প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩৬
Zannat Xhowdury
সকালে রোদ এসে জানালার ফাঁক গলে সূর্যের হালকা কমলা আভা ছড়িয়ে পড়ছে ঘরের মেঝেতে। ঘর জুড়ে এক অদ্ভুত নীরবতা, যেন রাতের আঁধার এখনো কিছুটা রয়ে গেছে চারপাশে।
নির্ণয় চোখ পিটপিট করে খুলে। দুহাতে মাথা চেপে ধরে ধীরে ধীরে উঠে বসে বিছানায়। ঝিম ঝিম করছে মাথা আশেপাশে নজর বুলিয়ে নিচ্ছে সে হঠাৎ ওর চোখ পড়ে সোফার দিকে।
সেখানে বসে আছে আয়ান, অপূর্ব আর রিয়ান। তিনজনের মুখে গভীর ক্লান্তির ছাপ, অথচ গলার নিচু গুঞ্জনে তারা কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে। রিয়ানের চোখে রক্তিম রেখা, এইদিকে মুখ টা কেম ফ্যাকাসে লাগছে ছেলেটার
নির্ণয় ঘাড় কাত করে তাকায় বাম পাশে।
ল্যাপটপ খুলে বসে আছে তৃধা। চোখের নিচে কালি, ঠোঁট কামড়ে ধরা… কিছু খুঁজছে, কী যেন বোঝার চেষ্টা করছে। পাশে বসে রিধিমা, দুই হাতের আঙুল একটার পর একটা ঘষে চলেছে, তার মুখে স্পষ্ট চিন্তার ভাঁজ। মাঝে মাঝে তৃধার স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছে, আবার কখনো একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকছে জানালার বাইরে।
হঠাৎ নিরবতা ভেঙ্গে তৃধা বলে ওঠে—
“ডেটা ট্র্যাক করছি… লোকেশন মেলাতে পারছি না… মনে হচ্ছে সিগন্যাল ব্লক করা হয়েছে।”
দুহাতে মাথা চেপে রাতের সকল কথা মনে করছে নির্ণয়। একটু সময় লাগলেও ..ধীরে ধীরে মনে পড়ে যায় সব কথা রোজার না থাকা রিয়ানে ঘরে আসা … ইনজেকশন পুষ সব মনে পড়ে যায় । রোজা মিসিং ভাবতেই চোখ জোড়া লাল হয়ে ওঠে। শরীর ঝাড়া দিয়ে ওঠে বিছানা ছেড়ে….
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইনজেকশনের ঘুম এখনও পুরোপুরি কাটেনি। মাথার ভেতরটা কেমন ভারী লাগছে, শব্দগুলো এলোমেলো ভেসে আসছে।
আহহ “রোজ ”
চেঁচিয়ে ওঠে নির্ণয় একে এক মনোযোগ ক্ষুণ্ন হয় সকলের
রিয়ান দ্রুত এগিয়ে এসে বিছানার কাছে
ভাই!
পরপর রিধিমা, আয়ান, অপূর্ব, রিয়ান সবাই একসাথে ছুটে আসে ওর কাছে। তৃধা তখনো বসা ল্যাপটপ হাতে বসা
রোজ কোথায় ? ওর ইনফরমেশন….
শুষ্ক ঢোক গিলে আয়ান , এদিক ওদিক তাকিয়ে .. অসহায় স্বরে বলে
“ওকে কিডন্যাপ করা হয়েছে ভাই। লোকেশন ট্র্যাকিং করছি, সিগন্যাল ব্লক করা… কিন্তু তৃধা চেষ্টা করছে সিস্টেম ব্রেক করতে।”
রিসোর্টের সিসি টিভি ফুটেজ চেকিং করা হয়েছে … এক কালো পোশাক পড়া , সাথে মাস্ক পড়া এক ছেলের দেখা মিলছে।
আমি অলরেডি রোজার ডিপার্টমেন্টে ইনফর্ম করছি তারাও চেষ্টা করছে।
নির্ণয় ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে দাঁড়ায় তৃধা কাজে ,
লাস্ট লোকেশন কোথায় ?
