মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৩৯ (২)

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৩৯ (২)
নওরিন কবির তিশা

ফারিন:”আপনি তো দেখছি অদ্ভুত লোক মশাই! নিজেই উষ্টা খেয়ে এসে আমার উপর পড়লেন এখন আবার আমাকেই বকছেন?”
নির্ঝর তার উপর থেকে উঠতে উঠতে বলল,,
—”ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি ইচ্ছাকৃতভাবে তোমার উপর এসে পরিনি! তুমি সারা ওয়াশরুমে পানি দিয়ে খেলা করেছ ফর দিস রিজন আমি পড়ে গেছি! আর উষ্টা এগুলো কোন ধরনের ভাষা হ্যাঁ?”
নির্ঝর উঠে যাওয়ার পর ফারিনও উঠতে উঠতে বলল,,

—”এগুলোই ভাষা! আমার মাতৃভাষা বাংলা ভাষা! আর আপনার ওই ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন ফর দিস রিজন এগুলো কি হ্যাঁ? বাঙালি কত কষ্ট করে নিজের জীবন দিয়ে বাংলা ভাষা অর্জন করেছে আর আপনার মত কিছু কিছু ব্রিটিশদের চামচারা তার কদর করতে জানেনা! আপনাদের তো বাঙালি বলাই মহা অন্যায়!”
নির্ঝর:”স্টুপিড!”
নির্ঝর বের হয়ে যায়। ফারিন সেখানে দাঁড়িয়েই রাগে ফোঁসফোঁস করতে থাকে। তাকে স্টুপিড বলা। হঠাৎই বেসিনের আয়নায় সে তাকিয়ে দেখতে পায় সাদা শার্টটা ভিজে একদম শরীরের সাথে লেগে আছে তার। শরীরের প্রতি ভাঁজ স্পষ্ট।গলায় জড়ানো দোপাট্টাটাও যে খুব বেশি পুরু তা নয়। সাধারণত বিয়ের দোপাটা গুলো যেরকম হয় সেরকমই ভীষণ পাতলা। আর পানিতে ভিজে সেটার অস্তিত্বই টের পাওয়া যাচ্ছে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তার মানে এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে এতক্ষণ সে নির্ঝরের সাথে তর্ক করছিল।ভীষণ লজ্জায় পড়ে যায় সে। সাধে কি আর নির্ঝর তাকে স্টুপিড বলে। আচ্ছা তাহলে কি নির্ঝর… না না আর কিছুই ভাবতে পারে না সে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা করে তার।কিন্তু এবার সে কি করবে সাথে করে না তো কোনো শার্ট এনেছে না তো অন্য কিছু। কি পড়বে সে?
নির্ঝর রুমে আছে কিনা সেটা দেখার জন্য দরজার ফাঁক গলে হালকা উঁকি দিতেই নির্ঝর তার একটা শার্ট ফারিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,,
—”আপাতত এটাই পড়ে নাও। আমি নিচে গিয়ে দেখি মা বা নিঝুম কেও উঠেছে নাকি?”
ফারিন এক ঝটকায় নির্ঝরের হাতের থেকে শার্ট টা নিয়ে ‌দ্রুত ওয়াশরুমের দরজা আটকে দেয়। নির্ঝরও বের হয়ে যায় রুম থেকে।

মিনিট দশেক পর……..
রিসিভশনের লেহেঙ্গা, কিছু ভারী গহনা, মেকাপ প্রোডাক্টস, আর দুজন মেকআপ আর্টিস্ট সহ রুমে প্রবেশ করল নিঝুম, শিশির আর ইলমা সহ নিঝুমের কিছু কাজিনরা। ফারিন তখন সবে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছিল মাথায় জড়ানো টাওয়ালটা। তাকে দেখে ইলমা দুষ্টু হেসে সামান্য কাশঁলো।
তাদেরকে দেখে ফারিন দ্রুত এগিয়ে এসে বলল,,
—”আপু তোমরা এসেছো এই দেখো না….”
ইলমা:”থাক থাক ! বুঝেছি বুঝেছি! আর বলতে হবে না! এসব কথা কেউ সবার সামনে বলে!”
ফারিন:”আরে আপু সে রকম কিছুই না আসলে!”
ইলমা:”যাহ দুষ্টু! এভাবে কেউ বলে? চুপ করো!”
ফারিন চুপ হয়ে যায়। আল্লাহই জানে ইলমা কি ভেবেছে। ফারিন যখন এসব ভাবতে ব্যস্ত তখনই ইলমা শিশিরকে দেখিয়ে বলে,,

