণভাবে অরিত্রিকার চোখের পাতাগুলো কেঁপে উঠল। নির্জীব শরীরটা খানিকটা নড়ে উঠল। সারহান অনুভব করল সেই নড়াচড়া। সে আস্তে করে খাটের ওপর মেয়েলী শরীরটাকে শুইয়ে দিলো। সে অস্থিরতা মিশেল চাহনিতে চাইল। এক মুহুর্তে ভেতরের অসাড়তা কেটে গেল। সে মেয়েলী গালে আলতো হাত রাখল। উদ্বিগ্নতা চেপে কোমলপ্রাণ ধীরজ কন্ঠে ডাকলো;
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ফাইরুজ… তুই শুনতে পাচ্ছিস?”
অরিত্রিকার নেত্রপল্লব নড়ে উঠে। আবির পানির বোতলটা রেখে দেয়। তার চোখে মুখে আতংকিত ভাব কেটে গিয়ে দীপ্তি ছড়িয়ে পড়ে। যাক, অরিত্রিকার কিছু হয়নি। সে বন্ধুর কাঁধ চাপড়ে দেয়। শান্ত কন্ঠে বলে উঠে;
“দোস্ত!তোর বিবিজানের কিছু হয়নি। এবার নিজেকে সামলে নিশাদের ব্যবস্থা কর।”
আবির উঠে দাঁড়ায়। সারহানের পাশে রাখা রিভ*লবারটা হাতে নিয়ে এগিয়ে যায় নিশাদের দিকে। অরিত্রিকার চেতনা ফিরেছে। সে দুর্বলচিত্তে অতি কষ্ট করে চক্ষুদ্বয় মেললো। ক্লান্ত, ঘোলা চোখে সে চারপাশের দিকে তাকাল। হয়তো বোঝার চেষ্টা করল সে কোথায়? আচানক তার দৃষ্টি আটকে গেল সারহানের পানে। ঘোলা চোখে অস্পষ্ট দেখতে পেল নেতাসাহেবের এলোমেলো রুপ। তার বুকটা কেঁপে উঠে। চক্ষুদ্বয় বেয়ে অশ্রু গড়াতে থাকে। তারমানে সে বেঁচে আছে! নিশাদ তার কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। তার নেতাসাহেব তাকে শয়তানটার হাত থেকে বাঁচিয়ে নিয়েছে। সে পলকহীন চাহনিতে তাকিয়ে রইল প্রিয় পুরুষটির দিকে। ওষ্ঠকোণে এক চিলতে হাসি ফুটল। কাঁপা ওষ্ঠদ্বয় নাড়িয়ে কথা বলার প্রয়াস চালালো। ক্লান্ত, ব্যথাতুর কন্ঠে অস্পষ্ট কন্ঠে বলল;
“আপনি….এসেছেন নেতাসাহেব?”
সারহানের কানে দুর্বলচিত্তে বলা মেয়েলী কন্ঠস্বর আলোড়ন তুলল। সে অসহায়, স্তব্ধপ্রায় চাহনিতে তাকাল। খানিকটা ঝুকে হাত দিয়ে অরিত্রিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। অতঃপর প্রেয়সীর কপালে ওষ্ঠপুট ছুঁইয়ে কাতর, ভঙ্গুর কন্ঠে বলল;
“হ্যাঁ সোনা, আমি এসেছি। এবার তোকে নিয়ে যাব। আর কেউ তোকে স্পর্শও করতে পারবে না। কথা দিচ্ছি।”
অরিত্রিকা অনিমেষ চেয়ে অবলোকন করছে সারহানের ভাবভঙ্গি। এমন এলোমেলো, দিশাহীন, উন্মাদ রুপ বোধ হয় সে প্রথম দেখল। সে অচেতন হওয়ার আগে স্পষ্ট শুনেছে মানুষটার আহাজারি, হাহাকার। কিন্তু কিছু বলে উঠতে পারেনি। হঠাৎ অন্তঃস্থল কেমন করে উঠল। সামনে কাঙ্খিত মানুষটিকে দেখে কান্না উগ্রে আসতে চাইল। সে দুর্বল হাত দুটো দিয়ে ঝুকে থাকা মানুষটার বলিষ্ঠ সুদেহী শরীরটা দৃঢ়-শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে। প্রিয় পুরুষের বুকে স্থান পেয়ে নিজেকে নিরাপদ মনে হলো। সারহানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হলো। অশান্ত, দিশাহীন মনটা কিছুটা স্বাভাবিক হলো। সে আর দেরী না করে নম্রভাবে আলতো করে মেয়েলী শরীরটাকে আলিঙ্গন করল।