এ্যানসি , লাস্ট লোকেশন সিলেটের আশে পাশেই একটা কন্সট্রাকসন এরিয়া।
কথাটুকু বলেই ল্যাপটপ নির্ণয়ের দিকে এগিয়ে দেয় তৃধা। নির্ণয় বেশ বিচক্ষণ ভাবে পরক্ষ করে সব ।
হঠাৎ মনে পড়ে যায় , রোজা হাতের রিং টায় ছোট এক ট্র্যাকার বসিয়েছিলো নির্ণয় …, যা পাজি মেয়ে কখন জানি নাই হয়ে যায় এই ভেবেই তার ..এই পদক্ষেপ নেওয়া।
নির্ণয় ধীরে ধীরে বেশ বিচুক্ষণ ভাবে সিগন্যাল পিক করতে থাকে। সকলের চোখ দুটো কেমন রসগোল্লার মতো হতে থাকে সকলের।
নির্ণয় স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে নিখুঁত ফোকাস নিয়ে।
লোকেশন ম্যাপ, সিগন্যাল জ্যাম গ্রাফ, তার চোখ একটুও টলছে না। ঠোঁটের কোণে খেলে যায় একটা ঠান্ডা, হাসি খেলে যায়।
ওহহহ , ওয়েল ডান এ্যানসি !
নীরবতার মাঝেই চেঁচিয়ে ওঠে তৃধা সকলে দৃষ্টি ল্যাপটপ থেকে সরে তৃধার উপর গিয়ে পড়ে! নির্ণয় ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে ….
লোকেশন দেখে বুঝার চেষ্টা করছে খিচুড়ি ঠিক কথায় পাকানো হয়েছে। হঠাৎ ভাইব্রেশন মুডে ফোন কাঁপার শব্দ কানে আসে ঘরে উপস্থিত সকলে খুজতে থাকে কার ফোন বাজছে । নির্ণয় ল্যাপটপ ছেড়ে এগিয়ে যায় বেডের কাছে বালিশের নিচ থেকে ফোন তুলে স্ক্রিনে চোখ পড়তেই নজরে আসে অপরিচিত নাম্বার আগপাছ না ভেবেই ফোন রিসিভ করে লাউডে দেয় সে
হ্যালো কে ?
– এত জলদি ভুললে কিভাবে হবে , মিস্টার চৌধুরী। পুরনো হিসেবে তো এখনো বাকি !
নির্ণয় চমকায় না এইরকম একটা কলের অপেক্ষা সে করছিলো …
মনে মনে যা ভাবছিলো তা সত্যি করতে এই কল আসার ভীষণ প্রয়োজন ছিলো
রিয়ান সোফার কাছ থেকে এগিয়ে এসে দাড়ায় নির্ণয়ের ঠিক পাশাপাশি নির্ণয় তখনো নিশ্চুপ
– আপনাদের দু রাজার প্রাণ ভোমড়া যে আমার হাতে ! তাকে ফিরাতে হবে নিশ্চয়ই … তা কি বলেন মেরে দেই !
শা… ” রিয়ান কিছু বলতে নিবে তার আগেই তার মুখ চেপে ধরে আয়ান।
ওপর পাশের কল ডিসকানেক্ট হয়েছে। আয়ান ধীরে ধীরে হাত রাখে নির্ণয়ে কাঁধে , নির্ণয় কে বেশ চিন্তিত লাগছে। ছেলেটা কি ভয় পাচ্ছে … আয়ান কম্পিত কন্ঠে বলে
-প্লিজ ভাই নিজেকে সামলা , নাহলে রোজ কে কিভাবে খুঁজবি
টেনশন নিস না আল্লাহ সহায় থাকলে সব ভালো হবে।
আয়ানে কথায় একটুও চমকায় না নির্ণয় ঠোঁটে কোণে ফোঁটে ওঠে আবারো সেই চিরচেনা বাঁকা যা নজড় এড়ায় না করো ..
-সে বিড়াল নয় , বাঘিনী…
টেনশন তার জন্য নয় বাকিদের জন্য হচ্ছে।
নির্ণয় ধীরে ধীরে আয়ানের কাঁধ থেকে হাতটা সরিয়ে নেয়। চোখ নামিয়ে হাতের মুঠোয় ফোনের দিকে তাকিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে নেয় তা
-“চল,”
নির্ণয়ের ঠান্ডা কন্ঠ শীতল, আয়ান বেক্কলের মতো আবারো প্রশ্ন করে
_”কোথায় যাচ্ছিস?”
