ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৩২
সারিকা হোসাইন
নিষ্ঠুর এই বহুরূপী দুনিয়ায় সময়ের লাগাম টেনে ধরা যেনো খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার।চোখের পলকেই দিন ফুরিয়ে রাত নামে আবার রাত পেরিয়ে দিন।এভাবেই কেটে যাচ্ছে সপ্তাহ,মাস আর বছর।সময়ের ঘূর্ণিবাকে প্রত্যেকের জীবন থেকে কোনো কিছু বুঝে উঠবার আগেই হারিয়ে গিয়েছে সাতটি মাস।এই সাত মাসে যুবরাজ বা রেহান কেউ তাদের স্বজনদের খবর জানেনা,দেশের খবর জানেনা এমনকি নিজের চেনা পরিচিত কর্মস্থলের খবর ও জানেনা।সেই বিভীষিকাময় অতীতের পর বর্তমানে কি হচ্ছে সেটা নিয়েও যুবরাজ বা রেহানের কোনো আগ্রহ নেই।তাদের ধ্যানে জ্ঞানে শুধু একটাই চিন্তা সেটা হচ্ছে শেরহামের পতন।
রেহানের চিকিৎসা শেষ হয়েছে আরো দেড় মাস আগে।চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করছে ম্যাক।উহু মোটেও এমনি এমনি দেয়নি।এর জন্য যুবরাজকে দিতে হয়েছে চূড়ান্ত মূল্য।কিন্তু যুবরাজ ম্যাকের মূল্য চুকাতে নির্দ্বিধায় সমস্ত চুক্তি মেনেই অন্ধকার পথে পা বাড়িয়েছে।যেই রেহান যুবরাজের জন্য নিজের সর্বস্ব খোয়াতে বসেছিলো সেই রেহানের জন্য যুবরাজ নিজের অর্ধেক টা উৎসর্গ করবে না তা কি করে হয়?
২০২০ এপ্রিল ১৪
দক্ষিণ কোরিয়াতে চলছে বসন্ত কাল।গাছে গাছে নানান ধরনের ফুল ফুটে পুরো শহরকে করেছে ফুলের রাজ্য।এর মধ্যে যেই ফুলটি মানুষকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করছে সেটা হলো চেরি বা সাকুরা।এই ফুল ফোটা কে কেন্দ্র করে শহর জুড়ে চলছে বিভিন্ন হলি ডেইজ,আর উৎসব।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রেহান কে নিয়ে যুবরাজ আজকে প্রথম বারের মতো শহর দেখতে বেরিয়েছে।বিভিন্ন চাপে আর নিজেদের দেশে ফেরার সব কিছু গুছাতে গুছাতে অনায়াসেই পেরিয়ে গিয়েছে এতো গুলো দিন।আর রেহানের প্লাস্টিক সার্জারির পর কিছু কঠিন নির্দেশনা ছিলো হসপিটালের পক্ষ থেকে যার জন্য সুযোগ হলেও রেহান বাইরে বের হতে পারেনি।
গায়ে একটা ব্ল্যাক হুডি জড়িয়ে তার সাথে ব্ল্যাক জিন্স পরে যুবরাজের সাথে বাইরে বেরিয়ে এলো রেহান। রাস্তায় আনমনে হাটতে হাটতে যুবরাজের দিকে সামান্য দৃষ্টি বুলালো সে।
এই যুবরাজ আর আগের যুবরাজের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ লাগছে তার কাছে।যুবরাজের ছোট করে কাঁটা চুল গুলো এখন মাফিয়াদের মতো ঘাড়ে এসে নেমেছে।কালো রঙের চুলের পরিবর্তে সেগুলো ডার্ক ব্রাউন রঙে লেপটানো হয়েছে।হাত গলা আর বুক জুড়ে হিংস্র সব ট্যাটু।পোশাক থেকে শুরু করে আচরণেও এসেছে আমূল পরিবর্তন।যুবরাজের চোখের দিকে তাকালেই কেমন বুক ঢিপঢিপে একটা অনুভূতি হয়।চোখ দুটো এখন আর আগের মতো মায়া ভরা নেই।তাতে সবসময় ক্রুর শুকুনি দৃষ্টি পরিলক্ষিত হয়।
“কি দেখছিস আমাকে এমন করে?”