“আপনি না আসলে ওই পিশাচটা আমায় মেরে ফেলতো সারহান ভাই। আমাকে আপনার জীবন থেকে সারাজীবনের জন্য সরিয়ে দিতো। ওই শয়তানকে আপনি ছাড়বেন না। মেরে এমন অবস্থা করুন যেন কোনো মেয়ের দিকে হাত বাড়ানোর তাকানোর সাহস না হয়৷ আমার মতো কোনো মেয়ে যেন কাছের মানুষ হারানোর ভয় কিংবা ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার না হতে হয়। আপনি… আপনি ছাড়বেনা বলুন।”
অরিত্রিকা পুরুষালি প্রশস্ত বুকে মিশে গিয়ে কন্দনরত কন্ঠে পাগলের মতো বিলাপ করে করে বলতে লাগল। সারহানকে অতি শান্ত মনে হলো। সে উষ্কখুষ্ক চুলের ভাঁজে হাত বুলিয়ে আশ্বাস দিলো। তপ্ত শ্বাস টেনে আদুরে কন্ঠে বলল;
“শান্ত হো!”
অরিত্রিকা অশ্রুসিক্ত নেত্রপল্লব মেলে ভেজা অধৈর্য – আর্তনাদপূর্ণ কন্ঠে বলল;
“শান্ত হতে পারছি না। আপনি বলুন ওই জা*নোয়ারকে শাস্তি দিবেন?”
“হুম। ভয়ংকর শা*স্তি দেব যেন কোনো মেয়ের দিকে কখনো তাকানোর সাহস না করে।”
“ওই শয়তানটা তাজিয়া আপুকে মে*রে ফেলেছে সারহান ভাই। মুন আপুর সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করেছিল আর আমার সাথে….”
“হুস!কান্না থামা।নিজেকে শান্ত কর।”
“আমি শান্ত হতে পারছি না। হঠাৎ এমন কিছু জানতে পেরেছি যেগুলো আমার কল্পনার বাহিরে ছিলো। ফুপি কিভাবে পারলো এমনটা করতে… আপনাকে মা*রার প্ল্যানে সামিল ছিল! সম্পত্তি, টাকার জন্য আমাদের শত্রুর সাথে হাত মিলালো! কেমন যেন অবিশ্বাস্য লাগছে সবকিছু। আমি মেনে নিতে পারছি না…। মানুষ নিজের র*ক্তের সাথে কিভাবে বেইমানি করে?”
অরিত্রিকার কন্ঠস্বর ভারাক্রান্ত শোনায়। সারহান রুদ্ধ শ্বাস টেনে জবাব দেয়;
“মানুষ যত না আপন, তার চেয়েও বেশি স্বার্থপর এটা প্রমাণ করতে টাকা-সম্পত্তিই যথেষ্ট।”
অরিত্রিকা ভঙ্গিতে ম্লান মর্মস্পর্শী কন্ঠে বিলাপ করে বলল;
“ হুমম। মানুষের মাঝে এখন মনুষ্যত্ব নেই টাকা, সম্পত্তি সব। আফসোস!আজ আপনাকে আমার সদ্য সতেরোতে পা রাখা জীবনের একটি কালো অধ্যায় শোনাবো। আশা করি শুনবেন!আপনাকে আর ধোঁয়াশায় রেখে নিজের কাছে অপরাধী থাকতে পারছি না। এই মুহূর্তে সবটা জানিয়ে ভারমুক্ত হতে চাই আমি।”
কথাটা বলে একটু থামল সে। নিস্পৃহ চাহনিতে তাকাল সামনে বসে থাকা উদ্বিগ্ন মানুষটির দিকে। কিভাবে বলবে ঘটনাটা? যদি সারহান ভাই তাকে ভুল বোঝে, দূরে সরিয়ে দেয় তখন কি করবে? অরিত্রিকা সাহস সঞ্চার করে সিদ্ধান্ত নেয় এ মুহুর্ত বলবে। সে অশ্রুসিক্ত লোচন মুছে থেমে থেমে বলতে লাগল;