—”এই দেখো তোমার আর একটা ননদিনী!”
শিশির ফারিনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,,
—”হ্যালো ফারিন! আমি শিশির,শিশির শাহ! একদিক থেকে তোমার ননদিনী বলতে পারো!”
ফারিন মুচকি হেসে বলে,,
—”হাই আপু! কালকে রাতে তো সবাই এসেছিল তুমি তো আসোনি?”
শিশির কিছুটা অপ্রস্তুত হয়। কালকে রাতে তো নাহিয়ান তাকে অনেক রাত করে বাসায় নিয়ে এসেছিল। এই জন্যই ফারিনের সাথে সে কালকে রাতে দেখা করতে পারেনি কিন্তু এখন কি বলবে! তবে সে কিছু বলার আগেই পাশ থেকে নির্ঝরের মামাতো বোন রাফিয়া বলল,,

—”আরে ও কালকে রাত্রে একটু ব্যস্ত ছিল এজন্যই আসতে পারেনি ‌সেসব বাদ দাও! তুমি বলো কেমন কাটলো বাসর রাত?”
ফারিন মুখ সামান্য নিচু করে ফিসফিসিয়ে বলল,,
—”এইতো হায়ার ম্যাথ করতে করতে!”
উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে বলল,,
—”মানে!”
ফারিন অপ্রস্তুতি হাসলো। সবাই কি শুনে ফেললা নাকি? সে হাসির রেখাটা প্রসারিত করে বলল,,
—”আরে না না আপু স্যার আমাদের হায়ার ম্যাথ ক্লাস নেই তো এই জন্যই বললাম আর কি!”
রাফিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,,

—”ওওহ তাই বলো! আমি তো ভাবলাম নির্ঝর যে মানুষ না জানি কালকে রাতেও তোমার হায়ার ম্যাথ ক্লাস নিয়েছে কিনা?”
ইলমা:”আরে না না আপু কি যে বলো না! নির্ঝর ভাই যেরকমই হোক না কেন! বাসর রাতের সঠিক ক্লাসটাই নিয়েছিল তাই না ফারিন!”
উপস্থিত সবাই হেসে উঠলো। ফারিনও মুচকি হাসলো।আর মনে মনে ভাবল এরা যদি জানতো গতকাল রাতে আসলে কি হয়েছে!
কিছুক্ষণ পর

নির্ঝর থমকে গেছে। সে এসেছিল ফারিনকে রুম থেকে নিয়ে রিসিপশন পর্যন্ত যাওয়ার জন্য। আসলে এটা চৌধুরী আবাসনেরই একটা রিচুয়াল। বিয়ের পরের দিন রিসিপশন হবে আর সেখানে নব দম্পতি হাতে হাত রেখে একসাথে যাবে। আর নির্ঝরদের রিসিপশনের আয়োজন করা হয়েছে বাড়ির সামনের ফ্রন্ট এরিয়ার গার্ডেনে। তাই নির্ঝর এসেছিল ফারিনকে নিতে। কিন্তু রুমে এসে থমকে গেল সে।
সোফার উপর বসে আছে ফারিন। পরনে একটা স্কাই ব্লু কালার লেহেঙ্গা, একটু বেশি গর্জিয়াস, মাথায় লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং রেখে স্কাই ব্লু কালার দোপাট্টা, সামনের কার্ল করা চুলগুলো বের করা, সামান্য ব্রাইডাল মেকআপ, ঠোঁটে হালকা মেরুন কালার লিপস্টিক, গলায় একটা ডায়মন্ড নেকলেস, কানে এক ডায়মন্ডের ঝুমকো, আর কপালের উপর এসে পড়েছে ললাটিকাটি। ব্যাস এইটুকুই অন্যদের চোখে এটা খুবই সাধারণ কিন্তু নির্ঝরের চোখে তা ধরা দিচ্ছে অসাধারণ রূপে।

ঠিক যেন স্বর্গীয় অপ্সরা না জান্নাতি কোনো হুর না না এ সৌন্দর্য সংজ্ঞায়িত করার মতো কোনো শব্দ নির্ঝরের শব্দভাণ্ডারে নেই। হঠাৎই তার হৃদ গহীনে বয়ে গেল এক তীব্র ঝোড়ো হাওয়া যা আঘাত হানল তার চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট ছোট্ট হৃদপিণ্ডটাতে। সে এগিয়ে গেল ফারিনের দিকে।
অন্যদিকে ফারিন ব্যস্ত নিজের লেহেঙ্গা সামলাতে। এত গর্জিয়াস এর হেবি একটা লেহেঙ্গা পরে সে কিভাবে যে হাঁটবে তাই বুঝতে পারছে না।নির্ঝর এগিয়ে এসে হাতে এগিয়ে দিল তার দিকে। ফারিন চমকে তাকালো। তারপর সে নির্ঝরের হাতে হাত রেখে উঠে দাঁড়ালো । অতঃপর এক জোড়া কপতো-কপতি এগিয়ে চলল রিসিভশনের দিকে।

