ধূসর রংধনু পর্ব ৪৩

ধূসর রংধনু পর্ব ৪৩
মাহিরা ইসলাম

কৃষ্ণ অম্বরে দেখা দিয়েছে নতুন ভোর। আরো একটি নতুন দিন।সময়গুলো খুবই ক্ষীণ হয়ে আসছে।
ওসমান ভিলার ব্রেকফাস্ট টেবিল আজ ভারী রমরমা।অনেকদিন বাদে সকলের মনের মাঝের প্রফুল্লতা স্পষ্ট ঠাহর করা যাচ্ছে।
নিস্তব্ধ রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো।
তবে সে তাকালো না কোনোদিকে।
তস্থ পায়ে হেঁটে সোজা গৃহ ত্যাগ করলো।
সবাই আড় চোখে সে দিকে চাইলো।
সবাই বুঝতে পারলো নিস্তব্ধ ক্ষেপে আছে ভীষণ।তাই কেউ আর বাড়তি কথাও বাড়ালো না। কথা বাড়ালে তাদেরই লস।ছেলের কথার জালে বেদম ফাঁসা ফাঁসতে হবে।
ফিরোজা বেগম আহাজারি করে বলল,

-” দেখ, দেখ নাতীডা আমার সক্কাল সক্কাল না খাইয়াই বের হইয়া গেল।”
তাসফি কোনোরকমে খাবার শেষ করে ব্যাগ নিয়ে ছুটলো নিস্তব্ধ’র পিছু পিছু।
দেখে বেশ বোঝায়ই যাচ্ছে তার ডাক্তার সাহেব বেজায় চটেছে।
হুহ! চোটুক না তাতে তার কি। কাল যদি লোকটা তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসতো তবে তো তাসফিও এতটা স্বার্থপর হতো না।
তাসফিকে সবার কাছে এত জবাবদিহিতাও করতে হতো না। সব দোষ তো তার অসভ্য ডাক্তার সাহেবের তবে সে একা কেন সব ভোগ করবে।হুহ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিস্তব্ধ গাড়ীতে উঠে স্টার্ট দেওয়ার আগেই তাসফি এসে ওপাশের দরজা খুলে ফন্ট সিটে বসে পড়লো।
নিস্তব্ধ ঘুরে তাকিয়েও দেখলো না। যেই রমণী তার সঙ্গে রাত্রীবাস করে নি এখন তার সঙ্গে দীনবাস করারওও কোনো প্রয়োজন নেই। সে একাই থাকতে পারবে। নিস্তব্ধ মুখ দিয়ে টু শব্দ টি না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
প্রণয়পুরুষের নিরব অভিমান তাসফি স্পষ্ট বুঝতে পারলো।মুচকি হাসলো সে।
করুক না একটু অভিমান, আর কি হবে।কতক্ষণ এই অভিমানের খেলা চলে সেও দেখবে।
দুমিনিট যেতে না যেতেই নিস্তব্ধ জোড়ছে ব্রেক কষলো। তাসফি সামনে ঝুঁকে আর একটুর জন্য মাথায় আঘাত লাগার হাত থেকে বেঁচে গেল।
তাসফি চোখ গরম করে নিস্তব্ধ’র দিকে চাইলো।সুধালো,

-” কি হলো এভাবে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামালেন কেন?”
নিস্তব্ধ উত্তর দিলো না।বরং হাতের থাবায় স্টেয়ারিংয়ে রাগে থাপ্পড় বসালো।
তাসফি নিস্তব্ধ’র অদ্ভুত কর্মকান্ডে চোখ পিটপিট করে চাইলো।
মুহুর্তেই সুজন কে ফোন লাগালো।
অসময়ে সুজন নিস্তব্ধ’র ফোন পেয়ে ভারী অবাক হলো।
রিসিভ করতেই নিস্তব্ধ ঝাড়ি মেরে বলল,