“ যেদিন আব্বুকে গু*লি করা হয়েছিল, সেদিন আপনারা সবাই হসপিটালে ছিলেন। বাড়িতে শুধু আমি, সাদাত আর অরিন আপু ছিলাম। তখন কোনো কিছু চিন্তা না করেই আব্বুর খোঁজে, একটা হসপিটালের উদ্দেশ্যে রাতের আঁধারে একাই বেরিয়ে পড়ি। আব্বুর অবস্থার কথা শুনে আমি এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম, এতটা কান্নাকাটি করছিলাম নিজের নিরাপত্তার কথা মাথায়ই আসেনি। এখন বুঝি, একা বেরোনোটাই ছিল সবচেয়ে বড় ভুল।কিন্তু বলুন তো, বাবার জীবন-মৃ*ত্যুর সন্ধিক্ষণের এমন খবরে কি আর ঘরে বসে থাকা যায়?রিকশায় করে কিছুদূর যেতেই, হঠাৎ একটা কালো মাইক্রোবাস এসে আমাদের পথ আটকে দেয়। ওরা আমাকে জোর করে রিকশা থেকে নামিয়ে গাড়িতে তোলে, রিকশাওয়ালাকে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়।
আমি চিৎকার করছিলাম, পালানোর চেষ্টা করছিলাম। তখনই একজন আমার নাকের কাছে কিছু একটা ধরে আর আমি অচেতন হয়ে যাই।চোখ খুলে দেখি, আমি এক অচেনা বাড়িতে। পরে বুঝতে পারি ওটা ছিল নিশাদ এহসানের বাড়ি। সেই শয়তান আমার অসহায় অবস্থার সুযোগ নিতে চেয়েছিল। বাজে ভাবে গায়ে স্পর্শ করছিল, অ*শালীন কথা বলছিল। আমি কাঁদছিলাম তাকে বারবার ছেড়ে দিতে বলছিলাম।কিন্তু সে শুনছিল না। বরং আরও ভয়ঙ্কর কিছু করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল।শেষ পর্যন্ত উপায় না দেখে, অন্ধকার ঘরে একটা ফুলদানি তুলে তার মাথায় মা*রি। কোনওরকমে পালিয়ে এসেছিলাম সেই নরক থেকে।
কিন্তু নিশাদ সেখানেই থেমে থাকেনি। কিছুদিন পর সে আমার মেসেঞ্জারে ওই রাতের ভিডিও আর কিছু ছবি পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে আমি তখন অচেতন ছিলাম, বুঝতেই পারিনি কীভাবে এসব তুলেছিল। শুধু তাই না, আপনাকেও এবং আমাদের পুরো পরিবারকে মে*রে ফেলার হুমকি দিতে থাকে।সে চেয়েছিল আমরা বাড়ি ছেড়ে দিই। আমি তখন এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে কাউকে কিছু না বলেই জেদ করে পরিবার নিয়ে অন্য বাড়িতে চলে যাই। সেদিন আপনাকে প্রথম খারাপ ব্যবহার করেছিলাম। আপনার কথা শুনিনি। আসলে শোনার মতো পরিস্থিতি ছিল না।নতুন বাসায় যাওয়ার কিছুদিন পর, হঠাৎ করে নিশাদ উধাও হয়ে যায়। আমি ভেবেছিলাম, হয়তো ওর অ*ত্যাচার এখানেই শেষ। সে আমার জীবন থেকে চলে গেছে।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।”
অরিত্রিকা কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে দুর্বল কন্ঠে বলে থামল। অতঃপর পুনরায় ভেজা যন্ত্রণাক্লিষ্ট কন্ঠে বলল;
“একটা মেয়ের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান তার সম্মান। সেই সম্মান কেউ জোর করে হরণ করতে চায় তখন একটা মেয়ে নিজেকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। আমিও তেমনটাই করেছি। নিজের সম্মান বাঁচিয়েছি। কিন্তু ওই শয়*তানটার স্পর্শ থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারিনি। ওই স্পর্শ আমায় ক*লুষিত করেছে। আমার শরীরে কল*ঙ্কের দাগ লেগে গেছে।”
