মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৬৯
মির্জা সূচনা
রাত তখন ১১টা বেজে ৫০ মিনিট।
রাজ আর লাবিব আল্লাহ ও রাসুলের নাম নিয়ে দূরু দূরু বুকে নিজেদের বাড়িতেই ঢুকছে। এখনও পর্যন্ত এমন কাউকে পৃথিবীতে পাওয়া যায়নি যে তার বউকে ভয় পায় না। রাজা, প্রজা, মন্ত্রী, মিনিস্টার, এমনকি ভয়ানক গ্যাংস্টার, মাফিয়া—সবাই তাদের বউদের ভয় পায়। এটা সব কিছুর মাধ্যমে প্রমাণিত। কিন্তু কথা সেটা নয়। কথা হলো—আজ রাজ ও লাবিবের আসার কথা ছিল সন্ধ্যা ৭টার ভিতরে।
কারণ, লাবিব-মেহবুবা, লামিয়া-আরশ—এই চারজনের বিয়ের তারিখ ফাইনাল হয়েছে। সামনের মাসের ১ তারিখ। একদিনেই হবে ওদের বিয়ে। হাতে বেশি সময় নেই আর বিয়েটা হবে শান্তিপুরে। মানে, লাবিব-লামিয়ার দাদুবাড়ি আর রাজের নানুবাড়ি। ওদিকে আবার মেহরিনদের ফুফুর বাড়িও সেখানেই। সে যাই হোক, এই প্রস্তাবখানা রেখেছেন জাহানারা বেগম। কারও কোনো আপত্তি না থাকায়, তাই কথাটা ঠিক হয় যে বিয়ে শান্তিপুরেই হবে।
যেমন ভাবা, তেমন কাজ। সবাই গুছগাছ করে রেখেছে। যেহেতু বাচ্চারা এখনও অনেক ছোট, তাই তারা সবাই রাতেই যাবে—এই ছিলো প্ল্যান। সব ঠিকঠাক, কিন্তু রাজ আর লাবিব দেরি করেছে। ওদিকে সবাই চলে গেছে, শুধু বাকি আছে মেহরিন, রাজ, লামিয়া, লাবিব, মেহবুবা আর রাহি। হ্যাঁ, রাহি এখন শিকদার বাড়িতেই থাকে। থাকবেই নাই বা কেন, এটাই তো তার আসল ঠিকানা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মেহবুবা গাল ফুলিয়ে বসে আছে লাবিবের আসার অপেক্ষায়। আসলেই আজ একটা যুদ্ধ বেঁধে যাবে। লাবিব চোরের মতো আঁধার-আলোয় এদিক সেদিক দেখে এক দৌড়ে নিজের রুমে ঢুকেই দরজা আটকে দেয়।
তা দেখে রাজ মনে মনে হাসে, কিন্তু তা প্রকাশ করে না। ওই যে, কথায় আছে না—যতো হাসি, ততো কান্না। সেই কথাটা মাথায় রেখেই হাসলো না। কারন তার জন্য ও তো বিপদ-রানী অপেক্ষাই আছে যাওয়া মাত্রই শুরু করবে।
লাবিব তার হাফ বউকে দেখে এমন ভয় পাচ্ছে, তাহলে রাজ তার ফুল বউ ও বাচ্চাদের মাকে কতটা ভয় পায়—সেই ভাবনায় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রাজ। উপরের দিকে, নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।
ওদিকে লাবিব বাঁচে গিয়েছে—ভেবে একটা লম্বা শ্বাস নেয়। সিস বাজতে বাজতে, যখন পিছনে ঘুরে দেখে, মেহবুবা হাতে একটা ঝাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওড়নাটা কোমরে বাঁধা, চুলগুলো একটু উঁচু করে খোঁপা করা, ঝাড়ুটার এক হাতে ধরে অন্য হাতে বাড়ি দিচ্ছে।
তা দেখে লাবিব শুকনো ঢোঁক গিলে বলে, আসলে কি হয়েছে বলো তো আজ না…
কথা শেষ হওয়ার আগেই মেহবুবা ঝাড়ুটা পাশে থাকা টেবিলে এক বাড়ি দেয়।
জার ধ্বনি—”ঠাসসসস!”