গম্ভীর মোটা গলার অদ্ভুত প্রশ্নে খানিকটা অপ্রস্তুত হলো রেহান।কি বলবে না বলবে ভেবে পেলো না।কিন্তু যুবরাজ উত্তর না পেয়ে আবারো ধমকের সুরে একই প্রশ্ন করলো।
“কি হলো শুনতে পাসনি?কি দেখছিলি এভাবে?
“তোকে ইদানিং খুব অদ্ভুত ভয়ংকর লাগে,আর সবসময় কেমন যেনো একটা অনুভূতি হয়”
খানিকটা নিচু গলায় ই কথাটি বলে দ্রুত পা চালিয়ে যুবরাজকে পিছন ফেলে সামনের দিকে অগ্রসর হলো রেহান।রেহান চলে যেতেই রাস্তার পাশেই একটা শপিং মলের গ্লাসের দেয়ালে নিজেকে একবার পরখ করে নিলো যুবরাজ।এরপর নিজের উপর অবজ্ঞা জনক হাসলো।
“তুই ঠিকই বলেছিস,আমি আসলেই ভয়ংকর হয়ে গিয়েছি।আগে এই হাতে মানুষের প্রাণ বাচঁত আর এখন প্রাণ যায়।তফাৎ এটুকুই।কারো ভয়ে আধমরা হয়ে বেঁচে থাকার চাইতে নিজেকে ভয়ঙ্কর ভাবে গড়ে তুলে তাকে ভয় দেখানোর মাঝেই নিজের জীবনের চরম সার্থকতা।এটা তোর মত নরম মনের মানুষকে কে বুঝাতে যাবে বল?
সাত মাস ধরে যুবরাজের কোনো খবর না পেয়ে সাদাফ শাহীর আর সামিনার অবস্থা পাগল প্রায়।এতবড় একটা ছেলে হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলো এটা কারোরই বোধগম্য হচ্ছে না।শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় না পেয়ে সাদাফ শাহীর ইচ্ছে না থাকা সত্তেও সুবহান শেখের কাছে বেশ কয়েকবার ধন্যা দিয়েছেন।সুবহান শেখ তাকে খুশি হবার মতো কোনো খবর দিতে পারেননি উল্টো নানান আজেবাজে কথা শুনিয়ে দিয়েছেন।এদিকে সামিনার অবস্থা মৃতপ্রায়।একমাত্র ছেলের চিন্তায় খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে বিছানায় শয্যা নিয়েছেন তিনি।যদিও দুই দুইবার শেরহাম এসে সাদাফ শাহিরকে মিথ্যে শান্তনা দিয়ে গিয়েছে।কিন্তু সাদাফ শাহীর ছেলের চিন্তায় হসপিটালে ভর্তির উপক্রম। ভালোবাসার স্ত্রীকে হারিয়ে একমাত্র ছেলেটা কে আকড়ে ধরে এতদিন কোনোমতে বেঁচে ছিলেন তিনি।এখন সেই ছেলের কোনো খুজ মিলছে না।এটা কি কোনো সাধারণ ব্যাপার নাকি?এমন তো নয় ছেলে নতুন বিদেশ গিয়েছে!যার বেড়ে উঠা পড়াশোনা সবকিছুই ওখানে তাহলে সে হারালো কিভাবে?