প্রতিটি কথা যেন তীরের ন্যায় উদ্দাম বেগে ছুটে গিয়ে লাগল সারহানের বুকে। তার চক্ষুদ্বয় ক্রোধ, অসহনীয় যন্ত্র*ণায় জ্বলে উঠল। মুহুর্তেই সুগভীর তীক্ষ্ণ চোখ জোড়া রক্তিম হয়ে উঠল। মুখাবয়ব অতিশয় কঠিন হয়ে উঠল। চিবুক শক্ত করে ঘন ঘন শ্বাস ফেলতে লাগল। অরিত্রিকাকে আস্তে করে বসিয়ে দেয়। আলতো হাতে অশ্রু মুছিয়ে দিয়ে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করে দৃঢ় কন্ঠে বলল;
“আর কিছু শুনতে চাই না আমি। কান্নাকাটি বন্ধ কর।”
অরিত্রিকা ভেজা নেত্রপল্লব ঝাপটে চায়। কান্নার বেগ কমে আসে। কেমন যেন কাতর গলায় বলল;
“আপনাকে অনেক আগেই বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বলতে পারিনি। কতোবার বলতে গিয়েও থেমে গেছি। ভয় হতো যদি আপনি আমার অতীত জানার পর দূরে ঠেলে দেন, ভালো না বাসেন। জানেন, আপনার অনুভূতি সম্পর্কে যখন জেনেছি তখন নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছি। তবে নিয়তির খেলা অদ্ভুত ছিলো। দূরে পালাতে গিয়ে ভালোবেসে ফেললাম। সেই ভালোবাসা পাওয়ার লোভে অতীত ভুলে আপনার বউ হলাম। কথায় আছে মেয়েরা ভালোবাসার কাঙাল। আমিও আপনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কাঙাল হয়েছি।নেতাসাহেব…আপনার বিবিজানের অতীত জেনে কি সিদ্ধান্ত নিলেন? আগের মতো ভালোবাসবেন নাকি মুক্ত করে দিবেন?”
সারহানের ক্রোধের মাত্রা বাড়ল এহেন কথায়। গর্জে উঠে বলল;
“সারহান ইদায়াত চৌধুরী তোর শরীরের প্রেমে পড়েনি, সম্পূর্ণ তুই নামক মায়ায় জড়িয়েছে। তোর অতীত যতোই খারাপ হোক না কেন আই ডোন্ট কেয়ার।”
“এতোটা ভালো কেন বাসলেন নেতাসাহেব? আপনার ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসা সামান্য মনে হয়।”
“ভালোবাসার কোনো পরিমাপ হয় না।”
কথাটা বলে সারহান উঠে দাঁড়াল। তার হাতটা এগিয়ে দিলো অরিত্রিকার সামনে। অরিত্রিকা কান্না ভুলে ফ্যালফ্যাল করে চাইল। অতঃপর পুরুষালি অমসৃণ হাতটা ধরে আস্তে ধীরে কাঠের বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যেতে গেলেই শক্তপোক্ত হাতটা তার বাহু ধরল। সে এ যাত্রায় আবারও অর্ধ অক্কা তোলার থেকে রক্ষা পেল। তখুনি সারহান মেয়েলী শরীরটাকে কোলে তুলে নিলো। অরিত্রিকা চোখ মুখ খিঁচে তাকাল গুরুগম্ভীর, রগচটা মানুষটার পানে। তখুনি এক সমুদ্রের অশান্ত ঢেউয়ের ন্যায় কন্ঠস্বর শুনতে পায়;
“তুই এবং তোর কলঙ্ক সব কবুল! নিভৃতসুধা।”
মেয়েটার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল। সে ভেজা নেত্রপল্লব মেলে চকিত চাহনিতে তাকাল শ্যামানবের দিকে। বুকের ভেতরে যেন সুখ নামক অনুভূতিরা উড়াউড়ি করতে লাগল। এতোক্ষণ ঘটে যাওয়া ঘটনা এক মুহুর্তে ভুলে গেল অবচেতন মন। এই অনুভূতিকে কি নাম দেওয়া যায়? স্বর্ণাভ সুখানুভূতি!
