মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৩৮ (২)
নওরিন কবির তিশা
ফারিনদের বাড়ি যেন সেজে উঠেছে অপার্থিব সৌন্দর্যে। নিজের একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা তাই কোন ঘাটতি রাখেননি মোস্তফা কামাল সাহেব। মেজর মোস্তফা কামালের মেয়ের বিয়ে পুরো এলাকা জুড়ে কলরব। যদিও এটা ফাহমিদা আনমের ইচ্ছা ব্যতীত কারণ ফারিনের বয়স এখনো কম। মানে ১৮ বছর হতে এখনো এক মাস বাকি। বিষয়টা নিয়ে একটু চিন্তিত তিনি।মেয়েকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাননি ঠিকই কিন্তু স্বামীর উপরে কথা বলার সামর্থ্য তার নেই।
ফারিনদের বাড়ি লোকসমাগম মুখর। ফারিনের মামা বাড়ি ফুফু বাড়ির লোকজন সহ সব আত্মীয় স্বজন এসেছে আরও চারদিন আগে । কাল ফারিনের বিয়ে। সন্ধ্যা হতেই লোকজনে ভরে গিয়েছে তাদের বাড়ি। সাধারণত গ্রামের বিয়ে গুলোতে এরকমই হয়। আশেপাশের আত্মীয় অনাত্মীয় সবাই এসে ভিড় করে বিয়ে বাড়িতে।
তবে ফারিনের ক্ষেত্রে একটু বেশিই ব্যতিক্রম। এলাকার সব ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে তার সখ্যতা। তাই সবাই নিজেদের পুতুল আপুর বিয়ের আনন্দে মাতোয়ারা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কোলাহলপূর্ণ ফারিনের রুম। তাকে পড়ানো হচ্ছে মেহেদী। পার্লার থেকে আসা দুইজন মেয়ে ফারিনের দুই হাত ভরে মেহেদি দিয়ে দিচ্ছে। পাশেই নেহা আর আরা বাচ্চাগুলোকে মেহেদি দিয়ে দিচ্ছে। ফারিন এর বন্ধুদের ভিতরে এই দুই জনই এসেছে। লিসার আম্মু অসুস্থ থাকায় সে আসতে পারেনি। সন্ধ্যা ঘুরে রাতও হয়ে এসেছে কিছুটা।মেহেদী দেওয়া প্রায় শেষ। হঠাৎই মেহেদি দেওয়ার মধ্য থেকে একটা মেয়ে বলল,,
—”আপি তোমার ফিয়ন্সির নাম জানতে পারি?”
ফারিন:”কেন?”
মেয়েটি সামান্য অবাক হয়ে বলল,,
—”কেন আবার কি?তোমার হাতে লিখবো তাই!”
ফারিন:”ওসব নাম-থাম লেখা লাগবেনা!”
মেয়েটি:”এই প্রথম কোন মেয়ে বলল তার হাতে বিয়ের আগের দিন ফিয়ান্সের নাম না লিখতে! যাই হোক তুমি অন্তত ফাস্ট লেটারটা বলো!”
ফারিন:”বললাম তো লিখতে হবে না!”
তাদের কথোপকথনে এবার নেহা বিরক্ত হয়ে বলল,,
—”কি সমস্যা তোর ফারু? নাম বলতে কি সমস্যা? বলে দে! আচ্ছা তুই তো বলতিস বিয়ের আগের দিন বড় করে নিজের হাতে নিজের ফিয়ন্সির নাম লিখবি। তাহলে এখন কি সমস্যা?”
ফারিন মনে মনে বললো,,
—”তখন কি আর আর জানতাম যে আমার কপালে শা”লা রক্তচোষা বাদুরটা আছে!”
এতক্ষণ তাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিল ফারদিন।এবার ফারিন কিছু বলার আগেই সে দুষ্টুমির স্বরে বলল,,
—”আরে আপা ওর কাছে ওতো শোনার কি আছে ওর বরের নাম নির্ঝর!”
একটা কথা আর মুহূর্তেই হাত থেমে গেল নেহা আর আরার। তার অবাক দৃষ্টি ফারিনের দিকে তাকালো। আরার তো একপ্রকার ভীষম লাগলো। কাশতে কাশতে সে বলল,,
—”কি বললে ফারদিন নামটা?আবার একটু বল!”