নির্ণয় একটু ঝুঁকে আয়ানের মুখে উপর …
-বউ খুঁজতে… আর কিছু শিকারি শেয়ালের ক্ষুদা নিবারণ করতে।”
এক মুহূর্তের জন্যও সময় নষ্ট করে না নির্ণয়। পা চালিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আয়ান বাধ্য হয়ে পেছনে পেছনে হাঁটে। রিয়ান তখনো দাড়ানো রুমে …. অপূর্ব তাকিয়ে থাকে নির্ণয়ের যাওয়ার পানে। রিয়ান এগিয়ে এসে হাত রাখে অপূর্বের কাধে ..
-“তুই রিসোর্টে থাকা , রিধি , তৃধা ওদের প্রটেকশন দেওয়ার দায়িত্ব তোকে দিয়ে গেলাম।
কথাগুলো শেষ করেই নির্ণয় পিছু নেয় রিয়ান
রৌদ্র তাপ তখন ঠিক মাথার উপড়ে ….
গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে নির্ণয়। ইঞ্জিন স্টার্ট দেওয়ার সময়েও তার চোখের পলক পড়ে না। একে একে গাড়িতে চড়ে বসে আয়ান , রিয়ান।
গাড়ির ঘড়ঘড় শব্দ ভেদ করে নেমে আসে এক অদ্ভুত নীরবতা । এদিকে শক্ত হাতে স্টিয়ারিং ধরে রয়ে নির্ণয় পাহাড়ি রাস্তার পথ ধরে এগিয়ে চলছে গাড়ি
গাড়ির সামনে যত দূর চোখ যায়, আঁকাবাঁকা পথের দু’পাশে শুধু ঘন সবুজের দেয়াল। মাঝে মাঝে পাহাড়ের ঢালু থেকে নেমে আসা কুয়াশার ধারা যেন ধুলো আর রক্তের গন্ধে মিশে আছে।
নির্ণয় স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে একদৃষ্টিতে সামনের রাস্তার দিকে তাকিয়ে।
আয়ান পাশে বসে ট্যাবের স্ক্রিনে চোখ রেখে বলে, লোকেশন বলছে। রিয়ান বেশ চুপচাপ হঠাৎ ট্যাবের স্ক্রিন ব্ল্যাকআউট হয়ে যায়। সিগন্যাল কেটে গেছে।
আয়ান হতভম্ব হয়ে বলে,
”
আহহ এইটা কি করে হলো সিগন্যাল ব্লক হয়েছে!
জোড়ে গাড়ির ব্রেক কষে নির্ণয় । ।” রাগি ক্ষিপ্ত চোখে তাকায় আয়ানের দিকে দ্রুত হাতে ট্যাব কেড়ে নিয়ে চোখ রাখে তাতে
সত্যি সিস্টেম ব্রেক করেছে। তবে এটা তোহ হবার কথা নয় নির্ণয় দ্রুত নিজের চুল খামচে ধরে।
ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিঃশ্বাস ফেলাও যেনো বোঝা হয়ে গেছে। চারপাশটা এমন এক গা ছমছমে নিস্তব্ধতায় মোড়ানো। যেখানে বাতাস শব্দটাও কানে আসে না । সেই অন্ধকার ঘরের মেঝেতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে রোজা। শরীরটায় ঘাম আর ধুলোর চটচটে অস্বস্তি,মেঝে থেকে ওঠা ঠান্ডায় যেনো গায়ে কাঁটা দিচ্ছে তার
ধীরে ধীরে কাঁপছে চোখের পাতা। নিঃশ্বাস টেনে আনার লড়াইয়ে ক্লান্ত শরীরটা জড়োসড়ো হয়ে আছে। হঠাৎ এক মুহূর্তে, পিটপিট করে চোখ খুলে… কোথাও এক চিলতে আলো নেই। ঠিক বুঝে ওঠা যাচ্ছে না এটা সকাল নাকি রাত …
রোজা আশেপাশে তাকায় ..এ ঘরে বুঝি জানালা বলে কিছু নেই। কিংবা জানালা থাকলেও, বাইরেটাই অন্ধকারের গর্ভে ডুবে আছে। দেওয়াল ছুঁয়ে দেখতে চায় সে, জানতে চায় কোথায় আছে… কিন্তু হাত পা শক্ত করে বাঁধা। দড়ির খসখসে ফাঁস রোজার কব্জিতে পিষে দিচ্ছে নরম চামড়া।