“কুত্তার বাচ্চা তোর সাহস কি করে হয় ফাইরুজের দিকে চোখ তুলে তাকানোর? ওকে স্পর্শ করার?”
বাড়িটির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে একটি কালো রঙের গাড়ি। গাড়ির ভেতরে জানালার কাঁচ টেনে দিয়ে চুপচাপ বসে আছে অরিত্রিকা। সে চোপরিত্যক্তভাবে হেলান দিয়ে রয়েছে সিটে চোখে মুখে বিরাজ করছে অদ্ভুত স্থিরতা। বাইরে থেকে ভেসে আসছে আর্তচিৎকার, গায়ের লোম খাড়া করে দেওয়ার মতো ধ্বনি। কিন্তু তবুও সে নির্বিকার এবং অতি শান্ত!পরিত্যক্ত বাড়িটির সামনে বিষণ্ন, চাপা উত্তেজনায় ভরা পরিবেশ বিরাজ করছে। রাত গভীর, চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে আছে। শুধু গাড়ির সাদাটে হেডলাইটে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দুজন মানুষের ছায়া!
হঠাৎ বজ্রস কন্ঠে সারহান উক্ত কথাটি বলল। নিশাদ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সারহান হিংস্রভাবে মুখ বরাবর এক ঘুষি বসিয়ে দিল। ঘুষির আঘাতে নিশাদ ছিটকে গিয়ে পড়ল পরিত্যক্ত বাড়ির জংধরা লোহার গেটের কাছে। মাথা সজোরে গিয়ে আ*ঘাত করল সেই পুরনো গেটে। মুহূর্তেই এক আর্তচিৎকার ছুটে বের হলো তার গলা থেকে। নিস্তব্ধ চারপাশ হঠাৎ করে থমকে দাঁড়াল। ব্য*থাতুর চিৎকারে চারিপাশ ভারী হয়ে উঠল। সারহান থামল না পুনরায় গর্জে উঠল।এক হেঁচকায় নিশাদকে মাটি থেকে তুলে দাঁড় করাল।এরপর শুরু হলো নির্দয় প্রহার এলোপাতাড়ি লা*থি নিশাদের পেটে, বুকে, শরীরজুড়ে। একের পর এক আ*ঘাতে কুঁকড়ে যেতে লাগল নিশাদের দেহ। পুরনো গু*লির ক্ষ*ত আবার ফেটে গিয়ে র*ক্ত ঝরতে লাগল, যন্ত্রণা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠল।
“আমাকে ছেড়ে দে সারহান।”
নিশাদের শরীর প্রায় র*ক্তশূণ্য। অরিত্রিকাকে স্পর্শ করতে যাচ্ছিল সেই সময়ে সারহানের ছোড়া গু*লি তার হাত ছুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। তখুনি হাতের ক্ষ*তের পীড়ায় গগনবিদারী চিৎকার দিয়েছিল। কাতরাতে কাতরাতে লুটিয়ে পড়ে মেঝেতে। এরপরেই হাইড এন্ড সিক গেমের পরিসমাপ্তি হয়। অসহনীয় আঘাত সইতে পারছেনা নিশাদ। সে অস্ফুটস্বরে আওড়ালো কিছু শব্দ! কাতর, অনুনয় মিশ্রিত কন্ঠ শুনল সারহান। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে পূর্বের ন্যায় কু*ত্তার ন্যায় মা*রতে লাগল। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলল এই নির্মম নি*র্যাতন। শেষে নিশাদ পড়ে রইল মাটিতে অর্ধমৃ*ত, র*ক্তাক্ত, নিস্তেজ অবস্থায়। ব্য*থায়, ক্লান্তিতে এবং র*ক্তক্ষরণে তার অবস্থা তখন সংকটজনক। আবির এতোক্ষণ চুপচাপ উপভোগ করছিল দৃশ্য। কিন্তু নিশাদের অবস্থা খারাপ দেখে দৌড়ে এসে সারহানকে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে টেনে দূরে নিয়ে যেতে লাগল। আতংকিত হয়ে বলল;
“সারহান তুই পাগল হয়ে গেছিস? ওকে কি মে*রে ফেলবি?”