ফারদিন কিছু বলার আগেই ফারিন রেগে গিয়ে বলল,,
—”ওই হা”রা”মি তোকে না বলেছি আমার রুমের আশেপাশে আসবি না। এখানে দাঁড়ায় কি করছিস এক্ষুনি ফোট এখান থেকে না হলে কিন্তু আমি বাবাকে ডেকে বলব!”
ফারদিন তাকে ভেঙ্গচিয়ে বলল,,
—”বাবাকে বলবো! শা”লি চামচি!”
ফারিন:” ফারদিন আমি যদি উঠি!”
নেহা তাদেরকে থামিয়ে বলল,,
—”আচ্ছা নে বাবা মাফ কর! টম এন্ড জেরির মত শুরু হয়েছে!”
ফারদিন:”আপু একটু বোঝাও তো ওকে! বেডি কালকে চলে যাবে তাও আজকে আমার সাথে ঝগড়া করছে!”
ফারিন:”তুই গেলি এখান থেকে!”
নেহা ফারদিনের দিকে ফিরে বলল,,
—”আচ্ছা ভাই আমি বোঝাচ্ছি তুমি এখন যাও না হলে দেখছো না ক্ষেপে গেছে মেহেদি টাই নষ্ট করে ফেলবে!”
ফারদিন চলে যেতেই নেহা ফারিনের দিকে ফিরে বলল,,
—”কি হয়েছে তোর ফারু? নির্ঝর মানেই কি নির্ঝর খান নাকি? অন্য কারো নাম নির্ঝর হতে পারেনা?”
ফারিন কোন কথা বলল না। নেহা তো আর জানে না এই নির্ঝর মানে সেই নির্ঝরই। অন্যদিকে পার্লারের মেয়েটির ইতিমধ্যেই ফারিনের হাতে নির্ঝর লেখা কমপ্লিট।ফারিন একঝলক সেদিকে তাকালো নিজের হাতে নিজের সবচেয়ে বড় শত্রুর নাম দেখে ফারিনের ইচ্ছা করলো অন্য হাত দিয়ে সেটিকে লেপ্টে দিতে কিন্তু কিছুই করার নেই সামনেই বসে আছে নেহা আর আরা ওদের সামনে কিছুই করা যাবে না তাহলেই ওরা বোঝে যাবে। যদিও কালকে এমনিতেই ওরা নির্ঝরের আসল পরিচয় জেনে যাবে!
আজ নির্ঝরের বিয়ে। চৌধুরী আবাসন সেজে উঠেছে অন্যরকম সাজে। এ বাড়িতে শেষ বিয়ে হয়েছিল আরো ২২ বছর আগে,ঐতিহ্যবাহী সারসরে, আজ আবারো সেই দিন। যদিও ২২ বছর আগে পালকিতে বিয়ে হয়েছিল কিন্তু এখন তো তা আর সম্ভব নয়। চৌধুরী আবাসন থেকে একে একে বের হচ্ছে প্রত্যেকের গাড়ি।
সর্বপ্রথম বের হয়েছে বরের গাড়ি। যাতে আছে নির্ঝর, তার বাবা, আর কতিপয় গুরুজনেরা। পরের গাড়িতে সাজিদ, ইলমা, সৌজন্য আর নিঝুম। ইলমার কমফোর্ট এর জন্য তাদের গাড়িতে শুধু চারজন। বাকি গাড়ি গুলোতে আত্মীয়-স্বজনেরা।
আর লাস্ট বাইকে শিশির আর নাহিয়ান। যদিও নাহিয়ান গাড়িতে যেতে চেয়েছিল কিন্তু শিশিরের কারণে বাইকে যেতে হচ্ছে। কি জানি তার মহারানীর হঠাৎ করে কি হলো। সে বাইকে যাবে মানে যাবেই আর নাহিয়ানেরও বা কি করার তার মহারানী যে একটা একবার বলেছে সেহেতু সেটাই হবে।
এখান থেকে ডুমুরিয়ায় ফারিনদের বাসায় পৌঁছাতে সম্ভবত তিরিশ মিনিট লাগবে। গাড়ি চলছে। হঠাৎই নাহিয়ান প্রশ্ন করল,,
—”কি ব্যাপার বলুন তো ম্যাম? আপনার এত মুড সুইং হয় কেন?”
শিশির:”মানে?”
নাহিয়ান:”কালকে না আমাকে বললেন বাইকে উঠতে আপনার অসুবিধা।তার ওপর আজকের নিজে থেকে জোর করে আমার সাথে বাইকে উঠলেন ব্যাপার কি?