-” সুজন সিট বেল্ট লাগা।এতটা কেয়ারলেস হস কিভাবে। এরকম লো ক্লাস কমনসেন্স নিয়ে ঘুরলে গাড়ীতে ওঠার তো প্রয়োজন দেখছি না। থাপড়ে গাল লাল করে দেব বেয়াদব। সিট বেল্ট লাগা নাহয় গাড়ি থেকে নাম, এখুনি নামবি। এসব ফালতু কাজ যাস্ট নেওয়া যাচ্ছে না।”
নিস্তব্ধ’র কথা শুনে তাসফি বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চাইলো তার পানে।ও মাই গড।ওও মাই গড।
সুজন হতভম্ব হয়ে ফোন কানে ধরে বসে রইলো।
কিসের গাড়ি, কিসের সিটবেল্ট।নিস্তব্ধ’র কথার আগা মাথা সে কিছুই বুঝলো না।
করুণ স্বরে বলল,

-” ভাই তুই সকাল সকাল ওসব কিছু খেয়ে আসিস নি তো। দেখ দোস্ত সত্যি বল?”
নিস্তব্ধ আবারো ধমকে উঠলো,
-” থাপড়ে তোমার দাঁত সবগুলো ফেলে দেব বেয়াদব।ফাজলামো করো আমার সঙ্গে। এখনো হাভাতের মতো বসে আছিস।ইডিয়েট। ”
তাসফি থতমত খেল। কোনো রকমে হাত বাড়িয়ে সিটবেল্ট লাগালো।
সঙ্গে সঙ্গে নিস্তব্ধ ফোন কেটে দিলো।
এদিকে বেচারা অবলা পুরুষ সুজন ফোনের দিকে চোখ পিটপিট করে চাইলো।
সব আজগুবি কথাবলার জন্য সবাই কি শুধু তাকেই পায় নাকি আশ্চর্য।
তাসফি রাগে ফুঁসতে লাগলো। অসভ্য লোক। সোজা কথা তাকে বললেই হয়। এত নাটক করার কি প্রয়োজন। মুখে না বলিস লিখে দিতিস। ঢঙ!

তাসফির ইচ্ছে হচ্ছে নিজের গালে নিজে থাপ্পড় বসাতে।পারেনা নিস্তব্ধ কে চিবিয়ে খায়।
নিস্তব্ধ আবারো গাড়ি স্টার্ট দিলো।
সারাপথ সে আর একটা কথাও বলল না আগ বাড়িয়ে। থাকুক তার রাগ নিয়ে।
গেটের সামনে এসে গাড়ি থামাতেই তাসফি হনহন করে নেমে গেল।
গেটের সামনে থাকা কিছু পোলাপান স্যারের গাড়ি থেকে তাসফি কে নামতে দেখে কেমন আড়চোখে চাইলো।
মনে তাদের কটুক্তি।

আজ ক্লাসে পৌঁছে তাসফি চারপাশে ফিসফিস গুঞ্জন ঠাহর করলো।
আশা ওদের পাশে গিয়ে বসতেই আরাধ্য হাতের ইশারায় পেছনে দেখতে বললো।
তাসফি পেছনে তাকিয়ে স্পষ্ট মান্সার গোলগাল মুখশ্রী খানা নজরে এলো।
তাসফি কয়েক মিনিট গাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।
একসপ্তাহের শাস্তি তবে শেষ হয়ে গিয়েছে।বাহ ভালো।ক্লাসেও চলে এসেছে।
আশা কৌতুক করে বলল,

-” শয়তান এসে আবার হাজির হয়েছে। এখন দেখ নতুন নাটক করে কি ক্ষতি করে।”
আশার কথার মাঝেই ওদের অবাক করে দিয়ে মান্সা তাসফির সামনে এসে দাঁড়ালো।
ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
-” আমায় মাফ করে দিও তাসফি। না বুঝে শুধু শুধু তোমার সঙ্গে অন্যায় করেছি।আমায় ক্ষমা করো প্লিজ। তুমি চাহিলে আমি তোমার পায়ে পরতে ওও রাজি আছি।”
মান্সা নিচু হতে গেলে তাসফি বাঁধা দিয়ে বলল,
-” আরে কি করছো ওঠো ওঠো।”
মান্সা বলল,