সারহান রক্তিম চোখে নিশাদের লুকিয়ে পড়া দেহের দিকে তাকিয়ে হুংকার ছেড়ে বলল;
“ব্লাডি বিচ! আমার ফাইরুজের দিকে হাত বাড়িয়েছে। কতো বড় কলিজা! যে হাত দিয়ে স্পর্শ করার স্পর্ধা দেখিয়েছে ওই হাত শরীর থেকে ছি*ন্ন করে দেবো।”
“মাথা ঠান্ডা কর।”
“আমার ভয়ে যদি কু*ত্তার বাচ্চা সিঙ্গাপুরে না পালাতো,এতোদিন ওর নামনিশানা দুনিয়া থেকে মুছে দিতাম। সামনে পেলে জী*বন্ত কবর দিতাম। তখন ঠিকই বেঁচে গিয়েছিল কিন্তু আজ বাঁচবে না আমার হাত থেকে।”
“আইন নিজের হাতে তুলে নিস না সারহান।”
“এই দেশে আইন নামে কিছুই নেই! টাকা ছুঁড়লেই খু*নি, ধ*র্ষক, এমনকি ফাঁ*সির আসা*মিও জে*ল থেকে বের হয়ে আসে বুক ফুলিয়ে! আমি সেই ভুল আর করব না… নিশাদকে নিজ হাতে শাস্তি দেব।”
ক্রোধান্বিত কন্ঠে কথাটা বলে আবিরের কোমড়ের কাছে গুঁজে রাখা রিভ*লবারটা নিয়ে নিশাদের হাতের দিকে তাক করে পরপর দুটো গু*লি ছুড়ল সারহান। নিশাদের অচেতন দেহটা জ*বাইকৃত মুরগীর ন্যায় নড়েচড়ে উঠল। হাতের র*ক্ত ছলকে পড়ল মাটিতে। আবির স্তব্ধ হয়ে গেল। এটা কি হয়ে গেল? সারহান বিষাদগম্ভীর ভঙ্গিমায় দুর্বোধ্য হাসল ;
“যে আমার ফাইরুজের দিকে হাত বাড়িয়েছে, তার জীবনের সমাপ্তি আমি নিজ হাতে ঘটিয়েছি।”
আবির সারহানকে ছেড়ে দিয়ে শঙ্কিত বদনে বলল;
“দোস্ত! এটা তুই কি করলি?”
“টেনশন কেন নিচ্ছিস! ভুলে যাস না টাকাই ক্ষমতা।”
“কিন্তু।”
আবির কথাটা বলতে পারল না তার আগেই পুলিশের গাড়ি এসে উপস্থিত হলো। গাড়ির দরজা খুলে পাঁচ ছয়জন পুলিশ নেমে আসলো। তখুনি সারহান গমগমে কন্ঠে বলল ;
“বাস্টার্ডকে হসপিটালে এডমিট করুন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যেতেও পারে।”
পুলিশের অবাক হলো বটে। পরক্ষণে দ্রুত নিশাদকে ধরে গাড়িতে তুলে সেখান থেকে প্রস্থান করল। সারহান আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলল;
“ভেতরে কোনো সিসি ক্যামেরা ছিলো?”