শিশির কোনো কথা বলল না। যে অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও কেন বাড়িতে উঠেছে তা তো একমাত্র সেই জানে। আর কারণটা আর কেউ নয়, ইয়ালিনা। তাকে নিজের অবস্থান বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যই শিশির এইটা করেছে।
কিছুক্ষণ আগে…..
রেডি নিচে আসতেই শিশির দেখতে পায় বরাবরের মতো গর্জিয়াস সাথে দাঁড়িয়ে আছে ইয়ালিনা। পরনে হেভি গর্জিয়াস একটা লেহেঙ্গা সেই সাথে গর্জিয়াস মেকআপ সব মিলিয়ে নিজেই যেন নববধূ হয়ে সেজে আছে। অন্যদিকে শিশিরের পরনে বেবি পিংক কালারের একটা হালকা গর্জিয়াস লেহেঙ্গা। যদিও লেহেঙ্গাটা সে নিজেকে নেই আজকে সকালে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সে দেখতে পায়।
তার বিছানার উপর একটা শপিং ব্যাগ তার উপর ছোট্ট একটা রঙিন চিরকুট। চিরকুট টা খুলে সে দেখতে পায় তাতে লেখা,,
“এমনিতেই আপনি অনেক বেশি সুন্দর কিন্তু এটা পড়লে আপনাকে আরো বেশি সুন্দর দেখাবে My dear Linnet“
এক মুহূর্তেই শিশির বুঝে গেল এটা নাহিয়ানের কাজ। সে মুচকি হেসে ব্যাগটা খুলতেই দেখতে পেল তার ভিতর বেবি পিংক কালারের একটা হালকা গর্জিয়াস লেহেঙ্গা। লেহেঙ্গাটা এত সুন্দর যে এক দেখাতেই তার পছন্দ হলো। তারপর মুচকি হেসে সে সেটা পড়ল।শিশির নিচে নামতেই আ ইয়ালিনা তাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিল।
শিশিরেরই বা কি যায় আসে সে পাশ কেটেই চলে যাচ্ছিল কিন্তু তখনই তার নজরে পড়ে ইয়ারলিনার হাতে নাহিয়ানের নাম লেখা। মুহূর্তেই মেজাজ সপ্তমের চড়ে যায় তার। নিজে নাহিয়ানের স্ত্রী হয়েও সে হাতে নাহিয়ানের নাম লিখতে পারিনি অথচ কোথাকার কোন ইয়ালিনা নিজের হাতে নাহিয়ানের নাম লিখে বসে আছে! শিশিরের তো ইচ্ছে করছিল ওই শাকচুন্নিটার চুলগুলোই ছিড়ে দিতে। কিন্তু না শিশির কি এত কাঁচা খেলোয়ার নাকি?
সে শেষ বলেই ছক্কা হাতাবে। এইজন্যই সবাই গাড়িতে যাওয়া সত্ত্বেও সে আর নাহিয়ান বাইকে যাচ্ছে নাহিয়ানের বাইকে, যখন তারা বাইকে উঠেছিল তখন ইয়ালিনার মুখটা পুরো দেখার মত ছিল!
নিজের স্মৃতির জগৎ থেকে বের হয়ে আসলো শিশির। আরেকটু দূরেই ফারিনদের বাসা।প্রায় চলে এসেছে তারা। এখান থেকে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে বিয়ে বাড়ির গেট আর শোনা যাচ্ছে সাউন্ড বক্সের শব্দ।
নির্ঝরদের গাড়ি এসে থামল। গাড়ি থেকে নামতেই ফারিনের আম্মু ফাহমিদা আনম ও তার বড় চাচি তাহমিনা বেগম তাকে বরণ করে নিল। ভেতরে ঢুকলো তারা। ফারিনের রুমে ফারিনের পাশে বসে ছিল আরা নেহা আর লিসা। লিসা ইমন আর রায়ান একটু আগেই এসেছে। হঠাৎই ফারিনের এক কাজিন ইরা দৌড়ে এসে বলল,,
—”আরে তোমরা এখানে! ওদিকে বর এসেছে দেখবে না?”
ইরার কথা শুনে নেহা আরা আর লিসা একসাথে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,
—”কি চলে এসেছে?”
ইরা:”হুম তোমরা যাবে না?”
তারা সবাই একসাথে বললো,,
—”যাব না মানে অবশ্যই যাবো!”
কথাটা বলেই তিনজন মিলে ছুট লাগালো বরকে দেখার উদ্দেশ্যে। পিছন থেকে ফারিন কপালে হাত চেপে বলল,,
—”যা যা গিয়ে রক্তচোষা বাদুর টাকে দেখ!”