-” না তুমি বলো আমায় ক্ষমা করেছ।”
-” দেখ তুমি যে তোমার নিজের ভুল বুঝতে পেরেছো এটাই যথেষ্ট।”
-” আচ্ছা। তবে আমরা কি বন্ধু হতে পারিনা? পুরোনো কথা কি ভুলে যাওয়া যায় না তাসফি।”
ভুতের মুখে রাম নাম শোনার মতো চমকে উঠলো ওরা।আশা, আরাধ্য,সর্নিধি চোখ বড় বড় করে চাইলো মান্সার দিকে।
আশা পেছন থেকে খোঁচা মারলো তাসফিকে।
মান্সার কথা শুনে সেও অবাক কিছুটা হয়েছে, তবে সময়ের সঙ্গে মানুষ তো পরিবর্তনশীল।মান্সাও বোধহয় পরিবর্তন হয়েছে।
তাসফি বলল,
-” তা হতেই পারো।তবে আমাদের সাথে কতটা তাল মিলিয়ে থাকতে পারো সেটাই দেখার বিষয়।”
আশা বলতে চাইলো,
-” কিন্তু তাসফি….।
“কোনো কিন্তু নয়। ওও যেহেতু চাইছে একটা সুযোগ দেওয়াই যায়।”
মান্সা খুশি হয়ে তাসফি কে জরিয়ে ধরলো।
-” থ্যাংকিউ, থ্যাংকিউ তাসফি।তুমি জানোনা তুমি আমার কতবড় উপকার করলে।”
-” আরে আরে কি করছো। ছাড়ো।”
মান্সা নিজের বেঞ্চে গিয়ে বসলো।
ওর পাশে বসা রিয়া জিজ্ঞেস করলো,

-” তুই সত্যি সত্যিই ওদের বন্ধু হলি। সিরিয়াসলি? আনবিলিভ্যাবল।”
-” হ্যাঁ হলাম তো সমস্যা কোথায়।এখানে অবিশ্বাস্যের প্রশ্ন আসছে কেন?”
-” মানে কিভাবে? এতটা পরিবর্তন তোর।”
মান্সা রহস্যময় ভাবে হাসলো।পুরো ক্লাসে চোখ বুলিয়ে বলল,-” হতে হয়।সময়ের পরিবর্তনে সবই করতে হয়।”
এদিকে মান্সা যাওয়ার পর ওরা তিনজন তাসফি কে হাওমাও করে ধরলো।
সর্নিধি বলল,
-” তুই কেন শুধু শুধু জামেলা সঙ্গে জড়াতে গেলি তাসফি। ”
আশা বলল,
-” হ্যাঁ তাই তো। বল?”
আরাধ্য’র দিকে তাকিয়ে আশা বলল,
-” কিরে তুই কিছু বলছিস না কেন? মনে হচ্ছে মান্সা এসে ক্ষমা চাওয়ায়, আমাদের বন্ধু হওয়ায় তুই ভারী খুশি হয়েছিস? মান্সা বেডির আরাধনা করতে বসেও গিয়েছিস।”
আরাধ্য থতমত খেয়ে বলল,

-” না মানে ওই আর কি। ”
তাসফি ওদের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
-” দেখ সবাই কেই একটা শেষ সুযোগ দেওয়া উচিত। আমিও তাই দিলাম। দেখ এই অছিলায় আমাদের আরাধ্য বাবুর মনের আসা পূরণ হয় কিনা।”
আরাধ্য আমতাআমতা করতে লাগলো।
আশা কৌতুক করে বলল,
-” হ্যাঁ সেই। বাদড়ের গলায় এখন লোহার মালা ঝুললেই হয়।”
আরাধ্য প্রতিবাদ করে বলল,
-” দেখ পাখির বাঁসা তুই কিন্তু আমায় বাদড় বলে অপমান করতে পারিস না।”
আশা মুখ বাঁকালো।
তাসফি ওদের থামিয়ে বলল,

-” আচ্ছা তোরা থাম এভাবে বাঁচ্চাদের মতো ঝগড়া করছিস কেন।”
আশা তাসফির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
-“হ্যাঁ তুমি আর স্যার যখন একে অপরের সঙ্গে বাচ্চাদের মতো ঝগড়া, কিলাকিলি করো তখন কিছুনা তাইনা।”
তাসফি ওর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।
আশা মুখ বাঁকিয়ে বসে পড়লো।
খানিকক্ষণ বাদেরই ক্লাসে স্যারের আগমন ঘটলো।
ওরা ক্লাসে মনোযোগী হলো।