আবির থমথমে গলায় বলল;
“হুম। ফুটেজ সংগ্রহ করেছি।”
“গুড। এবার চল।”
“হুম।”
কথা শেষ করে আবির বসল ড্রাইভিং সিটে বসল আর সারহান পিছের সিটে গিয়ে অরিত্রিকার পাশে বসল। এরপরেই গাড়ি স্টার্ট দিলো—গন্তব্য চৌধুরী ভিলা।
নিশুতি রাত। সময় তখন একটার কোঠায়। পুরো শহর নিস্তব্ধ অথচ চৌধুরী ভিলায় মাতম! অজানা আতঙ্কে সবাই ভীতিগ্রস্ত হয়ে আছে। সারহানেরা বাড়ি ফিরেছিল বারোটার আগে। সে যখন অরিত্রিকাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে তখন তিনজনকে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সকলে। কিন্তু মেয়েটির অবস্থা দেখে সকলে আঁতকে ওঠে।তানিয়া বেগম আর সাথী বেগম অরিত্রিকাকে বুকে চেপে ধরে অঝোরে কাঁদতে থাকেন। চোখে-মুখে অজানা ভয় আর শোকের ছাপ স্পষ্ট ফুটে ওঠে। আরশাদ সাহেব ও আজমল সাহেব কিছু না বলে নীরবে চোখের জল ফেলেন। সাদাত আর ইরফান দুজনেই ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েছিল কিন্তু কিছু বলার মতো অবস্থায় ছিল না।
ইশরা, রাহা আর অরিন তারা অরিত্রিকাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল একটানা!সারহান সকলকে শান্ত করে। মাকে ও চাচিকে বলে অরিত্রিকাকে ফ্রেশ করিয়ে দিতে। এরপর নিজে ডাক্তারকে ফোন করে। ডাক্তার এসে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে যায়।প্রাথমিক ওষুধ আর অল্প কাটা-ছেঁড়া ক্ষ*তস্থান ড্রেসিং করে দিয়ে যায়।সবকিছু একটু স্থির হলে সারহান ফ্রেশ হয়ে এসে সবাইকে অরিত্রিকার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার সারসংক্ষেপ দেয়। তবে নিশাদ অরিত্রিকার সঙ্গে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করেছিল এবং অরিনের সাথে যা করেছিল সেই ভয়াবহ সত্যটা সে চেপে যায়। আবিরও সে কথা প্রকাশ করেনি।
“সারহান বাপ! আর কতোক্ষণ এভাবে বসে থাকবি? রাত অনেক হয়েছে। রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।”
সারহান বসেছিল তন্দ্রাচ্ছন্ন অরিত্রিকার পাশে। এমন সময় মায়ের কন্ঠস্বর শুনে শান্ত চাহনিতে সামনে তাকায়। কন্ঠে শীতলতা এনে বলে;
“ঘুম আসছে না। তুমি বরং রুমে গিয়ে ঘুমাও, আমি ফাইরুজের কাছে আছি।”
তানিয়া বেগম বললেন;
“আমি আর তোর চাচী আছি অরিত্রিকার খেয়াল রাখার জন্য। এতটুকু তো ভরসা আছে নাকি আমাদের ওপর?”
সাথী বেগম রুমে প্রবেশ করতেই তানিয়া বেগমের কথা শুনে বললেন;
“ভাবী! আপনাকে ভাইসাব ডাকছেন।”
তানিয়া বেগম বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। সাথী বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন ;
“তুমি থাকো তাহলে। আমি গিয়ে শুনে আসি উনি কেন ডাকছেন।”
সাথী বেগম বললেন;
“আচ্ছা।”
তানিয়া বেগম রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। সাথী বেগম ঘুমন্ত মেয়ের পানে একবার তাকালেন। তার মাতৃ সত্তা কেঁপে উঠল। ইশ! তার সোনার টুকরো মেয়েটার কি অবস্থা হয়েছে। তিনি নিরবে অশ্রু ফেললেন। অতঃপর চোখ মুছে এসে বিছানার নিকটে দাঁড়ালেন। বললেন ;
“আমার মেয়েটার তো কোনো দোষ ছিল না। তবুও এমন খারাপ পরিস্থিতিতে পড়ল। মা হয়ে মেয়ের করুণ অবস্থা মেনে নিতে পারছি না।”
সারহান তপ্ত শ্বাস ফেলে বোঝানোর স্বার্থে বলল;
“আপনি নিজেকে সামলান চাচী। যা হওয়ার হয়ে গেছে। ফাইরুজের সাথে যে এমন করেছে সে উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে। এখন শুধু ইসমা শেখ এবং নয়ন তালুকদারের শাস্তি পাওয়া বাকী।”
“আপা টাকার জন্য জঘন্য কাজটা করতে পারলো? ছিহঃ!”
