তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৩৫
নওরিন মুনতাহা হিয়া
চৌধুরী কোম্পানির থেকে বের হয় ইনায়া, তার অন্য মিটিং রয়েছে যার জন্য সে তার পিএকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। অন্যদিকে ইভান ইনায়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, তার বুকটা ব্যাথা করছে। ইনায়ার কণ্ঠ অরণ্যর জন্য ভালোবাসার কথা শুনে তার কষ্ট দিগুণ বেড়ে গেছে, ইভান শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে ইনায়ার দিকে। অন্যদিকে প্রভা অফিস রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে, ইভান আর ইনায়ার কথা শুনে সে সব বুঝতে পারে। প্রভার কষ্ট হয় ইভানের জন্য, কিন্তু সে ইভানের কাছে যায় না।
আজ এসএস কোম্পানির সকল শেয়ারের মালিকের সাথে ইনায়ার মিটিং রয়েছে, তারা এতোদিন এসএস কোম্পানির অন্য মালিকের সাথে কথা বলেছে যার চেহারা তারা দেখতে পারে নাই। কিন্তু আজ সম্মুখে দেখবে আসল এমডিকে, মিটিং ঠিক করে কোম্পানির ম্যনেজার। এসএস কোম্পানি আদালতের নোটিশে বন্ধ থাকায়, সেখানে কোনো ধরণের মিটিং করা সম্ভব না। যারা জন্য শহরের এক রেস্টুরেন্টে তাদের সকলে আসার জন্য আমন্ত্রণ করা হয়েছে, ইনায়ার গাড়ি রেস্টুরেন্টের সামনে এসে দাঁড়ায়। ইনায়া গাড়ি থেকে বের হয়, তার পরনে ব্যাক শ্যুট দেখতে একদম বিজনেস ওমেন লাগছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রায় পনেরো দিন পর এমন বিজনেস লুকে দেখা যাচ্ছে তাকে, কারণ এতোদিন যাবতীয় ঝামেলার কারণে সে ব্যবসা থেকে দূরে থেকেছে। তবে এখন থেকে সে নিজের কাজের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে চাই, এখন সফলতা অর্জন করতে চাই। ইনায়ার রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকে যায়, তার দিকে সকলে তাকিয়ে থাকে। ইনায়ার ব্যন্ড এই শহরে যথেষ্ট জনপ্রিয়, আর সে চৌধুরী কোম্পানির এমডি রূপে কাজ করেছে যার জন্য সকল শেয়ারের মালিক তার পরিচিত। ইনায়া সবার সাথে পরিচয় পর্ব শেষ করে, প্রথমে সকলে অবাক হয় পরে সব ঘটনা আর সত্যি তাদের জানায় ইনায়া।
এসএস কোম্পানির পূর্বে করা সকল ডিল টাকার লেনদেন বন্ধ করে দেয় ইনায়া, যতদিন না নতুন করে আদালতের নিদের্শে এসএস কোম্পানি খুলবে ততদিন সকল প্রকার আর্থিক আর প্রাতিষ্ঠানিক কাজ অফ থাকবে। সকল শেয়ারের সাথে কথা বলে ইনায়া বুঝতে পারে, ওনারা সকলে এতোদিন অনেক টাকা নষ্ট করেছে এসএস কোম্পানির এমন জঘন্য খাবার তৈরি করতে। তবে ইনায়া তাদের বলে সব টাকা ফিরত দেওয়া হবে, আর নিজেকে সে নিদোষ প্রমাণ করবে আর আসল অপরাধীর শাস্তি দিবে। আবার এসএস কোম্পানি তার কাজ শুরু করবে, এবং এইবার কোনো বিষাক্ত বা খারাপ পণ্য তৈরি করা হবে না যথেষ্ট গুণগত মান সম্পন্ন জিনিস তৈরি করা হবে।
ইনায়া সকলের বিশ্বাস যোগ্য করতে সক্ষম হয়, আর সে আগে থেকে ব্যবসা সামলায় যার জন্য সে যানে কি করে মানুষের মন জয় করতে হবে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর মিটিং শেষ হয়, সকলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে একসাথে। অরণ্য আজ তার কোম্পানি অনেক দিন পরে এসেছে, প্রচুর কাজ জমা রয়েছে যা শেষ করতে অনেক সময় লাগবে। অরণ্য মেসেজ করে ইনায়াকে বলে দেয়, তার বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হবে। অন্যদিকে ইনায়া বাড়িতে ফিরে আসে, ফ্রেশ হয়ে সে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। আজ তার হাতে সময় রয়েছে, যার জন্য সে ঠিক করে দুপুরের রান্না সে করবে।
ইনায়া রান্নাঘরে যায়, কিন্তু সেখানে সে যা দেখে তা দেখ পুরো অবাক। রেহানা বেগম রান্নাঘরে রান্না করছে, যা দেখে ইনায়া পুরো অবাক হয়ে যায়। বিয়ের পর থেকে রেহানা বেগমকে কখনো রান্নাঘরে বা বাড়ির অন্য কোনেন কাজ করতে দেখে নাই। অরণ্য বলে ছিলো যখন সে বাহিরে থাকে, তখন তার আম্মু রুম থেকে বের হয়। রেহনা বেগম ইনায়াকে রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, হাসি মুখে বলে –
“- ইনায়া তুমি এখানে? আর বাহিরে দাঁড়িয়ে রয়েছ কেনো?