পানির তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ । শুষ্ক ঢোক গিলতে গিলতে গলায় খচখচে কষ্ট জমেছে। ঠোঁট দুটো ফেটে চৌচির, জিভ ঠোঁটের কোণায় ছুঁয়েই সরে আসে যেনো কাঁটা বিছানো।
রোজা মাথা ঘুরিয়ে চারপাশে কিছু শোনার চেষ্টা করে, কিন্তু চারপাশে তীব্র নিস্তব্ধতা যেনো গিলে নিচ্ছে সব।
রোজার বুকের ধুকপুকানি আরও বেড়ে যায়। বেশ কষ্টে নিজে নিজে বিরবির করে সে
-ইয়া আল্লাহ কই এসে পড়েছি। উফফ মাথাটা যন্ত্রণা করছে …
এখান থেকে বেড়োতেই হবে।
পিপাসায় কথা বলার শক্তিটুকুও যেনো নেই। বুকের গভীর থেকে আসা এক তীব্র তৃষ্ণা আর আতঙ্কে সে কাঁপাকাঁপা গলায় ডাকতে শুরু করে—
-“কে… কেউ আছেন…? পানি… একটু পানি খাবো…”
শব্দগুলো যেনো অন্ধকারেই থেমে যায়। দেয়াল চেপে ধরে ওগুলোকে, ফেরত পাঠায় না। রোজার কণ্ঠ এমন দুর্বল, মনে হয় বাতাসও তার কথা শুনতে পায় না।
-সে আবারো চেষ্টা করে, এবার খানিক জোরে—
“শুনতে পাচ্ছেন…? পানি খাবো… দয়া করে…”
থেমে যায় রোজা ! বুঝতে পারে, তার ডাকে কেউ সাড়া দিচ্ছে না। হয়তো কেউ নেই, কিংবা কেউ আছেই ঠিক তবে ইচ্ছে করেই তাকে শুনছে না। হঠাৎ বুকের ভিতরটা ধক করে ওঠে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে …
-নির্ণয় ভাই কোথায় আপনি …!! প্লিজ ভুল বুঝবেন না আমায়।
রোজা গলার যতটুকু শক্তি আছে দিয়ে আবার চিৎকার করতে চায়, কিন্তু গলা রুদ্ধ হয়ে আসে। গলা উঁচিয়ে আবারো ডাকে
-“পানি খাবো… কেউ আছেন?”
হাপিয়ে গেছে মেয়েটা । গলা দিয়ে আর শব্দ বেরোচ্ছে না। চেষ্টা করেও পারে না আর একটু শব্দ বেথ করতে । কাঁপা কাঁপা নিঃশ্বাসে বুক উঠছে-নামছে।, চোখের পাতায় ভার এসে পড়েছে।ষ ক্লান্ত, অবসন্ন শরীরটা ধীরে ধীরে নেতিয়ে পড়ছে মাটির ওপর।
ঘরের ভেতরটা যেনো আরও ভারি হয়ে উঠেছে। নিঃশ্বাস ফেলাও কঠিন।
হঠাৎ মেটালের সঙ্গে মেটালের ঠোকাঠুকির এক কর্কশ শব্দে চমকে ওঠে রোজা। দরজার চাবিটা ঘুরছে।
রোজা মাথা তুলে তাকানোর চেষ্টা করে, তবে চোখের সামনে শুধু ঘন অন্ধকার।
এদিকে চটাস! শব্দে খুলে যায় দরজা । বাইরে থেকে সাদা-হলুদ মিশ্রিত আলো ঘরের ভিতরে ছিটকে পড়লো। সেই আলো সরাসরি এসে পড়ে রোজার চোখে।
চোখ টিপে ফেলে সে। অন্ধকারে এতক্ষণ থাকার পর আলোটা যেনো ছুরির মতো চোখে বিঁধে।
আস্তে আস্তে স্পষ্ট হতে শুরু করে সব কালো এক অবয়ব, দরজার ফ্রেমে দাঁড়িয়ে আছে। উচ্চতা মাঝারি, কিন্তু শরীরটা অবিচল। মুখটা দেখা যায় না, আলো তার পেছন থেকে আসায় মুখটা ছায়ায় ঢাকা পড়ে আছে।
রোজার ঠোঁট কেঁপে ওঠে, কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বের হয় না। শুধু শুকনো নিঃশ্বাস ফেলে বলে
-‘কে…?’