“টাকার জন্যই তো সবকিছু শেষ হয়ে গেল।”
“নিশাদ তিনবছর আগে পরিকল্পনা করে তিনবছর পর কেন প্রতিশোধ নিতে এসেছিল?”
“কারণ নিশাদ বাহিরের দেশে সেটেল্ড হয়েছিল। মাঝে মাঝে দেশে আসতো। গোপনে আমাদের খোঁজ খবর নিতো এবং আমায় নির্বাচন করতে না দেওয়ার পরিকল্পনা করতো। কিন্তু ওর সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে আমি এমপি হই, আপনাদের এ বাড়িতে ফিরিয়ে আনি। সেটা জানার পর ও আবার দেশে ফিরে। প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। দীর্ঘ সময় নিশাদ দেশের বাহিরে ছিলো, যদি দেশে থাকতো তাহলে এতো বড় কান্ড ঘটানোর সময় দিতাম না।”
সারহান গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল। সাথী বেগম শুনছেল। বুঝতে পারলেন কাহিনীটা।কিছু একটা ভেবে বললেন ;
“তুমি অরিত্রিকার কাছে থাকো আমি আসছি।”
সারহান বুঝতে পারলো সাথী বেগম তাকে অরিত্রিকার খেয়াল রাখার দায়িত্ব সপে দিয়ে যেতে চাইছেন। সে প্রসন্ন হলো। মাথা নাড়িয়ে বলল;
“ঠিক আছে।”
সাথী বেগম তৃপ্ত হেসে প্রস্থান করলেন। সারহান দৃষ্টি স্থির করে ঘুমন্ত অরিত্রিকার দিকে। মেয়েটা গুটিশুটি মে*রে বিভোর হয়ে ঘুমুচ্ছে। সে শরীরে কাথাটা জড়িয়ে দেয়। অতঃপর আলতো হাতে ছুঁয়ে দেয় গাল। ফর্সা মুখশ্রীর জ*ঘন্য ক্ষ*ত তার ভেতরটা পু*ড়িয়ে অঙ্গার করে। ভালোবাসার মানুষটার অতীত তাকে নীরবে নিভৃতে পো*ড়াতে থাকে। নিজেকে এর জন্য অপ*রাধী মনে হয়। সে পারেনি তার নিভৃতসুধাকে আগলে রাখতে। তার বুকে দ*হনের মাত্রা বাড়ে! অরিত্রিকা নড়েচড়ে উঠে। ঘুমের ঘোরে হঠাৎ অস্ফুটস্বরে বিরবির করে বলে উঠে। সারহানের কান সজাগ। সে ভাবনা বাদ দিয়ে শোনার চেষ্টা করে কথাগুলো।
“সারহান ভাই, আপনি কেন রাজনীতিতে জড়িয়ে গেলেন? সেই রাজনীতিই তো আমাকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিয়েছে। রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি অশ্রুসিক্ত চোখে, দিনের পর দিন বয়ে বেড়িয়েছি জীবন্ত লা*শের মতো আমার অস্তিত্বহীন শরীরটাকে। আপনি তো একদিন বলেছিলেন, রাজনীতি একদিন আমার গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়াবে। আপনার কথাই সত্যি হয়েছে। ঠিক দু’বছর আগে সেই অদৃশ্য ফাঁ*সেই আমি ঝুলে গেছি। এখনো প্রতিটি নিঃশ্বাসে অসহনীয় য*ন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি নীরবে।কিন্তু আপনি কেন আমার এই অবস্থাটা আগে বুঝলেন না? আপনি তো আমায় ভালোবাসতেন। তাহলে কিভাবে পারলেন আপনার থেকে আমায় দূরে ঠেলে দিতে?”
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৭৮
মেয়েলী ক্ষীণ কন্ঠে ভেসে আসলো প্রিয় পুরুষের প্রতি অভিযোগ। সারহান নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় শুনল। কেমন বিষাদগ্রস্ত ভঙ্গিমায় নিঃশব্দে হাসল। অরিত্রিকার হাতটা ধরে মলিন কন্ঠে আওড়ালো;
“তোর সারহান ভাই তোকে নিশাদের থেকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছে। যদি পারিস আমায় ক্ষমা করে দিস।”