লাবিব চোখ বন্ধ করে নেয়। মিনিট খানেক পরে আস্তে আস্তে চোখ খুলে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে।
মেহবুবা রাগে ফুসফুস করছে। লাবিব মনে মনে দোয়া-কালেমা পড়ে মিনমিন করে বলে,
আসলে কাল থেকে তো আর অফিসে যাওয়া হবে না, তাই আজ সব কাজ শেষ করে আসলাম…
মেহবুবা একটা চিৎকার দিয়ে বলে,
তোকেই বিয়ে করে আমার জীবনটা শেষ! আমি দেখি তোর সংসার করছি অন্য কেউ হলে একটা উস্টা মেরে চলে যেত।
লাবিব ৩২ পাটি দাঁত বের করে বলে,
কিন্তু এখনও তো আমাদের বিয়েই হয়নি। এটা তো আর কদিন পরের ডায়লগ।
লাবিবের কথায় মেহবুবাও বুঝে, সে একটা ভুল ডায়লগ বলেছে। অতিরিক্ত রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে যা পাই তাই বলে দিয়েছে।
সে যাই হোক, এখন কি সে হার মানবে? না, কখনই না। সে হার মানলোও না। মেহরিনের বোন কি না। ঝগড়া চালিয়ে যাওয়া খুব ভালোই জানে সে। করলোও তাই।
হঠাৎ করেই খেঁকিয়ে উঠে মেহবুবা,
হ্যাঁ হ্যাঁ, সব তুই জানিস। একে তো দেরি করে এসেছিস, তার উপর আবার আমারই ভুল ধরছিস! যা, তোকে বিয়েই করবো না!
বলে দরজার কাছে আসে, জিভ কাটে, মনে মনে বলে,
ছিঃ ছিঃ! এটা কি বললাম!
ওদিকে বেচারা লাবিব, মেহবুবার কথা সত্যি সত্যিই ভেবে মেহবুবার হাত ধরে বলে,
ও বউ, মাফ করে দাও। আর এমন করবো না, প্রমিস গো, প্রমিস প্লিজ…
মেহবুবার হাসি পেলেও সে তা চেপে গিয়ে বলে,
“দরজা!”
লাবিব করুণ গলায় ডাকে,
বউ…!
মেহবুবা চোখ রাঙিয়ে তাকায়, যার ফলে না চাইলেও দরজা খুলে দেয় লাবিব।
মেহবুবা লাবিবের দিকে তাকিয়ে বলে,
তোর সঙ্গে কোনো মানুষ এই সংসার করতে পারবে না।
লাবিবের মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়,
কোনো মানুষের দরকার নেই, তোমার মতো ‘তার ছেরা’ হলেই হবে!
বলা শেষেই দুই হাতে মুখ চেপে ধরে লাবিব।
লাবিব মনে মনে বলে,
আল্লাহ, আমার মুখটা কেন এমন করে চলে ! কেন শুধু বেফাস কথা বেরিয়ে যায় মাবুদ।
এখন আমার কি হবে, আজ আমি শেষ!
ওদিকে মেহবুবা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে,
কি? কি? কি বললি? আমি তার ছেরা?
লাবিব মুখ ধরে রেখেই দুই দিকে মাথা নাড়ে।
মেহবুবার খুব হাসি পাচ্ছে লাবিবের অবস্থা দেখে, কিন্তু তা লাবিবকে বুঝতে না দিয়ে ন্যাকামো কণ্ঠে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
আমি তার ছেরা তাই না? যাও, তোমার থাকতে হবে না এই তার ছেরার সাথে।
বলে দৌড়ে লাবিবের চোখের আড়াল হয়ে যায়—একদম চলে আসে, লামিয়া আর রাহির কাছে…
ওদিকে লাবিব নিজেকে বকতে বকতে ঘরে ঢুকে যায়। কারণ, এখন ফ্রেশ হয়ে আবার হবু বউয়ের রাগ ভাঙাতে যেতে হবে।
যেই ওদিকে রাজ নিজের রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, ভেতর থেকে মেহরিনের গলা পাওয়া যাচ্ছে। যে রাজের ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে বেগ গুচাচ্ছে। রাজ হাসে, কারণ এটা প্রায় এক মাস যাবত হচ্ছে—কিছু হলেই মেহরিন খুব রেগে যায় আর রাজকে বকে।
হঠাৎ করে রাজের কিছু একটা মনে পড়ে। সে আবার দৌড়ে যায় গাড়ির দিকে। গাড়ির পেছনে রাখা ব্যাগটা খুলে ভেতরের জিনিসগুলো হাতে নেয়—৩টা বেলি ফুলের গজরা, একটা গোলাপ আর একটা কিটক্যাট চকলেট।
ওই যে ঘরের ভিতরে যে ঘূর্ণি ঝড়টা তৈরি হচ্ছে, সেই ঝড় নিমিষেই থেমে যাবে এগুলো দেখলে।এগুলো ভেবে রাজ হাসে। মেয়েদের খুশি করা কত সহজ—সামান্য কয়েকটা ফুল আর একটা চকলেটই তাদের মন ভালো করতে যথেষ্ট!