রিসিভশনের বর কনের আসনে বসে আছে ফারিন আর নির্ঝর। তাদের সামনের বড় স্টেজে পারফর্ম করছে একদল তরুণীরা। নির্ঝরদের রিসিপশনের আয়োজন বেশ বড় করেই করা হয়েছে। চৌধুরী আবাসনের সব আত্মীয়-স্বজন, ফ্যামিলি ফ্রেন্ড সহ নির্ঝরের কলেজের সব শিক্ষক এমনকি স্টাফদেরও নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বাড়ির সামনের ফ্রন্ট এরিয়ার গার্ডেন জনসমাগম মুখর। সকলে ব্যস্ত নব দম্পতির সাথে কথা বলতে। সেখান থেকে কিছুটা দূরের এক কর্নারে দাঁড়িয়ে আছে শিশির আর নাহিয়ান। শিশির স্টেজের ডান্স পারফরম্যান্স দেখছে। শিশিরের পরনে ডিপ পিংক কালার সিল্ক শাড়ি। যদিও শাড়িটা সে নিজের ইচ্ছায় পড়েনি নওরিফা খানমই জোর করে তাকে পরিয়ে দিয়েছে। সে চেয়েছিল সারারা বা গাউন টাইপ কিছু একটা পড়বে।

কিন্তু সকালে নওরিফা খানম তাকে জোর করে শাড়ি পরিয়ে বলল,’তুই কেন শাড়ি পরবি না নুয়া? আজকের সবাই শাড়ি পরবে এমনকি নিঝুও পর্যন্ত শাড়ি পড়বে। তবে তোর কি সমস্যা?পড়তে অসুবিধা তো আমি পরিয়ে দিচ্ছি আর ট্রাস্ট মি অনেক সেফলি পরিয়ে দেবো কোথাও কোন সমস্যা হবে না হাটতেও অসুবিধা হবে না’
কি আর করার শিশিরও একপ্রকার বাধ্য হয়ে পড়লো শাড়িটা।
নাহিয়ান মুগ্ধ নয়নে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তার দিকে। শিশির এক ঝলক সেদিকে তাকাতেই লজ্জায় চারা গাছের নাই নুয়ে পড়লো সে, চিবুকটা নামলো সামান্য, লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে সে বলল,,

—”কি দেখছেন?”
নাহিয়ান ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,,
—”দেখছি যে আমার বাঁ পাজরের হাড়ের তৈরি রমণীটা এত সুন্দর!”
শিশিরের লজ্জা দ্বিগুণ হলো। এই লোকটাও না! অন্যদিকে শিশিরকে এমন লজ্জা পেতে দেখে নাহিয়ান বলল,,
—”কি হলো ম্যাম লজ্জা পেয়েছেন?”
শিশির কোনো জবাব দিল না।তার ব্যক্তিগত পুরুষটা বড়ই অদ্ভুত লজ্জা দিয়ে বলছে লজ্জা পেয়েছেন!
এদিকে……
ইসিতাকে ধরতে গিয়ে নিঝুমের ধাক্কা লাগলো সৌজন্যের সাথে। সৌজন্য তখন সবে একটা সফট ড্রিংকসের গ্লাস হাতে নিয়েছে ওমনি নিঝুমের ধাক্কায় গ্লাসের সম্পূর্ণ সফট ড্রিংকসটুকু ছিটকে পড়ে নষ্ট হয়ে যায় তার ড্রেস। সে বিরক্তিতে নাক মুখ কুচঁকে বলল,,

—”আরে অন্ধ নাকি?”
নিঝুম:”কি বললেন?”
সৌজন্য:”অন্ধকে অন্ধ বলেছি, শুনতে পাওনি?”
নিঝুম:”কে অন্ধ হ্যাঁ?”
সৌজন্য:”যে অন্ধের মত দৌড়াতে গিয়ে আমার ড্রেসটা নষ্ট করে ফেলল সে!”
নিঝুম:”আপনি বা তাল গাছের মতো রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন?যখন দেখছেনই যে এখানে লোকজন চলাচল করছে!”
সৌজন্য:”আমি তাল গাছের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম নাকি তুমি অন্ধের মত এসে আমাকে ধাক্কা দিলে!”
নিঝুম:”আপনি তার কাছের মত দাঁড়িয়ে ছিলেন!”
সৌজন্য:”বাচাল কোথাকার!”
নিঝুম:”কি বললেন?”