অবয়বটা উত্তর করে না বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর ধীর পায়ে ঘরের দিকে এগিয়ে আসে
হিলের ধাতব সোলের শব্দ ঘরের নিস্তব্ধতায় যেনো বিষিয়ে ওঠে।
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রোজা । ধীরে ধীরে , এগিয়ে আসে দাড়ায় রোজার সামনে ..
বাইরের আলো যখন ছড়িয়ে পড়ে, ধীরে ধীরে সেই নারীর মুখ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
রোজার চোখ বিস্ফারিত। তার ঠোঁট কাঁপে, এক অস্ফুট, ক্রোধে জর্জরিত স্বর বেরিয়ে আসে
-“তুমি…”
মাথাটা হালকা কাত করে, রোজার চোখের দিকে তাকায় জারা
নিস্তব্ধতার মাঝে পুরো ঘর কাঁপিয়ে হেসে ওঠে সে।
-হ্যাঁ আমি
জারার ঠোঁটের কোণায় বিদ্রুপের ছায়া।আরো কিছুটা সামনে এগিয়ে এসে রোজার কাছে বসে পড়ে।
-“পানি চাইছিলে তো?
– তার মানে এইসবের পিছনে তুমি
রোজার চোখ জ্বলছে ক্রোধে। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি গ্রাস করছে জারার নজর। জারা ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসি টেনে বলল—
-“যাক, বুদ্ধিমতি মেয়ে তো! ঠিকঠাক সময়ে বুঝে গেছো, তাই না?”
দুজনের কথার মাঝেই … কয়েকজন পুরুষ ঘরে প্রবেশ করে। সবাই সাদা পোশাক পরা।
সকলে হাতে চকচকে ট্রে— তাতে রাখা আছে বাহারি রকমের গহনা, ভারী কাঁসার চুড়ি, নাকফুল, কপালের টিপ সাথে কিছু খাবার এদিকে একজন ড্রেস নিয়ে দাড়িয়ে।
ঘরের মধ্যে হঠাৎ যেনো এক অদ্ভুত “পার্থিব আনন্দের” আয়োজন শুরু হলো, যা ঘরের আসল ভয়ংকর পরিবেশের সাথে সম্পূর্ণ বিপরীত।
ঘরটা বাতাস যেনো থম মেরে যায়। সাদা পোশাকের লোকগুলো নিঃশব্দে সাজগোজের আয়োজন করছে, খাবারের ট্রেগুলো মাটিতে নামিয়ে রাখছে, কিন্তু
বিরক্তি সারা শরীর দখলে নেয় রোজার। ঠোঁট শক্ত করে আঁটে ক্লান্ত, ক্ষয়িষ্ণু শরীরটা দড়িতে বাঁধা, তবুও তার চোখ দুটো জ্বলে ওঠে বিদ্রোহে। ভ্রু জোড়া কুঁচকে তাকিয়ে থাকে জারার দিকে ।
জারা মুসকি হাসে হেয়ালি স্বরে বলে …
-খাবার খেয়ে তৈরি হয়ে নেবে আসরে যেতে হবে।
-“কীসের আসর?”
শব্দগুলো যেনো ঘরটা কাঁপিয়ে দেয়। বিন্দু মাত্র কাপে না রোজার গলা ভীষণ রাগে জ্বলছে তার শরীর।
জারা থেমে যায় এক মুহূর্তের জন্য। হঠাৎ মুখে লেগে থাকা হাসি আরও গভীর হয়ে ওঠে তার
সে ধীরে ধীরে রোজার দিকে এগিয়ে এসে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে—
-“যে আসরে তোর মতোদের সাজিয়ে সাজিয়ে দেখানো হয়। শরীরের দাম ওঠানো হয়। গহনার ওজন দেখে ঠিক করা হয়, কে কেমন খদ্দের পাবে।”
রোজার চোখ এবার রক্তিম হয়ে উঠেছে। দড়িতে বাঁধা পড়েও তার কণ্ঠে সেই পুরনো তেজ ফিরে এসেছে।
জারার চোখে চোখ রেখে সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো—
-“আমাকে কি তোর মতো ব্যা*শা মনে হয়!”