মুচকি হাসে রাজ, আবার এগিয়ে যায় ঘরের দিকে। যেই না ঘরে ঢুকতে যাবে, অমনি
“ঠাসসস!”
বিপদ বুঝে রাজ সাইড হয়ে গিয়েছিল, না হলে এখনই হাসপাতালে দৌড়াতে হতো। মেহরিনও বুঝতে পারে নি যে এমন সময় রাজ আসবে।রাগের চোটে পাশে থাকা ফুলদানি ছুড়ে মেরে ছিল।
মেহরিন দৌড়ে এসে রাজকে এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে দেখতে থাকে, কোথাও লেগেছে কি না আর বলতে থাকে,
কোথায় লেগেছে, আপনি বলবেন না যে আপনি এসে গেছেন?
রাজ হাসে, এক হাতে মেহরিনকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু খেয়ে বলে,
আর না, কিছু হয়নি। আমি জানি তো, ভিতরে আমার বউ আছে, তাই যে কোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে।
কথাটা মেহরিনের গায়ে খুব লাগে, সে সাথেসাথেই ফুঁসে উঠে,
কি কি বললেন আপনি!
একে তো দেরি করে এসেছেন, তার ওপর…
মেহরিনকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রাজ হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে, আর গোলাপটা সামনে ধরে বলে,
তোমার অভিমান ভাঙাতে,
একটা গোলাপ এনেছি হাতে—
অভিমানে ঠোঁট ফুলিয়ে রেখেছো,
আর আমি ভালোবাসা লুকিয়ে রেখেছি রাতে।
চোখে চোখ রেখে বলবো,
রাগ কোরো না, এই মনটা ভীষণ কাঁদে—
তোমার এক চিলতে হাসিতে
আমার পৃথিবীটা স্বপ্ন সাজায় সাজে।
তুমি বলো, সব মিথ্যে, নাটক এই ভালোবাসা,
আর আমি বলি, তুমি চুপ থাকো,
তোমার কান্না আমার বুকে আগুন ধরায়,
আর তোমার হাসি জোনাকি হয়ে জ্বলে রাতভর আলো…
দেখো, গোলাপটা এখনও টাটকা,
যেমন আমার ভালোবাসা—
রাগ ভাঙাও না আজ?
চলো, আবার সেই প্রথম দিনের মতো হই, একসাথে, এক আবেশে ভাষাহীন ভাষা…
আমি তোমায় ভালোবাসিনি ফুলের মত,
যে ঝরে গেলে নতুন ফুল আসবে।
আমি তোমায় ভালোবেসেছি শিকড়ের মত,
যে চোখে পড়ে না, তবু না থাকলে সব মরে যায়।
ভালোবাসি প্রিয়তমা, আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা!
মেহরিনের রাগ যেন গলে পানি হয়ে যায়, আবেগে আপ্লুত হয়ে যায়, যার দরুন চোখে হানা দেয় আনন্দের অশ্রু। ফুলটা নিয়ে বলে,
আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি, আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা!
রাজ উঠে দাঁড়িয়ে একট বেলি ফুলের গজরা মেহরিনের খোঁপায় লাগিয়ে দেয়, লাগানো শেষ হলে হাতে পড়িয়ে দেয় আরেকটা আর বলে,
প্রথম আমি, শেষ কে?
মেহরিন দুষ্টুমি করে রাজকে রাগানোর জন্য বলে,
আছে একজন…
রাজ মুহূর্তেই রেগে যায়, বাচ্চাদের দিকে একবার তাকায়, দেখে তার দুই রাজপুত্র ঘুমাচ্ছে। মেহরিনকে টেনে নিয়ে যায় বারান্দায়, দরজা আটকে দিয়ে বলে,
আছে কেউ? মানে কি? দেখো—এসব ব্যাপারে কোনো রকম মজা বা ইয়ার্কি আমার একদম পছন্দ না Moonbem!
মেহরিন বাঁকা হাসে,
আমি কি বলেছি যে আমি মজা বা ইয়ার্কি করেছি? আপনি কি আমার বিয়াই নাকি দুলাভাই যে আপনার সাথে ফাজলামি করবো?
রাজের রাগ আরও একধাপ বাড়ে, চোখ বন্ধ করে জোরে এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
দেখো…
মেহরিন রাজকে নকল করে বলে,
দেখান…
রাজ বলে,
আমি কিন্তু ফানি মুডে নেই, সিরিয়াস! কে আছে, বলো? রাজ একটু ভাবুক বঙ্গতিতে চিবুকে হাত রেখে ব্রু কুচকে বলে,—তুমি পরকীয়া করছো, বউ?