এদিকে বর এসেছে শুনে ইমন আর রায়ান এসেছিল বরের সাথে ফাজলামি করতে হাজার হলেও তাদের একমাত্র দুষ্ট বান্ধবীর বর বলে কথা। তার আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছিল কি কি দুষ্টামি করবে সেই অনুযায়ী ইমন আর রায়ান মিলে যখন বাড়ির সামনে আসলো তাদের চোখ কঠোর থেকে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। নির্ঝর স্যার!
ভয়ে তাদের গলা শুকিয়ে আসলো। ইমন দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়লেও থেকে গেল রায়ান। বেচারার কপালে এমনিতেই খারাপ তার ওপর আবার পোলা নির্ঝরের সামনে।একেবারে মুখোমুখি পড়লো। কি করবে বুঝতে না পেরে দ্রুত দুই হাত পিছনে বেধে আরামে দাঁড়িয়ে গেল। নির্ঝর তার পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় তার হৃদপিণ্ড যেন ধরাস ধরাস করতে করতে হাতে বের হয়ে আসছিল।
সে চলে যেতেই রায়ান পাশ থেকে একটা ওয়েটারের হাত থেকে সফট ড্রিঙ্কসের গ্লাস নিয়ে ধক ধক করে এক নিঃশ্বাসের সম্পূর্ণ সফট ড্রিঙ্কসটুকু খেয়ে ফেলল। এটা কি দেখলো সে নির্ঝর স্যারই ফারুর হাসবেন্ড!
অন্যদিকে নেহা আরা আর লিসা দূর থেকে সবটা দেখলো। নির্ঝরকে দেখে এক প্রকার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা তাদের। নেহা আর আরা বুঝতে পারল এই জন্যেই কালকে রাতে যখন মেহেদির আপু শুনতে ছিল ফিয়ান্সির নাম তখন ফারু রেগে গিয়েছিল।
ঘন্টাখানেক পর……
বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বিয়ের সময় ঘটেছিল এক অন্যরকম ঘটনা। ফারিনের বিয়ে বলে কথা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে! কবুল বলার সময় ফারিন বলেছিল তার নাকি মুড নেই! মানে এত ড্রামা কুইন মেয়েটা! শেষমেষ ফাহমিদা আনম তার দিকে কটমট করে তাকালে সে কুবল বলতে বাধ্য হয়েছিল।
বর্তমানে সে আর নির্ঝর বসে আছে তাদের জন্য সজ্জিত বিবাহ আসনে। নির্ঝর তো একবারও ফারিনের দিকে তাকাচ্ছে না আর না তো ফারিন তার দিকে। ক্যামেরাম্যান শেষমেষ বিরক্ত হয়ে বলল,,,
—”আরে ভাই আপনারা তো একবার একটু তাকান না হলে ছবি তুলব কিভাবে?”
দুজনে একসাথে বলল,,
—”তুলতে হবে না ছবি!”
একই কথা বলার পর দুজনেই দুইজনের দিকে তাকালো। কি করে একসাথে যারা একই কথা বলে ফেলল! সবাই হেসে উঠল তাদের এমন বাচ্চামি দেখে। ফারিন মুখ বাঁকিয়ে ঘুরিয়ে নিল। এদিকে শিশির হেসে কুটিকুটি। আর নাহিয়ান মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে তাকে। হাসলে শিশিরের বাঁ চোয়ালে টোল পড়ে। আর সেটাই নাহিয়ানের দুর্বলতা।
শিশির হাসতে হাসতে একবার নাহিয়ানের দিকে তাকালো। নাহিয়ান তখনও মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার পানে। তা দেখে শিশির বলল,
—”কি দেখছেন?”
নাহিয়ান:”আপনাকে!”
শিশির হাসি থামালো সামান্য লজ্জা পেল। তা দেখে নাহিয়ান বলল,,
—”থামলেন কেন?”
শিশির লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল,,
—”আপনি যে কি বলেন না!”
নাহিয়ান সামান্য মুচকি হাসলো। পাশ থেকে একজন ক্যামেরাম্যান বলল,,
—”স্যার আপনাকে একটা ছবি তুলতে পারি?”
নাহিয়ান শিশিরের সাথে আরেকটু ক্লোজলি দাঁড়িয়ে বলল,,
—”ইয়েস অফ কোর্স!”