ক্লাস শেষে ওরা চারজন বাইরে বেরিয়ে লক্ষ করলো তাসফির দিকে সকলের আঁড়চোখের দৃষ্টি।
আসলে তখন মান্সার ক্ষমা চাওয়া দেখে ক্লাসের সবাই বুঝে গিয়েছিল তাসফিই সেই মর্গে থাকা মেয়েটা।
আর সেই খবর ক্লাস থেকে কলেজে ছড়িয়ে পড়েছে।
তাইতো এখন তাসফিকে সকলের অদ্ভুত দৃষ্টির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
কেউ কেউ তো এসে আবার জিজ্ঞেস ওও করছে,
-” এই তুমিই সেই মেয়েটা তাই না?”
-” তুমিই মর্গে আটক ছিলে?”
-” তোমাকেই তো নিস্তব্ধ স্যার কোলে করে হসপিটালে নিয়েছিল তাই না।”
তাসফি চুপচাপ সব শুনছে।
আর মাথা নাড়ছে।
ওরা এখন বুঝতে পারছে তাসফিকে যেন এসব প্রশ্নের সম্মুখীন না হতে হয় তাইতো নিস্তব্ধ তাকে আড়ালে রেখেছিলো।
আশা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে সুধালো,

-” দেখ, দেখ, শয়তানি আসতে না আসতেই একটা কেলেংকারী ঘটিয়ে দিলো।কে বলেছিল তোকে ফলাও করে এসে ক্ষমা চাইতে।”
তাসফি ওকে বাঁধা দিয়ে বলল,
“আহা থামনা”
তাসফি ওরা ক্লাসের সামনেই করিডরে দাঁরিয়ে ছিল।
মান্সা এসে কাচুমাচু মুখ বলল,

-” দেখনা তোমাদের কি বিপদে ফেলে দিলাম।প্লিজ তোমরা আমায় ভুল বুঝোনা। আমি আসলে ব্যাপারটা বুঝতে পারি নি। তোমার বিষয় কেউ জানতোনা আমি আসলে জানতাম না। আ’ম এক্সটেমলি সরি তাসফি।”
-” ঠিক আছে সমস্যা নেই। আমি বুঝতে পারছি তুমি ইচ্ছে করে করো নি।”
তাসফির উপর রাগ দেখিয়ে ওরা তিনজন ক্লাসে চলে গেল।
তাসফি ওখান থেকে হেঁটে হেঁটে কিছুটা ফাঁকা জায়গায় এসে দাঁড়ালো এত গুঞ্জন তার আর ভালো লাগছে না।
চারপাশে মৃদু সমীরণ বইছে ।তাসফির ভালোলাগছে। এতকিছুর মাঝেও তাসফির কেন জানিনা মন খারাপ হচ্ছে না।
সারাক্ষণ শুধু তার ডাক্তার সাহেবের রাগী মুখখানাই ভেষে উঠছে তার মানসপটে।হয়তো তাসফি ভীষণ খুশি কতগুলো দিনপর সে নিজ শ্বশুর বাড়িতে অতিপ্রিয় মানুষগুলোর কাছে ফেরত গিয়েছে বলে।
আর তার সকল ক্রেডিত তো তার ডাক্তার সাহেবের।তাইতো চারপাশের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ওও তাকে ছুঁতে পারছেনা। তাসফি আনমনেই মুচকি হাসলো।

-“তাসফি?”
পরিচিত কন্ঠস্বরে তাসফি পিছু ঘুরে চাইলো।
হাবিব স্যারকে দেখে সে সালাম দিলো।
তাসফি জানেনা কেন হাবিব স্যার শুরু থেকেই তাকে অনেকটা স্নেহ করেন।
বলতে গেলে অতিরিক্ত।
হাবিব স্যার বললেন,
-” একটু সাবধানে থেকো কেমন। সবাই তো মনে হয় তোমার বিষয়টা জেনে গিয়েছে।”
তাসফি হেঁসে বলল,
-” জ্বী স্যার। সমস্যা হবে না আমার।”

হাবিব স্যার তাসফির মাথায় হাত রাখলেন সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে। তাসফি হাসিখুশি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
নিস্তব্ধ তখন করিডরে তাদের পেরিয়ে হনহন করে হেঁটে গেল।
নিস্তব্ধ কে দেখে হাবিব স্যার পিছু ডাকলেও নিস্তব্ধ ফিরে চাইলো না।
হাবিব স্যারের দিকে চাইলে সে নির্ঘাত এখন একটা রক্তারক্তি কান্ড ঘরিয়ে ফেলবে।
নিস্তব্ধ কে দেখে তাসফি শুষ্ক ঢোক গিললো।
চেম্বারে পৌঁছে নিস্তব্ধ গায়ের এপ্রোন একপ্রকার ছুঁড়ে ফেললো।
রাগের চোটে হিসহিস করতে লাগলো।
এমনিতেই সে রাত থেকে তাসফির উপর রেগে ছিল।