রেজোয়ান চৌধুরীর বাড়িতেও একই অবস্থা।রাজ্য আর তনুজা রেহানের চিন্তায় দিন দুনিয়া খাওয়া দাওয়া ভুলে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে শুধু।মাঝ বয়সী রেজোয়ান চৌধুরী মা আর মেয়েকে সামলিয়ে নিজেও অধৈর্য হয়ে পড়েছেন।অবশেষে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে ছেলের খুঁজ নেবার চেষ্টা করেছেন।ভদ্রলোক সব দিক থেকেই যখন ব্যর্থ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়লেন এমন সময় হঠাৎই একটি ইমেইল আসে তার ফোনে।সেখানে স্পস্ট করে লিখা আছে
“ডক্টর রেহান ইজ নো মোর”
হঠাৎ এমন ইমেইলে রেজোয়ান চৌধুরী জ্ঞান হারিয়ে ড্রয়িং রুমে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন।নিকট আত্মীয়রা এসে হসপিটালে ভর্তি করে অবস্থা কিছুটা স্বভাবিক করে ঘটনা জানতে চাইলে সেই ইমেইলটি তিনি সবাইকে বের করে দেখান।তনুজা আর রাজ্য কোনো ভাবেই মানবে না রেহানের হঠাৎ মৃ*ত্যু ।সেদিন থেকেই তনুজা হার্টের সমস্যায় জর্জরিত হলেন আর রেজোয়ান চৌধুরী হারালেন তার মনের সকল কোমলতা।কিন্তু তনুজার বিশ্বাস এই বিশাল পৃথিবীতে কোথাও না কোথাও তার ছেলে অবশ্যই বেঁচে আছে এবং একদিন না একদিন ঠিক সে ফিরে আসবে।
বিমানের ইকোনমি সিটে চোখ বুঝে হেলান দিয়ে বসে আছে যুবরাজ।দেশে ফেরার উচ্ছাসের চাইতে বিভিন্ন চিন্তা আর অবসাদ তাকে গ্রাস করে চলেছে সমানে।কিন্তু রেহানের খুশি যেনো আর ধরে না।
“বাড়িতে গিয়েই মায়ের হাতের চিংড়ি ভর্তা আর গরুর মাংসের ভুনা দিয়ে দু প্লেট ভাত খাবো বুঝেছিস?এদেশের স্যালাড আর মসলাবিহীন খাবার খেতে খেতে মুখের রুচি একদম চলে গিয়েছে”
রেহানের হাস্যজল মুখের খুশিতে গদগদ হওয়া কথায় চোখ মেলে তাকালো যুবরাজ।এরপর লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বলে উঠলো
“তুই বড্ড সাদাসিধে মনের মানুষ রেহান।কিন্তু এই দুনিয়ায় সাদা মানুষের কোনো মূল্য নেই জানিস তো নাকি?
যুবরাজের এমন প্যাচ মোচড় যুক্ত কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না রেহান।আর তার বুঝার দরকার ও নেই।সে এতোগুলো দিন পর বাড়ি ফিরছে এই অনেক।
হঠাৎই ফ্লাইট এনাউন্সমেন্ট বেজে উঠলো।অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই বিমান টেইক অফ করবে।রেহানের উচ্ছাস যেনো দ্বিগুন বেড়ে গেলো।একবার তার মনে হলো যুবরাজের সাথে নিজের মনের খুশি গুলো শেয়ার করলে মন্দ হয়না!
পরক্ষণেই তার মনে পড়লো
“যুবরাজ আর আগের মতো নেই।ওর কাছে এসব বলে নিজের মোড নষ্ট করার কোনো মানেই হয়না ”
বাড়ির মানুষের খুশি খুশি মুখ কল্পনা করতে করতে নিমিষেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল রেহান।ঢাকা এয়ারপোর্ট এ এসে একবারে রেহানের ঘুম ভঙ্গ হলো।যুবরাজের তাড়ায় প্লেন থেকে নিজেদের ব্যাগপত্র নিয়ে ধীরে ধীরে নেমে এয়ারপোর্ট এর বাইরে বেরিয়ে এলো দুজনে।
এয়ারপোর্ট এর বাইরে বেরুতেই দুজনের চোখ কপালে উঠে যাবার উপক্রম।বিমানবন্দরের মূল গেটের সামনে শেরহাম নিজে দাঁড়িয়ে রয়েছে সাথে কয়েকজন ইয়ং বয়সের ছেলে নিয়ে।তারা প্রত্যেকটি যাত্রীর দিকে সতর্ক নজর বুলাচ্ছে।