সৌজন্য:”বাচাল বললাম!বাচাল মানে বোঝো না টকেটিভ!”
নিঝুম:”বাচাল হতেও না যোগ্যতা লাগে, আপনার মতো তো আর নই গোমরা মুখ মিস্টার ইন্ট্রোভার্ট!”
সৌজন্য:”ওই যোগ্যতাটাই তো ‌শুধু আছে তোমার ভেতরে!”
নিঝুম:”একদম যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না? তোমার যোগ্যতা সম্পর্কে কতটুকু জানেন আপনি হ্যাঁ?”
সৌজন্য:”বাচালদের মত সারাদিন বকবক করা, অন্ধের মতো ছোটাছুটি করা, পাগলদের মতো যুক্তি দেখানো, এগুলাই তো নাকি আরো কিছু উদ্ভট যোগ্যতা আছে তোমার?”
নিঝুম:”একদম না জেনে শুনে উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না! আমার যোগ্যতার এক শতাংশ আপনার ভিতরে নেই!”
সৌজন্য:”ও তাই নাকি!তো বলো কি যোগ্যতা আছে তোমার শুনি?”
নিঝুম:”কি যোগ্যতা লাগবে আপনার শুনি?”
সৌজন্য স্টেজের দিকে তাকিয়ে বলল,,

—”ওদের মত ডান্স করতে পারবে?”
নিঝুম সুজনের কথা অনুযায়ী স্টেজের দিকে তাকালো। সেখানে ব্ল্যাক কালারের শাড়ি পরা দুইটি মেয়ে ratan lambiyan গানে ডান্স করছে। সে সৌজন্যের দিকে ফিরে কিছু বলার আগেই সৌজন্যে বলল,,
—”থাক থাক বুঝেছি! উড়ে গেছে তো তোমার দম? দরকার…”
তাকে কথা শেষ না করতে দিয়েই নিঝুম বলল,,
—”ওদের থেকে ভালো ডান্স পারফর্ম করে দেখাবো জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ!”
নিঝুম চলে গেল সেখান থেকে। সৌজন্য শুধু তাকিয়ে রইল তার যাওয়ার পানে।

শিশির:”আরে নিঝু এই শাড়ি পড়ে কি করে ডান্স করবো বল! আর সবচেয়ে বড় কথা আমি প্র্যাকটিস করেছি নাকি উইদাউট প্রাকটিস কি করে ডান্স করবো?”
নিঝুম:”না না নুয়া আপু চলোনা তুমি পারবে! চলোনা দেখো আমাকে একজন চ্যালেঞ্জ দিছে মান-সম্মানের প্রশ্ন আপু!”
শিশির:”কে দেয় তোকে উদ্ভট চ্যালেঞ্জ আর তুইই বা একসেপ্ট করিস কেন?”
নিঝুম:”না না আপু চলো!”
শিশির:”নিঝু বুঝছিস না কেন শাড়ি পরে আমি কিন্তু হাটতেও পারি না ডান্স কিভাবে করব!”
সৌজন্যের কাছ থেকে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার পরেই নিঝুম এসেছে শিশিরের কাছে। কারণ সে যে ডান্সটা পারফর্ম করবে তাতে আরেকটা মেয়ের ভীষণ প্রয়োজন আর এখন ডান্সের জন্য শিশির ব্যতীত অন্য কোনো মেয়েকে ভরসা করতে পারছে না সে। তাই তো সেই সময় থেকেই শিশিরের কাছে এসে ঘ্যানঘ্যান করছে সে। শিশুদের সাথে না পেরে শেষমেষ সে নাহিয়ানের দিকে ফিরে বলল,,

—”ওওও ভাইয়া তুমি একটু বোঝাও না। আপু যাতে একটু ডান্স করে!”
নাহিয়ান:”তোর কি মনে হয়? উনি ডান্স করতে পারবে? যদি পারতো তাহলে এতবার বলা লাগত না এমনিতেই চলে যেত! তার থেকে বরং তুই ওই মেয়েটার পারফরমেন্স টা দেখ ভালোই ডান্স করছে!”
শিশির এবার কটমট করে তাকালো নাহিয়ানের দিকে। তা দেখে নাহিয়ান কিছুটা ভরকে গিয়ে বলল,,
—”আরে না না উনি তো ভীষণ ভালো ডান্স করে! শুধু…”
তাকে কথা শেষ না করতে দিয়ে শিশির বলল,,
—”আপনি কার পারফরম্যান্স ভালো বললেন?”
নাহিয়ান স্টেজের দিকে ঘুরতে ঘুরতে বলল,,
—”কেন ওই মেয়েটা…”