হাবিব স্যারের সঙ্গে তাসফির কথা বলা নিস্তব্ধ’র রাগের পারদ ছিল দ্বিগুন করতে যথেষ্ট। তার রাগ আরো দ্বিগুন হলো পরপুরুষ তার বউয়ের ত্বক স্পর্শ করায়।সে চেয়েও পারছে না নিজেকে শান্ত করতে।
তার কাছে আসে না অথচ দেখ পরপুরুষের সঙ্গে কেমন হেঁসে হেসে কথা বলা হচ্ছে।
কেন একজন পরপুরুষ তার মাথায় হাত রাখবে।
স্নেহ হোক আর ভালোবাসা,বা বন্ধুত্ব।গায়ে কেন হাত দিতে হবে।
মুরুব্বি মানুষ হয় ভিন্ন কথা।
সে থাকতে কেন একজন অবিবাহিত পুরুষ তার বউয়ের কাছাকাছি যাবে।
হাবিব স্যার চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাসফি ছুটে নিস্তব্ধ’র কেবিনে এলো।

-” ডাক্তার সাহেব শুনুন। ”
নিস্তব্ধ রক্ত চক্ষু দৃষ্টিতে তাসফির পানে চাইলো।
নিস্তব্ধ অবস্থা দেখে তাসফি এবারে সত্যিই খানিকটা ভয় পেল।
-” আসলে হয়েছে কি…
তাসফি বাকি কথা বলতে পারলো না। একঝটকায় তাকে দেওয়ার সঙ্গে চেপে ধরলো নিস্তব্ধ।
শক্ত পোক্ত ক্রংকিটের দেওয়ালের তাসফির পিঠ ঠেকলো।জোড়ে চেপে ধরায় মৃদু ব্যাথা পেল সে।
নিস্তব্ধ’র রাগী চোখে তাকিয়ে তাসফি ভয়ে কেঁপে উঠলো। নিস্তব্ধ রাগে হিসহিসিয়ে বলল,
-” রাতে আমার রুমে থাকেন না, কাছে আসেন না। অথচ পরপুরুষের সঙ্গে দিব্বি হেঁসে হেঁসে কথা বলতে পারেন।আমি কিন্তু এতটাও ভালো মানুষ নই মিসেস ইয়াসার। পরপুরুষের ছোঁয়া আমার বেগমের গায়ে আমি মোটেও সহ্য করতে রাজী নই।

আপনার গায়ে শুধুমাত্র এই নিস্তব্ধ ইয়াসারের ছিলমহর থাকবে অন্যকারো নয় বুঝেছেন।
নিজেকে হেফাজত করবেন।আর না পারলে বলবেন। আমার জিনিসের হেফাজত আমি নিজেই করে নিতে পারবো।”
নিস্তব্ধ আক্রোশে চুমু দিল তাসফির গালে।
-“আমার কথা বোঝা গেল? না বুঝলে ভিন্ন ওয়ে তে বোঝাতে আমার দ্বিধা নেই?”
তাসফি কোনো উত্তর দিলো না।

ধূসর রংধনু পর্ব ৪২

আসলে নিস্তব্ধ’র হঠাৎ এই রুপে সে স্তব্ধ। আগে কখনো নিস্তব্ধকে সে এতটা ডেস্পারেট হতে দেখেনি।
তাসফির উত্তর না পেয়ে নিস্তব্ধ মেজাজ হারিয়ে কামড় বসালো তাসফির মশ্রিণ গলায়।
ব্যাথায় চোখ খিচে নিলো তাসফি।
এসময় চেম্বারের দরজার ফাঁক গলিয়ে নিস্তব্ধ ও তাসফির ঘনিষ্ঠ মুহুর্ত গুলো খুব সন্তর্পনে ক্যামেরা বন্দী করে নিল কেউ।

ধূসর রংধনু পর্ব ৪৪