শেরহামকে দেখেই রেহান ভয়ে কেঁপে উঠে যুবরাজের হাত চেপে ধরলো।
“আমি আমার বাবা মা আর বোনকে শেষবারের মতো দেখতে চাই ইউভি।আমি এই অমানুষ টার হাতে মরতে চাইনা।প্লিজ সেইভ মি”
“জাস্ট কিপ শাট ইউর মাইথ”
দাঁতে দাঁত চেপে কথা টি বলেই রেহানের হাত শক্ত করে চেপে ধরে শেরহামের সামনে দিয়ে হনহন করে হেঁটে চলতে লাগলো যুবরাজ।হঠাৎই শেরহাম পিছন থেকে ডেকে উঠলো
“এক্সকিউজ মি”
শেরহামের ডাক শুনে রেহানের পা থেমে গেলো।অসাড় হয়ে এলো পুরো শরীর।যুবরাজ তাকে শক্ত হাতে টেনেও আর এক চুল নাড়াতে সক্ষম হলো না।
এদিকে শেরহাম একপা দু পা করে তাদের সামনে এসে দাড়ালো।এরপর রেহানের সামনে এসে প্ৰগাঢ় হারপি ঈগলের চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।
ভয়ে রেহানের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল মুহূর্তেই কিন্তু যুবরাজ নির্বিকার।চিন্তিত ভঙ্গিতে রেহানের দিকে তাকিয়ে থুতনিতে আঙ্গুলি দিয়ে বার কয়েক ট্যাপ ট্যাপ করলো শেরহাম।এরপর সামান্য হেসে বলে উঠলো
“মনে হলো আপনাকে কোথাও দেখেছি,বাট কোথায় মনে পড়ছে না।”
রেহান নির্বাক হয়ে ফাঁকা ঢোক গিলে নিজের কাঁধে থাকা ব্যাগের ফিতা টেনে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।কিন্তু মাস্ক পরিহিত যুবরাজ কর্কশ গাম্ভীর্য পূর্ণ কন্ঠে বলে উঠলো
“পৃথিবী যেহেতু গোল দেখা হতেই পারে।কিন্তু আমার মনে হয়না আপনি এই চেহারা কখনো কোথাও দেখেছেন।কারো এটা যে একদম নতুন”
যুবরাজের এমন হেয়ালিপনা কথায় শেরহাম ভ্রু কুঞ্চন করে সামান্য যুবরাজের দিকে নজর বুলালো।এরপর যুবরাজের চোখে চোখ রেখে কিছু খোঁজার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়ে বলে উঠলো
“আই লাইক ইউর নেক ট্যাটুস”
শেরহামের কথার প্রতিউত্তর না করে রেহানের উদ্দেশ্যে তাড়া দিয়ে যুবরাজ বলে উঠলো
“লেটস মুভ”
যুবরাজ যখন সাদাফ শাহীরের বাড়িতে পৌঁছায় ঘড়িতে তখন বিকেল চারটা বেজে পঁচিশ মিনিট।ড্রয়িং রুমে বসে মিসেস শাহানা আর সাদাফ শাহীর যুবরাজের নিখুঁজ হবার বিষয়েই কথা বলছিলেন এমন সময় হঠাৎই কলিং বেল বেজে উঠলো।কলিং বেলের শব্দ পেতেই বাড়ির কাজের লোক নাসের দৌড়ে প্রধান দরজা খুলতেই যুবরাজকে দেখে বেশ অবাক হয়।নাসের কে অনুসরণ করে সাদাফ শাহীর আর সামিনা দরজার দিকে তাকাতেই যুবরাজকে দেখতে পেয়ে হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়ায়।
সামিনা দৌড়ে গিয়ে যুবরাজকে জাপ্টে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন।
“এতদিন কোথায় ছিলি বাবা?কতো জায়গায় তোকে খুঁজেছি।কোত্থাও তোর কোনো খুজ খবর পাইনি।আর তোর চেহারার এই অবস্থা কেনো?শরীরে এসব এঁকেছিস কেনো?
ছেলের এরূপ অবস্থা দেখে খুশিতে বিহ্বল হবার পরিবর্তে রাগে আগুন হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন সাদাফ শাহীর।রাগে গর্জন করে ভারি কন্ঠে শুধালেন
“এমন বেশ ধরার কারন কি তা জানতে পারি ?এতদিন তোমার চিন্তায় আমরা বেহুশ হবার অবস্থা।আর এমন সঙ সেজে তুমি দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছ?কোথায় ছিলে এতদিন?