মেহরিন বেকুবের মতো তাকায় রাজের দিকে। রাজ মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বলে,
শেষে কিনা রাজ শিকদারের বউ পরকীয়া করছে—এটা যদি জাতি জানে, মেনে নেবে আমাকে?
আচ্ছা, সে যাই হোক, দুই বাচ্চার মায়ের সাথে কোন বলদ পরকীয়া করে—নাম্বারটা দাও তো!
মেহরিন বুঝে রাজ তার সাথে মজা নিচ্ছে। তাই সেও ফাঁক বুঝে কুপ মারে, আন্দাজি একটা নাম্বার বলতে থাকে এমনভাবে, যেন নাম্বারটা তার মুখস্থ:
আপনি কি ভাবেন আমি দুই বাচ্চার মা তাই কেউ আমাকে পাত্তা দিবে না? আমি পাঁচ বাচ্চার মা হলেও তার কাছে ১৮ বছরের কিশোরী বুঝলেন, নিন তার নাম্বার—০১৭৬২৬*****!
হঠাৎ করেই রাজ যেন হিংস্র হয়ে উঠে, দৌড়ে এসে মেহরিনকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে,
কে? কে কার এত বড় সাহস, রাজ শিকদারের বউয়ের দিকে হাত বাড়ায়? বলো, নাম বলো! তার কল্লা কেটে সাগরে ভাসিয়ে দিবো কলিজা কেটে কুকুরকে খেতে দেবো! মানুষ চেনে না? বলো, কে সে? তুমি কার বাচ্চার মা খোঁজ নেয় নি? হ্যাঁ, জানের মায়া নেই? হ্যাঁ, নাম বলো, বলো নাম!
মেহরিন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রাজের দিকে। রাজ অগ্নি চোখে তাকিয়ে মেহরিনের দিকে, আর রসভারী গলায় বলে,
তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি নাম বলো?
মেহরিন বলে,
পরকীয়া করলে তো দোষ আমারও আছে। শুধু ওই লোকের ব্যাপারে জানতে চাইছেন কেন?
আমি তো আপনার সামনে, আমাকে কিছু করবেন না?
রাজ এক নিশ্বাসে বলে,
না, তোমার কোনো দোষ নেই। তুমি কোনো দোষ করতেই পারো না। করাতো দূর এমন কিছু মনেও আন্তে পারো না। তার পরও যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই তুমি দোষী—সেই দোষ আমি মানি না। তোমার কিছু হবে না, তোমার জন্য সাত খুন মাফ। তবে যে রাজ শিকদারের বউ আর বাচ্চাদের দিকে হাত বাড়াবে, তাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেবো—এটা নিশ্চিত! এখন বলো তো, জান কে সে?
মেহরিন পুরোটা সময় তাকিয়ে ছিল রাজের চোখের দিকে, শেষের কথাগুলো শুনে হেসে জড়িয়ে ধরে রাজকে। রাজের সব ক্লান্তি, অস্থিরতা, খারাপ লাগা যেন নিমিষেই ধুয়ে মুছে যায়। সেও আগলে নেয় তার ভালোবাসার মানুষকে, তার বাচ্চার মাকে।
মেহরিন রাজের বুকে একি বুকে করতে করতে বলে,
আপনি ভাবলেন কিভাবে যে আমি অন্য কাউকে…?
রাজ থামিয়ে দেয় আর বলে,
উঁহু, আমি ভাবি নি। আমার বউ চেয়েছিল একটু ঝগড়া করতে, আর আমি শুধু সেই সুযোগটা করে দিলাম। আমি আমার আরিওনাকে নিজের চাইতেও বেশি বিশ্বাস করি। আমি ছাড়া কোনো পরুষ যে আমার বউয়ের আশেপাশে ঘেঁষতে পারবে না, তা আমি জানি। কারো বাপেরও সেই সাহস নেই—মিসেস শিকদারের সাথে পরকীয়া করবে!