ছবি তুলে ক্যামেরাম্যানটা বলল,,
—”এই পর্যন্ত এই প্রথম একটা সুস্থ স্বাভাবিক ছবি তুলতে পারলাম! নব দম্পতি তো ঝগড়াতে ব্যস্ত! কিন্তু স্যার আপনার কি হাসবেন্ড ওয়াইফ? না মানে ম্যাচিং করে পড়েছেন তারপর আপনাদের দুজনকে খুব সুন্দর লাগছে!”
শিশির নাহিয়ানের দিকে তাকালো। সে বুঝতে পারল না নাহিয়ান কি আসলেও বলবে তারা হাজব্যান্ড ওয়াইফ। নাহিয়ান তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,,
—”ইয়েস আমরা হাজব্যান্ড ওয়াইফ!”
শিশির মুচকি হাসলো। আসলেও কি তাকে নাহিয়ানের পাশে মানাচ্ছে? নাহিয়ান যেমন সুন্দর তেমন লম্বা কিন্তু শিশির তো খাটো। খুব যে খাটো তা নয় নাহিয়ানের পাশাপাশি দাঁড়ালে তার মাথাটা নাহিয়ানের ঘাড়ের একটু নিচে পড়ে। তাও! নাহিয়ানের তুলনায় তো সে খাটো!
এদিকে রাগে গজ গজ করছে ইয়ালিনা। সে ভেবেছিল নাহিয়ান ব্ল্যাক বাবলুর ভিতরে কিছু পড়বে কিন্তু একি সে শিশিরের সাথে ম্যাচ করে বেবি পিংক কালারের আউটফিট নিয়েছে। যা একদমই সহ্য হচ্ছে না ইয়ালিনার। নাহিয়ান ভাইয়া ছোটবেলা থেকেই শিশিরের প্রতি একটু বেশিই কেয়ারিং কিন্তু এখন যেগুলো করছে সেগুলো একটু বেশি বেশিই!
সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত। এদিকে নিজের মত একটা কর্নারে বসে আছে নিঝুম। সে কিই বা করবে ছবি তুলতে তুলতে সে ক্লান্ত আর সবাই এখন জোড়ায় জোড়ায় ছবি তুলছে।আর সে মুখে হাত দিয়ে বসে বসে দেখছে। হঠাৎই পিছন দিকে কেউ একজন এসে তাকে বলল,,
—”হেই হ্যালো!”
নিঝুম পিছনে ঘুরল কিন্তু চিনতে পারল না ছেলেটিকে। মনে হচ্ছে আগেও কোথায় দেখেছে কিন্তু ঠিক… সে যখন ভাবনার অতলে ডুবে আছে তখনই ছেলেটি বলল,,
—”এই তুমি আমাকে চিনছো না আমি ফারদিন ফারিনের ছোট ভাই!”
নিঝুম:”ও আচ্ছা!”
ফারদিন তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,,
—”নাইস টু মিট ইউ!”
নিঝুম হাত বাড়াতেই, ফারদিন হঠাৎ হাত সরিয়ে নিয়ে চুলে হেয়ার ফ্লিকের মতো ভঙ্গিতে হাত চালাল, যেন চুলটা আরও ঠিকঠাক করল।নিঝুম অপ্রস্তুত হেসে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,,
—”সেম টু ইউ!”
অন্যদিকে দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিল সৌজন্য। নিঝুম অন্য একটা ছেলের সাথে এত হেসে হেসে কথা বলছে দেখে মেজাজ গরম হলো তার।কই তার সাথে তো নিঝুম এত ভালোভাবে কথা বলে না সার্বক্ষণিক আঙ্কেল আঙ্কেল করতেই থাকে! আর অন্য একটা ছেলের সাথে এত…! সে সেদিকে এগোতে যেতেই দেখতে পেল এক ঝাঁক ছেলে মেয়ে এসে নিঝুমের মাথায় ফোম স্প্রে আর গ্লিটার ছড়িয়ে দিল।
এদিকে ফোম স্প্রে আর গ্লিটারের কারণে নিঝুমের সুন্দর চুলগুলো একেবারে অগোছালো হয়ে গেল।। সামনে থেকে ফারদিন হেসে বলল,,
—”কেমন লাগলো বিয়াইন?”
মানে এই সবটা ফারদিনেরই দুষ্টুমি ছিল! নিঝুম কিছু বলার আগে ফারদিন বলল,,
—”আরে রাগ করলে নাকি? বিয়ে বাড়িতে সব একটু আধটু হয়! আসো আমি চুল গুলো ঠিক করে দিচ্ছি!”