কথা শেষ করতে পারল না সে। স্টেজের উপর পারফর্ম করছে ইয়ালিনা। আর নাহিয়ান তাকে না দেখেই বলে দিয়েছে যে সে ভালো ডান্স করছে। এবার এসে শিশিরকে কি করে বোঝাবে? যে সে শিশিরের দিকে তাকিয়ে ছিল বলে স্টেজে কে তা দেখতে পারেনি! নিজের বোকামির জন্য নিজের উপরে রাগ হলো তার। মনে মনে সে বলল,,
—”আজ তোর কপালে দুঃখ আছে নাহিয়ান!”
তারপর সে শিশিরের দিকে বলল,,
—” আরে সে রকম কিছু না আসলে না মানে আমি…”
তাকে কথা শেষ না করতে দিয়ে শিশির নিঝুমের হাত টান দিয়ে বলল,,
—”চল নিঝু!”
ধুপ ধাপ পা ফেলে নিঝুমকে এক হাতে টানতে টানতে সেখান থেকে চলে গেল শিশির।
কিছুক্ষণ পর

নাহিয়ান রুমে যাওয়ার জন্য পিছনের দিকে ঘুরতেই চোখ স্থির হয়ে যায়।আলো ঠিক তখনই এক চমক তৈরি করে স্টেজের উপর।দু’জনেই যেন এই আলোর নরম ছোঁয়ায় আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।শিশিরের পরনের শাড়ির আঁচল কোমরের কাছে বেল্ট দিয়ে বাঁধা,সোনালি পাথরের বেল্টের ঝিকিমিকিতে শাড়ির রঙ যেন আরও দীপ্তিময়।নিঝুমের সাজও একই ধাঁচে গর্জিয়াস অথচ নরম সিল্কের নাভিরেখায় আঁচল গেঁথে রাজকীয় আভিজাত্য ছড়াচ্ছে।আর ঠিক তখনই হঠাৎ বাজলো সারারা সং,,

Lahraake balkhaake
Balkhaake Lahraake
Aag laga ke
Dilon koo jala ke
Karoon main ishara
Sharara sharara
Sharara sharara
Sharara sharara
Main hoon ek sharara

এক মৃদু ধাপ ফেলে ডান্স শুরু করল দু’জনে।পায়ের মৃদু শব্দ মিলিয়ে যাচ্ছে গানের তালে,তাদের হঠাৎই এমন পারফরম্যান্সের অবাক হলো উপস্থিত সকলে। তবে হতবিহ্বল হয়ে গেল নাহিয়ান শিশির যে কথাটাকে এত সিরিয়াসলি নেবে সেটা বুঝতে পারিনি সে। তার অর্ধাঙ্গিনী এতটাই জেলাস যে যেখানে শাড়ি পড়ে হাঁটতেই পারেনা সেখানে শুধু নাহিয়ান একবার ইয়ালিনার কথা বলেছিল তাও না দেখে আর ইয়ালিনার পরনে ছিল শাড়ি সেই জন্য সেও শাড়ি পরেই পারফর্ম করছে হায় আল্লাহ!
এদিকে সৌজন্য আশ্চর্যান্বিতো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিঝুমের দিকে। তার চ্যালেঞ্জ যে সত্যি সত্যি নিঝুম একসেপ্ট করবে আর সবার সামনে এভাবে ডান্স করবে সে বুঝতেই পারেনি।
ডান্স শেষে স্টেজ থেকে নেমে আসলো শিশির আর নিঝুম। শিশির নেমেই সোজা চলে গেল ড্রয়িং রুমের দিকে একবারও নাহিয়ানের দিকে তাকালও না। আর নিঝুম সোজা গেল সৌজন্যের দিকে। আর সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বাঁকা হেসে বলল,,

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৩৯ 

—”সো মিস্টার ইন্ট্রোভার্ট! দেখলেন তো আমার কম্পিটেনসি? তাই এরপর থেকে চ্যালেঞ্জ দেওয়ার সময় ভেবেচিন্তে দিবেন!”
কোমর থেকে বেল্ট খুলে শাড়ির আঁচল হাওয়ায় উড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেল নিঝুম। আর সৌজন্য অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে।

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৪০