নিজের বাবার এমন আচরণে বেশ কষ্ট পেলো যুবরাজ।মুখে কিছুই প্রকাশ না করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে বললো
“অনেক হাঁপিয়ে গিয়েছি পাপা,এবার একটু আরামের ঘুম ঘুমাতে ইচ্ছে করছে।আর কোনো প্রশ্ন করো না প্লিজ”
যুবরাজের ক্লান্তি মিশ্রিত কন্ঠে কিছুটা মন গললো সাদাফ শাহীরের।চুপচাপ যুবরাজের যাবার পানে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাদাফ শাহীর বলে উঠলেন
“সামিনা ওকে সত্যি ই ক্লান্ত লাগছে,দেশে ফিরে এসেছে এই অনেক।পিছনের ঘটনা পরেও জানা যাবে।ওকে আর ঘাটাস না।”
ট্যাক্সিতে করে নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়াতেই বুক কেঁপে উঠলো রেহানের।বাড়িটির প্রধান ফটকে বিশাল বড় বড় দুটি তালা ঝুলছে।নিজের চিরচেনা বাড়িটি এমন তালাবদ্ধ দেখে হুহু করে বুক কেঁপে চোখ জলে ভরে উঠলো।কতো আশা নিয়ে সে এখানে এসেছে আর এখানে কেউ নেই?
“বাড়ি ছেড়ে বাবা মা যাবে কোথায়?আর এভাবে বড় বড় তালা ঝুলিয়েছে কোন কারনে?
আশেপাশে তাকিয়ে একজন মানুষের দেখা পেয়ে সিক্ত কন্ঠে রেহান শুধায়
“এটা রেজোয়ান চৌধুরীর বাড়ি না?উনারা কি বাড়িতে নেই?এরকম বড় বড় তালা ঝুলিয়ে উনারা কোথায় গেছে বলতে পারেন?
লোকটি পায়ের গতি শ্লথ করে রেহানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো
“উনাদের ছেলে বিদেশের ডক্টর ছিলো।কয়েকমাস আগে হঠাৎ তারা জানতে পেরেছে ছেলেটি মা*রা গিয়েছে।এরপর তাদের পরিবার অনেক ভেঙে পড়ে।রেজোয়ান চৌধুরী একা হাতে তার পরিবার সামলাতে পারছিলেন না।এজন্য উনারা এখানকার বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে উনাদের কোনো এক আত্মীয়ের বাড়ির কাছে চলে গিয়েছেন।আহারে বেচারা,ছেলে হারিয়ে অনেক ভেঙে পড়েছেন।
কথা গুলো বলতে বলতে লোকটি দ্রুত প্রস্থান নিলেন।হাটু মুড়ে বসে রেহান শুধু লোকটির যাবার পানে তাকিয়ে তাকিয়ে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিলো।
“আমি বেঁচে আছি বাবা ,তোমাদের ছেলে বেঁচে আছে।কতো স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরে এলাম কিন্তু তোমাদের খুশি এনে দিতে পারলাম না।বিধাতা আমাকে ব্যার্থ করে দিয়েছে সব দিক থেকেই”
কতোক্ষণ এভাবে পেরিয়ে গেছে রেহান জানেনা।হঠাৎ পরিচিত কণ্ঠস্বরে মাথা উপরে তুলে তাকায়
“রাত হয়ে গিয়েছে চল আমার সাথে,ঘোলাটে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে একটু সময় তো লাগবেই তাই না?,রাস্তায় বসে কান্নাকাটি করে কিছুই হবে না”
“সবাই জানে আমি মৃ*ত”!এখন এই চেহারায় আমি সামনে গেলে তারা আমাকে মেনে নিতে পারবে তো?
ধীর অসহায় কন্ঠে কথা খানি বলে রাস্তার চকচকে পিচের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো রেহান।
“না মানলে আমার কাছে থেকে যাবি সারা জীবন,তার আগে এই পরিস্থিতি যার জন্য সৃষ্টি হয়েছে তাকে একটু দেখে নেয়া যাক কি বলিস?
ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৩১
যুবরাজের ক্রুর হাসির দিকে তাকিয়ে রেহান শুধায়
“পারবো তো?
হঠাৎ কিছু পড়ে যাবার শব্দে চোখ মেলে টাকায় যুবরাজ।আসে পাশে নজর বুলাতেই নিজের আদরের একমাত্র বিড়াল “কাই”কে দেখতে পেয়ে চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নেয় সে।এরপর বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হ্যাঙ্গারে থাকা শার্ট গায়ে জড়িয়ে রুমের বাইরে বের হয়ে আসে যুবরাজ”
“তোমার বর্তমান অবস্থা জানতে খুব ইচ্ছে করছে মামাতো ভাই”