মেহরিন হেসে ফেলে। রাজ বলে,
সরি বউ, আজ আসতে আসতে লেট হয়ে গেছে। তুমি তো জানো, আজকেই শেষ—অনেকদিন অফিসে যাবো না, তাই সবকিছু গুছাতে গুছাতে লেট হয়ে গেছে।
মেহরিন কিছু বলে না, শুধু মাথা নাড়ে। কিছুক্ষণ ওভাবেই থাকে দুজন। মেহরিন হঠাৎ তাড়া দিয়ে বলে,
যান, ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি খাবার আনছি।
রাজ সম্মতি জানিয়ে চলে যায় ফ্রেশ হতে। মেহরিন তার দুই রাজপুত্রকে এক নজর দেখে নীচে চলে যায় রাজের খাবার আনতে।
রাত ১টা ২৫ মিনিট।
মেহরিন, রাজ, রাহি, লামিয়া, লাবিব আর মেহবুবা সবাই একসাথে রওনা দিয়েছে শান্তিপুরের দিকে। মাহিন তার ফুপি রাহির কুলে, আর মাহিম তার মায়ের কুলে। লাবিব আর মেহবুবা একটানা ঝগড়া করতে করতে যাচ্ছে লাবিব মেহবুবাকে মানাছে আর মেহবুবা বকে যাচ্ছে। রাহি আর লামিয় মাহিনর সঙ্গে বকবক করছে। ওদিকে মেহরিন ও তার কবি সাহেবের সঙ্গে নীরব প্রেমে ডুবে, পৌঁছে যায় তাদের গন্তব্যে। জমিদার বাড়ি পৌঁছেই সবাই যে যার ঘরে চলে যায়।
শান্তিপুরে যেন নতুন এক দিনের সূচনা। চারিদিকে বিয়ে নিয়ে এক উৎসবমুখর আমেজ। জমিদার বাড়ি ইতোমধ্যে ভরে গেছে অতিথিতে—চুমকি, শান্তো সবাই এসে গেছেন। সকালের নাস্তা শেষ করে সবাই বাগানে গিয়ে বসেছে, শুধু মেহের আর রিদ ছাড়া সবাই চলে এসেছে এনিয়েই কথা হচ্ছিল। ঠিক তখনই আরফা এসে বসল মেহরিনের পাশে। মেহরিন হাসিমুখে বলে,
কি রে বুড়ি, আরশ ভাইয়ার তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তুই কবে করবি?
আরফা লজ্জা পেয়ে হেসে ফেলে, আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকায়। দেখে সবাই ব্যস্ত। মেহরিন ব্যাপারটা লক্ষ্য করে বলে,
—কি হয়েছে? কিছু বলতে চাস?
আরফা মাথা নেড়ে বলে,
—হুম, একটা গোপন কথা বলবো। ঐদিকে চল। এখানে আসার পর থেকে বাচ্চাদের নিয়ে মেহরিনের কোন সমস্যাই হচ্ছে না বাবুদের ৩ দাদি নানি মিলে সামলে নিচ্ছে। মেহরিন মাহিনকে তার নানুর কুলে দিয়ে আসে, তারপর বলে,
চল, তোর রুমে যাই।
দুজনই যায় আরফার রুমে। আরফা দরজা আটকে বিছানায় উঠে বসে মেহরিনের হাত ধরে বলে,
—একটা কথা বলবো।
মেহরিন হাসে আয়েশ করে বসে বলে, কেমন রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি! বল তো শুনি, কি পাকাচ্ছিস?
আরফা বলে,
—আমি না, একজনকে ভালোবাসি।
মেহরিন যেন আকাশ থেকে পড়লো। আরফা যে মেয়ে, সে তো কিছু গোপন রাখে না! কাউকে কিছু বলুক আর না বলুক, মেহরিনকে ঠিক বলে। মেহরিন সিরিয়াস গলায় বলে,
—কতো দিন?
আরফা চোখ বন্ধ করে বলে,
—তিন বছর।
মেহরিন মাথায় হাত দিয়ে বলে,
—আয় হায়! কি বলিস? এতদিন রে! তুই এখন বলছিস?
আরফা বলে,
—আরে আগে শোন না! আমি তো সিরিয়াস ছিলাম না, ভেবেছিলাম এমনি ভালোলাগা। ক’দিন পর চলে যাবে। কিন্তু এখন তো…
মেহরিন ভ্রু কুঁচকে বলে,
—এখন কি?
আরফা উত্তেজিতভাবে বলে,
—ও হঠাৎ করে বলেছে, ও আসবে আমাদের বাড়ি, আব্বুর কাছে আমাকে চাইবে… আর সেটা কালকেই! জানো ওর আম্মু ও আমার সাথে কথা বলছে।
মেহরিন হেসে আরফাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—এটা তো ভালো কথা পাগলি, আসুক না! সমস্যা কোথায়? আরশ ভাইয়ার বিয়ের পর তোদের বিয়ে দিয়ে দিব! ভালোবাসা খারাপ কিছু না সোনা।
আরফা মেহরিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
আমার খুব ভয় করতেছে, মেহু আপু।
মেহরিন বলে,
—আরে ধুর! কিছু হবে না। আর কিছু হলে আমি সামলে নিবো, হ্যাপি?