কথাটি বলে সে নিঝুমের চুলে হাত বাড়াতেই। সৌজন্যে এক ঝটকায় তার হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,,
—”ওর চুলে হাত দিচ্ছ কেন?”
ফারদিন এবার কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। সে অপ্রস্তুত স্বরে বলল,,
—”না আসলে ভাইয়া ওর চুলে..”
সৌজন্য কিছুটা রাগী কন্ঠে বলল,,
—”সেটা আমিও দেখতে পেয়েছি! আর এখন তুমি যেতে পারো তোমার আর প্রয়োজন নেই!”
ফারদিন:”কিন্তু ভাইয়া ওর চুলটা!”
সৌজন্য:”ওর চুল ঠিক করার জন্য আমি আছি এখন তুমি যাও!”
ফারদিন চলে যেতেই নিঝুম সৌজন্যের দিকে তাকিয়ে বলল,,
—”এমন বাজে ব্যবহার করলেন কেন?”
সৌজন্য:”ইচ্ছা হয়েছে তাই বেশি কথা না বলে পিছনে ঘোরো!”
নিঝুম:”ইচ্ছা হয়েছে মানে?”
সৌজন্য আর কোনো কথা না বলে নিঝুমের পিছনে গিয়ে চুল থেকে গ্লিটার গুলো ছাড়িয়ে দিতে লাগলো। এদিকে নিঝুম হতভম্ব সৌজন্য করছে টা কি! কিন্তু তাকে হাজার প্রশ্ন করার পরও সৌজন্য কোন জবাব দিল না নিজ মনে নিঝুমের মাথা থেকে গ্লিটারগুলো ছাড়াতে থাকলো।
নীল দিগন্তে অস্তমিত সূর্যের রক্তিম আভা। ফারিনদের বাসা থেকে নির্ঝররা রওনা দিয়েছে চৌধুরী আবাসনের উদ্দেশ্যে। বর-কনের গাড়িতে বসে আছে নির্ঝর তার পাশে ফারিন। ফারিন বিদায় বেলাটা একটু অদ্ভুত অন্যান্য মেয়েদের মত সে একবারও কান্নাকাটি করেনি। এতে অবশ্য সবাই বেশ অবাকই হয়েছিল কিন্তু কেউ কিছু বলেনি! কারণ সবাই খুব ভালো করেই জানে, এখন যদি পারেন কে কিছু বলা হয় সে এমন ত্যাড়াত্যাড়া জবাব দেবে যে দেখা গেল এখানেই ঝগড়া শুরু হয়ে গেল।
ফারিন জালনা দিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে আছে। নির্ঝর একবার তাকালে তার পানে। পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে নিল। তাদের মাঝখানে দূরত্বটা একটু বেশি। এই ধরা যায় ২-৩ বছরের একটা বাচ্চাকে তাদের মাঝখানে বসানো যাবে।
এদিকে নাহিয়ান বাইক নিয়ে চৌধুরী আবাসনের দিকে না গিয়ে অন্য রাস্তায় মোড় নিতেই শিশির বেশ অবাক হয়েই জোরেই শুধালো,,
—”এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?”
নাহিয়ান:”দেখি কোথায় যাওয়া যায়! কেন বিশ্বাস নেই আমার উপর?”
শিশির:”তা তো আছেই কিন্তু…”
নাহিয়ান:”তাহলে চুপচাপ বসো!”
বাইক চলছে আপন গতিতে। হঠাৎ এই নাহিয়ান শুধালো,,
—”বাইক রাইডিং ভয় লাগে?”
শিশির:”হুমমম… তা তো একটু লাগে!”
নাহিয়ান:”এখনো ভয় লাগছে?”
শিশির:”না!”
নাহিয়ান:”বিশ্বাস করেন আমাকে?”
শিশির কোনো তাছাড়া স্পষ্ট কণ্ঠে বললো,,
—”অবশ্যই!”
নাহিয়ান মুচকি হেসে বলল,,
—”তাহলে যাবেন আমার সাথে!”
শিশির :”কোথায়?”
নাহিয়ান গলা খাঁকারি দিয়ে গাইতে শুরু করলো,,
মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৩৮
যে দেশে রামধনু এঁকে..
প্রেমীরা কবিতা লিখে…
চলোনা সেই দেশেতে…
কেউ খুঁজে পাবে না….
কথার গুঞ্জন শোনবো দুজন…
কেউ শুনতে পাবে না….