রেহানা বেগমের কথা শুনে ইনায়া রান্না ঘরের ভিতরে যায়, এরপর হাসি মুখে বলে –
“- মা আপনি রান্নাঘরে এসেছেন কোনো কারণে? কিছু লাগবে আপনার? আমি সাহায্য করব কি?
ইনায়ার কথা শুনে রেহানা বেগম হেঁসে বলে –
“- না প্রয়োজন নেই। আসলে সায়মার পেটে হঠাৎ করে ব্যাথা করছে যার জন্য একটু গরম পানি করছি, আর দুপুরের খাবার রান্না করব “।
রেহানা বেগম রান্না করবে? কথাটা অবিশ্বাস্য শুনালো ইনায়ার কাছে, হঠাৎ করে রেহানা বেগমের এমন পরিবর্তন কি করে হলো। ইনায়া বলে –
“- সায়মার পেটে কি অতিরিক্ত ব্যাথা করছে? আর মা আপনি রান্না করবে হঠাৎ, মানে আপনি তো রুম থেকে বের হন না।আজ কি অরণ্য বাসায় নেই বলে রান্না করবেন?
রেহানা বেগম ইনায়ার কথায় রাগ করে নাই,কারণ ইনায়া যে কথাটা কৌতূহল নিয়ে তা ওনি বেশ বুঝতে পারে। রেহানা বেগমের অরণ্যর প্রতি রাগ অভিমান সব রয়েছে, কিন্তু সে তার জেদের কারণে নিজের ছেলে মেয়েদের উপর থাকা সকল দায়িত্ব ভুলে যেতে পারে না। অরণ্য খারাপ, নিষ্ঠুর কিন্তু তার সন্তান হয়, আর সায়মার বাচ্চা পেটে এই সময় একটা মেয়ের তার মায়ের কাছ থেকে ভালোবাসা আর যত্ন না পেলে তার এবং তার বাচ্চার ক্ষতি হবে। এখন থেকে রেহানা বেগম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যে ওনি সকল দায়িত্ব পালন করবেন, তবে তার সন্তানের করা অন্যায় মাফ করে দিবে না। রেহানা বেগম বলে –
“- আজ থেকে সকল রান্না সহ ঘরের কাজ আমি করব, মায়ের সকল দায়িত্ব পালন করব। সন্তান অন্যায় বা অপরাধ করলে তাকে শাস্তি দেওয়া যায়, কিন্তু তাকে ঘৃণা করা যায় না।
রেহানা বেগম কথাটা বলে আবার রান্নার কাজ করে থাকে, সন্তান অন্যায় করেছে কথাটা যে অরণ্যকে মিন করে বলেছে তা ইনায়া যানে। কিন্তু অরণ্য কি এমন অপরাধ করেছে যে রেহানা বেগম তাকে ঘৃণা করে? অরণ্য যথেষ্ট ভালো আর ভদ্র একজন লোক, নিজের মাকে সে অনেক ভালোবাসে যা তার কথায় স্পষ্ট বুঝা যায। অরণ্যকে যদি তার চিরশত্রু ভালোবাসতে পারে, তবে তার মা কেনো সেটা করতে পারে না। ইনায়া মনের মধ্যে সাহস জুগিয়ে জিজ্ঞেস করে –
“- আচ্ছা আম্মু আপনার আর অরণ্যর মধ্যে কি ঝামেলা হয়েছে? মানে আপনি অরণ্যকে ঘৃণা কেনো করেন? অরণ্য কি অপরাধ করেছে?