আরফা মেহরিনকে আরও জড়িয়ে ধরে বলে,
—এইজন্যই তোকে এত ভালোবাসি।
মেহরিনও বোনকে বুকে আগলে ধরে বলে,
—আমিও তোকে অনেক ভালোবাসি।
দুই বোন কিছুক্ষণ ভালোবাসা আর আবেগে ভেসে যায়, তারপর আবার সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে জমিদার বাড়িতে উৎসব শুরু হয়ে গেছে, হল ঘরে মাতিয়ে তুলেছে সবাই। এর মাঝে আরফার ব্যাপারটাও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমে কেউ বিশ্বাস করতে চায়নি। হাসি, মজা, দুষ্টুমি আর বাচ্চাদের কোলাহলে কেটে যায় গোটা দিন।
এখন সন্ধ্যা সাতটা। সবাই আড্ডা দিচ্ছে, মজা করছে, শুধু আরফা মন খারাপ করে বসে আছে। তা দেখে মেহরিন এসে ওর পাশে বসে,
কি রে, কি হয়েছে? কতদিন পর ভাইয়ার বিয়ে, তারপর তোর বিয়ে… আর তুই মুখটা এমন বেটক্কি মাছের মতো করে রাখছিস কেন? এত চিন্তা করছিস কেন? আমি তো বলেছি না, চিন্তার কিছু নেই, আমি সব সামলে নেবো।
আরফা চিন্তিত গলায় বলে,
—আসলে ওটা নিয়ে চিন্তা করছি না… চিন্তার বিষয় হল, শুভ’র সাথে আমার শেষ কথা হয়েছিল কাল রাতে। আজ সারাদিন ওর সাথে কথা হয়নি। ও অনলাইনে আসছে না, ফোন বন্ধ।
মেহরিন কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
ওর কোনো পরিচিত মানুষ আছে, যাকে তুই চিনিস?
আরফা ভেবে বলে,
—হুম, ওর আম্মুর নাম্বার আছে, উনি আমাকে চিনেন, মাঝেমাঝে কথা হতো।
মেহরিন বলে,
—তাহলে তো হলোই ওনাকে একবার কল দে, ঝামেলা শেষ!
আরফার মুখে হাসি ফুটে ওঠে,
—আরে তাই তো! এই কথা তো মাথায়ই আসেনি!
মেহরিন আরফার মাথায় হাত রেখে উঠে চলে যায়, আর আরফা আবার আড্ডায় মেতে ওঠে।
তবে রাত ৯টা নাগাদ সবাই যখন বসার ঘরে, আরফা একটু সরে এসে ‘সাসু মা’ নামে সেভ করা নাম্বারে কল দেয়। একবার, দুইবার… তিন নম্বর বারে ফোন ধরে এক ভদ্র মহিলা।
আসসালামু আলাইকুম আন্টি, ভালো আছেন?
ওপাশ থেকে উত্তর আসে,
ওয়ালাইকুম আসসালাম মা, ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
—জী আন্টি, আলহামদুলিল্লাহ।
ভদ্রমহিলা বলেন,
—আচ্ছা শোনো মা, আমরা শুভকে বিয়ে করিয়ে ফেলেছি আজ। আসলে ওর আব্বু নিজের পছন্দের মেয়ে এনেছেন। তোমার কথা বলতেই উনি রেগে গেছেন, তারপর নিজেই খুঁজে বউমা এনেছেন। তুমি মা আর শুভ’কে কল দিও না। বুঝতেই পারছো, নতুন সংসার, এসব জানলে মেয়েটা কষ্ট পাবে, সংসারে ঝামেলা হতে পারে তুমি তো বুঝোই।
আরফার যেন পুরো পৃথিবীটা ঘুরে গেল। অনেক কিছু বলতে চেয়েও কিছু বলতে পারলো না। গলা দিয়ে কোনো কথা বের হলো না। অনেক কষ্টে শুধু বললো,
—আচ্ছা আন্টি…
ওপাশ থেকে ভদ্রমহিলা বলেন,
—ঠিক আছে মা, ভালো থেকো। আমাদের জন্য দোয়া করো, আমিও তোমার জন্য দোয়া করি, ভালো কাউকে পাবে জীবনে। আর হ্যাঁ, আবার বলছি—শুভ’কে ফোন দিও না।
কথা শেষ হতেই কলটা কেটে দেন তিনি।
আরফা ধপ করে বসে পড়ে। ওর মস্তিষ্ক যেন ঠিকমতো কাজই করছে না। কী হয়ে গেল এসব…
আরফা নিজের ঘরে গিয়ে দর্জা আটকে দেয়। কেমন যেন নিজেকে পাথর পাথর লাগছে। কান্না করতে ইচ্ছা করছে, কিন্তু কান্না করতে পারছে না। ওর মনে শুধু একটাই কথা ঘুরছে—ও কিভাবে বিয়ে করে নিতে পারে! এতটা… এতটা পাগলামি!