শব্দগুলো ঘরের বাতাস কেটে ফেলে। জারার মুখ হঠাৎই থমকে যায়।পরের মুহূর্তেই তার চোখ জ্বলে ওঠে, যেনো স্ফুলিঙ্গে আগুন লেগেছে।সে তীব্র ক্ষিপ্ততায় ঝাঁপিয়ে পড়ে রোজার উপর, শক্ত হাতে রোজার গাল চেপে ধরে। আঙুলগুলো রোজার গালে গভীরভাবে বসে যায়।জারা রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে ওঠে—
-“সতিত্বের সূত্র বুঝি আমার তোর কাছে শিখতে হবে ছ্যাহ্ ? দুই পুরুষের খাদ্য হয়ে আমার চরিত্রে আঙ্গুল তুলছিস?”
কিছু থেমে থাকে জারা গালের চাপ আরো কিছুটা বাড়িয়ে আবারো বলে …
-তোর মতো মা** জন্যই রেহান আমার হাত থেকে পিছলে গেছে।”
রোজার চোখে এবার তীব্র অবজ্ঞার ছায়া নেমে আসে।
সে যন্ত্রণায় কুঁকড়ালেও ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের একটা পাতলা হাসি ফুটে ওঠে।
গলা দিয়ে চাপা স্বরে ফিসফিসিয়ে বলে—
-” তাহলেই ভাব তোর চরিত্র তোকে কোথায় নামিয়েছে , ভালোবাসার মানুষের সামনে নিজেকে চরিত্রবান নারী হিসেবে প্রেজেন্ট করতেও ভাগ্য লাগে ছিহ ! ঘৃণা হচ্ছে আমার তোর মতো নষ্টা আমাকে ছুঁয়েছে। গা গুলিয়ে আসছে আমার
জারার হাতটা আরও শক্ত হয়, যেনো রোজার চামড়া ছিঁড়ে ফেলবে। তার চোখে জ্বলে ওঠে হিংস্রতা, ঠোঁটে কাঁপতে থাকে গালি।ঘরজুড়ে ভারী নীরবতা নেমে আসে, যেনো ঝড়ের ঠিক আগে সবকিছু স্তব্ধ হয়ে যায়।
-তাই নাকি সতিত্বের এতো অহংকার , আজ তোকে আসরে ছাড়া হবে ,দর তোলা হবে তোর তারপর তোর ব্যাক্তিত্ব হারাবি।
জারা ধীরে ধীরে রোজার দিকে এগিয়ে এল। তার চোখে বিদ্রুপের ছায়া, ঠোঁটে বিষাক্ত হাসি।সে মাটিতে বসে থাকা রোজার কাছে নেমে এসে নিজ হাতে দড়ির বাঁধন খুলে দেয়।
বাঁধন খুলতেই , দুজন সাদা পোশাক পরা পুরুষ দ্রুত এগিয়ে আসে চেপে ধরে রোজার দুই বাহু , কিছুটা বাঁকা হাসে রোজা। ডানে বামে ঘার কাত করে পর্যবেক্ষণ করে পুরুষ টির মুখ দুষ্টু হেসে তাকায় সামনে থাকা রোজার দিকে ….
জারা গিয়ে ধীরে ধীরে হাত ধুয়ে আসে প্লেটে খাবার বেড়ে এক লোকমা খাবার তুলে ধরে রোজার সামনে
– আপাতত খেয়ে , শক্তির সঞ্চার করো পাখি। এরপর আর সুযোগ হবে।
প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩৫
কিছুটা মুসকি হাসে রোজা … ” কেনো নয় সুইটহার্ট! আমি প্রস্তুত তোমার আসরের জন্য।
কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে জারার , সেদিকে পাত্তা না দিয়েই। রোজাকে খাওয়াতে ব্যাস্ত হয়ে যায় সে!
শত্রুর হাতে বিষ কে মনে হয় মিষ্টি মনে তাই না সুইটহার্ট?
সন্দিহান চোখে রোজার দিকে তাকায় জারা। টুক করে চোখ টিপে দিয়ে বেক্কল এক হাসি দিয়ে আবারো বলে … ” না মানে বলছিলাম খাবার গুলো ভীষণ সুস্বাদু। ”
Next episode