ইনায়ার কথায় রেহানা বেগম বলে –
“- একদিন বলব যে তোমার স্বামী ঠিক কতটা নিষ্ঠুর, যদি এখন যানতে পারো তাহলে মনের মধ্যে থাকা অপ্রকাশিত ভালোবাসা। ঘৃণার অতলে হারিয়ে যাবে “।
ইনায়া বোকার মতো চুপ করে শুনে যায় সে রেহানা বেগমের কথার মানে বুঝতে পারে না, তবে ইনায়ার আর কিছু জিজ্ঞেস করে না। ইনায়া আর রেহানা বেগম রান্না করছে, ইনায়া আগে থেকে রান্না পার৷ যার জন্য তাকে কিছু শিখিয়ে দিতে হয় নাই। দুপুরের রান্না শেষ করে ইনায়া রুমে চলে আসে, এসির ঠান্ডায় শরীর শীতল করার চেষ্টা করে। রুমটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে, এই বাড়িতে মানুষ অনেক কম শুধু গুণা কয়েকজন। আর বিয়ের পর থেকে প্রতিটা সময় অরণ্য ইনায়ার সাথে থেকেছে, যার জন্য এখন ইনায়ার ভীষণ একা লাগছে। অরণ্যকে ছাড়া সে গভীর একাকিত্ব অনুভব করছে, রুমে অরণ্যর কণ্ঠ না শুনলে তার ভালো লাগে না।
বেডে মধ্যে থাকা ফোন ইনায়া হাতে নেয়, এরপর অরণ্যকে ফোন দেয়। অরণ্য অফিসের ফাইল চেক করছে, হঠাৎ করে তার ফোন বেজে উঠে। অরণ্য ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে ইনায়া কল করেছে, অরণ্য প্রথমে অবাক হয়। এই প্রথমবার ইনায়া তাকে ফোন করেছে, অরণ্য বলে –
“- কি মিসেস ইনায়া রাজ চৌধুরী নিজের স্বামীকে কি অনেক মিস কর ছিলেন আপনি? যদি সকালে গাড়ির মধ্যে আমার কথা অনুসারে চার পাঁচটা চুমো দিতেন। তাহলে এতো কষ্ট ফিল হতো না “।
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়ার মুখে ততক্ষণ চিন্তার ছাপ দূর হয়ে রাগ প্রকাশ পায়, এই লোক তার অনুভূতি কখনো বোঝার চেষ্টা করে না। সবসময় তাকে নিয়ে মজা করে থাকে, ইনায়া বলে –
“- অরণ্য আপনি না সত্যি নিলজ্জ হয়ে যাচ্ছেন? আর আমি আপনাকে কেনো মিস করব?
“- ওহ রিয়েলি মিস করছেন না আমাকে? তাহলে কেনো ফোন করেছেন? সত্যি করে বলুন ইনায়া জামাই ছাড়া থাকতে পারছেন না “।
ইনায়া অরণ্যকে মিস করছে কিন্তু সে তা প্রকাশ করে না, ইনায়া বলে –
“- আপনি কখন বাড়িতে ফিরবেন তা যানতে ফোন করেছি? বলছি অফিসে কি অনেক কাজ জমা হয়েছে? রাতে বাড়িতে ফিরতে কি অনেক লেইট হবে? দুপুরের খাবার কি খেয়েছেন?
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য হাসে, ইনায়া যে ধীরে ধীরে অরণ্যর প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে যা সে বেশ বুঝতে পারে। ইনায়া এখন অরণ্যকে নিয়ে চিন্তা করে, তার ভালো মন্দ সকল বিষয়ের খেয়াল রাখে যা অরণ্যর পছন্দ। অরণ্য বলে –
“- ইনায়া আপনাকে না বউ বউ লাগছে আজ। আর দুপুরের খাবার খাবো মাএ দুইটা বাজে?
ইনায়া বলে –
তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৩৪
“- রাতে বাড়িতে ফিরবেন কখন? অপেক্ষা করব?
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্যর হাসি মুখ ভীষণতায় ছেয়ে যায়, অরণ্য আকাশের দিকে তাকিয়ে অল্প হেঁসে জবাব দেয় –
,, – হুম ফিরব তবে মানুষ হয়ে না বরং লাশ হয়ে। তখন অপেক্ষা না বরং হাহাকার করবেন আমার জন্য “।