ওর আম্মুর সঙ্গে বলা কথাগুলো, এত এত প্রমিস, এত এত স্বপ্ন, এত কিছু পরিকল্পনা—সবই তো করেছিল আমার সঙ্গে। তাহলে অন্য কাউকে কিভাবে বিয়ে করতে পারে?
ওদিকে আমি তো সব আমার ফ্যামিলিতে জানিয়ে দিয়েছি। সবাইকে। আমি ওর জন্য কত ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করেছি, জোর গলায় বলেছি—ও অন্যরকম, ও আলাদা। আমি কী জবাব দিবো এখন?
সবসময় তো বলত, “আমাদের মাঝে যেন দ্বিতীয় কাউ কেউ না আসে।” আর এখন আমি-ই ওর লাইফে দ্বিতীয় কেউ হয়ে গেলাম?
এসব ভাবতে ভাবতেই শুয়ে পড়ে আরফা। খাওয়ার সময় কতবার ডাকলো সবাই, কিন্তু আরফা গেল না।
আমরা কখনো যা কল্পনাও করি না, তাই যদি আমাদের সাথে ঘটে, তাহলে আমরা পাথর হয়ে যাই। কোনো চিন্তা, চেতনা কাজ করে না। আর আমাদের মাঝে সময় অতিবাহিত হয় ঠিকই, কিন্তু আমরা থেমে যাই সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়।
এই যেমন এখন আর্ফার সাথে হলো।
খাওয়া শেষে সবাই যার যার রুমে চলে গেল।
ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে আরফা। হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গে ফোন ভাইব্রেট হওয়ায় ফোন হাতে নিয়ে দেখে সেই মানুষটার কল। কান্নারা এসে যেনো গলাই দলা পাকায়।
কান্না গিলে কল ধরে আরফা।
সত্যি বিয়ে করে নিয়েছো শুভ?
— হ্যাঁ।
— ওহ, তা বউ কি অনেক সুন্দরী?
— হ্যাঁ, তোমার থেকেও বেশি।
— ও আচ্ছা… সেই সুন্দর্যের কাছে বুঝি হেরে গেল তিন বছরের একসাথে পথ চলা,এত বছরের অনুভূতি, ভালোবাসা, মায়া, সব? সব বুঝি হেরে গেল শুধুই সুন্দর্যের কাছে?
আহা! ওভাবে বলছো কেন? আমাদের এক হওয়া হয়তো আল্লাহ চাননি।
চুপ! আপনার ওই নোংরা মুখে আল্লাহর নাম… এভাবে নিবেন না। অন্তত এই ব্যাপারে তো একদমই না। আপনি চাইলে পারতেন। কিন্তু আপনি চাননি।
আল্লাহ বলেছেন, তোমরা চেষ্টা করো দেওয়ার মালিক আমি।
আচ্ছা, আপনি যেহেতু অন্য কাউকে বিয়ে করলেন, তবে এতদিন আমার ফিলিংস নিয়ে কেন খেললেন বলুন তো?
আরে তুমি সহজভাবে নাও, আর আমি আমার
ফ্যামিলিকে মানাতে পারিনি?
ও তাই, ফ্যামিলি! এই তিন বছর পর আপনার পরিবারের কথা মনে পড়ল? কোথায় ছিল আপনার ফ্যামিলি এতদিন? আমি তো কতবার বলেছি, যদি ফ্যামিলি না মানে তাহলে কী করবেন? তখন আপনি অনেক বড় গলায় বলতেন, তুলে নিয়ে যাবেন, প্রয়োজনে আমার আব্বুর পায়ে ধরবেন, আপনার পরিবারকেও বুঝাবেন। এগুলো কী ছিল?
এখন এসব বলে কী লাভ বল?
হুম! তাই তো, কী লাভ?
আচ্ছা, আপনি যেহেতু অন্য কাউকেই বিয়ে করবেন,
তবে কেন আমায় স্বপ্ন দেখালেন? কেন আমায় বাধ্য করলেন আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে? আমি তো আপনার কাছে যাইনি। আপনি এসেছিলেন। আমার মনে নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছিলেন। আর যখন আমি আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে গেলাম, যখন আপনি ছাড়া আর কাউকে ভাবতেই পারি না, যখন আমি আপনার অস্তিত্বে বিলীন হয়ে গেলাম, ঠিক তখনই আপনি আমায় ছেড়ে দিলেন। তাও এমনভাবে, যেন আমি আর কোনোদিন উঠে দাঁড়ানোর সাহসও না পাই।
আচ্ছা, আপনি যেহেতু এমনই করবেন, তবে কেন কথা দিলেন যে,
কাল আপনি আমার বাড়ি আসবেন আর আমার হাত চাইবেন আব্বুর কাছে? কেন বললেন?
এর উত্তর কি দিতে পারবেন আপনি, শুভ?
আমি ভাবতে পারিনি এমন হবে।
অহ তাই! আপনি ভাবতে পারেননি?
কী সুন্দর একটা মিথ্যা কথা যে, একটা মানুষ বিয়ে করে নিলো কিন্ত সে বুঝতেই পারেনি? কী সুন্দর একটা জঘন্য, অবাস্তব, মিথ্যা আর বাজে একটা অজুহাত!
আরফা এত কথা বলতে ভালো লাগছে না রাখি।
হুম, তাই তো… এখন তো ভালো লাগবেই না। অথচ আমার একটু ভয়েস শোনার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতেন আপনি নামক প্রতারক। এখন আমার কথা শুনতেও বিরক্ত লাগে আপনার।
মানুষ তো এমনই — প্রয়োজন ফুরোলেই ফেলে দেয়,
যেমন টিস্যু।ঠিক তেমনই প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে কিছু মানুষ প্রিয় মানুষকেও ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তার এক জীবন্ত উদাহরণ আপনি, Mr. Shuvo।
তুমি যাই বলো, তবে আমায় আর কল দিও না। আমার বউ দেখলে হয়তো কষ্ট পাবে।
ওর কষ্ট হবে, সেই কষ্ট দেখার জন্যই না হয় আপনি আছেন।
কিন্তু আমি,আমার কষ্ট কে দেখবে???
টু… টু… টু…
ও পাশ থেকে কল কেটে দিল নিষ্ঠুরতম পুরুষ। একজন কে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে, অন্য একজনকে নিয়ে সুখের সাগরে ডুব দিবে সেই পুরুষ।
রাত ১২ টা ৪৫।
ফোনটা কানের কাছ থেকে নামিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আরফা।চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল এক অবাধ্য, যন্ত্রণা মেশানো, নোনাজল।
অন্ধকার ঘর। জানালায় পর্দা কাঁপছে বাতাসে, কিন্তু ঘরের ভেতর যেন থমকে আছে সময়।
আরফা চিত হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। চোখ দুটো স্থির হয়ে ঘুরতে থাকা ফ্যানটার দিকে আটকে গেছে। ফ্যানটা ঘুরছে, ঠিক যেমন ঘুরছে তার মনে জমে থাকা হাজারো স্মৃতি—সেই বেঈমান মানুষটার সঙ্গে কাঁটানো সব মুহূর্ত, যেগুলোর প্রতিটা এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরে আসে।
চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। নিঃশব্দে। কোনো আওয়াজ নেই, শুধু নিঃস্ব কান্না। এক সময় কান্না এতটাই চেপে ধরে যে দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে—শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। হেঁচকি উঠে যায়। জোরে কামড়ে ধরে বালিশটা। বুকের ভেতরটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে—টুকরো, টুকরো।
মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৬৮
অনেকক্ষণ ধরে কান্নার পর সে ধীরে ধীরে উঠে বসে। খোলসে থাকা নিজের শরীরটা খুলে ফেলতে চায়। খুলে নেয় পরনের ওড়নাটা। এক পা এক পা করে বিছানা থেকে উঠে ফ্যানের সুইচটার কাছে যায়।
সুইচ অফ করে ঘুরে দাঁড়ায় বিছানার দিকে। চোখে জেদ, মুখে অদ্ভুত শান্তি।
ওড়নাটা হাতে নিয়ে উঠে বিছানার উপর ফ্যানের পাশে দাঁড়ায়।
ধীরে ধীরে, নির্ভার হাতে, ওড়নাটা ঘুরিয়ে ফ্যানের গলায় প্যাঁচায়। ওপর দিকটা নিজের গলায় পরে।
ঠিক তখনই—
“ধপাসসসসসসস”